শত্রুভাবাপন্ন এক জগতে দয়া অনুধাবন করা
শত্রুভাবাপন্ন এক জগতে দয়া অনুধাবন করা
“দয়াতেই [“প্রেমপূর্ণ-দয়াই,” Nw] মনুষ্যকে বাঞ্ছনীয় করে।”—হিতোপদেশ ১৯:২২.
১. দয়া দেখানো কেন কঠিন হতে পারে?
আপনি কি নিজেকে একজন দয়ালু ব্যক্তি বলে মনে করেন? যদি করেন, তা হলে আজকের জগতে বাস করা কঠিন হতে পারে। এটা ঠিক যে, বাইবেলে দয়াকে ‘আত্মার ফলের’ একটা অংশ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে কিন্তু এমনকি তথাকথিত খ্রিস্টান দেশগুলোতেও দয়া দেখানো কেন এত কঠিন? (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আগের প্রবন্ধে যেমন আমরা লক্ষ করেছি যে, এর উত্তর কিছুটা প্রেরিত যোহন যা লিখেছিলেন সেটার মধ্যে পাওয়া যেতে পারে—সমস্ত জগৎ এক নির্দয় আত্মিক ব্যক্তি, শয়তান দিয়াবলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। (১ যোহন ৫:১৯) যিশু খ্রিস্ট শয়তানকে “জগতের অধিপতি” বা শাসক হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। (যোহন ১৪:৩০) তাই, জগৎ এর বিদ্রোহী শাসকের মতো প্রবণতা দেখায়, যার মনোভাব নির্মম আচরণের দ্বারা লক্ষণীয়।—ইফিষীয় ২:২.
২. কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো আমাদের দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে?
২ যখন অন্যেরা আমাদের সঙ্গে নির্দয় ব্যবহার করে, তখন আমাদের জীবন প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত হয়। বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিবেশী, বন্ধুত্বপরায়ণহীন অপরিচিত ব্যক্তি, এমনকি বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্দয়তা প্রকাশ পেতে পারে, যারা হয়তো মাঝে মাঝে অবিবেচকের মতো কাজ করে। রূঢ় ব্যবহার ও চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করে এবং একে অপরকে তীব্র গালিগালাজ করে, এমন সব লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চাপ, প্রায়ই অনেক হতাশ করে। অন্যদের এইরকম দয়ার অভাব থাকায় আমরা নিজেদের শত্রু বলে মনে করতে পারি এবং হয়তো নির্দয় আচরণের পরিশোধে নির্দয় কাজ করার কথা চিন্তা করতে পারি। সেটা এমনকি আধ্যাত্মিক অথবা দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসতে পারে।—রোমীয় ১২:১৭.
৩. লোকেরা কোন গুরুতর সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়, যেগুলো তাদের দয়ালু হওয়ার ইচ্ছাকে পরীক্ষায় ফেলে?
৩ এ ছাড়া, চাপপূর্ণ জগৎ পরিস্থিতিগুলোও আমাদের জন্য দয়া দেখানোকে কঠিন করে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ মানুষেরা সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসী কাজগুলো ও সেইসঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় দলগুলোর দ্বারা জৈব অথবা পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের কারণে চাপ অনুভব করে। এ ছাড়াও, লক্ষ লক্ষ লোক দরিদ্র হয়ে পড়ছে, নূন্যতম খাবার, বাসস্থান, বস্ত্র এবং চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে আছে। যখন পরিস্থিতিকে আশাহীন বলে মনে হয়, তখন দয়া অনুধাবন করা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে ওঠে।—উপদেশক ৭:৭.
৪. অন্যদের প্রতি দয়া দেখানোর বিষয়ে চিন্তা করার সময় কেউ কেউ কোন ভুল উপসংহারে পৌঁছাতে পারে?
৪ একজন ব্যক্তি সহজেই এই উপসংহারে আসতে পারেন যে, দয়া দেখনো ততটা অগ্রাধিকারমূলক বিষয় নয় আর তা এমনকি দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। তিনি হয়তো তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করতে পারেন, বিশেষ করে যখন অন্যেরা তার সঙ্গে অবিবেচনাপূর্ণ আচরণ করে থাকে। (গীতসংহিতা ৭৩:২-৯) কিন্তু, বাইবেল আমাদের জন্য সঠিক নির্দেশনা দেয়, যখন এটি বলে: “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে।” (হিতোপদেশ ১৫:১) কোমলতা বা মৃদুতা এবং দয়া হল আত্মার ফলের দুটো দিক, যা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় সেগুলো কার্যকারী।
৫. জীবনের কিছু ক্ষেত্র কী, যেখানে দয়া প্রয়োজন?
৫ যেহেতু খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের জন্য ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলসমূহ প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ, তাই কীভাবে আমরা সেই গুণগুলোর মধ্যে একটা—দয়া—দেখাতে পারি, সেটা বিবেচনা করা উচিত। শত্রুভাবাপন্ন এক জগতে দয়া অনুধাবন করা কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তা হলে কিছু ক্ষেত্র কী, যেখানে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে আমরা শয়তানের প্রভাবকে আমাদের দয়াকে দমন করার সুযোগ দিই না, বিশেষ করে চাপপূর্ণ পরিস্থিতিগুলোতে? আসুন আমরা পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে, আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে, আমাদের পরিচর্যায় এবং সহবিশ্বাসীদের মধ্যে দয়া অনুধাবন করার বিষয়টা বিবেচনা করি।
পরিবারের মধ্যে দয়া
৬. পরিবারের মধ্যে দয়া কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা কীভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে?
৬ যিহোবার আশীর্বাদ এবং পরিচালনা পেতে হলে, আত্মার ফলসমূহ অত্যাবশ্যক এবং সেগুলো পুরোপুরি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে। (ইফিষীয় ৪:৩২) আসুন আমরা পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি দয়া দেখানোর নির্দিষ্ট প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ দিই। দৈনন্দিন আচরণে একজন স্বামী ও স্ত্রীর একে অপরের প্রতি এবং তাদের সন্তানদের প্রতি এক দয়ালু ও যত্নবান মনোভাব প্রকাশ করা উচিত। (ইফিষীয় ৫:২৮-৩৩; ৬:১, ২) এই ধরনের দয়া পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে যেভাবে কথা বলে, সন্তানেরা তাদের বাবামাকে যেভাবে সম্মান দেখায় ও শ্রদ্ধা করে এবং বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে যেভাবে সঠিক উপায়ে আচরণ করে, সেগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পেতে হবে। প্রশংসার ক্ষেত্রে সত্বর এবং দোষ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীর হোন।
৭, ৮. (ক) আমরা যদি পরিবারের মধ্যে অকৃত্রিম দয়া দেখাতে চাই, তা হলে আমাদের কোন ধরনের আচরণ এড়িয়ে চলতে হবে? (খ) কীভাবে উত্তম ভাববিনিময় শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধনে অবদান রাখে? (গ) আপনি কীভাবে আপনার পরিবারে দয়া দেখাতে পারেন?
৭ আমাদের পরিবারের মধ্যে যারা রয়েছে, তাদের প্রতি দয়া দেখানোর সঙ্গে প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শ অনুসরণ করা জড়িত: “তোমরাও এ সকল ত্যাগ কর,—ক্রোধ, রাগ, হিংসা, নিন্দা ও তোমাদের মুখনির্গত কুৎসিত আলাপ।” প্রতিদিন খ্রিস্টীয় পরিবারগুলোর একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক উপায়ে ভাববিনিময় করা উচিত। কেন? কারণ উত্তম ভাববিনিময় হল শক্তিশালী, উন্নতিশীল পরিবারের অপরিহার্য উপাদান। যখন মতবিরোধ দেখা দেয়, তখন সেই দ্বন্দ্বকে হ্রাস করার জন্য তর্কবিতর্কে জয়ী হওয়ার পরিবর্তে সমস্যাটার সমাধান করার চেষ্টা করুন। সুখী পরিবারের সদস্যরা একে অপরের প্রতি দয়া এবং বিবেচনা দেখানোর জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করে।—কলসীয় ৩:৮, ১২-১৪.
৮ দয়া হল ইতিবাচক এবং আমাদের মধ্যে অন্যদের প্রতি ভাল কিছু করার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তোলে। এভাবে আমরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে প্রীতিজনক উপায়ে ব্যবহারিক, বিবেচক এবং সাহায্যকারী হওয়ার চেষ্টা করি। পরিবারকে ভাল বলে প্রতিফলিত করে এমন দয়া দেখানোর জন্য ব্যক্তিগত এবং দলগত উভয় প্রচেষ্টারই প্রয়োজন। এর ফলে, তাদের শুধু ঈশ্বরের আশীর্বাদই থাকবে না কিন্তু সেইসঙ্গে মণ্ডলীতে এবং সমাজে তারা দয়ার ঈশ্বর, যিহোবাকে সম্মানিত করবে।—১ পিতর ২:১২.
কর্মক্ষেত্রে দয়া
৯, ১০. কর্মক্ষেত্রে ঘটতে পারে এমন কিছু সমস্যার কথা বর্ণনা করুন এবং কীভাবে সেগুলো দয়ার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে মন্তব্য করুন।
৯ একজন খ্রিস্টানের জন্য দৈনন্দিন কাজের তালিকা হয়তো তার সহকর্মীদের প্রতি দয়া দেখানোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তোলে। কর্মচারীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় একজন সহকর্মী হয়তো আরেকজনের কাজকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারেন, যিনি প্রতারণাপূর্ণভাবে অথবা সুনিপুণভাবে কাজ করেন আর এভাবে নিয়োগকর্তার কাছে সহকর্মীর সুনামহানি করেন। (উপদেশক ৪:৪) এইরকম মুহূর্তগুলোতে দয়া দেখানো সহজ নয়। তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন যে, দয়ার কাজ হল সাধারণত যা সঠিক তা করা, তাই যিহোবার একজন দাসের উচিত যারা সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন নয় তাদের লাভ করার জন্য যতদূর সম্ভব প্রাণপণ প্রচেষ্টা করা। এই ক্ষেত্রে যত্নবান মনোভাব দেখানো সাহায্যকারী হতে পারে। হতে পারে কোনো সহকর্মী বা তার পরিবারের কোনো সদস্য যদি অসুস্থ থাকে, তা হলে আপনি তাদের প্রতি চিন্তা দেখাতে পারেন। এমনকি খোঁজখবর নেওয়াও অন্য ব্যক্তির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হ্যাঁ, খ্রিস্টানদের যতদূর সম্ভব মিলেমিশে এবং শান্তিতে থাকার চেষ্টা করে চলতে হবে। কখনও কখনও সদয় কথাবার্তা, যা যত্ন এবং বিবেচনা প্রকাশ করে, তা এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করবে।
১০ অন্য পরিস্থিতিগুলোতে, একজন নিয়োগকর্তা হয়তো তার মতামত অন্য কর্মীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চান আর হয়তো চান যেন প্রত্যেকে কোনো জাতীয়বাদমূলক অনুষ্ঠান অথবা অশাস্ত্রীয় প্রকৃতির কোনো উদ্যাপনে অংশ নেয়। একজন খ্রিস্টানের বিবেক যখন তাকে সেখানে অংশ নিতে বাধা দেয়, তখন তা হয়তো এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। নিয়োগকর্তার ইচ্ছা মেনে চলা কত বড় ভুল হবে, সেই মুহূর্তে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়তো বিজ্ঞের কাজ হবে না। সর্বোপরি, যারা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তাদের কাছে সেইরকম অনুষ্ঠান বা উদ্যাপনে অংশ নেওয়া হয়তো সঠিক বলে মনে হতে পারে। (১ পিতর ২:২১-২৩) সম্ভবত আপনি ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে আপনার কারণগুলো সদয়ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যের পরিশোধে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করবেন না। একজন খ্রিস্টানের উচিত রোমীয় ১২:১৮ পদে বলা উত্তম পরামর্শ অনুসরণ করা: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”
স্কুলে দয়া
১১. সহপাঠীদের প্রতি দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে অল্পবয়স্করা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়?
১১ অল্পবয়স্কদের জন্য সহছাত্রছাত্রীদের প্রতি দয়া দেখানো সত্যিকারের এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা প্রায়ই সহপাঠীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চায়। কিছু ছেলে অন্য ছাত্রছাত্রীরা যাতে তাদের প্রশংসা করে, সেই জন্য পুরুষালি আচরণ দেখায়, এমনকি স্কুলের অন্যদেরকে উত্ত্যক্ত করে থাকে। (মথি ২০:২৫) অন্যান্য ছেলেমেয়ে খেলাধুলায় এবং অন্যান্য কাজে তাদের পাণ্ডিত্যকে জাহির করে। তাদের ক্ষমতা নিয়ে বড়াই করতে গিয়ে তারা প্রায়ই সহপাঠী এবং অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নির্দয় ব্যবহার করে, ভুলভাবে চিন্তা করে যে এটা যেকোনোভাবে তাদের শ্রেষ্ঠ করে তোলে। একজন অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানকে সতর্ক থাকতে হবে যেন সে সেই ব্যক্তিদের অনুকরণ না করে। (মথি ২০:২৬, ২৭) প্রেরিত পৌল বলেছেন যে, “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর” এবং প্রেম “আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না।” তাই, একজন খ্রিস্টান নির্দয় কাজ করে এমন ব্যক্তিদের খারাপ উদাহরণ অনুকরণ করার নয় বরং সহপাঠীদের সঙ্গে আচরণের সময় শাস্ত্রীয় পরামর্শ মেনে চলার বাধ্যবাধকতার অধীন রয়েছে।—১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.
১২. (ক) তাদের শিক্ষকদের প্রতি দয়ালু হওয়া কেন অল্পবয়স্কদের জন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে? (খ) নির্দয় হওয়ার চাপের মুখে সাহায্য পাওয়ার জন্য অল্পবয়স্করা কার ওপর নির্ভর করতে পারে?
১২ অল্পবয়স্কদের তাদের শিক্ষকদের সঙ্গেও দয়াপূর্ণ আচরণ করা উচিত। অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের শিক্ষকদের উত্ত্যক্ত করে মজা পায়। স্কুলের আইনগুলোকে লঙ্ঘন করে, এমন কাজগুলোতে জড়িত হয়ে তারা যখন তাদের শিক্ষকদের অসম্মান করে, তখন তারা নিজেদের চালাক বলে মনে করে। ভয় দেখিয়ে তারা হয়তো অন্যদেরও তাদের দলে যোগ দিতে বলে। একজন অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান যখন তাদের সঙ্গে যোগ দিতে রাজি না হয়, তখন সে উপহাস বা খারাপ ব্যবহারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। স্কুলের বছরগুলোতে এই ধরনের পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হওয়া দয়া দেখানোর বিষয়ে একজন খ্রিস্টানের সংকল্পকে পরীক্ষায় ফেলে। কিন্তু মনে রাখবে যে, যিহোবার একজন অনুগত দাস হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিত থাকো যে, জীবনের এই কঠিন মুহূর্তগুলোতে তিনি তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তোমাকে সাহায্য করবেন।—গীতসংহিতা ৩৭:২৮.
প্রতিবেশীদের প্রতি দয়া
১৩-১৫. প্রতিবেশীদের প্রতি দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে কী বাধা হতে পারে এবং কীভাবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করা যেতে পারে?
১৩ আপনি কোনো বাড়িতে, আ্যপার্টমেন্টে অথবা অন্য যেকোনো জায়গায়ই থাকুন না কেন, আপনি প্রতিবেশীদের মঙ্গলের জন্য দয়া দেখানোর এবং চিন্তা প্রকাশ করার উপায়গুলোর কথা ভাবতে পারেন। আবারও, তা সবসময় সহজ নয়।
১৪ আপনার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী যদি আপনার বংশ, জাতিয়তা অথবা ধর্মের কারণে আপনার প্রতি প্রতিকূল ধারণা রাখে, তা হলে কী? কখনও কখনও যদি তারা রূঢ় হয় অথবা আপনাকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করে, তা হলে কী? যিহোবার একজন দাস হিসেবে যতদূর সম্ভব দয়া দেখানো উপকারী হবে। আপনি সতেজদায়ক আলাদা ব্যক্তি হিসেবে ভিন্ন হবেন, যা সত্যিই যিহোবার প্রশংসা করে, যিনি দয়ার আদর্শস্বরূপ। আপনি কখনও জানেন না যে, আপনার দয়ার কারণে কখন প্রতিবেশীর মনোভাবের পরিবতর্ন হতে পারে। তিনি এমনকি যিহোবার একজন প্রশংসাকারীতেও পরিণত হতে পারেন।—১ পিতর ২:১২.
১৫ কীভাবে দয়া দেখানো যেতে পারে? একটা উপায় হল, পরিবারের সকলের সঙ্গে আচরণ করার সময় আত্মার ফল প্রদর্শন করা। প্রতিবেশীরা হয়তো তা লক্ষ করতে পারে। মাঝে মাঝে আপনি হয়তো প্রতিবেশীর প্রতি ভাল কাজ করতে সমর্থ হতে পারেন। মনে রাখবেন যে, দয়া মানে অন্যদের মঙ্গলের প্রতি সক্রিয় আগ্রহ দেখানো।—১ পিতর ৩:৮-১২.
আমাদের পরিচর্যায় দয়া
১৬, ১৭. (ক) কেন আমাদের জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় দয়া গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কীভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দয়া প্রকাশ করা যেতে পারে?
১৬ আমরা যখন লোকেদের বাড়িতে, ব্যবসায়িক এলাকায় এবং জনসাধারণ্যের জায়গাগুলোতে, তাদের কাছে যাওয়ার জন্য সুসংগঠিত প্রচেষ্টা করে থাকি, তখন আমাদের পরিচর্যায় দয়া দেখানো উচিত। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, আমরা যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করি, যিনি সর্বদা দয়াময়।—যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬.
১৭ আপনার পরিচর্যায় দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে আপনার প্রচেষ্টার অন্তর্ভুক্ত কী? উদাহরণ হিসেবে, রাস্তায় সাক্ষ্যদানের সময় আপনি যখন লোকেদের কাছে এগিয়ে যান, তখন সংক্ষেপে কথা বলে এবং বিবেচক হয়ে আপনি দয়া দেখাতে পারেন। ফুটপাতগুলোতে সাধারণ লোকেদের ভিড় থাকে, তাই সতর্ক থাকুন যাতে আপনি ফুটপাত আটকে না রাখেন। এ ছাড়াও, আপনি যখন ব্যবসায়িক এলাকায় সাক্ষ্য দেন, তখন সংক্ষেপে কথা বলে দয়া দেখান এই কথা মনে রেখে যে, দোকানদারকে ক্রেতাদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
১৮. আমাদের পরিচর্যায় দয়া দেখানোর ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা কোন ভূমিকা পালন করে?
১৮ ঘরে ঘরে পরিচর্যার সময়ে বিচক্ষণতা ব্যবহার করুন। খুব বেশি সময় ধরে সেখানে থাকবেন না, বিশেষ করে যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে। একজন ব্যক্তি যখন আপনার উপস্থিতিতে অধৈর্য হয়ে পড়েন অথবা এমনকি বিরক্ত হন, তখন আপনি কি তা বুঝতে পারেন? হতে পারে পৃথিবীর যে-অংশে আপনি বাস করেন, সেখানে যিহোবার সাক্ষিরা প্রায়ই সাক্ষাৎ করে। যদি তা-ই হয়, তা হলে সবসময় দয়ালু হয়ে এবং হাসিখুশি থেকে বিশেষ বিবেচনা দেখান। (হিতোপদেশ ১৭:১৪) সেই দিন গৃহকর্তার না শুনতে চাওয়ার কারণটা বোঝার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন যে, আপনার একজন খ্রিস্টান ভাই বা বোন খুব সম্ভবত ভবিষ্যতে সেই বাড়িতে আসবে। আপনার যদি কোনো রূঢ় ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়, তা হলে দয়া দেখানোর জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করুন। গলা চড়িয়ে কথা বলবেন না বা বিরাগ দেখাবেন না বরং শান্তভাবে কথা বলুন। একজন দয়ালু খ্রিস্টান গৃহকর্তাকে বাক্যুদ্ধে জড়িত করতে চান না। (মথি ১০:১১-১৪) হতে পারে কোনো একদিন সেই ব্যক্তি সুসমাচার শুনবেন।
খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে দয়া
১৯, ২০. কেন মণ্ডলীতে দয়া প্রয়োজনীয় এবং কীভাবে তা দেখানো যেতে পারে?
১৯ সহবিশ্বাসীদের প্রতি দয়া দেখানোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। (ইব্রীয় ১৩:১) যেহেতু আমরা বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের অংশ তাই একে অপরের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে দয়া গুরুত্বপূর্ণ।
২০ কোনো মণ্ডলী যদি একটা কিংডম হল, দুটো বা আরও বেশি মণ্ডলীর সঙ্গে ভাগ করে নেয়, তা হলে অন্যান্য মণ্ডলীতে যারা রয়েছে তাদের সঙ্গে দয়ালু ব্যবহার করা, তাদের সঙ্গে আপনার কথাবার্তায় মর্যাদা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। সভার সময় নির্ধারণ করা এবং অন্যান্য প্রয়োজনগুলো যেমন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা মেরামতের ব্যবস্থা করার সময়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব সহযোগিতার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। দয়ালু এবং বিবেচক হোন, যদিও সেখানে মতের বিভিন্নতা থাকতে পারে। এভাবে দয়া সর্বত্র বিরাজ করবে এবং অন্যদের মঙ্গলের প্রতি আপনি যে-আগ্রহ দেখান, তাতে যিহোবা সত্যিই আশীর্বাদ করবেন।
ক্রমাগত দয়া দেখান
২১, ২২. কলসীয় ৩:১২ পদের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?
২১ দয়া এমন সর্বগুণসম্পন্ন যে তা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। তাই এটাকে আমাদের খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ করা উচিত। অন্যদের প্রতি দয়া দেখানোকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
২২ প্রতিদিন আমরা সকলে যেন অন্যদের প্রতি দয়ালু হই এবং এভাবে ব্যক্তিগতভাবে প্রেরিত পৌলের কথাগুলো প্রয়োগ করি: “তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর।”—কলসীয় ৩:১২.
আপনার কি মনে আছে?
• কী একজন খ্রিস্টানের জন্য দয়া দেখানোকে কঠিন করে তোলে?
• একজনের পরিবারে দয়া দেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
• স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে এবং প্রতিবেশীদের প্রতি দয়া প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা কী?
• খ্রিস্টানরা কীভাবে তাদের জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় দয়া দেখাতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
পরিবারের সকলে দয়া দেখালে একতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন সহকর্মী অথবা তার পরিবারের লোকেরা যখন অসুস্থ হয়, তখন আপনি দয়া দেখাতে পারেন
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
উপহাস সত্ত্বেও যারা অনুগতভাবে দয়া প্রদর্শন করে, যিহোবা তাদের সহায়তা করেন
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রয়োজনের সময় একজন প্রতিবেশীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হল দয়ার কাজ