সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দান করার মনোভাব গড়ে তুলুন

দান করার মনোভাব গড়ে তুলুন

দান করার মনোভাব গড়ে তুলুন

 কেউই দান করার মনোভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। একটা শিশুর স্বাভাবিক প্রবণতা হল নিজের আকাঙ্ক্ষা এবং চাহিদাগুলো পরিতৃপ্ত করা, এমনকি যারা তার দেখাশোনা করে তাদের আগ্রহের বিষয়েও অসতর্ক থাকে। কিন্তু, অবশেষে একজন সন্তান শেখে যে, জগৎ কেবল তাকে ঘিরেই আবর্তিত নয়। অন্যদের কথাও বিবেচনা করতে হবে এবং তাকে শুধু গ্রহণই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে দান করতে ও ভাগ করে নিতে শিখতে হবে। দান করার মনোভাব গড়ে তোলা দরকার।

যারা দান করে এমনকি উদারভাবে, এমন সমস্ত লোকেরই দান করার মনোভাব নেই। কেউ কেউ তাদের নিজেদের স্বার্থকে উন্নীত করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হয়তো দান করতে পারে। আবার অন্যেরা হয়তো লোকেদের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য দান দিতে পারে। কিন্তু, প্রকৃত খ্রিস্টানরা যে-দান দিয়ে থাকে, সেটা আলাদা। তা হলে সেই দান করার বৈশিষ্ট্যগুলো কী, যে-বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে উৎসাহিত করা হয়েছে? প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যে-দান দিতে অভ্যস্ত ছিল, সেই বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে।

খ্রিস্টীয় দানের উদাহরণগুলো

বাইবেলে যেমনটা বর্ণনা করা হয়েছে, খ্রিস্টীয় দান ছিল, সেই সমস্ত ব্যক্তির সঙ্গে “সহভাগিতার কার্য্য” করা, যাদের প্রকৃতই দরকার ছিল। (ইব্রীয় ১৩:১৬; রোমীয় ১৫:২৬) এটা কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।” (২ করিন্থীয় ৯:৭) এ ছাড়া, লোকদেখানোর উদ্দেশ্যেও দান করা হতো না। অননিয় ও সাফীরা সেইরকম করার ভান করেছিল আর এর জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।—প্রেরিত ৫:১-১০.

দান করার প্রয়োজন সেই সময় প্রথম স্থানে চলে আসে, যখন অনেক যিহুদি এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর উৎসবের জন্য যিরূশালেমে মিলিত হয়েছিল। সেখানেই যিশুর অনুগামীরা “পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন।” তাদের চারপাশে বিস্তর লোক জড় হয়েছিল এবং যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে পিতরের উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা শুনেছিল। পরবর্তী সময়ে লোকেরা দেখেছিল যে, পিতর এবং যোহন কীভাবে ধর্মধামের দরজার কাছে একজন খঞ্জ ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিল এবং পিতরকে তারা আবারও যিশুর বিষয়ে এবং অনুতপ্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে কথা বলতে শুনেছিল। হাজার হাজার ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়েছিল এবং খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল।—প্রেরিত ২ এবং অধ্যায়।

নতুন ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা যিরূশালেমে থেকে যিশুর প্রেরিতদের কাছ থেকে আরও নির্দেশনা পেতে চেয়েছিল। কিন্তু, প্রেরিতরা কীভাবে সেই সমস্ত অভ্যাগত ব্যক্তির প্রয়োজনের যত্ন নিতে পারত? বাইবেলের বিবরণ আমাদের বলে: “যাহারা ভূমির অথবা বাটীর অধিকারী ছিল, তাহারা তাহা বিক্রয় করিয়া, বিক্রীত সম্পত্তির মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিত; পরে যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত।” (প্রেরিত ৪:৩৩-৩৫) সত্যিই, সদ্য গঠিত যিরূশালেম মণ্ডলীর দান করার মনোভাব ছিল!

পরবর্তী সময়ে অন্যান্য মণ্ডলীও দান করার একই মনোভাব দেখিয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাকিদনিয়ার খ্রিস্টানরা দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও যিহূদার অভাবী ভাইবোনদের জন্য তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত দান করেছিল। (রোমীয় ১৫:২৬; ২ করিন্থীয় ৮:১-৭) ফিলিপীয় মণ্ডলী পৌলের পরিচর্যায় সাহায্য করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল। (ফিলিপীয় ৪:১৫, ১৬) যিরূশালেম মণ্ডলী রোজ অভাবী বিধবাদের মধ্যে খাবার বিতরণ করত এবং প্রেরিতরা সাত জন যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছিল, যাতে কোনো যোগ্য বিধবা এর থেকে উপেক্ষিত না হয়।—প্রেরিত ৬:১-৬.

প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলো এমনকি কঠিন সময় আসবে জানা সত্ত্বেও দ্রুত সাড়া দিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভাববাদী আগাব যখন আসন্ন মহাদুর্ভিক্ষের বিষয়ে আগেই বলে দিয়েছিলন, তখন সিরিয়ার আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর শিষ্যরা “প্রতিজন স্ব স্ব সঙ্গতি অনুসারে যিহূদিয়া-নিবাসী ভ্রাতৃগণের পরিচর্য্যার জন্য তাঁহাদের কাছে সাহায্য পাঠাইতে স্থির করিলেন।” (প্রেরিত ১১:২৮, ২৯) অন্যদের প্রয়োজন সম্বন্ধে আগে থেকে জেনে কী এক উত্তম মনোভাবই না তারা দেখিয়েছিল!

কী প্রাথমিক খ্রিস্টানদের এত উদার ও প্রেমময় হতে অনুপ্রাণিত করেছিল? বস্তুত, একজন ব্যক্তি কীভাবে দান করার এক মনোভাব অর্জন করতে পারেন? সংক্ষেপে রাজা দায়ূদের উদাহরণ বিবেচনা করে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।

সত্য উপাসনায় দায়ূদের উদার সমর্থন

প্রায় ৫০০ বছর ধরে, নিয়ম সিন্দুক—এক পবিত্র সিন্দুক, যা যিহোবার উপস্থিতিকে চিত্রিত করত—রাখার কোনো স্থায়ী জায়গা ছিল না। এটিকে একটা তাঁবু বা আবাসের মধ্যে রাখা হতো, যা প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের ঘুরে বেড়ানোর সময় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এবং এরপর প্রতিজ্ঞাত দেশে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। রাজা দায়ূদ আকুলভাবে সিন্দুকটি যেখানে রাখা ছিল সেই তাঁবু থেকে সরিয়ে যিহোবার জন্য একটা উপযুক্ত গৃহ নির্মাণ করে সেখানে সেই পবিত্র সিন্দুকটি রাখতে চেয়েছিলেন। ভাববাদী নাথনের সঙ্গে কথা বলার সময় দায়ূদ বলেছিলেন: “দেখুন, আমি এরসকাষ্ঠের গৃহে বাস করিতেছি, কিন্তু সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক যবনিকার অন্তরালে বাস করিতেছে।”—১ বংশাবলি ১৭:১.

কিন্তু, দায়ূদ একজন যোদ্ধা ছিলেন। তাই, যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন যে তার ছেলে শলোমন এক শান্তিপূর্ণ রাজত্বের সময় নিয়ম সিন্দুক রাখার জন্য মন্দির নির্মাণ করবে। (১ বংশাবলি ২২:৭-১০) কিন্তু, এটা দায়ূদের দান করার মনোভাবে বাধা দেয়নি। এই উদ্দেশ্যে এক বিশেষ কর্মীগোষ্ঠী সংগঠিত করে তিনি বস্তুগত বিষয়গুলো জোগাতে শুরু করেন, যেগুলো মন্দিরের নির্মাণ কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে। পরবর্তী সময়ে তিনি শলোমনকে বলেছিলেন: “আমি . . . সদাপ্রভুর গৃহের জন্য এক লক্ষ তালন্ত স্বর্ণ ও দশ লক্ষ তালন্ত রৌপ্য এবং অপরিমেয় পিত্তল ও লৌহ প্রস্তুত করিয়াছি, বাস্তবিক তাহা অপর্য্যাপ্ত; আর কাষ্ঠ ও প্রস্তর প্রস্তুত করিয়াছি।” (১ বংশাবলি ২২:১৪) সেটার দ্বারা পরিতৃপ্ত না হয়ে, দায়ূদ তার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে আরও সোনা ও রুপো দান করেছিলেন, বর্তমানে যার মূল্য ১২০,০০,০০,০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি। এ ছাড়া, পিতৃকুলপতিগণও মুক্তহস্তে দান করেছিল। (১ বংশাবলি ২৯:৩-৯) নিশ্চিতভাবেই, দায়ূদ এক উদার অর্থাৎ দান করার মনোভাব দেখিয়েছিলেন!

কী দায়ূদকে এত উদারভাবে দান করতে প্রেরণা দিয়েছিল? তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি যা কিছু অর্জন এবং সম্পাদন করেছিলেন, সেগুলোর সবই যিহোবার আশীর্বাদের ফলে হয়েছে। তিনি প্রার্থনায় স্বীকার করেছিলেন: “হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার পবিত্র নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার জন্য আমরা এই যে দ্রব্যরাশির আয়োজন করিয়াছি, এ সকল তোমার হস্ত হইতেই আসিয়াছে, এবং সকলই তোমার। আর আমি জানি, হে আমার ঈশ্বর তুমি অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া থাক, ও তুমি সরলতায় প্রসন্ন; আমি আপন অন্তঃকরণের সরলতায় ইচ্ছাপূর্ব্বক এই সকল দ্রব্য দিলাম, এবং এখন এই স্থানে সমাগত তোমার প্রজাদিগকেও আনন্দ সহকারে তোমার উদ্দেশে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিতে দেখিলাম।” (১ বংশাবলি ২৯:১৬, ১৭) দায়ূদ যিহোবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে মূল্যবান গণ্য করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে “একাগ্র অন্তঃকরণে ও ইচ্ছুক মনে” সেবা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তা করে তিনি আনন্দও পেয়েছিলেন। (১ বংশাবলি ২৮:৯) এই একই গুণাবলি প্রাথমিক খ্রিস্টানদেরও দান করার মনোভাব দেখাতে প্রেরণা দিয়েছিল।

যিহোবা —সর্বমহান দাতা

দান করার ক্ষেত্রে যিহোবা হলেন সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ। তিনি এত প্রেমময় এবং যত্নবান যে “তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৫) সমস্ত মানবজাতিকে তিনি “জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই” দান করেন। (প্রেরিত ১৭:২৫) বস্তুত, শিষ্য যাকোব যেমন উল্লেখ করেছিলেন, “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে।”—যাকোব ১:১৭.

আমাদের জন্য যিহোবার সর্বমহান দান বা উপহার হল তাঁর “একজাত পুত্ত্রকে” পাঠানো “যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) কেউই এইরকম এক উপহার পাওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য দাবি করতে পারে না “কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩, ২৪; ১ যোহন ৪:৯, ১০) খ্রিস্টের বলিদান হল ঈশ্বরের “বর্ণনাতীত দানের” ভিত্তি ও মাধ্যম অর্থাৎ “ঈশ্বরের অতি মহৎ অনুগ্রহ।” (২ করিন্থীয় ৯:১৪, ১৫) ঈশ্বরের দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে পৌল “ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচারের পক্ষে সাক্ষ্য” দেওয়াকে তার জীবনের প্রধান কাজ করে তুলেছিলেন। (প্রেরিত ২০:২৪) তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।”—১ তীমথিয় ২:৪.

আজকে, বিরাট প্রচার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজের মাধ্যমে তা সম্পাদিত হচ্ছে, যা এখন পৃথিবীব্যাপী দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৪টা জায়গায় বিস্তৃত হয়েছে। যিশু এই প্রসার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) হ্যাঁ, “অগ্রে সর্ব্বজাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক।” (মার্ক ১৩:১০) গত বছর ৬০ লক্ষেরও বেশি সুসমাচার ঘোষণাকারী এই কাজে ১২০,২৩,৮১,৩০২ ঘন্টা ব্যয় করেছে এবং ৫৩,০০,০০০ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছে। যেহেতু জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাই এই নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।—রোমীয় ১০:১৩-১৫; ১ করিন্থীয় ১:২১.

বাইবেলের সত্যের প্রতি যারা ক্ষুধার্ত তাদের সাহায্য করার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রকাশনা—যার মধ্যে রয়েছে বাইবেল, বই এবং ব্রোশার—ছাপানো হয়। এ ছাড়া, একশো কোটিরও বেশি সংখ্যায় প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা উৎপাদন করা হয়। লোকেরা সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেওয়ায় আরও বেশি করে যিহোবার সাক্ষিদের কিংডম হল এবং অধিবেশন হল নির্মাণ করা হয়, যেগুলো বাইবেল নির্দেশনার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। প্রতি বছর সীমা অধিবেশন ও বিশেষ অধিবেশন দিন ও সেইসঙ্গে জেলা সম্মেলনগুলোর ব্যবস্থা করা হয়। মিশনারি, ভ্রমণ অধ্যক্ষ, প্রাচীন এবং পরিচারক দাসদের প্রশিক্ষণও এক চলমান প্রক্রিয়া। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে এই সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন বলে আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আমরা কতই না ভালবাসি!

যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো

মন্দির নির্মাণ ও সেইসঙ্গে প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোর প্রয়োজন মেটানোর জন্য সমস্ত আর্থিক জোগান সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাকৃত দানের মাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু, এটা মনে রাখতে হবে যে, কেউই সমস্ত কিছুর মালিক যিহোবাকে ধনবান করতে পারে না। (১ বংশাবলি ২৯:১৪; হগয় ২:৮) তাই, দান হল যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসার এবং সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ইচ্ছার এক প্রমাণ। পৌল বলেন, উদারতার এই অভিব্যক্তিগুলো “ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ সম্পন্ন করে।” (২ করিন্থীয় ৯:৮-১৩) যিহোবা এইরকম দানের বিষয়ে উৎসাহিত করেন কারণ এটা দেখায় যে, তাঁর প্রতি আমাদের সঠিক মনোভাব ও উত্তম হৃদয় রয়েছে। যারা উদার এবং যিহোবার ওপর নির্ভর করে, তাদের তিনি আশীর্বাদ করবেন আর তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতিলাভ করবেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৩-১৫; হিতোপদেশ ৩:৯, ১০; ১১:২৫) “গ্রহণ করার অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য [“সুখী,” NW] হইবার বিষয়,” এই কথাগুলো বলে যিশু আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এর ফলে সুখ আসবে।—প্রেরিত ২০:৩৫.

যে-খ্রিস্টানদের দান করার মনোভাব রয়েছে, তারা শুধু প্রয়োজনের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। এর পরিবর্তে তারা ‘সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করিবার’ জন্য সুযোগ খোঁজে। (গালাতীয় ৬:১০) ঈশ্বরীয় উদারতার বিষয়ে উৎসাহ দিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।” (ইব্রীয় ১৩:১৬) অন্যদের সাহায্য করার এবং শুদ্ধ উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সম্পদগুলো—সময়, শক্তি, টাকাপয়সা—ব্যবহার করা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে অত্যন্ত প্রীতিজনক। সত্যিই, দান করার মনোভাবকে তিনি ভালবাসেন।

[২৮, ২৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

কছুজন দান করার জন্য যে-উপায়গুলো বেছে নেয়

শিক্ষামূলক কাজের জন্য দান

অনেকে কিছু পয়সা আলাদা করে রাখে যা তারা সেই দান বাক্সে ফেলে, যেখানে লেখা থাকে: “শিক্ষমূলক কাজের জন্য দান—মথি ২৪:১৪.”

প্রত্যেক মাসে, মণ্ডলীগুলো এই পয়সা যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে পাঠিয়ে দেয় যেটা তাদের নিজের নিজের দেশে রয়েছে। লোকেরা স্বেচ্ছায় যে-পয়সা দান করে, সেটাও সরাসরি এই অফিসগুলোতে পাঠানো যেতে পারে। শাখা অফিসগুলোর ঠিকানা এই পত্রিকার ২ পৃষ্ঠায় পাওয়া যেতে পারে। চেকগুলো যাতে “ওয়াচ টাওয়ার” পায় তার ব্যবস্থা করা উচিত। গয়না অথবা অন্য কোন দামি জিনিসগুলোও দান করা যেতে পারে। আর এই দানের সঙ্গে একটা ছোট চিঠি লিখে পাঠানো দরকার, যেখানে লেখা থাকবে যে, এই দানগুলোকে যেন এক শর্তহীন উপহার হিসেবে নেওয়া হয়।

শর্তযুক্ত দান ব্যবস্থা

কিছু কিছু দেশে, এক বিশেষ ব্যবস্থার অধীনে পয়সা দান করা হয়ে থাকতে পারে, যেটাতে দানকারী যদি সেটা পাওয়ার অনুরোধ জানান, তা হলে তাকে হয়তো দান ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আরও তথ্য জানার জন্য, দয়া করে আপনার স্থানীয় শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

পরিকল্পিত দান

শিক্ষার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শর্তহীন উপহার ও শর্তযুক্ত দানগুলো ছাড়াও, যে-দেশে আপনি বসবাস করেন তার ওপর ভিত্তি করে দান করার আরও কিছু উপায় আছে। যেমন:

বীমা: জীবন বীমা প্রকল্পের অথবা রিটায়েরমেন্ট/পেনশন যোজনার সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-র নাম দেওয়া যেতে পারে।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টস্‌: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ডিপোজিটের সার্টিফিকেট অথবা ব্যক্তির অবসরকালীন অ্যাকাউন্টগুলো স্থানীয় ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-কে ট্রাস্ট হিসেবে অথবা ব্যক্তির মৃত্যুর পর প্রদানযোগ্য হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।

স্টক্সস্‌ ও বন্ডস্‌: এক শর্তহীন উপহার হিসেবে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-কে স্টক্সস্‌ ও বণ্ডস্‌ দান দেওয়া যেতে পারে।

স্থাবর সম্পত্তি: বিক্রয়সাধ্য স্থাবর সম্পত্তি এক শর্তহীন উপহার হিসেবে বা বসতবাড়ি সম্পত্তির ক্ষেত্রে দানকারী জীবনকাল অবধি সেখানে থাকবেন এমন শর্তে দান করা যেতে পারে। কোনো স্থাবর সম্পত্তি দেওয়ার জন্য দলিলের ব্যবস্থা করার আগে আপনার দেশে শাখা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

বার্ষিক বৃত্তি উপহার: বার্ষিক বৃত্তি উপহার হল একটা ব্যবস্থা যেটাতে একজন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-কে পয়সা বা বিনিয়োগগুলো হস্তান্তরিত করেন। এটার বিনিময়ে, দানকারী অথবা দানকারীর দ্বারা নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি জীবনভোর প্রতি বছর এক নির্দিষ্ট বার্ষিক বৃত্তির টাকা পান। যে-বছর থেকে বার্ষিক বৃত্তি উপহার ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেই সময় থেকে দানকারী আয়-করে ছাড় পান।

উইল ও ট্রাস্ট: সম্পত্তি অথবা অর্থ ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-কে আইনসম্মতভাবে স্বীকৃত উইলের সাহায্যে দেওয়া যেতে পারে অথবা ট্রাস্টের চুক্তির সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-র নাম দেওয়া যেতে পারে। যে-ট্রাস্টের দ্বারা কোন ধর্মীয় সংগঠন উপকৃত হচ্ছে সেটা কর দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু সুযোগসুবিধা জোগাতে পারে।

“পরিকল্পিত দান” কথাটা যেমন অর্থ রাখে, এইধরনের দানগুলো করার জন্য দানকারীর আগে থেকেই পরিকল্পনা করার দরকার আছে। পরিকল্পিত দানের কোনো এক প্রকারের মাধ্যমে যিহোবার সাক্ষিদের শিক্ষামূলক কাজে সাহায্য করার ইচ্ছা রাখে এমন ব্যক্তিবিশেষদের সহায়তা করতে ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় একটা ব্রোশার প্রস্তুত করা হয়েছে যেটার শিরোনাম হল, শিক্ষামূলক কাজে সাহায্য করতে পরিকল্পিত দান। বিভিন্ন দান, উইল এবং ট্রাস্ট সম্বন্ধে পাওয়া অনেকের নানা প্রশ্নের উত্তরে এই ব্রোশারটি লেখা হয়েছে। এ ছাড়া, এতে স্থাবর সম্পত্তি, আর্থিক এবং কর পরিকল্পনা সংক্রান্ত অতিরিক্ত দরকারী তথ্য রয়েছে। এটা ব্যক্তিদের সেই বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে জানায় যেগুলোর মাধ্যমে উপহারগুলো এখনই অথবা মৃত্যুতে উইল করা সম্পত্তির মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। এই ব্রোশারটি পড়ার এবং তাদের নিজস্ব আইন অথবা কর উপদেষ্টাদের এবং পরিকল্পিত দানের অফিসের সঙ্গে পরামর্শ করার পর, অনেকেই পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের সহায়তা করতে সমর্থ হয়েছে আর একই সময়ে, তা করে তাদের কর দেওয়ার সুবিধাগুলো বাড়িয়েছে।

আরও তথ্য জানার জন্য, আপনি হয়তো চিঠি লিখে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে নিচে দেওয়া ঠিকানায় অথবা আপনার দেশে সেবারত যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

Jehovah’s Witnesses of India,

Post Box ৬৪৪০,

Yelahanka,

Bangalore ৫৬০ ০৬৪,

Karnataka.

Telephone: (০৮০) ৮৪৬৮০৭২

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী প্রাথমিক খ্রিস্টানদের উদার হতে অনুপ্রাণিত করেছিল?