সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আধ্যাত্মিকতা ও আপনার মঙ্গল

আধ্যাত্মিকতা ও আপনার মঙ্গল

আধ্যাত্মিকতা ও আপনার মঙ্গল

 আপনি সম্ভবত আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেন। প্রতিদিন আপনি হয়তো ঘুমানোর জন্য আট ঘন্টা, রান্না করা ও খাওয়াদাওয়ার জন্য কয়েক ঘন্টা এবং অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের খরচ জোগাতে আট কিংবা তারও বেশি ঘন্টা ব্যয় করেন। আপনি যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে সম্ভবত আপনি একজন ডাক্তারকে দেখানোর জন্য অথবা কোনো টোটকা ওষুধ তৈরি করার জন্য সময় ও টাকা ব্যয় করেন। আপনি নিয়মিতভাবে ঘর পরিষ্কার করেন, স্নান করেন ও এমনকি হয়তো ব্যায়ামও করেন আর এই সমস্তকিছুই ভাল স্বাস্থ্যের জন্য।

কিন্তু, ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য আপনার শারীরিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেওয়ার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। আরেকটা বিষয় রয়েছে যা আপনার মঙ্গল আনার ক্ষেত্রে এক জোরালো ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা দেখিয়েছে যে, আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপনার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের—আপনার আধ্যাত্মিকতা থাকা বা না থাকার—নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

এক সরাসরি সম্পর্ক

“এই বিষয়ের ওপর গবেষণা করা প্রথম দিকের প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশ থেকেই দেখা গেছে যে, আধ্যাত্মিকতার বৃদ্ধি ও উত্তম স্বাস্থ্যের মধ্যে এক সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে,” বলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেডলি জি. পিচ। এই গবেষণাগুলোর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে দ্যা মেডিকাল জার্নাল অফ অস্ট্রেলিয়া (এমজেএ) উল্লেখ করে: “ধর্মপরায়ণ হওয়ার সঙ্গে . . . নিম্ন রক্তচাপ, নিম্ন কোলেস্টেরল . . . ও এমনকি মলাশয়ে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকার সম্পর্ক রয়েছে।”

একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০২ সালে বার্কেলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা ৬,৫৪৫ জন ব্যক্তির ওপর করা একটা গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, “যে-লোকেরা সপ্তাহে একবার ধর্মীয় সভাগুলোতে যোগ দিয়েছিল, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি সেই ব্যক্তিদের তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে কম ছিল, যারা মাঝে মধ্যে ধর্মীয় সভায় যোগ দিয়েছিল বা কখনোই যোগ দেয়নি।” এই গবেষণার প্রধান উদ্যোক্তা এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্কেলেস স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ এর একজন লেকচারার, ডেগ ওমেন বলেছিলেন: “আরও কিছু বিষয়, যেমন সমাজে লোকেদের সঙ্গে ওঠা বসা করা এবং ধূমপান না করা ও ব্যায়াম করার মতো স্বাস্থ্যগত কিছু অভ্যাসের মধ্যে রদবদল আনার পরেও এমনকি আমরা এই পার্থক্য লক্ষ করেছি।”

জীবন সম্বন্ধে যাদের এক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাদের জন্য অন্যান্য উপকারকে শনাক্ত করে, এমজেএ বলে: “অস্ট্রেলিয়ায় করা গবেষণাগুলো লক্ষ করেছে যে, ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকতর বৈবাহিক স্থিরতা এসেছে, মদ ও অবৈধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার কমেছে, আত্মহত্যার হার কমেছে ও এর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধি পেয়েছে, দুশ্চিন্তা ও হতাশা কমে গিয়েছে আর নিঃস্বার্থপর মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।” এ ছাড়া, বিএমজে (আগে দ্যা ব্রিটিশ মেডিকাল জার্নাল হিসেবে পরিচিত ছিল) রিপোর্ট করে: “যে-লোকেরা দাবি করে যে, তাদের দৃঢ় আধ্যাত্মিক বিশ্বাস রয়েছে, তারা কোনো ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির মৃত্যুর পরে সেই ব্যক্তিদের চেয়ে দ্রুত ও পুরোপুরিভাবে শোক কাটিয়ে ওঠে বলে মনে হয়, যাদের কোনো আধ্যাত্মিক বিশ্বাস নেই।”

সত্যিকারের আধ্যাত্মিকতা কী, সেই সম্বন্ধে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। তবে, আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এটার প্রমাণ প্রায় ২,০০০ বছর আগে যিশু খ্রিস্টের দ্বারা বলা এক উক্তির সঙ্গে মিল রাখে। তিনি বলেছিলেন: “সুখী তারা যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন।” (মথি ৫:৩, NW) যেহেতু আপনার স্বাস্থ্য ও সুখ আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত, তাই এটা জিজ্ঞেস করা যুক্তিযুক্ত: ‘কোথায় আমি নির্ভরযোগ্য আধ্যাত্মিক নির্দেশনা পেতে পারি? আর একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত?’