সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর”

“বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর”

“বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর”

 আপনি কি যুদ্ধক্ষেত্রের এমন কোনো সৈনিকের বিষয়ে কল্পনা করতে পারেন, যিনি এই নির্দেশনা পেয়ে অখুশি হবেন: “আপনি ঘরে ফিরে যান এবং আপনার স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটান”?

ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের সময়ে একজন সৈনিক এই ধরনের এক নির্দেশনা পেয়েছিলেন। হিত্তীয় ঊরিয়কে রাজা নিজেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং ঘরে ফিরে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু, ঊরিয় তার ঘরে যেতে অসম্মত হয়েছিলেন। তার এই অদ্ভুত আচরণের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, উত্তরে ঊরিয় বলেছিলেন, নিয়ম সিন্দুক যা ঈশ্বরের উপস্থিতিকে বোঝায় সেটি এবং ইস্রায়েলীয় সৈনিকেরা যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছে। “তবে” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমি কি ভোজন পান করিতে ও স্ত্রীর সহিত শয়ন করিতে আপন গৃহে যাইতে পারি?” এইরকম এক চরম সময়ে, ঊরিয়ের পক্ষে তা করা অচিন্তনীয় ছিল।—২ শমূযেল ১১:৮-১১.

আমরাও যেহেতু এক যুদ্ধের সময়ে বাস করছি, তাই ঊরিয়ের আচরণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। এই যুদ্ধ বর্তমানে এত প্রচণ্ড যে, আগে কখনও পৃথিবীর কোনো জাতি এভাবে লড়াই করেনি। তুলনা করে দেখলে এই যুদ্ধের সামনে দুটো বিশ্বযুদ্ধের কোনো গুরুত্ব নেই আর আপনি এই যুদ্ধে জড়িত রয়েছেন। এতে অনেক ঝুঁকি রয়েছে, শত্রু খুবই ভয়ংকর। এই যুদ্ধে কোনো গুলিবর্ষণ হয় না, বোমা ফেলা হয় না কিন্তু তাই বলে যুদ্ধের কৌশলতায় কোনো ঘাটতি নেই।

এই যুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, এটা করা নীতিগতভাবে ঠিক কি না এবং আপনি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাণপণ করছেন। এই লড়াই করার কি কোনো মূল্য রয়েছে? প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে লেখা তার পত্রে এই অদ্বিতীয় যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে স্পষ্ট করে বলেছিলেন: “বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর।” হ্যাঁ, এই যুদ্ধে আপনাকে কোনো দুর্গকে নয়, বরং ‘বিশ্বাসকে’—বাইবেলে প্রকাশিত খ্রিস্টীয় সত্য সমষ্টিকে—রক্ষা করতে হবে। স্পষ্টত, বিশ্বাসের জন্য প্রাণপণ করতে ও জয়ী হতে আপনাকে অবশ্যই ‘বিশ্বাসকে’ পুরোপুরি গ্রহণ করতে হবে।—১ তীমথিয় ৬:১২.

একজন দূরদর্শী যোদ্ধা তার শত্রুকে জানার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এই যুদ্ধে শত্রুর হাতে বিশাল ভাণ্ডার ও অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধের কৌশলতার বিষয়ে তার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া, সে হল অতিমানবীয় শক্তির অধিকারী। সে বিদ্বেষপূর্ণ, দৌরাত্ম্যপূর্ণ এবং বিবেকহীন; সে হল শয়তান। (১ পিতর ৫:৮) কোনো মারণাস্ত্র ও সেইসঙ্গে মনুষ্য চাতুরী ও কৌশলতা এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অকার্যকর। (২ করিন্থীয় ১০:৪) তা হলে, এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আপনি কী ব্যবহার করতে পারেন?

প্রধান অস্ত্র হল, “আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য।” (ইফিষীয় ৬:১৭) প্রেরিত পৌল দেখান যে এটি কতটা কার্যকর: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১১, ১২) অস্ত্রটি এতই তীক্ষ্ণ, এতই সূক্ষ্ম যে, এটি একজনের চিন্তা ও উদ্দেশ্যকে ভেদ করতে পারে আর তাই এটিকে অবশ্যই দক্ষতা ও যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।

আপনি হয়তো জানেন যে, কোনো সৈনিকদলের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকতে পারে কিন্তু সেগুলো কোনো কাজেই আসবে না, যদি সৈনিকেরা সেগুলো ব্যবহার করায় দক্ষ না হয়। আপনারও একইভাবে আপনার খড়্গ কার্যকারীভাবে ব্যবহার করতে নির্দেশনার দরকার রয়েছে। আনন্দের বিষয় যে, আপনার জন্য সবচেয়ে অভিজ্ঞ যোদ্ধার দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। যিশু এই যোদ্ধা-শিক্ষকদের “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” বলেছেন, যাকে তাঁর অনুসারীদের সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাদ্য অথবা নির্দেশনা জোগানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। (মথি ২৪:৪৫) আপনি এই সমষ্টিগত দাসকে শনাক্ত করতে পারেন এর পরিশ্রমী শিক্ষা এবং শত্রুর কৌশলগুলো সম্বন্ধে দেওয়া সময়োপযোগী সাবধানবাণীগুলো পর্যবেক্ষণ করার দ্বারা। সাক্ষ্যপ্রমাণ যিহোবার সাক্ষিদের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর আত্মায়-অভিষিক্ত সদস্যদের নির্দেশ করে।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১.

এই যৌথ দাস নির্দেশনা দেওয়ার চাইতে আরও বেশি কিছু করেছে। এই দাস প্রেরিত পৌলের মনোভাব প্রদর্শন করেছে, যিনি থিষলনীকীর মণ্ডলীকে লিখেছিলেন: “যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম; সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমাদিগকে দিতে সন্তুষ্ট ছিলাম, যেহেতুক তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে।” (১ থিষলনীকীয় ২:৭, ৮) প্রত্যেক খ্রিস্টান সৈনিকের দায়িত্ব হল এইরকম প্রেমপূর্ণ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করা।

সম্পূর্ণ যুদ্ধসজ্জা

আপনার সুরক্ষার জন্য এক সম্পূর্ণ রূপক যুদ্ধসজ্জা জোগানো হয়েছে। ইফিষীয় ৬:১৩-১৮ পদে আপনি এই যুদ্ধসজ্জার এক তালিকা খুঁজে পেতে পারেন। এক সতর্ক যোদ্ধা কোনো ঝুঁকি নেবেন না, যদি তার আধ্যাত্মিক অস্ত্রের মধ্যে কয়েকটা না থাকে বা সেগুলোর মেরামতের দরকার হয়।

একজন খ্রিস্টানের তার সুরক্ষার জন্য সবকটা অস্ত্রের দরকার কিন্তু বিশেষ করে বিশ্বাসের ঢাল অত্যন্ত মূল্যবান। তাই পৌল লিখেছিলেন: “এই সকল ছাড়া বিশ্বাসের ঢালও গ্রহণ কর, যাহার দ্বারা তোমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারিবে।”—ইফিষীয় ৬:১৬.

বিশ্বাসের ঢাল, যেটা পুরো শরীরকে ঢেকে দিতে পারে, সেটা বিশ্বাসের গুণগত মানকে বোঝায়। আপনার অবশ্যই যিহোবার পরিচালনায় দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে, তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা যে পূর্ণ হবেই, তা নিঃসন্দেহে মেনে নিতে হবে। আপনার এমন বোধ করা উচিত যেন সেই প্রতিজ্ঞাগুলো ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। শয়তানের সমগ্র জগৎ ব্যবস্থা যে শীঘ্রই ধ্বংস হবে এবং পৃথিবী এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে ও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত লোকেরা পুনরায় সিদ্ধতায় পৌঁছাবে, সেই বিষয়ে ক্ষণিকের জন্যও সন্দেহ করবেন না।—যিশাইয় ৩৩:২৪; ৩৫:১, ২; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৭-২১.

কিন্তু, এই চলতি অসাধারণ যুদ্ধে আপনার আরও কিছু দরকার—একজন বন্ধু। যুদ্ধের সময়ে সহযোদ্ধাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, কারণ তারা একে অপরকে উৎসাহ এবং সুরক্ষা দিয়ে থাকে আর এমনকি কোনো কোনো সময়ে একে অপরকে মৃত্যু থেকেও রক্ষা করে। যেহেতু বন্ধুত্বের মূল্য রয়েছে, এই কারণে এই যুদ্ধে টিকে থাকতে অন্য যেকারও চাইতে যিহোবার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব করা দরকার। তাই, পৌল এই কথাগুলো বলে তার যুদ্ধসজ্জার তালিকা এভাবে শেষ করেছিলেন: “সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর।”—ইফিষীয় ৬:১৮.

আমরা এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাহচর্য ভালবাসি। আমরা তার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য প্রচেষ্টা করি। প্রার্থনায় নিয়মিতভাবে যিহোবার সঙ্গে কথা বলায় তিনি আমাদের কাছে বাস্তব, এক নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে ওঠেন। শিষ্য যাকোব আমাদের উৎসাহিত করেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।”—যাকোব ৪:৮.

শত্রুর কৌশলতাগুলো

এই জগতের সঙ্গে লড়াই করা কখনও কখনও মাইন পুতে রাখা একটা মাঠের ওপর দিয়ে হাঁটার মতো হতে পারে। যেকোনো দিক থেকে আক্রমণ আসতে পারে আর শত্রু আপনার অসতর্কতার সুযোগ নিতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা আপনার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুরক্ষা জুগিয়েছেন।—১ করিন্থীয় ১০:১৩.

শত্রু আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি বাইবেলের যে-সত্যগুলো রয়েছে, সেগুলোকে আক্রমণ করে এক আঘাত আনার লক্ষ্য রাখতে পারে। ধর্মভ্রষ্টরা হয়তো চাটুকারী শব্দ ব্যবহার করে, তোষামোদ করে এবং বিকৃত যুক্তি দিয়ে আপনাকে কাবু করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু, ধর্মভ্রষ্টদের মনে আপনার মঙ্গলের জন্য কোনো চিন্তা নেই। হিতোপদেশ ১১:৯ পদ উল্লেখ করে: “মুখ দ্বারা পাষণ্ড [“ধর্মভ্রষ্ট,” NW] আপন প্রতিবাসীকে নষ্ট করে; কিন্তু জ্ঞান দ্বারা ধার্ম্মিকগণ উদ্ধার পায়।”

এমনটা চিন্তা করা ভুল হবে যে, ধর্মভ্রষ্টদের যুক্তি খণ্ডন করার জন্য আপনার তাদের কথা শোনা বা তাদের বইগুলো পড়ার দরকার রয়েছে। তাদের বিকৃত, বিষাক্ত যুক্তি আধ্যাত্মিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়া গলিত ক্ষতের মতো এটা আপনার বিশ্বাসকে সংক্রামিত করতে পারে। (২ তীমথিয় ২:১৬, ১৭) এর পরিবর্তে, ধর্মভ্রষ্টদের বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিক্রিয়া অনুকরণ করুন। ইয়োব যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন: “পামর [“ধর্মভ্রষ্ট,” NW] তাঁহার সম্মুখে আইসে না।”—ইয়োব ১৩:১৬.

শত্রু হয়তো এমন এক ভিন্ন কৌশলতা ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারে, যেটা কিছুটা সফলতা দিয়েছে। কুচকাওয়াজরত একজন সৈনিককে যদি লম্পটতা, অনৈতিক আচরণে জড়িয়ে পড়ার জন্য সারি থেকে বিচ্যুত হতে প্রলুব্ধ করা যেতে পারে, তা হলে তা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে।

জাগতিক চিত্তবিনোদন, যেমন অনৈতিক ছবি ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলো এবং অসংযত গানবাজনা খুবই কার্যকর টোপ। কেউ কেউ দাবি করে যে, তারা অনৈতিক ছবি দেখতে অথবা অনৈতিক সাহিত্যাদি পড়তে পারে, কারণ সেগুলো তাদের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু একজন ব্যক্তি যিনি নিয়মিত যৌনতা বিষয়ক খোলামেলা ছবিগুলো দেখতেন, তিনি খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছিলেন: “আপনি কখনও সেই দৃশ্যগুলো ভুলতে পারবেন না, আপনি যতই সেগুলোর বিষয়ে চিন্তা করবেন, ততই আপনি সেগুলো করতে চাইবেন যা আপনি দেখেছেন . . . সেই চলচ্চিত্র আপনাকে এটা ভাবতে বাধ্য করবে যে, আপনি সত্যিই কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” এই ধরনের সূক্ষ্ম চাতুর্যপূর্ণ আক্রমণ দ্বারা আহত হয়ে ঝুঁকি নেওয়ার কি কোনো মূল্য রয়েছে?

শত্রুর অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে আরেকটা বাণ বা ক্ষেপণাস্ত্র হল, বস্তুবাদিতার সূক্ষ্ম প্রলোভন। এর বিপদ নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে, কারণ আমাদের সকলের বস্তুগত চাহিদাগুলো রয়েছে। আমাদের ঘর, খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদের দরকার রয়েছে আর ভাল ভাল জিনিস থাকা দোষের কিছু নয়। কিন্তু, এগুলোর প্রতি একজনের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই বিপদ লুকিয়ে আছে। আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তুর চাইতে টাকাপয়সা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আমরা অর্থপ্রিয় হয়ে উঠতে পারি। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, সম্পদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আধ্যাত্মিক সম্পদ চিরস্থায়ী।—মথি ৬:১৯, ২০.

যদি সৈনিকদলের মনোবল ভেঙে পড়ে, তা হলে জয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” (হিতোপদেশ ২৪:১০) অবসন্নতা বা নিরুৎসাহিতা হচ্ছে একটা অস্ত্র, যেটা শয়তান কার্যকারীভাবে ব্যবহার করে আসছে। “পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র” দেওয়া আপনাকে নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করবে। (১ থিষলনীকীয় ৫:৮) অব্রাহামের মতো আপনার আশা দৃঢ় রাখার চেষ্টা করুন। যখন তার একমাত্র ছেলে ইস্‌হাককে উৎসর্গ করার জন্য বলি দিতে বলা হয়েছিল, তখন অব্রাহাম ইতস্তত করেননি। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে, তার বংশের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আশীর্বাদ করার বিষয়ে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন আর এর জন্য প্রয়োজন হলে ঈশ্বর ইস্‌হাককে মৃত্যু থেকে জীবিত করতে পারেন।—ইব্রীয় ১১:১৭-১৯.

যুদ্ধে হাল ছেড়ে দেবেন না

অনেকদিন ধরে সাহসের সঙ্গে এই যুদ্ধে প্রাণপণ করেছে এমন কেউ কেউ হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়ছে আর তাই একইরকম সতর্কতার সঙ্গে প্রাণপণ করছে না। বিশ্বাসের যুদ্ধে লেগে থাকায় সকলকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে এই প্রবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা ঊরিয়ের উদাহরণ সাহায্য করতে পারে। আমাদের অনেক সহখ্রিস্টান যোদ্ধাকে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর ঘাটতিকে মেনে নিতে, বিপদের মুখোমুখি হতে অথবা ঠাণ্ডা ও ক্ষুধায় কষ্ট পেতে হয়। ঊরিয়ের মতো, আমরাও সেই সমস্ত স্বস্তির বিষয়ে চিন্তা করতে চাই না, যেগুলো হয়তো আমরা এখন উপভোগ করতে পারি অথবা আমরা এক আরাম-আয়েশের জীবনযাপন করার ইচ্ছার ফাঁদে পড়তে চাই না। আমরা যিহোবার পৃথিবীব্যাপী অনুগত যোদ্ধা দলের সঙ্গে থাকতে এবং আমাদের জন্য সংরক্ষিত চমৎকার আশীর্বাদগুলো উপভোগ না করা পর্যন্ত প্রাণপণ করে যেতে চাই।—ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪.

আমাদের অসতর্ক হয়ে পড়াটা বিপদজনক হবে, সম্ভবত এমন চিন্তা করে যে চূড়ান্ত আক্রমণ এখনও অদূর ভবিষ্যতের বিষয়। রাজা দায়ূদের উদাহরণ বিপদ সম্বন্ধে তুলে ধরে। কোনো কারণবশত তিনি যুদ্ধে তার সৈন্যদলের সঙ্গে ছিলেন না। এর ফলে, দায়ূদ গুরুতর পাপ করেছিলেন, যা তার নিদারুণ যন্ত্রণার কারণ হয়েছিল এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত তাকে তা ভোগ করতে হয়েছিল।—২ শমূয়েল ১২:১০-১৪.

এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, লড়াইয়ের কষ্ট ভোগ করা, বিদ্রূপ সহ্য করা এবং বিতর্কিত জাগতিক আমোদপ্রমোদ পরিত্যাগ করার কি কোনো মূল্য রয়েছে? যারা সফলভাবে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা একমত যে, এই জগৎ যা দিতে চায় তা দেখতে খুব আকর্ষণীয়, ঠিক চকচকে চুমকির মতো কিন্তু খুব ভাল করে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, তাতে কিছুই নেই। (ফিলিপীয় ৩:৮) এ ছাড়া, প্রায়ই এই ধরনের আমোদপ্রমোদ কষ্ট ও হতাশা এনে দেয়।

এই আধ্যাত্মিক যুদ্ধে খ্রিস্টানরা প্রকৃত বন্ধুদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য, এক শুদ্ধ বিবেক এবং এক চমৎকার আশা উপভোগ করে। আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা খ্রিস্ট যিশুর সঙ্গে স্বর্গীয় অমর জীবন পাওয়ার অপেক্ষা করে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৪) খ্রিস্টান যোদ্ধাদের অধিকাংশই এক পার্থিব পরমদেশে সিদ্ধ মানব জীবনের প্রত্যাশা রাখে। নিশ্চিতভাবে যেকোনো ত্যাগস্বীকার করে এই পুরস্কারগুলো পাওয়ার মূল্য রয়েছে। আর জাগতিক যুদ্ধবিগ্রহের বিপরীতে, এই লড়াইয়ে যতদিন আমরা বিশ্বস্ত থাকব আমাদের জন্য ফলাফল নিশ্চিত। (ইব্রীয় ১১:১) কিন্তু, শয়তানের নিয়ন্ত্রণের অধীনস্থ এই ব্যবস্থার চূড়ান্ত ফলাফল হল সম্পূর্ণ ধ্বংস।—২ পিতর ৩:১০.

আপনি এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সময়ে যিশুর কথাগুলো স্মরণে রাখুন: “সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।” (যোহন ১৬:৩৩) পরীক্ষার মধ্যেও তিনি সতর্ক থেকে এবং নীতিনিষ্ঠা রক্ষা করে জয়ী হয়েছিলেন। আমরাও তা করতে পারি।

[২৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

কোনো গুলিবর্ষণ হয় না, বোমা ফেলা হয় না কিন্তু তাই বলে যুদ্ধের কৌশলতায় কোনো ঘাটতি নেই

[৩০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

এই লড়াইয়ে যতদিন আমরা বিশ্বস্ত থাকব আমাদের জন্য ফলাফল নিশ্চিত

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিত্রাণের শিরস্ত্র আমাদের নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করবে

শয়তানের “অগ্নিবাণ” প্রতিহত করতে বিশ্বাসের ঢাল ব্যবহার করুন

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন”

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতায় আমাদের বিশ্বাস রাখা উচিত