সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘ঈশ্বরের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করুন’

‘ঈশ্বরের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করুন’

‘ঈশ্বরের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করুন’

“তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।”—২ তীমথিয় ২:১৫.

১, ২. (ক) কেন কর্মীদের বিভিন্ন হাতিয়ারের দরকার? (খ) খ্রিস্টানরা কোন কাজে রত এবং কীভাবে তারা দেখায় যে, তারা প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করে?

 কর্মীদের বিভিন্ন হাতিয়ার দরকার, যাতে তারা তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তাই বলে যেকোনো হাতিয়ারই যথেষ্ট নয়। একজন কর্মীর যথার্থ হাতিয়ারের দরকার এবং তাকে অবশ্যই সেটা সঠিক উপায়ে ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একটা ছোট ঘর তৈরি করার সময় আপনি দুটো তক্তা জোড়া দিতে চাইলে আপনার শুধুমাত্র হাতুড়ি ও পেরেকের চেয়েও আরও বেশি কিছুর দরকার হবে। আপনাকে জানতে হবে যে, পেরেককে বাঁকা না করে কীভাবে কাঠের মধ্যে সোজা ঢুকাতে হবে। হাতুড়ি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা না জেনে কাঠের মধ্যে পেরেক ঢুকানোর চেষ্টা করা খুবই কঠিন ও এমনকি হতাশাজনক হবে। কিন্তু, সঠিকভাবে ব্যবহৃত হাতিয়ারগুলো আমাদের পরিতৃপ্তিদায়ক ফলাফল সহ কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।

খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের একটা কাজ করার আছে। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করিতে’ পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ৬:৩৩) কীভাবে আমরা তা করতে পারি? একটা উপায় হল, রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগী হয়ে। আমাদের পরিচর্যার ভিত্তি দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর করা হল আরেকটা উপায়। উত্তম আচরণ হল তৃতীয় উপায়। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ৮:২৫; ১ পিতর ২:১২) এই খ্রিস্টীয় কাজের দায়িত্বে কার্যকরী ও সুখী হওয়ার জন্য, আমাদের উপযুক্ত বিভিন্ন হাতিয়ার এবং সেগুলোকে কীভাবে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা যায়, সেই জ্ঞান থাকা দরকার। এই ক্ষেত্রে প্রেরিত পৌল একজন খ্রিস্টান মজুর হিসেবে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেন এবং তাকে অনুকরণ করার জন্য তিনি সহবিশ্বাসীদের উৎসাহিত করেছিলেন। (১ করি. ১০:৩৪; ১৫:১০) তা হলে, আমরা আমাদের সহকর্মী পৌলের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

পৌল—একজন উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী

৩. কেন বলা যেতে পারে যে, প্রেরিত পৌল একজন উদ্যোগী রাজ্য কর্মী ছিলেন?

পৌল কোন ধরনের কর্মী ছিলেন? এটা নিশ্চিত যে তিনি উদ্যোগী ছিলেন। পৌল নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিলিয়ে দিয়েছিলেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের আশেপাশের এক বৃহৎ এলাকা জুড়ে সুসমাচার ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার উদ্যমী রাজ্য ঘোষণার একটা কারণ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এই অক্লান্ত প্রেরিত বলেছিলেন: “কারণ আমি যদিও সুসমাচার প্রচার করি, তবু আমার শ্লাঘা করিবার কিছুই নাই; কেননা অবশ্য বহনীয় ভার আমার উপরে অর্পিত; ধিক্‌ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি।” (১ করিন্থীয় ৯:১৬) পৌল কি কেবল তার নিজের জীবন রক্ষা করতে আগ্রহী ছিলেন? না। তিনি স্বার্থপর ব্যক্তি ছিলেন না। এর পরিবর্তে, তিনি চেয়েছিলেন অন্যেরাও যেন সুসমাচার থেকে উপকার লাভ করে। তিনি লিখেছিলেন: “আমি সকলই সুসমাচারের জন্য করি, যেন তাহার সহভাগী হই।”—১ করিন্থীয় ৯:২৩.

৪. কোন হাতিয়ারকে খ্রিস্টান কর্মীরা সবার্ধিক মূল্যবান গণ্য করে?

প্রেরিত পৌল একজন বিনয়ী কর্মী ছিলেন, যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে তিনি শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত দক্ষতাগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারতেন না। একজন ছুতোর মিস্ত্রির যেমন একটা হাতুড়ি লাগে, তেমনই পৌলের একটা উপযুক্ত হাতিয়ারের দরকার ছিল, যাতে তার শ্রোতাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের সত্যকে গেঁথে দিতে পারেন। প্রাথমিকভাবে তিনি কোন হাতিয়ার ব্যবহার করেছিলেন? এটি ছিল ঈশ্বরের বাক্য, পবিত্র শাস্ত্রাবলি। একইভাবে, পুরো বাইবেলই হল প্রাথমিক হাতিয়ার, যা আমরা শিষ্য তৈরির কাজে আমাদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করে থাকি।

৫. কার্যকরী পরিচারক হওয়ার জন্য শাস্ত্র উদ্ধৃতি করা ছাড়াও আমাদের আর কী করা দরকার?

পৌল জানতেন যে, ঈশ্বরের বাক্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার সঙ্গে শুধুমাত্র এর থেকে উদ্ধৃতি করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত ছিল। তিনি “বুঝাইতে চেষ্টা [“প্রত্যয় উৎপাদন,” NW]” করেছিলেন। (প্রেরিত ২৮:২৩) কীভাবে? পৌল অনেককে রাজ্যের সত্য গ্রহণ করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী করার জন্য ঈশ্বরের লিখিত বাক্যকে সফলভাবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে যুক্তি করেছিলেন। তিন মাস ইফিষের একটা সমাজগৃহে পৌল “ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে কথা প্রসঙ্গ করিতে ও প্রবৃত্তি দিতে [“প্রত্যয় উৎপাদন করতে,” NW] লাগিলেন।” যদিও ‘কয়েক জন কঠিন ও অবাধ্য হইয়াছিল’ কিন্তু অন্যেরা শুনেছিল। ইফিষে পৌলের পরিচর্যার ফলে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] বাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও প্রবল হইতে লাগিল।”—প্রেরিত ১৯:৮, ৯, ২০.

৬, ৭. কীভাবে পৌল তার পরিচর্যা পদের গৌরব করেছিলেন এবং কীভাবে আমরাও একই বিষয় করতে পারি?

একজন উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে, পৌল ‘তাহার পরিচর্য্যা-পদের গৌরব করিয়াছিলেন।’ (রোমীয় ১১:১৩) কীভাবে? তিনি নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না; কিংবা তিনি প্রকাশ্যে ঈশ্বরের একজন সহকর্মী হওয়ার ব্যাপারে পরিচিত হতেও লজ্জিত ছিলেন না। বরং, তিনি পরিচর্যাকে সর্বোচ্চ সম্মানজনক হিসেবে দেখেছিলেন। পৌল ঈশ্বরের বাক্যকে দক্ষতার সঙ্গে ও কার্যকরীভাবে ব্যবহার করেছিলেন। তার ফলপ্রসূ কাজ অন্যদের উদ্দীপনা জুগিয়েছিল, তাদের পরিচর্যাকে আরও পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রাণিত হতে সাহায্য করেছিল। এই উপায়েও তার পরিচর্যা গৌরবান্বিত হয়েছিল।

পৌলের মতো, আমরাও পরিচারক হিসেবে ঈশ্বরের বাক্যকে বার বার ও কার্যকরীভাবে ব্যবহার করার দ্বারা আমাদের কাজকে গৌরবান্বিত করতে পারি। আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার সমস্ত ক্ষেত্রেই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত যত বেশি লোকেদের কাছে সম্ভব শাস্ত্র থেকে কিছু জানানো। কীভাবে আমরা প্রত্যয় উৎপাদন সহকারে তা করতে পারি? তিনটে গুরুত্বপূর্ণ উপায়ের কথা বিবেচনা করুন: (১) ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি এমনভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করান, যাতে এটির প্রতি সম্মান জন্মে। (২) বাইবেল যা বলে তা কৌশলে ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করুন। (৩) শাস্ত্র থেকে এমনভাবে যুক্তি করুন, যাতে তা দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদনকারী হয়।

৮. আজকে রাজ্য প্রচারের কোন হাতিয়ারগুলো আমাদের কাছে রয়েছে এবং আপনি সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করেছেন?

বর্তমান সময়ের রাজ্য ঘোষণাকারীদের সেই সমস্ত হাতিয়ার রয়েছে, যা পৌলের পরিচর্যার সময় তার কাছে ছিল না। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বই, পত্রিকা, ব্রোশার, ইস্তাহার, ট্র্যাক্ট এবং অডিও ও ভিডিও ক্যাসেট। বিগত শতাব্দীতে, টেস্টিমনি কার্ড, ফোনোগ্রাফ, লাউডস্পীকার লাগানো গাড়ি এবং বেতার সম্প্রচারও ব্যবহার করা হতো। অবশ্যই, আমাদের সর্বোত্তম হাতিয়ার হল বাইবেল এবং আমাদের এই অপরিহার্য হাতিয়ারকে উত্তম ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার।

আমাদের পরিচর্যার ভিত্তি ঈশ্বরের বাক্যের ওপর হতে হবে

৯, ১০. ঈশ্বরের বাক্যের ব্যবহার সম্বন্ধে তীমথিয়কে দেওয়া পৌলের পরামর্শ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে এক কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি? পৌলের এই কথাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়ে, যা তিনি তার সহকর্মী তীমথিয়কে বলেছিলেন: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।” (২ তীমথিয় ২:১৫) ‘সত্যের বাক্যকে যথার্থরূপে ব্যবহার করিবার’ সঙ্গে কী জড়িত?

১০ যে-গ্রিক শব্দকে “যথার্থরূপে ব্যবহার” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তার আক্ষরিক অর্থ হল “সোজাসুজিভাবে কাটা” অথবা “একটা সোজা দিক ধরে কাটা।” খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্রে কেবল তীমথিয়ের প্রতি পৌলের পরামর্শেই এই পরিভাষাটা ব্যবহার করা হয়েছে। একই শব্দকে একটা জমিতে সোজা হালরেখা বা লাঙ্গলের ফলার গভীর দাগ বর্ণনা করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। এক আকাবাঁকা হালরেখা ধরে চাষ করা নিশ্চয়ই একজন অভিজ্ঞ কৃষকের কাছে বিরক্তিকর হবে। “লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই” এমন একজন “কার্য্যকারী” হওয়ার জন্য তীমথিয়কে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শিক্ষাগুলো থেকে কোনোরকম বিচ্যুত হওয়াকে অনুমোদন করা হবে না। তীমথিয়কে তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তার শিক্ষাকে প্রভাবিত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাকে তার শিক্ষা দেওয়া ও প্রচার করার কাজকে সম্পূর্ণরূপে শাস্ত্রের ওপর কেন্দ্রীভূত করতে হয়েছিল। (২ তীমথিয় ৪:২-৪) এভাবে সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিষয়ে জাগতিক দর্শনবিদ্যার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য নয় কিন্তু যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করার দিকে পরিচালিত হতে পারত। (কলসীয় ২:৪, ৮) আজকেও একই বিষয় সত্য।

আমাদের আচরণ অবশ্যই উত্তম হতে হবে

১১, ১২. ঈশ্বরের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহারের ওপর আমাদের আচরণের কোন প্রভাব রয়েছে?

১১ ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলো ঘোষণা করার দ্বারা এটিকে যথার্থভাবে ব্যবহার করার চেয়ে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের আচরণ অবশ্যই এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। “আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী,” তাই আমরা কখনোই কপট কর্মী হব না। (১ করিন্থীয় ৩:৯) ঈশ্বরের বাক্য বলে: “ভাল, তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না? তুমি যে চুরি করিতে নাই বলিয়া প্রচার করিতেছ, তুমি কি চুরি করিতেছ? তুমি যে ব্যভিচার করিতে নাই বলিতেছ, তুমি কি ব্যভিচার করিতেছ? তুমি যে প্রতিমা ঘৃণা করিতেছ, তুমি কি দেবালয় লুট করিতেছ?” (রোমীয় ২:২১, ২২) তাই, ঈশ্বরের আধুনিক দিনের কর্মী হিসেবে আমরা যে-একটা উপায়ে ঈশ্বরের বাক্যকে যথার্থরূপে ব্যবহার করি, সেটা হল এই পরামর্শে মনোযোগ দিয়ে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

১২ ঈশ্বরের বাক্যকে যথার্থরূপে ব্যবহার করা থেকে আমরা কোন ফলগুলো আশা করতে পারি? সৎহৃদয়ের লোকেদের জীবনের ওপর ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের যে-শক্তি রয়েছে, তা বিবেচনা করুন।

ঈশ্বরের বাক্যের রূপান্তরের শক্তি রয়েছে

১৩. ঈশ্বরের বাক্যের প্রয়োগ একজন ব্যক্তির মধ্যে কী উৎপন্ন করতে পারে?

১৩ প্রামাণিক হিসেবে গৃহীত হলে ঈশ্বরের বাক্যের বার্তা এক কর্মশক্তিসম্পন্ন প্রভাব প্রয়োগ করে, যা লোকেদের তাদের জীবনে লক্ষণীয় পরিবর্তনগুলো করতে সাহায্য করে। পৌল ঈশ্বরের বাক্যকে কার্যরত হতে দেখেছিলেন এবং প্রাচীন থিষলনীকীতে যারা খ্রিস্টান হয়েছিল, তাদের ওপর এর উত্তম প্রভাব লক্ষ করেছিলেন। তাই, তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমরাও অবিরত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি যে, আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্ত্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে; তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে, এবং বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের মধ্যে নিজ কার্য্য সাধনও করিতেছে।” (১ থিষলনীকীয় ২:১৩) সেই খ্রিস্টানদের কাছে—বস্তুত খ্রিস্টের সমস্ত প্রকৃত অনুসারীর কাছে—মানুষের দুর্বল যুক্তিকে ঈশ্বরের সর্বোচ্চ প্রজ্ঞার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। (যিশাইয় ৫৫:৯) থিষলনীকীয়েরা ‘বহু ক্লেশের মধ্যে পবিত্র আত্মার আনন্দে বাক্যটী গ্রহণ করিয়াছিল’ এবং অন্য বিশ্বাসীদের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছিল।—১ থিষলনীকীয় ১:৫-৭.

১৪, ১৫. ঈশ্বরের বাক্যের বার্তা কতটা শক্তিশালী এবং কেন?

১৪ ঈশ্বরের বাক্য এর উৎস যিহোবার মতো প্রচণ্ড কর্মশক্তিসম্পন্ন। এটা ‘জীবন্ত ঈশ্বরের’ কাছ থেকে আসে, যাঁর বাক্যে ‘আকাশমণ্ডল নির্ম্মিত হইয়াছিল’ এবং সেই বাক্য সবসময়ই ‘যে জন্য তাহা প্রেরণ করিয়াছিল, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইয়াছে।’ (ইব্রীয় ৩:১২; গীতসংহিতা ৩৩:৬; যিশাইয় ৫৫:১১) একজন বাইবেল পণ্ডিত মন্তব্য করেছিলেন: “ঈশ্বর নিজেকে তাঁর বাক্য থেকে পৃথক করেন না। তিনি এটিকে এক সম্বন্ধহীন বিষয় হিসেবে অস্বীকার করেন না। . . . অতএব এটি কখনও অকার্যকর বিষয় হয় না, কিছু বলার পর অসংবেদনশীল হয় না। কারণ এটি জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে একতার এক বন্ধন।”

১৫ ঈশ্বরের বাক্য থেকে উদ্ভূত বার্তা কতটা শক্তিশালী? এটির বিস্ময়কর শক্তি রয়েছে। উপযুক্তভাবেই পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।”—ইব্রীয় ৪:১২.

১৬. ঈশ্বরের বাক্য একজন ব্যক্তিকে কতখানি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিবর্তিত করতে পারে?

১৬ ঈশ্বরের লিখিত বাক্যে যে-বার্তা রয়েছে, তা “সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ।” তাই এটির এমন বিস্ময়কর মর্মভেদী শক্তি রয়েছে যে, এটি যেকোনো মানব যন্ত্র বা হাতিয়ারকে ছাড়িয়ে যায়। ঈশ্বরের বাক্য একজন ব্যক্তির একেবারে ভিতরের অংশ পর্যন্ত ভেদ করে ও তার ভিতরের অবস্থাকে পরিবর্তিত করতে পারে, তিনি কীভাবে চিন্তা করেন ও কী ভালবাসেন তাতে প্রভাবিত করে তাকে এক গ্রহণযোগ্য, ঈশ্বরীয় কর্মী করে তোলে। কী এক শক্তিশালী হাতিয়ার!

১৭. ঈশ্বরের বাক্যের রূপান্তরের শক্তি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন।

১৭ একজন ব্যক্তি নিজের সম্বন্ধে যা মনে করেন বা তিনি অন্যদের যা দেখতে দেন সেটার তুলনায় তার ভিতরের প্রকৃত অবস্থা কেমন, তা ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশ করে। (১ শমূয়েল ১৬:৭) এমনকি একজন দুষ্ট লোকও মাঝে মাঝে তার ভিতরের ব্যক্তিকে দয়া ও ধর্মীয় ভক্তির মুখোশের আড়ালে ঢেকে রাখতে পারে। দুষ্ট লোকেরা মন্দ কারণগুলোর জন্য নিজেদের মিথ্যার আড়ালে ঢেকে রাখে। অহংকারী লোকেরা মানুষের প্রশংসা শোনার আকাঙ্ক্ষায় নম্র হওয়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে। যাইহোক না কেন, হৃদয়ে প্রকৃতই কী রয়েছে তা প্রকাশ করার দ্বারা ঈশ্বরের বাক্য জোরালোভাবে একজন নম্র ব্যক্তিকে পুরনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করতে এবং ‘নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিতে’ চালিত করে, “যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:২২-২৪) এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষাগুলো ভীরু হৃদয়ের ব্যক্তিদের যিহোবার সাহসী সাক্ষিতে এবং উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীতে রূপান্তর করতে পারে।—যিরমিয় ১:৬-৯.

১৮, ১৯. এই অনুচ্ছেদগুলোর ওপর ভিত্তি করে বা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখান যে, কীভাবে শাস্ত্রীয় সত্য একজন ব্যক্তির মনোভাব পালটাতে পারে।

১৮ ঈশ্বরের বাক্যের রূপান্তরের শক্তির এক উত্তম প্রভাব সব জায়গার লোকেদের ওপরই রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কাম্বোডিয়ার পুনাম পেনের রাজ্য ঘোষণাকারীরা কামপং চাম প্রদেশে মাসে দুবার করে প্রচার করত। অন্য পাদরিরা যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে কথা বলে শুনে একজন স্থানীয় মহিলা পাস্টর পরের বার সাক্ষিরা যখন সেই প্রদেশে আসবে, তখন তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি তাদেরকে ছুটির দিন উদ্‌যাপন করার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করেছিলেন এবং তারা যখন শাস্ত্র থেকে যুক্তি করছিল, তখন তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। এরপর তিনি চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন: “এখন আমি জানতে পারলাম যে, আপনাদের সম্বন্ধে আমার সহপাস্টররা যা বলেছে, তা সত্য নয়! তারা দাবি করেছে যে, আপনারা বাইবেল ব্যবহার করেন না কিন্তু আজ সকালে আপনারা সবকিছু সেখান থেকেই দেখিয়েছেন!”

১৯ সাক্ষিদের সঙ্গে এই মহিলা তার বাইবেল আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাকে থামানোর জন্য পাস্টর হিসেবে সেবা করার সুযোগ থেকে বরখাস্ত করার হুমকিকেও তিনি পাত্তা দেননি। তিনি তার শাস্ত্রীয় আলোচনাগুলোর বিষয়ে তার একজন বান্ধবীর কাছে বলেন, যিনি পরে সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। সেই বান্ধবী যা শিখছিলেন সেই বিষয়ে তিনি এত উদ্যমী হয়ে উঠেছিলেন যে, একবার তিনি যে-গির্জায় যোগদান করেন, তার একটা সভায় বলতে চালিত হয়েছিলেন, “আসুন, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করুন!” এর পর পরই, সেই প্রাক্তন মহিলা পাস্টর এবং অন্যান্যরাও যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছে।

২০. কীভাবে ঘানার একজন মহিলার অভিজ্ঞতা ঈশ্বরের বাক্যের শক্তি সম্বন্ধে দেখায়?

২০ ঈশ্বরের বাক্যের শক্তি ঘানার পলিনা নামে একজন মহিলার বেলায়ও দেখা গিয়েছিল। একজন পূর্ণ-সময়ের রাজ্য ঘোষণাকারী জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে * বই দিয়ে তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন। পলিনা বহুগামী বিবাহে জড়িত ছিলেন এবং পরিবর্তন করার প্রয়োজন বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু তার স্বামী এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছিল। তার দাদু, উচ্চ আদালতের একজন বিচারক এবং গির্জার একজন প্রাচীন মথি ১৯:৪-৬ পদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে ভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। বিচারকের কথাগুলো বেশ ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছিল কিন্তু পলিনা শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা ছিল শয়তান যিশুকে প্রলোভিত করার সময় শাস্ত্রকে যেভাবে বিকৃত করেছিল, ঠিক সেইরকম। (মথি ৪:৫-৭) তিনি বিবাহের বিষয়ে যিশুর স্পষ্ট বিবৃতি স্মরণ করেছিলেন, মূলত বলেছিলেন যে, ঈশ্বর মানুষকে পুরুষ ও স্ত্রী করে সৃষ্টি করেছিলেন, পুরুষ ও একাধিক স্ত্রী করে নয় এবং তারা দুজন একাঙ্গ হবে, তিন জন নয়। তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বহুগামী বিবাহ থেকে প্রচলিত বিবাহবিচ্ছেদ লাভ করেছিলেন। শীঘ্রই তিনি সুখী বাপ্তাইজিত রাজ্য ঘোষণাকারী হয়েছিলেন।

ঈশ্বরের বাক্যকে যথার্থরূপে ব্যবহার করে চলুন

২১, ২২. (ক) রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আমরা কোন সংকল্প নিতে চাই? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

২১ যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাস্তবিকই অন্যদের তাদের জীবনে পরিবর্তনগুলো করার জন্য সাহায্য করতে এক শক্তিশালী হাতিয়ার। (যাকোব ৪:৮) দক্ষ কর্মীরা যেমন ভাল ফলাফল অর্জন করার জন্য বিভিন্ন হাতিয়ার ব্যবহার করে, তেমনই রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আমাদের ঈশ্বরদত্ত কাজে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করার আন্তরিক প্রচেষ্টা যেন আমাদের সংকল্প হয়।

২২ কীভাবে আমরা আমাদের শিষ্য তৈরির কাজে শাস্ত্রকে কার্যকরীভাবে ব্যবহার করতে পারি? একটা উপায় হল, দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদনকারী শিক্ষক হিসেবে আমাদের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে। দয়া করে পরের প্রবন্ধের প্রতি আপনার মনোযোগ দিন কারণ এটা অন্যদের রাজ্যের বার্তা গ্রহণে শিক্ষা দেওয়ার ও সাহায্য করার বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে জানায়।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনার কি মনে আছে?

• রাজ্য ঘোষণাকারীদের কাছে কোন হাতিয়ারগুলো রয়েছে?

• কোন কোন উপায়ে পৌল একজন উদাহরণযোগ্য রাজ্য কর্মী ছিলেন?

• ঈশ্বরের বাক্যকে যথার্থভাবে ব্যবহার করার সঙ্গে কী জড়িত?

• যিহোবার লিখিত বাক্য কতটা শক্তিশালী হাতিয়ার?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কিছু হাতিয়ার, যেগুলো খ্রিস্টানরা রাজ্য ঘোষণার কাজে ব্যবহার করে