সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘বিশ্বের কেন্দ্রে’ সমবেত হওয়া

‘বিশ্বের কেন্দ্রে’ সমবেত হওয়া

‘বিশ্বের কেন্দ্রে’ সমবেত হওয়া

আপনি কি কখনও এই কথাগুলো শুনেছেন, “তে পিতো ও তে হেনুয়া”? ইস্টার দ্বীপের মূল ভাষা, রাপা নুইয়ে এটার অর্থ হল “বিশ্বের কেন্দ্র।” কোন বিষয়টা এখানে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনকে এতটা বিশেষ করে তুলেছিল?

 বিচ্ছিন্ন, রহস্যময়, অসাধারণ। এগুলো হল কয়েকটা শব্দ, যা ইস্টার দ্বীপ বা রাপা নুইকে—এর অধিবাসীরা যেভাবে এটাকে ডেকে থাকে—বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বাস্তবিকই, এটা এক বিচ্ছিন্ন এলাকা, যা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বেশ দূরে, চিলির সান্টিয়াগো থেকে ৩,৭৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৮৮৮ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর এটা চিলির এক প্রদেশ হয়ে উঠেছিল।

১৬৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ত্রিভূজাকৃতি দ্বীপ মূলত তিনটে মৃত আগ্নেয়গিরির দ্বারা গঠিত। বস্তুত, প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক দ্বীপের মতো এই দ্বীপটাও একইভাবে সমুদ্রের নিচের প্রকাণ্ড পর্বতগুলোর চূড়াতে তৈরি। সমগ্র দ্বীপটা এক প্রাকৃতিক স্মৃতিসৌধ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা তার রহস্যময় পাথরের বিভিন্ন মূর্তি মোয়াই এর জন্য সর্বাধিক পরিচিত। *

আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো ছাড়াও, ইস্টার দ্বীপে নানা রকম খাদ্যের সম্ভারও রয়েছে। এখানে আনারস, আভোকাডো, পেঁপে এবং নয় রকমের কলা পাওয়া যায়। আর সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন রকমের মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্য পাওয়া যায়।

ইস্টার দ্বীপের আবহাওয়া মৃদুমন্দ এবং সময়ে সময়ে বৃষ্টি হয় ও রংধনু দেখা যায়, যা পর্যটকদের বিশুদ্ধ বাতাস ও চমৎকার দৃশ্য দেখার সুযোগ দেয়। বর্তমানে এখানকার অধিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৩,৮০০ জন। এখনকার অধিবাসীরা প্রথম ঔপনিবেশিকদের বংশধর, সেইসঙ্গে এদের মধ্যে ইউরোপ ও চিলির অধিবাসী এবং অন্যান্য জাতির লোকেরা রয়েছে। ইউরোপ ও এশিয়া থেকে শত শত পর্যটক দ্বীপটা পরিদর্শন করতে আসে, যা পর্যটনকে অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে।

রাজ্যের বীজ প্রথম বপন করা হয়

যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৮২ (ইংরেজি) রিপোর্ট করেছিল: “কিছু সময়ের জন্য ইস্টার দ্বীপে আমাদের মাত্র একজন প্রকাশক ছিলেন। [চিলির] শাখা অফিসের একজন মিশনারি বোনের সঙ্গে চিঠির দ্বারা যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করা হয়েছিল। যদিও তিনি সেই সময় চিলিতে ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু আমাদের কাছে এখনও দ্বীপে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার গ্রাহকদের রেকর্ড রয়েছে। আমরা বেশ অবাক হয়েছিলাম যখন ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে আমরা একজন আগ্রহী ব্যক্তির কাছ থেকে বহু দূরের একটা টেলিফোন পাই, যিনি জানতে চেয়েছিলেন যে, স্মরণার্থ সভা কখন উদ্‌যাপন করা হবে। পরে সেই বছরেই এক বিবাহিত দম্পতি ভালপারাইজো থেকে সেখানে চলে আসে এবং তারা আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করে চলে। ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসে এই দ্বীপে প্রথমবারের মতো স্মরণার্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আর সেখানে ১৩ জন উপস্থিত ছিল। আমরা কতই না আনন্দিত যে, এই বিচ্ছিন্ন এলাকায় ‘সুসমাচার’ পৌঁছাচ্ছে!”

পরে ১৯৯১ সালের ৩০শে জানুয়ারি শাখা অফিস, ডারিয়ো এবং উইনি ফারনানডেস নামে এক বিশেষ অগ্রগামী দম্পতিকে সেই দ্বীপে পাঠিয়েছিল। ভাই ফারনানডেস স্মরণ করে বলেন: “পাঁচ ঘন্টা বিমানে যাত্রা করার পর আমরা এই গ্রহের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন স্থানে গিয়ে পৌঁছাই, এমন এক সংস্কৃতি, যা রহস্যে পূর্ণ।” একজন স্থানীয় ভাই এবং একজন বোন, যিনি তার দুই ছেলেকে নিয়ে সম্প্রতি সেখানে এসেছিলেন, তাদের সাহায্যে সঙ্গে সঙ্গে সভাগুলো ও প্রচার কাজ সংগঠিত করা হয়েছিল। পলিনেশীয় সংস্কৃতিতে সাধারণ এমন পরিবারের চাপ, ধর্মের প্রতি আসক্তি এবং নির্দিষ্ট জীবনযাত্রা থাকা সত্ত্বেও, তারা তাদের প্রচেষ্টায় যিহোবার আশীর্বাদ লক্ষ করেছিল। ভাই ও বোন ফারনানডেস এখন আর বিশেষ অগ্রগামী নয় কিন্তু তারা এই দ্বীপেই থেকে গেছে, যেখানে তারা তাদের ছেলেকে মানুষ করে তুলছে, যার জন্ম সেই দ্বীপেই হয়েছে। আজকে, সেখানে ৩২ জন আনন্দিত রাজ্য প্রকাশক রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে রাপা নুইয়ের স্থানীয় অধিবাসীরা এবং সেই লোকেরা, যারা সেই দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে বা যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য সেই দ্বীপে চলে এসেছে।

এক সীমা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি

দ্বীপ ও মহাদেশের মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকায় বছরে তিন বার এই মণ্ডলী বিশেষ সম্মেলন দিন, সীমা সম্মেলন ও জেলা সম্মেলন কার্যক্রমগুলোর ভিডিও ক্যাসেট পায়। কিন্তু ২০০০ সালের শেষ দিকে, প্রথম বারের মতো সেখানে তাদের নিজস্ব সম্মেলন করার বিষয়টা নিয়ে চিলির শাখা কমিটি বিবেচনা করেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে একটা সীমা সম্মেলন অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য চিলির বিভিন্ন জায়গা থেকে নির্দিষ্ট কিছু ভাইবোনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিমান ব্যবস্থার তালিকা সুবিধাজনক না থাকায় সম্মেলন রবিবার ও সোমবারে অনুষ্ঠিত হয়।

আমন্ত্রিত ৩৩ জন অতিথি সেই বিচ্ছিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম সীমা সম্মেলনে যোগ দিতে দ্বীপে যাত্রা করার ব্যাপারে বেশ রোমাঞ্চিত ছিল। দীর্ঘসময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে বিমানে যাত্রার পর, বিমানবন্দরে অপেক্ষারত স্থানীয় ভাইদের দ্বারা অভ্যর্থনা পেয়ে অতিথিরা স্বস্তি পেয়েছিল। অতিথিদের সুন্দর পুষ্পহার (ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি মালা) দিয়ে অভ্যর্থনা করা হয়েছিল, যেটা ছিল দ্বীপের এক আদর্শ উপহার। এরপর তাদেরকে তাদের জন্য আয়োজিত বাসস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলোতে এক সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের পর, যারা সম্মেলনের কার্যক্রমে অংশ নেবে, তারা সকলে কিংডম হলে মিলিত হয়েছিল।

এক অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে প্রচারণা

সম্মেলনস্থলে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় কিছু অতিথি রেডিওতে একজন স্থানীয় যাজককে তাদের পরিদর্শনের বিষয়ে মন্তব্য করতে শুনে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল। যাজক মহাদেশ থেকে আসা অতিথিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যারা এই জগতের শেষ যা আসতে চলেছে, সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য লোকেদের ঘরে ঘরে সাক্ষাৎ করবে। যদিও তিনি অতিথিদের কথা না শোনার জন্য তার গির্জার সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু তার ঘোষণাই সেই দ্বীপে যিহোবার সাক্ষিদের এক বিরাট দলের উপস্থিতি সম্বন্ধে প্রচারণা করতে সাহায্য করেছিল। এটা দ্বীপের অধিবাসীদের মধ্যে প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছিল। পরবর্তী দিনগুলোতে অতিথিরা কৌশলে তাদের কাছে সুসমাচারের উৎসাহজনক বার্তা জানিয়েছিল।

সম্মেলন শুরু হয়

রবিবার সকালে, সম্মেলনের প্রথম দিনে যোগ দেওয়ার জন্য যখন অতিথিরা পৌঁছায়, তখন তাদের অভ্যর্থনা জানাতে স্থানীয় ভাইয়েরা কিংডম হলের প্রবেশদ্বারে অপেক্ষা করছিল। “ইয়রানা কই! ইয়রানা কই!” “স্বাগতম!” কিছু বোন ঐতিহ্যগত পোশাক পরেছিল ও হুবহু পলিনেশীয় ধাঁচে তাদের চুলে ফুল লাগিয়েছিল।

কার্যক্রম শুরুর আগে এক মনোরম যন্ত্রসংগীতের পর একশো জনের কণ্ঠ “অটল হোন, স্থির হোন!” গানে অংশ নিয়েছিল, যা সেই দ্বীপে এর আগে আর কখনও শোনা যায়নি। সভাপতি যখন তাদের স্থানীয় ভাষা রাপা নুইয়ে এক উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, তখন স্থানীয় ভাইদের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছিল। দুপুরের বিরতির সময় তিন জন নতুন সাক্ষি ঈশ্বরের কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। যখন প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ হয়েছিল, তখন সকলে যিহোবার ও সমগ্র ভ্রাতৃসমাজের আরও নিকটবর্তী বোধ করেছিল।—১ পিতর ৫:৯.

সকালে সাক্ষ্যদান

দ্বীপে বিশেষ পরিস্থিতিগুলোর কারণে সীমা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম দুপুরের খাবারের পর শুরু হয়েছিল। তাই, অতিথিরা সেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করেছিল এবং সকালের সময়টা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের জন্য কোন অভিজ্ঞতাগুলো অপেক্ষা করছিল?

আট ছেলেমেয়ে রয়েছে এমন একজন বয়স্কা মহিলা, সাক্ষিদের বলেছিলেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না কারণ তিনি একজন ক্যাথলিক। তারা যখন তাকে বলেছিল যে, তারা সেই সমস্যাগুলো যেমন নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার বা পারিবারিক সমস্যা, যেগুলোর মুখোমুখি প্রত্যেকে হয়, সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চায়, তখন তিনি শুনতে রাজি হয়েছিলেন।

একজন স্থানীয় বয়স্কা মহিলা এক সাক্ষি দম্পতিকে রুক্ষভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। তিনি তাদের মহাদেশের সেই লোকেদের কাছে গিয়ে কথা বলার জন্য বলেছিলেন, যারা অন্যদের প্রতি অতি নিষ্ঠুর। সেই দম্পতি তাকে বলেছিল যে, ‘রাজ্যের সুসমাচারের’ বার্তা প্রত্যেককে জানানো হয় এবং দ্বীপে আসার পিছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটা সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া, যা ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি করতে সকলকে সাহায্য করবে। (মথি ২৪:১৪) তারা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, তিনি এক পরমদেশতুল্য অবস্থায় এক দীর্ঘজীবন উপভোগ করবেন কি না, যেটা ঠিক দ্বীপের জীবনের মতোই কিন্তু অসুস্থতা ও মৃত্যু ছাড়া। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখগুলো দ্বীপে কত বছর ধরে রয়েছে, সেই বিষয়ে তার সঙ্গে যুক্তি করার পর তিনি মানুষের আয়ু কত অল্পদিনের তা ধ্যান করে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কেন আমরা এত অল্পসময় বেঁচে থাকি?” গীতসংহিতা ৯০:১০ পদ পড়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

সেই সময় সাক্ষিরা হঠাৎ পাশের বাড়ি থেকে চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুনতে পায়। যদিও তারা এই চ্যাঁচামেচির কারণ বুঝতে পারেনি কিন্তু সেই মহিলা তাদের বলেছিলেন যে, প্রতিবেশীরা তাদের গালাগালি করছে এবং পরিষ্কারভাবে জানাতে চাইছে যে, তারা চায় না তাদের বাড়িতে সাক্ষিরা আসুক। তবে, এই মহিলা ছিলেন “নুয়া,” বা পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়ে। যেহেতু তার বাবা মারা গিয়েছিলেন, তাই পরিবারের জন্য কী সবচেয়ে মঙ্গলজনক, সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তার ছিল। তার আত্মীয়দের সামনে তিনি স্থানীয় ভাষায় সাক্ষিদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং সদয়ভাবে সেই প্রকাশনাগুলো গ্রহণ করেছিলেন, যেগুলো তাকে দেওয়া হয়েছিল। সেই সপ্তাহেরই শেষের দিকে, গাড়ি চালিয়ে সাক্ষিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, তিনি তার ভাইকে গাড়ি থামাতে বলেছিলেন। ভাইয়ের চোখেমুখে বিরক্তির স্পষ্ট ভাব ফুটে ওঠা সত্ত্বেও, তিনি সাক্ষিদেরকে বিদায় জানিয়েছিলেন এবং তাদের পরিচর্যায় সাফল্য কামনা করেছিলেন।

যদিও দ্বীপের কিছু অধিবাসী মহাদেশ থেকে আসা সাক্ষিদের প্রচারিত বার্তা প্রথম প্রথম প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে মনে হয়েছিল কিন্তু অতিথিদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রাপা নুইয়ের অধিবাসীরা স্বভাবগতভাবে দয়ালু ও বন্ধুত্বপরায়ণ। তাদের মধ্যে অধিকাংশই আনন্দের সঙ্গে সুসমাচার শুনেছিল। আসলে, দ্বীপে বাপ্তাইজিত ২০ জন সাক্ষির মধ্যে ৬ জন হল স্থানীয় অধিবাসী। তাদের মধ্যে একজন, তার স্ত্রীর সঙ্গে যখন পাশের রুমে বাইবেল অধ্যয়ন করা হতো, তখন তা শুনে প্রথমে বাইবেলের সত্য শিখেছিলেন। তিনি এবং তার স্ত্রী এখন বাপ্তাইজিত সাক্ষি আর তিনি সেই মণ্ডলীতে এখন একজন পরিচারক দাস।

আধ্যাত্মিক কার্যক্রম চলতে থাকে

দুপুরের বিরতির পর, দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। আবার ৩২ জন স্থানীয় ভাইবোন ও ৩৩ জন অতিথি সহ বেশ অনেক আগ্রহী ব্যক্তি মিলিত হয়। প্রায় একশো জন কার্যক্রম শুনেছিল, যার মধ্যে “প্রেম ও বিশ্বাস দিয়ে যেভাবে জগৎকে জয় করা যায়” শিরোনামের জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতাও ছিল। বস্তুত, উপস্থিত সকলে প্রেমের এক জীবন্ত নমুনা দেখছিল, যা যিহোবার লোকেদের মধ্যে বিদ্যমান, এমনকি বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকেদের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে।—যোহন ১৩:৩৫.

সীমা সম্মেলনের সময়, সীমা ও জেলা অধ্যক্ষরা অগ্রগামী পরিচারকদের সঙ্গে এক বিশেষ সভা করেছিল। দ্বীপের তিন জন নিয়মিত অগ্রগামীর সঙ্গে অতিথি হিসেবে আসা ভাইবোন, যারা নিয়মিত বা বিশেষ অগ্রগামী তারাও যোগ দিয়েছিল। সকলে প্রচুর উৎসাহ লাভ করেছিল।

পরদিন স্থানীয় ভাইদের কয়েক জন যারা টুর গাইড হিসেবে কাজ করে, তারা অতিথিদের দ্বীপের বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল। তারা পাথরের এক খাত, যেখানে মোয়াই খোদাই করা হয়েছিল সেখানে ও সেইসঙ্গে আগ্নেয়গিরিগুলো যেখানে প্রাচীন প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হতো সেখানে এবং অবশ্যই সোনালি বালুকাময় সুন্দর আনাকেনা সৈকতে গিয়েছিল, যেখানে দ্বীপের প্রথম ঔপনিবেশিকরা জাহাজ থেকে অবতরণ করেছিল। *

স্থানীয় ভাইদের সঙ্গে মেলামেশা করার শেষ সুযোগ হয়েছিল মণ্ডলীর বই অধ্যয়নে। সভার পর স্থানীয় সাক্ষিরা অতিথিদের জন্য আদর্শ খাবারের আয়োজন করে অবাক করে দিয়েছিল। পরে, তাদের বৈশিষ্ট্যসূচক পোশাক পরে তারা এক সুন্দর লোকনৃত্য পরিবেশন করেছিল। অতিথিরা ও সেইসঙ্গে রাপা নুইয়ের ভাই ও বোনেরা নিশ্চিত ছিল যে, সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য তাদের প্রচেষ্টাগুলো সার্থক হয়েছিল।

অতিথি হিসেবে আসা সকলে তাদের বিচ্ছিন্ন ভাইবোন, যাদের সঙ্গে এক রোমাঞ্চকর সপ্তাহ তারা কাটিয়েছিল, তাদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। তাই দ্বীপ ছেড়ে চলে আসা খুবই বেদনাদায়ক ছিল। তারা যে-নতুন বন্ধু লাভ করেছিল তাদের কথা ও সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক উৎসাহের কথা তারা সবসময় মনে রাখবে। বিমানবন্দরে স্থানীয় ভাইয়েরা তাদের নিজেদের তৈরি ঝিনুকের মালা অতিথিদের পরিয়ে দিয়েছিল।

অতিথিরা যাওয়ার আগে প্রতিজ্ঞা করেছিল: “ইয়রানা! আউ হি হকি মাই ই রাপা নুই ই-ই,” যার মানে: “বিদায়! আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসব, রাপা নুই।” হ্যাঁ, অসাধারণ, বিচ্ছিন্ন, রহস্যময় ও বন্ধুত্বপূর্ণ ইস্টার দ্বীপের নতুন বন্ধু ও আধ্যাত্মিক পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে আসার জন্য তারা আকুল আকাঙ্ক্ষী!

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সচেতন থাক! পত্রিকা দেখুন।

^ রানো রারাকু আগ্নেয়গিরির মুখগুলোতে অনেক খোদাই করা পাথর পাওয়া গিয়েছিল। যারা দ্বীপকে শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করত, তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা শুরু করার স্থান রানো কওতে অবস্থিত ছিল। প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত ছিল পাহাড়ের চূড়া থেকে নামা, একটা ছোট দ্বীপে সাঁতার কেটে যাওয়া, একটা স্থানীয় পাখির ডিম সংগ্রহ করা, সাঁতার কেটে মূল দ্বীপে আবার ফিরে আসা এবং ডিমটাকে না ভাঙা অবস্থায় নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা।

[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স]

ইস্টার দ্বীপে সাক্ষ্য দেওয়া

এই স্মরণীয় সম্মেলনের প্রায় দুবছর আগে একজন সীমা অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী সেই দ্বীপ পরিদর্শন করেছিল এবং অনেক সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা করুন যে, তারা কত অবাক হয়ে গিয়েছিল যখন যে-বোন তাদেরকে তাদের জন্য আয়োজিত বাসস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, ১৬ বছর আগে যখন তিনি একজন কিশোরী ছিলেন তখন দক্ষিণ চিলিতে তারা তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিল। পরে সেই বীজ রাপা নুইয়ে এসে ফল উৎপন্ন করেছিল।

এ ছাড়া, তাদের এই চমৎকার অভিজ্ঞতাও হয়েছিল: স্মারক বস্তুর দোকানের একজন মালিক পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) এবং একটি বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটি নিয়েছিলেন, দুটো প্রকাশনাই যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত। তারা যখন তার কাছে পুনর্সাক্ষাৎ করেছিল, তখন তিনি জানিয়েছিলেন যে, তিনি বাইবেলটি পড়তে পারেননি। তারা তার কাছে ফ্রেঞ্চ ভাষার একটি বাইবেল ছেড়ে গিয়েছিল, স্প্যানিশে নয়! সমস্যাটা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান হয়েছিল এবং তিনি স্থানীয় সাক্ষিদের এবং অবশ্যই তার নিজের ভাষার বাইবেলের সাহায্যে বুঝতে পেরেছিলেন যে, আসলে বাইবেল বোঝা তেমন কঠিন নয়।

[২২ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ইস্টার দ্বীপ

চিলি

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সীমা সম্মেলনে বাপ্তাইজিতদের মধ্যে দুজন

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

রানো ইরারাকু আগ্নেয়গিরির ঢাল; ইনসেট: গুয়াইয়াবা নামের বুনো ফল যা দ্বীপে জন্মায়