সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা অনুগত প্রেমে মহান

যিহোবা অনুগত প্রেমে মহান

যিহোবা অনুগত প্রেমে মহান

“সদাপ্রভু . . . দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়াতে,” NW] মহান্‌।”গীতসংহিতা ১৪৫:৮.

১. ঈশ্বরের প্রেম কতটা সুদূরপ্রসারী?

 “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) এই হৃদয়গ্রাহী অভিব্যক্তিটা প্রমাণ করে যে, যিহোবার শাসন করার পদ্ধতি প্রেমের ওপর ভিত্তি করে। এমনকি যে-মানুষরা তাঁর বাধ্য নয়, তারাও সূর্য এবং বৃষ্টি থেকে উপকার পায়, যা ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে জোগান। (মথি ৫:৪৪, ৪৫) মানবজাতির জগতের প্রতি ঈশ্বরের প্রেমের কারণে এমনকি তাঁর শত্রুরাও অনুতপ্ত হতে, তাঁর কাছে আসতে এবং জীবন লাভ করতে পারে। (যোহন ৩:১৬) কিন্তু, শীঘ্রই যিহোবা অসংশোধনীয় দুষ্টতা ধ্বংস করে দেবেন, যাতে যে-মানুষরা তাঁকে ভালবাসে, তারা এক ধার্মিক নতুন জগতে অনন্তজীবন উপভোগ করতে পারে।—গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯; ২ পিতর ৩:১৩.

২. যিহোবার সঙ্গে যাদের উৎসর্গীকৃত সম্পর্ক রয়েছে, তাদের প্রতি তিনি প্রেমের কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখান?

যিহোবা তাঁর সত্য উপাসকদের প্রতি এক মূল্যবান এবং স্থায়ী উপায়ে প্রেম দেখান। এই ধরনের প্রেম যে-ইব্রীয় শব্দের দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে, সেটা “প্রেমপূর্ণ-দয়া” অথবা “অনুগত প্রেম” হিসেবে অনুবাদিত হয়েছে। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়াকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অন্যদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে ধ্যান করার কারণে দায়ূদ আস্থার সঙ্গে গাইতে পেরেছিলেন: “সদাপ্রভু . . . প্রেমপূর্ণ-দয়াতে [অথবা “অনুগত প্রেমে,” NW] মহান্‌।”—গীতসংহিতা ১৪৫:৮.

ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা

৩, ৪. (ক) কীভাবে গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায় যিহোবার অনুগত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে আমাদের সাহায্য করে? (খ) ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিরা কীভাবে তাঁর “ধন্যবাদ” করে?

যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে ভাববাদী শমূয়েলের মা, হান্না বলেছিলেন: “তিনি আপন সাধুদিগের [“অনুগত ব্যক্তিদের,” NW] চরণ রক্ষা করিবেন।” (১ শমূয়েল ২:৯) এই ‘অনুগত ব্যক্তিরা’ কারা? রাজা দায়ূদ এর উত্তর দেন। যিহোবার বিস্ময়কর গুণগুলোর উচ্চপ্রশংসা করে তিনি বলেন: “তোমার সাধুগণ [“অনুগত ব্যক্তিরা,” NW] তোমার ধন্যবাদ করে।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১০) আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করতে পারে। তারা মূলত তাঁর প্রশংসা বা সুনাম করে তা করে থাকে।

তাদেরকে যিহোবার অনুগত ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করা যেতে পারে, যারা তাঁর সুনাম করার জন্য তাদের মুখকে ব্যবহার করে। সামাজিক মেলামেশা এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে, তাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুটা কী? অবশ্যই, যিহোবার রাজ্য! ঈশ্বরের অনুগত দাসদের দায়ূদের মতো মনোভাব রয়েছে, যিনি গেয়েছিলেন: “তাহারা তোমার [যিহোবার] রাজ্যের গৌরব বর্ণনা করে, তোমার পরাক্রমের কথা বলে।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১১.

৫. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবার অনুগত ব্যক্তিরা যখন তাঁর সুনাম করে, তখন তিনি তা লক্ষ করেন?

যিহোবার অনুগত ব্যক্তিরা যখন তাঁর প্রশংসা করে, তখন তিনি কি তা লক্ষ করেন? হ্যাঁ, তারা যা বলে তাতে তিনি মনোযোগ দেন। আমাদের দিনে সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা ভবিষ্যদ্বাণীতে মালাখি লিখেছিলেন: “তখন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।” (মালাখি ৩:১৬) যিহোবার অনুগত ব্যক্তিরা যখন তাঁর সুনাম করে, তখন এটা তাঁকে অত্যন্ত আনন্দিত করে এবং তিনি তাদের মনে রাখেন।

৬. কোন কর্মকাণ্ড ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে আমাদের সাহায্য করে?

এ ছাড়া, যারা সত্য ঈশ্বরের উপাসক নয় তাদের কাছে কথা বলার ক্ষেত্রে তাদের সাহস এবং উদ্যোগের মাধ্যমেও যিহোবার অনুগত দাসদের শনাক্ত করা যেতে পারে। বস্তুত, ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিরা ‘মনুষ্য-সন্তানগণকে তাঁহার পরাক্রমের কার্য্য সকল, এবং তাঁহার রাজ্যের প্রতাপের গৌরব জানায়।’ (গীতসংহিতা ১৪৫:১২) আপনি কি অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলার সুযোগগুলো খোঁজেন এবং সেগুলোর সদ্ব্যবহার করেন? মনুষ্য সরকারগুলো, যেগুলো শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে, সেগুলোর বৈসাদৃশ্যে তাঁর রাজপদ চিরস্থায়ী। (১ তীমথিয় ১:১৭) তাই, লোকেদের যিহোবার অনন্তকালীন রাজপদ সম্বন্ধে জানা এবং এর সমর্থক হিসেবে পক্ষ নেওয়া খুবই জরুরি। দায়ূদ গেয়েছিলেন, “তোমার রাজ্য সর্ব্বযুগের রাজ্য, তোমার কর্ত্তৃত্ব পুরুষে পুরুষে চিরস্থায়ী।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৩.

৭, ৮. উনিশশো চৌদ্দ সালে কী হয়েছিল আর কোন প্রমাণ রয়েছে যে, ঈশ্বর তাঁর পুত্রের রাজ্যের মাধ্যমে এখন রাজত্ব করছেন?

সেই ১৯১৪ সাল থেকে, যিহোবার রাজপদ সম্বন্ধে কথা বলার আরও অনেক কারণ রয়েছে। সেই বছর, ঈশ্বর স্বর্গীয় মশীহ রাজ্য ও সেইসঙ্গে দায়ূদ-সন্তান, যিশু খ্রিস্টকে রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এভাবে যিহোবা তাঁর এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন যে, দায়ূদের রাজপদ চিরকালের জন্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।—২ শমূয়েল ৭:১২, ১৩; লূক ১:৩২, ৩৩.

যিহোবা তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের রাজ্যের মাধ্যমে যে এখন রাজত্ব করছেন, সেটার প্রমাণ যিশুর উপস্থিতির চিহ্নের ক্রমাগত পরিপূর্ণতার মধ্যে দেখা যায়। সেই চিহ্নের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটা হল সেই কাজ, যা ঈশ্বরের সমস্ত অনুগত দাসের জন্য যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:৩-১৪) ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিরা উদ্যোগের সঙ্গে সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করছে বলে ষাট লক্ষেরও বেশি পুরুষ, নারী এবং ছেলেমেয়ে এখন এই মহান, অদ্বিতীয় কাজে অংশ নিচ্ছে। খুব শীঘ্রই যিহোবার রাজ্যের সমস্ত বিরোধীর জন্য শেষ আসবে।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫, ১৮.

যিহোবার সার্বভৌমত্ব থেকে উপকৃত হওয়া

৯, ১০. যিহোবা এবং মনুষ্য শাসকদের মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে?

আমরা যদি উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হয়ে থাকি, তা হলে সার্বভৌম প্রভু যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক উপকার নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ৭১:৫; ১১৬:১২) উদাহরণস্বরূপ, আমরা ঈশ্বরকে ভয় এবং ধার্মিকতা অনুশীলন করি বলে তাঁর অনুমোদন পাই এবং আধ্যাত্মিকভাবে তাঁর নিকটবর্তী হই। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; যাকোব ৪:৮) এর বিপরীতে, মনুষ্য শাসকদের বেশির ভাগ সময়ই এইরকম বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেখা যায়, যেমন সামরিক নেতা, ধনী ব্যবসায়ী অথবা খেলাধুলা এবং আমোদপ্রমোদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিরা। আফ্রিকার সংবাদপত্র সোয়িটান অনুসারে, একজন বিশিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা তার দেশের দারিদ্র-পীড়িত এলাকাগুলো সম্বন্ধে এই কথাগুলো বলেছিলেন: “আমি বুঝতে পারি যে কেন আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ধরনের এলাকাগুলোতে যেতে চায় না। সহজভাবে বললে আমরা ভুলে যেতে চাই যে, এই ধরনের অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এটা আমাদের বিবেককে দংশন করে এবং আমরা যে-দামি [গাড়িগুলো] চালিয়ে নিয়ে যাই, সেগুলো আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে।”

১০ অবশ্য কিছু মনুষ্য শাসক তাদের প্রজাদের মঙ্গলের বিষয়ে অকপটভাবে চিন্তা করে থাকে। কিন্তু, তাদের মধ্যে এমনকি সবচেয়ে মহান ব্যক্তিও তাদের প্রজাদের অন্তরঙ্গভাবে জানে না। বাস্তবিকপক্ষে, আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: এমন কোনো শাসক কি আছে, যিনি তার সমস্ত প্রজার বিষয়ে এতটাই চিন্তা করেন যে, সমস্যার সময়ে তিনি দ্রুত তাদের প্রত্যেকের সাহায্যে আসেন? হ্যাঁ, আছে। দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু পতনোন্মুখ সকলকে ধরিয়া রাখেন, অবনত সকলকে উত্থাপন করেন।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৪.

১১. ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিদের ওপর কোন পরীক্ষাগুলো আসে এবং তাদের কোন সাহায্য রয়েছে?

১১ যিহোবার অনুগত ব্যক্তিদের ওপর অনেক পরীক্ষা এবং বিপর্যয় আসে তাদের নিজেদের অসিদ্ধতার কারণে এবং তারা এমন এক জগতে বাস করছে বলে, যা ‘পাপাত্মা’ শয়তানের ক্ষমতার অধীনে শুয়ে রয়েছে। (১ যোহন ৫:১৯; গীতসংহিতা ৩৪:১৯) খ্রিস্টানরা তাড়না ভোগ করে। কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানোর কারণে কষ্টভোগ করে। কখনও কখনও যিহোবার অনুগত ব্যক্তিদের ভুলগুলো তাদেরকে নিরুৎসাহিতায় “অবনত” করতে পারে। কিন্তু, তাদের ওপর যে-পরীক্ষাই আসুক না কেন, যিহোবা সবসময়ই তাদের প্রত্যেককে সান্ত্বনা ও আধ্যাত্মিক শক্তি দিতে তৈরি আছেন। রাজা যিশু খ্রিস্টেরও তাঁর অনুগত প্রজাদের প্রতি একই প্রেমময় আগ্রহ রয়েছে।—গীতসংহিতা ৭২:১২-১৪.

যথাসময়ে পরিতৃপ্তিদায়ক খাদ্য

১২, ১৩. “সমুদয় প্রাণীর” প্রয়োজনগুলো যিহোবা কতটা ভালভাবে জুগিয়ে থাকেন?

১২ যিহোবা তাঁর মহান প্রেমপূর্ণ-দয়ার কারণে তাঁর দাসদের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় জোগান। এর অন্তর্ভুক্ত হল, পুষ্টিকর খাদ্য দিয়ে তাদের পরিতৃপ্ত করা। রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “সকলের চক্ষু তোমার [যিহোবার] অপেক্ষা করে, তুমিই যথাসময়ে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতেছ। তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৫, ১৬) এমনকি বিপর্যয়ের সময়েও যিহোবা বিষয়গুলোকে এমনভাবে পরিচালিত করেন, যাতে তাঁর অনুগত ব্যক্তিরা ‘প্রতিদিন খাদ্য’ পায়।—লূক ১১:৩; ১২:২৯, ৩০.

১৩ দায়ূদ উল্লেখ করেছিলেন যে, ‘সমুদয় প্রাণী’ পূর্ণ বা পরিতৃপ্ত হয়। এর মধ্যে পশুপাখিও রয়েছে। পৃথিবীতে যদি প্রচুর পরিমাণে স্থলভূমির গাছপালা এবং সমুদ্রের উদ্ভিদ না থাকত, তা হলে জলজ প্রাণী, পাখি এবং স্থলচর জীবজন্তুরা শ্বাস নেওয়ার জন্য কোনো অক্সিজেন বা খাওয়ার জন্য কোনো খাদ্য পেত না। (গীতসংহিতা ১০৪:১৪) কিন্তু, যিহোবা এই বিষয়টাতে লক্ষ রেখেছেন, যাতে সকলের প্রয়োজনগুলো পূরণ করা হয়।

১৪, ১৫. আজকে কীভাবে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানো হচ্ছে?

১৪ পশুপাখির বৈসাদৃশ্যে, মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন রয়েছে। যিহোবা কত অপূর্বভাবে তাঁর অনুগত দাসদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করেন! তাঁর মৃত্যুর আগে যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” যিশুর অনুসারীদের জন্য “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” জোগাবে। (মথি ২৪:৪৫) ১,৪৪,০০০ জন অভিষিক্তদের অবশিষ্টাংশরা আজকে সেই দাস শ্রেণী গঠন করে। তাদের মাধ্যমে যিহোবা সত্যিই প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগাচ্ছেন।

১৫ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবার বেশির ভাগ লোকই এখন তাদের নিজেদের ভাষায় বাইবেলের এক নতুন এবং সঠিক অনুবাদ থেকে উপকৃত হচ্ছে। পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) কত চমৎকার এক আশীর্বাদ! এ ছাড়া, লক্ষ লক্ষ বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক ক্রমাগত ৩০০রও বেশি ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। এই সমস্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য সারা পৃথিবীর সত্য উপাসকদের জন্য এক আশীর্বাদ হয়েছে। এই সমস্তকিছুর জন্য কে কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য? যিহোবা ঈশ্বর। তাঁর মহান প্রেমপূর্ণ-দয়ার মাধ্যমে তিনি দাস শ্রেণীর জন্য “যথাসময়ে . . . ভক্ষ্য” জোগানো সম্ভবপর করেছেন। এই ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে বর্তমান দিনের আধ্যাত্মিক পরমদেশে “সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা” পূরণ করা হচ্ছে। আর যিহোবার দাসেরা খুব শীঘ্রই পৃথিবীকে এক বাস্তব পরমদেশে রূপান্তরিত হতে দেখার আশায় কতই না আনন্দ করে!—লূক ২৩:৪২, ৪৩.

১৬, ১৭. (ক) আধ্যাত্মিক খাদ্য যে যথাসময়ে এসেছে, সেটার কোন উদাহরণগুলো রয়েছে? (খ) কীভাবে গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায় শয়তানের দ্বারা উত্থাপিত প্রধান বিচার্য বিষয় সম্বন্ধে ঈশ্বরের অনুগত দাসদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে?

১৬ যথাসময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য পাওয়ার এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বিবেচনা করুন। ১৯৩৯ সালে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সেই একই বছরে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১লা নভেম্বর (ইংরেজি) সংখ্যায় “নিরপেক্ষতা” শিরোনামের একটা প্রবন্ধ ছিল। স্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করার ফলে সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিরা যুদ্ধরত জাতিগুলোর কর্মকাণ্ডে দৃঢ় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখতে পেয়েছিল। এই বিষয়টা সেই ছয় বছরের যুদ্ধের উভয় সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ওপর ক্রোধ নিয়ে এসেছিল। যাইহোক, নিষেধাজ্ঞা এবং তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও, ঈশ্বরের অনুগত দাসেরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলেছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত শতকরা ১৫৭ ভাগ বিস্ময়কর বৃদ্ধি দিয়ে তাদের আশীর্বাদ করা হয়েছিল। এ ছাড়া, সেই যুদ্ধের সময় তাদের নীতিনিষ্ঠার লক্ষণীয় নথি সত্য ধর্মকে শনাক্ত করতে লোকেদের ক্রমাগত সাহায্য করে।—যিশাইয় ২:২-৪.

১৭ যিহোবা যে-আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগান, তা শুধু সময়োপযোগীই নয় কিন্তু অনেক পরিতৃপ্তিদায়কও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতিগুলো যখন প্রচণ্ডভাবে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তখন যিহোবার লোকেদেরকে তাদের নিজেদের পরিত্রাণের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করা হয়েছিল। যিহোবা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, পুরো নিখিলবিশ্বের সঙ্গে জড়িত প্রধান বিচার্য বিষয়টা যিহোবার ন্যায্য সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। এটা জানা কত পরিতৃপ্তিদায়ক যে, তাদের আনুগত্যের মাধ্যমে যিহোবার প্রতিটা সাক্ষির যিহোবার সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনে এবং দিয়াবলকে একজন মিথ্যাবাদী প্রমাণিত করায় সামান্য ভূমিকা ছিল। (হিতোপদেশ ২৭:১১) শয়তান, যে যিহোবা এবং তাঁর শাসন করার পদ্ধতি নিয়ে অপবাদ দিয়েছিল, তার বৈসাদৃশ্যে যিহোবার অনুগত ব্যক্তিরা জনসাধারণ্যে ক্রমাগত ঘোষণা করে চলে: “সদাপ্রভু আপনার সমস্ত পথে ধর্ম্মশীল।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৭.

১৮. আধ্যাত্মিক খাদ্য যে সময়োপযোগী এবং অনেক পরিতৃপ্তিদায়ক, সেটার কোন সাম্প্রতিক উদাহরণ রয়েছে?

১৮ সময়োপযোগী ও পরিতৃপ্তিদায়ক আধ্যাত্মিক খাদ্যের আরেকটা উদাহরণ হল যিহোবার নিকটবর্তী হোন বইটি, যা ২০০২/০৩ সালে সারা পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত শত শত “উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা” জেলা সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়েছিল। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা তৈরি এবং যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত এই বই যিহোবার বিস্ময়কর গুণগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করায়, যেগুলোর মধ্যে গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায়ে উল্লেখিত গুণগুলোও রয়েছে। এই চমৎকার বইটি নিশ্চিতভাবে ঈশ্বরের অনুগত দাসদের তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার এক সময়

১৯. কোন চূড়ান্ত সময় নিকটবর্তী এবং আমরা কীভাবে সেটার মোকাবিলা করতে পারি?

১৯ যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টা মীমাংসা করার এক চূড়ান্ত সময় এগিয়ে আসছে। যিহিষ্কেল ৩৮ অধ্যায়ে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, শয়তান খুব শীঘ্রই ‘মাগোগ দেশীয় গোগ’ হিসেবে তার ভূমিকা সম্পন্ন করবে। এর অন্তর্ভুক্ত হল যিহোবার লোকেদের ওপর পৃথিবীব্যাপী এক আক্রমণ। ঈশ্বরের অনুগত দাসদের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে দেওয়ার জন্য এটা হবে শয়তানের সর্বশক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা। যিহোবার উপাসকদের তাঁকে আন্তরিকভাবে ডাকার এমনকি সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করার প্রয়োজন হবে, যা আগে কখনও হয়নি। ঈশ্বরের প্রতি তাদের সশ্রদ্ধ ভয় এবং প্রেম কি নিষ্ফল হবে? কখনোই না কারণ গীতসংহিতা ১৪৫ বলে: “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে, যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে। যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তিনি তাহাদের বাঞ্ছা পূর্ণ করেন, আর তাহাদের আর্ত্তনাদ শুনিয়া তাহাদিগকে ত্রাণ করেন। যাহারা সদাপ্রভুকে প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন, কিন্তু তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৮-২০.

২০. গীতসংহিতা ১৪৫:১৮-২০ পদের কথাগুলো কীভাবে নিকট ভবিষ্যতে সত্য প্রমাণিত হবে?

২০ যিহোবার সান্নিধ্য লাভ করা এবং তিনি যখন সমস্ত দুষ্টকে সংহার করবেন, তখন তাঁর রক্ষা করার ক্ষমতা দেখা কতই না রোমাঞ্চকর হবে! সেই চূড়ান্ত সময়ে, যা এখন খুবই নিকটে, যিহোবা শুধু তাদের কথাই শুনবেন “যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে।” নিশ্চিতভাবেই তিনি কপটদের কথা শুনবেন না। ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে দেখায় যে, দুষ্টদের দ্বারা শেষ মূহূর্তে তাঁর নাম ব্যবহৃত হওয়া সবসময়ই ব্যর্থ হয়েছে।—হিতোপদেশ ১:২৮, ২৯; মীখা ৩:৪; লূক ১৩:২৪, ২৫.

২১. যিহোবার অনুগত দাসেরা কীভাবে দেখায় যে, তারা ঐশিক নাম ব্যবহার করে আনন্দিত হয়?

২১ যারা যিহোবাকে ভয় করে তাদের জন্য এখন আগের চেয়ে আরও বেশি করে ‘সত্যে তাঁহাকে ডাকিবার’ সময়। তাঁর অনুগত ব্যক্তিরা তাদের প্রার্থনায় এবং তাদের সভাগুলোতে তারা যে-মন্তব্যগুলো করে, সেগুলোতে তাঁর নাম ব্যবহার করে আনন্দিত হয়। তারা ব্যক্তিগত কথাবার্তার সময় ঐশিক নাম ব্যবহার করে। আর জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় তারা সাহসের সঙ্গে যিহোবার নাম ঘোষণা করে।—রোমীয় ১০:১০, ১৩-১৫.

২২. জগতের আচরণ এবং ইচ্ছাগুলো প্রতিরোধ করে চলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

২২ যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে নিকট সম্পর্ক থেকে ক্রমাগত উপকার পাওয়ার জন্য এই বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষতিকর এই সমস্ত বিষয় প্রতিরোধ করে চলব যেমন, বস্তুবাদিতা, নোংরা আমোদপ্রমোদ, ক্ষমাহীন মনোভাব অথবা অভাবী ব্যক্তিদের প্রতি উদাসীন মনোভাব। (১ যোহন ২:১৫-১৭; ৩:১৫-১৭) সংশোধন করা না হলে, এই ধরনের কাজ এবং বৈশিষ্ট্যগুলো গুরুতর পাপের দিকে পরিচালিত করতে পারে আর এর ফলে যিহোবার অনুমোদন হারাতে হতে পারে। (১ যোহন ২:১, ২; ৩:৬) এই বিষয়টা মনে রাখা প্রজ্ঞার পথ যে, আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, কেবল তা হলেই তিনি আমাদের প্রতি ক্রমাগত প্রেমপূর্ণ-দয়া বা অনুগত প্রেম দেখাবেন।—২ শমূয়েল ২২:২৬.

২৩. ঈশ্বরের সমস্ত অনুগত ব্যক্তির জন্য কোন মহান ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?

২৩ তা হলে, আসুন আমাদের চিন্তাভাবনা সেই মহান ভবিষ্যতের ওপর কেন্দ্রীভূত রাখি, যা যিহোবার সমস্ত অনুগত ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। তা করলে, আমাদের সেই সমস্ত ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে, যারা “প্রতিদিন” এবং “অনন্তকাল” যিহোবার গৌরব, ধন্যবাদ এবং প্রশংসা করবে। (গীতসংহিতা ১৪৫:১, ২) তাই, আমরা যেন ‘অনন্ত জীবনের জন্য নিজেদের ঈশ্বরের প্রেমে রক্ষা করি।’ (যিহূদা ২০, ২১) আমাদের স্বর্গীয় পিতার বিস্ময়কর গুণগুলো ও সেইসঙ্গে মহান প্রেমপূর্ণ-দয়া, যা তিনি যারা তাঁকে ভালবাসে তাদের প্রতি দেখান, সেগুলো থেকে ক্রমাগত উপকার পাওয়ার সময় আমাদের অনুভূতি যেন সবসময় সেই কথাগুলোর মতো হয়, যা দায়ূদ গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায়ের শেষ কথাগুলোর মধ্যে প্রকাশ করেছেন: “আমার মুখ সদাপ্রভুর প্রশংসা বর্ণনা করিবে; আর সমুদয় প্রাণী যুগে যুগে চিরকাল তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ করুক।”

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে গীতসংহিতা ১৪৫ অধ্যায় ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সাহায্য করে?

• কীভাবে যিহোবা ‘সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ’ করেন?

• কেন আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া প্রয়োজন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিরা তাঁর পরাক্রম কাজগুলোর বিষয়ে আলোচনা করে আনন্দিত হয়

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার দাসেরা সাহসের সঙ্গে অপরিচিত ব্যক্তিদের তাঁর রাজপদের গৌরব সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা “সমুদয় প্রাণীর” জন্য খাদ্য জোগান

[সৌজন্যে]

জীবজন্তু: Parque de la Naturaleza de Cabárceno

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা তাঁর সেই সমস্ত অনুগত ব্যক্তিকে শক্তি এবং নির্দেশনা দেন, যারা প্রার্থনায় তাঁর সাহায্য চায়