সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন

যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন

যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন

“প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” —মথি ২৪:৪৪.

১. যিহোবার দিন সম্বন্ধে কেন আমাদের চিন্তিত হওয়া উচিত?

 এটা হবে যুদ্ধ ও ক্রোধের, সংকোচ ও সংকটের এবং অন্ধকার ও সর্বনাশের দিন। যিহোবার ‘মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন’ এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ওপর আসবেই, ঠিক যেমন জলপ্লাবন নোহের দিনের দুষ্ট জগৎকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। এর থেকে কোনো রেহাই নেই। কিন্তু, “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে।” (যোয়েল ২:৩০-৩২; আমোষ ৫:১৮-২০) ঈশ্বর তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তাঁর লোকেদের রক্ষা করবেন। তৎপরতার মনোভাব নিয়ে ভাববাদী সফনিয় ঘোষণা করেছিলেন: “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী, তাহা নিকটবর্ত্তী, অতি শীঘ্র আসিতেছে।” (সফনিয় ১:১৪) কিন্তু, এই ঐশিক বিচার কখন সম্পাদিত হবে?

২, ৩. যিহোবার দিনের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা কেন অতি গুরুত্বপূর্ণ?

“সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গে দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ২৪:৩৬) আমরা যেহেতু একেবারে সঠিক সময়টা জানি না, তাই ২০০৪ সালের বাৎসরিক শাস্ত্রপদের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ: “জাগিয়া থাক . . . প্রস্তুত থাক।”—মথি ২৪:৪২, ৪৪.

যারা প্রস্তুত, তাদেরকে নিরাপদে কত আকস্মিকভাবে একত্রিত করা হবে এবং অন্যদেরকে পরিত্যাগ করা হবে, সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে যিশু বলেছিলেন: “দুই জন ক্ষেত্রে থাকিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। দুইটী স্ত্রীলোক যাঁতা পিষিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে।” (মথি ২৪:৪০, ৪১) সেই চরম সময়ে আমাদের ব্যক্তিগত অবস্থা কেমন থাকবে? আমরা কি প্রস্তুত থাকব, নাকি সেই দিন আমাদের ওপর অপ্রত্যাশিতভাবে আসবে? এর বেশির ভাগই নির্ভর করে এখন আমরা যে-পদক্ষেপগুলো নিই, সেটার ওপর। যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে আমাদের বর্তমানে বিদ্যমান এক নির্দিষ্ট মনোভাব এড়িয়ে চলা, এক নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক অবস্থায় পতিত হওয়া প্রতিরোধ করা এবং নির্দিষ্ট জীবনধারা পরিহার করা প্রয়োজন।

আত্মতুষ্টির মনোভাব এড়িয়ে চলুন

৪. নোহের দিনের লোকেদের মনোভাব কেমন ছিল?

নোহের দিনের কথা বিবেচনা করুন। বাইবেল বলে, “বিশ্বাসে নোহ, যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৭) সেই জাহাজ অস্বাভাবিক এবং অত্যন্ত লক্ষণীয় হবে। এ ছাড়া, নোহ ছিলেন “ধার্ম্মিকতার প্রচারক।” (২ পিতর ২:৫) নোহের নির্মাণ প্রকল্প অথবা তার প্রচার কাজ কোনোটাই তার দিনের লোকেদের পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করেনি। কেন? কারণ তারা “ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত।” যাদের কাছে নোহ প্রচার করেছিলেন, তারা ব্যক্তিগত বিষয়গুলো এবং আমোদপ্রমোদে এতটাই ডুবে ছিল যে, তারা “বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।”—মথি ২৪:৩৮, ৩৯.

৫. লোটের দিনে সদোমের অধিবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?

লোটের দিনেও একই অবস্থা ছিল। শাস্ত্র আমাদের বলে যে: “লোকে ভোজন পান, ক্রয় বিক্রয়, বৃক্ষ রোপণ ও গৃহ নির্ম্মাণ করিত; কিন্তু যে দিন লোট সদোম হইতে বাহির হইলেন, সেই দিন আকাশ হইতে অগ্নি ও গন্ধক বর্ষিয়া সকলকে বিনষ্ট করিল।” (লূক ১৭:২৮, ২৯) দূতেরা লোটকে আসন্ন ধ্বংসের বিষয়ে সাবধান করার পর, তিনি যা ঘটতে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে তার জামাতাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তারা “তাঁহাকে উপহাসকারী বলিয়া জ্ঞান করিল।”—আদিপুস্তক ১৯:১৪.

৬. কোন মনোভাব আমাদের অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে?

নোহ এবং লোটের দিনে যেমন হয়েছিল “তদ্রূপ মনুষ্যপুত্ত্রের আগমন [“উপস্থিতি,” NW]” হবে, যিশু বলেছিলেন। (মথি ২৪:৩৯; লূক ১৭:৩০) বাস্তবিকই, বর্তমানে অনেকের মধ্যেই আত্মতুষ্টির মনোভাব বিদ্যমান। এইরকম দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। পরিমিত মাত্রায় ভোজন ও পান করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। একইভাবে, বিয়েও ঈশ্বরেরই একটা ব্যবস্থা। কিন্তু, এই ধরনের বিষয়গুলো যদি আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে যায় এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো অবহেলিত হয়ে থাকে, তা হলে ব্যক্তিগতভাবে আমরা কি যিহোবার ভয়ংকর দিনের জন্য প্রস্তুত আছি?

৭. কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?

“সময় সঙ্কুচিত,” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন। তাই, “এখন হইতে যাহাদের স্ত্রী আছে, তাহারা এমন চলুক, যেন তাহাদের স্ত্রী নাই।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯-৩১) ঈশ্বর দত্ত রাজ্য প্রচার কাজ শেষ করার জন্য আমাদের হাতে শুধু সীমিত সময় রয়েছে। (মথি ২৪:১৪) পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, এমনকি যারা বিবাহিত তারা যাতে তাদের সাথির প্রতি এত বেশি মগ্ন না হয় যে, এর ফলে তারা রাজ্যের বিষয়গুলোকে তাদের জীবনে দ্বিতীয় স্থান দেয়। স্পষ্টতই, পৌল যে-মনোভাবের বিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন, তা আত্মতুষ্টির মনোভাবের একেবারে বিপরীত। যিশু বলেছিলেন, “কিন্তু তোমরা প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” (মথি ৬:৩৩) কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অথবা কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে, জিজ্ঞেস করার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হল, ‘রাজ্যের বিষয়গুলোকে আমার জীবনে প্রথমে রাখার ক্ষেত্রে এটা কীভাবে প্রভাব ফেলবে?’

৮. জীবনের দৈনন্দিন বিষয়গুলো যদি আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

কী হবে যদি আমরা বুঝতে পারি যে, ইতিমধ্যেই আমরা জীবনের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজগুলোতে এত বেশি জড়িত হয়ে পড়েছি যে, এর ভিড়ে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো চাপা পড়ে গেছে? আমাদের এবং আমাদের সেই সমস্ত প্রতিবেশীর জীবনধারার মধ্যে কি সামান্য পার্থক্য রয়েছে, যাদের শাস্ত্র সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে এবং যারা রাজ্য ঘোষণাকারী নয়? যদি তা-ই হয়, তা হলে এই বিষয়ে আমাদের প্রার্থনা করা প্রয়োজন। সঠিক মনোভাব রাখার জন্য যিহোবা আমাদের সমর্থ করতে পারেন। (রোমীয় ১৫:৫; ফিলিপীয় ৩:১৫) রাজ্যের কাজগুলোকে প্রথমে রাখার, যা সঠিক তা করার এবং তাঁর প্রতি আমাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য তিনি আমাদের সাহায্য করতে পারেন।—রোমীয় ১২:২; ২ করিন্থীয় ১৩:৭.

আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতাকে প্রতিরোধ করুন

৯. প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬ পদ অনুসারে, আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতাকে প্রতিরোধ করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

যে-ভবিষ্যদ্বাণী হর্‌মাগিদোন নামক স্থানে “সর্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই” আসন্ন ‘মহাদিনের যুদ্ধের’ বিষয়ে বলে, সেটা সাবধান করে দেয় যে, কেউ কেউ না-ও জেগে থাকতে পারে। “দেখ, আমি চোরের ন্যায় আসিতেছি,” প্রভু যিশু খ্রিস্ট বলেন। “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে জাগিয়া থাকে, এবং আপন বস্ত্র রক্ষা করে, যেন সে উলঙ্গ হইয়া না বেড়ায়, এবং লোকে তাহার অপমান না দেখে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬) এখানে যে-বস্ত্রের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা সেই বিষয়কে নির্দেশ করে, যা আমাদের যিহোবার খ্রিস্টান সাক্ষি হিসেবে শনাক্ত করে। এর অন্তর্ভুক্ত হল, রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আমাদের কাজ এবং আমাদের খ্রিস্টীয় আচরণ। আমরা যদি ধীরে ধীরে নিদ্রাতুল্য নিষ্ক্রিয়তার দিকে যেতে থাকি, তা হলে আমরা হয়তো আমাদের খ্রিস্টীয় শনাক্তিকরণ খুলে ফেলতে পারি। সেটা লজ্জাজনক এবং বিপদজনক। আমাদের অবশ্যই আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতা অথবা নিদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় পতিত হওয়াকে প্রতিরোধ করতে হবে। কীভাবে আমরা এইরকম প্রবণতার প্রতিরোধ করতে পারি?

১০. কেন রোজ বাইবেল পড়া আমাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকতে সাহায্য করে?

১০ বাইবেল বার বার জেগে থাকার এবং প্রবুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জোর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, সুসমাচারের বিবরণগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়: ক্রমাগত ‘জাগিয়া থাক’ (মথি ২৪:৪২; মথি ২৫:১৩; মার্ক ১৩:৩৫, ৩৭); “প্রস্তুত থাক” (মথি ২৪:৪৪); “তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও” (মার্ক ১৩:৩৩); “প্রস্তুত থাক” (লূক ১২:৪০)। এই জগতের ওপর যিহোবার দিন অপ্রত্যাশিতভাবে আসতে চলেছে, তা বলার পর প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই” বা প্রবুদ্ধ থাকি। (১ থিষলনীকীয় ৫:৬) বাইবেলের শেষ বইয়ে, মহিমান্বিত খ্রিস্ট যিশু আকস্মিকভাবে তাঁর আসার বিষয়ে জোর দিয়েছেন, এই বলে: ‘আমি শীঘ্র আসিতেছি।’ (প্রকাশিত বাক্য ৩:১১; ২২:৭, ১২, ২০) অনেক ইব্রীয় ভাববাদীও যিহোবার মহৎ বিচারদিনের বিষয়ে বর্ণনা করেছিল এবং সাবধানবাণী দিয়েছিল। (যিশাইয় ২:১২, ১৭; যিরমিয় ৩০:৭; যোয়েল ২:১১; সফনিয় ৩:৮) রোজ ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল পড়া এবং আমরা যা পড়ি, তা গভীরভাবে চিন্তা করা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকার বিষয়ে এক উত্তম সাহায্য।

১১. আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জেগে থাকার জন্য ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন কেন অত্যাবশ্যক?

১১ হ্যাঁ, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা জোগানো বাইবেল ভিত্তিক প্রকাশনাদি ব্যবহার করে অধ্যবসায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত শাস্ত্র অধ্যয়ন আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জেগে থাকার জন্য কী এক উদ্দীপক বিষয়! কিন্তু, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন থেকে উপকার পেতে হলে, এটা অবশ্যই অগ্রগতিমূলক এবং সংগতিপূর্ণ হতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৪–৬:৩) আমাদেরকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে কঠিন আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান সময়ে এর জন্য সময় বের করা এক কঠিন বিষয় হতে পারে। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) তবুও, হয়তো যখন সুবিধাজনক, কেবল তখনই বাইবেল এবং শাস্ত্রীয় প্রকাশনাদি পড়া যথেষ্ট নয়। নিয়মিত ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অত্যাবশ্যক যদি আমরা “বিশ্বাসে নিরাময়” এবং জেগে থাকতে চাই।—তীত ১:১৩.

১২. কীভাবে খ্রিস্টীয় সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলো আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতার সঙ্গে লড়াই করতে আমাদের সাহায্য করে?

১২ খ্রিস্টীয় সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলোও আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতার সঙ্গে লড়াই করতে আমাদের সাহায্য করে। কীভাবে? আমরা যে-নির্দেশনা পাই, সেটার মাধ্যমে। এই সমাবেশগুলোতে আমাদেরকে কি নিয়মিতভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয় না যে, যিহোবার দিন নিকটবর্তী? সাপ্তাহিক খ্রিস্টীয় সভাগুলোও ‘প্রেম ও সৎক্রিয়া সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিবার’ সুযোগ করে দেয়। এই ধরনের উদ্দীপনা আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার জন্য সাহায্যকারী। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমাদের নিয়মিতভাবে একত্রিত হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যখন আমরা ‘সেই দিন অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছি।’—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

১৩. কীভাবে খ্রিস্টীয় পরিচর্যা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সজাগ থাকার জন্য আমাদের সাহায্য করে?

১৩ এ ছাড়া, আমরা যখন সর্বান্তঃকরণে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করি, তখনও সজাগ থাকার জন্য সাহায্য পাই। কালের চিহ্নগুলো এবং সেগুলোর অর্থের বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য এগুলোর বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে উত্তম আর কোনো উপায় কি রয়েছে? আর আমরা যাদেরকে বাইবেল অধ্যয়ন করাই, তাদেরকে যখন উন্নতি করতে এবং তারা যা শিখছে সেই অনুসারে কাজ শুরু করতে দেখি, তখন আমাদের নিজস্ব তৎপরতার মনোভাব আরও বৃদ্ধি পায়। প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, “তোমরা আপন আপন মনের কটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও।” (১ পিতর ১:১৩) ‘প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়া’ হল আধ্যাত্মিক উদাসীনতার এক উত্তম প্রতিষেধক।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকর জীবনধারা পরিহার করুন

১৪. লূক ২১:৩৪-৩৬ পদে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, কোন জীবনধারার বিষয়ে যিশু সাবধান করেন?

১৪ যিশু তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন সম্বন্ধে মহান ভবিষ্যদ্বাণীতে আরেকটা সাবধানবাণী দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্‌ হও।” (লূক ২১:৩৪-৩৬) যিশু একেবারে সঠিকভাবে সেই জীবনধারা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যে-জীবনধারা লোকেরা সাধারণত অনুধাবন করে থাকে: মাত্রাতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া, মদ্যপান এবং এমন জীবনযাপনে মত্ত থাকা, যা নানা উদ্বিগ্নতা নিয়ে আসে।

১৫. কেন আমাদের মাত্রাতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলা উচিত?

১৫ অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া এবং অত্যধিক মদ্যপান করা বাইবেলের নীতিবহির্ভূত এবং সেটা পরিহার করতে হবে। বাইবেল বলে, “মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হইও না, পেটুক মাংসভোজীদের সঙ্গী হইও না।” (হিতোপদেশ ২৩:২০) কিন্তু বিপদজনক পর্যায়ে যেতে হলে এতটা মাত্রা পর্যন্ত খাওয়াদাওয়া ও পান করতে হবে না। এর অনেক আগেই এটা একজনকে তন্দ্রালু এবং অলস করে দিতে পারে। বাইবেলের একটা প্রবাদ বলে, “অলসের প্রাণ লালসা করে, কিছুই পায় না।” (হিতোপদেশ ১৩:৪) এইরকম একজন ব্যক্তি হয়তো ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চায় কিন্তু অবহেলার কারণে তার ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়।

১৬. কীভাবে আমরা আমাদের পরিবার সম্বন্ধে উদ্বিগ্নতাগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হওয়া এড়াতে পারি?

১৬ জীবনের সেই উদ্বিগ্নতাগুলো কী, যে-বিষয়ে যিশু সাবধান করেছিলেন? এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, পরিবারের ভরণপোষণ জোগানো এবং এইরকম অন্যান্য বিষয়। এই বিষয়গুলোর দ্বারা আমাদের ভারগ্রস্ত করতে দেওয়া কত বোকামির কাজ! “তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হইয়া আপন বয়স এক হস্তমাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে?” যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি তাঁর শ্রোতাদের উপদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘বা কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে।” রাজ্যের কাজগুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখা এবং যিহোবা যে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন, সেই বিষয়ে আস্থা রাখা উদ্বিগ্নতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করবে।—মথি ৬:২৫-৩৪.

১৭. কীভাবে বস্তুবাদিতার পিছনে ছোটা উদ্বিগ্নতা নিয়ে আসতে পারে?

১৭ এ ছাড়া, বস্তুবাদিতার পিছনে ছোটার মাধ্যমেও উদ্বিগ্নতা আসতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ আয় বুঝে ব্যয় না করার দ্বারা তাদের জীবনকে জটিল করে তোলে। কেউ কেউ দ্রুত ধনী হওয়ার ফাঁদের এবং ঝুঁকিপূর্ণ অর্থ বিনিয়োগের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছে। অন্যদের জন্য আর্থিক সাফল্য লাভ করার উপায় হিসেবে জাগতিক পড়াশোনা এক ফাঁদস্বরূপ হয়ে ওঠে। এটা স্বীকার্য যে, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষা হয়তো চাকরি পাওয়ার জন্য সাহায্যকারী হতে পারে। কিন্তু সত্য বিষয়টা হল যে, উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য সময় অপচয়কারী কাজের পিছনে ছুটে কেউ কেউ আধ্যাত্মিকভাবে নিজেদের ক্ষতি ডেকে এনেছে। যিহোবার দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, এইরকম পরিস্থিতিতে পড়া কতই না বিপদজনক! বাইবেল সাবধান করে: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে।”—১ তীমথিয় ৬:৯.

১৮. বস্তুবাদী জীবনধারার দিকে আকর্ষিত হওয়া এড়ানোর জন্য আমাদের কোন ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে?

১৮ বস্তুবাদী জীবধারার দিকে আকর্ষিত না হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়টা হল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল, তা পার্থক্য করার ক্ষমতা গড়ে তোলা। এই ক্ষমতা নিয়মিতভাবে ‘কঠিন আধ্যাত্মিক খাদ্য, যাহা সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য’ তা গ্রহণ এবং ‘আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত পটু’ করার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে। (ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪) অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো স্থাপন করার সময় “বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো” সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়াও আমাদের ভুল বাছাই করা থেকে রক্ষা করবে।—ফিলিপীয় ১:১০, NW.

১৯. আমরা যদি বুঝতে পারি যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আমাদের খুব কম সময় আছে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

১৯ বস্তুবাদী জীবনধারা আমাদের অন্ধ করে দিতে পারে, ফলে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য সামান্য বা কোনো সময়ই থাকে না। কীভাবে আমরা নিজেদের পরীক্ষা করতে এবং এই ধরনের জীবনধারার ফাঁদে পড়া এড়াতে পারি? আমাদের প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করতে হবে যে, কীভাবে এবং কতটুকু পর্যন্ত আমরা আমাদের জীবনকে সাধাসিধে রাখতে পারি। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেছিলেন: “শ্রমজীবী অধিক বা অল্প আহার করুক, নিদ্রা তাহার মিষ্ট লাগে; কিন্তু ধনবানের পূর্ণতা তাহাকে নিদ্রা যাইতে দেয় না।” (উপদেশক ৫:১২) অপ্রয়োজনীয় বস্তুগত সম্পদগুলোর যত্ন নেওয়া কি আমাদের অনেক সময় এবং শক্তি নষ্ট করে দেয়? আমাদের যত বেশি থাকবে, ততই আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ, বীমার কিস্তি পরিশোধ এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু জিনিসপত্র থেকে নিজেদের মুক্ত করে আমাদের জীবনকে সাধাসিধে করা কি আমাদের জন্য উপকারজনক হতে পারে?

যেভাবেই হোক, প্রস্তুত থাকুন

২০, ২১. (ক) যিহোবার দিন সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর কোন আশ্বাস দেন? (খ) যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হলে, কীধরনের আচারব্যবহার এবং কাজগুলো আমাদের করে চলতে হবে?

২০ নোহের দিনের জগতের জন্য সময় শেষ হয়ে আসছিল এবং আমাদের বর্তমান বিধিব্যবস্থার জন্যও শেষ হয়ে আসছে। প্রেরিত পিতর আমাদের আশ্বাস দেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে।” রূপক আকাশ—দুষ্ট সরকারগুলো—অথবা রূপক পৃথিবী—ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতি—কেউই ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধ থেকে রক্ষা পাবে না। সেই দিনের জন্য কীভাবে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি, সেই বিষয়ে নির্দেশ করে, পিতর বলেন: “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।”—২ পিতর ৩:১০-১২.

২১ নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া এবং সুসমাচার প্রচারে অংশ নেওয়া ঈশ্বরীয় আচারব্যবহার ও কাজগুলোর অন্তর্ভুক্ত। যিহোবার মহৎ দিনের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার সময় আমরা যেন ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক ভক্তি নিয়ে সেগুলো করি। আসুন ‘[আমরা] যত্ন করি, যেন [ঈশ্বরের] কাছে আমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়!”—২ পিতর ৩:১৪.

আপনার কি মনে আছে?

• যিহোবার দিনের জন্য কেন আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত?

• জীবনের সাধারণ বিষয়গুলো যদি আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

• কী আমাদের আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতাকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে?

• কোন ক্ষতিকর জীবনধারা আমাদের পরিহার করতে হবে এবং কীভাবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

নোহের দিনে লোকেরা আসন্ন ধ্বংসের বিষয়ে মনোযোগ দেয়নি—আপনিও কি তা-ই করেন?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আরও বেশি সময় দিতে আপনি কি আপনার জীবনকে সাধাসিধে করতে পারেন?