ঈশ্বরের লোকেদের অবশ্যই দয়াকে ভালবাসতে হবে
ঈশ্বরের লোকেদের অবশ্যই দয়াকে ভালবাসতে হবে
“ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”—মীখা ৬:৮.
১, ২. (ক) কেন আমাদের এতে অবাক হওয়া উচিত নয় যে, যিহোবা আশা করেন যেন তাঁর লোকেরা দয়া দেখায়? (খ) দয়া সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো আমাদের বিবেচনার যোগ্য?
যিহোবা হলেন দয়াময় * ঈশ্বর। (রোমীয় ২:৪; ১১:২২) প্রথম দম্পতি, আদম ও হবা নিশ্চয়ই সেই বিষয়টাকে অনেক উপলব্ধি করেছে! এদন বাগানে তাদের চারপাশে দৃশ্যত যে-সৃষ্টিগুলো ছিল, সেগুলো মানুষের প্রতি ঈশ্বরের দয়ার প্রমাণ দিয়েছিল, যারা তা উপভোগ করতে পারত। আর ঈশ্বর ক্রমাগত সকলের প্রতি, এমনকি অকৃতজ্ঞ এবং দুষ্ট লোকেদের প্রতিও দয়াময়।
২ ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি হওয়ায়, ঈশ্বরীয় গুণগুলো প্রতিফলিত করার ক্ষমতা মানুষের রয়েছে। (আদিপুস্তক ১:২৬) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, যিহোবা চান যাতে আমরা দয়া দেখাই। মীখা ৬:৮ পদ যেমন বলে যে, ঈশ্বরের লোকেদের অবশ্যই “দয়ায় অনুরাগ” দেখাতে বা দয়াকে ভালবাসতে হবে। কিন্তু, দয়া কী? এটা কীভাবে অন্যান্য ঈশ্বরীয় গুণের সঙ্গে যুক্ত? যেহেতু মানুষেরা দয়া প্রদর্শন করতে সক্ষম, তা হলে কেন এই জগৎ এক নিষ্ঠুর এবং কঠোর জায়গা? খ্রিস্টান হিসেবে অন্যদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে কেন আমাদের দয়া দেখানোর প্রচেষ্টা করা উচিত?
দয়া কী?
৩. আপনি কীভাবে দয়াকে সংজ্ঞায়িত করবেন?
৩ অন্যদের মঙ্গলের প্রতি সক্রিয় আগ্রহ দেখানোর মাধ্যমে দয়া প্রদর্শিত হয়। এটা সাহায্যকারী কাজ এবং সুবিবেচনাপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমে দেখানো হয়। দয়ালু হওয়ার মানে হল, ক্ষতিকর যেকোনোকিছু করার পরিবর্তে বরং ভাল কিছু করা। একজন দয়ালু ব্যক্তি হলেন বন্ধুত্বপরায়ণ, কোমল, সহানুভূতিশীল এবং সদয়। অন্যদের প্রতি তার উদার ও সুবিবেচনাপূর্ণ মনোভাব রয়েছে। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের উপদেশ দিয়েছিলেন: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর।” (কলসীয় ৩:১২) তা হলে, দয়া হল প্রত্যেক সত্য খ্রিস্টানের রূপক পরিচ্ছদের অংশ।
৪. মানবজাতির প্রতি দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবা কীভাবে প্রথমে পদক্ষেপ নিয়েছেন?
৪ দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবা ঈশ্বর প্রথমে পদক্ষেপ নিয়েছেন। পৌল যেমন বলেছিলেন যে, যখন “আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের মধুর স্বভাব এবং মানবজাতির প্রতি প্রেম প্রকাশিত হইল,” তখন “তিনি . . . পুনর্জন্মের স্নান ও পবিত্র আত্মার নূতনীকরণ দ্বারা আমাদিগকে পরিত্রাণ করিলেন।” (তীত ৩:৪, ৫) ঈশ্বর, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের যিশুর রক্তে ‘স্নাত’ বা পরিষ্কৃত করেন অর্থাৎ তাদের জন্য খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের উপকারগুলো প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাদের নতুনীকৃতও করা হয়েছে এবং ঈশ্বরের আত্মায়জাত পুত্র হিসেবে তারা “নূতন সৃষ্টি” হয়েছে। (২ করিন্থীয় ৫:১৭) তা ছাড়া, ঈশ্বরের দয়া এবং প্রেম সেই ‘বিস্তর লোকের’ প্রতিও বিস্তৃত, যারা “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত . . . ও শুক্লবর্ণ” করেছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; ১ যোহন ২:১, ২.
৫. যারা ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা চালিত হয়, তাদের কেন দয়া দেখানো উচিত?
৫ এ ছাড়া, দয়া হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা অথবা সক্রিয় শক্তির ফলের অংশ। পৌল বলেছিলেন: “আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন; এই প্রকার গুণের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নাই।” (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তা হলে, যারা ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা চালিত হয়, তাদের কি অন্যদের প্রতি দয়া দেখানো উচিত নয়?
প্রকৃত দয়া কোনো দুর্বলতা নয়
৬. দয়া কখন এক দুর্বলতা এবং কেন?
৬ কিছু লোক দয়াকে দুর্বলতা হিসেবে দেখে থাকে। তারা মনে করে যে, একজন ব্যক্তিকে কখনও কখনও কঠিন এমনকি রূঢ় হতে হবে, যাতে অন্যেরা তার শক্তি দেখতে পারে। কিন্তু, বাস্তবে প্রকৃত দয়ালু হওয়ার এবং ত্রুটিপূর্ণ দয়া দেখানো এড়ানোর জন্য সত্যিকারের শক্তির প্রয়োজন। যেহেতু প্রকৃত দয়া হল ঈশ্বরের আত্মার ফলের অংশ, তাই এটা অন্যায় আচরণের প্রতি আপোশ করার মতো এক দুর্বল মনোভাব হতে পারে না। অন্যদিকে, ত্রুটিপূর্ণ দয়া হল এক দুর্বলতা, যার ফলে একজন ব্যক্তি অন্যায় কাজকে মার্জনা করেন।
৭. (ক) এলি কীভাবে শিথিল বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন? (খ) কেন ত্রুটিপূর্ণ দয়া দেখানোর বিরুদ্ধে প্রাচীনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে?
৭ উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েলের মহাযাজক এলির কথা বিবেচনা করুন। তিনি আবাসে যাজক হিসেবে সেবারত তার ছেলে হফ্নি এবং পীনহসকে শাসন করার ব্যাপারে শিথিল ছিলেন। ঈশ্বরের ব্যবস্থা অনুযায়ী তাদের জন্য বলিদানের যে-অংশ ধার্য করা ছিল, তাতে সন্তুষ্ট না থেকে তারা তাদের পরিচারককে উৎসর্গের মেদ বেদিতে দগ্ধ করার আগেই উৎসর্গকারীর কাছ থেকে কাঁচা মাংস দাবি করার আদেশ দিয়েছিল। এ ছাড়া, এলির ছেলেদের আবাসের দ্বারে সেবারত স্ত্রীলোকদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ছিল। কিন্তু, হফ্নি এবং পীনহসকে পরিচর্যা থেকে বহিষ্কার করার পরিবর্তে এলি তাদের শুধু মৃদুভাবে তিরস্কার করেছিলেন। (১ শমূয়েল ২:১২-২৯) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, “তৎকালে সদাপ্রভুর বাক্য দুর্লভ ছিল”! (১ শমূয়েল ৩:১) খ্রিস্টান প্রাচীনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা সেই সমস্ত অন্যায়কারীর প্রতি ত্রুটিপূর্ণ দয়া না দেখায়, যারা মণ্ডলীর আধ্যাত্মিকতাকে বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে। প্রকৃত দয়া সেই সমস্ত মন্দ কথাবার্তা এবং কাজের বিষয়ে অন্ধ নয়, যেগুলো ঈশ্বরের মানগুলোকে লঙ্ঘন করে।
৮. কীভাবে যিশু প্রকৃত দয়া দেখিয়েছিলেন?
৮ আমাদের আদর্শ যিশু খ্রিস্ট কখনও ত্রুটিপূর্ণ দয়া দেখানোর দোষে দোষী ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রকৃত দয়ার মূর্ত প্রতীক। উদাহরণস্বরূপ, ‘তিনি লোকেদের প্রতি কোমল স্নেহ বোধ করিলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।’ সৎহৃদয়ের লোকেরা যিশুর কাছে আসতে, এমনকি তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের তাঁর কাছে নিয়ে আসতে স্বচ্ছন্দ বোধ করত। তিনি যখন ছোট ছেলেমেয়েদের “কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্বাদ করিলেন,” তখন যে-দয়া এবং সমবেদনা দেখিয়েছিলেন, তা কল্পনা করুন। (মথি ৯:৩৬; মার্ক ১০:১৩-১৬) যদিও যিশু দয়ালু ছিলেন, তবুও তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার চোখে যা সঠিক, তা করতে দৃঢ় ছিলেন। যিশু কখনও মন্দতাকে প্রশ্রয় দেননি; কপট ধর্মীয় নেতাদের দোষারোপ করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরদত্ত শক্তি তাঁর ছিল। মথি ২৩:১৩-২৬ পদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কয়েক বার তিনি এই বিবৃতি পুনরাবৃত্তি করেছিলেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্ তোমাদিগকে!”
দয়া এবং অন্যান্য ঈশ্বরীয় গুণ
৯. দয়া কীভাবে দীর্ঘসহিষ্ণুতা এবং মঙ্গলভাবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৯ দয়া ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা উৎপন্ন অন্যান্য গুণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এটাকে “দীর্ঘসহিষ্ণুতা” এবং ‘মঙ্গলভাব,’ এই দুয়ের মধ্যে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। বস্তুত, যে-ব্যক্তি দয়া গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেন, তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়ার মাধ্যমে সেই গুণ প্রদর্শন করেন। তিনি এমনকি নির্দয় ব্যক্তির প্রতিও ধৈর্যশীল। আর দয়া এই অর্থে মঙ্গলভাবের সঙ্গে যুক্ত যে, তা প্রায়ই অন্যদের উপকারের জন্য সাহায্যকারী কাজের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। কখনও কখনও, বাইবেলে ‘দয়ার’ জন্য ব্যবহৃত গ্রিক শব্দকে হয়তো “মঙ্গলভাব” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে এই গুণ প্রদর্শন পৌত্তলিক লোকেদের এতটাই বিস্ময়াভিভূত করেছিল যে, টারটুলিয়ানের মতানুসারে, যিশুর সেই অনুসারীদের তারা ‘দয়ার দ্বারা গঠিত লোক’ বলত।
১০. দয়া এবং প্রেম কীভাবে সংযুক্ত?
১০ দয়া এবং প্রেমের মধ্যে সংযোগ রয়েছে। যিশু তাঁর অনুসারীদের বিষয়ে বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) আর এই প্রেম সম্বন্ধে পৌল বলেছিলেন: “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪) এ ছাড়া, “প্রেমপূর্ণ-দয়া” শব্দটিতে দয়া প্রেমের সঙ্গেও যুক্ত, যা শাস্ত্রে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়েছে। এই দয়া অনুগত প্রেম থেকে উদ্ভূত। যে-ইব্রীয় বিশেষ্যপদকে “প্রেমপূর্ণ-দয়া” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার মধ্যে কোমলভাবের চেয়েও আরও বেশি কিছু অন্তর্ভুক্ত। এটা এমন দয়া, যা এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উদ্দেশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত না বাস্তবায়িত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেমের সঙ্গে এটার প্রতি আসক্ত থাকে। যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া অথবা অনুগত প্রেম বিভিন্ন উপায়ে প্রদর্শিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, এটা তাঁর উদ্ধার এবং সুরক্ষার কাজগুলোর মধ্যে দেখা যায়।—গীতসংহিতা ৬:৪; ৪০:১১; ১৪৩:১২, NW.
১১. ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ-দয়া আমাদের কোন আশ্বাস দেয়?
১১ যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া লোকেদের তাঁর নিকটবর্তী করে। (যিরমিয় ৩১:৩, NW) ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের যখন উদ্ধার অথবা সাহায্যের প্রয়োজন, তখন তারা জানে যে তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়া সত্যিই অনুগত প্রেম। এটা তাদের হতাশ করবে না। তাই তারা গীতরচকের মতো বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করতে পারে, যিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়াতে,” NW] বিশ্বাস করিয়াছি; আমার চিত্ত তোমার পরিত্রাণে উল্লাসিত হইবে।” (গীতসংহিতা ১৩:৫) যেহেতু ঈশ্বরের প্রেম অনুগত, তাই তাঁর দাসেরা তাঁর ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতে পারে। তাদের এই আশ্বাস রয়েছে: “সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে দূর করিবেন না, আপন অধিকার পরিত্যাগ করিবেন না।”—গীতসংহিতা ৯৪:১৪.
কেন জগৎ এত নিষ্ঠুর?
১২. কখন এবং কীভাবে অত্যাচারী শাসনের শুরু হয়েছিল?
১২ এই প্রশ্নের উত্তর এদন বাগানে যা ঘটেছিল, সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মানব ইতিহাসের শুরুতে, যে-আত্মিক প্রাণী স্বার্থপর এবং উদ্ধত হয়ে গিয়েছিল, সে জগতের শাসক হওয়ার জন্য একটা ফন্দি আঁটে। তার কুচক্রান্তের ফলে সে “জগতের অধিপতি,” বস্তুতপক্ষে প্রচণ্ড অত্যাচারী এক ব্যক্তি হয়ে উঠেছিল। (যোহন ১২:৩১) সে শয়তান দিয়াবল হিসেবে, ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়েরই প্রধান বিরোধী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। (যোহন ৮:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) যিহোবার দয়াপূর্ণ শাসনব্যবস্থার প্রতিদ্বন্দ্বী এক শাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে তার স্বার্থপর ফন্দি হবাকে সৃষ্টি করার পর পরই প্রকাশ পেয়েছিল। এভাবে মন্দ শাসনের শুরু হয়, যখন আদম ঈশ্বরের শাসন থেকে স্বাধীন পথ বেছে নেয়, পুরোপুরিভাবে তাঁর দয়াকে প্রত্যাখ্যান করে। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) প্রকৃতপক্ষে নিজেদের শাসন করার পরিবর্তে, আদম ও হবা আসলে দিয়াবলের স্বার্থপর এবং গর্বিত প্রভাবের অধীনে চলে আসে, তার শাসনের প্রজা হয়ে ওঠে।
১৩-১৫. (ক) যিহোবার ধার্মিক শাসনব্যবস্থা পরিত্যাগ করার কিছু পরিণতি কী? (খ) কেন এই জগৎ এক কঠোর জায়গা?
১৩ কিছু পরিণতির কথা বিবেচনা করুন। আদম ও হবাকে পৃথিবীর সেই এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়, যা এক পরমদেশ ছিল। টাটকা শাকসবজি এবং ফলমূল সহজেই পাওয়া যায় এমন সজীব অবস্থা থেকে তারা এদন বাগানের বাইরে কঠিন পরিস্থিতিতে চলে যায়। ঈশ্বর আদমকে বলেছিলেন: “যে বৃক্ষের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছিলাম, তুমি তাহা ভোজন করিও না, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনিয়া তাহার ফল ভোজন করিয়াছ, এই জন্য তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে উহা ভোগ করিবে; আর উহাতে তোমার জন্য কন্টক ও শেয়ালকাঁটা জন্মিবে।” ভূমিকে অভিশপ্ত করার মানে ছিল যে, এতে চাষ-আবাদ করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কন্টক ও শেয়ালকাঁটাসহ অভিশপ্ত ভূমির প্রভাব আদমের বংশধর নোহের বাবা লেমক এত ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি ‘সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অভিশপ্ত ভূমি হইতে তাহাদের যে শ্রম ও হস্তের ক্লেশ হয়, তদ্বিষয়ে’ বলেছিলেন।—আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯; ৫:২৯.
১৪ এ ছাড়া, আদম ও হবা শান্তির বিনিময়ে চরম দুর্দশা এনেছিল। ঈশ্বর হবাকে বলেছিলেন: “আমি তোমার গর্ব্ভবেদনা অতিশয় বৃদ্ধি করিব, তুমি বেদনাতে সন্তান প্রসব করিবে; এবং স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।” পরবর্তী সময়ে, আদম ও হবার প্রথম ছেলে কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করার মতো নিষ্ঠুর কাজ করেছিল।—আদিপুস্তক ৩:১৬; ৪:৮.
১৫ “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” প্রেরিত যোহন ঘোষণা করেছিলেন। (১ যোহন ৫:১৯) এর শাসকের মতো আজকে এই জগৎ মন্দ বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ করে, যার অন্তর্ভুক্ত স্বার্থপরতা এবং অহংকার। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, এই জগৎ কঠোরতা এবং নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ! কিন্তু, এই অবস্থা সবসময় থাকবে না। যিহোবা লক্ষ রাখবেন, যাতে তাঁর রাজ্যের অধীনে কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতার জায়গায় দয়া এবং সমবেদনা বিরাজ করে।
ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে দয়া বিরাজ করবে
১৬. কেন খ্রিস্ট যিশুর মাধ্যমে ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা দয়ার দ্বারা লক্ষণীয় এবং তা আমাদের কী করতে বাধ্য করে?
১৬ যিহোবা এবং তাঁর রাজ্যের নিযুক্ত রাজা, খ্রিস্ট যিশু চান যে তাঁদের প্রজারা যেন দয়ার জন্য সুপরিচিত থাকে। (মীখা ৬:৮) যিশু খ্রিস্ট, তাঁর পিতা আস্থা সহকারে তাঁকে যে-প্রশাসন দিয়েছেন, তা কীভাবে দয়ার দ্বারা লক্ষণীয় হবে, সেই বিষয়ে আমাদের এক আভাস দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১:৩) এটা যিশুর সেই কথাগুলোর মধ্যে লক্ষ করা যেতে পারে, যা সেই সমস্ত মিথ্যা ধর্মীয় নেতাদের উন্মোচিত করে দিয়েছিল, যারা ভারী বোঝা দিয়ে লোকেদের ভারগ্রস্ত করেছিল। তিনি বলেছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৮-৩০) বহু পার্থিব শাসক, তা তারা ধর্মীয় বা অন্য যেকোনোধরনের শাসকই হোক না কেন, সকলে সীমাহীন নিয়মকানুন ও অসমাদৃত কাজের ক্লান্তিকর বোঝার মাধ্যমে লোকেদের পরিশ্রান্ত করে ফেলেছে। কিন্তু যিশু তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে যা কিছু চান, সেগুলো তাদের প্রয়োজনকে পরিতৃপ্ত করে এবং তা তাদের ক্ষমতার আওতায় রয়েছে। সত্যিই এক সতেজতাদায়ক ও দয়ালু জোয়াল! অন্যদের দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে আমরাও কি তাঁর মতো হতে পরিচালিত হই না?—যোহন ১৩:১৫.
১৭, ১৮. কেন আমরা নির্ভর করতে পারি যে, যারা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করবে, তারা এবং তাঁর পার্থিব প্রতিনিধিরা দয়া দেখাবে?
১৭ তাঁর প্রেরিতদের উদ্দেশে যিশুর লক্ষণীয় মন্তব্য তুলে ধরে যে, কীভাবে ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন মানুষের শাসন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। বাইবেল বলে: “তাঁহাদের [শিষ্যদের] মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হইল যে তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতিগণের রাজারাই তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের শাসনকর্ত্তারাই ‘হিতকারী’ বলিয়া আখ্যাত হয়। কিন্তু তোমরা সেইরূপ হইও না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের ন্যায় হউক; এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের ন্যায় হউক। কারণ, কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না যে পরিচর্য্যা করে? যে ভোজনে বসে, সেই কি নয়? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের ন্যায় রহিয়াছি।”—লূক ২২:২৪-২৭.
১৮ মনুষ্য শাসকরা লোকেদের ‘উপর প্রভুত্ব করিবার’ এবং বড় বড় উপাধি লাভের জন্য চেষ্টা করার মাধ্যমে তাদের মহত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেন এই ধরনের উপাধিগুলো তাদেরকে তাদের শাসনাধীন লোকেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ করে তোলে। কিন্তু যিশু বলেছিলেন যে, প্রকৃত মহত্ত্ব আসে অন্যদের পরিচর্যা করার মাধ্যমে—সেবা করার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে এবং অটলভাবে প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে। যারা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করবে বা যারা তাঁর পার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে সেবা করবে, তাদের সকলকে তাঁর নম্রতা এবং দয়ার উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে।
১৯, ২০. (ক) যিশু কীভাবে যিহোবার দয়ার পরিব্যাপ্ততা সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা দয়া প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?
১৯ আসুন আমরা যিশুর দেওয়া আরেকটা প্রেমময় পরামর্শের দিকে মনোযোগ দিই। যিহোবার দয়ার ব্যাপ্তি দেখাতে গিয়ে যিশু বলেছিলেন: “যাহারা তোমাদিগকে প্রেম করে, তাহাদিগকেই প্রেম করিলে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পাইতে পার? কেননা পাপীরাও, যাহারা তাহাদিগকে প্রেম করে, তাহাদিগকে প্রেম করে। আর যাহারা তোমাদের উপকার করে, যদি তাহাদের উপকার কর, তবে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পাইতে পার? পাপীরাও তাহাই করে। আর যাহাদের কাছে পাইবার আশা থাকে, যদি তাহাদিগকেই ধার দেও, তবে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পাইতে পার? পাপীরাও পাপীদিগকে ধার দেয়, যেন সেই পরিমাণে পুনরায় পায়। কিন্তু তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, তাহাদের ভাল করিও, এবং কখনও নিরাশ না হইয়া ধার দিও, তাহা করিলে তোমাদের মহাপুরস্কার হইবে, এবং তোমরা পরাৎপরের সন্তান হইবে, কেননা তিনি অকৃতজ্ঞদের ও দুষ্টদের প্রতিও কৃপাবান্। তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু, তোমরাও তেমনি দয়ালু হও।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—লূক ৬:৩২-৩৬.
২০ ঈশ্বরীয় দয়া নিঃস্বার্থ। এটা কিছুই চায় না এবং প্রতিদানে কিছুই আশা করে না। যিহোবা দয়ার সঙ্গে “ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৩-৪৫; প্রেরিত ১৪:১৬, ১৭) আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে অনুকরণ করে আমরা শুধু অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকি না কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা তাদের জন্য ভাল কাজও করি, এমনকি তাদের প্রতিও যারা আমাদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করেছে। দয়া প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা যিহোবা এবং যিশুকে দেখাই যে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে বাস করতে চাই, যে-সময়ে দয়া এবং অন্যান্য ঈশ্বরীয় গুণ সমস্ত মনুষ্য সম্পর্কের মধ্যে বিরাজমান থাকবে।
কেন দয়া দেখানো উচিত?
২১, ২২. কেন আমাদের দয়া দেখানো উচিত?
২১ একজন অকৃত্রিম খ্রিস্টানের জন্য দয়া দেখানো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রমাণ দেয় যে, আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা কার্যরত। এ ছাড়া, আমরা যখন প্রকৃত দয়া দেখাই, তখন আমরা যিহোবা এবং যিশুকে অনুকরণ করি। তা ছাড়াও, দয়া দেখানো তাদের জন্য আবশ্যক যারা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হবে। তা হলে, আমাদের অবশ্যই দয়াকে ভালবাসতে এবং তা প্রদর্শন করতে শিখতে হবে।
২২ কিছু বাস্তবসম্মত উপায় কী, যেগুলোতে আমরা আমাদের রোজকার জীবনে দয়া দেখাতে পারি? পরের প্রবন্ধ এই বিষয় সম্বন্ধে জানাবে।
[পাদটীকা]
^ বাংলা বাইবেলে মূলভাষার যে-শব্দটি দয়া হিসেবে অনূদিত হয়েছে, সেটিকে মধুর ভাব, মধুর স্বভাব, মাধুর্য, মধুর ইত্যাদি হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• দয়া কী?
• কেন এই জগৎ এক নিষ্ঠুর এবং কঠোর জায়গা?
• কীভাবে আমরা জানি যে, ঈশ্বরের শাসনের অধীনে দয়া বিরাজ করবে?
• যারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে বাস করতে চায়, তাদের জন্য দয়া দেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
পালের সঙ্গে আচরণ করার সময় খ্রিস্টান প্রাচীনরা দয়ালু হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া কঠিন সময়গুলোতে তাঁর দাসদের হতাশ করবে না
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা দয়ার সঙ্গে সমস্ত মানুষের ওপর সূর্য উদিত করেন এবং বৃষ্টি বর্ষান