সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি অনিশ্চয়তার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন

আপনি অনিশ্চয়তার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন

আপনি অনিশ্চয়তার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন

 “নিশ্চয়ই!” “নিশ্চিত!” “নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে!” কোনো সন্দেহ নেই যে, এই ধরনের অভিব্যক্তিগুলো আপনি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু, আমাদের রোজকার জীবনে খুব বেশি কিছু নেই, যেগুলোর ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। জীবন এতটাই অনিশ্চিত যে আমরা প্রায়ই চিন্তা করে থাকি, এমন কিছু আছে কি না, যেটার বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হতে পারি। সংশয় এবং অনিশ্চয়তা জীবনের একটা অংশ বলেই মনে হয়।

এটা স্বাভাবিক যে, বেশির ভাগ লোকই নিজেদের এবং তাদের পরিবারের জন্য নিরাপত্তা ও সুখ চায়। তারা সেই সমস্ত বিষয় অর্জন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, যেগুলো তাদের সুখী এবং নিরাপদ করবে বলে তারা মনে করে—সাধারণত টাকাপয়সা এবং বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি। কিন্তু ভূমিকম্প, সামুদ্রিক ঝড়, কোনো দুর্ঘটনা অথবা কোনো দৌরাত্ম্যমূলক অপরাধ মুহূর্তের মধ্যে এই ধরনের বিষয়সম্পত্তি পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে। গুরুতর অসুস্থতা, বিবাহবিচ্ছেদ অথবা বেকারত্ব রাতারাতি জীবনকে পালটে দিতে পারে। এটা ঠিক যে, এই ধরনের বিষয়গুলো হয়তো আপনার ক্ষেত্রে ঘটেনি। তবুও, যেকোনো মুহূর্তে ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে, শুধু এই বিষয়টা জানাই এক বিরক্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি। কিন্তু, এটাই শেষ নয়।

অনিশ্চয়তার সমার্থ শব্দ হল সংশয় আর একটা অভিধান “সংশয়” শব্দটাকে এভাবে বর্ণনা করে, বিশ্বাস অথবা ধারণার অনিশ্চয়তা, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায়ই বাধা দেয়। এ ছাড়া, আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করা (ইংরেজি) বই অনুসারে, “গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছুর বিষয়ে অনিশ্চয়তা হল উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার এক প্রধান কারণ।” সংশয়ের প্রতিকার করা না হলে তা উদ্বেগ, হতাশা এবং ক্রোধের দিকে পরিচালিত করতে পারে। হ্যাঁ, কী ঘটতে পারে অথবা কী ঘটতে পারে না, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে তা আমাদের মানসিক এবং দৈহিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

এর ফলে, কিছু লোক আরেক চরমে গিয়ে পৌঁছায়। তারা ব্রাজিলের একজন যুবকের মতো, যে বলেছিল: “কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কেন চিন্তা করব? আজকের বিষয় আজকে এবং আগামীকালেরটা আগামীকাল দেখা যাবে।” “আইস, আমরা ভোজন ও পান করি,” এই ধরনের অদৃষ্টবাদী মনোভাব কেবল হতাশা, যন্ত্রণা এবং অবশেষে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করতে পারে। (১ করিন্থীয় ১৫:৩২) তাই, সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের দিকে তাকানো আমাদের জন্য আরও অনেক উত্তম, যাঁর সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।” (যাকোব ১:১৭) আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল পরীক্ষা করি, তা হলে জীবনের অনিশ্চয়তাগুলোর সঙ্গে কীভাবে সফলভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে যুক্তিযুক্ত পরামর্শ এবং নির্দেশনা খুঁজে পাব। এ ছাড়া, এটা আমাদের এও বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, কেন এত অনিশ্চয়তা রয়েছে।

অনিশ্চয়তার কারণ

শাস্ত্র জীবন সম্বন্ধে এক বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি জোগায় এবং অনিশ্চিত বিষয় ও পরিবর্তনের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যদিও পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক পদমর্যাদা, মেধা এবং অন্যান্য বিষয় হয়তো কিছুটা নিরাপত্তা জোগাতে পারে কিন্তু বাইবেল দেখায় যে, এই ধরনের বিষয়গুলোকে আমরা অবধারিত বলে মনে করতে অথবা এগুলো “জাদুবলে সুরক্ষিত” এক জীবনের দিকে পরিচালিত করবে বলে আশা করতে পারি না। জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেছিলেন: “দ্রুতগামীদের দ্রুতগমন, কি বীরদের যুদ্ধ, কি জ্ঞানবানদের অন্ন, কি বুদ্ধিমানদের ধন, কি বিজ্ঞদেরই অনুগ্রহলাভ হয়, এমন নয়।” কেন নয়? কারণ “সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” তাই, শলোমন সাবধান করে দিয়েছিলেন: “বাস্তবিক মনুষ্যও আপনার কাল জানে না; যেমন মৎস্যগণ অশুভ জালে ধৃত হয়, কিম্বা যেমন পক্ষিগণ ফাঁদে ধৃত হয়, তেমনি মনুষ্য-সন্তানেরা অশুভকালে ধরা পড়ে, তাহা ত হঠাৎ তাহাদের উপরে পড়িয়া থাকে।”—উপদেশক ৯:১১, ১২.

এ ছাড়া, যিশু খ্রিস্টও চরম উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তাপূর্ণ সময়ের বিষয়ে বলেছিলেন, যা সমস্ত মানুষের ওপর আসবে। সুস্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেছিলেন: “সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, এবং পৃথিবীতে জাতিগণের ক্লেশ হইবে, তাহারা সমুদ্রের ও তরঙ্গের গর্জ্জনে উদ্বিগ্ন হইবে। ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে; কেননা আকাশ-মণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে।” তবে, আজকের সৎহৃদয়ের লোকেদের জন্য যিশু ইতিবাচক কিছুর বিষয়ে নির্দেশ করেছিলেন: “তোমরাও যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট।” (লূক ২১:২৫, ২৬, ৩১) একইভাবে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অযথা ভয় পাওয়ার পরিবর্তে, ঈশ্বরের ওপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে, যা অনিশ্চয়তা ছাড়িয়ে এক অপূর্ব, নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রাখতে সাহায্য করতে পারে।

‘প্রত্যাশার পূর্ণতা থাকা’

যদিও আমরা যা কিছু শুনি, পড়ি অথবা দেখি, সেগুলোর সবকিছুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি না কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ওপর নির্ভর করার উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে। তিনি কেবলমাত্র সর্বমহানই নন কিন্তু সেইসঙ্গে একজন প্রেমময় পিতা, যিনি তাঁর পার্থিব সন্তানদের যত্ন নেন। তাঁর নিজের বাক্য সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেছিলেন: “তাহা নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।”—যিশাইয় ৫৫:১১.

যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন আর যারা তাঁর কথা শুনেছিল, তাদের অনেকে তা প্রত্যয় ও নিশ্চয়তার সঙ্গে গ্রহণ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, যে-মহিলা প্রথম যিশুর কথা শুনেছিলেন, তাকে একদল সৎহৃদয়ের শমরীয় লোক বলেছিল: “এখন যে আমরা বিশ্বাস করিতেছি, সে আর তোমার কথা প্রযুক্ত নয়, কেননা আমরা আপনারা শুনিয়াছি ও জানিতে পারিয়াছি যে, ইনি সত্যই জগতের ত্রাণকর্ত্তা।” (যোহন ৪:৪২) একইভাবে আজকে, নিরাপত্তাহীন এক সময়ে বাস করা সত্ত্বেও, কী বিশ্বাস করতে হবে, সেই বিষয়ে আমাদের অনিশ্চিত হতে হবে না।

ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়ে অনেকে এইরকম মনে করে যে, বোঝার চেষ্টা করার পরিবর্তে আমাদের শুধু বিশ্বাস করা উচিত। কিন্তু, বাইবেল লেখক লূক সেইরকম মনে করতেন না। তিনি গবেষণা করেছিলেন এবং সঠিক তথ্য জুগিয়েছিলেন যাতে অন্যেরা, তিনি যা লিখেছিলেন সেই “সকল বিষয়ের নিশ্চয়তা জ্ঞাত হইতে” পারে। (লূক ১:৪) যেহেতু পরিবার এবং যে-বন্ধুবান্ধবরা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তারা হয়তো এইরকম ভেবে দুশ্চিন্তা করতে পারে যে, শেষ পর্যন্ত আমরা মোহমুক্ত হব এবং হতাশ হয়ে পড়ব, তাই আমাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করতে সমর্থ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। (১ পিতর ৩:১৫) আমরা যা বিশ্বাস করি, একমাত্র সেটার কারণ সঠিকভাবে জানার মাধ্যমেই আমরা অন্যদেরকে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে সাহায্য করতে পারি। বাইবেল যিহোবাকে এই কথাগুলোর মাধ্যমে বর্ণনা করে: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪.

শেষের উক্তিটা বিবেচনা করুন: “তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের কোন প্রমাণ রয়েছে? প্রেরিত পিতর এই বিষয়ে পুরোপুরি দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন। তিনি একজন রোমীয় কর্মকর্তা এবং তার পরিবারকে বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) পিতর এই কথাগুলো বলেছিলেন কারণ তিনি সবেমাত্র দেখেছিলেন যে, কীভাবে ঈশ্বর নিজে বিষয়গুলোতে পরিচালনা দিয়েছিলেন, যার ফলে পরজাতীয় একটা পরিবার, যাদেরকে আগে অশুচি এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হতো, তারা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। পিতরের মতো, আমরাও ঈশ্বরের পক্ষপাতহীনতা এবং ধর্মময়তা সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি, যখন আমরা নিজের চোখে সারা পৃথিবীর দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টারও বেশি জায়গা থেকে আসা ‘বিস্তর লোককে’—৬০ লক্ষের ওপরে ব্যক্তিকে—দেখি, যারা তাদের আগের জীবনধারা ত্যাগ করেছে এবং ধার্মিকতার পথে চলে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যিশাইয় ২:২-৪.

সত্য খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা গোঁড়া অথবা একরোখা নয় কিন্তু নম্র এবং যুক্তিবাদী হতে চাই। তবে, আমরা যা বিশ্বাস করি এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমরা যা আশা করি, সেই বিষয়ে আমরা অনিশ্চিত নই। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমাদের বাসনা এই, যেন তোমাদের প্রত্যেক জন একই প্রকার যত্ন দেখায়, যাহাতে শেষ পর্য্যন্ত প্রত্যাশার পূর্ণতা থাকিবে।” (ইব্রীয় ৬:১১) একইভাবে, বাইবেলের সুসমাচার আমাদের ‘প্রত্যাশার পূর্ণতায়’ নিয়ে এসেছে। ঈশ্বরের বাক্যের ওপর দৃঢ়ভাবে ভিত্তি করা প্রত্যাশা আমাদের “হতাশায় পরিচালিত করে না,” যেমনটা পৌলও ব্যাখ্যা করেছিলেন।—রোমীয় ৫:৫, NW.

এ ছাড়া, আমরা পুরোপুরি দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, অন্যদের বাইবেল থেকে সুসমাচার সম্বন্ধে শিক্ষা দিলে, তা তাদের জন্য নিরাপত্তা আর এমনকি আবেগগত ও শারীরিকভাবেও নিশ্চয়তা নিয়ে আসতে পারে। আমরা পৌলের সঙ্গে এই কথা বলায় যোগ দিতে পারি: “আমাদের সুসমাচার তোমাদের কাছে কেবল বাক্যে নয়, কিন্তু শক্তিতে ও পবিত্র আত্মায় ও অতিশয় নিশ্চয়তায় উপস্থিত হইয়াছিল।”—১ থিষলনীকীয় ১:৫.

আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার ফলে বর্তমান আশীর্বাদগুলো

যদিও বর্তমান জীবনে আমরা পুরোপুরি নিরাপত্তা আশা করতে পারি না কিন্তু আমরা এমন বিষয়গুলো করতে পারি, যেগুলো আমাদের তুলনামূলকভাবে সুস্থির এবং নিরাপদ জীবনের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে। উদাহরণ হিসেবে, সভাগুলোতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা স্থিরতার ক্ষেত্রে অবদান রাখে কারণ সেখানে আমাদের সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত নীতি ও মূল্যবোধ সম্বন্ধে শেখানো হয়। পৌল লিখেছিলেন: “যাহারা এই যুগে ধনবান্‌, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্ব্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে।” (১ তীমথিয় ৬:১৭) অস্থায়ী বস্তুগত বিষয় ও আমোদপ্রমোদের ওপর নয় কিন্তু যিহোবার ওপর নির্ভর করতে শেখার মাধ্যমে তাদের অনেকে উদ্বিগ্নতা এবং হতাশা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছে, যেগুলো আগে তাদের বহন করতে হতো।—মথি ৬:১৯-২১.

এ ছাড়া, মণ্ডলীতে আমরা উষ্ণ ভ্রাতৃত্বও উপভোগ করি, যা অসংখ্য উপায়ে আমাদের সাহায্য এবং সমর্থন করে। তার পরিচর্যার একটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌল এবং তার ভ্রমণ সঙ্গীরা “অতিরিক্তরূপ ভারগ্রস্ত” হয়ে পড়েছিল এবং “এমন কি, [তাহাদের] জীবনের আশাও ছাড়িয়া” দিয়েছিল। কোথা থেকে পৌল সমর্থন এবং স্বস্তি পেয়েছিলেন? অবশ্যই, ঈশ্বরের ওপর তার নির্ভরতা কখনও বিচলিত হয়নি। তা ছাড়া, তিনি সেই সহখ্রিস্টানদের কাছ থেকে উৎসাহ এবং সান্ত্বনা পেয়েছিলেন, যারা তার সাহায্যে এসেছিল। (২ করিন্থীয় ১:৮, ৯; ৭:৫-৭) আজকে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন প্রথমে আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনেরাই সহখ্রিস্টানদের ও সেইসঙ্গে অভাবী অন্যান্য ব্যক্তিদের বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগানোর জন্য বার বার এগিয়ে আসে।

জীবনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার আরেকটা সাহায্য হল প্রার্থনা। আমরা যখন অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে পড়ি, তখন সবসময় আমাদের স্বর্গীয় প্রেমময় পিতার দিকে তাকাতে পারি। “সদাপ্রভু হইবেন ক্লিষ্টের জন্য উচ্চ দুর্গ, সঙ্কটের সময়ে উচ্চ দুর্গ।” (গীতসংহিতা ৯:৯) মানব পিতামাতারা হয়তো তাদের সন্তানদের সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু, ঈশ্বর আমাদের ভয় ও অনিশ্চয়তার অনুভূতিগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক। প্রার্থনার মাধ্যমে আমাদের উদ্বেগগুলো যিহোবার ওপর অর্পণ করে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি “আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম্ম করিতে পারেন।”—ইফিষীয় ৩:২০.

আপনি কি নিয়মিতভাবে প্রার্থনায় ঈশ্বরের দিকে তাকান? আপনি কি দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, ঈশ্বর আপনার প্রার্থনাগুলো শোনেন? “আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা করা উচিত,” সাও পাওলোর এক অল্পবয়সী মেয়ে বলেছিল। “কিন্তু আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এমন কারও সঙ্গে আমি কেন কথা বলব, যাকে আমি এমনকি জানিই না?’ কিন্তু, হিতোপদেশ ১৮:১০ পদ আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, আমাদের ঈশ্বরের সাহায্য প্রয়োজন এবং প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে।” সেই শাস্ত্রপদ বলে: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম দৃঢ় দুর্গ; ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা পায়।” সত্যিই, কীভাবে আমরা যিহোবার ওপর নির্ভরতা এবং আস্থা গড়ে তুলতে পারি, যদি আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলাকে অভ্যাসে পরিণত না করি? আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার আশীর্বাদগুলো উপভোগ করার জন্য আমাদের রোজ আন্তরিক প্রার্থনা করাকে এক অভ্যাসে পরিণত করা প্রয়োজন। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্‌ হও।”—লূক ২১:৩৬.

আরেকটা যে-বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি তা হল, ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর আমাদের প্রত্যাশা। দানিয়েল ২:৪৪ পদের কথাগুলো লক্ষ করুন: “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” সেই প্রত্যাশা দৃঢ় এবং এমন কিছু, যেটার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। মানুষের প্রতিজ্ঞাগুলো প্রায়ই ব্যর্থ হয় কিন্তু আমরা সবসময় যিহোবার বাক্যের ওপর নির্ভর করতে পারি। অনির্ভরযোগ্য হওয়ার পরিবর্তে, ঈশ্বর হলেন প্রকাণ্ড শিলাখণ্ডের মতো, যাঁর ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি। আমরা দায়ূদের মতো অনুভব করতে পারি, যিনি বলেছিলেন: “মম শৈলরূপ ঈশ্বর, আমি তাঁহার শরণাগত; মম ঢাল, মম ত্রাণ-শৃঙ্গ, মম উচ্চ দুর্গ, মম আশ্রয়স্থান, মম ত্রাতা, উপদ্রব হইতে আমার ত্রাণকারী।”—২ শমূয়েল ২২:৩.

পূর্বে উল্লেখিত আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করা বইটি আরও বলে: “একজন ব্যক্তি যত বেশি ভাবে যে, খারাপ বিষয়গুলো হয়তো ঘটতে পারে, খুব সম্ভবত ততই সেগুলো আরও বাস্তব হয়ে ওঠে আর সেগুলোর সঙ্গে কীভাবে সফলভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা বুঝতে পারা আরও কঠিন বলে মনে হয়।” তাই, কেন জগতের উদ্বেগ এবং সংশয়গুলো দিয়ে আমাদের ভারগ্রস্ত হতে দেব? এর পরিবর্তে, এই জগতের অনিশ্চয়তাগুলোর জায়গায় সেই নিশ্চয়তাগুলো স্থাপন করুন, যেগুলো ঈশ্বর জুগিয়েছেন। যিহোবার নিশ্চিত প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আমাদের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার মাধ্যমে আমাদের এই আশ্বাস রয়েছে: “যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত [“হতাশাগ্রস্ত,” NW] হইবে না।’”—রোমীয় ১০:১১.

[২৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

ঈশ্বরের বাক্য মানবজাতির জন্য ভবিষ্যৎ আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়

[৩০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে হতাশাগ্রস্ত হইবে না”

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

রাজ্যের সুসমাচার লোকেদের জন্য নিরাপত্তা নিয়ে আসে