সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাচীনকালের খেলাধুলা এবং জয়ী হওয়ার গুরুত্ব

প্রাচীনকালের খেলাধুলা এবং জয়ী হওয়ার গুরুত্ব

প্রাচীনকালের খেলাধুলা এবং জয়ী হওয়ার গুরুত্ব

 “যেকেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ব্ববিষয়ে ইন্দ্রিয়দমন করে।” “কোন ব্যক্তি যদি মল্লযুদ্ধ করে, সে বিধিমত যুদ্ধ না করিলে মুকুটে বিভূষিত হয় না।”—১ করিন্থীয় ৯:২৫; ২ তীমথিয় ২:৫.

প্রেরিত পৌল যে-ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলো প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। এই ধরনের প্রতিযোগিতা এবং সেগুলোর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্বন্ধে ইতিহাস আমাদের কী বলে?

সম্প্রতি, গ্রিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোর ওপর এক প্রদর্শনী, নিক—ইল জোকো এ লা ভিটোরিয়া (“নাইক—ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং বিজয়”) রোমের কলোসিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। * প্রদর্শনী সেই প্রশ্নের কিছু উত্তর দিয়েছিল এবং খেলাধুলা সম্বন্ধে একজন খ্রিস্টানের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে চিন্তা করার সুযোগ করে দিয়েছিল।

এক প্রাচীন প্রতিষ্ঠান

খেলাধুলায় রত থাকার ক্ষেত্রে গ্রিসই প্রথম সভ্যতা ছিল না। এমনকি, সা.কা.পূ. প্রায় অষ্টম শতাব্দীতে গ্রিক কবি হোমার এমন এক সমাজের বর্ণনা করেছিলেন, যা বীরোচিত ভাবাদর্শ ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের দ্বারা উদ্দীপিত হয়েছিল, যেখানে সামরিক দক্ষতা ও ক্রীড়াকৌশলকে অত্যন্ত উচ্চমূল্য দেওয়া হতো। সেই প্রদর্শনী ব্যাখ্যা করেছিল যে, গ্রিক উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রথমটা বীর প্রতীকদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় দেবতাদের সম্মানার্থে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে শুরু হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিক সাহিত্যের সবচেয়ে পুরনো গ্রন্থ হোমারের ইলিয়াড বর্ণনা করে যে, কীভাবে আকিলিজের সহযোগী সম্ভ্রান্ত যোদ্ধারা পাটরোক্লসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছিল এবং তাদের সাহসিকতা প্রমাণ করার জন্য মুষ্টিযুদ্ধ, কুস্তি, চাকতি নিক্ষেপ ও বর্শা নিক্ষেপ এবং রথ বা ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল।

পুরো গ্রিস জুড়ে একইরকম উৎসব উদ্‌যাপন করা শুরু হয়েছিল। প্রদর্শনীর তথ্যাদিপূর্ণ পুস্তিকা বলে: “উৎসবগুলো এক মৌলিক সুযোগ প্রদান করেছিল, যেখানে গ্রিকরা তাদের দেবতাদের প্রতি সম্মানপ্রযুক্ত তাদের অশেষ ও বার বার ঘটা হিংস্র বিবাদগুলো দূরে সরিয়ে দিয়ে তাদের আদর্শ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবকে এক শান্তিপূর্ণ অথচ সমরূপ আন্তরিক কৃতিত্ব লাভ করার দিকে চালিত করায় সফল হয়েছিল: যা ছিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।”

নগররাষ্ট্রের দলগুলো উপাসনার সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত সম্মিলিত হওয়ার অভ্যাসকে গ্রহণ করে নিয়েছিল, যাতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোর মাধ্যমে তাদের দেবতাদের সম্মান দেখাতে পারে। পরবর্তী সময়ে, এই ধরনের চারটে উৎসব—অলিম্পিক ও নিমিয়ান গেইম, দুটোই জিউসের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হতো এবং পিথিয়ান ও ইসমিয়ান যথাক্রমে আ্যপোলো ও পোসাইডনের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হতো—দিন দিন গুরুত্ব লাভ করে গ্রিকদের উৎসবের মর্যাদা লাভ করেছিল। অর্থাৎ সেগুলো পুরো গ্রিক বিশ্বের প্রতিযোগীদের জন্য খোলা ছিল। এই উৎসবগুলো উৎসর্গ ও প্রার্থনাকে তুলে ধরত এবং সেইসঙ্গে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বা শিল্পবোধসম্পন্ন প্রতিযোগিতাগুলোর মাধ্যমে দেবতাদের সম্মান দেখাত।

এই উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও সম্মানসূচক উৎসবগুলো সা.কা.পূ. ৭৭৬ সালের বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, যেগুলো প্রতি চার বছর অন্তর জিউসের সম্মানে অলিম্পিয়ায় অনুষ্ঠিত হতো। গুরুত্বের দিক দিয়ে দ্বিতীয়তে ছিল পিথিয়ান উৎসব। প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির ডেলফাইয়ের কাছাকাছি অনুষ্ঠিত হতো, এটাতেও খেলাধুলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু কবিতা ও সংগীতের পৃষ্ঠপোষক আ্যপোলোর সম্মানে গান ও নাচের ওপর জোর দেওয়া হতো।

বিভিন্ন খেলা

আধুনিক খেলাধুলার সঙ্গে তুলনা করলে, খেলার সংখ্যা বেশ সীমিত ছিল এবং কেবল পুরুষরাই তাতে অংশ নিত। প্রাচীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতাগুলোতে কখনও দশটার বেশি খেলা হতো না। কলোসিয়ামে প্রদর্শিত মূর্তি, ভাস্কর্য, মোজাইক এবং টেরাকোটার ফুলদানিগুলোর চিত্রাঙ্কনে সেগুলোর ছবি ছিল।

তিন রকমের দূরত্বে দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো—স্টেডিয়ামে প্রায় ২০০ মিটার; এর দ্বিগুণ, যা আজকের ৪০০ মিটার দৌড়ের সঙ্গে তুলনীয়; এবং দূরপাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতা, যা প্রায় ৪,৫০০ মিটার দূরত্বের। খেলোয়াড়রা পুরোপুরি উলঙ্গ অবস্থায় দৌড়াত এবং অনুশীলন করত। প্রতিযোগীরা পাঁচটা খেলায় অংশ নিত: দৌড়, দীর্ঘলম্ফ, চাকতি নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ এবং কুস্তি। অন্যান্য খেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল মুষ্টিযুদ্ধ এবং প্যানক্রেশিয়াম, যেটাকে বর্ণনা করা হয়েছে “এক পাশবিক খেলা, যার মধ্যে খালি হাতে মুষ্টিযুদ্ধ ও কুস্তি দুটোই ছিল।” এরপর ছিল রথ বা ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতা, যা প্রায় আটটা স্টেডিয়ামের সমান দূরত্বে অনুষ্ঠিত হতো আর এতে ছোট চাকার ওপর পিছন দিকে খোলা হালকা যান ছিল এবং সেটা দুটো বা চারটে ঘোড়ার বাচ্চা বা পূর্ণবয়স্ক ঘোড়া টেনে নিয়ে যেত।

মুষ্টিযুদ্ধ ছিল প্রচণ্ড হিংস্র এবং মাঝে মাঝে মারাত্মক। তাদের হাতের মুষ্টির চারধারে প্রতিযোগীরা শক্ত চামড়ার টুকরো পরত, যা ধ্বংসাত্মক ধাতব কড়ার দ্বারা খচিত ছিল। আপনি নিশ্চয়ই এখন কল্পনা করতে পারছেন যে, কেন স্ট্রাটোফনটে নামের একজন প্রতিযোগী চার ঘন্টা মুষ্টিযুদ্ধ করার পর আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারেননি। প্রাচীন মূর্তি ও মোজাইকগুলো প্রমাণ জোগায় যে, মুষ্টিযোদ্ধারা প্রচণ্ড ভয়ানক বিকৃত চেহারার হয়ে গিয়েছিল।

কুস্তিতে নিয়ম ছিল যে, প্রতিযোগীরা শুধুমাত্র তাদের প্রতিপক্ষের দেহের ওপরের অংশে আঘাত করতে পারবে এবং সেই ব্যক্তি বিজয়ী হতো, যে প্রথমে তিন বার তার প্রতিপক্ষকে মেঝেতে ধরাশায়ী করতে পারত। অন্যদিকে, প্যানক্রেশিয়ামে কোনো বাধাধরা নিয়ম ছিল না। প্রতিযোগীরা লাথি মারতে পারত, ঘুসি মারতে পারত এবং হাড়ের সংযোগস্থল মচকে দিতে পারত। একমাত্র চোখ উপড়ে ফেলা, খামচি দেওয়া এবং কামড় দেওয়া নিষেধ ছিল। লক্ষ্য ছিল একজনের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে মেঝেতে ফেলে দেওয়া এবং জোর করে তাকে বশে আনা। কেউ কেউ এটাকে “সমগ্র অলিম্পিয়ার সবচেয়ে দর্শনীয় খেলা” হিসেবে গণ্য করত।

কথিত আছে যে, প্রাচীনকালের সবচেয়ে বিখ্যাত প্যানক্রেশিয়াম প্রতিযোগিতা সা.কা.পূ. ৫৬৪ সালে অলিম্পিকের চূড়ান্ত খেলায় হয়েছিল। আরাহিওন, যাকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছিল, তিনি তার একজন প্রতিপক্ষের পায়ের আঙুল স্থানচ্যুত করার জন্য তখনও যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। আরাহিওনের মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে তার প্রতিপক্ষ ব্যথায় কাতর হয়ে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বিচারকমণ্ডলী আরাহিওনের মৃতদেহকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল!

ঘোড়ার গাড়ির দৌড় ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত খেলা এবং সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল, যেহেতু বিজয়ী ছিল ঘোড়া ও গাড়ির মালিক, গাড়ির চালক নন। প্রতিযোগিতার সংকটপূর্ণ মুহূর্তগুলো ছিল ঘোড়দৌড়ের শুরুর সময়, যখন আরোহীদের নির্ধারিত সরু পথে থাকতে হতো এবং এর মধ্যে চরম ছিল নির্ধারিত পথের শেষে প্রত্যেক বার মোড় ঘোরার মুহূর্তটি। ভুল করা বা নিয়মভঙ্গ করা দুর্ঘটনা ঘটাতে পারত, যা এই জনপ্রিয় খেলাকে এমনকি আরও বেশি দর্শনীয় করে তুলত।

পুরস্কার

“দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে,” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়।” (১ করিন্থীয় ৯:২৪) জয়ী হওয়াই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ পদক, কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান ছিল না। “জয়, ‘নাইক,’ ছিল খেলার চূড়ান্ত লক্ষ্য,” প্রদর্শনী ব্যাখ্যা করেছিল। “কেবলমাত্র এটাই যথেষ্ট কারণ শুধুমাত্র এটাই ছিল তার ব্যক্তিগত অর্থাৎ দৈহিক ও নৈতিক উভয় চরিত্রের এক প্রকৃত প্রতিফলন এবং তার নিজ শহরের গর্ব।” হোমারের গল্পের একটা লাইন থেকে এই মনোভাব সংক্ষেপে বর্ণনা করা যায়: “আমি সবসময় শ্রেষ্ঠই হতে শিখেছি।”

গ্রিক প্রতিযোগিতাগুলোতে একজন বিজয়ীকে দেওয়া পুরস্কার ছিল পুরোপুরিভাবে রূপক—পাতার তৈরি একটি মুকুট। পৌল এটাকে “ক্ষয়ণীয় মুকুট” বলেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৯:২৫) তা সত্ত্বেও, পুরস্কারের সঙ্গে গভীর তাৎপর্য জড়িত ছিল। এটা সেই প্রাকৃতিক শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করত, যেটি বিজয়ীদের ওপর এর ক্ষমতাকে বর্ষণ করেছিল। একমনে অনুধাবিত সংকল্পে অর্জিত বিজয়ের অর্থ ঐশিক অনুগ্রহ বর্ষিত হওয়ার চেয়ে কোনো অংশ কম ছিল না। প্রদর্শিত বিষয়গুলো দলিল দেখিয়ে প্রমাণ করেছিল যে, কীভাবে প্রাচীন ভাস্কররা ও চিত্রশিল্পীরা নাইককে কল্পনা করেছিল, যা ছিল ডানাসহ বিজয়ের গ্রিক দেবী, যে বিজেতার দিকে মুকুট প্রসারিত করে আছে। অলিম্পিয়ায় একটা জয় ছিল যেকোনো খেলোয়াড়ের কেরিয়ারে শীর্ষবিন্দু।

অলিম্পিকের মুকুটগুলো বুনো জলপাই গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা হতো—ইসমিয়ানের মুকুট পাইন গাছের পাতা দিয়ে, পিথিয়ান চিরসবুজ পাতা দিয়ে এবং নিমিয়ান সেলারি পাতা দিয়ে। অন্য জায়গার প্রতিযোগিতাগুলোর আয়োজকরা শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীদের আকৃষ্ট করার জন্য টাকাপয়সা বা অন্যান্য পুরস্কার দিত। প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত কয়েকটা ফুলদানিতে প্যানাথেনেইক প্রতিযোগিতার পুরস্কারগুলো আঁকা ছিল, যা এথেনা দেবীর সম্মানে এথেন্সে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুদিকে হাতলওয়ালা এই ফুলদানিতে প্রথমে এথেন্স নগরীর মূল্যবান জলপাই তেল ছিল। ফুলদানিগুলোর একপাশে দেবীর ছবি আঁকা ছিল এবং এই কথাগুলো লেখা ছিল, “এথেনার প্রতিযোগীদের জন্য পুরস্কার।” অন্য পাশে একটা নির্দিষ্ট খেলার ছবি ছিল, সম্ভবত সেইরকম একটা যেটাতে অংশ নিয়ে সেই খেলোয়াড় পুরস্কার পেয়েছিলেন।

গ্রিক শহরগুলো তাদের খেলোয়াড়দের খ্যাতিকে ভাগাভাগি করে নিত, যাদের বিজয়গুলো তাদের নিজ সমাজে তাদেরকে বীরোচিত চরিত্র করে তুলত। বিজয়ীদের প্রত্যাবর্তন বিজয়ের শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হতো। তাদের মূর্তি স্থাপন করা হতো তাদের দেবতাদের প্রতি ধন্যবাদ দেওয়ার উপহার হিসেবে—এমন এক সম্মান, যা কোনো মরণশীল ব্যক্তির প্রতি প্রদর্শন করা হতো না—আর কবিরা তাদের সম্মানে গান গাইত। এরপর বিজয়ীরা জনসাধারণ্যের উৎসবগুলোতে প্রথম স্থান গ্রহণ করত এবং জনসাধারণের খরচ থেকে ভাতা পেত।

জিমনেসিয়াম এবং সেখানকার খেলোয়াড়রা

ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে নাগরিক সৈন্যদের অগ্রগতিতে এক অপরিহার্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। গ্রিসের সব শহরে জিমনেসিয়াম ছিল, যেখানে যুবকদের জন্য শারীরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে মেধাগত ও আধ্যাত্মিক শিক্ষাও যুক্ত ছিল। জিমনেসিয়ামের ভবনগুলো শরীরচর্চার জন্য বড় খোলা জায়গার আশেপাশে ছিল, যা ছাদ দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং অন্যান্য ছাদ দেওয়া জায়গাগুলো পাঠাগার ও শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সর্বোপরি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধনী পরিবারগুলোর যুবকরা পরিদর্শন করত, যারা কাজে সময় না দিয়ে বরং শিক্ষার পিছনে দিতে পারত। এখানে, প্রশিক্ষকদের সাহায্যে খেলোয়াড়রা খেলাধুলার জন্য দীর্ঘ, মনোযোগপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে নিজেদের বিলিয়ে দিত, যে-প্রশিক্ষকরা তাদের খাদ্যতালিকা সরবরাহ করত এবং যৌনসম্পর্ক থেকে বিরত থাকার বিষয়টা নিশ্চিত করত।

কলোসিয়াম প্রদর্শনী দর্শকদের প্রাচীন খেলাধুলার উত্তম কল্পিত চিত্রগুলোকে প্রশংসা করার সুযোগ করে দিয়েছিল, যেগুলোর অধিকংশই মূলত গ্রিক ভাস্করদের রোমীয় প্রতিলিপি। যেহেতু প্রাচীন ভাবাদর্শে শারীরিক শুদ্ধতা নৈতিক শুদ্ধতার সমান ছিল এবং তা অভিজাত সম্প্রদায়ের একচেটিয়া সম্পদ ছিল, তাই এই বিজয়ী খেলোয়াড়দের সুঠাম দেহ এক দার্শনিক আদর্শকে প্রতিনিধিত্ব করত। রোমীয়রা সেই ভাস্কর্যগুলোকে শিল্পকলার অবদান হিসেবে মূল্যায়ন করত, যেগুলো দিয়ে স্টেডিয়াম, স্নানাগার, বাসভবন ও প্রাসাদ সজ্জিত করা হয়েছিল।

রোমীয়দের মধ্যে, হিংস্র প্রদর্শনীগুলো সবসময়ই জনপ্রিয় ছিল, তাই মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমস্ত গ্রিক খেলার মধ্যে মুষ্টিযুদ্ধ, কুস্তি এবং প্যানক্রেশিয়াম সর্বোচ্চ অনুমোদন লাভ করেছিল। রোমীয়রা এই ধরনের খেলাগুলোকে সমকক্ষদের মধ্যে তাদের নিজ নিজ মূল্যকে নির্ধারণ করার প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখত না কিন্তু শুধুমাত্র বিনোদন হিসেবে দেখত। তাদের শিক্ষার অংশ হিসেবে সম্ভ্রান্ত যোদ্ধা-খেলোয়াড়দের সমষ্টিগতভাবে খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার প্রাচীন ধারণাকে পরিত্যাগ করা হয়েছিল। এর পরিবর্তে, রোমীয়রা গ্রিক খেলাধুলাকে হয় স্নানের আগে স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম করায় বা এক দর্শনীয় খেলা, যা নিম্নশ্রেণীর পেশাদার ব্যক্তিরা অভ্যাস করত, তেমন সাধারণ বিষয়ে পরিণত করেছিল।

খ্রিস্টানরা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো

ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোর ধর্মীয় প্রকৃতি হল একটা কারণ যেজন্য প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা তা পরিত্যাগ করত, কারণ “প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক?” (২ করিন্থীয় ৬:১৪, ১৬) আজকের খেলাধুলা সম্বন্ধে কী বলা যায়?

এটা স্পষ্ট যে, আধুনিক খেলাধুলা পৌত্তলিক দেবতাদের সম্মান করে না। তা সত্ত্বেও, এটা কি সত্য নয় যে, কিছু কিছু খেলাধুলা প্রায় ধর্মীয় অনুভূতির দ্বারাই পরিবেষ্টিত, যা প্রাচীনকালের খেলাধুলার সঙ্গে তুলনীয়? এ ছাড়া, গত কয়েক বছরের রিপোর্টগুলো যেমন দেখিয়েছে যে, জয়ী হওয়ার জন্য কিছু খেলোয়াড় স্বেচ্ছায় শক্তিবৃদ্ধিকারক ওষুধ গ্রহণ করেছে, যা তাদের স্বাস্থ্যকে ও এমনকি তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।

খ্রিস্টানদের জন্য শারীরিক প্রাপ্তির মূল্য নিতান্তই সীমিত। ‘হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্যের’ আধ্যাত্মিক গুণাবলিই আমাদেরকে ঈশ্বরের চোখে সুন্দর করে তোলে। (১ পিতর ৩:৩, ৪) আমরা উপলব্ধি করি যে, আজকে যারা খেলাধুলায় অংশ নেয় তাদের সকলেরই হিংস্র প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নেই কিন্তু অনেকের রয়েছে। তাদের সঙ্গে মেলামেশা কি আমাদের ‘প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই না করিবার, বরং নম্রভাব রাখিবার,’ শাস্ত্রীয় পরামর্শ মেনে চলতে সাহায্য করবে? অথবা এই ধরনের মেলামেশা কি “নানা প্রকার শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, বিচ্ছিন্নতা” উৎপন্ন করবে না?—ফিলিপীয় ২:৩; গালাতীয় ৫:১৯-২১.

অনেক আধুনিক সম্মিলিত খেলাধুলায় দৌরাত্ম্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট হয় এমন যেকারও উচিত গীতসংহিতা ১১:৫ পদের কথাগুলো মনে রাখা: “সদাপ্রভু ধার্ম্মিকের পরীক্ষা করেন, কিন্তু দুষ্ট ও দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ।”

সঠিক স্থানে রেখে শরীরচর্চা উপভোগ করা যেতে পারে এবং প্রেরিত পৌল তাই বলেছিলেন যে, “শারীরিক দক্ষতার অভ্যাস অল্প বিষয়ে সুফলদায়ক।” (১ তীমথিয় ৪:৭-১০) কিন্তু, তিনি যখন গ্রিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিষয়ে বলেছিলেন, তখন পৌল উপযুক্তভাবেই ইন্দ্রিয়দমন ও ধৈর্যের মতো গুণাবলি যে খ্রিস্টানদের থাকা দরকার, সেই গুরুত্বকে উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্যই শুধু উল্লেখ করেছিলেন। সর্বোপরি, পৌল যে-লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, তা ছিল ঈশ্বরদত্ত অনন্তজীবনের “মুকুট” লাভ করা। (১ করিন্থীয় ৯:২৪-২৭; ১ তীমথিয় ৬:১২) সেই ক্ষেত্রে তিনি আমাদের জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

[পাদটীকা]

^ “জয়” শব্দের জন্য নিক হচ্ছে গ্রিক শব্দ।

[৩১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

মুষ্টিযোদ্ধা বিশ্রামে আছেন

সাধারণ কাল পূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর এই ব্রোঞ্জ নির্মিত শিল্পকর্মটা প্রাচীন মুষ্টিযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাবগুলো দেখায়, যেখানে রোমীয় প্রদর্শনীর তালিকা অনুসারে, “সেই মুষ্টিযোদ্ধাকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে . . . অত্যন্ত ক্লান্তিকর লড়াইগুলোতে রত হওয়ার সময় ‘আঘাতের পরিশোধে আঘাতকে’ এক উত্তম উদাহরণ হিসেবে উচ্চীকৃত করা হয়েছিল।” “সবেমাত্র সমাপ্ত হওয়া লড়াইয়ের চিহ্নগুলো পূর্বের লড়াইয়ের চিহ্নগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়,” বর্ণনাটি বলে চলে।

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতা ছিল প্রাচীন প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ খেলা

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রাচীন শিল্পীরা নাইককে ডানাসহ বিজয়ের গ্রিক দেবী হিসেবে কল্পনা করেছিল, যে বিজয়ীকে মুকুট পরিয়ে দিচ্ছে