সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ধার্মিকতার জন্য তাড়িত

ধার্মিকতার জন্য তাড়িত

ধার্মিকতার জন্য তাড়িত

“ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে।”—মথি ৫:১০.

১. যিশু কেন পন্তীয় পীলাতের সামনে ছিলেন এবং তিনি কী বলেছিলেন?

 “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) যিশু যখন এই কথাগুলো বলেছিলেন, তখন তিনি যিহূদার রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাতের সামনে ছিলেন। যিশু সেখানে তাঁর নিজের ইচ্ছায় অথবা পীলাতের আমন্ত্রণে আসেননি। বরং, তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কারণ যিহুদি ধর্মীয় নেতারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড যোগ্য দুষ্কর্মকারী হিসেবে মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত করেছিল।—যোহন ১৮:২৯-৩১.

২. যিশু কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন আর এর পরিণতি কী হয়েছিল?

যিশু খুব ভাল করেই জানতেন যে, তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা পীলাতের রয়েছে। (যোহন ১৯:১০) কিন্তু, এই বিষয়টা তাঁকে পীলাতের কাছে সাহসের সঙ্গে রাজ্যের বিষয়ে কথা বলতে বাধা দেয়নি। যদিও যিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল, তবুও তিনি সেই এলাকার উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন। সেই সাক্ষ্য সত্ত্বেও, যিশুকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যিনি একজন শহীদ হিসেবে এক যাতনাদণ্ডের ওপর যন্ত্রণাদায়কভাবে মৃত্যুবরণ করেন।—মথি ২৭:২৪-২৬; মার্ক ১৫:১৫; লূক ২৩:২৪, ২৫; যোহন ১৯:১৩-১৬.

সাক্ষি অথবা শহীদ?

৩. “শহীদ” শব্দটির মূল অর্থ কী ছিল কিন্তু আজকে এটির অর্থ কী?

আজকে, অনেক লোকের কাছে একজন শহীদ কিছুটা হলেও এক গোঁড়া, চরমপন্থী ব্যক্তির মতোই। যারা তাদের বিশ্বাসের জন্য, বিশেষ করে ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করতে ইচ্ছুক, তাদের প্রায়ই সন্ত্রাসী অথবা অন্ততপক্ষে সমাজের পক্ষে বিপদজনক বলে মনে করা হয়। কিন্তু, “শহীদ” শব্দটির মূল অর্থ ছিল “সাক্ষি,” যে-ব্যক্তি সম্ভবত মামলার শুনানির সময় তিনি যা বিশ্বাস করেন, সেই সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। পরবর্তী সময়ে এই অভিব্যক্তিটির অর্থ হয়, “যে-ব্যক্তি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নিজের জীবন দান করেন” অথবা এমনকি জীবন দিয়ে সাক্ষ্য বহন করেন।

৪. মূলত কোন অর্থে যিশু একজন শহীদ ছিলেন?

যিশু মূলত এই শব্দটির আগের অর্থ অনুযায়ী একজন শহীদ ছিলেন। ঠিক যেমন পীলাতকে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি “সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য” দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তাঁর সাক্ষ্যদান লোকেদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ তারা যা কিছু শুনেছিল এবং দেখেছিল, সেগুলোর দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল এবং তারা যিশুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। (যোহন ২:২৩; ৮:৩০) আবার বেশির ভাগ জনতা এবং বিশেষভাবে ধর্মীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তবে তা ছিল নেতিবাচক। যিশু তাঁর অবিশ্বাসী আত্মীয়দের উদ্দেশে বলেছিলেন: “জগৎ তোমাদিগকে ঘৃণা করিতে পারে না, কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে, কারণ আমি তাহার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিই যে, তাহার কর্ম্ম মন্দ।” (যোহন ৭:৭) সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ায় যিশু জাতির নেতাদের ক্রোধের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন, যা তাঁকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। বাস্তবিকই, তিনি “বিশ্বাস্য ও সত্যময় সাক্ষী” ছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪.

“তোমরা . . . ঘৃণিত হইবে”

৫. যিশু তাঁর পরিচর্যার প্রথমদিকে, তাড়নার বিষয়ে কী বলেছিলেন?

শুধুমাত্র যিশু নিজেই প্রচণ্ড তাড়না ভোগ করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তাঁর অনুসারীদের আগেই সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটবে। যিশু তাঁর পরিচর্যার প্রথমদিকে, তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে শ্রোতাদের বলেছিলেন: “সুখী যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই। ধন্য [“সুখী,” NW] তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।”—মথি ৫:১০-১২.

৬. যিশু ১২ জন প্রেরিতকে পাঠানোর সময় কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

পরবর্তী সময়ে, ১২ জন প্রেরিতকে পাঠানোর সময়ে যিশু তাদের বলেছিলেন: “মনুষ্যদের হইতে সাবধান থাকিও; কেননা তাহারা তোমাদিগকে বিচারসভায় সমর্পণ করিবে, এবং আপনাদের সমাজ-গৃহে কোড়া মারিবে। এমন কি, আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে, তাহাদের ও পরজাতিগণের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য, নীত হইবে।” কিন্তু, শুধুমাত্র ধর্মীয় কর্তৃপক্ষরাই শিষ্যদের তাড়না করবে না। যিশু এও বলেছিলেন: “ভ্রাতা ভ্রাতাকে ও পিতা সন্তানকে মৃত্যুতে সমর্পণ করিবে; এবং সন্তানেরা মাতাপিতার বিপক্ষে উঠিয়া তাঁহাদিগকে বধ করাইবে। আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে; কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ১০:১৭, ১৮, ২১, ২২) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ইতিহাস হল এই কথাগুলোর সত্যতার এক প্রামাণিক সাক্ষ্য।

বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরার এক বিবরণ

৭. কী স্তিফানকে একজন শহীদ হতে পরিচালিত করেছিল?

যিশুর মৃত্যুর পরেই, সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম খ্রিস্টান ব্যক্তি স্তিফান মারা যান। তিনি “অনুগ্রহে ও শক্তিতে পরিপূর্ণ হইয়া লোকদের মধ্যে মহা মহা অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন-কার্য্য সাধন করিতে লাগিলেন।” তার ধর্মীয় শত্রুদের সঙ্গে “তিনি যে বিজ্ঞতার ও যে আত্মার বলে কথা কহিতেছিলেন, তাহার প্রতিরোধ করিতে তাহাদের সাধ্য হইল না।” (প্রেরিত ৬:৮, ১০) প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তারা স্তিফানকে টেনেহিঁচড়ে যিহুদিদের উচ্চআদালত, মহাসভার সামনে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি তার মিথ্যা দোষারোপকারীদের সম্মুখীন হন এবং এক জোরালো সাক্ষ্য দেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত স্তিফানের শত্রুরা এই বিশ্বস্ত সাক্ষিকে হত্যা করে।—প্রেরিত ৭:৫৯, ৬০.

৮. স্তিফানের মৃত্যুর পরেই যিরূশালেমের শিষ্যদের ওপর যে-তাড়না এসেছিল, সেটার প্রতি তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

স্তিফানের হত্যার পরেই “যিরূশালেমস্থ মণ্ডলীর প্রতি বড়ই তাড়না উপস্থিত হইল, তাহাতে প্রেরিতবর্গ ছাড়া অন্য সকলে যিহূদিয়ার ও শমরিয়ার জনপদে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল।” (প্রেরিত ৮:১) তাড়না কি খ্রিস্টীয় সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল? বিপরীতে, বিবরণ আমাদের বলে যে, “যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়াছিল, তাহারা চারদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।” (প্রেরিত ৮:৪) তারা নিশ্চয়ই প্রেরিত পিতরের মতো অনুভব করেছিল, যা তিনি আগে এই কথাগুলো বলার সময় অনুভব করেছিলেন: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) তাড়না সত্ত্বেও, সেই বিশ্বস্ত এবং সাহসী শিষ্যরা সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ চালিয়ে গিয়েছিল, এমনকি যদিও তারা জানত যে এই কাজ আরও বেশি কষ্ট নিয়ে আসবে।—প্রেরিত ১১:১৯-২১.

৯. যিশুর অনুসারীদের ওপর একের পর এক কোন তাড়না এসেছিল?

বস্তুত, কষ্ট একটুও কমেনি। প্রথমত, আমরা জানতে পারি যে, শৌল—যিনি স্তিফানকে পাথর মারার সময় অনুমোদন সহকারে দেখেছিলেন—“তখনও প্রভুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে ভয়প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস টানিতেছিলেন; তিনি মহাযাজকের নিকটে গিয়া দম্মেশকস্থ সমাজ সকলের প্রতি পত্র যাচ্ঞা করিলেন, যেন সেই পথাবলম্বী পুরুষ ও স্ত্রী যে সমস্ত লোককে পান, তাহাদিগকে বাঁধিয়া যিরূশালেমে আনিতে পারেন।” (প্রেরিত ৯:১, ২) এরপর সা.কা. প্রায় ৪৪ সালে, “হেরোদ রাজা মণ্ডলীর কয়েক জনের প্রতি উপদ্রব করিবার জন্য হস্তক্ষেপ করিলেন। তিনি যোহনের ভ্রাতা যাকোবকে খড়্গ দ্বারা বধ করিলেন।”—প্রেরিত ১২:১, ২.

১০. প্রেরিত এবং প্রকাশিত বাক্য বইয়ে তাড়নার কোন বিবরণ আমরা দেখতে পাই?

১০ প্রেরিত বইয়ের বাকি অংশে বিভিন্ন পরীক্ষা, বন্দিত্ব এবং তাড়নার এক স্থায়ী বিবরণ রয়েছে, যেগুলো পৌলের মতো বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা সহ্য করেছিল, যিনি প্রাক্তন তাড়নাকারী থেকে প্রেরিতে পরিণত হয়েছিলেন এবং সম্ভবত সা.কা. প্রায় ৬৫ সালে সম্রাট নিরোর হাতে শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। (২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৭; ২ তীমথিয় ৪:৬-৮) অবশেষে, প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে লিখিত প্রকাশিত বাক্য বইয়ে আমরা দেখতে পাই যে, বৃদ্ধ প্রেরিত যোহনকে “ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত” দণ্ডসংক্রান্ত পাট্‌ম দ্বীপে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। প্রকাশিত বাক্যে এই তথ্যও রয়েছে যে, “আমার সেই সাক্ষী, আমার সেই বিশ্বস্ত লোক আন্তিপা” পর্গামে “নিহত হইয়াছিল।”—প্রকাশিত বাক্য ১:৯; ২:১৩.

১১. কীভাবে প্রাথমিক খ্রিস্টানদের কাজ তাড়নার বিষয়ে বলা যিশুর কথাগুলোর সত্যতা প্রমাণ করেছিল?

১১ এই সমস্তকিছুই শিষ্যদের উদ্দেশে বলা যিশুর এই কথাগুলোর সত্যতাকে প্রমাণ করেছিল: “লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (যোহন ১৫:২০) “তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে,” প্রভু যিশু খ্রিস্টের এই আদেশ পালন করার জন্য প্রাথমিক বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা চূড়ান্ত পরীক্ষা, মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, যা অত্যাচার, বন্যপশুদের কাছে নিক্ষেপ বা অন্যান্য উপায়ে এসেছিল।—প্রেরিত ১:৮.

১২. কেন খ্রিস্টানদের প্রতি তাড়না শুধু ইতিহাসের এক ঘটনা নয়?

১২ কেউ যদি এইরকম চিন্তা করে যে, যিশুর অনুসারীদের প্রতি এই ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ শুধু অতীতেই হয়েছিল, তা হলে তিনি পুরোপুরি ভুল করবেন। আমরা যেমন দেখেছি যে, পৌল যিনি অনেক কষ্ট ভোগ করেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীমথিয় ৩:১২) তাড়নার বিষয়ে পিতর বলেছিলেন: “কারণ তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ; কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) তখন থেকে এই বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কাল’ পর্যন্ত আজও যিহোবার লোকেরা ক্রমাগত ঘৃণিত এবং শত্রুতার শিকার হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৩:১) সারা পৃথিবীতে একনায়কতন্ত্র শাসনাধীনে এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যিহোবার সাক্ষিরা কখনও কখনও ব্যক্তিগত এবং দলগত উভয়ভাবেই তাড়না ভোগ করেছে।

কেন ঘৃণিত ও তাড়িত?

১৩. যিহোবার আধুনিক দিনের দাসদের তাড়নার বিষয়ে কী মনে রাখা উচিত?

১৩ যদিও আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যক্তিই আজকে আপেক্ষিক স্বাধীনতা উপভোগ করি কিন্তু বাইবেলের এই অনুস্মারকের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে যে, “এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তন হচ্ছে।” (১ করিন্থীয় ৭:৩১, NW) বিষয়গুলো এত দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে যে, আমরা যদি মানসিক, আবেগগত এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে প্রস্তুত না থাকি, তা হলে সহজেই বিঘ্নিত হতে পারি। তাই, নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমরা কী করতে পারি? এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা হল, শান্তিপ্রিয় এবং আইন মান্যকারী খ্রিস্টানরা কেন ঘৃণিত ও তাড়িত হয়, তা স্পষ্টভাবে মনে রাখা।

১৪. কেন খ্রিস্টানরা তাড়িত হয়েছিল, সেটার কারণ হিসেবে পিতর কী উল্লেখ করেন?

১৪ প্রেরিত পিতর তার প্রথম চিঠিতে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, যা তিনি সা.কা. প্রায় ৬২-৬৪ সালের মধ্যে লিখেছিলেন, যখন সমগ্র রোমীয় সাম্রাজ্য জুড়ে খ্রিস্টানরা পরীক্ষা এবং তাড়না ভোগ করছিল। তিনি বলেছিলেন: “প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না।” পিতরের মনে কী ছিল, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি বলে চলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ যেন নরঘাতক কি চোর কি দুষ্কর্ম্মকারী কি পরাধিকারচর্চ্চক বলিয়া দুঃখভোগ না করে। কিন্তু যদি কেহ খ্রীষ্টীয়ান বলিয়া দুঃখভোগ করে, তবে সে লজ্জিত না হউক; কিন্তু এই নামে ঈশ্বরের গৌরব করুক।” পিতর উল্লেখ করেছিলেন যে, তারা দুঃখকষ্ট ভোগ করছিল, কোনো অন্যায় কাজের জন্য নয় কিন্তু খ্রিস্টান হওয়ার কারণে। তারা যদি তাদের আশেপাশের লোকেদের মতো “একই নষ্টামীর পঙ্কের” মধ্যে গড়াগড়ি খেত, তা হলে লোকেরা তাদের স্বাগত জানাত এবং সাগ্রহে গ্রহণ করত। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তারা দুঃখকষ্ট ভোগ করছিল কারণ খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে তারা তাদের ভূমিকা পালন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। আজকের সত্য খ্রিস্টানদের জন্য পরিস্থিতি একইরকম।—১ পিতর ৪:৪, ১২, ১৫, ১৬.

১৫. আজকে যিহোবার সাক্ষিদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে কোন বৈসাদৃশ্য দেখা যায়?

১৫ পৃথিবীর অনেক জায়গায়, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের সম্মেলন ও নির্মাণ প্রকল্পগুলোর সময়ে প্রদর্শিত একতা এবং সহযোগিতার জন্য, তাদের সততা এবং অধ্যবসায়ের জন্য, তাদের উদাহরণযোগ্য নৈতিক আচরণ এবং পারিবারিক জীবনের জন্য আর এমনকি তাদের মার্জিত বেশভূষা এবং আচরণের জন্য জনসাধারণ্যে প্রশংসিত হয়েছে। * অন্যদিকে, এই প্রবন্ধ লেখার সময় কমপক্ষে ২৮টা দেশে তাদের কাজ নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ রয়েছে এবং অনেক সাক্ষি তাদের বিশ্বাসের জন্য শারীরিক নির্যাতন এবং মৃত্যু ভোগ করে। কেন এইরকম স্পষ্ট বৈসাদৃশ্য? আর কেন ঈশ্বর তা ঘটতে দেন?

১৬. কেন ঈশ্বর তাঁর লোকেদের তাড়না ভোগ করতে দিয়েছেন, সেটার সর্বপ্রধান কারণ কী?

১৬ সবচেয়ে প্রথমে, আমাদের হিতোপদেশ ২৭:১১ পদের কথা মনে রাখতে হবে: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” হ্যাঁ, কারণ এটা হল সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত অনেক পুরনো এক বিচার্য বিষয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যারা যিহোবার প্রতি নীতিনিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছে, তাদের সকলের অসংখ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ সত্ত্বেও, শয়তান যিহোবাকে টিটকারী দেওয়া বন্ধ করেনি, যেমনটা সে ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োবের দিনে করেছিল। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪, ৫) কোনো সন্দেহ নেই যে, শয়তান তার দাবি প্রমাণ করার চূড়ান্ত প্রচেষ্টায় আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে, যে-সময়ে সারা পৃথিবীতে অনুগত প্রজা এবং প্রতিনিধি সহ ঈশ্বরের রাজ্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের ওপর যত দুর্দশা এবং কষ্টই আসুক না কেন, তারা কি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে? এটা এমন এক প্রশ্ন, যেটার উত্তর যিহোবার প্রত্যেক দাসকে ব্যক্তিগতভাবে দিতে হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭.

১৭. “সাক্ষ্যের জন্য এই সকল তোমাদের প্রতি ঘটিবে,” এই কথাগুলোর দ্বারা যিশু কী বুঝিয়েছিলেন?

১৭ “যুগান্তের” সময়ে কী কী ঘটবে, সেই বিষয়ে শিষ্যদের বলার সময় যিশু আরেকটা কারণের বিষয়ে ইঙ্গিত করেছিলেন যে, কেন যিহোবা তাঁর দাসদের ওপর তাড়না ঘটতে দেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমার নামের নিমিত্ত তোমরা রাজাদের ও শাসনকর্ত্তাদের সম্মুখে নীত হইবে। সাক্ষ্যের জন্য এই সকল তোমাদের প্রতি ঘটিবে।” (মথি ২৪:৩, ৯; লূক ২১:১২, ১৩) যিশু নিজে হেরোদ ও পন্তীয় পীলাতের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। প্রেরিত পৌলও ‘রাজাদের ও শাসনকর্ত্তাদের সম্মুখে নীত হইয়াছিলেন।’ প্রভু যিশু খ্রিস্টের নির্দেশে পৌল তার দিনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান শাসকের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি।” (প্রেরিত ২৩:১১; ২৫:৮-১২) একইভাবে আজকেও, কঠিন পরিস্থিতিগুলো প্রায়ই কর্মকর্তাদের কাছে এবং জনসাধারণ্যে উভয় ক্ষেত্রেই উত্তম সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। *

১৮, ১৯. (ক) বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করা কীভাবে আমাদের উপকৃত করবে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

১৮ শেষ বিষয়টা হল, বিভিন্ন পরীক্ষা এবং ক্লেশের সঙ্গে মোকাবিলা করা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের উপকৃত করতে পারে। কোন উপায়ে? শিষ্য যাকোব তার সহখ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।” হ্যাঁ, তাড়না আমাদের বিশ্বাসকে বিশোধিত এবং আমাদের ধৈর্যকে শক্তিশালী করতে পারে। তাই, আমরা এটাকে ভয় পাই না অথবা অশাস্ত্রীয় উপায়ে এর থেকে কৌশলে রেহাই পেতে বা এর শেষ নিয়ে আসতে চাই না। এর পরিবর্তে, আমরা যাকোবের উপদেশে মনোযোগ দিই: “সেই ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে।”—যাকোব ১:২-৪.

১৯ যদিও ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা তাড়িত হয় এবং কেন যিহোবা তা ঘটতে দেন কিন্তু তাই বলে সেটা তাড়না সহ্য করাকে সহজ করে তোলে না। তা প্রতিরোধ করার জন্য কী আমাদের শক্তিশালী করতে পারে? আমরা যখন তাড়নার মুখোমুখি হই, তখন আমরা কী করতে পারি? পরের প্রবন্ধে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিবেচনা করব।

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯৫ সালের ১৫ই ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৭-৯ পৃষ্ঠা; ১৯৯৪ সালের ১লা এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৮-২৯ পৃষ্ঠা; এবং ১৯৯৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৬-১৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ২০০৩ সালের ৮ই জানুয়ারির সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-১১ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• মূলত কোন অর্থে যিশু একজন শহীদ ছিলেন?

• প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ওপর তাড়না কোন প্রভাব ফেলেছিল?

• পিতর যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন, সত্য খ্রিস্টানরা কেন তাড়িত হয়েছিল?

• কোন কারণগুলোর জন্য যিহোবা তাঁর দাসদের ওপর তাড়না ঘটতে দেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কোনো অন্যায় কাজের জন্য নয় কিন্তু খ্রিস্টান হওয়ার কারণে তাড়না ভোগ করেছিল

পৌল

যোহন

আন্তিপা

যাকোব

স্তিফান