সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আগের ও পরের জীবন বাইবেলের নীতিগুলো এক পার্থক্য এনেছে

আগের ও পরের জীবন বাইবেলের নীতিগুলো এক পার্থক্য এনেছে

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন”

আগের ও পরের জীবন বাইবেলের নীতিগুলো এক পার্থক্য এনেছে

 একজন যুবক ব্যক্তি হিসেবে অ্যাড্রিয়ান প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ ছিলেন এবং তিতিবিরক্ত হয়ে পড়তেন। সহজেই রেগে যাওয়ার ফলে তিনি রাগে ফেটে পড়ে তুলকালাম কাণ্ড করতেন। তিনি মদ খেতেন, ধূমপান করতেন এবং এক অনৈতিক জীবনযাপন করতেন। অ্যাড্রিয়ান একজন পাঙ্ক (অদ্ভুত সাজপোশাক ও কিম্ভূত মুখচ্ছবি) হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং একটা উলকি আঁকান, যা বিশৃঙ্খলতার প্রতি তার বিশ্বাস প্রতিফলিত করত। সেই বছরগুলোর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন: “আমি সাধারণ পাঙ্কদের মতো করে চুল কাটাতাম, চুলগুলোকে খাড়া করার জন্য অনেক আঠা ব্যবহার করতাম এবং মাঝে মাঝে লাল বা অন্য রং লাগাতাম।।” অ্যাড্রিয়ান নাকও ফুঁটো করিয়েছিলেন।

অ্যাড্রিয়ান অন্যান্য কিছু বিদ্রোহী যুবকের সঙ্গে জরাজীর্ণ একটা বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা মদ খেত এবং মাদকদ্রব্য সেবন করত। “আমি স্পিড নামে এক ধরনের মাদক সেবন করতাম এবং এটাকে স্নায়ুর উত্তেজনা শান্ত করার ওষুধ ভেলিয়াম বা হাতের কাছে যা পেতাম সেটার সঙ্গে ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে গ্রহণ করতাম,” অ্যাড্রিয়ান মনে করে বলেন। “যখন কোনো মাদকদ্রব্য বা আঠা পাওয়া যেত না, তখন আমি লোকেদের গাড়ি থেকে ধীরে ধীরে পেট্রোল ঢেলে সেটাতে মত্ত হয়ে থাকতাম।” রাস্তাঘাটে থেকে অপরাধমূলক এক জীবনযাপন করে অ্যাড্রিয়ান আতঙ্কজনক এবং প্রচণ্ড দৌরাত্ম্যপূর্ণ হয়ে ওঠেন। সাধারণ লোকেরা তার সঙ্গে মিশতে চাইত না। একই সময়ে, তার কুখ্যাতি খারাপ বন্ধুবান্ধবদের আকৃষ্ট করত।

ধীরে ধীরে অ্যাড্রিয়ান বুঝতে পারেন যে, তার “বন্ধুবান্ধবরা” শুধু কিছু পাওয়ার জন্য তার সঙ্গে মেলামেশা করে। এ ছাড়া, তিনি এই উপসংহারে পৌঁছান যে, “রাগ এবং দৌরাত্ম্য কোনো কিছু সম্পাদন করতে পারেনি।” শূন্যতা এবং হতাশা বোধ করে তিনি তার বন্ধুবান্ধবদের ত্যাগ করেছিলেন। তিনি যখন নির্মাণাধীন এক জায়গা থেকে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার একটা কপি খুঁজে পান, তখন তিনি এর মধ্যেকার বাইবেল ভিত্তিক বার্তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং এটা তাকে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে পরিচালিত করে। অ্যাড্রিয়ান আগ্রহের সঙ্গে এই আমন্ত্রণের প্রতি সাড়া দেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) এর ফলে, অ্যাড্রিয়ান শীঘ্রই পবিত্র শাস্ত্রে পাওয়া নীতিগুলো কাজে লাগাতে শুরু করার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পান।

বাইবেলের বিষয়ে বৃদ্ধিরত জ্ঞান অ্যাড্রিয়ানের বিবেকের ওপর উত্তম প্রভাব ফেলে এবং তার জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করে। তাকে তার সহজেই রেগে যাওয়ার স্বভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আত্মসংযম গড়ে তুলতে সাহায্য করা হয়। ঈশ্বরের বাক্যের সাহায্যে অ্যাড্রিয়ানের ব্যক্তিত্ব অনেক ভিন্ন হয়ে যায়।—ইব্রীয় ৪:১২.

কিন্তু, কীভাবে বাইবেলের এইরকম এক কার্যকর প্রভাব থাকতে পারে? শাস্ত্রের জ্ঞান ‘নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিতে’ আমাদের সাহায্য করে। (ইফিষীয় ৪:২৪) হ্যাঁ, বাইবেলে পাওয়া সঠিক জ্ঞান প্রয়োগ করার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তিত হয়। কিন্তু, এই ধরনের জ্ঞান কীভাবে লোকেদের পরিবর্তন করে?

প্রথমত, বাইবেল সেই সমস্ত অবাঞ্ছিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে, যেগুলো পরিত্যাগ করতে হবে। (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) দ্বিতীয়ত, শাস্ত্র আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা উৎপন্ন কাম্য গুণগুলো দেখাতে পরামর্শ দেয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।”—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

ঈশ্বর যা চান সেগুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করা অ্যাড্রিয়ানকে, নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে এবং তার যে-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করার ও যেগুলো ত্যাগ করার দরকার রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে। (যাকোব ১:২২-২৫) কিন্তু, সেটা কেবল এক শুরু ছিল। জ্ঞান ছাড়াও প্রেরণার প্রয়োজন ছিল—এমন কিছু, যা অ্যাড্রিয়ানকে পরিচালিত করবে, যাতে তিনি পরিবর্তিত হতে চাইবেন।

অ্যাড্রিয়ান শিখেছিলেন যে, কাম্য নতুন মনুষ্য “সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে” গড়ে ওঠে। (কলসীয় ৩:১০) তিনি বুঝতে পারেন যে, একজন খ্রিস্টানের ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরের নিজ ব্যক্তিত্বের সমরূপ হতে হবে। (ইফিষীয় ৫:১) বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে অ্যাড্রিয়ান মানবজাতির সঙ্গে যিহোবার আচরণ সম্বন্ধে শেখেন এবং ঈশ্বরের উত্তম গুণাবলি লক্ষ করেন যেমন প্রেম, দয়া, মঙ্গলভাব, করুণা এবং ধর্মময়। এই ধরনের জ্ঞান অ্যাড্রিয়ানকে ঈশ্বরকে ভালবাসতে এবং যিহোবা যে ধরনের ব্যক্তিকে অনুমোদন করেন সেইরকম ব্যক্তি হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে পরিচালিত করেছে।—মথি ২২:৩৭.

ধীরে ধীরে এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে অ্যাড্রিয়ান তার দৌরাত্ম্যমূলক রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি এবং তার স্ত্রী এখন বাইবেলের সাহায্যে অন্যদের তাদের জীবন শুচি করতে সাহায্য করছে। “আমার অন্যান্য প্রাক্তন বন্ধুবান্ধবদের বিপরীতে, যারা এখন মৃত, আমি বেঁচে আছি এবং এক সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করছি,” অ্যাড্রিয়ান বলেন। জীবনকে উন্নত করার বিষয়ে বাইবেলের যে শক্তি রয়েছে, তিনি হলেন সেটার জীবন্ত প্রমাণ।

[২৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“রাগ এবং দৌরাত্ম্য কোনো কিছু সম্পাদন করতে পারেনি”

[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স]

বাইবেলের নীতিগুলো কার্যরত

নিচে কিছু বাইবেলের নীতি দেওয়া রয়েছে, যেগুলো প্রচণ্ড ক্রোধী এবং দৌরাত্ম্যপূর্ণ লোকেদের শান্তিপ্রিয় হতে সাহায্য করেছে:

“মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও।” (রোমীয় ১২:১৮, ১৯) ঈশ্বরকে নির্ধারণ করতে দিন যে কখন এবং কার ওপর ক্রোধ নিয়ে আসতে হবে। বিষয়গুলো সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকায় তিনি তা করতে পারেন এবং তাঁর কাছ থেকে আসা যেকোনো প্রতিশোধ তাঁর নিখুঁত ন্যায়বিচারকে প্রতিফলিত করবে।

“ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না।” (ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭) একজন ব্যক্তি হয়তো উপযুক্ত কারণেই মাঝে মাঝে রেগে যেতে পারেন। যদি তাই হয়, তা হলে তার ‘কোপাবেশে’ থাকা উচিত নয়। কেন? কারণ এটা হয়তো তাকে মন্দ কিছু করতে পরিচালিত করতে পারে আর এভাবে “দিয়াবলকে স্থান” দেওয়া হবে ও এর ফলে যিহোবা ঈশ্বরের অনুমোদন হারাবেন।

“ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর, রুষ্ট হইও না, হইলে কেবল দুষ্কার্য্য করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:৮) অসংযত আবেগ অসংযত কাজগুলোর দিকে পরিচালিত করে। একজন ব্যক্তি যদি ক্রোধের বশবর্তী হন, তা হলে তিনি সম্ভবত এমন কিছু বলবেন বা করবেন, যা এর সঙ্গে জড়িত সকলকে আঘাত দেবে।