সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে তারা আশীর্বাদ লাভ করে

যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে তারা আশীর্বাদ লাভ করে

যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে তারা আশীর্বাদ লাভ করে

“তোমার সম্মুখে প্রণিপাত করিবে, তাহারা তোমার নামের গৌরব করিবে।”গীতসংহিতা ৮৬:৯.

১. কেন আমরা এমন উপায়গুলোতে ঈশ্বরের গৌরব আনতে পারি, যেগুলো জড় সৃষ্টি যা করতে পারে, সেগুলোকে ছাড়িয়ে যায়?

 যিহোবা তাঁর সমস্ত সৃষ্টির কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তাঁর জড় সৃষ্টি যদিও নীরবে তাঁর প্রশংসা নিয়ে আসে কিন্তু আমাদের মানুষদের যুক্তি করার, বোঝার, উপলব্ধি করার ও উপাসনা করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই, গীতরচক আমাদের বলেন: “সমস্ত পৃথিবী! ঈশ্বরের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর। তাঁহার নামের গৌরব কীর্ত্তন কর, তাঁহার প্রশংসা গৌরবান্বিত কর।”—গীতসংহিতা ৬৬:১, ২.

২. ঈশ্বরের নামের গৌরব প্রদান করার আদেশে কারা সাড়া দিয়েছে এবং কেন?

মানবজাতির অধিকাংশই ঈশ্বরকে স্বীকার করতে বা তাঁকে গৌরব প্রদান করতে অসম্মত হয়। কিন্তু, দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় যিহোবার ৬০ লক্ষেরও বেশি সাক্ষি প্রদর্শন করে যে, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলোর মধ্যে দিয়ে তারা ঈশ্বরের “অদৃশ্য গুণ” দেখতে পায় এবং তারা সৃষ্টির নীরব সাক্ষ্য ‘শুনিয়াছে।’ (রোমীয় ১:২০; গীতসংহিতা ১৯:২, ৩) এ ছাড়া, বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তারা যিহোবাকে জানতে ও ভালবাসতে পেরেছে। গীতসংহিতা ৮৬:৯, ১০ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], তোমার বিরচিত সর্ব্বজাতি আসিয়া তোমার সম্মুখে প্রণিপাত করিবে, তাহারা তোমার নামের গৌরব করিবে। কারণ তুমি মহান্‌ এবং আশ্চর্য্য-কার্য্যকারী; তুমিই একমাত্র ঈশ্বর।”

৩. কীভাবে “বিস্তর লোক” ‘দিবারাত্র আরাধনা’ করে?

প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৫ পদ একইভাবে উপাসকদের ‘বিস্তর লোকের’ বিষয় বর্ণনা করে, যারা “দিবারাত্র [ঈশ্বরের] মন্দিরে তাঁহার আরাধনা করে।” এটা এমন নয় যে, ঈশ্বর আক্ষরিকভাবে তাঁর সেবকদের কাছ থেকে বিরতিহীন প্রশংসা দাবি করেন, বরং তাঁর উপাসকরাই হল বিশ্বব্যাপী এক সংগঠন। তাই, কিছু দেশে যখন রাত, তখন পৃথিবীর অন্য অংশে ঈশ্বরের দাসেরা সাক্ষ্যদানে ব্যস্ত থাকে। অতএব বলা যেতে পারে যে, যারা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে, তাদের জন্য সূর্য কখনও অস্ত যায় না। শীঘ্রই “শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই” যিহোবার প্রশংসায় উচ্চস্বর করবে। (গীতসংহিতা ১৫০:৬) কিন্তু, এই সময়ের মধ্যে ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমরা কী করতে পারি? আমরা হয়তো কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি? আর যারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে, সেই লোকেদের জন্য কোন আশীর্বাদগুলো অপেক্ষা করছে? উত্তরে, আসুন আমরা ইস্রায়েলীয় গাদ বংশ সম্বন্ধে বাইবেলের একটি বিবরণ পড়ি।

এক প্রাচীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

৪. গাদ বংশ কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল?

প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার আগে, ইস্রায়েলীয় গাদ বংশের সদস্যরা অনুরোধ করেছিল যে তাদের যেন যর্দনের পূর্ব দিকে পশুপালনের স্থানে বসতি করতে অনুমতি দেওয়া হয়। (গণনাপুস্তক ৩২:১-৫) সেখানে থাকার অর্থ হতো গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো মোকাবিলা করা। পশ্চিমের বংশগুলোর যর্দন উপত্যকার সুরক্ষা থাকবে—সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে এক প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৩:১৩-১৭) কিন্তু, যর্দনের পূর্বাঞ্চল সম্বন্ধে জর্জ আ্যডাম স্মিথের লেখা পবিত্র ভূমির ঐতিহাসিক ভূগোল (ইংরেজি) বলে: “[সেগুলো] সবই বিস্তৃত, বৃহৎ আরবীয় মালভূমিতে বলতে গেলে কোনো মধ্যবর্তী আত্মরক্ষামূলক প্রতিবন্ধকতা নেই। ফলে, সেগুলো সবসময়ই লোভী যাযাবরদের আক্রমণের কাছে অরক্ষিত ছিল, যাদের মধ্যে কিছু দল প্রতি বছর চারণভূমির জন্য সেখানে আক্রমণ করত।”

৫. কীভাবে যাকোব গাদের বংশধরদের আক্রমণের জবাব দিতে উৎসাহিত করেছিলেন?

গাদ বংশ কীভাবে এই ধরনের অবিরাম চাপ মোকাবিলা করতে সফল হয়েছিল? কয়েক শতাব্দী আগে, মৃত্যুশয্যায় তাদের পূর্বপুরুষ যাকোব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “গাদকে সৈন্যদল আঘাত করিবে; কিন্তু সে তাহাদের পশ্চাদ্ভাগে আঘাত করিবে।” (আদিপুস্তক ৪৯:১৯) এই কথাগুলোর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে হয়তো হতাশাজনক মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, সেগুলো আসলে গাদীয়দের দ্বারা পালটা আক্রমণ করার এক আদেশের ইঙ্গিত করেছিল। যাকোব তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তারা যদি তা করে, তা হলে আক্রমণকারীদের এক অবমাননাকর উপায়ে অপসারণ করা হবে, গাদীয়রা তাদের পশ্চাদভাগে আঘাত করবে।

আজকে আমাদের উপাসনার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো

৬, ৭. আজকে খ্রিস্টানদের পরিস্থিতি কীভাবে গাদ বংশের মতো একইরকম?

গাদ বংশের মতো, আজকে খ্রিস্টানরা শয়তানের বিধিব্যবস্থার চাপ ও বোঝার অধীন; কোনো অলৌকিক সুরক্ষা নেই, যা আমাদেরকে এগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে। (ইয়োব ১:১০-১২) আমাদের মধ্যে অনেককে স্কুলে যাওয়ায়, জীবিকা অর্জনে এবং সন্তান লালনপালনে যে-চাপগুলো আসে, তা মোকাবিলা করতে হয়। আর ব্যক্তিগত বা নিজস্ব চাপগুলোর কথাও বাদ দেওয়া যায় না। কাউকে কাউকে কোনো গুরুতর অক্ষমতা বা অসুস্থতার আকারে “মাংসে একটা কন্টক” সহ্য করতে হয়। (২ করিন্থীয় ১২:৭-১০) অন্যেরা নিজেকে কম যোগ্য মনে করার অনুভূতির দ্বারা জর্জরিত। বৃদ্ধ বয়সের “দুঃসময়” হয়তো বয়স্ক খ্রিস্টানদের একসময়ে তাদের যে-শক্তি ছিল, সেই অনুসারে সেবা করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।—উপদেশক ১২:১.

এ ছাড়া, প্রেরিত পৌল আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, “স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (ইফিষীয় ৬:১২) আমরা ক্রমাগত ‘জগতের আত্মার’ কাছে অরক্ষিত, যেটা হল বিদ্রোহ ও নৈতিক কলুষতার আত্মা, যা শয়তান এবং তার মন্দ দূতেরা বৃদ্ধি করে চলছে। (১ করিন্থীয় ২:১২; ইফিষীয় ২:২, ৩) ঈশ্বর ভয়শীল লোটের মতো আমরাও হয়তো আজকে সেই অনৈতিক বিষয়গুলোর দ্বারা ক্লিষ্ট হই, যেগুলো আমাদের চারপাশের লোকেরা বলে ও করে থাকে। (২ পিতর ২:৭) এ ছাড়া, আমরা শয়তানের সরাসরি আক্রমণের কাছে অরক্ষিত। শয়তান অভিষিক্ত ব্যক্তিদের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে যুদ্ধ করছে, “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) যিশুর ‘আরও মেষেরাও’ নিষেধাজ্ঞা ও তাড়নার আকারে শয়তানের আক্রমণ ভোগ করে থাকে।—যোহন ১০:১৬.

বশ্যতা স্বীকার, নাকি পালটা লড়াই?

৮. শয়তানের আক্রমণগুলোর প্রতি আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত এবং কেন?

শয়তানের আক্রমণগুলোর প্রতি আমাদের জবাব কী হওয়া উচিত? প্রাচীন গাদ বংশের মতো, ঈশ্বরের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে বলবান হতে হবে এবং পালটা লড়াই করতে হবে। দুঃখের বিষয় যে, কেউ কেউ জীবনের চাপগুলোর কাছে নতি স্বীকার করতে শুরু করেছে ও তাদের আধ্যাত্মিক দায়িত্বগুলোকে অবহেলা করেছে। (মথি ১৩:২০-২২) একজন সাক্ষি তার মণ্ডলীতে সভায় উপস্থিতি কেন কম ছিল, সেই সম্বন্ধে বলেছিলেন: “ভাইয়েরা আসলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। তারা সবাই-ই অত্যন্ত চাপের মধ্যে রয়েছে।” এটা ঠিক যে, আজকে লোকেদের ক্লান্ত হওয়ার মতো অনেক কারণ রয়েছে। তাই, ঈশ্বরের উপাসনাকে আরেকটা চাপ হিসেবে, এক দুর্বহ বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখা সহজ। কিন্তু সেটা কি এক নিখুঁত—বা সঠিক—দৃষ্টিভঙ্গি?

৯. কীভাবে খ্রিস্টের জোয়াল গ্রহণ করা সতেজতার দিকে পরিচালিত করে?

যিশু তাঁর দিনের জনতাকে কী বলেছিলেন তা বিবেচনা করুন, যারা জীবনের চাপগুলোর দ্বারা একইভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব।” যিশু কি ইঙ্গিত করেছিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতি একজনের পরিচর্যাকে কাটছাট করার দ্বারা বিশ্রাম বা সতেজতা আসবে? এর বিপরীতে যিশু বলেছিলেন: “আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।” একটা যোঁয়ালি বা জোয়াল হচ্ছে কাঠের বা ধাতব কাঠামো, যা কোনো মানুষ বা পশুকে এক ভারী বোঝা বহন করতে সাহায্য করে। তা হলে, কেন একজন এই ধরনের জোয়াল বহন করতে চাইবে? আমরা কি ইতিমধ্যেই “ভারাক্রান্ত” নই? হ্যাঁ, কিন্তু গ্রিক পাঠ্যাংশকে এভাবেও পড়া যেতে পারে: “আমার সঙ্গে, আমার জোয়ালের নিচে এসো।” একটু ভেবে দেখুন: যিশু আমাদের ভার বয়ে নিতে সাহায্য করার প্রস্তাব দেন! আমাদের নিজেদের শক্তিতে তা করতে হয় না।—মথি ৯:৩৬; ১১:২৮, ২৯, পাদটীকা, NW; ২ করিন্থীয় ৪:৭.

১০. ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করায় আমাদের প্রচেষ্টার ফল কী হয়?

১০ যখন আমরা শিষ্যত্বের জোয়াল গ্রহণ করি, আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। “দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।” (যাকোব ৪:৭) তার মানে এই নয় যে, এই কাজ করা সহজ। ঈশ্বরের সেবা করার সঙ্গে অনেক প্রচেষ্টা জড়িত। (লূক ১৩:২৪) কিন্তু, বাইবেল গীতসংহিতা ১২৬:৫ পদে এই প্রতিজ্ঞা করে: “যাহারা সজল নয়নে বীজ বপন করে, তাহারা আনন্দগান-সহ শস্য কাটিবে।” হ্যাঁ, আমরা একজন অকৃতজ্ঞ ঈশ্বরের উপাসনা করি না। তিনি “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, . . . তাহাদের পুরস্কারদাতা” এবং যারা তাঁকে গৌরব প্রদান করে, তাদের আশীর্বাদ করেন।—ইব্রীয় ১১:৬.

রাজ্য প্রচারক হিসেবে ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করা

১১. কীভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যা শয়তানের আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে?

১১ যিশু আদেশ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” প্রচার কাজ হল ঈশ্বরের উদ্দেশে “স্তব-বলি” উৎসর্গ করার প্রাথমিক উপায়। (মথি ২৮:১৯; ইব্রীয় ১৩:১৫) আমাদের “শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরণে” থাকা আমাদের ‘সমগ্র যুদ্ধসজ্জার’ এক অংশ—শয়তানের আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ। (ইফিষীয় ৬:১১-১৫) ক্ষেত্রের পরিচর্যায় ঈশ্বরের প্রশংসা করা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার এক উত্তম উপায়। (২ করিন্থীয় ৪:১৩) এটা আমাদের মন থেকে নেতিবাচক চিন্তাগুলো সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। (ফিলিপীয় ৪:৮) ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়া আমাদের সহউপাসকদের সঙ্গে গঠনমূলক মেলামেশা উপভোগ করতে সাহায্য করে।

১২, ১৩. কীভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় নিয়মিত অংশগ্রহণ পরিবারগুলোকে উপকৃত করতে পারে? উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে বলুন।

১২ এ ছাড়া, প্রচার কাজ গঠনমূলক পারিবারিক কার্যক্রম হতে পারে। অবশ্য, অল্পবয়সীদের ভারসাম্যপূর্ণ আমোদপ্রমোদের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, পরিবার হিসেবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার সময়কে ক্লান্তিকর হিসেবে দেখা উচিত নয়। পরিচর্যায় ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দ্বারা বাবামায়েরা এটাকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে। অল্পবয়সীরা কি সেই কাজগুলো করাই উপভোগ করে না, যা তারা ভালভাবে করতে পারে? ভারসাম্য বজায় রেখে, অল্পবয়সীদের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু দাবি না করে বাবামায়েরা পরিচর্যায় আনন্দ খুঁজে পেতে তাদের সাহায্য করতে পারে।—আদিপুস্তক ৩৩:১৩, ১৪.

১৩ এ ছাড়া, যে-পরিবার একত্রে ঈশ্বরের প্রশংসা করে তা এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তোলে। একজন বোনের কথা বিবেচনা করুন, যাকে তার অবিশ্বাসী স্বামী পাঁচ সন্তানসহ রেখে চলে গিয়েছিলেন। ফলে তাকে চাকরি করার এবং তার সন্তানদের বস্তুগত চাহিদাগুলো জোগানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি কি এতই পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি তার সন্তানদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে অবহেলা করেছিলেন? তিনি স্মরণ করেন: “আমি অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো অধ্যয়ন করেছিলাম এবং যা পড়েছি, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি সন্তানদের নিয়মিতভাবে সভাতে এবং ঘরে ঘরে পরিচর্যায় নিয়ে যেতাম। আমার প্রচেষ্টাগুলোর ফল কী হয়েছিল? আমার পাঁচ সন্তানই বাপ্তিস্ম নিয়েছে।” একইভাবে, পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ আপনাকে আপনার সন্তানদের “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে” লালনপালন করার প্রচেষ্টায় সাহায্য করতে পারে।—ইফিষীয় ৬:৪.

১৪. (ক) কীভাবে অল্পবয়সীরা স্কুলে ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে পারে? (খ) কী অল্পবয়সীদের “সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত” না হতে সাহায্য করে?

১৪ অল্পবয়সীরা, তোমরা যদি এমন কোনো জায়গায় থাকো, যেখানে আইনের অনুমোদন রয়েছে, সেখানে কি তোমরা স্কুলে সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করো, নাকি লোকভয়কে তা করা থেকে বিরত থাকার সুযোগ দাও? (হিতোপদেশ ২৯:২৫) পুয়ের্টো রিকোর ১৩ বছর বয়সী এক সাক্ষি লেখে: “আমি কখনও স্কুলে প্রচার করতে অস্বস্তি বোধ করিনি কারণ আমি জানি যে, এটাই সত্য। ক্লাসে আমি সবসময় আমার হাত তুলি এবং বাইবেল থেকে যা শিখেছি তা বলি। আমার যদি অবসর সময় থাকে, তা হলে আমি লাইব্রেরিতে যাই এবং যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য * বইটি পড়ি। যিহোবা কি তার প্রচেষ্টাগুলোকে আশীর্বাদ করেছেন? সে বলে: “মাঝে মাঝে আমার সহপাঠীরা আমাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আর এমনকি বইয়ের একটা কপিও চায়।” এই ক্ষেত্রে তোমরা যদি পিছিয়ে থাকো, তা হলে হয়তো অধ্যবসায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে তোমাদের নিজেদের পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে, “ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:২) তুমি যখন দৃঢ়প্রত্যয়ী হও যে, তুমি যা শিখেছ তা সত্য, তা হলে তুমি কখনোই “সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত” হবে না।—রোমীয় ১:১৬.

পরিচর্যার এক ‘খোলা দ্বার’

১৫, ১৬. কিছু খ্রিস্টান কোন ‘বৃহৎ ও কার্য্যসাধক এক দ্বারে’ প্রবেশ করেছে এবং ফলস্বরূপ কোন আশীর্বাদগুলো এসেছে?

১৫ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, তার সামনে ‘বৃহৎ ও কার্য্যসাধক এক দ্বার’ খোলা ছিল। (১ করিন্থীয় ১৬:৯) আপনার পরিস্থিতি কি আপনাকে কার্যসাধক এক দ্বারে প্রবেশ করতে অনুমোদন করে? উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত বা সহায়ক অগ্রগামী পরিচর্যায় রত হওয়ার সঙ্গে এক মাসে ৭০ বা ৫০ ঘন্টা প্রচার করা জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই, অগ্রগামীদের বিশ্বস্ত পরিচর্যার জন্য সহখ্রিস্টানরা তাদের উপলব্ধি করে থাকে। কিন্তু, তারা পরিচর্যায় অধিক সময় ব্যয় করে বলে তা তাদেরকে তাদের ভাই ও বোনদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বোধ করায় না। বরং, যিশু যে-মনোভাব গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছিলেন, তারা তা গড়ে তোলে: “আমরা অনুপযোগী দাস, যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম।”—লূক ১৭:১০.

১৬ অগ্রগামীর কাজ করার জন্য আত্মশাসন, ব্যক্তিগত তালিকা এবং ত্যাগস্বীকার করার জন্য ইচ্ছুক মনোভাব থাকা দরকার। কিন্তু, যে-আশীর্বাদগুলো আসে তা মূল্যবান। “সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করতে সমর্থ হওয়া এক প্রকৃত আশীর্বাদ,” তামিকা নামে এক যুবতী অগ্রগামী বলেন। “আপনি যখন অগ্রগামীর কাজ করেন, তখন আপনি বাইবেল অনেক ব্যবহার করেন। আমি যখন ঘরে ঘরে যাই, তখন আমি সেই শাস্ত্রপদগুলোর কথা মনে করতে পারি, যা প্রত্যেক গৃহকর্তার জন্য উপযুক্ত।” (২ তীমথিয় ২:১৫) মাইকা নামে একজন অগ্রগামী বলেন: “সত্য যেভাবে লোকেদের জীবনে প্রভাব ফেলে তা হল আরেক বিস্ময়কর আশীর্বাদ।” একইভাবে ম্যাথিউ নামে একজন যুবকও ‘কাউকে সত্যে আসতে দেখার’ আনন্দের বিষয় বলেন। তিনি আরও বলেন, “অন্য কোনো ধরনের আনন্দ এর স্থান করে নিতে পারে না।”

১৭. একজন খ্রিস্টান কীভাবে অগ্রগামীর কাজ সম্বন্ধে নেতিবাচক অনুভূতিগুলো কাটিয়ে উঠেছিলেন?

১৭ আপনি কি অগ্রগামী কাজের দ্বারে প্রবেশ করার কথা বিবেচনা করতে পারেন? আপনি হয়তো তা করতে চান কিন্তু নিজেকে অযোগ্য মনে করেন। “অগ্রগামীর কাজ সম্বন্ধে আমার নেতিবাচক ধারণা ছিল,” কেনিয়াটে নামে এক যুবতী বোন বলেন। “আমি নিজেকে যোগ্য মনে করতাম না। কীভাবে ভূমিকা প্রস্তুত করতে হয় অথবা শাস্ত্র থেকে যুক্তি করতে হয়, তা আমি জানতাম না।” যাই হোক, তার সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রাচীনরা একজন পরিপক্ব অগ্রগামী বোনকে ঠিক করে দিয়েছিল। “তার সঙ্গে কাজ করা উপভোগ্য ছিল,” কেনিয়াটে স্মরণ করে বলে। “সেটাই আমার মধ্যে অগ্রগামী হওয়ার ইচ্ছা গড়ে তুলেছিল।” কিছু উৎসাহ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হয়তো আপনিও অগ্রগামীর কাজ করতে চাইবেন।

১৮. যারা মিশনারি পরিচর্যায় প্রবেশ করে, তাদের জন্য কোন আশীর্বাদগুলো আসতে পারে?

১৮ অগ্রগামীর কাজ করা হয়তো পরিচর্যার অন্যান্য বিশেষ সুযোগগুলোর দ্বার খুলে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু বিবাহিত দম্পতি হয়তো মিশনারি প্রশিক্ষণের জন্য যোগ্য হতে পারে, যাতে বিদেশে প্রচার করার জন্য পাঠানো যায়। মিশনারিদের অবশ্যই এক নতুন দেশের সঙ্গে, হয়তো নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি এবং নতুন নতুন খাবারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। কিন্তু, আশীর্বাদগুলো সেই অসুবিধাগুলোকে তুচ্ছ করে তোলে। মিলড্রেড নামে মেক্সিকোর একজন অভিজ্ঞ মিশনারি বোন বলেন: “আমি একজন মিশনারি হওয়ার ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্তের জন্য কখনও অনুশোচনা করিনি। একেবারে ছেলেবেলা থেকেই এটা আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল।” তিনি কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করেছেন? “আমার নিজের দেশে বাইবেল অধ্যয়ন খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন ছিল। এখানে আমার চার জন বাইবেল ছাত্র একই সময়ে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতে শুরু করেছে!”

১৯, ২০. কীভাবে বেথেল পরিচর্যা, আন্তর্জাতিক পরিচর্যা, এবং মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল অনেকের জন্য বিভিন্ন আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে?

১৯ এ ছাড়া, যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসগুলোতে যারা বেথেল পরিচর্যা করে, তাদেরও প্রচুর আশীর্বাদ আসে। স্ভেন নামে জার্মানিতে সেবারত একজন যুবক ভাই বেথেলে তার কাজ সম্বন্ধে বলে: “আমি মনে করি যে, আমি এমন কিছু করছি, যেটার চিরস্থায়ী মূল্য রয়েছে। আমি জগতে আমার দক্ষতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারতাম। তা হলে, এটা ব্যাঙ্কে টাকা বিনিয়োগ করার মতো হতো, যা শীঘ্রই দেউলিয়া হয়ে যাবে।” এটা ঠিক যে, বেতন ছাড়া স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার জন্য ত্যাগস্বীকারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্ভেন বলেন: “আপনি যখন ঘরে ফিরে যান, তখন আপনি জানেন যে, সেদিন আপনি যা কিছু করেছেন, তা সবই যিহোবার জন্য। আর তা আপনার মধ্যে এক ‘দারুণ’ অনুভূতি এনে দেয়।”

২০ কিছু ভাইয়েরা বিদেশে শাখা নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করে আন্তর্জাতিক সেবার আশীর্বাদ উপভোগ করেছে। এক দম্পতি যারা আটটা দেশের কার্যভারে সেবা করেছে, তারা লিখেছিল: “এখানকার ভাইয়েরা চমৎকার। চলে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হবে—আট বার আমাদের হৃদয় ‘ভেঙেছে।’ কী অপূর্ব অভিজ্ঞতাই না আমাদের হয়েছিল!” এরপর রয়েছে মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল। এটা অবিবাহিত যোগ্য ভাইদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। একজন গ্র্যাজুয়েট লিখেছিলেন: “এই ধরনের অপূর্ব এক স্কুলের জন্য ধন্যবাদ প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আর কোন সংগঠন এতখানি প্রচেষ্টা করবে?”

২১. সমস্ত খ্রিস্টান ঈশ্বরের প্রতি তাদের সেবায় কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়?

২১ হ্যাঁ, কাজের অনেক দ্বার খোলা রয়েছে। এটা ঠিক যে, আমাদের মধ্যে অধিকাংশই বেথেলে বা বিদেশে গিয়ে সেবা করতে পারি না। স্বয়ং যিশুও স্বীকার করেছিলেন যে, বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে খ্রিস্টানরা বিভিন্ন পরিমাণ “ফল” উৎপন্ন করবে। (মথি ১৩:২৩) তাই, খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হল, আমাদের পরিস্থিতিকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানো—যিহোবার সেবায় আমাদের পরিস্থিতি যতখানি অনুমোদন করে ততখানি পূর্ণরূপে অংশ নেওয়া। আমরা যখন তা করি, আমরা যিহোবাকে গৌরব প্রদান করছি এবং আমরা এই আশ্বাস পেতে পারি যে, তিনি খুবই সন্তুষ্ট হন। এথেল নামে নার্সিং হোমের একজন বয়স্কা বোনের কথা চিন্তা করুন। তিনি নার্সিং হোমে তার সঙ্গে বসবাসরত লোকেদের কাছে নিয়মিত সাক্ষ্য দেন এবং টেলিফোনে সাক্ষ্য দেওয়ায় রত থাকেন। তার সীমাবদ্ধতাগুলো সত্ত্বেও, তিনি সর্বান্তঃকরণে সেবা করেন।—মথি ২২:৩৭.

২২. (ক) কিছু উপায় কী, যেগুলোর দ্বারা আমরা ঈশ্বরের গৌরব আনতে পারি? (খ) কোন অপূর্ব সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে?

২২ তবে মনে রাখবেন যে, প্রচার হল কেবলমাত্র একটা উপায়, যার দ্বারা আমরা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসি। আমরা যখন আমাদের কাজের জায়গায়, স্কুলে ও ঘরে থাকি, তখন আমাদের আচরণ ও বেশভূষায় উদাহরণযোগ্য হওয়ার দ্বারা আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করি। (হিতোপদেশ ২৭:১১) হিতোপদেশ ২৮:২০ পদ প্রতিজ্ঞা করে: “বিশ্বস্ত লোক অনেক আশীর্ব্বাদ পাইবে।” তাই, আমাদের ঈশ্বরের পরিচর্যায় ‘আশীর্ব্বাদের সহিত বুনা’ উচিত, এই বিষয়টা জেনে যে, আমরা আশীর্বাদের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শস্য কাটতে পারব। (২ করিন্থীয় ৯:৬) তা করার দ্বারা, সেই অপূর্ব সময়ে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ হবে, যখন “শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই” যিহোবাকে সেই গৌরব প্রদান করবে, যা তিনি পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে যোগ্য।—গীতসংহিতা ১৫০:৬.

[পাদটীকা]

^ যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে ইংরেজি বইটি যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে “দিবারাত্র” যিহোবার সেবা করে?

• গাদ বংশ কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল আর তা আজকে খ্রিস্টানদের কোন বিষয়ে শিক্ষা দেয়?

• কীভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যা শয়তানের আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে এক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে?

• কোন ‘খোলা দ্বারে’ কেউ কেউ প্রবেশ করেছে এবং কোন আশীর্বাদগুলো তারা উপভোগ করেছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

গাদীয়রা যেমন লুণ্ঠনকারী দলগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, তেমনই খ্রিস্টানদের শয়তানের বিভিন্ন আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমরা গঠনমূলক সাহচর্য উপভোগ করে থাকি

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অগ্রগামীর কাজ করা হয়তো পরিচর্যার অন্যান্য বিশেষ সুযোগগুলোর দ্বার খুলে দিতে পারে, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত:

১. আন্তর্জাতিক পরিচর্যা

২. বেথেল পরিচর্যা

৩. মিশনারি পরিচর্যা