সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুর মানব পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শেখা

যিশুর মানব পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শেখা

যিশুর মানব পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শেখা

 যিশুর নিজ পরিবারের সদস্যদের সম্বন্ধে আপনি কী জানেন, যাদের সঙ্গে তিনি তাঁর বাপ্তিস্মের আগে পর্যন্ত, পৃথিবীতে তাঁর জীবনের প্রথম ৩০ বছর কাটিয়েছিলেন? সুসমাচারের বিবরণগুলো আমাদের কী জানায়? তাঁর পরিবার সম্বন্ধে পরীক্ষা করে আমরা কী শিখতে পারি? উত্তরগুলো থেকে আপনি উপকৃত হতে পারেন।

যিশু কি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন? তাঁর পালক পিতা যোষেফ এক সূত্রধর বা ছুতোরমিস্ত্রি ছিলেন। সেটা অনেক শারীরিক পরিশ্রমের কাজ ছিল, যেটাতে প্রায়ই কাঠ সংগ্রহের জন্য গাছ কাটা অন্তর্ভুক্ত ছিল। যিশুর মানব পিতামাতা যখন তাঁর জন্মের প্রায় ৪০ দিন পর যিরূশালেমে গিয়েছিল, তখন তারা ব্যবস্থার নির্দেশ অনুযায়ী বলি উৎসর্গ করেছিল। তারা কি ব্যবস্থার শর্ত অনুযায়ী একটা মেষ ও সেইসঙ্গে ঘুঘু বা কপোত উৎসর্গ করেছিল? না। স্পষ্টতই, এই ধরনের উৎসর্গ দেওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না। তবে, ব্যবস্থায় দরিদ্রদের জন্য একটা সুযোগ ছিল। সেটার সঙ্গে মিল রেখে যোষেফ ও মরিয়ম “এক যোড়া ঘুঘু কিম্বা দুই কপোতশাবক” উৎসর্গ করেছিল। উৎসর্গ করার জন্য সস্তা প্রাণী বাছাই করা দেখিয়েছিল যে, তারা এক দরিদ্র পরিবারের সদস্য ছিল।—লূক ২:২২-২৪; লেবীয় পুস্তক ১২:৬, ৮.

আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, সমস্ত মানবজাতির ভাবী শাসক যিশু খ্রিস্ট দরিদ্রদের মাঝে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই লোকেদের মাঝে যাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। তিনি একজন ছুতোরমিস্ত্রি হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিলেন, ঠিক তাঁর পালক পিতার মতো। (মথি ১৩:৫৫; মার্ক ৬:৩) স্বর্গে এক ক্ষমতাবান আত্মিক প্রাণী হিসেবে “[যিশু] ধনবান্‌ হইলেও” বাইবেল বলে যে, তিনি আমাদের জন্য “দরিদ্র হইলেন।” তিনি মানুষ হিসেবে এক ক্ষুদ্র স্থান গ্রহণ করেছিলেন এবং সাধারণ লোকেদের নিয়ে গঠিত এক পরিবারে বড় হয়ে উঠেছিলেন। (২ করিন্থীয় ৮:৯; ফিলিপীয় ২:৫-৯; ইব্রীয় ২:৯) যিশু কোনো স্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেননি আর এটা হয়তো কিছু লোককে তাঁর সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করেছিল। তারা তাঁর পদমর্যাদা বা অবস্থানের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়নি। তারা তাঁর শিক্ষা, তাঁর হৃদয়গ্রাহী গুণাবলি এবং তাঁর চমৎকার কাজগুলোর জন্য তাঁকে মূল্যায়ন করতে পেরেছিল। (মথি ৭:২৮, ২৯; ৯:১৯-৩৩; ১১:২৮, ২৯) যিশুকে এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করতে দেওয়ার মধ্যে আমরা যিহোবা ঈশ্বরের প্রজ্ঞা দেখতে পাই।

এখন আসুন আমরা যিশুর পরিবারের সদস্যদের বিষয় বিবেচনা করি এবং দেখি যে, তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

যোষেফ—একজন ধার্মিক ব্যক্তি

যোষেফ যখন জানতে পেরেছিলেন যে, তার বাগদত্তা “তাঁহাদের সহবাসের পূর্ব্বে” গর্ভবতী হয়েছেন, তখন তিনি নিশ্চয় মরিয়মের প্রতি তার ভালবাসা এবং অনৈতিকতা হিসেবে প্রতীয়মান বিষয়ের প্রতি তার ঘৃণা প্রকাশের ক্ষেত্রে এক উভয়সংকটে পড়ে গিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল যেন, মরিয়মের ভাবী স্বামী হিসেবে তার অধিকারকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। তার দিনে, একজন বাগদত্তা মহিলাকে সেই পুরুষের স্ত্রীর মতোই দেখা হতো। বিবেচনাপূর্বক চিন্তা করার পর, যোষেফ গোপনে মরিয়মকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে তিনি এক পারদারিক স্ত্রী হিসেবে প্রস্তরাঘাতের হাত থেকে রক্ষা পান।—মথি ১:১৮; দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৩, ২৪.

এরপর এক স্বর্গদূত স্বপ্নে যোষেফকে দেখা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ব্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে; আর তিনি পুত্ত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু [ত্রাণকর্ত্তা] রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন।” সেই ঐশিক নির্দেশ পাওয়ার পর যোষেফ সেই মতো কাজ করেছিলেন এবং মরিয়মকে গ্রহণ করেছিলেন।—মথি ১:২০-২৪.

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে সেই ধার্মিক ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি, ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে যিহোবা যা বলেছিলেন, সেটার পরিপূর্ণতায় জড়িত হয়েছিলেন: “দেখ, এক কন্যা গর্ব্ভবতী হইয়া পুত্ত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম ইম্মানূয়েল [আমাদের সহিত ঈশ্বর] রাখিবে।” (যিশাইয় ৭:১৪) নিশ্চিতভাবেই যোষেফ একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন, যিনি মশীহের পালক পিতা হওয়ার সম্মানের জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন, যদিও মরিয়মের প্রথমজাত পুত্র তার নিজের সন্তান নয়।

মরিয়ম যতদিন পর্যন্ত তার পুত্র প্রসব করেননি, ততদিন পর্যন্ত যোষেফ তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করা থেকে বিরত ছিলেন। (মথি ১:২৫) নববিবাহিত দম্পতির জন্য এই ক্ষেত্রটাতে সংযমী হওয়া হয়তো অত্যন্ত কঠিন ছিল কিন্তু স্পষ্টতই তারা কাউকে এইরকম ভুলবোঝাবুঝির সুযোগ দিতে চায়নি যে, শিশুটির পিতা আসলে কে ছিল। আত্মসংযমের কী এক চমৎকার উদাহরণ! যোষেফ আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোকে তার সহজাত আকাঙ্ক্ষাগুলোর চেয়ে আগে রেখেছিলেন।

যোষেফ তার পালক পুত্রকে পালন করা সম্বন্ধে চার বার দূতের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনটে ছিল ছেলেটিকে কোথায় বড় করে তুলবেন, সেই সম্বন্ধে। শিশুটির জীবন রক্ষার জন্য তাৎক্ষণিক বাধ্যতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই যোষেফ অবিলম্বে কাজ করেছিলেন, প্রথমে শিশুটিকে মিশরে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং পরে আবার ইস্রায়েলে ফিরে এসেছিলেন। এটা হেরোদের শিশু হত্যাকাণ্ড থেকে অল্পবয়স্ক যিশুকে রক্ষা করেছিল। এ ছাড়া, যোষেফের বাধ্যতার ফলে মশীহের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হয়েছিল।—মথি ২:১৩-২৩.

যোষেফ যিশুকে একটা পেশা শিখিয়েছিলেন, যাতে তিনি তাঁর নিজের ভরণপোষণ করতে পারেন। তাই যিশু কেবল “সূত্রধরের পুত্ত্র” হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না কিন্তু সেইসঙ্গে “সূত্রধর” হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। (মথি ১৩:৫৫; মার্ক ৬:৩) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, যিশু “সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন।” স্বাভাবিকভাবেই এর মধ্যে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা জড়িত ছিল।—ইব্রীয় ৪:১৫.

অবশেষে, সত্য উপাসনার প্রতি যোষেফের ভক্তির প্রমাণ আমরা শেষ বিবরণে দেখতে পাই, যেখানে তিনি খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্রে আবির্ভূত হন। যোষেফ নিস্তারপর্বের জন্য তার পরিবারকে যিরূশালেমে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কেবল পুরুষদের যোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল কিন্তু যোষেফ তার পরিবারকে “প্রতিবৎসর” যিরূশালেমে নিয়ে যাওয়াকে এক অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। তিনি প্রচুর ত্যাগস্বীকার করেছিলেন কারণ তাদের নাসরত থেকে যিরূশালেমে যেতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হতো। কিন্তু, শাস্ত্রের বিবৃতি অনুযায়ী, সেই সময় যিশু দল থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে মন্দিরে পাওয়া গিয়েছিল, যিনি ব্যবস্থা গুরুদের কাছ থেকে শুনছিলেন ও তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন। যদিও যিশুর বয়স তখন মাত্র ১২ বছর ছিল, তবুও তিনি ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে মহৎ প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রকাশ করেছিলেন। এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যিশুর পিতামাতা নিশ্চয়ই তাঁকে খুব ভালভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁকে এক আধ্যাত্মিকমনা বালক হিসেবে বড় করে তুলেছিলেন। (লূক ২:৪১-৫০) এর কিছু সময় পরই যোষেফ মারা গিয়েছিলেন বলে মনে হয় কারণ পরে শাস্ত্রীয় বিবরণগুলোতে তার বিষয়ে আর কোনো উল্লেখ নেই।

হ্যাঁ, যোষেফ একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি অত্যন্ত ভালভাবে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক উভয় বিষয়ে তার পরিবারের যত্ন নিয়েছিলেন। আজকে আমাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তা যখন আপনি উপলব্ধি করেন তখন আপনিও কি যোষেফের মতো আধ্যাত্মিক আগ্রহগুলোকে আপনার জীবনে প্রথম স্থানে রাখেন? (১ তীমথিয় ২:৪, ৫) আপনি কি স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের বাক্যে প্রকাশিত তাঁর কথার বাধ্য হন এবং এর দ্বারা যোষেফের মতো বশ্যতা দেখান? আপনি কি আপনার সন্তানদের শিক্ষা দেন যাতে তারা অন্যদের সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবে গঠনমূলক কথাবার্তা বলতে পারে?

মরিয়ম—ঈশ্বরের একজন নিঃস্বার্থ দাসী

যিশুর মা মরিয়ম, ঈশ্বরের একজন চমৎকার দাসী ছিলেন। গাব্রিয়েল দূত যখন ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি প্রসব করবেন, তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। কুমারী হওয়ায় তিনি ‘পুরুষকে জানিতেন না।’ সেই জন্ম পবিত্র আত্মার দ্বারা হবে তা জানার পর তিনি নম্রভাবে সেই বার্তাটা মেনে নিয়ে বলেছিলেন: “দেখুন, আমি প্রভুর দাসী; আপনার বাক্যানুসারে আমার প্রতি ঘটুক।” (লূক ১:৩০-৩৮) তিনি বিশেষ আধ্যাত্মিক সুযোগটিকে এতটাই মূল্য দিয়েছিলেন যে, তার সিদ্ধান্তের কারণে যেসমস্ত কষ্টই আসুক না কেন সেগুলো ভোগ করতে তিনি ইচ্ছুক ছিলেন।

বাস্তবিকই, সেই দায়িত্ব গ্রহণ করা একজন নারী হিসেবে তার সম্পূর্ণ জীবনকে পালটে দিয়েছিল। তিনি যখন শুচি হওয়ার জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিলেন, তখন শিমিয়োন নামে এক ভক্ত বৃদ্ধ ব্যক্তি তাকে বলেছিলেন: “তোমার নিজের প্রাণও খড়েগ বিদ্ধ হইবে।” (লূক ২:২৫-৩৫) স্পষ্টতই, তিনি বোঝাচ্ছিলেন যে, যখন মরিয়ম যিশুকে অনেকের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে ও শেষ পর্যন্ত যাতনা দণ্ডে বিদ্ধ হতে দেখবেন, তখন মরিয়ম কেমন বোধ করবেন।

যিশু যখন বড় হয়ে উঠছিলেন, তখন মরিয়ম যিশুর জীবনে যা ঘটছিল তা স্মরণে রাখছিলেন, ‘হৃদয় মধ্যে আন্দোলন করিতেছিলেন।’ (লূক ২:১৯, ৫১) যোষেফের মতো তিনিও একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন এবং সেই ঘটনা ও কথাগুলোকে মূল্যবান মনে করেছিলেন, যেগুলো ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে পূর্ণ করেছিল। গাব্রিয়েল দূত তাকে যা বলেছিলেন, তা নিশ্চয়ই তার মনে গেঁথে গিয়েছিল: “তিনি মহান্‌ হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্ত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না।” (লূক ১:৩২, ৩৩) হ্যাঁ, তিনি মশীহের মানব মাতা হওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ কার্যভারকে গম্ভীরভাবে বিবেচনা করেছিলেন।

মরিয়মের আধ্যাত্মিকতা আবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, যখন তার আত্মীয়া ইলীশাবেতের সঙ্গে মরিয়মের দেখা হয়েছিল যিনি নিজেও অলৌকিকভাবে গর্ভবতী হয়েছিলেন। তাকে দেখে মরিয়ম যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি তার ভালবাসা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি পরোক্ষভাবে ১ শমূয়েল ২ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ হান্নার প্রার্থনা উল্লেখ করেছিলেন এবং ইব্রীয় শাস্ত্রের অন্যান্য বইয়ের চিন্তাধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। শাস্ত্র সম্বন্ধে এই ধরনের জ্ঞান দেখিয়েছিল যে, তিনি একজন ঈশ্বরভক্ত ও ঈশ্বর ভয়শীল মা হওয়ার যোগ্য ছিলেন। তিনি তার পুত্রকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রতিপালন করতে যোষেফের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।—আদিপুস্তক ৩০:১৩; ১ শমূয়েল ২:১-১০; মালাখি ৩:১২; লূক ১:৪৬-৫৫.

মশীহ হিসেবে তার পুত্রের প্রতি মরিময়ের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং তা এমনকি যিশুর মৃত্যুর পরেও কমে যায়নি। তাঁর পুনরুত্থানের পর পরই মরিয়মকে সেই বিশ্বস্ত শিষ্যদের মাঝে পাওয়া গিয়েছিল, যারা প্রেরিতদের সঙ্গে প্রার্থনা করার জন্য মিলিত হয়েছিল। (প্রেরিত ১:১৩, ১৪) তার প্রিয় পুত্রকে যাতনা দণ্ডে মৃত্যুবরণ করার যন্ত্রণা সহ্য করতে দেখা সত্ত্বেও, তিনি তার বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন।

মরিয়মের জীবনী সম্বন্ধে শিখে আপনি কীভাবে উপকৃত হতে পারেন? ঈশ্বরকে সেবা করার সম্মানকে কি আপনি গ্রহণ করেন যদিও এর সঙ্গে বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার জড়িত রয়েছে? আজকে এই সম্মানের গুরুত্ব সম্বন্ধে আপনি কি চিন্তিত? যিশু যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা কি আপনি মনে রাখেন এবং বর্তমানে যা ঘটছে সেটার সঙ্গে তুলনা করে, ‘আপনার হৃদয় মধ্যে আন্দোলন করিতেছেন’? (মথি ২৪ ও ২৫ অধ্যায়; মার্ক ১৩ অধ্যায়; লূক ২১ অধ্যায়) আপনি কি ঈশ্বরের বাক্যে জ্ঞানসম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে মরিয়মকে অনুকরণ করেন এবং প্রায়ই আপনার কথাবার্তায় তা ব্যবহার করেন? যিশুর অনুসারী হওয়ার কারণে আপনাকে হয়তো মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে, তা সত্ত্বেও কি আপনি যিশুর প্রতি আপনার বিশ্বাস বজায় রাখবেন?

যিশুর ভাইয়েরা—পরিবর্তন সম্ভব

যিশুর ভাইয়েরা তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর প্রতি বিশ্বাস অনুশীলন করেনি বলে মনে হয়। সম্ভবত এই কারণেই তারা যাতনা দণ্ডে যিশুর মৃত্যুর সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না আর তাই তিনি তাঁর মায়ের দায়িত্ব প্রেরিত যোহনকে দিয়েছিলেন। যিশুর আত্মীয়রা দেখিয়েছিল যে, তারা তাঁকে সম্মান করে না, এমনকি একবার বলেছিল যে, যিশুর “হতজ্ঞান হইয়াছে।” (মার্ক ৩:২১) যেহেতু যিশুর পরিবারের কিছু সদস্য অবিশ্বাসী ছিল, তাই আজকে যাদের পরিবারে অবিশ্বাসী সদস্যরা রয়েছে তারা আস্থা রাখতে পারে যে, তাদের আত্মীয়রা যখন তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে উপহাস করে, তখন তাদের কেমন বোধ হয় তা যিশু বোঝেন।

কিন্তু, যিশুর পুনরুত্থানের পর, তাঁর ভাইয়েরা তাঁর ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করতে শুরু করেছিল বলে মনে হয়। তারা সেই দলে ছিল, যারা সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিরূশালেমে মিলিত হয়েছিল এবং প্রেরিতদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করেছিল। (প্রেরিত ১:১৪) স্পষ্টতই, তাদের অর্ধভ্রাতার পুনরুত্থান তাদের হৃদয়কে পরিবর্তন করতে এতটাই প্রেরণা দিয়েছিল যে, তারা তাঁর শিষ্য হয়েছিল। যে-আত্মীয়রা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তাদের ব্যাপারে আমাদের কখনোই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

যিশুর অর্ধভ্রাতা যাকোব, যার কাছে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাকে শাস্ত্রে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি তার সহখ্রিস্টানদের কাছে ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত এক চিঠি লিখেছিলেন, বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৬-২৯; ১ করিন্থীয় ১৫:৭; গালাতীয় ১:১৮, ১৯; ২:৯; যাকোব ১:১) আরেক জন অর্ধভ্রাতা যিহূদা, সহবিশ্বাসীদের উৎসাহ দিয়ে এক অনুপ্রাণিত চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তারা বিশ্বাসের পক্ষে এক প্রাণপণ যুদ্ধ করে। (যিহূদা ১) এটা লক্ষণীয় যে, যাকোব বা যিহূদা কেউই সহখ্রিস্টানদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করার জন্য তাদের চিঠিতে যিশুর সঙ্গে তাদের মাংসিক বন্ধনের বিষয়ে কিছুই লেখেননি। তাদের কাছ থেকে বিনয়ের কী এক চমৎকার শিক্ষাই না আমরা পাই!

তাই, কিছু বিষয় কী যা আমরা যিশুর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শিখতে পারি? অবশ্যই, ভক্তির শিক্ষাগুলো যা এই উপায়গুলোর মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে: (১) ঈশ্বরের প্রকাশিত সমস্ত ইচ্ছার প্রতি বিশ্বস্তভাবে বশীভূত হোন এবং তা করার ফলে যে-পরীক্ষাগুলো আসে, সেগুলোর মুখোমুখি হোন। (২) আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোকে প্রথমে রাখুন, এমনকি যখন সেগুলোর জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকারও করতে হয়। (৩) আপনার সন্তানদের শাস্ত্রের সঙ্গে মিল রেখে প্রশিক্ষণ দিন। (৪) আপনার বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয় পরিবারের এমন সদস্যদের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেবেন না। (৫) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে বিশিষ্ট কারও সঙ্গে যদি আপনার কোনোরকম সম্পর্ক থাকে, তা হলে সেটা নিয়ে গর্ব করবেন না। হ্যাঁ, যিশুর মানব পরিবার সম্বন্ধে শেখা আমাদের তাঁর আরও নিকটবর্তী করে এবং যিশুর ছেলেবেলায় তাঁকে প্রতিপালন করার জন্য যিহোবা যে-সাধারণ পরিবারকে বেছে নিয়েছিলেন, সেটার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে আরও বৃদ্ধি করে।

[৪, ৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যোষেফ মরিয়মকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন আর এভাবে মশীহ বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতায় জড়িত হয়েছিলেন

[৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যোষেফ ও মরিয়ম তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো এবং কাজের ভূমিকা সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যদিও এক আধ্যাত্মিক পরিবারে বড় হয়ে উঠেছিলেন তবুও যিশুর ভাইয়েরা তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখেনি

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিশুর অর্ধভ্রাতা যাকোব ও যিহূদা সহখ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিল