সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যিহোবাতে আমোদ কর”

“যিহোবাতে আমোদ কর”

“যিহোবাতে আমোদ কর”

“সদাপ্রভুতে [“যিহোবাতে,” NW] আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।” —গীতসংহিতা ৩৭:৪.

১, ২. কে প্রকৃত সুখের উৎস এবং রাজা দায়ূদ কীভাবে এই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন?

 “ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা আত্মাতে দীনহীন, . . . ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা মৃদুশীল, . . . ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা মিলন করিয়া দেয়।” কারা সুখী সেই সম্বন্ধে আরও ছয়টা বর্ণনার সঙ্গে এই উক্তিগুলো যিশুর বিখ্যাত পর্বতে দত্ত উপদেশের লক্ষণীয় ভূমিকা গঠন করে, যা সুসমাচার লেখক মথি লিপিবদ্ধ করেছেন। (মথি ৫:৩-১১) যিশুর কথাগুলো নিশ্চয়তা দেয় যে, সুখ আমাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের রচিত এক পবিত্র সংগীত, প্রকৃত সুখের উৎস, যিহোবার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করায়। দায়ূদ বলেছিলেন, “যিহোবাতে আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:৪) কিন্তু, কী যিহোবা এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে জানাকে ‘আমোদিত’ করে তুলতে পারে? তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে গিয়ে তিনি যা করেছেন এবং এখনও করবেন, সেই সম্বন্ধে বিবেচনা কীভাবে আপনাকে “মনোবাঞ্ছা সকল” লাভ করার প্রত্যাশা দেয়? গীতংসহিতা ৩৭ অধ্যায় ১ থেকে ১১ পদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা এর উত্তর দেয়।

“ঈর্ষা করিও না”

৩, ৪. গীতসংহিতা ৩৭:১ পদে যেমন লিপিবদ্ধ করা আছে, দায়ূদ কোন উপদেশ দিয়েছেন এবং তাতে মনোযোগ দেওয়া আজকে কেন উপযুক্ত?

আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি এবং চারিদিক দুষ্টতায় ছেয়ে গেছে। আমরা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোর পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছি: “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১, ১৩) দুষ্ট লোকেদের বাহ্যিক সাফল্য এবং সমৃদ্ধি দেখে প্রভাবিত হওয়া কত সহজ! এই সমস্তকিছুই আমাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারে, আমাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে লক্ষ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। লক্ষ করুন যে, গীতসংহিতা ৩৭ অধ্যায়ের শুরুর কথাগুলো কীভাবে এই সম্ভাব্য বিপদ সম্বন্ধে আমাদের সতর্ক করে: “তুমি দুরাচারদের বিষয়ে রুষ্ট হইও না; অধর্ম্মাচারীদের প্রতি ঈর্ষা করিও না।”

জগতের প্রচারমাধ্যম রোজ অসংখ্য অবিচারের ঘটনাগুলো প্রকাশ করার মাধ্যমে আমাদের জর্জরিত করছে। অসৎ ব্যবসায়ীরা প্রতারণা করেও পার পেয়ে যায়। অপরাধীরা দুর্বলতার সুযোগ নেয়। খুনিরা অজ্ঞাত রয়ে যায় অথবা অদণ্ডিত থাকে। বিকৃত বিচারের এই ধরনের উদাহরণ ক্রোধ জাগিয়ে তুলতে এবং আমাদের মনের শান্তিকে নষ্ট করতে পারে। দুরাচারদের বাহ্যিক সাফল্য এমনকি ঈর্ষার অনুভূতিও জাগিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু, আমাদের বিচলিত হওয়া কি পরিস্থিতির পরিবর্তন করবে? দুষ্ট লোকেরা বাহ্যিক যে-সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, সেই সম্বন্ধে ঈর্ষা করা কি তাদের পরিণতিকে বদলে দেবে? কখনোই নয়! আর, আমাদের আসলে “রুষ্ট” হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কেন?

৫. দুরাচারদের কেন ঘাসের সঙ্গে তুলনা করা যায়?

গীতরচক উত্তর দেন: “কেননা তাহারা ঘাসের ন্যায় শীঘ্র ছিন্ন হইবে, হরিৎ তৃণের ন্যায় ম্লান হইবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২) নতুন সবুজ ঘাস দেখতো হয়তো সুন্দর লাগে কিন্তু তৃণগুলো শীঘ্রই ম্লান হয়ে যায় এবং মরে যায়। দুরাচারদের অবস্থাও ঠিক সেইরকম। তাদের বাহ্যিক সমৃদ্ধি স্থায়ী নয়। তারা যখন মারা যায়, তখন তাদের অসদুপায়ে অর্জিত সম্পদ তাদের কোনো সাহায্যই করে না। অবশেষে সকলেই ন্যায়বিচার পাবে। “পাপের বেতন মৃত্যু,” পৌল লিখেছিলেন। (রোমীয় ৬:২৩) দুরাচার এবং সমস্ত অধর্মচারীরা পরিশেষে তাদের “বেতন” পাবে এবং তারা আর থাকবে না। কতই না নিষ্ফল জীবন!—গীতসংহিতা ৩৭:৩৫, ৩৬; ৪৯:১৬, ১৭.

৬. গীতসংহিতা ৩৭:১, ২ পদ থেকে আমরা কোন শিক্ষা পেতে পারি?

তা হলে, দুরাচারদের ক্ষণস্থায়ী সমৃদ্ধি দেখে কি আমাদের বিঘ্ন পাওয়া উচিত? গীতসংহিতা ৩৭ অধ্যায়ের প্রথম দুটো পদ থেকে শিক্ষাটা হল: তাদের সাফল্যকে যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আপনার মনোনীত পথ থেকে আপনাকে পথভ্রষ্ট হতে দেবেন না। এর পরিবর্তে, আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ এবং লক্ষ্যগুলোর ওপর আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখুন।—হিতোপদেশ ২৩:১৭.

“যিহোবাতে নির্ভর রাখ, সদাচরণ কর”

৭. কেন আমাদের যিহোবার ওপর নির্ভর করা উচিত?

গীতরচক আমাদের অনুরোধ করেছিলেন, “সদাপ্রভুতে [“যিহোবাতে,” NW] নির্ভর রাখ, সদাচরণ কর।” (গীতসংহিতা ৩৭:৩ক) আমরা যখন নানা উদ্বেগ অথবা এমনকি সন্দেহের দ্বারা জর্জরিত হই, তখন আমাদের আস্থাকে যিহোবার ওপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করতে হবে। তিনিই পুরোপুরি আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা প্রদান করেন। মোশি লিখেছিলেন, “যে ব্যক্তি পরাৎপরের অন্তরালে থাকে, সে সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে।” (গীতসংহিতা ৯১:১) এই বিধিব্যবস্থায় অরাজকতার বৃদ্ধির কারণে অস্থির হয়ে পড়লে আমাদের আরও বেশি করে যিহোবার ওপর ভরসা রাখা দরকার। আমাদের পায়ের গোড়ালি যদি মচকে যায়, তা হলে কোনো বন্ধু সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা আনন্দিত হই। একইভাবে, আমরা যখন বিশ্বস্ততার সঙ্গে চলার প্রচেষ্টা করি, তখন আমাদের যিহোবার সাহায্য প্রয়োজন হয়।—যিশাইয় ৫০:১০.

৮. খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ কীভাবে আমাদেরকে দুষ্ট লোকেদের সমৃদ্ধি দেখে অযথা বিরক্ত হওয়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে?

দুষ্ট লোকেদের সমৃদ্ধি দেখে বিরক্ত হওয়ার একটা প্রতিষেধক হল, মেষতুল্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য তাদের সাহায্য করা। ক্রমাগত বেড়ে চলা দুষ্টতার মুখে, আমাদেরও অন্যদের সাহায্য করায় পুরোপুরি ব্যস্ত থাকতে হবে। “উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না,” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।” সবচেয়ে ‘উপকারী’ যে-কাজ আমরা করতে পারি, তা হল অন্যদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের গৌরবান্বিত সুসমাচার জানানো। জনসাধারণ্যে আমাদের প্রচার কাজ সত্যিই “স্তব-বলি।”—ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬; গালাতীয় ৬:১০.

৯. ‘পৃথিবীতে বাস করিবার’ বিষয়ে দায়ূদের পরামর্শ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন।

“দেশে [“পৃথিবীতে,” NW] বাস কর, বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চর,” দায়ূদ বলে চলেন। (গীতসংহিতা ৩৭:৩খ) দায়ূদের সময় ‘পৃথিবী’ ছিল, ইস্রায়েলকে যিহোবা যে-এলাকা দিয়েছিলেন, সেই প্রতিজ্ঞাত দেশ। শলোমনের রাজত্বের সময়ে এর সীমা দান থেকে দক্ষিণে বের্‌-শেবা পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। এটা ছিল ইস্রায়েলের বাসস্থান। (১ রাজাবলি ৪:২৫) আজকে আমরা পৃথিবীর যেখানেই বাস করি না কেন, আমরা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছি, যখন ধার্মিকতার নতুন জগতে সমগ্র গ্রহ এক পরমদেশে পরিণত হবে। সেই সময় পর্যন্ত, আমরা আধ্যাত্মিক সুরক্ষার মধ্যে বাস করছি।—যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪.

১০. আমরা যখন ‘বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চরি,’ তখন এর ফল কী হয়?

১০ আমরা যখন ‘বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চরি,’ তখন এর ফল কী হবে? অনুপ্রাণিত হিতোপদেশ আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “বিশ্বস্ত লোক অনেক আশীর্ব্বাদ পাইবে।” (হিতোপদেশ ২৮:২০) বিশ্বস্তভাবে সুসমাচার প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়া, তা আমরা যেখানেই বাস করি এবং যাদেরকেই জানাই না কেন, নিঃসন্দেহে তা যিহোবার কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্র্যাঙ্ক এবং তার স্ত্রী রোজ ৪০ বছর আগে উত্তর স্কটল্যান্ডে অগ্রগামীর কার্যভার গ্রহণ করেছিল। সেখানে যে-অল্প কয়েক জন ব্যক্তি সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল, তারা সত্য থেকে সরে গিয়েছিল। দমে না গিয়ে এই অগ্রগামী দম্পতি প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজ শুরু করে। এখন সেই শহরে উন্নতিশীল এক মণ্ডলী রয়েছে। এই দম্পতির বিশ্বস্ততার ওপর সত্যিই যিহোবার আশীর্বাদ ছিল। ফ্র্যাঙ্ক নম্রভাবে ব্যাখ্যা করেন, ‘সহজভাবে বলতে গেলে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হল যে, আমরা এখনও সত্যে আছি এবং যিহোবার দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছি।’ হ্যাঁ, আমরা যখন ‘বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চরি,’ তখন অনেক আশীর্বাদ পাই এবং তা উপলব্ধি করি।

“যিহোবাতে আমোদ কর”

১১, ১২. (ক) কীভাবে আমরা ‘যিহোবাতে আমোদ করিতে’ পারি? (খ) ব্যক্তিগত অধ্যয়নের ব্যাপারে আমরা কোন লক্ষ্য স্থাপন করতে পারি এবং এর কোন সম্ভাব্য ফলাফল রয়েছে?

১১ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার এবং তাঁর ওপর আমাদের নির্ভরতা বজায় রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই ‘যিহোবাতে আমোদ করিতে’ হবে। (গীতসংহিতা ৩৭:৪ক) কীভাবে আমরা তা করি? আমাদের নিজেদের পরিস্থিতি, যদিও তা কঠিন হতে পারে, তবুও এর দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার পরিবর্তে আমরা যিহোবাকে আমাদের চিন্তার বিষয় করে তুলি। তা করার একটা উপায় হল, তাঁর বাক্য পড়ার জন্য সময় করে নেওয়া। (গীতসংহিতা ১:১, ২) আপনার বাইবেল পাঠ কি আপনার জন্য আনন্দ নিয়ে আসে? তা নিয়ে আসবে, যখন আপনি যিহোবা সম্বন্ধে আরও শেখার লক্ষ্য নিয়ে তা পড়েন। কোনো একটা অংশ পড়ার পর একটু থেমে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন না কেন যে, ‘এই অংশ যিহোবা সম্বন্ধে আমাকে কি শিখিয়েছে?’ আপনি যখন বাইবেল পড়েন, তখন হাতের কাছে একটা নোটবুক অথবা কিছু কাগজপত্র রাখলে আপনি হয়তো উপকারজনক বলে দেখতে পারেন। আপনি যা পড়েছেন, সেটার অর্থ নিয়ে বিবেচনা করার জন্য প্রতিবার আপনি যখন থামেন, তখন সংক্ষেপে সেই বাক্যাংশটা লিখুন, যা আপনাকে ঈশ্বরের প্রীতিকর গুণগুলোর মধ্যে একটার বিষয়ে মনে করিয়ে দেয়। আরেকটা গীতে দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমার মুখের বাক্য ও আমার চিত্তের ধ্যান তোমার দৃষ্টিতে গ্রাহ্য [“প্রীতিজনক,” NW] হউক, হে সদাপ্রভু, আমার শৈল, আমার মুক্তিদাতা।” (গীতসংহিতা ১৯:১৪) ঈশ্বরের বাক্যের ওপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হল যিহোবার কাছে “প্রীতিজনক” এবং আমাদের জন্য আমোদজনক।

১২ আমাদের অধ্যয়ন এবং ধ্যান করা থেকে কীভাবে আমরা সুখ পেতে পারি? যিহোবা এবং তাঁর পথগুলো সম্বন্ধে যতটা পারি, ততটা শেখাকে আমরা আমাদের লক্ষ্য করতে পারি। এই ধরনের প্রকাশনাগুলো যেমন, সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন এবং যিহোবার নিকটবর্তী হোন * আমাদের প্রচুর তথ্য সরবরাহ করে, যা আমরা উপলব্ধি সহকারে বিবেচনা করতে পারি। তা করলে, দায়ূদ ধার্মিক ব্যক্তিদের আশ্বাস দেন যে, যিহোবা “তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:৪খ) এই ধরনের এক আস্থাই প্রেরিত যোহনকে এই কথাগুলো লিখতে প্রণোদিত করেছিল: “তাঁহার উদ্দেশে আমরা এই সাহস [“আস্থা,” NW] প্রাপ্ত হইয়াছি যে, যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন। আর যদি জানি যে, আমরা যাহা যাচ্ঞা করি, তিনি তাহা শুনেন, তবে ইহাও জানি যে, আমরা তাঁহার কাছে যাহা যাচ্ঞা করিয়াছি, সেই সকল পাইয়াছি।”—১ যোহন ৫:১৪, ১৫.

১৩. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক দেশে রাজ্য প্রচার কাজের কোন বিস্তার দেখা গিয়েছে?

১৩ নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী হিসেবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আমোদ হল, যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন হতে দেখা। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আমাদের হৃদয় কি আনন্দে উপচে পড়ে না, যখন আমরা সেই দেশগুলোতে আমাদের ভাইদের দ্বারা করা অসাধারণ প্রচার কাজ সম্বন্ধে জানতে পারি, যেগুলো আগে একদলীয় বা একনায়কতন্ত্র শাসনের অধীনে ছিল? এই বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে আরও যে-স্বাধীনতাগুলো আসতে পারে, সেগুলো দেখার জন্য আমরা সাগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। যিহোবার অনেক দাস, যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাস করে, তারা ছাত্রছাত্রী, শরণার্থী এবং অন্যান্য যে-ব্যক্তিরা অস্থায়ীভাবে সেই দেশগুলোতে বাস করে ও উপাসনার স্বাধীনতা উপভোগ করে, তাদের কাছে সক্রিয়ভাবে প্রচার করেছে। আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা এই যে, এই ব্যক্তিরা যখন দেশে ফিরে যাবে তখন তারা সত্যের আলোকে এমনকি বাহ্যিকভাবে গভীর অন্ধকারের মধ্যেও দেদীপ্যমান হতে দেবে।—মথি ৫:১৪-১৬.

“তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর”

১৪. কোন প্রমাণ রয়েছে যে, আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি?

১৪ এটা জানা কত স্বস্তিদায়ক যে, আমাদের উদ্বিগ্নতা এবং আমাদের কাছে পীড়নকর বলে মনে হয় এমন বোঝাগুলো দূর হয়ে যেতে পারে! কীভাবে? দায়ূদ বলেছিলেন, “তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:৫) যিহোবা যে এক নির্ভরযোগ্য সাহায্য, সেই বিষয়ে আমাদের মণ্ডলীগুলোতে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। (গীতসংহিতা ৫৫:২২) যারা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় রয়েছে, তা তারা অগ্রগামী, ভ্রমণ অধ্যক্ষ, মিশনারি অথবা বেথেলের স্বেচ্ছাসেবক, যারাই হোক না কেন, সকলেই যিহোবার যত্নের নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পারে। আপনি চেনেন এমন কারও সঙ্গে কথা বলুন এবং জিজ্ঞেস করুন না কেন যে, কীভাবে যিহোবা তাদের সাহায্য করেছেন? নিঃসন্দেহে আপনি এমন অনেক অভিজ্ঞতা শুনতে পাবেন যা দেখায় যে, এমনকি কঠিন সময়গুলোতেও যিহোবার সাহায্যের হাত কখনও অপ্রশস্ত হয় না। তিনি সবসময় জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে থাকেন।—গীতসংহিতা ৩৭:২৫; মথি ৬:২৫-৩৪.

১৫. যিহোবার লোকেদের ধার্মিকতা কীভাবে দেদীপ্যমান হয়?

১৫ আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের আস্থা করে তুলি এবং তাঁর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করি, তখন আমরা গীতরচকের অন্য কথাগুলোর অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি: “তিনি দীপ্তির ন্যায় তোমার ধর্ম্ম, মধ্যাহ্নের ন্যায় তোমার বিচার প্রকাশ করিবেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:৬) যিহোবার সাক্ষি হিসেবে, আমাদের প্রায়ই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু, যিহোবা সৎহৃদয়ের লোকেদের চোখ খুলে দেন এটা বুঝতে সাহায্য করার জন্য যে আমাদের জনসাধারণ্যে প্রচার যিহোবার এবং প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত। একইসঙ্গে আমাদের ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ, যদিও অনেকের দ্বারা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়, তবুও গুপ্ত থাকতে পারে না। যিহোবা আমাদের সমস্ত ধরনের বিরোধিতা এবং তাড়নার মধ্যেও টিকিয়ে রাখেন। এর ফলে, ঈশ্বরের লোকেদের ধার্মিকতা মধ্যাহ্নের সূর্যের মতো দেদীপ্যমান হয়।—১ পিতর ২:১২.

“নীরব হও . . . অপেক্ষায় থাক”

১৬, ১৭. গীতসংহিতা ৩৭:৭ পদের সঙ্গে মিল রেখে এখন কীসের সময় এবং কেন?

১৬ গীতরচকের পরের কথাগুলো হল: “সদাপ্রভুর নিকটে নীরব হও, তাঁহার অপেক্ষায় থাক; যে আপন পথে কৃতকার্য্য হয়, তাহার বিষয়ে, যে ব্যক্তি কুসঙ্কল্প করে, তাহার বিষয়ে রুষ্ট হইও না।” (গীতসংহিতা ৩৭:৭) এখানে দায়ূদ এই বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে, যিহোবা যেন পদক্ষেপ নেন সেইজন্য আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা প্রয়োজন। যদিও এই বিধিব্যবস্থার শেষ এখনও আসেনি কিন্তু সেটা অভিযোগ করার কোনো কারণ নয়। আমরা কি দেখতে পাইনি যে, যিহোবার করুণা এবং ধৈর্য আমরা প্রথমে যতটা মনে করেছিলাম, সেটার চেয়ে অনেক অনেক বেশি? শেষ আসার আগে সুসমাচার প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমে আমরা কি এখন দেখাতে পারি যে আমরাও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি? (মার্ক ১৩:১০) এখন সেই সমস্ত হঠকারিতাপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলার সময়, যা আমাদের আনন্দ এবং আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা কেড়ে নিতে পারে। এখনই আরও বেশি করে দৃঢ়ভাবে শয়তানের জগতের কলুষিত প্রভাবের প্রতিরোধ করার সময়। এখনই নৈতিক শুদ্ধতা বজায় রাখার এবং যিহোবার সামনে আমাদের ধার্মিক অবস্থানকে কখনও ঝুঁকির মুখে না ফেলার সময়। আসুন আমরা ক্রমাগত অনৈতিক চিন্তাভাবনা দূর করি এবং বিপরীত অথবা এমনকি সমলিঙ্গের লোকেদের সঙ্গে অনুচিত কাজগুলো এড়িয়ে চলি।—কলসীয় ৩:৫.

১৭ “ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর,” দায়ূদ আমাদের পরামর্শ দেন। “রুষ্ট হইও না, হইলে কেবল দুষ্কার্য্য করিবে। কারণ দুরাচারগণ উচ্ছিন্ন হইবে, কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারাই দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:৮, ৯) হ্যাঁ, আমরা আস্থার সঙ্গে সেই সময়ের অপেক্ষা করতে পারি, যখন যিহোবা পৃথিবী থেকে সমস্ত কলুষতা এবং যারা এর জন্য দায়ী তাদের সকলকে দূর করে দেবেন, যে-সময় এখন খুবই কাছে।

“ক্ষণকাল, পরে”

১৮, ১৯. গীতংসহিতা ৩৭:১০ পদ থেকে আপনি কোন উৎসাহ পান?

১৮ “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই।” (গীতসংহিতা ৩৭:১০) এই বিধিব্যবস্থার শেষের এবং যিহোবার কাছ থেকে ধ্বংসাত্মক স্বাধীনতার চরম সীমার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়, এই কথাগুলো আমাদের কত উৎসাহ দেয়! মানুষরা যেধরনের সরকার বা ক্ষমতাই কল্পনা করুক না কেন, তা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমরা ঈশ্বরের, প্রকৃত ঈশতান্ত্রিক শাসনের, যা হল যিশু খ্রিস্টের হাতে যিহোবার রাজ্য, সেটার মধ্যে মধ্যে ফিরে যাওয়ার সময়ে নিকটবর্তী হচ্ছি। এটি জগতের বিষয়গুলোর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সমস্ত বিরোধীকে দূর করবে।—দানিয়েল ২:৪৪.

১৯ ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে নতুন জগতে, এমনকি তন্ন তন্ন করেও আপনি কোনো “দুষ্ট লোক” খুঁজে পাবেন না। বস্তুত, সেই সময় যেকেউ যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, তাকেই সঙ্গে সঙ্গে দূরীভূত করা হবে। তাঁর সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ আনে অথবা ঈশ্বরীয় কর্তৃত্বের প্রতি বশীভূত হতে অস্বীকার করে, এমন কেউই সেখানে থাকবে না। আপনার সকল প্রতিবেশী যিহোবাকে খুশি করতে চাওয়ার বিষয়ে সমভাবাপন্ন হবে। সেটা কত নিরাপত্তাই না নিয়ে আসবে—কোনো তালা নেই, কোনো খিল নেই, এমন কোনো কিছু নেই, যা পূর্ণ নির্ভরতা এবং সুখকে নষ্ট করবে।—যিশাইয় ৬৫:২০; মীখা ৪:৪; ২ পিতর ৩:১৩.

২০, ২১. (ক) গীতসংহিতা ৩৭:১১ পদের “মৃদুশীলেরা” কারা এবং তারা কোথায় “শান্তির বাহুল্য” খুঁজে পায়? (খ) আমরা যদি মহান দায়ূদকে অনুকরণ করি, তা হলে কোন আশীর্বাদগুলো পাব?

২০ এরপর “মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১১ক) কিন্তু, এই “মৃদুশীলেরা” কারা? ‘মৃদু’ হিসেবে অনুবাদিত শব্দটা যে-মূল শব্দ থেকে এসেছে, সেটার অর্থ, “দুর্দশাগ্রস্ত, নম্র, অবনমিত।” হ্যাঁ, “মৃদুশীলেরা” হল তারা, যারা তাদের ওপর যেসকল অবিচার করা হচ্ছে, সেগুলোর সংশোধনের জন্য নম্রভাবে যিহোবার অপেক্ষা করে। তারা “শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১১খ) এমনকি এখনই আমরা সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে সংযুক্ত আধ্যাত্মিক পরমদেশে প্রচুর শান্তি খুঁজে পাই।

২১ যদিও এখনও দুর্দশা থেকে মুক্ত হইনি কিন্তু আমরা একে অপরকে সাহায্য করি এবং যারা হতাশাগ্রস্ত তাদের সান্ত্বনা দিই। এর ফলে যিহোবার লোকেদের মধ্যে প্রকৃত মনের তৃপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে-ভাইদের পালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে, তারা প্রেমের সঙ্গে আমাদের আধ্যাত্মিক—এবং কখনও কখনও এমনকি দৈহিক—প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেয়, আমাদেরকে ধার্মিকতার জন্য দুর্দশা সহ্য করতে সাহায্য করে। (১ থিষলনীকীয় ২:৭, ১১; ১ পিতর ৫:২, ৩) এই শান্তি কত মূল্যবান এক সম্পদ! এ ছাড়া, নিকটবর্তী শান্তিপূর্ণ পরমদেশে আমাদের অনন্তজীবনের আশাও রয়েছে। অতএব, আমরা যেন মহান দায়ূদ খ্রিস্ট যিশুকে অনুকরণ করি, যিহোবার জন্য যাঁর উদ্যোগ তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। (১ পিতর ২:২১) তা করার মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত সুখী হব, যাঁর জন্য আমরা আমোদ করি, আমাদের সেই ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা করব।

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

গীতসংহিতা ৩৭:১, ২ পদ থেকে আপনি কোন শিক্ষাগুলো শিখেছেন?

• আপনি কীভাবে ‘যিহোবাতে আমোদ করিতে’ পারেন?

• কোন প্রমাণ রয়েছে যে, আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টানরা ‘অধর্ম্মচারীদের প্রতি ঈর্ষা করে না’

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

“যিহোবাতে নির্ভর রাখ, সদাচরণ কর”

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা সম্বন্ধে যতটা পারেন, ততটা শেখার মাধ্যমে যিহোবাতে আনন্দ করুন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

“মৃদুশীলেরা পৃথিবীর অধিকারী হইবে”