সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে ধৈর্য ধরা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে

বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে ধৈর্য ধরা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে

বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে ধৈর্য ধরা যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসে

“সদাচরণ করিয়া দুঃখ ভোগ করিলে যদি সহ্য কর, তবে তাহাই ত ঈশ্বরের কাছে সাধুবাদের বিষয়।”—১ পিতর ২:২০.

১. যেহেতু সত্য খ্রিস্টানরা তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার জন্য অত্যন্ত চিন্তিত, তাই কোন প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে?

 খ্রিস্টানরা যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করতে চায়। তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার জন্য তারা তাদের আদর্শ, যিশু খ্রিস্টের পদচিহ্ন অনুসরণ করতে এবং সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে প্রাণপণ করে থাকে। (মথি ১৬:২৪; যোহন ১৮:৩৭; ১ পিতর ২:২১) কিন্তু, যিশু এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা তাদের বিশ্বাসের জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছিল এবং শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিল। এর অর্থ কি এই যে, সমস্ত খ্রিস্টান তাদের বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুবরণ করবে বলে আশা করতে পারে?

২. খ্রিস্টানরা বিভিন্ন পরীক্ষা এবং দুঃখকষ্টকে কোন দৃষ্টিতে দেখে?

খ্রিস্টান হিসেবে, আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে, আমাদের বিশ্বাসের জন্য যে মৃত্যুবরণ করতেই হবে তা নয়। (২ তীমথিয় ৪:৭; প্রকাশিত বাক্য ২:১০) এর অর্থ হল যদিও আমরা আমাদের বিশ্বাসের জন্য দুঃখকষ্ট ভোগ করতে—এবং প্রয়োজনে মৃত্যুবরণ করতে—ইচ্ছুক কিন্তু তাই বলে আমরা তা করতে পেরে আনন্দিত নই। দুঃখকষ্ট ভোগ করে আমরা আনন্দিত হই না এবং যন্ত্রণা বা অপমানিত হয়েও আমরা কোনো সুখ পাই না। কিন্তু, যেহেতু বিভিন্ন পরীক্ষা এবং তাড়না আসবে বলে আশা করা হয়, তাই আমাদের মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার যে, যখন সেগুলো আমাদের ওপর আসে তখন কীভাবে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি।

পরীক্ষার মধ্যে বিশ্বস্ত

৩. তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করার বিষয়ে বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো আপনি বলতে পারেন? (পরের পৃষ্ঠায় দেওয়া “তারা তাড়নার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করেছিল” বাক্সটা দেখুন।)

বাইবেলে আমরা এমন অসংখ্য বিবরণ পাই, যেগুলো দেখায় যে অতীতে ঈশ্বরের দাসেরা যখন জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল, তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। তারা যে-বিভিন্ন উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, সেগুলো আজকে খ্রিস্টানদের জন্য নির্দেশনা জোগায়, যদি তাদের কখনও এই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। “তারা তাড়নার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করেছিল,” বাক্সটার বিবরণগুলো বিবেচনা করুন এবং দেখুন যে, সেগুলো থেকে আপনি কী শিখতে পারেন।

৪. যিশু এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসেরা যখন পরীক্ষার মধ্যে ছিল, তখন তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, সেই বিষয়ে কী বলা যেতে পারে?

যদিও যিশু এবং ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসেরা পরিস্থিতি অনুযায়ী তাড়নার প্রতি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, তারা অযথা তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেনি। তারা যখন বিপদজনক পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে পড়েছিল, তখন তারা সাহসী কিন্তু সতর্ক ছিল। (মথি ১০:১৬, ২৩) তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং যিহোবার প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া আজকে সেই সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য উদাহরণ জোগায়, যারা বিভিন্ন পরীক্ষা এবং তাড়নার মুখোমুখি হয়।

৫. মালাউইতে ১৯৬০ এর দশকে কোন তাড়নার ঢেউ বয়ে গিয়েছিল এবং সেখানকার সাক্ষিরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

আধুনিক দিনে যিহোবার লোকেরা প্রায়ই যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা বা সরাসরি তাড়নার জন্য প্রচণ্ড কষ্টকর পরিস্থিতি ভোগ করেছে এবং বঞ্চিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৬০ এর দশকে মালাউইর যিহোবার সাক্ষিরা প্রচণ্ডভাবে তাড়িত হয়েছিল। তাদের কিংডম হল, বাড়িঘর, খাবার সরবরাহ এবং ব্যাবসাবাণিজ্য—বলতে গেলে তাদের নিজস্ব প্রায় সমস্তকিছু—নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মারধর করা হয়েছিল এবং তারা বিভিন্ন হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। ভাইবোনেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? হাজার হাজার ব্যক্তিকে তাদের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। অনেকে ঝোপঝাড়ের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল আবার অন্যেরা প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিকে অস্থায়ীভাবে নির্বাসিত হয়েছিল। যদিও অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তি তাদের জীবন হারিয়েছিল কিন্তু অন্যেরা বিপদজনক এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া বেছে নিয়েছিল, যা এইরকম পরিস্থিতিগুলোতে স্পষ্টতই এক যুক্তিযুক্ত কাজ ছিল। তা করার মাধ্যমে ভাইবোনেরা যিশু এবং পৌলের দ্বারা স্থাপিত পূর্বদৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছিল।

৬. প্রচণ্ড তাড়না সত্ত্বেও, মালাউইর সাক্ষিরা কী করা বাদ দেয়নি?

মালাউইর ভাইবোনদের যদিও অন্য জায়গায় চলে যেতে অথবা লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল কিন্তু তারা ঈশতান্ত্রিক পরিচালনা খুঁজেছিল ও তা মেনে চলেছিল এবং তাদের খ্রিস্টীয় কাজকর্ম যথাসম্ভব গোপনে চালিয়ে গিয়েছিল। এর ফল কী হয়েছিল? ১৯৬৭ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করার ঠিক আগে রাজ্য প্রকাশকদের শীর্ষ সংখ্যা ১৮,৫১৯-এ গিয়ে পৌঁছেছিল। যদিও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল এবং অনেককে মোজাম্বিকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল, তবুও ১৯৭২ সালে ২৩,৩৯৮ জন প্রকাশকের এক নতুন শীর্ষ সংখ্যার রিপোর্ট করা হয়েছিল। তারা প্রতি মাসে গড়ে ১৬ ঘন্টারও বেশি সময় পরিচর্যায় ব্যয় করেছিল। নিঃসন্দেহে, তাদের কাজ যিহোবার প্রশংসা নিয়ে এসেছিল এবং সেই চরম কষ্টকর সময়ে ওই বিশ্বস্ত ভাইবোনদের ওপর যিহোবার আশীর্বাদ ছিল। *

৭, ৮. কোন কোন কারণে কেউ কেউ হয়তো পালিয়ে যাওয়া বেছে নেয় না, যদিও বিরোধিতার কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়?

অন্যদিকে, যে-দেশগুলোতে বিরোধিতার কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেখানকার কিছু ভাইবোন সেখান থেকে চলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যদিও তারা চাইলে তা করতে পারে। অন্য জায়গায় চলে গেলে হয়তো কিছু সমস্যার সমাধান হতে পারে কিন্তু এটা হয়তো অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা কি খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পৃথক না থাকতে সমর্থ হবে? আরও ধনী কোনো দেশে বা এমন এক জায়গায়, যেখানে বস্তুগত বিষয়ে উন্নতি করার বেশি সুযোগ রয়েছে, সেখানে যাওয়ার পর নিজেদের নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে তারা কি তাদের আধ্যাত্মিক রুটিন বজায় রাখতে পারবে?—১ তীমথিয় ৬:৯.

আবার কেউ কেউ অন্য জায়গায় না চলে যাওয়া বেছে নেয় কারণ তারা তাদের ভাইবোনদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করে। তারা সেখানে থাকা ও পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া বেছে নেয়, যাতে তাদের নিজেদের দেশের এলাকায় প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারে এবং সহউপাসকদের জন্য উৎসাহের এক উৎস হতে পারে। (ফিলিপীয় ১:১৪) এইরকম এক বাছাইয়ের মাধ্যমে কেউ কেউ এমনকি তাদের দেশে আইনগত বিজয় এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছে। *

৯. তাড়নার কারণে থাকা অথবা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এক ব্যক্তিকে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে?

থাকা অথবা অন্য জায়গায় চলে যাওয়া—অবশ্যই এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে, এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো আমাদের একমাত্র প্রার্থনাপূর্বক যিহোবার পরিচালনা চাওয়ার পরই নেওয়া উচিত। কিন্তু, আমরা যেটাই বেছে নিই না কেন, আমাদের প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো মনে রাখতে হবে: “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে।” (রোমীয় ১৪:১২) আগে যেমন আমরা দেখেছি যে, যিহোবা চান যাতে তাঁর প্রত্যেক দাস সমস্ত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বস্ত থাকে। তাঁর কোনো কোনো দাস বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষা এবং তাড়নার মুখোমুখি হচ্ছে; অন্যেরা হয়তো পরে হবে। সকলেই কোনো না কোনোভাবে পরীক্ষিত হবে এবং কারও এমন আশা করা উচিত নয় যে, সে তা থেকে মুক্ত। (যোহন ১৫:১৯, ২০) যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে, আমরা যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ ও তাঁর সার্বভৌমত্ব প্রতিপাদনের সঙ্গে জড়িত সর্বজনীন বিচার্য বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে পারি না।—যিহিষ্কেল ৩৮:২৩, NW; মথি ৬:৯, ১০.

“মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না”

১০. বিভিন্ন চাপ এবং বিরোধিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার বিষয়ে যিশু এবং প্রেরিতরা আমাদের জন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ পূর্বদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে?

১০ যিশু এবং প্রেরিতরা চাপের মুখে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তা থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ যে-নীতি আমরা শিখতে পারি, সেটা হল আমাদের তাড়নাকারীদের বিরুদ্ধে কখনও প্রতিশোধ না নেওয়া। বাইবেলের কোথাও আমরা এমন কোনো ইঙ্গিত পাই না যে, যিশু অথবা তাঁর অনুসারীরা তাদের তাড়নাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোনো ধরনের গুপ্ত দল গঠন করেছিল অথবা কোনো দৌরাত্ম্যের আশ্রয় নিয়েছিল। বিপরীতে, “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না,” প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। “হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন।’” এ ছাড়া, “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।”—রোমীয় ১২:১৭-২১; গীতসংহিতা ৩৭:১-৪; হিতোপদেশ ২০:২২.

১১. সরকারের প্রতি প্রাথমিক খ্রিস্টানদের আচরণ সম্বন্ধে একজন ইতিহাসবেত্তা কী বলেন?

১১ প্রাথমিক খ্রিস্টানরা এই পরামর্শে মনোযোগ দিয়েছিল। ইতিহাসবেত্তা সিসিল জে. কাডু তার প্রাথমিক গির্জা এবং জগৎ (ইংরেজি) বইয়ে সা.কা. ৩০-৭০ সালের মধ্যে সরকারের প্রতি খ্রিস্টানদের মনোভাব সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। তিনি লেখেন: “আমাদের কাছে এমন কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই যে, এই সময়ের খ্রিস্টানরা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাড়নার প্রতিরোধ করার জন্য কখনও কোনো প্রচেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা যা করত, তা হল জোরালোভাবে তাদের শাসকদের নিন্দা করত অথবা পালিয়ে গিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করত। কিন্তু, তাড়নার প্রতি সাধারণ খ্রিস্টীয় যে-প্রতিক্রিয়া দেখা যেত তা হল, তারা সরকারের সেই সমস্ত আদেশগুলো সংযত তবে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করত যদি তারা মনে করত যে, সেগুলো খ্রিস্টের প্রতি বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সংঘাত ঘটাবে।”

১২. প্রতিশোধ নেওয়ার চেয়ে দুঃখকষ্ট সহ্য করা কেন আরও উত্তম?

১২ আপাতদৃষ্টিতে বশীভূত বলে মনে হওয়া এই ধরনের কাজ কি আসলেই বাস্তবসম্মত? যিনিই এইরকম প্রতিক্রিয়া দেখান না কেন, তিনি কি সহজেই সেই ব্যক্তিদের শিকারে পরিণত হবেন না, যারা তাদের নির্মূল করে দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? নিজেকে রক্ষা করাই কি বিচক্ষণতার কাজ নয়? মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো এইরকমই মনে হতে পারে। কিন্তু, যিহোবার দাস হিসেবে আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চিত যে, সমস্ত বিষয়ে যিহোবার পরিচালনা অনুসরণ করা হল সর্বোত্তম কাজ। আমরা পিতরের এই কথাগুলো মনে রাখি: “সদাচরণ করিয়া দুঃখ ভোগ করিলে যদি সহ্য কর, তবে তাহাই ত ঈশ্বরের কাছে সাধুবাদের বিষয়।” (১ পিতর ২:২০) আমরা দৃঢ়নিশ্চিত যে, যিহোবা পরিস্থিতি সম্বন্ধে খুব ভাল করে জানেন এবং বিষয়গুলোকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে দেবেন না। কীভাবে আমরা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি? বাবিলে তাঁর বন্দি লোকেদের কাছে যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার [“আমার,” NW] চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখরিয় ২:৮) একজন ব্যক্তি কতক্ষণ পর্যন্ত তার চোখের তারা স্পর্শ করতে দেবেন? যিহোবা সঠিক সময়ে স্বস্তি নিয়ে আসবেন। সেই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।—২ থিষলনীকীয় ১:৫-৮.

১৩. কেন যিশু ইচ্ছাকৃতভাবে শত্রুদেরকে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে দিয়েছিলেন?

১৩ এই ক্ষেত্রে আমরা আমাদের আদর্শ হিসেবে যিশুর দিকে দৃষ্টি দিতে পারি। তিনি যখন গেৎশিমানী বাগানে তাঁর শত্রুদেরকে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে দিয়েছিলেন, তখন তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন না বলে তা করেননি। বস্তুত, তিনি তাঁর শিষ্যদের একজনকে বলেছিলেন: “তুমি কি মনে কর যে আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না? কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া শাস্ত্রীয় এই বচন সকল পূর্ণ হইবে যে, এরূপ হওয়া আবশ্যক?” (মথি ২৬:৫৩, ৫৪) যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন করাই যিশুর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এমনকি যদিও এর মানে ছিল যে, তাকে কষ্টভোগ করতে হবে। গীতরচক দায়ূদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এই কথাগুলোর প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা ছিল: “তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না।” (গীতসংহিতা ১৬:১০) কয়েক বছর পর প্রেরিত পৌল যিশুর সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।”—ইব্রীয় ১২:২.

যিহোবার নামকে পবিত্র করার আনন্দ

১৪. কোন আনন্দ যিশুকে তাঁর সমস্ত পরীক্ষার মধ্যে শক্তি দিয়েছিল?

১৪ কল্পনা করা যায় এমন কোন আনন্দ যিশুকে চরম পরীক্ষার মধ্যে শক্তি দিয়েছিল? যিহোবার সমস্ত দাসের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র যিশু ছিলেন শয়তানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। তাই, পরীক্ষার মধ্যে যিশুর নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা, যিহোবার বিরুদ্ধে শয়তানের টিটকারীর উপযুক্ত উত্তর হয়েছিল। (হিতোপদেশ ২৭:১১) পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু যে-আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি বোধ করেছিলেন, তা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে, যিহোবার সার্বভৌমত্ব প্রতিপাদন এবং তাঁর নামের পবিত্রীকরণের জন্য তাঁকে যে-ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা যে তিনি পরিপূর্ণ করেছেন, সেই বিষয়টা উপলব্ধি করে তিনি কতই না আনন্দিত হয়েছিলেন! এ ছাড়া, “ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে” উপবিষ্ট হওয়া নিঃসন্দেহে যিশুর জন্য এক অপূর্ব সম্মান এবং আনন্দের এক মহা উৎস।—গীতসংহিতা ১১০:১, ২; ১ তীমথিয় ৬:১৫, ১৬.

১৫, ১৬. জাক্‌সেনহোজেনের যিহোবার সাক্ষিরা কোন চরম তাড়না সহ্য করেছিল এবং কী তাদের তা সহ্য করার জন্য শক্তি দিয়েছিল?

১৫ একইভাবে খ্রিস্টানদের জন্যও যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করে বিভিন্ন পরীক্ষা ও তাড়না সহ্য করার মাধ্যমে যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করায় অংশ নেওয়া এক আনন্দের বিষয়। সেই সমস্ত সাক্ষিদের অভিজ্ঞতা হল এক উপযুক্ত উদাহরণ, যারা কুখ্যাত জাক্‌সেনহোজেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কষ্টভোগ করেছিল এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধের শেষে চরম মৃত্যুযাত্রা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। যাত্রা করার সময় হাজার হাজার বন্দি চরম আবহাওয়া, রোগব্যাধি বা ক্ষুধার কারণে অথবা তাদের সঙ্গে চলা এসএস রক্ষীদের নিষ্ঠুর অত্যাচারের কারণে মারা গিয়েছিল। মোট ২৩০ জন সাক্ষি সকলে একত্রে থেকে এবং নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একে অপরকে সাহায্য করে রক্ষা পেয়েছিল।

১৬ কোন বিষয়টা সাক্ষিদের এইরকম চরম তাড়না সহ্য করার জন্য শক্তি দিয়েছিল? নিরাপদে পৌঁছানো মাত্রই তারা একটা দলিলে তাদের আনন্দ এবং যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল, যেটার শিরোনাম ছিল “ম্যাকলেনবার্গের শেরিনের নিকটবর্তী একটা জঙ্গলে একত্রিত ছয় জাতি থেকে আসা ২৩০ জন যিহোবার সাক্ষির দৃঢ়সংকল্প।” এটার মধ্যে তারা বলেছিল: “পরীক্ষার এক দীর্ঘ কঠিন সময় অতিক্রান্ত হয়েছে এবং যারা রক্ষা পেয়েছে, তাদের যেন জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হয়েছে, এমনকি তাদের গায়ে আগুনের কোনো গন্ধও নেই। (দানিয়েল ৩:২৭ পদ দেখুন।) বিপরীতে, যিহোবার কাছ থেকে তারা পূর্ণ শক্তি এবং ক্ষমতা পেয়েছে এবং ঈশতান্ত্রিক কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজার কাছ থেকে নতুন নতুন আদেশ পাওয়ার জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছে।” *

১৭. যিহোবার লোকেরা এখন কোন ধরনের পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়?

১৭ সেই ২৩০ জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির মতো আমাদের বিশ্বাসও পরীক্ষিত হতে পারে, যদিও এখনও পর্যন্ত আমরা “রক্তব্যয় পর্যন্ত প্রতিরোধ করি” নাই। (ইব্রীয় ১২:৪) কিন্তু পরীক্ষা অনেক রকমের হতে পারে। সেটা হতে পারে সহপাঠীদের কাছ থেকে উপহাস অথবা অনৈতিক বিষয় এবং অন্যান্য অন্যায় কাজ করার জন্য সঙ্গীসাথিদের কাছ থেকে আসা চাপ। এ ছাড়া, রক্ত থেকে পৃথক থাকার, শুধুমাত্র প্রভুতেই বিবাহ করার অথবা বিভক্ত পরিবারে ছেলেমেয়েদের বিশ্বাসে মানুষ করে তোলার সংকল্প মাঝে মাঝে প্রচণ্ড চাপ এবং বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়ে আসতে পারে।—প্রেরিত ১৫:২৯; ১ করিন্থীয় ৭:৩৯; ইফিষীয় ৬:৪; ১ পিতর ৩:১, ২.

১৮. আমাদের এমন কোন আশ্বাস রয়েছে, যার ফলে আমরা এমনকি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরীক্ষাও সহ্য করতে পারি?

১৮ কিন্তু, আমাদের ওপর যে-তাড়নাই আসুক না কেন, আমরা জানি যে আমরা তাড়না ভোগ করি কারণ যিহোবা এবং তাঁর রাজ্যকে আমরা প্রথমে রাখি আর এটাকে প্রকৃতই এক বিশেষ সুযোগ এবং তা করাকে আনন্দজনক বলে মনে করি। আমরা পিতরের এই আশ্বাসজনক কথাগুলো থেকে সাহস পাই: “তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য [“সুখী,” NW]; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের উপরে অবস্থিতি করিতেছেন।” (১ পিতর ৪:১৪) যিহোবার আত্মার শক্তিতে আমাদের এমনকি সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর মধ্যেও সহ্য করার শক্তি থাকে, সমস্তই তাঁর প্রতাপ এবং প্রশংসার জন্য।—২ করিন্থীয় ৪:৭; ইফিষীয় ৩:১৬; ফিলিপীয় ৪:১৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৬০ এর দশকের ঘটনাগুলো ছিল ধারাবাহিকভাবে তিক্ত এবং নিষ্ঠুর তাড়নার কেবল শুরু, যা মালাউইর সাক্ষিদের প্রায় তিন দশক ধরে সহ্য করতে হয়েছিল। সম্পূর্ণ বিবরণের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৯৯ (ইংরেজি) বইয়ের ১৭১-২১২ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ২০০৩ সালের ১লা এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১১-১৪ পৃষ্ঠায় “‘অরারট দেশে’ সর্বোচ্চ আদালত সত্য উপাসনাকে সমর্থন করে,” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।

^ এই সংকল্পের পুরো বিষয়বস্তুর জন্য যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৭৪ (ইংরেজি) বইয়ের ২০৮-৯ পৃষ্ঠা দেখুন। যাত্রার মধ্যে থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তির সরাসরি বর্ণিত বিবরণ ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৫-৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যেতে পারে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• দুঃখকষ্ট এবং তাড়নাকে খ্রিস্টানরা কোন দৃষ্টিতে দেখে?

• যিশু এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা পরীক্ষার মধ্যে যে-প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• আমরা যখন তাড়িত হই, তখন প্রতিশোধ নেওয়া কেন বিজ্ঞের কাজ নয়?

• কোন আনন্দ যিশুকে তাঁর পরীক্ষাগুলোর সময় শক্তি জুগিয়েছিল এবং এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

তারা তাড়নার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করেছিল

• হেরোদের সৈন্যরা দুই বছর এবং এর নিচে সমস্ত ছেলে শিশুকে হত্যা করার জন্য বৈৎলেহমে আসার আগেই দূতের নির্দেশনায় যোষেফ এবং মরিয়ম শিশু যিশুকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে গিয়েছিল।—মথি ২:১৩-১৬.

• যিশুর পরিচর্যার সময় অসংখ্যবার তাঁর শত্রুরা তাঁকে তাঁর জোরালো সাক্ষ্যদানের জন্য হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। প্রতিবারই যিশু কৌশলে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।—মথি ২১:৪৫, ৪৬; লূক ৪:২৮-৩০; যোহন ৮:৫৭-৫৯.

• সৈন্যরা এবং পদাতিকরা যখন গেৎশিমানী বাগানে যিশুকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল, তখন তিনি প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন, দুবার তাদের বলেছিলেন: “আমিই তিনি।” তিনি এমনকি তাঁর অনুসারীদের যেকোনো প্রতিরোধ করতেও বাধা দিয়েছিলেন এবং তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনতাকে সুযোগ দিয়েছিলেন।—যোহন ১৮:৩-১২.

• যিরূশালেমে পিতর এবং অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, মারধর করা হয়েছিল এবং যিশুর নামে কোনো কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পর তারা “চলিয়া গেলেন, . . . আর তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।”—প্রেরিত ৫:৪০-৪২.

• শৌল, যিনি পরে প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন, তিনি যখন তাকে মেরে ফেলার বিষয়ে দম্মেশকের যিহুদিদের চক্রান্ত সম্বন্ধে জেনে গিয়েছিলেন, তখন ভাইয়েরা রাতের বেলায় তাকে একটা ঝুড়িতে ভরে এক নগরের প্রাচীর দিয়ে নিচে নামিয়ে দিয়েছিল আর এর ফলে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।—প্রেরিত ৯:২২-২৫.

• কয়েক বছর পর, পৌল কৈসরের কাছে আপীল করেন যদিও দেশাধ্যক্ষ ফীষ্ট এবং রাজা আগ্রিপ্প উভয়ই তার “প্রাণদণ্ডের কিম্বা বন্ধনের যোগ্য” কিছুই খুঁজে পায়নি।—প্রেরিত ২৫:১০-১২, ২৪-২৭; ২৬:৩০-৩২.

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যদিও তিক্ত তাড়না পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল কিন্তু মালাউইর হাজার হাজার বিশ্বস্ত সাক্ষি আনন্দের সঙ্গে রাজ্যের কাজ চালিয়ে গিয়েছিল

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করার আনন্দ এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নাৎসি মৃত্যুযাত্রার এবং কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে থাকার সময় শক্তি জুগিয়েছিল

[সৌজন্যে]

মৃত্যুযাত্রা: KZ-Gedenkstätte Dachau, courtesy of the USHMM Photo Archives

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পরীক্ষা এবং চাপগুলো অনেক রকমের হতে পারে