সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর”

“সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর”

“সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর”

“সর্ব্ববিষয়ে মিতাচারী হও, . . . সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর।”২ তীমথিয় ৪:৫.

১. যিশু তাঁর অনুসারীদের কোন দায়িত্ব দিয়েছিলেন?

 যিহোবার নাম এবং উদ্দেশ্যগুলো সারা পৃথিবীতে ঘোষিত হচ্ছে। কারণ ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত লোকেরা সেই দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, যা যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের যখন এই কথাগুলো বলেছিলেন, তখন দিয়েছিলেন: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.

২. অধ্যক্ষ তীমথিয় কোন নির্দেশনা পেয়েছিলেন এবং খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের জন্য তাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার একটা উপায় কী?

যিশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরা সেই দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌল তাঁর সহখ্রিষ্টান অধ্যক্ষ তীমথিয়কে জোরালোভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর, তোমার পরিচর্য্যা সম্পন্ন [“পূর্ণরূপে সম্পন্ন,” NW] কর।” (২ তীমথিয় ৪:৫) আজকে, একজন অধ্যক্ষ যে-একটা উপায়ে তার পরিচর্যা সম্পন্ন করতে পারেন, সেটা হল এমন একজন উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী হয়ে, যিনি নিয়মিতভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, মণ্ডলীর বই অধ্যয়ন অধ্যক্ষের প্রচার কাজে নেতৃত্ব নেওয়ার এবং অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিতৃপ্তিদায়ক বিশেষ সুযোগ রয়েছে। পৌল সুসমাচার ঘোষণা করার বিষয়ে তার ব্যক্তিগত দায়িত্ব পরিপূর্ণ করেছিলেন এবং তিনি পরিচর্যার জন্য অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে সাহায্য করেছিলেন।—প্রেরিত ২০:২০; ১ করিন্থীয় ৯:১৬, ১৭.

অতীতের উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারকরা

৩, ৪. একজন সুসমাচার প্রচারক হিসেবে ফিলিপের কোন কোন অভিজ্ঞতা হয়েছিল?

প্রাথমিক খ্রিস্টানরা উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারক হিসেবে পরিচিত ছিল। সুসমাচারক প্রচারক ফিলিপের কথা বিবেচনা করুন। তিনি ছিলেন ‘সুখ্যাতিপন্ন এবং আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ সাত জনের’ মধ্যে একজন, যাদেরকে যিরূশালেমের গ্রিকভাষী ও ইব্রীয়ভাষী খ্রিস্টান বিধবাদের মধ্যে পক্ষপাতহীনভাবে দৈনন্দিন খাদ্য বিতরণের কাজের জন্য বাছাই করা হয়েছিল। (প্রেরিত ৬:১-৬) সেই বিশেষ পরিচর্যা শেষ হয়ে যাওয়ার এবং তাড়নার কারণে প্রেরিতরা ছাড়া সকলে ছড়িয়ে পড়ার পর, ফিলিপ শমরিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সুসমাচার ঘোষণা করেছিলেন ও পবিত্র আত্মার দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে মন্দ দূতেদের বের করেছিলেন এবং খঞ্জ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন। অনেক শমরীয় ব্যক্তি রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করেছিল এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। এই কথা শুনতে পেয়ে, যিরূশালেমের প্রেরিতরা প্রেরিত পিতর ও যোহনকে শমরিয়াতে পাঠান, যাতে নতুন বাপ্তাইজিত বিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মা পেতে পারে।—প্রেরিত ৮:৪-১৭.

ঈশ্বরের আত্মা এরপর ফিলিপকে ইথিওপীয় নপুংসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঘসার পথের দিকে পরিচালিত করে। যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে ফিলিপের স্পষ্ট ব্যাখ্যার পর, “ইথিয়পীয়দের কান্দাকি রাণীর অধীন উচ্চপদস্থ” এই ব্যক্তি যিশু খ্রিস্টের ওপর বিশ্বাস করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:২৬-৩৮) এরপর ফিলিপ অস্‌দোদে এবং পরে কৈসরিয়াতে যান, ভ্রমণকালে “নগরে নগরে . . . সুসমাচার প্রচার” করেন। (প্রেরিত ৮:৩৯) একজন সুসমাচার প্রচারকের কাজ করার বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই তিনি এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন!

৫. কীসের জন্য ফিলিপের চার মেয়ে বিশেষভাবে পরিচিত ছিল?

প্রায় ২০ বছর পর তখনও ফিলিপ কৈসরিয়াতে পরিচর্যায় সক্রিয় ছিলেন। পৌল এবং লূক যখন তার বাড়িতে থেকেছিল, তখন তার “চারিটী কুমারী কন্যা ছিলেন, তাঁহারা ভাববাণী বলিতেন।” (প্রেরিত ২১:৮-১০) স্পষ্টতই, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তাদের ভালভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, পরিচর্যার জন্য তাদের উদ্যোগ ছিল আর এমনকি ভাববাণী বলার বিশেষ অধিকার তারা পেয়েছিল। পরিচর্যার জন্য বাবামার উদ্যোগ আজকে ছেলেমেয়েদের ওপর উত্তম প্রভাব ফেলতে পারে, উদ্যোগী সুসমাচার প্রচার কাজকে তাদের সারাজীবনের কাজ হিসেবে নিতে পরিচালিত করতে পারে।

আজকের উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারকরা

৬. প্রথম শতাব্দীর সুসমাচার প্রচারকরা কোন সাফল্য লাভ করেছিল?

যিশু তাঁর মহান ভবিষ্যদ্বাণীতে আমাদের দিন এবং শেষকাল সম্বন্ধে নির্দেশ করে ঘোষণা করেছিলেন: “অগ্রে সর্ব্বজাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক।” (মার্ক ১৩:১০) “সমুদয় জগতে” সুসমাচার প্রচারিত হওয়ার পর শেষ আসবে। (মথি ২৪:১৪) পৌল এবং প্রথম শতাব্দীর অন্যান্য সুসমাচার প্রচারকরা যখন সুসমাচার ঘোষণা করেছিল, তখন অনেকে বিশ্বাসী হয়েছিল এবং পুরো রোমীয় সাম্রাজ্যের একটার পর একটা জায়গায় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। এই মণ্ডলীগুলোতে সেবা করার জন্য নিযুক্ত প্রাচীনরা তাদের ভাই ও বোনদের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নিয়েছিল এবং দূরদূরান্তে প্রচার কাজ বিস্তৃত করেছিল। সেই সময়ে যিহোবার বাক্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং প্রবল হচ্ছিল, ঠিক যেমন আজকে লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষি সুসমাচার প্রচারের কাজ করছে বলে হচ্ছে। (প্রেরিত ১৯:২০) আপনি কি যিহোবার সেই আনন্দিত প্রশংসাকারীদের মধ্যে একজন?

৭. আজকে রাজ্য ঘোষণাকারীরা কী করছে?

বর্তমান দিনের অনেক রাজ্য ঘোষণাকারী সুসমাচার প্রচার কাজে তাদের অংশকে আরও বাড়ানোর জন্য সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করছে। হাজার হাজার ব্যক্তি মিশনারি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি নিয়মিত ও সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নিয়েছে। আর সেই সমস্ত নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়ের দ্বারা কত উত্তম কাজই না সম্পাদিত হচ্ছে, যারা উদ্যোগী রাজ্য প্রকাশক হিসেবে সেবা করছে! সত্যিই, যিহোবার সমস্ত লোক খ্রিস্টান সুসমাচার প্রচারক হিসেবে একযোগে তাঁকে সেবা করার সময় তাঁর কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ উপভোগ করছে।—সফনিয় ৩:৯.

৮. এখন কোন চিহ্ন দেওয়ার কাজ হচ্ছে এবং কারা তা করছে?

ঈশ্বর যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীদের সারা পৃথিবীতে সুসমাচার ঘোষণা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এই সুসমাচার প্রচার কাজে তাদের পক্ষে রয়েছে খ্রিস্টের ‘আরও মেষের’ বৃদ্ধিরত ব্যক্তিরা। (যোহন ১০:১৬) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী জীবনরক্ষাকারী এই কাজ, যা এখন করা হচ্ছে, সেটাকে ঘৃণ্য কাজের বিষয়ে যারা দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়, তাদের প্রত্যেকের কপালে চিহ্ন দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। শীঘ্রই দুষ্টদের ধ্বংস করা হবে। এই সময়ের মধ্যে, পৃথিবীর অধিবাসীদের কাছে জীবনরক্ষাকারী সত্য নিয়ে যাওয়া কতই না এক বিশেষ সুযোগ।—যিহিষ্কেল ৯:৪-৬, ১১.

৯. পরিচর্যায় নতুন ব্যক্তিদের কীভাবে সাহায্য করা যেতে পারে?

আমরা যদি কিছু সময়ের জন্য সুসমাচার প্রচার কাজে রত থাকি, তা হলে আমরা খুব সম্ভবত মণ্ডলীতে নতুন ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য কিছু করতে পারি। মাঝে মাঝে আমরা হয়তো তাদের আমাদের সঙ্গে পরিচর্যায় নিয়ে যেতে পারি। যারা প্রাচীন হিসেবে সেবা করছে, তারা সহবিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে তোলার জন্য যা করতে পারে, সেগুলো সবই করতে চাইবে। নম্র অধ্যক্ষদের উত্তম প্রচেষ্টা অন্যদের উদ্যোগী এবং ফলবান সুসমাচার প্রচারক হতে অনেক সাহায্য করতে পারে।—২ পিতর ১:৫-৮.

ঘরে ঘরে সাক্ষ্য বহন করা

১০. খ্রিস্ট এবং তাঁর প্রথম শতাব্দীর অনুসারীরা পরিচর্যায় কোন উদাহরণ স্থাপন করে?

১০ যিশু খ্রিস্ট একজন সুসমাচার প্রচারক হিসেবে তাঁর অনুসারীদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেন। খ্রিস্টের এবং তাঁর প্রেরিতদের পরিচর্যা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তিনি ঘোষণা করিতে করিতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিলেন, আর তাঁহার সঙ্গে সেই বারো জন” ছিল। (লূক ৮:১) প্রেরিতদের নিজেদের বিষয়ে কী বলা যায়? সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মা বর্ষিত হওয়ার পর, “তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।”—প্রেরিত ৫:৪২.

১১. প্রেরিত ২০:২০, ২১ পদ অনুসারে প্রেরিত পৌল তার পরিচর্যায় কী করেছিলেন?

১১ প্রেরিত পৌল তাঁর উদ্যোগী সুসমাচার প্রচার কাজের ফলে ইফিষের খ্রিস্টান প্রাচীনদের বলতে পেরেছিলেন: “কোন হিতকথা গোপন না করিয়া তোমাদিগকে সকলই জানাইতে, এবং সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হই নাই।” পৌল যখন ‘ঘরে ঘরে শিক্ষা দিয়াছিলেন,’ তখন তিনি কি যিহোবার সহউপাসকদের ঘরে ঘরে গিয়েছিলেন, বিশ্বাসীদের সঙ্গে পালনার্থে সাক্ষাৎ করেছিলেন? না, কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেন: “ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস বিষয়ে যিহূদী ও গ্রীকদের নিকটে সাক্ষ্য [“পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সাক্ষ্য,” NW] দিয়া আসিতেছি।” (প্রেরিত ২০:২০, ২১) সাধারণত, যারা ইতিমধ্যেই যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত, তাদের ‘ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাসের’ বিষয়ে নির্দেশনার প্রয়োজন হবে না। পৌল যখন অবিশ্বাসীদের অনুতাপ এবং বিশ্বাস সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তখন তিনি ইফিষের খ্রিস্টান প্রাচীনদের ঘরে ঘরে পরিচর্যা সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তা করে পৌল যিশুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুকরণ করেছিলেন।

১২, ১৩. ফিলিপীয় ১:৭ পদ অনুসারে, যিহোবার লোকেরা তাদের প্রচার করার অধিকারের বিষয়ে কী করেছে?

১২ ঘরে ঘরে পরিচর্যা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে, যখন আমরা বাইবেলের বার্তা নিয়ে তাদের ঘরে যাই। লোকেদের অসন্তুষ্ট করা আমাদের ইচ্ছা নয়। কিন্তু, ঘরে ঘরে পরিচর্যা হল শাস্ত্রভিত্তিক আর ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা এভাবে সাক্ষ্য বহন করতে আমাদের পরিচালিত করে। (মার্ক ১২:২৮-৩১) ঘরে ঘরে প্রচার করার বিষয়ে আমাদের অধিকারকে ‘পক্ষসমর্থন ও প্রতিপাদন’ বা বৈধভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সহ অন্যান্য আদালতে মামলাগুলো উপস্থাপন করেছি। (ফিলিপীয় ১:৭) প্রায় অবিকার্যভাবে সেই আদালত আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নিচের রায়টা হল এক্ষেত্রে আদর্শ:

১৩ “ধর্মীয় ট্র্যাক্ট হাতে হাতে বিতরণ করা মিশনারি সুসমাচার প্রচারকদের এক পুরনো পদ্ধতি—ছাপাখানার ইতিহাস যতটা পুরনো ঠিক ততটা। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় আন্দোলনে এটা এক কার্যকারী শক্তি হয়ে এসেছে। সুসমাচার প্রচারের এই পদ্ধতি আজকেও বিভিন্ন ধর্মীয় দল বিরাট আকারে কাজে লাগায়, যে-দলগুলোর ধর্মপুস্তক বিক্রেতারা সুসমাচারের বইগুলো হাজার হাজার ঘরে নিয়ে যায় এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসের অনুগামীদের লাভ করার প্রচেষ্টা করে। . . . [যুক্তরাষ্টের সংবিধানের] প্রথম সংশোধন প্রস্তাব এর অধীনে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের এই পদ্ধতির গুরুত্ব ঠিক ততটাই রয়েছে, যতটা গির্জাগুলোতে উপাসনা এবং প্রচারবেদী থেকে প্রচার করার ক্ষেত্রে রয়েছে।—মারডক বনাম পেনসিলভানিয়া, ১৯৪৩.

কেন প্রচার করে চলব?

১৪. আমাদের পরিচর্যার ক্রমবর্ধিত ফলাফল কী হতে পারে?

১৪ ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দেওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রতিবার আমরা যখন একজন গৃহকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, তখন আমরা শাস্ত্রীয় সত্যের একটা বীজ বপন করার চেষ্টা করি। পুনর্সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে আমরা সেটাতে জল দেওয়ার চেষ্টা করি। আর এতে এক উত্তম ক্রমবর্ধিত ফলাফল হতে পারে কারণ পৌল লিখেছিলেন: “আমি রোপণ করিলাম, আপল্লো জল সেচন করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন।” (১ করিন্থীয় ৩:৬) তাই, আসুন এই আস্থা নিয়ে ‘রোপণ ও জল সেচন করিয়া’ চলি যে, যিহোবা এতে ‘বৃদ্ধি দিবেন।’

১৫, ১৬. কেন আমরা বার বার লোকেদের ঘরে যাই?

১৫ আমরা সুসমাচার প্রচারকের কাজ করি, কারণ জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। প্রচার করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের কথা শোনে তাদের রক্ষা করতে পারি। (১ তীমথিয় ৪:১৬) আমরা যদি জানতাম যে, একজন ব্যক্তির জীবন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তা হলে আমরা কি তাকে সাহায্য করার জন্য সামান্য চেষ্টা করতাম? নিশ্চয়ই না! যেহেতু পরিত্রাণ জড়িত রয়েছে, তাই আমরা লোকেদের ঘরে বার বার যাই। পরিস্থিতি অনবরত পরিবর্তিত হচ্ছে। কোনো এক সময়ে ব্যস্ততার কারণে একজন ব্যক্তি যদি না শোনেন, তা হলে তিনি হয়তো অন্য কোনো সময়ে বাইবেলের বার্তা শুনতে চাইতে পারেন। পরিবারের অন্য সদস্য হয়তো দরজা থেকে কথা বলতে পারে এবং তা হয়তো শাস্ত্রীয় আলোচনার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

১৬ শুধু তাদের পরিস্থিতিই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে গৃহকর্তাদের মনোভাবও পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মৃত্যুতে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা হয়তো একজন ব্যক্তিকে রাজ্যের বার্তা শোনার জন্য পরিচালিত করতে পারে। আমরা সেই ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিতে চাই, তার আধ্যাত্মিক প্রয়োজন সম্বন্ধে সচেতন করতে চাই এবং দেখাতে চাই যে, কীভাবে তা মেটানো যেতে পারে।—মথি ৫:৩, ৪.

১৭. আমাদের প্রচার কাজের সবচেয়ে প্রধান কারণটা কী?

১৭ ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দেওয়ার অথবা খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অন্যান্য দিকগুলোতে রত থাকার বিভিন্ন কারণের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান কারণটা হল যিহোবার নামকে জানানোর কাজে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা। (যাত্রাপুস্তক ৯:১৬; গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW) আমাদের সুসমাচার প্রচারের কাজ যখন সত্য এবং ধার্মিকতার প্রেমিকদের যিহোবার প্রশংসাকারী হওয়ার জন্য সাহায্য করে, তখন তা কত পুরস্কারদায়কই না হয়! “যুবকগণ ও যুবতী সকল; বৃদ্ধগণ ও বালক-বালিকা-সমূহ,” গীতরচক গেয়েছিলেন। “সকলে সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামের প্রশংসা করুক, কেননা কেবল তাঁহারই নাম উন্নত, তাঁহার প্রভা পৃথিবীর ও স্বর্গের উপরিস্থ।”—গীতসংহিতা ১৪৮:১২, ১৩.

সুসমাচার প্রচারকের কাজ ব্যক্তিগতভাবে আমাদের উপকৃত করে

১৮. সুসমাচার প্রচারকের কাজ করে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?

১৮ একজন সুসমাচার প্রচারকের কাজ করা ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের উপকৃত করে। সুসমাচার নিয়ে ঘরে ঘরে যাওয়া আমাদের নম্রতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যখন আমরা সদয় ব্যবহার পাই না। কার্যকারী সুসমাচার প্রচারক হওয়ার জন্য আমাদের পৌলের মতো হওয়া প্রয়োজন, যিনি ‘কতকগুলি লোককে পরিত্রাণ করিবার জন্য সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হইয়াছিলেন।’ (১ করিন্থীয় ৯:১৯-২৩) পরিচর্যার অভিজ্ঞতা আমাদের কৌশলী হতে সাহায্য করে। যিহোবার ওপর নির্ভর করে এবং উপযুক্ত শব্দ বাছাই করে আমরা পৌলের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি: “তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।”—কলসীয় ৪:৬.

১৯. সুসমাচার প্রচারকরা কীভাবে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য পায়?

১৯ এ ছাড়া, সুসমাচার প্রচারকের কাজ আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ওপর নির্ভর করতেও পরিচালিত করে। (সখরিয় ৪:৬) এর ফলে, আত্মার ফলসমূহ—“প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন”—আমাদের পরিচর্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এটা লোকেদের সঙ্গে আমাদের আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে কারণ আত্মার পরিচালনা মেনে নেওয়া সুসমাচার ঘোষণা করার সময় আমাদের প্রেম অনুশীলন করতে, আনন্দিত ও শান্তিপূর্ণ হতে, দীর্ঘসহিষ্ণু ও দয়ালু হতে, মঙ্গলভাব ও বিশ্বাস দেখাতে এবং মৃদুতা ও ইন্দ্রিয়দমন প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

২০, ২১. সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সবসময় ব্যস্ত থাকার কিছু আশীর্বাদ এবং উপকার কী?

২০ সুসমাচার প্রচারক হিসেবে আরেকটা যে-আশীর্বাদ আমাদের ওপর আসে, সেটা হল যে আমরা আরও বেশি সহানুভূতিশীল হই। লোকেরা যখন তাদের সমস্যাগুলোর কথা বলে যেমন, অসুস্থতা, বেকারত্ব, ঘরোয়া পরীক্ষাগুলো, তখন আমরা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করি না কিন্তু তাদের সঙ্গে উৎসাহজনক ও সান্ত্বনামূলক শাস্ত্রপদগুলো বন্টন করি। আমরা সেই সমস্ত লোকের বিষয়ে উদ্বিগ্ন, যারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অন্ধ কিন্তু ধার্মিকতার জন্য ভালবাসা আছে বলে মনে হয়। (২ করিন্থীয় ৪:৪) আর যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত,” তাদের আধ্যাত্মিক সাহায্য দেওয়া কী এক আশীর্বাদ!—প্রেরিত ১৩:৪৮.

২১ সুসমাচার প্রচার কাজে নিয়মিত অংশ নেওয়া আমাদের মনকে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করে। (লূক ১১:৩৪) নিশ্চিতভাবেই সেটা উপকারী, তা না হলে আমরা বস্তুগত প্রলোভনগুলোর প্রতি বশীভূত হয়ে পড়তে পারি, যা এই জগতে খুবই সাধারণ। প্রেরিত যোহন খ্রিস্টানদের জোরালোভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সবসময় ব্যস্ত থাকা ও সেইসঙ্গে প্রভুর কাজে সর্বদা উপচে পড়া আমাদের জগৎকে প্রেম না করতে সাহায্য করে।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

স্বর্গীয় ধন সঞ্চয় করুন

২২, ২৩. (ক) খ্রিস্টান সুসমাচার প্রচারকরা কোন ধন সঞ্চয় করে? (খ) পরের প্রবন্ধ আমাদের কীভাবে সাহায্য করবে?

২২ উদ্যোগী রাজ্য প্রচার কাজ স্থায়ী উপকারগুলো নিয়ে আসে। যিশু তা দেখিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেন: “তোমরা পৃথিবীতে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় করিও না; এখানে ত কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে, এবং এখানে চোরে সিঁধ কাটিয়া চুরি করে। কিন্তু স্বর্গে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় কর; সেখানে কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে না, সেখানে চোরেও সিঁধ কাটিয়া চুরি করে না। কারণ যেখানে তোমার ধন, সেইখানে তোমার মনও থাকিবে।”—মথি ৬:১৯-২১.

২৩ আমরা যেন স্বর্গে ধন সঞ্চয় করে চলি, এই কথা মনে রেখে যে, যিহোবার সাক্ষি হিসেবে সার্বভৌম প্রভু যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে বড় কোনো বিশেষ সুযোগ আমাদের আর থাকতে পারে না। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) ঈশ্বরের পরিচারক হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব পালন করার সময় আমরা হয়তো ৯০ এর কোঠায় বয়স এমন একজন খ্রিস্টান মহিলার মতো অনুভব করতে পারি, যিনি ঈশ্বরের প্রতি তার দীর্ঘ জীবনের সেবা সম্বন্ধে এই কথাগুলো বলেছিলেন: “এই সমস্ত বছরগুলোতে তিনি আমাকে সেবা করতে দিয়েছেন বলে আমার সমস্ত সেবার মধ্যে দিয়ে আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই আর আমি ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করি যে, তিনি চিরকালের জন্য আমার প্রেমময় পিতা হয়ে থাকবেন।” একইভাবে আমরাও যদি ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে মূল্যবান মনে করি, তা হলে নিশ্চিতভাবে আমরা সম্পূর্ণরূপে সুসমাচার প্রচারকের কাজ করতে চাই। পরের প্রবন্ধ আমাদের দেখতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে পূর্ণরূপে আমরা আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করতে পারি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমাদের সুসমাচার প্রচারকের কাজ করা উচিত?

• অতীত এবং বর্তমান দিনের সুসমাচার প্রচারকদের বিষয়ে আপনি কী বলতে পারেন?

• কেন আমরা ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দিই?

• একজন সুসমাচার প্রচারকের কাজ করে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে উপকৃত হন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ফিলিপ এবং তার মেয়েদের মতো আজকের দিনের আনন্দিত সুসমাচার প্রচারকরা রয়েছে

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যদের সঙ্গে সুসমাচার বন্টন করে নেওয়ার সময় আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে উপকৃত হন?