সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“কৃতজ্ঞ হও”

“কৃতজ্ঞ হও”

“কৃতজ্ঞ হও”

“খ্রীষ্টের শান্তি তোমাদের হৃদয়ে কর্ত্তৃত্ব করুক; . . . আর কৃতজ্ঞ হও।”—কলসীয় ৩:১৫.

১. খ্রিস্টীয় মণ্ডলী এবং শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন জগতের মধ্যে আমরা কোন পার্থক্য দেখতে পাই?

 সারা বিশ্বে যিহোবার সাক্ষিদের ৯৪,৬০০টা মণ্ডলীতে আমরা কৃতজ্ঞতার মনোভাব খুঁজে পাই। প্রতিটা সভা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতার অভিব্যক্তিপূর্ণ প্রার্থনা দিয়ে শুরু ও শেষ হয়। যুবক ও বৃদ্ধ আর সেইসঙ্গে নতুন এবং দীর্ঘদিনের সাক্ষিরা যখন উপাসনায় ও আনন্দিত সাহচর্যে মিলিত হয়, তখন তাদের মুখ থেকে আমরা প্রায়ই “ধন্যবাদ,” “স্বাগতম” অথবা এই রকমের অভিব্যক্তিগুলো শুনে থাকি। (গীতসংহিতা ১৩৩:১) এটা সেই স্বার্থপরতা থেকে কতই না বিপরীত, যা এমন অনেকের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে আছে, ‘যাহারা যিহোবাকে জানে না ও যাহারা সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না’! (২ থিষলনীকীয় ১:৮) আমরা এক অকৃতজ্ঞ জগতে বাস করছি। আর এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, যখন আমরা বিবেচনা করি যে কে এই জগতের দেব—আত্মকেন্দ্রিকতার মহান সমর্থক শয়তান দিয়াবল, যার গর্ব এবং বিদ্রোহী মনোভাব মানবসমাজের মধ্যে ছেয়ে রয়েছে!—যোহন ৮:৪৪; ২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯.

২. কোন সাবধানবাণীর প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

শয়তানের জগতের দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় আমাদের মনোযোগী হতে হবে, যাতে এই জগতের মনোভাবের দ্বারা কলুষিত হয়ে না পড়ি। প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিত পৌল ইফিষীয় খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “তোমরা পূর্ব্বে চলিতে, এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মার অধিপতির অনুসারে চলিতে। সেই লোকদের মধ্যে আমরাও সকলে পূর্ব্বে আপন আপন মাংসের অভিলাষ অনুসারে আচরণ করিতাম, মাংসের ও মনের বিবিধ ইচ্ছা পূর্ণ করিতাম, এবং অন্য সকলের ন্যায় স্বভাবতঃ ক্রোধের সন্তান ছিলাম।” (ইফিষীয় ২:২, ৩) আজকেও এটা অনেকের ক্ষেত্রে সত্য। তা হলে, কীভাবে আমরা কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখতে পারি? যিহোবা কোন সাহায্য জোগান? কোন ব্যবহারিক উপায়গুলোর মাধ্যমে আমরা দেখাতে পারি যে আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ?

কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণগুলো

৩. কীসের জন্য আমরা যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ?

আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং জীবনদাতা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিই আমরা কৃতজ্ঞতা দেখাতে বাধ্য, বিশেষ করে তিনি আমাদের উদারভাবে যে-দানগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর কয়েকটা সম্বন্ধে যখন আমরা বিবেচনা করি। (যাকোব ১:১৭) আমরা বেঁচে আছি বলে প্রতিদিন যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। (গীতসংহিতা ৩৬:৯) আমাদের চারপাশে আমরা যিহোবার হস্তকৃত প্রচুর প্রমাণ দেখতে পাই যেমন, সূর্য, চাঁদ এবং তারকারাজি। আমাদের গ্রহের প্রচুর জীবনরক্ষাকারী খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার, বায়ুমণ্ডলের অতি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসের চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণ এবং প্রকৃতিতে জটিল চক্রগুলো সমস্তই প্রমাণ দেয় যে, আমরা আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার কাছে ঋণী। “সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ,” রাজা দায়ূদ গেয়েছিলেন, “আমাদের পক্ষে তোমার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল ও তোমার সঙ্কল্প সকল; তোমার তুল্য কেহ নাই; আমি সে সকল বলিতাম ও বর্ণনা করিতাম, কিন্তু সে সকল গণনা করা যায় না।”—গীতসংহিতা ৪০:৫.

৪. আমাদের মণ্ডলীগুলোতে আমরা যে-আনন্দিত মেলামেশা উপভোগ করি, সেটার জন্য কেন আমাদের যিহোবাকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিত?

যদিও যিহোবার দাসেরা পার্থিব পরমদেশে বাস করে না, তবুও তারা আজকে এক আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করা উপভোগ করছে। আমাদের কিংডম হল, সম্মেলন এবং অধিবেশনগুলোতে আমরা আমাদের সহবিশ্বাসীদের মধ্যে ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলোকে কার্যরত দেখতে পাই। বস্তুত, আমরা যখন এমন লোকেদের কাছে প্রচার করি, যাদের সামান্য বা কোনো ধর্মীয় পটভূমি নেই, তখন কিছু সাক্ষি গালাতীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে পৌল যা বর্ণনা করেছিলেন, সেই বিষয় উল্লেখ করে। তারা প্রথমে ‘মাংসের কার্য্য সকলের’ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করায় এবং তাদের শ্রোতাদের জিজ্ঞেস করে যে, তারা কী লক্ষ করেছে। (গালাতীয় ৫:১৯-২৩) বেশির ভাগ ব্যক্তি সহজেই একমত হয় যে, এগুলো আজকের মানবসমাজের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বর্ণনা করে। যখন ঈশ্বরের আত্মার ফলের বর্ণনা দেখানো হয় এবং নিজের চোখে এর প্রমাণ দেখার জন্য কিংডম হলে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন অনেকে অবিলম্বে স্বীকার করে: “ঈশ্বর বাস্তবিকই তোমাদের মধ্যবর্ত্তী।” (১ করিন্থীয় ১৪:২৫) আর তা শুধু স্থানীয় কিংডম হলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনি যেখানেই যান না কেন, আপনি যখন যিহোবার ষাট লক্ষেরও বেশি সাক্ষির যেকোনো একজনের দেখা পান, তখন একই সুখী এবং আনন্দিত মনোভাব দেখতে পান। সত্যিই, এই গঠনমূলক মেলামেশা যিহোবাকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার কারণ, যিনি তা সম্ভবপর করতে তাঁর আত্মা জুগিয়ে থাকেন।—সফনিয় ৩:৯; ইফিষীয় ৩:২০, ২১.

৫, ৬. ঈশ্বরের সবচেয়ে মহান উপহার, মুক্তির মূল্যের জন্য আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি?

সবচেয়ে মহান যে-উপহার, সর্বাধিক যে-সিদ্ধ বর যিহোবা আমাদের দিয়েছেন, সেটা হল তাঁর পুত্র যিশু, যাঁর মাধ্যমে মুক্তির মূল্য প্রদান করা হয়েছিল। “ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য।” (১ যোহন ৪:১১) হ্যাঁ, মুক্তির মূল্যের জন্য আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা শুধু যিহোবার প্রতি প্রেম এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এমন উপায়ে জীবনযাপন করার মাধ্যমেও দেখাই, যা অন্যদের জন্য ভালবাসাকে প্রদর্শন করে।—মথি ২২:৩৭-৩৯.

প্রাচীন ইস্রায়েলের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা কৃতজ্ঞতা দেখানোর বিষয়ে আরও শিখতে পারি। ব্যবস্থার মাধ্যমে যিহোবা লোকেদের অনেক শিক্ষা সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন, যা তিনি মোশির মাধ্যমে সেই জাতিকে দিয়েছিলেন। ‘ব্যবস্থায় জ্ঞানের ও সত্যের অবয়বের’ মাধ্যমে আমরা এমন অনেক কিছু শিখতে পারি, যা আমাদের পৌলের এই পরামর্শ মেনে চলতে সাহায্য করবে: “কৃতজ্ঞ হও।”—রোমীয় ২:২০; কলসীয় ৩:১৫.

মোশির ব্যবস্থা থেকে তিনটে শিক্ষা

৭. কীভাবে দশমাংশের ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা দেখানোর জন্য সুযোগ করে দিয়েছিল?

মোশির ব্যবস্থায়, যিহোবা তিনটে উপায় জুগিয়েছিলেন, যেগুলোর মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা তাঁর মঙ্গলভাবের প্রতি অকৃত্রিম উপলব্ধি দেখাতে পারত। প্রথমে, দশমাংশের বিষয়ে ছিল। ভূমিতে উৎপন্ন দ্রব্যের দশমাংশ ও সেইসঙ্গে “গোমেষপালের দশমাংশ . . . সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র” করতে হতো। (লেবীয় পুস্তক ২৭:৩০-৩২) ইস্রায়েলীয়রা যখন বাধ্য হয়েছিল, তখন যিহোবা তাদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেছিলেন। “তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে; আর তোমরা ইহাতে আমার পরীক্ষা কর, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না।”—মালাখি ৩:১০.

৮. কী স্বেচ্ছাকৃত উপহারগুলোকে দশমাংশ থেকে আলাদা করে?

দ্বিতীয়, দশমাংশের শর্ত ছাড়াও যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের জন্য স্বেচ্ছামূলক দান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি মোশিকে ইস্রায়েলীয়দের এই বলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যে দেশে লইয়া যাইতেছি, সে দেশে প্রবেশ করিলে পর তোমরা সেই দেশের খাদ্য ভক্ষণ কালে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহার নিবেদন করিবে।” পুরুষানুক্রমে তাদের “ছানা ময়দার . . . এক এক পিষ্টক” থেকে কিছু অগ্রিমাংশ “সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহার” হিসেবে দিতে হতো। লক্ষ করুন যে, এই অগ্রিমাংশের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ চাওয়া হতো না। (গণনাপুস্তক ১৫:১৮-২১) কিন্তু, ইস্রায়েলীয়রা যখন কৃতজ্ঞতা সহকারে দান দিত, তখন যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদের বিষয়ে তারা নিশ্চিত থাকত। একই ব্যবস্থা যিহিষ্কেলের দর্শনের মন্দিরেও দেখা গিয়েছে। আমরা পড়ি: “সমস্ত আশুপক্ক শস্যাদির মধ্যে প্রত্যেকের অগ্রিমাংশ, এবং তোমাদের সমস্ত উপহারের মধ্যে প্রত্যেক উপহারের সকলই যাজকদের হইবে; এবং তোমরা আপন আপন ছানা ময়দার অগ্রিমাংশ যাজককে দিবে, তাহা করিলে আপন আপন গৃহে আশীর্ব্বাদ অবস্থিতি করাইবে।”—যিহিষ্কেল ৪৪:৩০.

৯. পতিত শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থার মাধ্যমে যিহোবা কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?

তৃতীয়, যিহোবা পতিত শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থা করেন। ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন, “তোমরা যখন আপন আপন ভূমির শস্য কাট, তখন তুমি ক্ষেত্রের কোণস্থ শস্য নিঃশেষে কাটিও না, এবং তোমার ক্ষেত্রে পতিত শস্য কুড়াইও না। আর তুমি আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পরিত্যক্ত দ্রাক্ষাফল চয়ন করিও না, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্রে পতিত দ্রাক্ষাফল কুড়াইও না; তুমি দুঃখী ও বিদেশীদের জন্য তাহা ত্যাগ করিও; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:৯, ১০) আবারও কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ চাওয়া হয়নি। এটা প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়র নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করত যে, অভাবীদের জন্য তারা কতটুকু রেখে যাবে। জ্ঞানী রাজা শলোমন উপযুক্তভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” (হিতোপদেশ ১৯:১৭) এভাবে যিহোবা দুঃখী ব্যক্তিদের জন্য সমবেদনা এবং বিবেচনা দেখানোর বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন।

১০. ইস্রায়েলের লোকেদের পরিণতি কী হয়েছিল, যখন তারা কৃতজ্ঞতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল?

১০ যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের আশীর্বাদ করেছিলেন যখন তারা বাধ্যতার সঙ্গে দশমাংশ নিয়ে এসেছিল, স্বেচ্ছাকৃত দান দিয়েছিল এবং দরিদ্রদের জন্য ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু, ইস্রায়েলের লোকেরা যখন কৃতজ্ঞতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল, তখন তারা যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়েছিল। এটা দুর্দশা ডেকে এনেছিল এবং পরিশেষে বন্দিত্বে নিয়ে গিয়েছিল। (২ বংশাবলি ৩৬:১৭-২১) তা হলে, আমাদের জন্য শিক্ষাটা কী?

আমাদের কৃতজ্ঞতার অভিব্যক্তি

১১. প্রধান উপায়টা কী, যেটার মাধ্যমে আমরা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি?

১১ যে-প্রধান উপায়ে আমরা যিহোবার প্রশংসা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, সেটাও একইভাবে ‘উপহারকে’ জড়িত করে। এটা ঠিক যে, খ্রিস্টান হিসেবে আমরা মোশির ব্যবস্থার অধীন নই যে পশু অথবা শস্য উৎসর্গ করতে বাধ্য। (কলসীয় ২:১৪) কিন্তু, প্রেরিত পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমরা . . . ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।” (ইব্রীয় ১৩:১৫) যিহোবার উদ্দেশে প্রশংসাবলি উৎসর্গ করার জন্য আমাদের ক্ষমতা ও সম্পদগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে, হতে পারে তা জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় অথবা “মণ্ডলীগণের মধ্যে,” আমরা আমাদের স্বর্গীয় প্রেমময় পিতা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। (গীতসংহিতা ২৬:১২) আর তা করতে গিয়ে, সেই উপায়গুলো থেকে আমরা কী শিখি, যেগুলোর মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারত?

১২. আমাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্বের কথা বিবেচনা করলে দশমাংশের ব্যবস্থা সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ প্রথমত, আমরা যেমন দেখেছি যে দশমাংশের ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার কোনো বিষয় ছিল না; এই বিষয়ে প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়র এক বাধ্যবাধকতা ছিল। খ্রিস্টান হিসেবে, আমাদের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। এই কাজগুলো বেছে নেওয়ার কোনো বিষয় নয়। শেষকাল সম্বন্ধে তাঁর মহান ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪; মথি ২৮:১৯, ২০) খ্রিস্টীয় মণ্ডলী সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমরা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাই, যখন আমরা প্রচার করা এবং শিক্ষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডলীর সভাগুলোতে নিয়মিত আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করার দায়িত্বকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করি, সেগুলোকে এক বিশেষ সুযোগ এবং সম্মান হিসেবে দেখি।

১৩. স্বেচ্ছাকৃত দান এবং পতিত শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থা থেকে কোন শিক্ষা পাওয়া যায়?

১৩ এ ছাড়া, অন্য দুটো ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিবেচনা করে আমরা উপকার পেতে পারি, যেগুলোর মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা উপলব্ধি দেখাতে পারত—স্বেচ্ছাকৃত দান এবং শস্য কুড়ানো। দশমাংশ, যা ছিল স্পষ্টভাবে বর্ণিত প্রতিশ্রুতির এক চাহিদা, সেটার বিপরীতে স্বেচ্ছাকৃত দান এবং শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থায় কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ চাওয়া হয়নি। বরং, সেগুলো যিহোবার একজন দাসের হৃদয়ে যে-গভীর উপলব্ধি ছিল, সেটাকে কাজ করতে প্রণোদিত করেছিল। তুলনীয়ভাবে, যদিও আমরা উপলব্ধি করি যে, পরিচর্যায় অংশগ্রহণ এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করা যিহোবার প্রত্যেক দাসের মৌলিক দায়িত্ব কিন্তু, আমরা কি সেগুলোতে সর্বান্তঃকরণে এবং এক ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে অংশ নিই? সেগুলোকে কি আমরা যিহোবা আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন, সেই সমস্তকিছুর জন্য আমাদের আন্তরিক উপলব্ধি প্রকাশের এক সুযোগ হিসেবে দেখি? আমরা কি আমাদের প্রত্যেকের পরিস্থিতি যতটুকু অনুমতি দেয়, ততটা উদারভাবে এই কার্যক্রমগুলোতে অংশ নিই? অথবা এই সমস্তকিছুকে কি আমরা এমন এক বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখি, যেগুলো থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে? অবশ্য, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের ব্যক্তিগতভাবে দিতে হবে। প্রেরিত পৌল এটাকে এভাবে বলেছিলেন: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।”—গালাতীয় ৬:৪.

১৪. যিহোবা তাঁর প্রতি করা আমাদের সেবার বিষয়ে কী আশা করেন?

১৪ যিহোবা ঈশ্বর আমাদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে খুব ভাল করে জানেন। তিনি আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে অবগত আছেন। তাঁর দাসেরা স্বেচ্ছায় ছোট বা বড় যে-বলিই দিক না কেন, সেটাকে তিনি মূল্য দেন। তিনি আশা করেন না যে, আমরা সকলে একই পরিমাণ দেব অথবা আমরা তা দিতেও পারি না। বস্তুগত দানের বিষয়ে আলোচনা করার সময়ে প্রেরিত পৌল করিন্থের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “যদি আগ্রহ থাকে, তবে যাহার যাহা আছে, তদনুসারে তাহা গ্রাহ্য হয়; যাহার যাহা নাই, তদনুসারে নয়।” (২ করিন্থীয় ৮:১২) এই নীতি ঈশ্বরের প্রতি করা আমাদের সেবার ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। যে-বিষয়টা আমাদের সেবাকে যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে, তা আমরা যা করি সেটার পরিমাণের দ্বারা নয় কিন্তু আমরা তা যেভাবে করি—আনন্দের সঙ্গে এবং সর্বান্তঃকরণে—সেটার দ্বারা নির্ধারিত হয়।—গীতসংহিতা ১০০:১-৫; কলসীয় ৩:২৩.

অগ্রগামীর মনোভাব বৃদ্ধি করুন এবং তা বজায় রাখুন

১৫, ১৬. (ক) অগ্রগামীর পরিচর্যা এবং কৃতজ্ঞতার মধ্যে কোন সংযোগ রয়েছে? (খ) যারা অগ্রগামীর কাজ করতে সমর্থ নয়, তারা কীভাবে অগ্রগামীর মনোভাব দেখাতে পারে?

১৫ যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখানোর এক উত্তম উপায় হল পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করা। যিহোবার প্রতি প্রেম এবং তাঁর অযাচিত দয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতার দ্বারা পরিচালিত হয়ে অনেক উৎসর্গীকৃত দাস যিহোবাকে সেবা করার জন্য আরও বেশি সময় বের করতে তাদের জীবনে বড় বড় পরিবর্তন করেছে। কেউ কেউ নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে সমর্থ হয়, প্রতি মাসে সুসমাচার প্রচার এবং লোকেদের সত্য শেখানোর জন্য গড়ে ৭০ ঘন্টা ব্যয় করে। অন্যেরা, যারা হয়তো বিভিন্ন পরিস্থিতির দ্বারা সীমাবদ্ধ, তারা মাঝে মাঝে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে মাসে ৫০ ঘন্টা ব্যয় করার ব্যবস্থা করে।

১৬ কিন্তু, যিহোবার সেই অনেক দাসের বিষয়ে কী বলা যায়, যারা নিয়মিত বা সহায়ক অগ্রগামীর কাজ কোনোটাই করতে পারে না? তারা অগ্রগামীর মনোভাব বৃদ্ধি করে এবং তা বজায় রাখার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারে। কীভাবে? যারা অগ্রগামীর কাজ করতে পারে, তাদের উৎসাহ দিয়ে, তাদের সন্তানদের মধ্যে পূর্ণ-সময়ের সেবাকে কেরিয়ার হিসেবে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা গেঁথে দিয়ে এবং তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিয়ে। আমরা আমাদের পরিচর্যায় যা দিই, তা অনেকটা যিহোবা আমাদের জন্য যা করেছেন, যা করছেন এবং ভবিষ্যতে যা করবেন, সেটার প্রতি আমাদের হৃদয়ের উপলব্ধির গভীরতার ওপর নির্ভর করে।

আমাদের ‘ধনের’ দ্বারা কৃতজ্ঞতা দেখানো

১৭, ১৮. (ক) কীভাবে আমরা আমাদের ‘ধনের’ মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি? (খ) বিধবার দান সম্বন্ধে যিশু কোন মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন এবং কেন?

১৭ হিতোপদেশ ৩:৯ পদ বলে, “তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপনার ধনে, আর তোমার সমস্ত দ্রব্যের অগ্রিমাংশে।” যিহোবার সেবকদের আর দশমাংশ দেওয়ার দরকার নেই। বরং, পৌল করিন্থের মণ্ডলীকে লিখেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।” (২ করিন্থীয় ৯:৭) শিক্ষামূলক কাজে সমর্থন করার জন্য স্বেচ্ছাকৃত দান দেওয়াও আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আন্তরিক উপলব্ধি নিয়মিত তা দিতে, সম্ভব হলে সাপ্তাহিকভাবে কিছু আলাদা করে রাখতে আমাদের প্রেরণা দেয়, যেমনটা প্রাথমিক খ্রিস্টানরা করেছিল।—১ করিন্থীয় ১৬:১, ২.

১৮ আমরা কতটা পরিমাণ দান দিই, সেটা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। বরং, আমরা যে-মনোভাব নিয়ে তা দিই সেটাই প্রকাশ করে। এটাই যিশু লক্ষ করেছিলেন, যখন তিনি মন্দিরের ভাণ্ডারে লোকেদের তাদের উপহারগুলো দিতে দেখছিলেন। যিশু যখন একজন অভাবী বিধাবাকে “দুইটী সিকি পয়সা” রাখতে দেখেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল; কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্ত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল।”—লূক ২১:১-৪.

১৯. যে-উপায়গুলোর মাধ্যমে আমরা কৃতজ্ঞতা দেখাই, সেগুলো পুনরায় পরীক্ষা করা কেন উত্তম?

১৯ কীভাবে আমরা কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি, এই পুনরালোচনা যেন সেই উপায়গুলো পুনরায় পরীক্ষা করে দেখতে আমাদের প্রণোদিত করে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাই। আমরা কি যিহোবার প্রতি আমাদের প্রশংসা বলি ও সেইসঙ্গে বস্তুগত দিক দিয়ে শিক্ষামূলক কাজকে সমর্থন করা বাড়াতে পারি? যতটুকুই আমরা করি, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের উদার প্রেমময় পিতা যিহোবা, আমরা যে কৃতজ্ঞ হচ্ছি সেইজন্য তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হবেন।

আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?

• কোন কারণগুলোর জন্য যিহোবার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত?

• দশমাংশ, স্বেচ্ছাকৃত দান এবং পতিত শস্য কুড়ানো থেকে আমরা কোন কোন শিক্ষা পেতে পারি?

• কীভাবে আমরা অগ্রগামীর মনোভাব গড়ে তুলি?

• যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য কীভাবে আমরা আমাদের ‘ধন’ ব্যবহার করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

“সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে”

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ব্যবস্থা থেকে কোন তিনটে শিক্ষা এখানে দেখানো হয়েছে?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমরা কোন কোন বলি উৎসর্গ করতে পারি?