সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রশ্ন অনেক কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর অল্প

প্রশ্ন অনেক কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর অল্প

প্রশ্ন অনেক কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর অল্প

 সতেরশো পঞ্চান্ন সালের ১লা নভেম্বর, সমস্ত সাধু-সাধ্বীর দিবসে সকালবেলা যখন লিসবন শহরের অধিকাংশ নাগরিকই গির্জায় ছিল, তখন এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়। হাজার হাজার অট্টালিকা ধ্বসে পড়ে আর তাই হাজার হাজার লোক মারা যায়।

এই দুঃখজনক ঘটনার অল্প কিছুদিন পরেই ফরাসি লেখক ভলতেয়ার তার পয়েম সুয়ের লি দ্যাজাসত্রি দি লিসবন (লিসবন দুর্যোগের ওপর কবিতা) প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে, এই বিপর্যয় ছিল লোকেদের পাপের কারণে ঐশিক প্রতিশোধ। এই ধরনের বিপর্যয়মূলক ঘটনাগুলো মানব বোধগম্যতা বা ব্যাখ্যার বাইরে বলে দাবি করে ভলতেয়ার লিখেছিলেন:

অবশ্য ভলতেয়ারই প্রথম ব্যক্তি নন, যিনি ঈশ্বর সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন। মানবজাতির সমগ্র ইতিহাস জুড়ে দুঃখজনক ঘটনা এবং দুর্যোগগুলো লোকেদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে। হাজার হাজার বছর আগে কুলপতি ইয়োব, যিনি মাত্র কিছুদিন আগে তার সমস্ত সন্তানকে হারিয়েছিলেন এবং এক মারাত্মক রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “দুঃখার্ত্তকে কেন দীপ্তি দেওয়া হয়? তিক্তপ্রাণকে কেন জীবন দেওয়া হয়?” (ইয়োব ৩:২০) আজকে অনেকে চিন্তা করে যে, একজন মঙ্গলময় ও প্রেমময় ঈশ্বর কেমন করে এত দুঃখকষ্ট ও অবিচার দেখেও সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন।

দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে অনেকে এই ধারণাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে যে, একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, যিনি মানবজাতির জন্য চিন্তা করেন। একজন নাস্তিক দার্শনিক বলেছিলেন: “একটা শিশুর কষ্টভোগের পিছনে ঈশ্বর ছাড়া অন্য আর কাউকেই দায়ী করা যায় না, . . . অবশ্য যদি আদৌ তাঁর কোনো অস্তিত্ব থেকে থাকে।” বড় বড় দুঃখজনক ঘটনা, যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্যাপক গণহত্যা এই ধরনের উপসংহারে নিয়ে আসে। একজন যিহুদি লেখক কর্তৃক এক সংবাদ-বিজ্ঞপ্তিতে এই মন্তব্যটি লক্ষ করুন: “আউশভিটজ্‌ শহরের ভয়াবহ ঘটনার একেবারে সাধারণ ব্যাখ্যা হল যে, মানুষের বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করার জন্য ঈশ্বর বলে কেউ নেই।” ক্যাথলিক প্রধান দেশ ফ্রান্সে ১৯৯৭ সালে পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ লোকই সম্প্রদায়ের বিলোপসাধনের কারণে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করে, যেমন ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডাতে ঘটেছিল।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এক প্রতিবন্ধকতা?

দুঃখজনক ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে, সেই বিষয়ে কেন ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেন না? একজন ক্যাথলিক ঘটনাপঞ্জীকার তর্ক করে বলেন যে, এই প্রশ্ন অনেকের জন্য “বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এক গুরুতর প্রতিবন্ধক।” তিনি জিজ্ঞেস করেন: “বস্তুত, এমন একজন ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করা কি সম্ভব, যিনি সাহায্য না করে সেই সময়গুলোতে কেবল পর্যবেক্ষণ করেন, যখন লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায় এবং পৃথিবীতে কোনো জাতিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়?”

ক্যাথলিক খবরের কাগজ লা ক্রোয়্যা এর এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধ একইভাবে মন্তব্য করে: “এটা ইতিহাসের কোনো দুঃখজনক ঘটনা, প্রযুক্তিগত উন্নতি সংক্রান্ত কোনো ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংগঠিত অপরাধসমূহ অথবা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু যাই হোক না কেন, প্রতিটা ক্ষেত্রেই আতঙ্কিত চোখগুলো ঊর্ধ্বদিকে দৃষ্টিপাত করে। ঈশ্বর কোথায়? তারা উত্তর চায়। তিনি কি একজন চরম উদাসীন, চরম অন্যমনস্ক ব্যক্তি নন?”

পোপ জন পল ২য়,১৯৮৪সালে তারপ্রেরিতীয়পত্র সালভিফিকি ডোলোরিস-এ এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “জগতের অস্তিত্ব যদিও ঈশ্বরের অস্তিত্ব, তাঁর প্রজ্ঞা, শক্তি ও মহানতা উপলব্ধি করার বিষয়ে মানুষের চোখ খুলে দেয় কিন্তু মন্দতা ও দুঃখকষ্ট এই ভাবমূর্তিকে ব্যাহত করে বলে মনে হয়, কখনও কখনও অত্যন্ত চরমভাবে, বিশেষ করে যখন প্রতিদিন অবিচারের কারণে এত বেশি দুঃখকষ্ট ঘটে এবং এত এত অন্যায় কাজের কোনো উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয় না।”

সবচেয়ে প্রেমময় ও সর্বশক্তিমান একজন ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে বাইবেলে যেমনটা বলা আছে, তা কি বর্তমানে বিদ্যমান মানুষের দুঃখকষ্টের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? তিনি কি কোনো একটা বা সমষ্টিগত দুঃখজনক ঘটনাগুলোকে দমন করার জন্য হস্তক্ষেপ করেন? তিনি কি আজকে আমাদের জন্য কিছু করেন? ভলতেয়ারের কথানুযায়ী এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য “একজন ঈশ্বর” কি আছেন, “যিনি মানবজাতির সঙ্গে কথা বলেন”? উত্তর পাওয়ার জন্য দয়া করে পরের প্রবন্ধটি পড়ুন।

[৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

প্রকৃতি নির্বাক, তাকে প্রশ্ন করা বৃথা;

আমাদের এমন একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন, যিনি মানবজাতির সঙ্গে কথা বলেন।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

১৭৫৫ সালে লিসবন শহরের ধ্বংস ভলতেয়ারকে এই দাবি করতে পরিচালিত করেছিল যে, এই ধরনের ঘটনাগুলো মানব বোধগম্যতার বাইরে

[সৌজন্যে]

ভলতেয়ার: From the book Great Men and Famous Women; লিসবন: J.P. Le Bas, Praça da Patriarcal depois do terramoto de ১৭৫৫. Foto: Museu da Cidade/Lisboa

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

সম্প্রদায় বিলোপসাধনের দুঃখজনক পরিণতিগুলোর কারণে, যেমন একটা হল রুয়ান্ডার ঘটনা, অনেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করে

[সৌজন্যে]

AFP PHOTO