সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিরমিয়ের মতো সাহসী হোন

যিরমিয়ের মতো সাহসী হোন

যিরমিয়ের মতো সাহসী হোন

“সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক; সাহস কর, তোমার অন্তঃকরণ সবল হউক; হাঁ, সদাপ্রভুরই অপেক্ষায় থাক।”গীতসংহিতা ২৭:১৪.

১. যিহোবার সাক্ষিরা কোন চমৎকার আশীর্বাদ উপভোগ করে?

 যিহোবার সাক্ষিরা এক আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করে। (যিশাইয় ১১:৬-৯) প্রচণ্ড সমস্যাপূর্ণ এই জগতের মধ্যে তারা সেই সমস্ত সহবিশ্বাসীর সঙ্গে এক অদ্বিতীয় আধ্যাত্মিক পরিবেশ উপভোগ করে, যারা যিহোবা ঈশ্বরের এবং একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে রয়েছে। (গীতসংহিতা ২৯:১১; যিশাইয় ৫৪:১৩) আর তাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশ প্রসারিত হচ্ছে। যারা ‘প্রাণের সহিত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে,’ তারা সকলে এটা বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। (ইফিষীয় ৬:৬) কীভাবে? বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে এবং অন্যদেরও একই বিষয় করার জন্য শিক্ষা দিয়ে আর এভাবে সেই পরমদেশের চমৎকার আশীর্বাদগুলোর অংশী হওয়ার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে।—মথি ২৮:১৯, ২০; যোহন ১৫:৮.

২, ৩. সত্য খ্রিস্টানদের কী ভোগ করতে হয়?

কিন্তু, আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করার মানে এই নয় যে, আমাদের পরীক্ষা ভোগ করতে হবে না। এখনও আমরা অসিদ্ধ আর তাই অসুস্থতা, বার্ধক্য ও অনিবার্য মৃত্যুর তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করি। এ ছাড়া, আমরা ‘শেষ কাল’ বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছি। (২ তীমথিয় ৩:১) যুদ্ধবিগ্রহ, অপরাধ, অসুস্থতা, দুর্ভিক্ষ এবং অন্যান্য প্রচণ্ড দুঃখকষ্ট সমস্ত মানবজাতিকে কষ্ট দেয় আর যিহোবার সাক্ষিরাও এগুলো থেকে মুক্ত নয়।—মার্ক ১৩:৩-১০; লূক ২১:১০, ১১.

এগুলো ছাড়াও, আমরা খুব ভাল করে জানি যে, আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশের উষ্ণ পরিবেশের বাইরে বিরোধিতার শীতল হাওয়া বইছে। যিশু তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে। আমি তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছি, আমার সেই বাক্য স্মরণে রাখিও, ‘দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (যোহন ১৫:১৮-২১) আজকে পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। বেশির ভাগ লোক এখনও আমাদের উপাসনার ধরন বুঝতে পারে না বা এর প্রতি উপলব্ধি দেখায় না। কেউ কেউ আমাদের সমালোচনা করে, উপহাস করে অথবা এমনকি—যিশু যেমন সতর্ক করেছিলেন—ঘৃণা করে। (মথি ১০:২২) প্রায়ই আমরা প্রচারমাধ্যমের দ্বারা ভুল তথ্য এবং বিদ্বেষপরায়ণ অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তু হই। (গীতসংহিতা ১০৯:১-৩) হ্যাঁ, আমরা সকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হই এবং আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো হতাশ হয়ে পড়তে শুরু করে। কীভাবে আমরা সহ্য করতে পারি?

৪. সহ্য করার জন্য সাহায্য পেতে আমরা কোথায় তাকাই?

যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। অনুপ্রাণিত হয়ে গীতরচক লিখেছিলেন: “ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:১৯; ১ করিন্থীয় ১০:১৩) আমাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে যে, আমরা যখন যিহোবার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি, তখন তিনি আমাদের যেকোনো দুঃখকষ্ট সহ্য করার শক্তি দেন। তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম এবং আমাদের সম্মুখস্থ আনন্দ, নিরুৎসাহিতা ও ভয়ের সঙ্গে লড়াই করতে আমাদের সাহায্য করে। (ইব্রীয় ১২:২) এভাবে, বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েও আমরা ক্রমাগত অটল থাকি।

ঈশ্বরের বাক্য যিরমিয়কে শক্তিশালী করেছিল

৫, ৬. (ক) যেসমস্ত সত্য উপাসকরা সহ্য করতে সমর্থ হয়েছিল, তাদের কোন উদাহরণগুলো আমাদের কাছে রয়েছে? (খ) যিরমিয়কে যখন একজন ভাববাদী হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

ইতিহাস জুড়ে, যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা কঠিন পরিস্থিতিগুলো সত্ত্বেও আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল। কেউ কেউ বিচারের সময়ে বাস করত, যখন যিহোবা অবিশ্বস্ত ব্যক্তিদের ওপর তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন। এই ধরনের বিশ্বস্ত উপাসকদের মধ্যে ছিল যিরমিয় এবং তার সমসাময়িক অল্প কিছু ব্যক্তি ও সেইসঙ্গে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা। ওই ঐতিহাসিক উদাহরণগুলো আমাদের উৎসাহের জন্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং সেগুলো অধ্যয়ন করে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। (রোমীয় ১৫:৪) উদাহরণস্বরূপ, যিরমিয়ের কথা বিবেচনা করুন।

যুবক বয়সে যিরমিয়কে যিহূদায় ভাববাদী হিসেবে সেবা করার জন্য বলা হয়েছিল। এটা কোনো সহজ কার্যভার ছিল না। অনেকে মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করত। যদিও যোশিয় বিশ্বস্ত ছিলেন, যিনি যিরমিয় যখন পরিচর্যা শুরু করেছিলেন, তখন রাজা ছিলেন কিন্তু তার পরবর্তী সমস্ত রাজা অবিশ্বস্ত ছিল এবং লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল—ভাববাদী এবং যাজকরা—তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই সত্যের পক্ষে ছিল না। (যিরমিয় ১:১, ২; ৬:১৩; ২৩:১১) তাই, যিহোবা যখন যিরমিয়কে একজন ভাববাদী হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন, তখন তিনি কেমন বোধ করেছিলেন? তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন! (যিরমিয় ১:৮, ১৭) যিরমিয় প্রথমে যে-প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা স্মরণ করে বলেছিলেন: “আমি কহিলাম, হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, দেখ, আমি কথা কহিতে জানি না, কেননা আমি বালক।”—যিরমিয় ১:৬.

৭. যিরমিয় তার এলাকায় কোন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন আর তিনি কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

যিরমিয়ের এলাকার বেশির ভাগ লোকই সাড়া দেয়নি এবং প্রায়ই তিনি প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। একবার পশ্‌হূর যাজক তাকে মারধর করেছিলেন এবং তাকে হাড়িকাঠে বদ্ধ করে রেখেছিলেন। সেই সময়ে যিরমিয় কেমন বোধ করেন, তা তিনি বর্ণনা করেছিলেন: “তাঁহার [যিহোবার] বিষয় আর উল্লেখ করিব না, তাঁহার নামে আর কিছু কহিব না।” হতে পারে মাঝে মাঝে আপনিও একইরকম অনুভব করেন—হাল ছেড়ে দিতে চান। লক্ষ করুন যে, কী যিরমিয়কে অটল থাকতে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমার হৃদয়ে [ঈশ্বরের বাক্য অথবা বার্তা] যেন দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ হয়; তাহা সহ্য করিতে করিতে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়ি, আর তিষ্ঠিতে পারি না।” (যিরমিয় ২০:৯) আপনার ওপরও কি ঈশ্বরের বাক্যের একই প্রভাব রয়েছে?

যিরমিয়ের সঙ্গীরা

৮, ৯. (ক) ভাববাদী ঊরিয় কোন দুর্বলতা দেখিয়েছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল? (খ) কেন বারূক নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন এবং তাকে কীভাবে সাহায্য করা হয়েছিল?

যিরমিয় তার ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কাজে একা ছিলেন না। তার সঙ্গীরাও ছিল এবং তারা অবশ্যই তাকে উৎসাহ দিয়েছিল। কিন্তু, মাঝে মাঝে তার সঙ্গীরা বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করেনি। উদাহরণস্বরূপ, একজন সহভাববাদী ঊরিয় “যিরমিয়ের সমস্ত বাক্যের ন্যায়” যিরূশালেম এবং যিহূদার বিরুদ্ধে সাবধানবাণী বলায় ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু, রাজা যিহোয়াকীম যখন ঊরিয়কে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন ভাববাদী ভয় পেয়ে মিশরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এটা তাকে রক্ষা করেনি। এরপর রাজার লোকেরা তার পিছনে পিছনে গিয়ে তাকে বন্দি করে যিরূশালেমে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল, যেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। যিরমিয়কে তা কত আঘাতই না দিয়েছিল!—যিরমিয় ২৬:২০-২৩.

যিরমিয়ের আরেকজন সঙ্গী ছিলেন তার সচিব বারূক। যিরমিয়ের জন্য বারূক ছিলেন এক উত্তম সহকারী কিন্তু একবার তিনিও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি এই বলে অভিযোগ করতে শুরু করেছিলেন: “হায় হায়, ধিক্‌ আমাকে! কেননা সদাপ্রভু আমার ব্যথার উপরে দুঃখ যোগ করিয়াছেন; আমি কোঁকাইতে কোঁকাইতে শ্রান্ত হইয়াছি, কিছুমাত্র বিশ্রাম পাইতেছি না।” নিরুৎসাহিত হয়ে বারূক আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি হারাতে শুরু করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিহোবা সদয়ভাবে বারূককে বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাকে সংশোধন করা হয়েছিল। এরপর তাকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে, যিরূশালেমের ধ্বংসের সময়ে তিনি রক্ষা পাবেন। (যিরমিয় ৪৫:১-৫) বারূক যখন পুনরায় আধ্যাত্মিক ভারসাম্য লাভ করেছিলেন, তখন যিরমিয় কত উৎসাহই না পেয়েছিলেন!

যিহোবা তাঁর ভাববাদীকে সাহায্য করেছিলেন

১০. যিরমিয়ের কাছে যিহোবা সাহায্যের কোন প্রতিজ্ঞাগুলো করেছিলেন?

১০ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল যে, যিহোবা যিরমিয়কে পরিত্যাগ করেননি। তাঁর ভাববাদী কেমন বোধ করেছেন, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এবং তার যে-শক্তি ও সাহায্যের দরকার ছিল, তা তিনি দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যিরমিয় তার পরিচর্যার শুরুতে যখন নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তখন যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “উহাদের সম্মুখে ভীত হইও না, কেননা তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” এরপর, যিহোবা তাঁর ভাববাদীকে তার কার্যভার সম্বন্ধে তথ্য জানানোর পর বলেছিলেন: “তাহারা তোমার সহিত যুদ্ধ করিবে, কিন্তু তোমাকে পরাজয় করিতে পারিবে না, কারণ তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যিরমিয় ১:৮, ১৯) কত সান্ত্বনাদায়ক! আর যিহোবা তাঁর কথা রেখেছিলেন।

১১. কীভাবে আমরা জানি যে, যিরমিয়কে সহযোগিতা করার বিষয়ে যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছিলেন?

১১ তাই, হাড়িকাঠে বন্দি থাকার এবং জনগণের উপহাসের সম্মুখীন হওয়ার পর যিরমিয় আস্থার সঙ্গে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু প্রবল পরাক্রান্ত বীরের ন্যায় আমার সঙ্গে থাকেন, এই জন্য আমার তাড়নাকারিগণ উছোট খাইবে, প্রবল হইবে না, . . . তাহারা মহালজ্জিত হইবে।” (যিরমিয় ২০:১১) পরবর্তী বছরগুলোতে যখন যিরমিয়কে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন যিহোবা সবসময় তার সঙ্গে ছিলেন এবং বারূকের মতো যিরমিয় স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, যেখানে তার তাড়নাকারীরা এবং যারা তার সাবধানবাণীতে কান দেয়নি, তারা হয় প্রাণ হারিয়েছিল নতুবা তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

১২. নিরুৎসাহিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকা সত্ত্বেও, আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১২ যিরমিয়ের মতো, আজকেও যিহোবার অনেক সাক্ষি বিভিন্ন কষ্ট সহ্য করে। আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, এগুলোর কিছু কিছু আমাদের নিজেদের অসিদ্ধতার কারণে ঘটে থাকে, অন্যগুলো এই জগতের নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতিগুলোর কারণে হয়, আবার অন্যান্য কষ্ট আমাদের কাজের বিরোধিতা করে, এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসে। এই ধরনের দুঃখকষ্ট নিরুৎসাহজনক হতে পারে। যিরমিয়ের মতো আমরা হয়তো আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করতে পারি। বস্তুতপক্ষে, মাঝে মাঝে আমরাও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব বলে আশা করতে পারি। নিরুৎসাহিতা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসার গভীরতাকে পরীক্ষা করে। তাই, আসুন আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যেন নিরুৎসাহিতা আমাদেরকে যিহোবার সেবা থেকে সরিয়ে না দেয়, যা কিনা ঊরিয় তার ক্ষেত্রে ঘটতে দিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, আসুন আমরা যিরমিয়কে অনুকরণ করি এবং যিহোবার সমর্থনের বিষয়ে আস্থা রাখি।

যেভাবে নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করা যায়

১৩. কীভাবে আমরা যিরমিয় এবং দায়ূদের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?

১৩ যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে যিরমিয়ের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তিনি তাঁকে তার গভীর অনুভূতিগুলো সম্বন্ধে বলতেন ও শক্তির জন্য মিনতি করতেন। এটা হল অনুসরণ করার মতো এক উত্তম উদাহরণ। প্রাচীনকালের দায়ূদ, যিনি শক্তির একই উৎসের দিকে তাকিয়েছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার বাক্যে কর্ণপাত কর, আমার কাকূক্তিতে মনোযোগ কর। মম রাজন্‌, মম ঈশ্বর, মম আর্ত্তনাদের রব শুন, কেননা আমি তোমারই কাছে প্রার্থনা করিতেছি।” (গীতসংহিতা ৫:১, ২) দায়ূদের জীবনের অনুপ্রাণিত বিবরণ দেখায় যে, যিহোবা বার বার দায়ূদ সাহায্য চেয়ে যে-প্রার্থনা করেছিলেন, তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ১৮:১, ২; ২১:১-৫) একইভাবে, যখন চাপগুলো অনেক দুর্বহ হয় অথবা আমাদের সমস্যাগুলোকে অজেয় বলে মনে হয়, তখন প্রার্থনায় যিহোবার শরণাপন্ন হওয়া এবং আমাদের মনখুলে কথা বলা সবচেয়ে সান্ত্বনাদায়ক হবে। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৬-১৮) আমাদের কথা শুনতে যিহোবা কখনও অসম্মত হন না। বরং, তিনি আমাদের এই আশ্বাস দেন যে, ‘তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৬, ৭) কিন্তু, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা এবং এরপর তিনি যা বলেন, তা না শোনা যুক্তিযুক্ত হবে না, হবে কি?

১৪. যিরমিয়ের ওপর যিহোবার বাক্যের কোন প্রভাব ছিল?

১৪ কীভাবে যিহোবা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন? আবারও যিরমিয়ের কথা বিবেচনা করুন। যেহেতু যিরমিয় একজন ভাববাদী ছিলেন, তাই যিহোবা সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। যিরমিয় তার হৃদয়ের ওপর ঈশ্বরের বাক্যের প্রভাব সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন: “তোমার বাক্য সকল পাওয়া গেল, আর আমি সেগুলি ভক্ষণ করিলাম, তোমার বাক্য সকল আমার আমোদ ও চিত্তের হর্ষজনক ছিল; কেননা হে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমার উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত।” (যিরমিয় ১৫:১৬) হ্যাঁ, তার ওপর ঈশ্বরের নাম কীর্ত্তিত হওয়ায় যিরমিয় আনন্দিত ছিলেন এবং তাঁর বাক্য ভাববাদীর কাছে বহুমূল্য ছিল। তাই, প্রেরিত পৌলের মতো যিরমিয় সেই বার্তা ঘোষণা করার জন্য উৎসুক ছিলেন, যা আস্থাসহকারে তাকে দেওয়া হয়েছিল।—রোমীয় ১:১৫, ১৬.

১৫. কীভাবে আমরা আমাদের হৃদয়ে যিহোবার বাক্য গেঁথে দিতে পারি এবং কোন বিবেচ্য বিষয়গুলো আমাদের নীরব না থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ করবে?

১৫ আজকে যিহোবা কারও সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগ করেন না। কিন্তু, আমাদের কাছে বাইবেলের পাতায় পাতায় ঈশ্বরের বাক্য রয়েছে। তাই, বাইবেল অধ্যয়নের প্রতি আমাদের যদি আন্তরিকতা থাকে এবং আমরা যা শিখি তা নিয়ে যদি গভীরভাবে ধ্যান করি, তা হলে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের হৃদয়েরও “আমোদ ও . . . হর্ষজনক” হবে। আর এই বিষয়ে আমরা রোমাঞ্চিত হতে পারি যে, আমরা যখন ওই বাক্যগুলো অন্যদের সঙ্গে বন্টন করার জন্য যাই, তখন আমরা যিহোবার নাম বহন করি। আসুন, আমরা কখনও যেন ভুলে না যাই যে, আজকে জগতে অন্য আর কোনো লোক যিহোবার নাম ঘোষণা করে না। একমাত্র তাঁর সাক্ষিরা ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে ঘোষণা করে এবং নম্র ব্যক্তিদের যিশু খ্রিস্টের শিষ্য হওয়ার জন্য শিক্ষা দেয়। (মথি ২৮:১৯, ২০) আমাদের কত আশীর্বাদই না করা হয়েছে! যিহোবা প্রেমপূর্ণভাবে আস্থা সহকারে আমাদের যা দিয়েছেন, তা বিবেচনা করে কীভাবে আমরা নীরব থাকতে পারি?

আসুন আমরা আমাদের সংসর্গের বিষয়ে সতর্ক থাকি

১৬, ১৭. সংসর্গের বিষয়ে যিরমিয়ের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল এবং কীভাবে আমরা তাকে অনুকরণ করতে পারি?

১৬ যিরমিয় এমন কিছুর বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন, যা তাকে সাহসী হতে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমি পরিহাসকারীদের সভাতে বসি নাই, উল্লাস করি নাই; তোমার হস্ত প্রযুক্ত একাকী বসিতাম, কেননা তুমি আমাকে ক্রোধে পূর্ণ করিয়াছ।” (যিরমিয় ১৫:১৭) যিরমিয় কুসংসর্গের দ্বারা কলুষিত হওয়ার চেয়ে বরং একা থাকতেন। আজকে আমরাও বিষয়গুলোকে একইভাবে দেখি। আমরা কখনও পৌলের এই সাবধানবাণী ভুলে যাই না যে, “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে,” এমনকি যে-শিষ্টাচার আমাদের বহু বছর ধরে ছিল।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.

১৭ কুসংসর্গ আমাদের চিন্তাভাবনাকে কলুষিত করার জন্য জগতের আত্মাকে সুযোগ করে দিতে পারে। (১ করিন্থীয় ২:১২; ইফিষীয় ২:২; যাকোব ৪:৪) তা হলে, আসুন ক্ষতিকর সংসর্গ শনাক্ত করার এবং সেগুলো পুরোপুরি পরিহার করার জন্য আমরা আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল পটু বা প্রশিক্ষিত করি। (ইব্রীয় ৫:১৪) পৌল যদি আজকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতেন, তা হলে সেই খ্রিস্টান ব্যক্তিকে তিনি কী বলতেন বলে আপনার মনে হয়, যিনি অনৈতিক অথবা দৌরাত্ম্যমূলক সিনেমা বা দৌরাত্ম্যমূলক খেলাধুলা দেখেন? সেই ভাইকে তিনি কীভাবে পরামর্শ দিতেন, যিনি ইন্টারনেটে পুরোপুরি অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার চেষ্টা করেন? সেই খ্রিস্টান সম্বন্ধে তিনি কেমন মনে করতেন, যিনি ভিডিও গেমস খেলার অথবা টেলিভিশন দেখার পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করেন কিন্তু উত্তম ব্যক্তিগত অধ্যয়নের অভ্যাস নেই?—২ করিন্থীয় ৬:১৪খ; ইফিষীয় ৫:৩-৫, ১৫, ১৬.

সবসময় আধ্যাত্মিক পরমদেশে থাকা

১৮. আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকার জন্য কী আমাদের সাহায্য করবে?

১৮ আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশকে মূল্যবান গণ্য করি। আজকের জগতে এমন কিছু নেই, যা এটার সমরূপ। এমনকি অবিশ্বাসীরাও খ্রিস্টানদের একে অপরের মধ্যে যে-প্রেম, বিবেচনা এবং দয়া রয়েছে, সেই বিষয়ে মন্তব্য করে। (ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২) তা সত্ত্বেও, আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে আমাদের নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। সুসংসর্গ, প্রার্থনা এবং উত্তম অধ্যয়নের অভ্যাস আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো আমাদের যিহোবার ওপর পূর্ণ আস্থা নিয়ে যেকোনো পরীক্ষার মোকাবিলা করতে শক্তিশালী করবে।—২ করিন্থীয় ৪:৭, ৮.

১৯, ২০. (ক) কী আমাদের সহ্য করতে সাহায্য করবে? (খ) পরের প্রবন্ধটি কাদের উদ্দেশে এবং এটি কাদের জন্যও আগ্রহের বিষয়?

১৯ যারা আমাদের বাইবেলের বার্তাকে ঘৃণা করে, তাদেরকে কখনও আমাদের ভয় দেখাতে ও আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করতে দেওয়া উচিত নয়। যে-শত্রুরা যিরমিয়কে তাড়না করেছিল, তাদের মতো যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা আসলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে। তারা জয়ী হবে না। যিহোবা, যিনি আমাদের বিরোধীদের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী, তিনি আমাদের বলেন: “সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক; সাহস কর, তোমার অন্তঃকরণ সবল হউক; হাঁ, সদাপ্রভুরই অপেক্ষায় থাক।” (গীতসংহিতা ২৭:১৪) যিহোবার অপেক্ষায় থেকে বা তাঁর ওপর আশা রেখে, যা আমাদের হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, আমরা যেন যা উত্তম তা করা থেকে বিরত না হই। আমরা যেন আস্থা রাখি যে, যিরমিয় এবং বারূকের মতো আমরাও ক্লান্ত না হলে শস্য কাটব।—গালাতীয় ৬:৯.

২০ অনেক খ্রিস্টান ক্রমাগত নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করে। তবে অল্পবয়স্করা বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। কিন্তু, তাদেরও চমৎকার সুযোগগুলো রয়েছে। পরের প্রবন্ধটি আমাদের মধ্যে যে-তরুণ-তরুণীরা রয়েছে, সরাসরি তাদের উদ্দেশে। এ ছাড়া, এটা বাবামা এবং মণ্ডলীতে সমস্ত উৎসর্গীকৃত প্রাপ্তবয়স্কের জন্যও আগ্রহের বিষয় হবে, যারা কথা, উদাহরণ এবং সরাসরি সমর্থনের মাধ্যমে মণ্ডলীর অল্পবয়স্কদের সাহায্য করার অবস্থানে আছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমরা নিরুৎসাহমূলক পরিস্থিতিগুলো আশা করতে পারি এবং সাহায্যের জন্য আমাদের কার দিকে তাকানো উচিত?

• এক কঠিন কার্যভার সত্ত্বেও, যিরমিয় কীভাবে নিরুৎসাহিতাকে জয় করেছিলেন?

• এমনকি বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও কী আমাদের হৃদয়কে ‘আমোদিত এবং হর্ষজনক’ করবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরমিয় মনে করেছিলেন যে, একজন ভাববাদী হওয়ার জন্য তার বয়স অনেক কম এবং তিনি অনভিজ্ঞ

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

এমনকি তাড়িত হওয়ার সময়ও যিরমিয় জানতেন যে, যিহোবা “প্রবল পরাক্রান্ত বীরের ন্যায়” তার সঙ্গে আছেন