সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তাহাদের স্বর ব্যাপ্ত হইল সমস্ত পৃথিবীতে”

“তাহাদের স্বর ব্যাপ্ত হইল সমস্ত পৃথিবীতে”

“তাহাদের স্বর ব্যাপ্ত হইল সমস্ত পৃথিবীতে”

“সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।”মথি ২৮:১৯.

১, ২. (ক) যিশু তাঁর শিষ্যদের কোন দায়িত্ব দিয়েছিলেন? (খ) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কেন এতটা সম্পাদন করতে পেরেছিল?

 স্বর্গে যাওয়ার কিছু আগে, যিশু তাঁর শিষ্যদের একটা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।” (মথি ২৮:১৯) সেটা কতই না বিস্ময়কর এক কাজ ছিল!

কেবল ভেবে দেখুন! সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রায় ১২০ জন শিষ্য পবিত্র আত্মায় সেচিত হয়েছিল এবং অন্যদের এই কথা বলার দ্বারা সেই দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে শুরু করেছিল যে, যিশুই ছিলেন সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ, যাঁর মাধ্যমে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। (প্রেরিত ২:১-৩৬) কীভাবে সেই ছোট্ট দলটি ‘সমুদয় জাতির’ কাছে পৌঁছাবে? মানুষের পক্ষে সেটা অসাধ্য ছিল কিন্তু “ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।” (মথি ১৯:২৬) প্রাথমিক খ্রিস্টানদের যিহোবার পবিত্র আত্মার সমর্থন ছিল এবং তাদের তৎপরতার মনোভাব ছিল। (সখরিয় ৪:৬; ২ তীমথিয় ৪:২) তাই, মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে প্রেরিত পৌল বলতে পেরেছিলেন, “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” সুসমাচার ঘোষিত হয়েছে।—কলসীয় ১:২৩.

৩. কী প্রকৃত খ্রিস্টীয় ‘গোমকে’ অস্পষ্ট করেছিল?

প্রথম শতাব্দীর বেশির ভাগ জুড়েই সত্য উপাসনা ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়েছিল। যাইহোক, যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, এমন এক সময় আসবে যখন শয়তান ‘শ্যামাঘাস’ বপন করবে এবং সত্য খ্রিস্টীয় ‘গোম’ শস্যচ্ছেদনের আগে পর্যন্ত অনেক শতাব্দী ধরে আচ্ছাদিত থাকবে। প্রেরিতদের মৃত্যুর পর, তা সত্য হয়েছিল।—মথি ১৩:২৪-৩৯.

আজকে দ্রুত বৃদ্ধি

৪, ৫. উনিশো উনিশ সাল থেকে শুরু করে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কোন কাজের ভার গ্রহণ করতে শুরু করেছিল এবং সেটা কেন এক বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল?

উনিশো উনিশ সাল ছিল সত্য খ্রিস্টীয় গমের জন্য শ্যামাঘাস থেকে পৃথক হওয়ার সময়। অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা জানত যে, যিশুর দেওয়া মহান দায়িত্ব তখনও প্রযোজ্য। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে, তারা “শেষ কালে” বাস করছে এবং তারা যিশুর এই ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধেও অবগত ছিল: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১; মথি ২৪:১৪) হ্যাঁ, তারা জানত যে অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে।

যাই হোক, সা.কা. ৩৩ সালের শিষ্যদের মতো, সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল। তখন তাদের মধ্যে থেকে মাত্র কয়েক হাজার কেবল কয়েকটা দেশে বাস করত। কীভাবে তারা “সমুদয় জগতে” সুসমাচার প্রচার করতে পেরেছিল? মনে করে দেখুন যে, কৈসরদের সময় থেকে পৃথিবীর জনসংখ্যা সম্ভবত ৩০ কোটি থেকে বেড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রায় ২০০ কোটি হয়েছিল। আর বিংশ শতাব্দী জুড়ে এটা দ্রুতগতিতে কেবল বাড়তেই থাকে।

৬. উনিশশো ত্রিশের দশকের মধ্যে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন উন্নতি হয়েছে?

তা সত্ত্বেও, যিহোবার অভিষিক্ত দাসেরা, তাদের প্রথম শতাব্দীর ভাইদের মতো যিহোবার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে তাদের ওপর আরোপিত কাজ শুরু করেছিল এবং তাঁর আত্মা তাদের সঙ্গে ছিল। ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, প্রায় ৫৬,০০০ জন সুসমাচার প্রচারক দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ১১৫টা জায়গায় বাইবেলের সত্য ঘোষণা করেছিল। ইতিমধ্যেই অনেক কাজ সম্পাদিত হয়েছে কিন্তু এখনও আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

৭. (ক) অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কোন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল? (খ) কীভাবে ‘আরও মেষের’ সহযোগিতায় একত্রিত করার কাজ আমাদের দিন পর্যন্ত অগ্রগতি লাভ করেছে?

এরপর, প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে উল্লেখিত ‘বিস্তর লোকের’ শনাক্তিকরণ সম্বন্ধে গভীর বোধগম্যতা এক নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে ও সেইসঙ্গে সেই কঠোর পরিশ্রমী খ্রিস্টানদের সাহায্য সম্বন্ধেও প্রতিজ্ঞা করা হয়। ‘আরও মেষের’ অগণিত জনতা অর্থাৎ পার্থিব আশাসম্পন্ন বিশ্বাসীদের “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্যে থেকে একত্রিত করতে হয়েছিল। (যোহন ১০:১৬) তারা ‘দিবারাত্র যিহোবার আরাধনা’ করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫) এর অর্থ এই যে, তারা প্রচার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজে সাহায্য করবে। (যিশাইয় ৬১:৫) ফলস্বরূপ, সুসমাচার প্রচারকদের সংখ্যা হাজার হাজার ও তারপর লক্ষ লক্ষতে বাড়তে দেখে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা রোমাঞ্চিত হয়েছিল। ২০০৩ সালে, ৬৪,২৯,৩৫১ জনের নতুন শীর্ষ সংখ্যা প্রচার কাজে অংশ নিয়েছিল—তাদের বেশির ভাগই বিস্তর লোকের অংশ। * অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এই সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ এবং আরও মেষ তাদের অভিষিক্ত ভাইদের সহযোগিতা করার বিশেষ সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ।—মথি ২৫:৩৪-৪০.

৮. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে-প্রচণ্ড চাপ আনা হয়েছিল, সেটার প্রতি যিহোবার সাক্ষিরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

গোম শ্রেণী যখন আবারও স্পষ্ট হতে থাকে, তখন শয়তান এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড যুদ্ধে রত হয়। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) বিস্তর লোক যখন প্রকাশ পেতে শুরু করে, তখন সে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? প্রচণ্ড দৌরাত্ম্যের মাধ্যমে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সত্য উপাসনার ওপর পৃথিবীব্যাপী যে-আক্রমণ হয়েছিল, সেটার পিছনে যে সে ছিল, তা নিয়ে কি আমরা সন্দেহ করতে পারি? যুদ্ধের দুপক্ষের কাছ থেকেই খ্রিস্টানরা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছিল। অনেক প্রিয় ভাই ও বোন ভয়ংকর ভয়ংকর পরীক্ষা ভোগ করেছিল, কেউ কেউ তাদের বিশ্বাসের জন্য মারাও গিয়েছিল। তবুও, তারা গীতরচকের এই কথাগুলোর সঙ্গে সুর মিলিয়েছিল: “ঈশ্বরে আমি তাঁহার বাক্যের প্রশংসা করিব; আমি ঈশ্বরে নির্ভর করিয়াছি, ভয় করিব না; মাংসপিণ্ড আমার কি করিতে পারে?” (গীতসংহিতা ৫৬:৪; মথি ১০:২৮) অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং আরও মেষ যিহোবার আত্মার দ্বারা শক্তিশালী হয়ে একত্রে দৃঢ় থেকেছিল। (২ করিন্থীয় ৪:৭) এর ফলে, “ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল।” (প্রেরিত ৬:৭) ১৯৩৯ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ৭২,৪৭৫ জন বিশ্বস্ত খ্রিস্টান প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট দেয়। যাইহোক, যে-বছর যুদ্ধ শেষ হয়েছিল, সেই ১৯৪৫ সালের অসমাপ্ত রিপোর্ট দেখায় যে, ১,৫৬,২৯৯ জন সক্রিয় সাক্ষি সুসমাচার ছড়িয়ে দিয়েছিল। শয়তানের জন্য কী এক পরাজয়!

৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোন নতুন স্কুলগুলোর বিষয়ে ঘোষণা করা হয়েছিল?

স্পষ্টতই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশৃঙ্খল অবস্থা, প্রচার কাজ যে সম্পাদিত হবে, সেই বিষয়ে যিহোবার দাসদের সন্দিহান করে তোলেনি। বস্তুত, ১৯৪৩ সালে যখন যুদ্ধ তুঙ্গে ছিল তখন দুটো নতুন স্কুলের বিষয়ে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটা, যেটাকে এখন ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় বলা হয়, সেটা প্রত্যেক সাক্ষিকে প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে প্রশিক্ষণ দিতে সমস্ত মণ্ডলীতে পরিচালনা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। অন্যটা অর্থাৎ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড ছিল সেই সমস্ত মিশনারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য, যারা বিদেশে প্রচার কাজ বাড়িয়ে চলবে। হ্যাঁ, যুদ্ধের দাবানল যখন অবশেষে নিভে গিয়েছিল, তখন প্রকৃত খ্রিস্টানরা বৃদ্ধিরত কাজের জন্য তৈরি ছিল।

১০. কীভাবে ২০০৩ সালে যিহোবার লোকেদের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল?

১০ তারা কত চমৎকার কাজই না করেছিল! ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষিত হয়ে সকলে—যুবক ও বৃদ্ধ, বাবামা এবং ছেলেমেয়েরা, এমনকি অক্ষম ব্যক্তিরাও—যিশুর মহান দায়িত্ব পরিপূর্ণ করায় অংশ নিয়েছে এবং অংশ নিয়ে চলেছে। (গীতসংহিতা ১৪৮:১২, ১৩; যোয়েল ২:২৮, ২৯) ২০০৩ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৮,২৫,১৮৫ জন সাময়িক বা ক্রমাগতভাবে অগ্রগামীর কাজে অংশ নিয়ে তাদের তৎপরতার মনোভাব দেখিয়েছে। সেই একই বছরে, যিহোবার সাক্ষিরা অন্যদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে কথা বলে ১২৩,৪৭,৯৬,৪৭৭ ঘন্টা ব্যয় করেছে। নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্যোগে আনন্দিত!

বিদেশের ক্ষেত্রগুলোতে

১১, ১২. কোন উদাহরণগুলো মিশনারিদের উত্তম নথি প্রকাশ করে?

১১ বছরের পর বছর ধরে, গিলিয়েড গ্র্যাজুয়েট প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং সম্প্রতি মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট প্রাপ্তরা এক উল্লেখযোগ্য নথি গড়ে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৪৫ সালে ব্রাজিলে যখন প্রথম মিশনারিরা গিয়েছিল, তখন সেখানে ৪০০ জনেরও কম প্রকাশক ছিল। এই মিশনারি এবং তাদের পরবর্তী মিশনারিরা ব্রাজিলের উদ্যোগী ভাইবোনদের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং যিহোবা তাদের প্রচেষ্টায় প্রচুর আশীর্বাদ করেছেন। ২০০৩ সালে ব্রাজিল ৬,০৭,৩৬২ জনের এক নতুন শীর্ষ সংখ্যা রিপোর্ট করেছে, তা দেখা প্রথমদিকের সেই বছরগুলোর কথা স্মরণ করে এমন যেকারও জন্য কত রোমাঞ্চকর!

১২ জাপানের কথা বিবেচনা করুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, সেই দেশে প্রায় একশ জন রাজ্য প্রচারক ছিল। যুদ্ধের সময় নিষ্ঠুর তাড়না তাদের সংখ্যাকে হ্রাস করে দেয় এবং যুদ্ধের শেষে মাত্র কয়েক জন সাক্ষি তখনও আধ্যাত্মিক এবং দৈহিকভাবে জীবিত ছিল। (হিতোপদেশ ১৪:৩২) সেই অল্পসংখ্যক উল্লেখযোগ্য নীতিনিষ্ঠারক্ষাকারী ১৯৪৯ সালে প্রথম গিলিয়েড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১৩ জন মিশনারিকে অভ্যর্থনা জানাতে নিশ্চিতভাবে আনন্দিত হয়েছিল এবং মিশনারিরা দ্রুত তাদের উদ্যোমী, অতিথিপরায়ণ জাপানি ভাইবোনদের উদ্দীপিত করে তুলেছিল। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর, ২০০৩ সালে জাপান সর্বোচ্চ ২,১৭,৫০৮ জন প্রকাশকের রিপোর্ট দেয়! যিহোবা সত্যিই সেই দেশে তাঁর লোকেদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেছেন। অন্যান্য অনেক দেশ থেকেও একইরকম রিপোর্ট পাওয়া যায়। যারা বিদেশের এলাকাগুলোতে প্রচার করতে সমর্থ তারা সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে প্রকৃতই অবদান রেখেছে আর এর ফলে ২০০৩ সালে সারা পৃথিবীতে দেশ, দ্বীপ এবং এলাকা মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় সুসমাচার শোনা গিয়েছে। হ্যাঁ, বিস্তর লোক ‘প্রত্যেক জাতি’ থেকে বেরিয়ে আসছে।

“প্রত্যেক . . . বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্যে থেকে

১৩, ১৪. কোন উপায়ে যিহোবা ‘প্রত্যেক ভাষায়’ সুসমাচার প্রচার করার মূল্য সম্বন্ধে দেখিয়েছেন?

১৩ সাধারণ কাল ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে শিষ্যরা পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হওয়ার পর প্রথম লিপিবদ্ধ অলৌকিক কাজ ছিল, সমবেত জনতাদের উদ্দেশে বিভিন্ন ভাষায় তাদের কথা বলা। যারা তাদের কথা বলতে শুনেছিল, তারা সকলে এক আন্তর্জাতিক ভাষা, সম্ভবত গ্রিক ভাষায় কথা বলত। ‘ভক্ত লোক’ হওয়ায় তারা হয়তো মন্দিরে ইব্রীয় ভাষায় উপাসনা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু, তাদের দৃষ্টি সত্যিই আকৃষ্ট হয়েছিল, যখন তারা একেবারে ছোটবেলা থেকে যে-ভাষা শিখেছিল, সেই ভাষায় সুসমাচার শুনেছিল।—প্রেরিত ২:৫, ৭-১২.

১৪ আজকেও প্রচার কাজে অনেক ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। যে-বিস্তর লোক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তারা শুধু বিভিন্ন জাতি থেকেই নয় কিন্তু “বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্যে থেকেও বেরিয়ে আসে। এর সঙ্গে মিল রেখে যিহোবা, সখরিয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ এক এক যিহূদী পুরুষের বস্ত্রের অঞ্চল ধরিয়া এই কথা কহিবে, আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (সখরিয় ৮:২৩) যদিও যিহোবার সাক্ষিদের এখন আর বিভিন্ন ভাষা বলার দান নেই কিন্তু তারা লোকেদের ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার মূল্য সম্বন্ধে বোঝে।

১৫, ১৬. কীভাবে মিশনারি এবং অন্যেরা স্থানীয় ভাষাগুলোতে প্রচার করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেছিল?

১৫ এটা ঠিক যে, আজকে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ এবং স্প্যানিশ ভাষার মতো খুব অল্প কয়েকটা ভাষাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, অন্য দেশগুলোতে সেবা করার জন্য যারা নিজের দেশ ত্যাগ করেছে, তারা স্থানীয় ভাষা শেখার জন্য চেষ্টা করে, যাতে “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW]” লোকেদের কাছে সুসমাচার আরও সহজে পৌঁছায়। (প্রেরিত ১৩:৪৮) সেটা কঠিন হতে পারে। টুভালুর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতির ভাইদের যখন তাদের নিজেদের ভাষায় প্রকাশনার দরকার হয়েছিল, তখন মিশনারীদের একজন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেছিল। যেহেতু কোনো ডিকশনারি পাওয়া যেত না, তাই তিনি টুভালুন শব্দের একটা শব্দপঞ্জী তৈরি করতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে, আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন * বইটি টুভালুন ভাষায় প্রকাশ করা হয়। মিশনারিরা যখন কুরাকাওয়ে যায়, তখন সেখানে কোনো বাইবেল সাহিত্যাদি এবং স্থানীয় ভাষা পাপিয়ামেন্টোতে কোনো ডিকশনারি ছিল না। এ ছাড়া, ভাষা কীভাবে লেখা উচিত, সেটা নিয়েও অনেক মতানৈক্য ছিল। তবুও, প্রথম মিশনারিরা যাওয়ার দুই বছরের মধ্যে সেই ভাষায় প্রথম খ্রিস্টীয় বাইবেল ট্র্যাক্ট প্রকাশিত হয়েছিল। আজকে, পাপিয়ামেন্টো ১৩৩টা ভাষার মধ্যে একটা, যে-ভাষায় প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ইংরেজির সঙ্গে একই সময়ে প্রকাশিত হয়।

১৬ নামিবিয়ায় প্রথম মিশনারিরা এমন কোনো স্থানীয় সাক্ষিদের খুঁজে পাননি, যারা তাদেরকে অনুবাদে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, একটা স্থানীয় ভাষা, নামাতে সাধারণভাবে ব্যবহৃত ধারণাগুলোর জন্য শব্দ পাওয়া যেত না যেমন, “সিদ্ধ।” একজন মিশনারি রিপোর্ট করে: “অনুবাদের জন্য আমি মূলত স্কুল শিক্ষকদের ব্যবহার করেছিলাম, যারা বাইবেল অধ্যয়ন করত। যেহেতু সত্য সম্বন্ধে তাদের সামান্য জ্ঞান ছিল, তাই প্রতিটা বাক্য সঠিক ছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাকে তাদের সঙ্গে বসতে হতো।” তবুও, নতুন জগতে জীবন (ইংরেজি) ট্র্যাক্টটি পরিশেষে চারটে নামিবিয়া ভাষায় অনুবাদিত হয়। আজকে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা নিয়মিতভাবে কোয়ানইয়ামা এবং ডোংগা ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে।

১৭, ১৮. মেক্সিকো এবং অন্যান্য দেশে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করা হচ্ছে?

১৭ মেক্সিকোর প্রধান ভাষা হল স্প্যানিশ। কিন্তু, স্পেন দেশের লোকেরা আসার আগে সেখানে অনেক ভাষায় কথা বলা হতো এবং এখনও এগুলোর কয়েকটা ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই, যিহোবার সাক্ষিদের সাহিত্যাদি এখন সাতটা মেক্সিকান ভাষায় ও সেইসঙ্গে মেক্সিকান সাংকেতিক ভাষায় তৈরি হচ্ছে। মায়া রাজ্যের পরিচর্যা ছিল আমেরিকার আদিবাসীদের ভাষায় প্রথম তারিখযুক্ত প্রকাশনা। বস্তুত, কয়েক হাজার মায়া, এজটেক এবং অন্যান্যদের মেক্সিকোর ৫,৭২,৫৩০ জন রাজ্য প্রকাশকদের মধ্যে দেখা যায়।

১৮ সম্প্রতি, লক্ষ লক্ষ লোক শরণার্থী হিসেবে বিদেশে গিয়েছে অথবা অর্থনৈতিক কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়েছে। এর ফলে অনেক দেশে এখন প্রথমবারের মতো বেশ বড় আকারের বিদেশি ভাষী ক্ষেত্র রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইতালিতে ইতালীয় ছাড়াও আরও ২২টা ভাষার মণ্ডলী এবং দল রয়েছে। অন্য ভাষায় কথা বলে এমন লোকেদের কাছে প্রচার করার জন্য ভাইবোনদের সাহায্য করতে ১৪৬টা ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য সম্প্রতি বিভিন্ন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়, যেগুলোর মধ্যে ইতালীয় সাংকেতিক ভাষাও রয়েছে। অন্যান্য অনেক দেশে যিহোবার সাক্ষিরা অভিবাসী লোকেদের কাছে যাওয়ার জন্য একইরকম প্রচেষ্টা করছে। হ্যাঁ, যিহোবার সাহায্যে বিস্তর লোক অনেক অনেক ভাষার দল থেকে বেরিয়ে আসছে।

“সমস্ত পৃথীবীতে”

১৯, ২০. পৌলের কোন কথাগুলো আজকে লক্ষণীয়ভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে? ব্যাখ্যা করুন।

১৯ প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তাহারা কি শুনিতে পায় নাই? পাইয়াছে বই কি! ‘তাহাদের স্বর ব্যাপ্ত হইল সমস্ত পৃথিবীতে, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্য্যন্ত।’” (রোমীয় ১০:১৮) প্রথম শতাব্দীতে যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের দিনে তা আরও কতই না সত্য! লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি—সম্ভবত ইতিহাসে এর আগে যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি—বলছে: “আমি সর্ব্বসময়ে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব; তাঁহার প্রশংসা নিরন্তর আমার মুখে থাকিবে।”—গীতসংহিতা ৩৪:১.

২০ এ ছাড়া, কাজ ধীর হয়ে পড়ছে না। রাজ্য প্রকাশকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আরও বেশি বেশি সময় প্রচারে ব্যয় করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ পুনর্সাক্ষাৎ এবং হাজার হাজার বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হচ্ছে। আর আগ্রহ ক্রমাগত প্রকাশ পাচ্ছে। গত বছর যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভার উদ্‌যাপনে ১,৬০,৯৭,৬২২ জনের এক নতুন শীর্ষ সংখ্যা উপস্থিত ছিল। স্পষ্টতই, এখনও আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। আমরা যেন আমাদের সেই সমস্ত ভাইয়ের দৃঢ় নীতিনিষ্ঠা অনুকরণ করে চলি, যারা প্রচণ্ড তাড়না সহ্য করেছে। আর আমরা যেন আমাদের সেই সমস্ত ভাইবোনের মতো উদ্যোগ দেখাই, যারা ১৯১৯ সাল থেকে যিহোবার সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে। আসুন আমরা সকলে গীতরচকের সমবেত সংগীতে সুর মিলিয়ে চলি: “শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর।”—গীতসংহিতা ১৫০:৬.

[পাদটীকাগুলো]

^ এই পত্রিকার ১৮ থেকে ২১ পৃষ্ঠায় বাৎসরিক রিপোর্ট দেখুন।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• ভাইয়েরা ১৯১৯ সালে কোন কাজের ভার গ্রহণ করতে শুরু করেছিল এবং সেটা কেন এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল?

• প্রচার কাজে সহযোগিতা করার জন্য কাদের একত্রিত করা হয়েছিল?

• মিশনারি এবং বিদেশে সেবারত অন্যান্যরা কোন নথি রচনা করেছে?

• যিহোবা যে আজকে তাঁর লোকেদের কাজে আশীর্বাদ করছেন, তা দেখানোর জন্য আপনি কোন প্রমাণ উদ্ধৃতি করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮-২১ পৃষ্ঠার তালিকা]

২০০৩ বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিদের পরিচর্যা বছরের রিপোর্ট

(বাঁধাই করা খণ্ড দেখুন)

[১৪, ১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশৃঙ্খল অবস্থা, সুসমাচার যে প্রচারিত হবে সেই বিষয়ে খ্রিস্টানদের সন্দিহান করে তোলেনি

[সৌজন্যে]

বিস্ফোরণ: U.S. Navy photo; অন্যান্য: U.S. Coast Guard photo

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিস্তর লোক সমস্ত বংশ এবং ভাষা থেকে বেরিয়ে আসবে