আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—দ্বিতীয় ভাগ
যিহোবার বাক্য জীবন্ত
আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—দ্বিতীয় ভাগ
আদিপুস্তকে প্রথম মানুষ, আদমের সৃষ্টি থেকে যাকোবের ছেলে যোষেফের মৃত্যু পর্যন্ত ২,৩৬৯ বছরের মানব ইতিহাস রয়েছে। প্রথম ১০টা অধ্যায় ও সেইসঙ্গে ১১ অধ্যায়ের ৯টা পদে সৃষ্টি থেকে শুরু করে বাবিলের দুর্গ সম্বন্ধে যে-বিবরণ রয়েছে, তা এই পত্রিকার আগের সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে। * এই প্রবন্ধ আদিপুস্তকের বাকি অংশের প্রধান বিষয়গুলো বিবেচনা করে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব এবং যোষেফের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ।
অব্রাহাম ঈশ্বরের বন্ধু হন
(আদিপুস্তক ১১:১০–২৩:২০)
জলপ্লাবনের প্রায় ৩৫০ বছর পর, যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে খুবই বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হন, তিনি নোহের ছেলে শেমের বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম হল অব্রাম, পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হয়ে হয় অব্রাহাম। ঈশ্বরের আদেশে, অব্রাম কল্দীয়দের নগর ঊর ত্যাগ করেন এবং এমন একটা দেশে তাঁবুতে বাস করেন, যে-দেশ যিহোবা তাকে এবং তার বংশধরদের দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তার বিশ্বাস এবং বাধ্যতার কারণে অব্রাহামকে “ঈশ্বরের বন্ধু” বলে ডাকা হয়।—যাকোব ২:২৩.
যিহোবা সদোম ও এর আশেপাশের নগরগুলোর দুষ্ট অধিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন, যদিও লোট ও তার মেয়েরা রক্ষা পায়। অব্রাহামের পুত্র ইস্হাকের জন্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের একটা প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হয়। কয়েক বছর পর, অব্রাহামের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয় যখন যিহোবা তাকে তার পুত্রকে বলি হিসেবে উৎসর্গ করার নির্দেশ দেন। অব্রাহাম তা করার জন্য তৈরি থাকেন কিন্তু একজন দূত এতে বাধা দেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, অব্রাহাম একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি এবং তাকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, তার বংশের মাধ্যমে সমস্ত জাতি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। তার প্রিয় স্ত্রী, সারার মৃত্যুতে অব্রাহাম প্রচণ্ড দুঃখ পান।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১২:১-৩—অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি কখন কার্যকর হয়েছিল এবং তা কতদিনের জন্য? অব্রামের সঙ্গে করা যিহোবার এই চুক্তি যে, “[অব্রামের মাধ্যমে] ভূমণ্ডলের যাবতীয় যাত্রাপুস্তক ১২:২, ৬, ৭, ৪০, ৪১) অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তি হল, “চিরকালের নিয়ম [“চুক্তি,” NW]।” যতদিন পর্যন্ত না পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী আশীর্বাদপ্রাপ্ত এবং ঈশ্বরের সমস্ত শত্রু ধ্বংস হয়, ততদিন পর্যন্ত এটা কার্যকর থাকবে।—আদিপুস্তক ১৭:৭; ১ করিন্থীয় ১৫:২৩-২৬.
গোষ্ঠী আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে,” স্পষ্টতই তখন কার্যকর হয়েছিল, যখন অব্রাম কনানে যাওয়ার পথে ইফ্রেটিস নদী পার হয়েছিলেন। সেটা হয়েছিল সা.কা.পূ. ১৯৪৩ সালের ১৪ই নিশান—ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে মুক্ত হওয়ার ৪৩০ বছর আগে। (১৫:১৩—অব্রামের বংশধরদের ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ৪০০ বছরের দুর্ভোগ কখন পরিপূর্ণ হয়েছিল? দুর্ভোগের এই সময় শুরু হয়েছিল সা.কা.পূ. ১৯১৩ সালে, যখন অব্রাহামের ছেলে ইস্হাক ৫ বছর বয়সে মাতৃদুগ্ধপান ত্যাগ করেছিলেন এবং তার ১৯ বছর বয়সী অর্ধভ্রাতা ইশ্মায়েল তাকে “পরিহাস” করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২১:৮-১৪; গালাতীয় ৪:২৯) আর এটা সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে মিশরের বন্দিত্ব থেকে ইস্রায়েলীয়দের মুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়েছিল।
১৬:২—সারা যে তার দাসী হাগারকে স্ত্রী হিসেবে অব্রামকে দিয়েছিল, সেটা কি সঠিক ছিল? সারার এই কাজ সেই সময়ের প্রথা অনুযায়ী ছিল—একজন বন্ধ্যা স্ত্রী তার স্বামীকে একজন উপপত্নী দিতে বাধ্য ছিলেন, যাতে সেই উপপত্নী একজন উত্তরাধিকারীর জন্ম দেয়। বহুগামিতার প্রথা কয়িনের বংশে প্রথম দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, এটা একটা প্রথা হয়ে গিয়েছিল এবং যিহোবার কিছু উপাসকও তা করেছিল। (আদিপুস্তক ৪:১৭-১৯; ১৬:১-৩; ২৯:২১-২৮) কিন্তু, যিহোবা কখনোই একগামিতার বিষয়ে তাঁর আদি মানকে পরিত্যাগ করেননি। (আদিপুস্তক ২:২১, ২২) নোহ এবং তার ছেলেদের স্পষ্টতই একজন স্ত্রী ছিল, যাদের কাছে ‘প্রজাবন্ত হইবার ও পৃথিবী পরিপূর্ণ করিবার’ আদেশ পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৭:৭; ৯:১; ২ পিতর ২:৫) আর একজন স্ত্রী রাখার এই মান যিশু খ্রিস্টের দ্বারাও পুনর্নিশ্চিত করা হয়েছিল।—মথি ১৯:৪-৮; ১ তীমথিয় ৩:২, ১২.
১৯:৮—লোট যে তার মেয়েদের সদোমের লোকেদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন, সেটা কি অন্যায় ছিল না? প্রাচ্যের নীতিমালা অনুসারে, একজন নিমন্ত্রণকর্তার দায়িত্ব ছিল তার ঘরে আসা অতিথিদের সুরক্ষা করা, এমনকি প্রয়োজনে তাদেরকে মৃত্যুর হাত থেকেও রক্ষা করা। লোট তা করার জন্য তৈরি ছিলেন। তিনি সাহসের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল জনতার কাছে যান, তার পিছনের দরজা বন্ধ করে দেন এবং একাই তাদের মুখোমুখি হন। লোট যখন তার মেয়েদের তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তখন তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার অতিথিরা ঈশ্বরের বার্তাবাহক ছিল আর তিনি হয়তো যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর তার মেয়েদের রক্ষা করতে পারেন ঠিক যেমন তিনি তার জেঠিমা সারাকে মিশরে রক্ষা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:১৭-২০) বাস্তবিকই, শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল যে, লোট এবং তার মেয়েরা সুরক্ষিত হয়েছিল।
১৯:৩০-৩৮—যিহোবা কি লোটের মাতাল হওয়া এবং তার দুই মেয়ের ছেলেদের বাবা হওয়াকে মার্জনা করেছিলেন? যিহোবা অজাচার বা অতিরিক্ত মদ খাওয়া, কোনোটাকেই মার্জনা করেন না। (লেবীয় পুস্তক ১৮:৬, ৭, ২৯; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) লোট আসলে সদোমের অধিবাসীদের ‘অধর্ম্মকার্য্যের’ কারণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। (২ পিতর ২:৬-৮) লোটের মেয়েরা যে তাকে মাতাল করেছিল তা থেকে বোঝা যায় যে, তারা বুঝতে পেরেছিল, তিনি যখন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবেন, তখন তাদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে রাজি হবেন না। কিন্তু, সেই দেশে বিদেশি হিসেবে তার মেয়েরা মনে করেছিল যে, লোটের পরিবারকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার এটাই হচ্ছে একমাত্র উপায়। বাইবেলের বিবরণ মোয়াবীয় (মোয়াবের মাধ্যমে) এবং অম্মোনীয়দের (বিনঅম্মির মাধ্যমে) সঙ্গে অব্রাহামের বংশধর, ইস্রায়েলীয়দের সম্পর্ক প্রকাশ করে।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১৩:৮, ৯. মতবিরোধ মীমাংসা করার বিষয়ে অব্রাহাম কত অপূর্ব এক আদর্শ স্থাপন করেছেন! আর্থিক লাভ, ব্যক্তিগত পছন্দ অথবা গর্বের জন্য কখনোই আমাদের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ককে ত্যাগ করা উচিত নয়।
১৫:৫, ৬. অব্রাহাম যখন বৃদ্ধ হচ্ছিলেন এবং তখনও তার কোনো ছেলে হয়নি, তখন তিনি বিষয়টা নিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এর ফলে যিহোবা তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ফলে কী হয়েছিল? অব্রাহাম “সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন।” আমরা যদি হৃদয় খুলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, বাইবেল থেকে তাঁর নিশ্চিত আশ্বাসগুলো গ্রহণ করি এবং তাঁর বাধ্য থাকি, তা হলে আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে।
১৫:১৬. যিহোবা ইমোরীয়দের (অথবা কনানীয়দের) ওপর তাঁর বিচারের দণ্ডাজ্ঞা চার পুরুষ পর্যন্ত আটকে রেখেছিলেন।
কেন? কারণ তিনি হলেন একজন ধৈর্যশীল ঈশ্বর। তিনি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন, যতক্ষণ না উন্নতি করার সমস্ত আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল। যিহোবার মতো আমাদেরও ধৈর্য ধরা দরকার।১৮:২৩-৩৩. যিহোবা বাছবিচারহীনভাবে লোকেদের ধ্বংস করেন না। তিনি ধার্মিক ব্যক্তিদের রক্ষা করেন।
১৯:১৬. লোট “ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন” এবং দূতেরা তাকে এবং তার পরিবারকে প্রায় টেনে ধরে সদোম নগরের বাইরে নিয়ে এসেছিল। দুষ্ট জগতের শেষ আসার বিষয়ে অপেক্ষা করার সময় আমাদের তৎপরতার মনোভাব না হারিয়ে আমরা বিজ্ঞের কাজ করি।
১৯:২৬. জগতে আমরা যা পিছনে ফেলে এসেছি, সেগুলোর দ্বারা বিক্ষিপ্ত হওয়া অথবা সেগুলোর আকাঙ্ক্ষা করা কত বোকামির কাজ!
যাকোবের ১২ জন ছেলে আছে
(আদিপুস্তক ২৪:১–৩৬:৪৩)
অব্রাহাম, রিবিকার সঙ্গে ইস্হাকের বিয়ের ব্যবস্থা করেন, যে-মহিলার যিহোবার ওপর বিশ্বাস রয়েছে। তিনি যমজ সন্তান এষৌ ও যাকোবের জন্ম দেন। এষৌ তার জ্যেষ্ঠাধিকারকে তুচ্ছ করেন এবং তা যাকোবের কাছে বিক্রি করে দেন, যিনি পরে তার বাবার আশীর্বাদ লাভ করেন। যাকোব পদ্দন্-অরামে পালিয়ে যান, যেখানে তিনি লেয়া ও রাহেলকে বিয়ে করেন এবং তার পরিবার নিয়ে চলে যাওয়ার আগে প্রায় ২০ বছর তাদের বাবার পশুপালের দেখাশোনা করেন। লেয়া, রাহেল ও তাদের দুই দাসীর মাধ্যমে যাকোবের ১২ জন ছেলে ও এক মেয়ে হয়। যাকোব একজন দূতের সঙ্গে লড়াই করেন এবং আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন আর তার নাম পালটে ইস্রায়েল রাখা হয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
২৮:১২, ১৩—যাকোবের “এক সিড়ি” সংক্রান্ত স্বপ্নের তাৎপর্য কী ছিল? এই “সিড়ি,” যা দেখতে পাথরের সোপানশ্রেণীর মতো ছিল, তা ইঙ্গিত করেছিল যে পৃথিবী এবং স্বর্গের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের দূতেদের ওঠানামা করা দেখিয়েছিল যে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে দূতেরা যিহোবা এবং সেই মানুষদের পরিচর্যা করে, যাদের তাঁর অনুমোদন রয়েছে।—যোহন ১:৫১.
৩০:১৪, ১৫—কেন রাহেল কিছু দূদাফলের বিনিময়ে গর্ভবতী হওয়ার এক সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিলেন? প্রাচীনকালে, দূদাফল ওষুধের মধ্যে এক মাদকদ্রব্য হিসেবে এবং খিঁচুনি রোধ করার বা তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া, মনে করা হতো যে, সেই ফলের যৌন কামনা জাগিয়ে তোলার এবং মানুষের জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার অথবা গর্ভধারণে সাহায্য করার ক্ষমতা রয়েছে। (পরমগীত ৭:১৩) যদিও রাহেলের সেই বিনিময়ের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বাইবেল কিছু জানায় না কিন্তু তিনি হয়তো মনে করেছিলেন যে, দূদাফল তাকে গর্ভধারণ করতে সাহায্য করবে এবং তার বন্ধ্যাত্বের অপবাদ ঘুচাবে। কিন্তু, কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর যিহোবা তার ‘গর্ব্ভ মুক্ত করিয়াছিলেন।’—আদিপুস্তক ৩০:২২-২৪.
আমাদের জন্য শিক্ষা:
২৫:২৩. অজাত শিশুর বংশানুগতির গঠন নির্ণয় করার এবং তাঁর পূর্বজ্ঞান কাজে লাগানোর ও তাঁর উদ্দেশ্যের জন্য তিনি যাকে মনোনীত করেছেন, তাকে পূর্বেই নির্বাচিত করার ক্ষমতা যিহোবার রয়েছে। কিন্তু, তিনি লোকেদের চূড়ান্ত ভবিষ্যৎ আগেই নির্ধারণ করে দেন না।—হোশেয় ১২:৩; রোমীয় ৯:১০-১২.
২৫:৩২; ৩২:২৪-২৯. জ্যেষ্ঠাধিকার অর্জন করার বিষয়ে যাকোবের চিন্তিত হওয়া এবং আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সারারাত একজন দূতের সঙ্গে লড়াই করার বিষয়টা দেখায় যে, তিনি পবিত্র বিষয়গুলোকে সত্যিই উচ্চমূল্য দিয়েছিলেন। যিহোবা আস্থা সহকারে আমাদের ওপর অনেক পবিত্র বিষয়ের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, যেমন তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, তাঁর সংগঠন, মুক্তির মূল্য, বাইবেল এবং আমাদের রাজ্যের আশা। সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে আমরা যেন যাকোবের মতো হই।
৩৪:১, ৩০. যে-সমস্যা যাকোবকে ‘ব্যাকুল করিয়াছিল,’ সেটা শুরু হয়েছিল দীণার কারণে, যে এমন লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল, যারা যিহোবার উপাসক ছিল না। আমাদের বিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গীসাথি বাছাই করতে হবে।
যিহোবা মিশরে যোষেফকে আশীর্বাদ করেন
(আদিপুস্তক ৩৭:১–৫০:২৬)
ঈর্ষা যাকোবের ছেলেদের তাদের ভাই যোষেফকে একজন দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পরিচালিত করে। মিশরে, যোষেফ বিশ্বস্তভাবে এবং সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলো মেনে চলেছিলেন বলে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছিল। পরবর্তী যাত্রাপুস্তক ১৩:১৯.
সময়ে, ফরৌণের স্বপ্নের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার জন্য তাকে কারাগার থেকে বের করা হয়েছিল, যে-স্বপ্ন সাত বছর প্রচুর শস্য উৎপন্ন হওয়ার এবং এরপর পরবর্তী সাত বছর দুর্ভিক্ষ হওয়ার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে। এরপর যোষেফকে মিশরের খাদ্য শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার ভাইয়েরা দুর্ভিক্ষের কারণে খাবারের অন্বেষণে মিশরে আসে। এই পরিবার পুনরায় মিলিত হয় এবং গোশনের উর্বর ভূমিতে বাস করতে শুরু করে। মৃত্যুশয্যায় যাকোব তার পুত্রদের আশীর্বাদ করেন এবং এমন এক ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যা শত শত বছর পরে মহান আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত আশা দেয়। কবর দেওয়ার জন্য যাকোবের মৃতদেহ কনানে নিয়ে যাওয়া হয়। যোষেফ যখন ১১০ বছর বয়সে মারা যান, তখন তার দেহকে সংরক্ষণ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিজ্ঞাত দেশে স্থানান্তরিত করা হয়।—শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
৪৩:৩২—ইব্রীয়দের সঙ্গে আহার করা মিশরীয়দের কাছে কেন ঘৃণিত কাজ ছিল? এর কারণ ছিল মূলত ধর্মীয় কুসংস্কার অথবা জাতিগত গর্ব। এ ছাড়া, মিশরীয়রা পশুপালকদেরও ঘৃণা করত। (আদিপুস্তক ৪৬:৩৪) কেন? সহজভাবে বললে, মেষপালকরা মিশরীয় পদমর্যাদার দিক থেকে একেবারে নিম্নশ্রেণীর ছিল। অথবা হতে পারে যে, যেহেতু চাষাবাষ করার জন্য ভূমি সীমিত ছিল, তাই মিশরীয়রা সেই ব্যক্তিদের ঘৃণার চোখে দেখত, যারা পশুপালের জন্য চারণভূমি খুঁজে বেড়াত।
৪৪:৫—যোষেফ কি আসলেই গণনা করার জন্য পাত্র ব্যবহার করতেন? রুপোর পাত্র এবং এটার সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল, তা স্পষ্টতই ছল বা কৌশল ছিল। যোষেফ যিহোবার একজন বিশ্বস্ত উপাসক ছিলেন। গণনা করার জন্য তিনি আসলে কোনো পাত্র ব্যবহার করতেন না বা এমনকি আসলে বিন্যামীনও তা চুরি করেননি।
৪৯:১০—“রাজদণ্ড” এবং ‘বিচারদণ্ডের’ অর্থ কী? রাজদণ্ড হচ্ছে একটা মোটা লাঠি, যা একজন শাসক রাজকীয় কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে বহন করতেন। বিচারদণ্ড হল একটা লম্বা দণ্ড, যা তার আদেশ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। যাকোবের এই বিষয়গুলো উল্লেখ করা ইঙ্গিত করে যে, শীলো না আসা পর্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা যিহূদার বংশেই থাকবে। যিহূদার এই বংশধর হলেন যিশু খ্রিস্ট, যাঁকে যিহোবা স্বর্গীয় শাসনভার দিয়েছেন। খ্রিস্ট রাজকীয় কর্তৃত্ব ধারণ করেন এবং আদেশ করার ক্ষমতা তাঁর আছে।—গীতসংহিতা ২:৮, ৯; যিশাইয় ৫৫:৪; দানিয়েল ৭:১৩, ১৪.
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৩৮:২৬. যিহূদা তার বিধবা পুত্রবধূ তামরের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তামরের গর্ভবতী হওয়ার পিছনে তিনিই দায়ী, তখন তিনি নম্রভাবে তার ভুল স্বীকার করেছিলেন। নিজেদের ভুল স্বীকার করার ক্ষেত্রে আমাদেরও সত্বর হওয়া উচিত।
৩৯:৯. পোটীফরের স্ত্রীর প্রতি যোষেফের প্রতিক্রিয়া দেখায় যে, নৈতিকতার বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল আর তাই তার বিবেক ঈশ্বরীয় নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। সত্যের সঠিক জ্ঞানে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও কি তা-ই করা উচিত নয়?
৪১:১৪-১৬, ৩৯, ৪০. যারা যিহোবাকে ভয় করে, তাদের জন্য যিহোবা পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারেন। যখন দুর্দশা আসে, তখন যিহোবার ওপর নির্ভর করা এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা আমাদের জন্য বিজ্ঞের কাজ।
তাদের স্থায়ী বিশ্বাস ছিল
অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব এবং যোষেফ সত্যিই ঈশ্বরভয়শীল বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন। তাদের জীবনের ঘটনাগুলো, যা আদিপুস্তক বইয়ে রয়েছে, সত্যিই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়।
ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় এর জন্য সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠের কার্যভার মেনে চলার সময় আপনি এই বিবরণগুলো থেকে উপকার পেতে পারেন। ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা, ঘটনাকে জীবন্ত করে তুলতে সাহায্য করবে।
[পাদটীকা]
^ ২০০৪ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “যিহোবার বাক্য জীবন্ত—আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—প্রথম ভাগ” নামক প্রবন্ধটা দেখুন।
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
অব্রাহাম একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা যোষেফকে আশীর্বাদ করেন
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ধার্মিক লোট ও তার মেয়েরা রক্ষা পেয়েছিল
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যাকোব পবিত্র বিষয়গুলোকে উচ্চমূল্য দিয়েছিলেন। আপনি কি দেন?