সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘পর্ব্বতমালা হইতে তুমি মহিমান্বিত’

‘পর্ব্বতমালা হইতে তুমি মহিমান্বিত’

যিহোবার সৃষ্টির চমৎকারিত্ব

‘পর্ব্বতমালা হইতে তুমি মহিমান্বিত’

 ফুজি পর্বতের একেবারে ওপর থেকে সূর্যোদয় দেখা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আগুনরঙা সূর্য দিগন্তে আকস্মিকভাবে বিস্ফোরিত হয়ে সাদা তুষার এবং ধূসররঙা লাভাময় শিলাখণ্ডের ওপর জ্বলজ্বল করছে। আরেকটা দিন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্বতের স্পষ্ট ছায়া অতি দ্রুত মাইলের পর মাইল পাহাড় এবং উপত্যকার ওপর ছড়িয়ে পড়ে।

ফুজি—একসময় এমন অক্ষরে লেখা হতো, যার অর্থ “অসমকক্ষ”—পর্বতের মতো অপূর্ব পর্বতগুলো, আমাদের বিস্ময়াভিভূত করতে কখনও ব্যর্থ হয় না। আসলে, এদের বিশাল আকারের কাছে আমরা হয়তো নিজেদের অতি ক্ষুদ্র বলে মনে করি! পর্বতের অপূর্ব সৌন্দর্য এমনই যে, অনেকে মনে করে, বেশির ভাগ সময়ই কুয়াশা এবং মেঘে আবৃত সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলো হল দেবতাদের আবাস স্থান।

পর্বতশৃঙ্গগুলোর দ্বারা প্রকৃতই প্রশংসিত একমাত্র ঈশ্বর হলেন তাদের দক্ষ সৃষ্টিকর্তা যিহোবা। একমাত্র তিনিই হলেন, “পর্ব্বতগণের নির্ম্মাতা।” (আমোষ ৪:১৩) পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ হল পার্বত্য এলাকা আর ঈশ্বর যখন আমাদের গ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি যে-শক্তি প্রয়োগ করেছিলেন, তা অবশেষে অসাধারণ শৃঙ্গ এবং পর্বতশ্রেণীর উৎপন্ন করেছে। (গীতসংহিতা ৯৫:৪) উদাহরণস্বরূপ, মনে করা হয় যে, মাটির গভীরে মহাপরিবর্তনের এবং ভূত্বকের স্তর আন্দোলনের ফলে হিমালয় এবং আন্দিজ পর্বতশ্রেণী গঠিত হয়েছে।

কীভাবে এবং কেন পর্বত অস্ত্বিত্বে এসেছে, তা আমরা মানুষেরা পুরোপুরি বুঝতে পারি না। বাস্তবিকই, আমরা ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োবকে জিজ্ঞেস করা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে অসমর্থ: “যখন আমি [যিহোবা] পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? . . . তাহার চুঙ্গী সকল কিসের উপরে স্থাপিত হইল?”—ইয়োব ৩৮:৪-৬.

কিন্তু, আমরা জনি যে আমাদের জীবন পর্বতের ওপর নির্ভর করে। এগুলোকে প্রাকৃতিক জলাধার স্তম্ভ বলা হয়েছে, যেহেতু সমস্ত বড় বড় নদী পর্বতের উৎস থেকে প্রবাহিত এবং পৃথিবীর অর্ধেক লোক জলের জন্য পর্বতগুলোর ওপর নির্ভর করে। (গীতসংহিতা ১০৪:১৩) নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকা অনুসারে, “খাদ্য জোগায় বিশ্বের এমন ২০টা প্রধান উদ্ভিদের মধ্যে ছয়টার উৎপত্তি পর্বতে।” ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।”—গীতসংহিতা ৭২:১৬; ২ পিতর ৩:১৩.

পর্বতের কথা উল্লেখ করলেই অনেকের ইউরোপের আল্পস পর্বতমালার বিষয়ে মনে আসে। এখানে দেখানো চিভিটা পর্বত সহ এই শৃঙ্গগুলো, এদের সৃষ্টিকর্তার আনন্দপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করে। (গীতসংহিতা ৯৮:৮) এরা যিহোবার প্রশংসা করে, যিনি “নিজ শক্তিতে পর্ব্বতগণের স্থাপনকর্ত্তা”—গীতসংহিতা ৬৫:৬. *

আল্পস পর্বতমালার চমৎকারিত্ব, এগুলোর বরফে ঢাকা চূড়া ও শৈলশিরা, এদের তুষারাবৃত ঢালুস্থান, এদের উপত্যকা এবং হ্রদ ও তৃণভূমি সত্যিই সশ্রদ্ধ ভয় উদ্রেককারী। রাজা দায়ূদ যিহোবাকে এভাবে শনাক্ত করেছিলেন, “তিনি পর্ব্বতগণের উপরে তৃণ উৎপাদন করেন।”—গীতসংহিতা ১৪৭:৮.

পাহাড়ের সারি—যেমন চীনের এই গুয়িলিন পাহাড়গুলো—হয়তো আল্পস পর্বতমালার চেয়ে কম আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে কিন্তু সেগুলো অনন্য সুন্দর। লি নদীর পাশে, অভিক্ষিপ্ত সারি সারি চুনাপাথরের চূড়া দর্শকদের তাদের সৌন্দর্য দিয়ে আকৃষ্ট করে। এই কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড় থেকে স্বচ্ছ জলের ধারা বের হয়ে আসতে দেখা একজনকে হয়তো গীতরচকের এই কথাগুলো মনে করিয়ে দিতে পারে: “তিনি [যিহোবা] তলভূমিতে প্রবাহ প্রেরণ করিয়া থাকেন; সে সকল পর্ব্বতগণের মধ্যে ভ্রমণ করে।”—গীতসংহিতা ১০৪:১০.

উপযুক্তভাবেই আমরা পর্বতগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হই কারণ সেগুলোকে আমরা মানবজাতির মঙ্গল ও উপভোগের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রেমময় ব্যবস্থার অপূর্ব অংশ বলে স্বীকার করি। কিন্তু, পর্বতগুলো যদিও অসাধারণ, তা যিহোবার মহিমার সমকক্ষ নয়। তিনি সত্যিই “পর্ব্বতমালা হইতে . . . মহিমান্বিত।”—গীতসংহিতা ৭৬:৪.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৪ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি) মার্চ/এপ্রিল দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

বিশ্বের শতকরা দশ ভাগ জনসংখ্যা পার্বত্য এলাকাগুলোতে বাস করে। কিন্তু, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে, তাদের জন্য সেটা অজেয় কোনো বাধা নয়। এই খ্রিস্টান পরিচারকরা অনেক উঁচু এলাকায় খুবই ব্যস্ত রয়েছে। আর “আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে।”—যিশাইয় ৫২:৭.

“উচ্চ পর্ব্বত সকল বনচ্ছাগের আবাস,” গীতরচক গেয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ১০৪:১৮) বন্য বা পার্বত্য ছাগ, যেমন চমৎকার শিংওয়ালা নুবিয়ান আইবেক্স হল সমস্ত পর্বতবাসীর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ়পদ প্রাণী। এরা যে-সংকীর্ণ শৈলশিরা দিয়ে চলাচল করে, সেগুলো এত সরু যে অতিক্রম করা অসম্ভব বলে মনে হয়। আইবেক্স প্রজাতি দুর্গম স্থানগুলোতে বাস করার জন্য সুসজ্জিত। খুরের গঠন এর আংশিক কারণ। ছাগলের ওজন অনুযায়ী খুরের রন্ধ্র প্রসারিত হতে পারে, ফলে এক সরু শৈলশিরার ওপর দাঁড়ানোর বা চলাচলের সময় সেটাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে পারে। সত্যিই, আইবেক্স হল নকশার এক সেরা শিল্পকর্ম!

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফুজি পর্বত, হনশু, জাপান