সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তরুণ-তরুণীরা, তোমরা কি ভবিষ্যতের জন্য ভিত্তি স্থাপন করছ?

তরুণ-তরুণীরা, তোমরা কি ভবিষ্যতের জন্য ভিত্তি স্থাপন করছ?

তরুণ-তরুণীরা, তোমরা কি ভবিষ্যতের জন্য ভিত্তি স্থাপন করছ?

“আমি তোমাদের পক্ষে যে সকল সঙ্কল্প করিতেছি, তাহা আমিই জানি; সে সকল মঙ্গলের সঙ্কল্প, অমঙ্গলের নয়, তোমাদিগকে শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি দিবার সঙ্কল্প!”যিরমিয় ২৯:১১.

১, ২. তারুণ্যের বছরগুলোকে কোন কোন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে?

 বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তারুণ্যকে জীবনের এক অপূর্ব সময় বলে মনে করে। তারা যখন অল্পবয়স্ক ছিল, তখন তাদের যে-কর্মশক্তি এবং উদ্যম ছিল সেই বিষয়ে তারা স্মরণ করে থাকে। তারা আনন্দের সঙ্গে সেই সময়ের কথা চিন্তা করে, যখন তাদের দায়িত্ব অনেক কম ছিল, যখন তারা অনেক মজা করত এবং তাদের সামনে পুরো জীবনের সুযোগগুলো পড়ে ছিল।

তোমরা যারা অল্পবয়স্ক সম্ভবত বিষয়গুলোকে ভিন্নভাবে দেখে থাকো। তোমাদের হয়তো তরুণ বয়সের আবেগগত এবং শারীরিক পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করার মতো সমস্যাগুলো রয়েছে। স্কুলে তোমরা হয়তো সঙ্গীসাথিদের প্রচণ্ড চাপের সম্মুখীন হও। তোমাদের হয়তো নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, মদ এবং অনৈতিকতাকে প্রতিরোধ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ প্রচেষ্টা করতে হয়। এ ছাড়া, তোমাদের মধ্যে অনেকে নিরপেক্ষতা অথবা বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য বিষয়ের সম্মুখীন হয়ে থাকো। হ্যাঁ, তরুণ বয়স এক কঠিন সময় হতে পারে। তা সত্ত্বেও, এটা হল সুযোগের এক সময়। প্রশ্ন হল, কীভাবে তুমি সেই সুযোগগুলো ব্যবহার করবে?

তোমার তারুণ্যকে উপভোগ কর

৩. তরুণ-তরুণীদের শলোমন কোন পরামর্শ এবং সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

বয়স্ক ব্যক্তিরা তোমাকে বলবে যে, তারুণ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না আর তাদের কথাই ঠিক। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তোমার তারুণ্যকে তুমি পিছনে ফেলে আসবে। তাই, যখন তোমার তা থাকে, তখন সেটা উপভোগ করো। এটাই ছিল রাজা শলোমনের পরামর্শ, যিনি লিখেছিলেন: “হে যুবক, তুমি তোমার তরুণ বয়সে আনন্দ কর, যৌবনকালে তোমার হৃদয় তোমাকে আহ্লাদিত করুক, তুমি তোমার মনোগত পথসমূহে ও তোমার চক্ষুর দৃষ্টিতে চল।” কিন্তু, শলোমন তরুণ-তরুণীদের সাবধান করে দিয়েছিলেন: “তোমার হৃদয় হইতে বিরক্তি দূর কর, শরীর হইতে দুঃখ অপসারণ কর।” তিনি আরও বলেছিলেন: “তরুণ বয়স ও জীবনের অরুণোদয়কাল অসার।”—উপদেশক ১১:৯, ১০.

৪, ৫. অল্পবয়স্কদের পক্ষে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া কেন বিজ্ঞের কাজ? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

শলোমন যা বুঝিয়েছিলেন, তুমি কি তা বুঝতে পেরেছ? উদাহরণস্বরূপ, একজন অল্পবয়স্ক ব্যক্তির কথা চিন্তা করো, যে এক বহুমূল্য উপহার পেয়েছে, হতে পারে এক উত্তরাধিকার। তা দিয়ে সে কী করবে? সে আনন্দফূর্তি করে সেগুলোর সবই খরচ করতে পারে—ঠিক যিশুর দৃষ্টান্তের অপব্যয়ী পুত্রের মতো। (লূক ১৫:১১-২৩) কিন্তু, টাকাপয়সা যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন কী হবে? নিশ্চিতভাবেই সে দুঃখপ্রকাশ করবে যে, সে একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিল! অন্যদিকে, ধরো সেই উপহার সে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করে, হতে পারে এগুলোর বেশির ভাগই বিজ্ঞতার সঙ্গে বিনিয়োগ করে। পরিশেষে, সে যখন এই বিনিয়োগ থেকে উপকার পায়, তখন তোমার কি মনে হয় যে সে তার তরুণ বয়সে আনন্দফূর্তি করে তার সমস্ত টাকাপয়সা খরচ করেনি বলে দুঃখপ্রকাশ করবে? কখনোই না!

তোমার তারুণ্যের বছরগুলোকে ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার বলে মনে করো কারণ সেগুলো সত্যিই তা-ই। কীভাবে তুমি সেগুলো ব্যবহার করবে? ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে শুধু একের পর এক আনন্দফূর্তি করে তুমি সেই সমস্ত কর্মশক্তি এবং উদ্যম ভোগবিলাসের পিছনে অপচয় করতে পার। তবে তুমি যদি তা করো, তা হলে তোমার ক্ষেত্রে “তরুণ বয়স ও জীবনের অরুণোদয়কাল” সত্যিই “অসার” প্রমাণিত হবে। তাই, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে তোমার তারুণ্যের সদ্ব্যবহার করা কত উত্তম!

৬. (ক) শলোমনের কোন পরামর্শ তরুণ-তরুণীদের জন্য নির্দেশনা জোগায়? (খ) অল্পবয়স্কদের জন্য যিহোবা কী করতে চান এবং একজন অল্পবয়সী কীভাবে তা থেকে উপকার পেতে পারে?

শলোমন একটা নীতির বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যা তোমাকে তোমার তারুণ্য সবচেয়ে উত্তমভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেছিলেন: “আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।” (উপদেশক ১২:১) সেটাই হল সফলতার চাবি—যিহোবার কথা শোনো এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করো। যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের বলে দিয়েছিলেন যে, তাদের জন্য তিনি কী করতে চেয়েছিলেন: “আমি তোমাদের পক্ষে যে সকল সঙ্কল্প করিতেছি, তাহা আমিই জানি; সে সকল মঙ্গলের সঙ্কল্প, অমঙ্গলের নয়, তোমাদিগকে শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি দিবার সঙ্কল্প!” (যিরমিয় ২৯:১১) যিহোবা তোমাকেও “শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি” দিতে চান। তুমি যদি তোমার কাজে, চিন্তায় এবং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁকে স্মরণ করো, তা হলে সেই ভবিষ্যৎ এবং আশা উত্তম হবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৬, ১৭; ২১:৩, ৪.

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও”

৭, ৮. কীভাবে একজন অল্পবয়স্ক ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে?

যিহোবাকে স্মরণ করার বিষয়ে যাকোব আমাদের উৎসাহিত করেছেন, যখন তিনি আমাদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) যিহোবা হলেন সৃষ্টিকর্তা, স্বর্গীয় সার্বভৌম, সমস্ত উপাসনা এবং প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) কিন্তু, আমরা যদি তাঁর নিকটবর্তী হই, তা হলে তিনিও আমাদের নিকটবর্তী হবেন। এই ধরনের প্রেমময় আগ্রহ কি তোমার হৃদয়কে উষ্ণ করে না?—মথি ২২:৩৭.

আমরা বেশ কয়েকটা উপায়ে যিহোবার নিকটবর্তী হই। উদাহরণস্বরূপ, পৌল বলেছিলেন: “তোমরা প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক, ধন্যবাদ সহকারে এ বিষয়ে জাগিয়া থাক।” (কলসীয় ৪:২) অন্য কথায়, প্রার্থনা করার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করো। তোমার বাবা অথবা মণ্ডলীর কোনো সহখ্রিস্টান যখন তোমার সামনে প্রার্থনা করে, তখন শুধু আমেন বলেই সন্তুষ্ট হোয়ো না। তুমি কি কখনও যিহোবার প্রতি তোমার হৃদয় উজাড় করে দিয়েছ এবং তুমি যা চিন্তা করো, যা ভয় পাও, যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সম্মুখীন হও, সেগুলো তাঁকে বলেছ? তুমি কি কখনও তাঁকে সেই বিষয়গুলো বলেছ, যেগুলো নিয়ে তুমি কোনো মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করবে? অকপট ও আন্তরিক প্রার্থনা শান্তির অনুভূতি নিয়ে আসে। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) সেগুলো আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে এবং তিনি যে-আমাদের নিকটবর্তী হচ্ছেন, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

৯. কীভাবে একজন তরুণ বা তরুণী যিহোবার কথা শুনতে পারে?

আমরা এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোর মধ্যে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার আরেকটা উপায় দেখি: “পরামর্শ শুন, শাসন গ্রহণ কর, যেন তুমি শেষকালে জ্ঞানবান হও।” (হিতোপদেশ ১৯:২০) হ্যাঁ, তুমি যদি যিহোবার কথা শোনো এবং তাঁর বাধ্য থাকো, তা হলে তুমি ভবিষ্যতের জন্য ভিত্তি স্থাপন করছ। কীভাবে তুমি দেখাতে পার যে, তুমি যিহোবার কথা শোনো? নিঃসন্দেহে, তুমি নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হও এবং কার্যক্রমের বিষয়গুলো শুনে থাকো। এ ছাড়া, পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নে উপস্থিত থেকেও তুমি তোমার “পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও।” (ইফিষীয় ৬:১, ২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) সেটা উত্তম। কিন্তু, তা ছাড়াও সভাগুলোর জন্য তৈরি হওয়ার, নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়ার এবং গবেষণা করার জন্য তুমি কি “সুযোগ কিনিয়া লও”? তুমি যা পড়ো, তা কি প্রয়োগ করার চেষ্টা কর, যাতে তুমি “জ্ঞানবানের” ন্যায় চলতে পার? (ইফিষীয় ৫:১৫-১৭; গীতসংহিতা ১:১-৩) তুমি যদি তা করো, তা হলে তুমি যিহোবার নিকটবর্তী হচ্ছ।

১০, ১১. অল্পবয়স্করা যখন যিহোবার কথা শোনে, তখন তারা কোন মহৎ উপকারগুলো পায়?

১০ হিতোপদেশ বইয়ের শুরুর কথাগুলোতে অনুপ্রাণিত লেখক বাইবেলের সেই বইয়ের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন। সেটা হল, তিনি বলেন, “এতদ্দ্বারা প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়, বুদ্ধির কথা বুঝা যায়; উপদেশ পাওয়া যায় বিজ্ঞতার আচরণ সম্বন্ধে, ধার্ম্মিকতা, বিচার ও ন্যায় সম্বন্ধে; অবোধদিগকে চতুরতা প্রদান করা যায়, যুবক জ্ঞান ও পরিণামদর্শিতা প্রাপ্ত হয়।” (হিতোপদেশ ১:১-৪) তাই, তুমি যখন হিতোপদেশ বইয়ের—ও সেইসঙ্গে বাইবেলের বাকি অংশের—কথাগুলো পড়ো এবং কাজে লাগাও, তখন তুমি ধার্মিকতা এবং ন্যায়নিষ্ঠা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করবে আর যিহোবা তোমাকে তাঁর নিকটবর্তী হতে দেখে খুশি হবেন। (গীতসংহিতা ১৫:১-৫) তুমি যত বেশি বিচারবোধ, বিচক্ষণতা, জ্ঞান এবং পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করবে, তোমার সিদ্ধান্তগুলো তত ভাল হবে।

১১ একজন অল্পবয়স্ক ব্যক্তি এভাবে বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করা কি অযৌক্তিক? না, কারণ অনেক অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান তা-ই করে থাকে। এর ফলে অন্যেরা তাদের সম্মান করে এবং ‘তাহাদের যৌবনকে তুচ্ছ করে না।’ (১ তীমথিয় ৪:১২) তাদের বাবামা উপযুক্তভাবে তাদের জন্য গর্বিত এবং যিহোবা বলেন যে, তারা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) যদিও তারা অল্পবয়স্ক, তারা আস্থা রাখতে পারে যে, অনুপ্রাণিত এই কথাগুলো তাদের প্রতি প্রযোজ্য: “সিদ্ধকে অবধারণ কর, সরলকে নিরীক্ষণ কর; শান্তিপ্রিয় ব্যক্তির শেষ ফল আছে [“সেই ব্যক্তির ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণ হবে,” NW]”।—গীতসংহিতা ৩৭:৩৭.

উত্তম বাছাই করো

১২. অল্পবয়স্কদের করা গুরুত্বপূর্ণ বাছাইগুলোর মধ্যে একটা কী এবং কেন সেই বাছাইয়ের দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি রয়েছে?

১২ তরুণ বয়স হল সেই বাছাইগুলো করার সময়, যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির স্থায়ী পরিণতি রয়েছে। তুমি এখন যে-বাছাইগুলো করো, সেগুলোর মধ্যে কিছু তোমার ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলবে। বিজ্ঞ বাছাইগুলো এক সুখী, সফল জীবনে অবদান রাখে। মূর্খতাপূর্ণ বাছাইগুলো পুরো জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিতে পারে। তোমাকে করতে হয়, এমন দুটো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তা কীভাবে সত্য, সেটা বিবেচনা করো। প্রথমত: মেলামেশা করার জন্য তুমি কাদের বেছে নাও? সেটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? আসলে, অনুপ্রাণিত প্রবাদ বলে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) অন্য কথায়, অবশেষে আমরা তাদের মতোই হব, যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি—হয় জ্ঞানী নতুবা হীনবুদ্ধি। তুমি কোনটা হতে চাইবে?

১৩, ১৪. (ক) সরাসরি লোকেদের সংস্পর্শে আসা ছাড়াও মেলামেশার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) অল্পবয়স্কদের কোন ভুলটি এড়িয়ে চলা উচিত?

১৩ তুমি যখন মেলামেশার বিষয়ে চিন্তা করো, তখন তুমি সম্ভবত লোকেদের সংস্পর্শে থাকার কথা চিন্তা করে থাকো। তা ঠিক কিন্তু এর সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত। তুমি যখন টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখো, সংগীত শোনো, কোনো উপন্যাস পড়ো, সিনেমা দেখতে যাও অথবা ইন্টারনেটের কোনো বিষয় ব্যবহার করো, তখনও তুমি মেলামেশা করছ। সেই মেলামেশা যদি দৌরাত্ম্য এবং অনৈতিক প্রবণতার দিকে উসকে দেয় অথবা নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, মাতাল হওয়া অথবা বাইবেলের নীতিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো কিছু করতে উৎসাহ দেয়, তা হলে তুমি “মূঢ়” ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করছ, যারা এমনভাবে কাজ করে যেন যিহোবা নেই।—গীতসংহিতা ১৪:১.

১৪ তুমি হয়তো মনে করতে পার যে, যেহেতু তুমি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছ এবং মণ্ডলীতে সক্রিয়, তাই দৌরাত্ম্যমূলক সিনেমা অথবা মধুর সুর কিন্তু আপত্তিকর কথাবিশিষ্ট সংগীতের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার ক্ষেত্রে তুমি যথেষ্ট দৃঢ়। তুমি হয়তো মনে করো যে, ইন্টারনেটের অশ্লীল ওয়েব সাইট এক ঝলক দেখলে তা কোনো মন্দ ফল নিয়ে আসবে না। প্রেরিত পৌল তোমাকে বলেছেন যে, তোমার চিন্তা ভুল! তিনি বলেছেন: “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) দুঃখজনক যে, অনেক সম্ভাবনাময় অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান মূর্খদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের উত্তম অভ্যাসকে নষ্ট করে দিয়েছে। তাই, এই ধরনের মেলামেশা পরিহার করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হও। তুমি যদি তা করো, তা হলে তুমি পৌলের পরামর্শ অনুসরণ করবে: “এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।”—রোমীয় ১২:২.

১৫. দ্বিতীয় বাছাইটা কী, যা অল্পবয়স্কদের করতে হয় এবং এই বিষয়ে মাঝে মাঝে তাদের ওপর কোন চাপগুলো প্রয়োগ করা হয়?

১৫ এখন দ্বিতীয় বাছাইটা, যেটার সম্মুখীন তুমি হও। এমন একটা সময় আসবে যখন তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, পড়াশোনা শেষ করার পর তুমি কী করতে চাও। তুমি যদি এমন একটা দেশে বাস করো, যেখানে চাকরি পাওয়া সহজ নয়, তা হলে তুমি হয়তো প্রাপ্তিসাধ্য এমন সবচেয়ে ভাল কাজ পাওয়ার জন্য চাপ অনুভব করতে পার। আবার তুমি যদি ধনী দেশে বাস করো, তা হলে সেখানে বেছে নেওয়ার মতো অনেক কাজ থাকতে পারে, যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আবার অনেক লোভনীয়। উত্তম উদ্দেশ্য নিয়েই তোমার শিক্ষক অথবা তোমার বাবামা হয়তো তোমাকে এমন একটা বৃত্তি অনুধাবন করার পরামর্শ দিতে পারে, যা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, এমনকি হতে পারে সম্পদ অর্জনের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু, এই বৃত্তির জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া তোমার সেই সময়কে একেবারে সীমাবদ্ধ করে দেয়, যা তুমি যিহোবার সেবায় ব্যয় করতে পার।

১৬, ১৭. কীভাবে বিভিন্ন শাস্ত্রপদ একজন অল্পবয়স্ক ব্যক্তিকে চাকরির বিষয়ে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করো।

১৬ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাইবেলের পরামর্শ বিবেচনা করার বিষয়টা মনে রেখ। বাইবেল আমাদের জীবনধারণ করার জন্য কাজ করতে উৎসাহ দেয়, যা দেখায় যে আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। (২ থিষলনীকীয় ৩:১০-১২) তা সত্ত্বেও, এর সঙ্গে অন্যান্য বিষয় জড়িত আছে। আমরা তোমাকে নিচের শাস্ত্রপদগুলো পড়তে এবং কীভাবে সেগুলো একজন অল্পবয়স্ককে কোনো বৃত্তি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করছি: হিতোপদেশ ৩০:৮, ৯; উপদেশক ৭:১১, ১২; মথি ৬:৩৩; ১ করিন্থীয় ৭:৩১; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০. ওই পদগুলো পড়ার পর, তুমি কি সেই বিষয়ের ওপর যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাও?

১৭ জাগতিক চাকরি কখনোই এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত নয় যে, এটা যিহোবার প্রতি আমাদের সেবাকে ম্লান করে দেয়। তুমি যদি শুধু উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে পরিমিত চাকরির জন্য যোগ্য হতে পার, তা হলে ভাল। উচ্চবিদ্যালয়ের পরে যদি তোমার বাড়তি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়, তা হলে বিষয়টা নিয়ে বাবামার সঙ্গে আলোচনা করো। কিন্তু, ‘বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর’ (NW) অর্থাৎ আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখতে কখনও ব্যর্থ হোয়ো না। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) যিরমিয়ের সচিব বারূক যে-ভুল করেছিলেন, সেই ভুল করো না। তিনি সেবা করার বিষয়ে তার বিশেষ সুযোগের প্রতি উপলব্ধিবোধ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং “আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা” করেছিলেন। (যিরমিয় ৪৫:৫) তিনি কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন যে, এই জগতের কোনো “মহৎ বিষয়” তাকে যিহোবার নিকটবর্তী করবে না অথবা যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে না। আজকে আমাদের সম্বন্ধেও এইরকম কিছু বলা যেতে পারে।

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে উপলব্ধি কর

১৮, ১৯. (ক) তোমার বেশির ভাগ প্রতিবেশীই কী ভোগ করছে এবং তাদের প্রতি তোমার কেমন বোধ করা উচিত? (খ) কেন অনেকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষুধা অনুভব করে না?

১৮ তুমি কি প্রচারমাধ্যমে প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষে জর্জরিত দেশগুলোতে ছোট ছেলেমেয়েদের চিত্র দেখেছ? যদি দেখে থাকো, তা হলে নিশ্চিতভাবে তাদের জন্য তোমার মায়া হয়েছিল। তোমার প্রতিবেশী লোকেদের দেখেও কি তুমি একইরকম বোধ করো? কেন করা উচিত? কারণ তাদের মধ্যেও বেশির ভাগ লোক ক্ষুধার্ত। তারা আমোষের দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত দুর্ভিক্ষ ভোগ করছে: “প্রভু সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন দিন আসিতেছে, যে দিনে আমি এই দেশে দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করিব; তাহা অন্নের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণের।”—আমোষ ৮:১১.

১৯ এটা সত্য যে, যারা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই “আত্মাতে দীনহীন” নয়। (মথি ৫:৩) অনেকে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধা অনুভব করে না। কেউ কেউ এমনকি মনে করে যে, তারা যথেষ্ট তৃপ্ত আছে। কিন্তু তারা যদি তা মনে করে, তা হলে তারা “জগতের” মূল্যহীন ‘জ্ঞান’ বা প্রজ্ঞা থেকে পুষ্টি লাভ করছে, যার মধ্যে রয়েছে বস্তুবাদিতা, বৈজ্ঞানিক অনুমান, নৈতিকতার বিষয়ে মতবাদগুলো এবং এই ধরনের অন্যান্য বিষয়। কেউ কেউ মনে করে যে, আধুনিক ‘জ্ঞান’ বা প্রজ্ঞার কাছে বাইবেলের শিক্ষাগুলো সেকেলে। কিন্তু, “জগৎ নিজ জ্ঞান দ্বারা ঈশ্বরকে জানিতে পায় নাই।” জগতের প্রজ্ঞা তোমাকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে না। এটি “ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা” ছাড়া আর কিছুই নয়।—১ করিন্থীয় ১:২০, ২১; ৩:১৯.

২০. যারা যিহোবাকে উপাসনা করে না, তাদের অনুকরণ করা কেন যুক্তিযুক্ত নয়?

২০ তুমি যখন সেই ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েদের চিত্র দেখ, তুমি কি কখনও তাদের মতো হতে চাও? অবশ্যই না! তবুও খ্রিস্টান পরিবারে কিছু তরুণ-তরুণী তাদের চারপাশের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ক্ষুধার্ত লোকেদের মতো হওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছে। সম্ভবত, এই ধরনের অল্পবয়স্করা মনে করে যে, জগতের তরুণ-তরুণীরা দুর্ভাবনাহীন এবং তারা জীবনকে উপভোগ করছে। তারা ভুলে যায় যে, সেই তরুণ-তরুণীরা যিহোবা থেকে বিচ্ছিন্ন। (ইফিষীয় ৪:১৭, ১৮) তারা আধ্যাত্মিক ক্ষুধার খারাপ প্রভাব সম্বন্ধেও ভুলে যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু হল কিশোর বয়সে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এবং অনৈতিকতা, ধূমপান, মাতলামি ও নেশাকর ওষুধের অপব্যবহারের শারীরিক এবং আবেগগত প্রভাবগুলো। আধ্যাত্মিক ক্ষুধার ফলে এক বিদ্রোহী মনোভাব, হতাশাবোধ ও জীবনে নির্দেশনার অভাব দেখা দেয়।

২১. যারা যিহোবার উপাসনা করে না, তাদের ভুল আচারআচরণ গ্রহণ করা থেকে কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি?

২১ তাই, তুমি যখন স্কুলে এমন ব্যক্তিদের মাঝে থাক, যারা যিহোবার সহউপাসক নয়, তখন তাদের আচারআচরণের দ্বারা প্রভাবিত হোয়ো না। (২ করিন্থীয় ৪:১৮) কেউ কেউ আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে অবজ্ঞা করবে। তা ছাড়া, প্রচারমাধ্যম চতুর অপপ্রচার তুলে ধরবে, বোঝাতে চাইবে যে অনৈতিকতা করা, মাতাল হওয়া এবং অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা স্বাভাবিক বিষয়। সেই প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করো। নিয়মিতভাবে সেই লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করে চলো, যারা “বিশ্বাস ও সৎসংবেদ রক্ষা” করে। সবসময় “প্রভুর কার্য্যে . . . উপচিয়া” পড়ো। (১ তীমথিয় ১:১৯; ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) কিংডম হলে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় সবসময় ব্যস্ত থাকো। স্কুলের বছরগুলোতে মাঝে মাঝে সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করো। এভাবে তোমার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে শক্তিশালী করো আর এতে করে তুমি তোমার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে না।—২ তীমথিয় ৪:৫.

২২, ২৩. (ক) একজন অল্পবয়স্ক প্রায়ই যে-সিদ্ধান্তগুলো নেবে, তা কেন অন্যেরা বুঝবে না? (খ) তরুণ-তরুণীদের কী করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে?

২২ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো তোমাকে এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে পরিচালিত করবে, যা অন্যেরা বুঝবে না। উদাহরণস্বরূপ, একজন অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান প্রতিভাবান বাদক ছিল এবং স্কুলে সমস্ত বিষয়ে একজন সম্মানিত ছাত্র ছিল। সে যখন গ্র্যাজুয়েট হয়, তখন তার বাবার সঙ্গে জানালা পরিষ্কার করার ব্যবসায় যোগ দেয়, যাতে সে পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারক অথবা অগ্রগামী হিসেবে তার পছন্দের বৃত্তি চালিয়ে যেতে পারে। তার শিক্ষকরা তার এই সিদ্ধান্তের বিষয়টা কখনও বুঝতে পারেনি কিন্তু তুমি যদি যিহোবার নিকটবর্তী হয়ে থাকো, তা হলে আমরা নিশ্চিত যে তুমি তা বুঝতে পার।

২৩ তোমার তারুণ্যের মূল্যবান সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে তুমি যখন বিবেচনা করো, তখন ‘তোমার নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত কর, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পার।’ (১ তীমথিয় ৬:১৯) তোমার তরুণ বয়সেই—এবং বাকি জীবনে—‘তোমার সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ করিবার’ বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হও। সফল ভবিষ্যতের জন্য এক ভিত্তি প্রস্তুত করার এটাই হল একমাত্র উপায়, যে-ভবিষ্যৎ কখনও শেষ হবে না।

আপনি কোন উপসংহারে এসেছেন?

• কোন অনুপ্রাণিত পরামর্শ অল্পবয়স্কদের তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে?

• কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে একজন তরুণ বা তরুণী ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হইতে’ পারে?

• একজন অল্পবয়স্ক কোন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, যা তার ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ব্যক্তিগত অনুধাবনগুলোকে কি তুমি তোমার তারুণ্যের সমস্ত কর্মশক্তি এবং উদ্যমকে নিঃশেষ করার সুযোগ দেবে?

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিজ্ঞ অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানরা তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে স্পষ্ট রাখে