সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লট এক ঐতিহাসিক অনুবাদের হাতিয়ার

কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লট এক ঐতিহাসিক অনুবাদের হাতিয়ার

কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লট এক ঐতিহাসিক অনুবাদের হাতিয়ার

 বাইবেল ছাপানোর ক্ষেত্রে, ১৪৫৫ সালের দিকে এক বিপ্লব ঘটেছিল। ইয়োহানেস গুটেনবার্গ আগে কখনও ব্যবহৃত হয়নি, এমন একটা চলমান মুদ্রাক্ষরের সাহায্যে প্রথম বাইবেলটি উৎপাদন করতে একটা ছাপানোর মেশিনকে কাজে লাগিয়েছিলেন। হাতে লেখা নথিগুলোর দুষ্প্রাপ্যতা বাইবেলের বিতরণে যে-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল, সেটা আর থাকল না। পরিশেষে, প্রচুর পরিমাণে ও তুলনামূলকভাবে কম খরচে বাইবেল ছাপানো সম্ভব হয়েছিল। খুব শীঘ্রই বাইবেল সারা বিশ্বে সবচেয়ে সর্বাধিক বিতরিত বই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।

গুটেনবার্গের বাইবেল ল্যাটিন ভাষায় ছিল। কিন্তু ইউরোপের পণ্ডিতরা খুব শীঘ্রই উপলব্ধি করেছিল যে, বাইবেলের মূল ভাষাগুলোতে—ইব্রীয় ও গ্রিকে—তাদের বাইবেলের এক নির্ভরযোগ্য পাঠ্যাংশের দরকার রয়েছে। ক্যাথলিক গির্জা ল্যাটিন ভালগেট-কে বাইবেলের একমাত্র গ্রহণযোগ্য সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করত কিন্তু দুটো প্রধান অসুবিধা ছিল। ১৬ শতাব্দীতে অধিকাংশ লোকই ল্যাটিন ভাষা বুঝতে পারত না। অধিকন্তু, এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে ভালগেট এর প্রতিলিপি করার সময় প্রতিলিপিকাররা অনেক ভুল করেছিল।

অনুবাদক ও পণ্ডিত উভয় দলেরই মূল ভাষাগুলোর ও সেইসঙ্গে এক উন্নত ল্যাটিনে অনুবাদিত বাইবেলের প্রয়োজন ছিল। ১৫০২ সালে, স্পেনের রানি ১ম ইজেবেলার রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের পরামর্শদাতা কার্ডিনাল হিমেনেথ দে দিসনিরস শুধুমাত্র একটি প্রকাশনার দ্বারা তাদের প্রয়োজনগুলো মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক অনুবাদের হাতিয়ারটি কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লট নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। দিসনিরস একটা পলিগ্লট বা বহু ভাষা সমন্বিত বাইবেল ছাপানোর ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, যেটাতে ইব্রীয়, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার সবচেয়ে উত্তম পাঠ্যাংশ থাকবে ও সেইসঙ্গে কিছু অংশ অরামীয় ভাষায় থাকবে। ছাপানোর পদ্ধতি যেহেতু তখনও প্রাথমিক অবস্থায় ছিল, তাই এই সাফল্য ছাপানোর শিল্পে এক মাইলফলক হয়ে থাকত।

প্রাচীন ইব্রীয় পাণ্ডুলিপিগুলো, যেগুলোর অসংখ্য স্পেনে ছিল, সেগুলো কেনার দ্বারা দিসনিরস প্রচণ্ড পরিশ্রমের ও প্রচেষ্টাপূর্ণ কাজটা শুরু করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিও সংগ্রহ করেছিলেন। এগুলো পলিগ্লট পাঠ্যাংশ করার ভিত্তি জোগাত। দিসনিরস এক দল পণ্ডিত ব্যক্তিকে, যাদের তিনি স্পেনের আলকালা দে এনারেসে প্রতিষ্ঠিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত করেছিলেন, তাদেরকে এগুলো সংগ্রহ করে খণ্ড তৈরি করার কার্যভার দিয়েছিলেন। পণ্ডিতদের মধ্যে যাকে তিনি এই দলের অংশ হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি ছিলেন রোটার্ডামের ইরাজমেস কিন্তু এই বিখ্যাত ভাষাবিদ এই আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

সংগ্রহ করার এই বিশাল কাজ করতে পণ্ডিতদের দশ বছর লেগেছিল আর তারপর এগুলো ছাপাতে আরও চার বছর। ছাপানোর ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল কারণ স্পেনের মুদ্রাকরদের কাছে ইব্রীয়, গ্রিক ও অরামীয় ভাষার মুদ্রাক্ষর ছিল না। এইজন্য, দিসনিরস এই ভাষাগুলোতে মুদ্রাক্ষরগুলো তৈরি করার জন্য স্পেনের একজন মহান মুদ্রাকর আরনাল্ডো গিয়েরমো ব্রোকারকে কাজে লাগিয়েছিলেন। পরিশেষে, ১৫১৪ সালে মুদ্রাকররা বাইবেল ছাপাতে শুরু করেছিল। ১৫১৭ সালের ১০ই জুলাই কার্ডিনাল মারা যাওয়ার মাত্র চার মাস আগে ছয়টি খণ্ড শেষ হয়েছিল। এই খণ্ডগুলোর প্রায় ছয়শো কপি ছাপানো হয়েছিল আর আশ্চর্যের বিষয় যে, স্প্যানিশ ইনকুইজিশন যখন এর শিখরে ছিল ঠিক সেই সময়ই সেগুলো ছাপানো হয়েছিল। *

পলিগ্লটের বিন্যাস

পলিগ্লটের প্রত্যেকটা পৃষ্ঠায় তথ্যের সম্ভার ছিল। ইব্রীয় শাস্ত্র, যা চারটা খণ্ডে ছিল, সেখানে ভালগেট এর পাঠ্যাংশটি ছিল প্রত্যেক পৃষ্ঠার মাঝখানে; বাইরের কলমে ছিল ইব্রীয় পাঠ্যাংশটি; আর ভিতরের কলমে ছিল গ্রিক পাঠ্যাংশ ও সেইসঙ্গে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদিত পাঠ্যাংশটি ছিল গ্রিক পঙ্‌ক্তিগুলোর মাঝে। মার্জিনগুলোতে বিভিন্ন ইব্রীয় শব্দের মূল শব্দগুলো দেখানো হয়েছিল। আর প্রতিটা পৃষ্ঠার নিচের অংশে সম্পাদকরা পেন্টাটিউকের পাশাপাশি টার্গাম অফ আঙ্কেলাস (বাইবেলের পাঁচটা বইয়ের অরামীয় শব্দান্তর) সহ এটার ল্যাটিন অনুবাদটিও অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

পলিগ্লটের পঞ্চম খণ্ডটিতে দুটো কলমে গ্রিক শাস্ত্র ছিল। একটা কলমে ছিল এটার গ্রিক অনুবাদ এবং আরেকটাতে ভালগেট থেকে নেওয়া একই পাঠ্যাংশের ল্যাটিন অনুবাদ। ছোট ছোট অক্ষরের মাধ্যমে দুটো ভাষার পাঠ্যাংশের মধ্যে সমান্তরালতা দেখানো হয়েছিল, যা প্রত্যেকটা কলমে থাকা একই শব্দের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। পলিগ্লটের গ্রিক পাঠ্যাংশ ছিল গ্রিক শাস্ত্র অর্থাৎ “নূতন নিয়ম” এর প্রথম সম্পূর্ণ বই, যা আগে কখনও ছাপানো হয়নি আর এর কিছু পরেই গ্রিক শাস্ত্রের ইরাজমেসের সংস্করণটি বেরিয়েছিল।

পণ্ডিতরা পঞ্চম খণ্ডটির পাঠ্যাংশকে এত যত্নের সঙ্গে প্রুফরিডিং করেছিল যে, মাত্র ৫০টি ছাপানো সংক্রান্ত ভুল বেরিয়েছিল। এই পণ্ডিতদের মনোযোগের সঙ্গে নেওয়া এই ধরনের যত্নের কারণে আধুনিক সমালোচকরা পঞ্চম খণ্ডটিকে ইরাজমেসের বিখ্যাত গ্রিক পাঠ্যাংশের চাইতে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করেছে। চমৎকার গ্রিক অক্ষরগুলো প্রাচীন আনশিয়াল ধরণে লেখা পাণ্ডুলিপিগুলোর স্বাভাবিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। আর. প্রাকটর তার পঞ্চদশ শতাব্দীতে গ্রিক মুদ্রাঙ্কন (ইংরেজি) বইয়ে বলেছিলেন: “প্রথম গ্রিক মুদ্রাক্ষর তৈরি করার জন্য স্পেনকে এই কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যা নিঃসন্দেহে গ্রিকের সর্বোত্তম মুদ্রাক্ষর, যা আগে কখনও তৈরি করা হয়নি।”

পলিগ্লটের ষষ্ঠ খণ্ডে বাইবেল অধ্যয়নের জন্য বিভিন্ন বই ছিল: ইব্রীয় ও অরামীয় ভাষায় একটা অভিধান, গ্রিক, ইব্রীয় ও অরামীয় নামগুলোর অনুবাদ, ইব্রীয় ব্যাকরণের ব্যাখ্যা এবং অভিধানের জন্য ল্যাটিন ভাষায় একটা বিষয়সূচি। তাই এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লটকে “মুদ্রণশৈলী ও শাস্ত্র বিজ্ঞানের স্মারক” হিসেবে প্রশংসিত করা হয়েছে।

দিসনিরস চেয়েছিলেন যে, পলিগ্লট “শাস্ত্র অধ্যয়ন করার আগ্রহকে আবার জাগিয়ে তুলবে” কিন্তু সাধারণ লোকেদের কাছে বাইবেল প্রাপ্তিসাধ্য করার কোনো আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন যে, “ঈশ্বরের বাক্যকে সাধারণ লোকেদের নাগালের বাইরে রাখতে সেটাকে বিচক্ষণতার সঙ্গে গুপ্ত রাখার দরকার আছে।” এ ছাড়া, তিনি এও বিশ্বাস করতেন যে, “শাস্ত্রটি তিনটে প্রাচীন ভাষার মধ্যেই সীমিত থাকা উচিত, যে-ভাষাগুলোতে ঈশ্বর তাঁর ক্রুশবিদ্ধ পুত্রের মাথার ওপর লেখার অনুমতি দিয়েছিলেন।” * এই কারণে কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লট স্প্যানিশ ভাষায় করা কোনো অনুবাদকে অন্তর্ভুক্ত করেনি।

ভালগেট বনাম মূল ভাষাগুলো

পলিগ্লটের বৈশিষ্ট্যগুলো সংশ্লিষ্ট পণ্ডিতদের মধ্যে কিছু মতবিরোধের সৃষ্টি করেছিল। স্পেনের বিখ্যাত পণ্ডিত এনটোনিও ডে নেবরিহাকে * ভালগেট এর পাঠ্যাংশ, যা পলিগ্লট বাইবেলে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল সেটি পুনরধ্যয়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও ক্যাথলিক গির্জা জেরমের ভালগেট-কে একমাত্র অনুমোদিত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করত কিন্তু নেবরিহা ভালগেট-কে মূল ইব্রীয়, অরামীয় ও গ্রিক পাঠ্যাংশের সঙ্গে তুলনা করে দেখার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন। তিনি সেই ভুলগুলো সংশোধন করতে চেয়েছিলেন, যেগুলো সুস্পষ্ট ছিল আর যেগুলো সেই সময়কার ভালগেট এর কপিগুলোর অংশ হয়ে গিয়েছিল।

ভালগেট এবং মূল ভাষাগুলোর মধ্যে পাওয়া অসামঞ্জস্যগুলোর সমাধান করতে নেবরিহা দিসনিরসকে এই সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছিলেন: “আমাদের ধর্মের দুটো অপ্রজ্জ্বলিত মশাল, ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষাকে, আরেকবার প্রজ্জ্বলিত করুন। এই কাজ করতে যারা নিজেদের উৎসর্গ করে তাদের পুরস্কৃত করুন।” এ ছাড়া, তিনি এই পরামর্শও দিয়েছিলেন: “প্রতিবার, নূতন নিয়ম এর ল্যাটিন ভাষার পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে যখন ভিন্নতা দেখা দেয়, তখন আমাদের গ্রিক পাণ্ডুলিপিগুলোর সঙ্গে এটাকে তুলনা করে দেখা উচিত। ল্যাটিন ভাষার পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে অথবা পুরাতন নিয়মের ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষার পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে যখনই অমিল খুঁজে পাওয়া যায়, তখনই আমাদের সঠিকতার সন্ধানের জন্য প্রামাণিকভাবে নির্ভরযোগ্য ইব্রীয় শাস্ত্র পরীক্ষা করা উচিত।”

দিসনিরসের উত্তর কী ছিল? পলিগ্লট বাইবেলের ভূমিকায় দিসনিরস তার মতামত সম্বন্ধে সন্দেহের কোনো অবকাশই রাখেননি। “আমরা মহিমান্বিত জেরমের ল্যাটিন অনুবাদটি সমাজগৃহের [ইব্রীয় পাঠ্যাংশের] এবং প্রাচ্যের গির্জার [গ্রিক পাঠ্যাংশের] মাঝখানে রেখেছি, ঠিক যেমন দস্যুদের যিশুর দুধারে টাঙানো হয়েছিল, যিনি রোমীয় অর্থাৎ ল্যাটিন গির্জাকে চিত্রিত করেন।” তাই, দিসনিরস নেবরিহাকে মূল ভাষাগুলোর পাঠ্যাংশ অনুযায়ী ল্যাটিন ভালগেট-কে সংশোধন করতে দেননি। পরিশেষে, নেবরিহা এক ত্রুটিপূর্ণ সংস্করণের সঙ্গে তার নাম জড়িত করার চেয়ে এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

কমা ইয়োহানেয়ুম

যদিও আলকালা দে এনারেসের পলিগ্লট বাইবেল, বাইবেলের মূল ভাষাগুলোতে এক পরিশোধিত পাঠ্যাংশ প্রকাশিত করার ক্ষেত্রে এক বিরাট পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হয়েছিল কিন্তু মাঝে মধ্যে প্রথা পাণ্ডিত্যের ওপর জয় লাভ করেছিল। ভালগেট-কে এতটাই উচ্চে রাখা হয়েছিল যে, সম্পাদকরা মূল গ্রিক ভাষার বাইবেলের সঙ্গে মিল রাখার জন্য ল্যাটিন পাঠ্যাংশকে সংশোধন করার চেয়ে “নূতন নিয়ম” এর গ্রিক পাঠ্যাংশকে বেশ অনেক বার সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিল। এই উদাহরণের মধ্যে একটা হল বিখ্যাত যোগ করা পাঠ্যাংশ যা কমা ইয়োহানেয়ুম নামে পরিচিত। * প্রাচীন গ্রিক পাণ্ডুলিপিগুলোর কোনোটাতেই এই কথাগুলো পাওয়া যায় না, যেটা প্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায় যে, যোহন তার চিঠি লেখার বহু শতাব্দী পর এগুলো যোগ করা হয়েছে; এমনকি ভালগেট এর সবচেয়ে প্রাচীন ল্যাটিন পাণ্ডুলিপিগুলোতেও এগুলো পাওয়া যায় না। এইজন্য, ইরাজমেস “নূতন নিয়ম” এর তার গ্রিক অনুবাদে এই কথাগুলো বাদ দিয়েছেন।

পলিগ্লটের সম্পাদকরা এই পদটিকে বাদ দিতে অনিচ্ছুক ছিল যেটা বহু শতাব্দী ধরে প্রথাগত ভালগেট এর পাঠ্যাংশের অংশ হয়ে ছিল। তাই, তারা ল্যাটিন পাঠ্যাংশে যোগ করা পদটি রেখে দিয়েছিল এবং সেটাকে গ্রিক পাঠ্যাংশে অনুবাদ ও যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যাতে দুটো কলমে মিল থাকে।

বাইবেলের নতুন অনুবাদগুলোর এক ভিত্তি

কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লটের মূল্য শুধু এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই নয় যে, এটাতে সম্পূর্ণ গ্রিক শাস্ত্রের সঙ্গে সেপ্টুয়াজিন্ট এর প্রথম ছাপানো সংস্করণ রয়েছে। ঠিক যেমন ইরাজমেসের “নূতন নিয়ম” এর গ্রিক পাঠ্যাংশ গ্রিক শাস্ত্রের (অন্যান্য ভাষাতে অনুবাদগুলো করার ভিত্তি) গ্রহণযোগ্য পাঠ্যাংশ হয়ে উঠেছিল, তেমনই ইব্রীয়-অরামীয় শাস্ত্রের জন্য পলিগ্লটের ইব্রীয় পাঠ্যাংশ এক প্রধান পাঠ্যাংশ জোগায়। * উইলিয়াম টিনডেল ইংরেজিতে বাইবেল অনুবাদ করার সময় তার অনুবাদের মূল ইব্রীয় পাঠ্যাংশ হিসেবে এই পলিগ্লট বাইবেল ব্যবহার করেছিলেন।

এভাবে, দলের পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজের ফলে কমপ্লুটেনশিয়ান পলিগ্লট প্রকাশিত হয়েছিল আর তা শাস্ত্রীয় পাণ্ডিত্যের অগ্রগতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল, যখন সারা ইউরোপে বাইবেলের প্রতি বাড়তে থাকা আগ্রহ সাধারণ লোকেদের ভাষায় এটাকে অনুবাদ করার উদ্দীপনা জোগাচ্ছিল। এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে পলিগ্লট আরেকটা পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল, যেটা গ্রিক ও ইব্রীয় পাঠ্যাংশের সংশোধন ও সংরক্ষণে অবদান রেখেছিল। এই সমস্ত প্রচেষ্টা সেই ঐশিক উদ্দেশ্যর সঙ্গে মিল রাখে যে ‘সদাপ্রভুর পরীক্ষাসিদ্ধ [অর্থাৎ, “পরিশোধিত”] বাক্য,’ “ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।”—গীতসংহিতা ১৮:৩০; যিশাইয় ৪০:৮; ১ পিতর ১:২৫.

[পাদটীকাগুলো]

^ ছয়শো কপি কাগজে ছাপানো হয়েছিল এবং ছয়টা কপি পশুর চামড়ায় করা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে সীমিত পরিমাণে এই সংস্করণের আধুনিক কপি ছাপানো হয়েছিল, যেগুলো দেখতে প্রথমটার মতো ছিল।

^ ইব্রীয়, গ্রিক ও রোমীয় বা ল্যাটিন।—যোহন ১৯:২০.

^ নেবরিহাকে স্পেনের মানবতান্ত্রিকদের (সংস্কারমুক্ত পণ্ডিতদের) অগ্রদূত হিসেবে ধরা হয়। ১৪৯২ সালে তিনি প্রথম গ্রামাটিকা কাসটেলিয়ানা (কাসটিল ভাষার ব্যাকরণ) ছাপিয়েছিলেন। তিন বছর পর তিনি পবিত্র শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য তার বাকি জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

^ বাইবেলের কিছু অনুবাদে ১ যোহন ৫:৭ পদে এই যোগ করা কথাগুলো পাওয়া যায়, যেটাকে এভাবে পড়া হয়, “স্বর্গে পিতা, বাক্য ও পবিত্র আত্মা: এবং এরা তিন জনই এক।”

^ ইরাজমেসের কার্যাবলির বিবরণের জন্য ১৯৮২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৮-১১ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

কার্ডিনাল হিমেনেথ দে দিসনিরস

[সৌজন্যে]

Biblioteca Histórica. Universidad Complutense de Madrid

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

এনটোনিও ডে নেবরিহা

[সৌজন্যে]

Biblioteca Histórica. Universidad Complutense de Madrid

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Biblioteca Histórica. Universidad Complutense de Madrid