সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া —এক খ্রিস্টীয় দায়িত্ব

বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া —এক খ্রিস্টীয় দায়িত্ব

বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া —এক খ্রিস্টীয় দায়িত্ব

“তোমাদের বৃদ্ধ বয়স পর্য্যন্ত আমি যে সেই থাকিব, পক্বকেশ হওয়া পর্য্যন্ত আমিই তুলিয়া বহন করিব।”যিশাইয় ৪৬:৪.

১, ২. আমাদের স্বর্গীয় পিতার যত্ন কীভাবে মনুষ্য পিতামাতার নেওয়া যত্ন থেকে আলাদা?

 একান্তভাবে নিয়োজিত বাবামারা তাদের সন্তানদের শৈশব, ছেলেবেলা এবং কিশোর বয়সে লালনপালন করে। এমনকি তরুণ-তরুণীরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং তাদের নিজেদের পরিবার থাকে, তখনও তাদের বাবা ও মা তাদের প্রতি ক্রমাগত প্রেমময় মনোযোগ দেয় এবং সাহায্য প্রদান করে।

মানুষ তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য যা করতে পারে, যদিও সেটার মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু আমাদের স্বর্গীয় পিতা সবসময় তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি প্রেমময় মনোযোগ এবং সাহায্য দিতে সমর্থ। যিহোবা তাঁর প্রাচীনকালের মনোনীত লোকেদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “তোমাদের বৃদ্ধ বয়স পর্য্যন্ত আমি যে সেই থাকিব, পক্বকেশ হওয়া পর্য্যন্ত আমিই তুলিয়া বহন করিব।” (যিশাইয় ৪৬:৪) বয়স্ক খ্রিস্টানদের জন্য এই কথাগুলো কত আশ্বাসদায়ক! যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ত্যাগ করেন না, যারা তাঁর প্রতি অনুগত থাকে। বরং, তিনি তাদের জীবনভর, এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও তাদেরকে প্রয়োজনীয় বিষয় দেওয়া, সমর্থন জোগানো এবং নির্দেশনা দান করার প্রতিজ্ঞা করেন।—গীতসংহিতা ৪৮:১৪.

৩. এই প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য যিহোবার প্রেমময় চিন্তা দেখানোকে আমরা কীভাবে অনুকরণ করতে পারি? (ইফিষীয় ৫:১, ২) আসুন আমরা সেই উপায়গুলো বিবেচনা করি, যেখানে ছেলেমেয়েরা, মণ্ডলীর অধ্যক্ষরা এবং অন্যান্য খ্রিস্টানরা বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের বয়স্ক সদস্যদের যত্ন নিতে পারে।

ছেলেমেয়ে হিসেবে আমাদের দায়িত্ব

৪. খ্রিস্টান ছেলেমেয়েদের তাদের বাবামার প্রতি কোন দায়িত্ব রয়েছে?

“তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও।” (ইফিষীয় ৬:২; যাত্রাপুস্তক ২০:১২) ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে এই সাধারণ কিন্তু অর্থপূর্ণ উদ্ধৃতির মাধ্যমে প্রেরিত পৌল ছেলেমেয়েদের তাদের বাবামার প্রতি যে-দায়িত্ব রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, এই কথাগুলো কীভাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? প্রাক-খ্রিস্টীয় সময়ের হৃদয়গ্রাহী উদাহরণ আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে।

৫. (ক) কী ইঙ্গিত দেয় যে, যোষেফ তার পিতৃদায়িত্ব ভুলে যাননি? (খ) আমাদের বাবামাকে সম্মান করার মানে কী এবং এই বিষয়ে যোষেফ কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে যোষেফের সঙ্গে তার বৃদ্ধ বাবা, কুলপতি যাকোবের কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু, স্পষ্টতই যাকোবের প্রতি যোষেফের পিতৃপ্রেম হারিয়ে যায়নি। বস্তুত, যোষেফ যখন তার ভাইদের কাছে তার আসল পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমার পিতা কি এখনও জীবিত আছেন?” (আদিপুস্তক ৪৩:৭, ২৭; ৪৫:৩) সেই সময় কনান দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তাই, যোষেফ তার বাবার কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, এই বলে: “তুমি আমার নিকটে চলিয়া আইস, বিলম্ব করিও না। তুমি . . . গোশন প্রদেশে বাস করিবে; তুমি আমার নিকটেই থাকিবে। সে স্থানে আমি তোমাকে প্রতিপালন করিব।” (আদিপুস্তক ৪৫:৯-১১; ৪৭:১২) হ্যাঁ, বৃদ্ধ বাবামাকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত তাদের রক্ষা করা ও সেইসঙ্গে তাদের জন্য বস্তুগত বিষয় জোগানো, যখন তারা আর নিজেদের যত্ন নিতে পারে না। (১ শমূয়েল ২২:১-৪; যোহন ১৯:২৫-২৭) যোষেফ আনন্দের সঙ্গে সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

৬. যোষেফ তার বাবার প্রতি কীভাবে অকৃত্রিম ভালবাসা দেখিয়েছিলেন এবং আমরা কীভাবে তার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?

যিহোবার আশীর্বাদে যোষেফ মিশরের একজন ধনী এবং সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ৪১:৪০) কিন্তু, তার ১৩০ বছর বয়সী বাবাকে সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেননি বা খুব বেশি ব্যস্ততা দেখাননি। যাকোব (অথবা ইস্রায়েল) আসছেন জেনে “যোষেফ আপন রথ সাজাইয়া গোশনে আপন পিতা ইস্রায়েলের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন; আর তাঁহাকে দেখা দিয়া তাঁহার গলা ধরিয়া অনেকক্ষণ রোদন করিলেন।” (আদিপুস্তক ৪৬:২৮, ২৯) এই অভ্যর্থনা সৌজন্যমূলক সম্মান দেখানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। যোষেফ তার বৃদ্ধ বাবাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন এবং তার ভালবাসা প্রকাশ করতেও তিনি লজ্জিত ছিলেন না। আমাদের যদি বৃদ্ধ বাবামা থাকে, তা হলে আমরা কি তাদের প্রতি স্নেহের অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একইভাবে উদার হই?

৭. কেন যাকোব চেয়েছিলেন যেন তাকে কনানে কবর দেওয়া হয়?

যিহোবার প্রতি যাকোবের ভক্তি তার জীবনের শেষ পর্যন্ত দৃঢ় ছিল। (ইব্রীয় ১১:২১) ঐশিক প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি তার বিশ্বাসের কারণে যাকোব বলেছিলেন যে, তার মৃত দেহকে যেন কনানে কবর দেওয়া হয়। অনেক খরচ এবং প্রচেষ্টা জড়িত থাকা সত্ত্বেও, যোষেফ এই অনুরোধ রাখার মাধ্যমে তার বাবাকে সম্মান করেছিলেন।—আদিপুস্তক ৪৭:২৯-৩১; ৫০:৭-১৪.

৮. (ক) বৃদ্ধ বাবামার যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান প্রেরণা কী? (খ) পূর্ণ-সময়ের একজন দাস তার বৃদ্ধ বাবামার যত্ন নেওয়ার জন্য কী করেছিলেন? (১৭ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

কোন বিষয়টা যোষেফকে তার বাবার যত্ন নিতে প্রেরণা দিয়েছিল? যিনি তাকে জীবন দিয়েছেন এবং প্রতিপালন করেছেন, তার প্রতি ভালবাসা এবং ঋণী থাকার পাশাপাশি কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবাকে খুশি করার আকুল আকাঙ্ক্ষাও যোষেফের ছিল। আমাদের তা-ই থাকা উচিত। পৌল লিখেছিলেন: “যদি কোন বিধবার পুত্ত্র কি পৌত্ত্রগণ থাকে, তবে তাহারা প্রথমতঃ নিজ বাটীর লোকদের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করিতে ও পিতামাতার প্রত্যুপকার করিতে শিক্ষা করুক; কেননা তাহাই ঈশ্বরের সাক্ষাতে গ্রাহ্য।” (১ তীমথিয় ৫:৪) বাস্তবিকই, যিহোবার প্রতি প্রেম এবং তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ ভয়ই, আমাদের বৃদ্ধ বাবামার যত্ন নিতে পরিচালিত করে, তা করতে গিয়ে এর সঙ্গে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাই জড়িত থাকুক না কেন। *

প্রাচীনরা যেভাবে দেখায় যে তারা যত্ন নেয়

৯. পালকে পালন করার জন্য যিহোবা কাদের নিযুক্ত করেছেন, যাদের মধ্যে বয়স্ক খ্রিস্টানরাও রয়েছে?

দীর্ঘজীবনের শেষের দিকে যাকোব যিহোবাকে “সেই ঈশ্বর, যিনি প্রথমাবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমার পালক হইয়া আসিতেছেন” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৪৮:১৫) আজকে, যিহোবা তাঁর পুত্র “প্রধান পালক,” যিশু খ্রিস্টের নির্দেশনার অধীন খ্রিস্টান অধ্যক্ষ অথবা প্রাচীনদের মাধ্যমে তাঁর পার্থিব দাসদের পালন করেন। (১ পিতর ৫:২-৪) পালের বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার সময় অধ্যক্ষরা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারে?

১০. বয়স্ক খ্রিস্টানদের বস্তুগত সাহায্য জোগানোর জন্য কী করা যেতে পারে? (১৯ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

১০ খ্রিস্টীয় মণ্ডলী শুরু হওয়ার কিছুকাল পরে, প্রেরিতরা অভাবী খ্রিস্টান বিধবাদের মধ্যে খাদ্যের “দৈনিক পরিচর্য্যায়” দেখাশোনা করার জন্য “সুখ্যাতিপন্ন এবং আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ সাত জনকে” নিযুক্ত করেছিলেন। (প্রেরিত ৬:১-৬) পরবর্তী সময়ে, পৌল অধ্যক্ষ তীমথিয়কে সেই উদাহরণযোগ্য বয়স্ক বিধবাদের তালিকাবদ্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যাদের বস্তুগত সাহায্য পাওয়ার অধিকার ছিল। (১ তীমথিয় ৫:৩, ৯, ১০) একইভাবে, মণ্ডলীর অধ্যক্ষরা আজকে বয়স্ক খ্রিস্টানদের যখন প্রয়োজন হয়, তখন স্বেচ্ছায় বাস্তবসম্মত সাহায্য দেয়। কিন্তু, বিশ্বস্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত।

১১. অভাবী বিধবার বিষয়ে যিশু কী বলেছিলেন, যিনি সামান্য দান দিয়েছিলেন?

১১ যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার শেষের দিকে মন্দিরে বসে “লোকেরা ভাণ্ডারের মধ্যে কিরূপে মুদ্রা রাখিতেছে, তাহা দেখিতেছিলেন।” তখন একজন তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। বিবরণ বলে: “একটী দরিদ্রা বিধবা আসিয়া দুইটী ক্ষুদ্র মুদ্রা তাহাতে রাখিল, যাহার মূল্য সিকি পয়সা। যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে ডাকেন এবং তাদের বলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, ভাণ্ডারে যাহারা মুদ্রা রাখিতেছে, তাহাদের সকল অপেক্ষা এই দরিদ্রা বিধবা অধিক রাখিল; কেননা অন্য সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু রাখিয়াছে, কিন্তু এ নিজ অনাটন হইতে, যাহা কিছু ছিল, সমস্ত জীবনোপায় রাখিল।” (মার্ক ১২:৪১-৪৪) টাকার মূল্যে সেই বিধবার দান অত্যন্ত ক্ষুদ্র ছিল কিন্তু যিশু জানতেন যে, তাঁর স্বর্গীয় পিতা এই ধরনের পূর্ণ হৃদয়ের ভক্তির অভিব্যক্তিকে কত মূল্য দেন। দরিদ্র বিধবার বয়স যতই হোক না কেন, তিনি যা করেছিলেন তা যিশুর নজর এড়ায়নি।

১২. বয়স্ক খ্রিস্টানরা যে-অবদান রাখে, সেটার জন্য প্রাচীনরা কীভাবে তাদের উপলব্ধি দেখাতে পারে?

১২ যিশুর মতো খ্রিস্টান অধ্যক্ষরাও, বয়স্ক ব্যক্তিরা সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করে, সেটাকে উপেক্ষা করে না। বয়স্ক ব্যক্তিরা পরিচর্যায় যোগ দেয় ও সভাতে অংশগ্রহণ করে বলে এবং মণ্ডলীর ওপর তাদের ইতিবাচক প্রভাব ও তাদের ধৈর্যের জন্য তাদের প্রশংসা করার কারণ প্রাচীনদের রয়েছে। উৎসাহমূলক আন্তরিক কথাবার্তা বয়স্ক ব্যক্তিদের তাদের পবিত্র পরিচর্যায় “শ্লাঘা করিবার হেতু” পেতে সাহায্য করে আর এভাবে অন্য খ্রিস্টানরা যা করতে সমর্থ অথবা অতীতে তারা যা করেছে, সেগুলোর সঙ্গে নিরুৎসাহমূলক তুলনা এড়ানো যায়।—গালাতীয় ৬:৪.

১৩. কোন কোন উপায়ে প্রাচীনরা বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারে?

১৩ বয়স্ক ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা এবং ক্ষমতাগুলোর দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করানোর মাধ্যমে প্রাচীনরা তাদের মূল্যবান অবদানকে স্বীকার করতে পারে। উদাহরণযোগ্য বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে মাঝে নমুনা অথবা সাক্ষাৎকারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। একজন প্রাচীন বলেন, “আমি যখন এমন একজন বয়স্ক ভাই বা বোনের সাক্ষাৎকার নিই, যিনি সত্যে তাদের সন্তানদের মানুষ করে তুলেছেন, তখন শ্রোতারা সত্যিই তা মনোযোগ দিয়ে শোনে।” আরেকটা মণ্ডলীর প্রাচীনরা রিপোর্ট করে যে, ৭১ বছর বয়সী একজন অগ্রগামী বোন রাজ্য প্রকাশকদের ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিয়মিত হয়ে উঠতে সাহায্য করায় সফল হয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি তাদের “মৌলিক বিষয়গুলো” যেমন বাইবেল এবং দৈনিক শাস্ত্রপদ পড়া আর তারা যা পড়েছে তা নিয়ে ধ্যান করতেও উৎসাহিত করেন।

১৪. কীভাবে এক প্রাচীনবর্গ একজন বয়স্ক সহঅধ্যক্ষের প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছে?

১৪ এ ছাড়া, প্রাচীনরা বয়স্ক সহঅধ্যক্ষদের অবদানকেও মূল্য দেয়। জোজে, যার বয়স ৭০ এর কোঠায় এবং যিনি কয়েক দশক ধরে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন, সম্প্রতি তার বিরাট এক অস্ত্রোপচার হয়েছে। রোগমুক্তির পর স্বাস্থ্যের ক্রমোন্নতি হতে দীর্ঘ সময় লাগায় তিনি মণ্ডলীর একজন পরিচালক অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন। জোজে বলেন, “অন্যান্য প্রাচীনের প্রতিক্রিয়া আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। আমার প্রস্তাব গ্রহণ করার পরিবর্তে, তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে আমার কোন ব্যবহারিক সাহায্যের প্রয়োজন, যাতে আমি আমার দায়িত্বগুলো পালন করে চলতে পারি।” একজন যুবক প্রাচীনের সাহায্যে জোজে একজন পরিচালক অধ্যক্ষ হিসেবে আনন্দের সঙ্গে তার সেবা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন আর এটা মণ্ডলীর জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ হয়েছে। একজন সহপ্রাচীন বলেন: “ভাইবোনেরা একজন প্রাচীন হিসেবে জোজের কাজকে উচ্চমূল্য দেয়। তারা তার অভিজ্ঞতা এবং তার বিশ্বাসের উদাহরণের জন্য তাকে ভালবাসে এবং তাকে সম্মান করে। তিনি আমাদের মণ্ডলীকে সমৃদ্ধ করেন।”

একে অপরের যত্ন নেওয়া

১৫. সমস্ত খ্রিস্টানের কেন তাদের মধ্যে যে-বয়স্ক ব্যক্তিরা রয়েছে, তাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করা উচিত?

১৫ এটা ঠিক নয় যে, বয়স্ক বাবামাদের ছেলেমেয়ে এবং নিযুক্ত প্রাচীনদেরই শুধুমাত্র বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্বন্ধে চিন্তা করা উচিত। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে মনুষ্য দেহের সঙ্গে তুলনা করে পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর দেহ সংগঠিত করিয়াছেন, অসম্পূর্ণকে অধিক আদর করিয়াছেন, যেন দেহের মধ্যে বিচ্ছেদ না হয়, বরং অঙ্গ সকল যেন পরস্পরের জন্য সমভাবে চিন্তা করে।” (১ করিন্থীয় ১২:২৪, ২৫) আরেকটা অনুবাদ এভাবে পড়া হয়: “[শরীরের] বিভিন্ন অংশ সকলই তাদের সাধারণ যত্ন নিতে একে অপরের মঙ্গলের জন্য তৈরি করা হয়েছে।” (নক্স) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে মিলেমিশে কাজ করতে হলে, প্রত্যেক সদস্যকে তার সহবিশ্বাসীদের মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে, যাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছে।—গালাতীয় ৬:২.

১৬. আমরা যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিই, তখন কীভাবে আমরা বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি আগ্রহ দেখাতে পারি?

১৬ খ্রিস্টীয় সভাগুলো বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখানোর এক উত্তম সুযোগ করে দেয়। (ফিলিপীয় ২:৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এইরকম মুহূর্তগুলোতে আমরা কি বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় করে নিই? যদিও তাদের শরীর কেমন আছে, তা জিজ্ঞেস করা ভাল কিন্তু আমরা কি “কোন আত্মিক বর” দিতে পারি, হতে পারে কোনো গঠনমূলক অভিজ্ঞতা অথবা কোনো শাস্ত্রীয় ধারণা বলার মাধ্যমে? যেহেতু কিছু বয়স্ক ব্যক্তির চলাফেরার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে, তাই তারা আমাদের কাছে আসবে এইরকম আশা করার পরিবর্তে তাদের কাছে এগিয়ে যাওয়া দয়ার কাজ হবে। যদি শুনতে কষ্ট হয়, তা হলে আমাদের হয়তো ধীরে ধীরে কথা বলা এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা দরকার। “উভয় পক্ষের . . . আশ্বাস” প্রকৃত হতে হলে, বয়স্ক ব্যক্তি যা বলেন তা আমাদের মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।—রোমীয় ১:১১, ১২.

১৭. যে-বয়স্ক খ্রিস্টানরা ঘর থেকে বের হতে পারে না, তাদের প্রতি আমরা কীভাবে চিন্তা দেখাতে পারি?

১৭ কোনো বয়স্ক ব্যক্তি যদি সভাতে যোগ দিতে না পারেন, তা হলে কী করা যেতে পারে? যাকোব ১:২৭ পদ দেখায় যে, আমাদের দায়িত্ব হল, “ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা।” “তত্ত্বাবধান করা” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক ক্রিয়াপদের একটা অর্থ হল, “সাক্ষাৎ করা।” আর বয়স্ক ব্যক্তিরা আমাদের সাক্ষাৎকে কতই না উপলব্ধি করে! সা.কা. ৬৫ সালের দিকে রোমে বন্দি থাকার সময় “বৃদ্ধ” পৌল মূলত একা ছিলেন। তিনি তার সহকর্মী তীমথিয়কে দেখার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন এবং লিখেছিলেন: “তুমি শীঘ্র আমার কাছে আসিতে যত্ন কর।” (ফিলীমন ৯; ২ তীমথিয় ১:৩, ৪; ৪:৯) যদিও আক্ষরিকভাবে তারা বন্দি নয় কিন্তু কিছু বয়স্ক ব্যক্তি তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারে না। আসলে তারা হয়তো বলছে ‘দয়া করে, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তোমার যথাসাধ্য চেষ্টা কর।’ আমরা কি এইরকম আবেদনের প্রতি সাড়া দিই?

১৮. বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার উপকার কী হতে পারে?

১৮ বয়স্ক ভাই বা বোনকে দেখতে যাওয়ার উপকারী ফলাফলকে কখনো অবহেলা করবেন না। অনীষিফর নামে একজন খ্রিস্টান যখন রোমে ছিলেন, তখন তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে পৌলের খোঁজ করেছিলেন, তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন আর এরপর ‘বার বার তাহার প্রাণ জুড়াইয়াছিলেন।’ (২ তীমথিয় ১:১৬, ১৭) একজন বয়স্ক বোন বলেন, ‘অল্প বয়স্কদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমি ভালবাসি। যে-জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে, সেটা হল তারা আমার সঙ্গে তাদের পরিবারের একজন সদস্যের মতো ব্যবহার করে। এটা আমার উৎসাহকে বাড়িয়ে দেয়।’ আরেকজন বয়স্কা খ্রিস্টান বলেন: “কেউ যখন আমাকে কার্ড পাঠায়, মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ফোন করে অথবা কিছু সময়ের জন্য আমাকে দেখতে আসে, সেটাকে আমি সত্যিই উপলব্ধি করি। এটা মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার মতো।”

যারা যত্ন নেয়, যিহোবা তাদের পুরস্কৃত করেন

১৯. বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া থেকে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?

১৯ বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা এবং তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগানোই এক বিশেষ সুযোগ। যারা যত্ন নেয় তারা দান করার মাধ্যমে যে-প্রচুর আনন্দ আসে, তা আর সেইসঙ্গে তাদের শাস্ত্রীয় দায়িত্ব পরিপূর্ণ করা থেকে সম্পাদনের তৃপ্তিবোধ ও মনের শান্তি লাভ করে। (প্রেরিত ২০:৩৫) সর্বোপরি, যারা বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেয়, তাদের পরবর্তী বছরগুলোতে পরিত্যক্ত হওয়ার ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “দানশীল ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়, জল-সেচনকারী আপনিও জলে সিক্ত হয়।”—হিতোপদেশ ১১:২৫.

২০, ২১. যারা বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেয়, তাদের যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন এবং আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?

২০ যিহোবা ঈশ্বরভয়শীল ছেলেমেয়ে, অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য যত্নবান খ্রিস্টানদের, বয়স্ক সহবিশ্বাসীদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি নিঃস্বার্থভাবে লক্ষ রাখার জন্য পুরস্কৃত করেন। এই ধরনের মনোভাব এই প্রবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” (হিতোপদেশ ১৯:১৭) প্রেম যদি আমাদের হীন এবং দরিদ্র ব্যক্তিদের প্রতি অনুগ্রহ দেখাতে পরিচালিত করে, তা হলে ঈশ্বর এই ধরনের দানকে ঋণ বলে মনে করেন, যা তিনি আশীর্বাদের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। এ ছাড়া, আমাদের বয়স্ক সহউপাসকদের, যাদের মধ্যে অনেকে ‘বিশ্বাসে ধনবান্‌ কিন্তু সংসারে দরিদ্র,’ তাদের প্রতিও প্রেমময় যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি আমাদের প্রতিদান দেন।—যাকোব ২:৫.

২১ ঈশ্বরের প্রতিদান কত উদার! এর অন্তর্ভুক্ত অনন্তজীবন। যিহোবার দাসদের মধ্যে বেশির ভাগ ব্যক্তির জন্যই সেটা হবে পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন, যেখানে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের প্রভাব দূর হয়ে যাবে এবং বিশ্বস্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের যৌবনকালের পূর্ণ বল পুনরায় ফিরে পাবে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫) সেই আশীর্বাদপ্রাপ্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করার সময়, আমরা যেন বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আমাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্ব ক্রমাগত পালন করে চলি।

[পাদটীকা]

^ বয়স্ক বাবামাদের যেভাবে যত্ন নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে বিভিন্ন বাস্তবসম্মত পরামর্শের জন্য ১৯৯৪ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-১০ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনার উত্তর কী?

• ছেলেমেয়েরা কীভাবে তাদের বয়স্ক বাবামাকে সম্মান করতে পারে?

• পালের বয়স্ক সদস্যদের প্রতি প্রাচীনরা কীভাবে উপলব্ধি দেখাতে পারে?

• প্রত্যেক খ্রিস্টান, বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি তাদের অকৃত্রিম আগ্রহ দেখানোর জন্য কী করতে পারে?

• বয়স্ক খ্রিস্টানদের যত্ন নেওয়া থেকে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

তার বাবামার যখন সাহায্যের প্রয়োজন হয়

ফিলিপ ১৯৯৯ সালে লাইবেরিয়াতে একজন স্বেচ্ছাসেবক নির্মাণকর্মী হিসেবে সেবা করার সময় খবর পান যে তার বাবা গুরুতর অসুস্থ। তার মা একা সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে অসমর্থ, তা বুঝতে পেরে তিনি তার বাবার চিকিৎসার দেখাশোনা করার জন্য বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ফিলিপ স্মরণ করে বলেন, ‘ফিরে যাওয়া সহজ ছিল না কিন্তু আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে আমার প্রথম দায়িত্ব হল, আমার বাবামা।’ তিন বছরের মধ্যে তিনি তার বাবামাকে আরও উপযুক্ত একটা বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে আসেন এবং স্থানীয় সহখ্রিস্টানদের সাহায্যে সেই বাড়িকে তার বাবার বিশেষ প্রয়োজনের উপযোগী করে তোলেন।

ফিলিপের মা এখন তার বাবার গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত আছেন। সম্প্রতি, ফিলিপ মেসিডোনিয়ার যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

তারা তার প্রয়োজনগুলোকে উপেক্ষা করেনি

অস্ট্রেলিয়ার ৮৫ বছর বয়স্কা খ্রিস্টান আ্যডাকে যখন তার খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য বাড়িতেই থাকতে হয়, তখন মণ্ডলীর প্রাচীনরা সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিল। তারা সহবিশ্বাসীদের একটা দলের ব্যবস্থা করে, যারা তাকে সাহায্য করতে পারবে। এই ভাই ও বোনেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ধোয়ামোছা, রান্নাবান্না এবং খবর পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে খুশি ছিল।

এই ব্যবস্থা প্রায় দশ বছর আগে নেওয়া হয়েছিল। এ পর্যন্ত ৩০ জনেরও বেশি যিহোবার সাক্ষি আ্যডার যত্ন নিয়েছে। তারা সবসময় তার সঙ্গে দেখা করে, তার সামনে বাইবেলের প্রকাশনাদি পড়ে, সবসময় মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক উন্নতির বিষয়ে জানায় এবং নিয়মিতভাবে তার সঙ্গে প্রার্থনা করে।

একজন স্থানীয় প্রাচীন মন্তব্য করেন: “যারা আ্যডার যত্ন নেয়, তারা তাকে সাহায্য করাকে এক বিশেষ সুযোগ বলে মনে করে। দশকের পর দশক ধরে তার বিশ্বস্ত সেবার দ্বারা অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং তারা তার প্রয়োজনগুলো উপেক্ষা করার কথা চিন্তাও করতে পারে না।”

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বয়স্ক বাবামার জন্য স্নেহের অভিব্যক্তি দেখানোর ক্ষেত্রে আমরা কি উদার?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

মণ্ডলীর সকলে বয়স্ক সহবিশ্বাসীদের প্রতি তাদের প্রেম দেখাতে পারে