সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে!

সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে!

সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে!

“আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।”গীতসংহিতা ১৯:১.

১, ২. (ক) কেন মানুষ ঈশ্বরের গৌরব সরাসরি দেখতে সমর্থ নয়? (খ) কীভাবে ২৪ জন প্রাচীন ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে?

 “তুমি আমার মুখ দেখিতে পাইবে না, কেননা মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।” (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) এভাবেই যিহোবা মোশিকে সতর্ক করেছিলেন। যেহেতু মানবদেহ দুর্বল মাংসমাত্র, তাই তারা ঈশ্বরের গৌরব সরাসরি দেখে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু, প্রেরিত যোহনকে যিহোবা তাঁর গৌরবান্বিত সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, এমন এক চমৎকার দর্শন দেখানো হয়েছিল।—প্রকাশিত বাক্য ৪:১-৩.

মানুষের বৈসাদৃশ্যে, অনুগত আত্মিক প্রাণীরা যিহোবার মুখ দেখতে সক্ষম। যোহনের দর্শন দেখায় যে, তাদের মধ্যে রয়েছে “চব্বিশ জন প্রাচীন,” যারা ১,৪৪,০০০ জনকে প্রতিনিধিত্ব করে। (প্রকাশিত বাক্য ৪:৪; ১৪:১-১৩) ঈশ্বরের গৌরব দেখে তারা কীভাবে সাড়া দেয়? প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ অনুসারে, তারা ঘোষণা করে: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”

যেকারণে “উত্তর দিবার পথ নাই”

৩, ৪. (ক) ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কেন অবৈজ্ঞানিক নয়? (খ) কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করাকে প্রত্যাখ্যান করার পিছনে কারণটা কী?

আপনি কি ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে পরিচালিত হন? মানবজাতির অধিকাংশই তেমনটা বোধ করে না, কেউ কেউ এমনকি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে পর্যন্ত অস্বীকার করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী লিখেছিলেন: “ঈশ্বরই কি হস্তক্ষেপ করেছিলেন এবং আমাদের উপকারের জন্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে এতটা দূরদর্শীভাবে বিন্যাস করেছিলেন? . . . এক রোমাঞ্চকর প্রত্যাশা। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি এটাকে অলীক বলে মনে করি। . . . এই বিষয়ে ঈশ্বর কোনো ব্যাখ্যা নন।”

বৈজ্ঞানিক গবেষণা সীমিত—প্রকৃতপক্ষে মানুষেরা যা পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারে, তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যথায় এটা কেবলমাত্র তত্ত্ব বা অনুমান। যেহেতু “ঈশ্বর আত্মা,” তাই তাঁকে কেবল সরাসরি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা বিবেচনা করা যায় না। (যোহন ৪:২৪) অতএব, ঈশ্বরে বিশ্বাস করাকে অবৈজ্ঞানিক বলে বাতিল করে দেওয়া মানে হল উদ্ধত মনোভাব দেখানো। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট উইগেলজ্‌ওয়র্থ বলেছিলেন যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই স্বয়ং “এক ধর্মীয় পদক্ষেপ।” কীভাবে? “এটা এই সুদৃঢ় বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল যে, প্রাকৃতিক ইন্দ্রিয়গোচর বিষয়গুলো ‘প্রকৃতির আইনগুলোকে’ মেনে চলে।” তাই, কেউ যখন ঈশ্বরে বিশ্বাস করাকে প্রত্যাখ্যান করেন, তখন তিনি কি শুধুমাত্র এক ধরনের বিশ্বাস বাদ দিয়ে অন্যটা বিশ্বাস করছেন না? কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা বলতে সত্যের মুখোমুখি হওয়াকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাখ্যান করা বলে মনে হয়। গীতরচক লিখেছিলেন: “দুষ্ট লোক নাক তুলিয়া [বলে,] তিনি অনুসন্ধান করিবেন না; ঈশ্বর নাই, ইহাই তাহার চিন্তার সার।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—গীতসংহিতা ১০:৪.

৫. কেন ঈশ্বরে অবিশ্বাসের কোনো উত্তর দেওয়ার পথ নেই?

তবে, ঈশ্বরে বিশ্বাস কোনো অন্ধ বিশ্বাস নয় কারণ ঈশ্বরের যে অস্তিত্ব আছে, সেই সম্বন্ধে প্রচুর সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। (ইব্রীয় ১১:১) জ্যোতির্বিজ্ঞানী আ্যলেন স্যানডেজ বলেছিলেন: “আমার কাছে এটাকে একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হয় যে, [মহাবিশ্বের] এই ধরনের সুশৃঙ্খলা কোনো এক বিশৃঙ্খল উৎস থেকে এসেছে। অবশ্যই কোনো সংগঠিত উৎস রয়েছে। আমার কাছে ঈশ্বর এক রহস্য কিন্তু অস্তিত্বের অলৌকিকতার এই ব্যাখ্যা যে, কোনো কিছু না থাকার পরিবর্তে কেন কিছু রয়েছে।” প্রেরিত পৌল রোমের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের “অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে, এ জন্য তাহাদের [অবিশ্বাসীদের] উত্তর দিবার পথ নই।” (রোমীয় ১:২০) “জগতের সৃষ্টিকাল” অবধি—বিশেষ করে বুদ্ধিমান মানুষের, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারবে, তাদের সৃষ্টিকাল অবধি—এটা স্পষ্ট হয়ে এসেছে যে, প্রকাণ্ড ক্ষমতার অধিকারী একজন সৃষ্টিকর্তা, ভক্তি পাওয়ার যোগ্য একজন ঈশ্বর আছেন। তাই, যারা ঈশ্বরের গৌরব স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়, তাদের উত্তর দেওয়ার পথ নেই। কিন্তু, সৃষ্টি কোন প্রমাণ জোগায়?

মহাবিশ্ব ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে

৬, ৭. (ক) কীভাবে আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে? (খ) কোন উদ্দেশ্যে আকাশমণ্ডল “মানরজ্জু” ব্যাপ্ত করে?

গীতসংহিতা ১৯:১ পদ এই বলে উত্তর দেয়: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।” দায়ূদ উপলব্ধি করেছিলেন যে, নক্ষত্র এবং গ্রহগুলো যা “বিতান” বা বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে দেদীপ্যমান, সেগুলো এক গৌরবান্বিত ঈশ্বরের অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ জুগিয়েছিল। তিনি আরও বলেন: “দিবস দিবসের কাছে বাক্য উচ্চারণ করে, রাত্রি রাত্রির কাছে জ্ঞান প্রচার করে।” (গীতসংহিতা ১৯:২) দিনের পর দিন এবং রাতের পর রাত আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং সৃজনীশক্তি প্রদর্শন করে। এটা এমন যেন ঈশ্বরের প্রতি প্রশংসার বাক্য আকাশ থেকে ‘উচ্চারিত হইতেছিল।’

কিন্তু, এই সাক্ষ্য শোনার জন্য বিচক্ষণতা প্রয়োজন। “বাক্য নাই, ভাষাও নাই, তাহাদের রব শুনা যায় না।” তবুও, আকাশের নীরব সাক্ষ্য অত্যন্ত জোরালো। “তাহাদের মানরজ্জু সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপ্ত, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত।” (গীতসংহিতা ১৯:৩, ৪) এটা এমন যেন তাদের নীরব সাক্ষ্য যাতে পৃথিবীর প্রতিটা কোণে পৌঁছাতে পারে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আকাশমণ্ডল “মানরজ্জু” ব্যাপ্ত করে।

৮, ৯. সূর্য সম্বন্ধে কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য কী?

এরপর দায়ূদ যিহোবার সৃষ্টির আরেকটা বিস্ময় সম্বন্ধে বর্ণনা দেন: “তাহাদের [দৃশ্যত আকাশের] মধ্যে তিনি সূর্য্যের নিমিত্ত এক তাম্বু স্থাপন করিয়াছেন। সে বরের ন্যায় আপন বাসরগৃহ হইতে নির্গত হয়, বীরের ন্যায় স্বীয় পথে দৌড়িবার জন্য আমোদ করে। সে আকাশমণ্ডলের প্রান্ত হইতে যাত্রা করে, অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত ঘুরিয়া আইসে; তাহার উত্তাপে কোন বস্তু লুক্কায়িত থাকে না।”—গীতসংহিতা ১৯:৪-৬.

অন্য নক্ষত্রগুলোর তুলনায় সূর্য কেবলমাত্র এক মাঝারি আকারের নক্ষত্র। অথচ, এটা এক উল্লেখযোগ্য নক্ষত্র আর এর চারিদিকে পরিক্রমণরত গ্রহগুলোকে খুবই ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। একটা উৎস বলে যে, সূর্যের ভর হচ্ছে “২ এর পর ২৭টা শূন্য দিলে যে-সংখ্যা হবে, তত টন—আমাদের সৌরজগতের ভরের ৯৯.৯ শতাংশ! সূর্যের মহাকর্ষীয় বলের কারণে পৃথিবী সূর্য থেকে দূরে সরে না গিয়ে বা আরেকটু কাছে সরে না এসে, এর থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে পরিক্রমণ করে। সূর্যের শক্তির অতি ক্ষুদ্র এক অংশ আমাদের গ্রহে এসে পৌঁছে কিন্তু জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেটুকুই যথেষ্ট।

১০. (ক) কীভাবে সূর্য এর ‘তাম্বুর’ ভিতরে ও বাইরে যায়? (খ) কীভাবে এটা “বীরের” মতো দৌড়ায়?

১০ গীতরচক সূর্যকে রূপক ভাষায় বর্ণনা করেন, এটাকে এমন এক ‘বীর’ হিসেবে চিত্রিত করেন, যে দিনের বেলায় এক দিগন্ত হতে আরেক দিগন্তে দৌড়ে যায় এবং রাতের বেলায় ‘এক তাম্বুতে’ বিশ্রাম নেয়। সেই শক্তিশালী নক্ষত্র যখন দিগন্তে ডুবে যায়, তখন পৃথিবীর অবস্থান থেকে মনে হয় যেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটা ‘এক তাম্বুতে’ যাচ্ছে। সকালে, আপাতদৃষ্টিতে এটা হঠাৎ করে উদয় হয়, ‘বরের ন্যায় আপন বাসরগৃহ হইতে নির্গত হইয়া,’ চারিদিক উজ্জ্বল করে। একজন মেষপালক হিসেবে দায়ূদ রাতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সম্বন্ধে জানতেন। (আদিপুস্তক ৩১:৪০) তিনি স্মরণ করতে পেরেছিলেন যে, কীভাবে সূর্যের রশ্মি দ্রুতগতিতে তাকে ও তার আশেপাশের পরিবেশকে উষ্ণ করত। স্পষ্টতই, পূর্ব থেকে পশ্চিমে “ভ্রমণ” করে এটা ক্লান্ত হয়ে পড়ত না বরং “বীরের” ন্যায় পুনরায় ভ্রমণ করার জন্য তৈরি ছিল।

বিস্ময়কর তারকারাজি ও ছায়াপথগুলো

১১, ১২. (ক) বাইবেলে তারকারাজিকে সমুদ্রের বালুকার সঙ্গে তুলনা করার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়টা কী? (খ) মহাবিশ্ব ঠিক কতখানি বিশাল হতে পারে?

১১ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দায়ূদ কেবলমাত্র অল্প কয়েক হাজার তারা দেখতে পারতেন। কিন্তু, সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, আধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দৃশ্যমান মহাবিশ্বে তারকারাজির সংখ্যা হল ৭০ সেক্সটিলিয়ন—৭ এর পরে ২২টা শূন্য! যিহোবা সেই বিশাল সংখ্যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যখন তিনি তারকারাজির সংখ্যাকে “সমুদ্রতীরস্থ বালুকার” সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।—আদিপুস্তক ২২:১৭.

১২ বছরের পর বছর ধরে, জ্যোতির্বিদরা সেই বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছে, যেটাকে “আলোকদায়ক ক্ষুদ্র অঞ্চল, যা দেখতে স্বতন্ত্র নয় কিন্তু অস্পষ্ট” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিল যে, এই “কুণ্ডলিত নীহারিকা” ছিল আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথেরই অংশ। ১৯২৪ সালে এই বিষয়টা আবিষ্কৃত হয়েছিল যে, নীহারিকার সবচেয়ে নিকটবর্তী উত্তরভাদ্রপদ নক্ষত্রপুঞ্জ আসলে এক ছায়াপথই ছিল—প্রায় ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্বে! বিজ্ঞানীরা এখন অনুমান করে যে, কোটি কোটি ছায়াপথ রয়েছে, প্রত্যেকটায় হাজার হাজার—মাঝে মাঝে কোটি কোটি—তারা রয়েছে। তা সত্ত্বেও, যিহোবা “তারাগণের সংখ্যা গণনা করেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে ডাকেন।”—গীতসংহিতা ১৪৭:৪.

১৩. (ক) নক্ষত্রপুঞ্জের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা উল্লেখযোগ্য? (খ) এটা কীভাবে স্পষ্ট যে, বিজ্ঞানীরা “আকাশমণ্ডলের বিধান কলাপ” জানে না?

১৩ ইয়োবকে যিহোবা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কি কৃত্তিকা নক্ষত্রের হার গাঁথিতে পার? মৃগশীর্ষের কটিবন্ধ কি খুলিতে পার?” (ইয়োব ৩৮:৩১) নক্ষত্রের হার বা নক্ষত্রপুঞ্জ হচ্ছে সেই তারকারাজি, যেগুলোকে এক স্বতন্ত্র নকশা গঠন করতে দেখা যায়। যদিও একটা তারা থেকে আরেকটা তারার ব্যবধান বিশাল হতে পারে কিন্তু পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোর আপেক্ষিক অবস্থান স্থির থাকে। যেহেতু তাদের অবস্থান একেবারে সঠিক, তাই তারকারাজি “নৌচালনায়, মহাকাশযানে প্রদক্ষিণরত মহাকাশচারীর দিকস্থিতিতে এবং নক্ষত্রের শনাক্তিকরণে সাহায্যকারী নির্দেশক।” (দি এনসাইক্লোপিডিয়া আ্যমেরিকানা) তা সত্ত্বেও, কেউই পুরোপুরিভাবে ‘গাঁথনি’ বা বন্ধন যা নক্ষত্রপুঞ্জকে একত্রে সংযুক্ত রাখে, তা পুরোপুরি বুঝতে পারে না। হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা এখনও ইয়োব ৩৮:৩৩ পদে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না: “তুমি কি আকাশমণ্ডলের বিধান কলাপ জান?”

১৪. কোন উপায়ে আলোর বিভাজন এক রহস্য?

১৪ ইয়োবের উদ্দেশে জিজ্ঞেস করা আরেকটা প্রশ্নের উত্তরও বিজ্ঞানীরা দিতে পারে না: “কোন্‌ পথ দিয়া দীপ্তি বিভক্ত হইয়া যায়?” (ইয়োব ৩৮:২৪) একজন লেখক দীপ্তি বা আলো সম্বন্ধে করা এই অনুসন্ধানকে “অত্যন্ত গভীর জ্ঞানপূর্ণ এক আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এর বিপরীতে, কিছু গ্রিক দার্শনিক মনে করত যে, আলো মানুষের চোখ থেকে নির্গত হয়। আরও আধুনিক সময়ে বিজ্ঞানীরা মনে করেছে যে, আলো অতি ক্ষুদ্র কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। অন্যেরা এটাকে তরঙ্গের মধ্যে চলমানরত বলে মনে করেছে। আজকে বিজ্ঞানীরা মনে করে যে, আলোর মধ্যে তরঙ্গ এবং কণিকা দুই বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। তা সত্ত্বেও, আলোর প্রকৃতি এবং এটা যেভাবে “বিভক্ত হইয়া যায়” তা পুরোপুরিভাবে বোঝা অসাধ্য।

১৫. দায়ূদের মতো আমরা যখন আকাশমণ্ডলের বিষয় চিন্তা করি, তখন আমাদের কেমন বোধ করা উচিত?

১৫ এই সমস্তকিছু বিবেচনা করে, একজনের অনুভূতি গীতরচক দায়ূদের মতো না হয়ে পারে না, যিনি লিখেছিলেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?”—গীতসংহিতা ৮:৩, ৪.

পৃথিবী এবং এর সৃষ্টি যিহোবাকে গৌরবান্বিত করে

১৬, ১৭. ‘জলধির’ প্রাণীরা কীভাবে যিহোবার প্রশংসা করে?

১৬ গীতসংহিতা ১৪৮ অধ্যায় অন্যান্য উপায়গুলোর বিষয় তুলে ধরে, যেখানে সৃষ্টি ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে। ৭ পদ বলে: “পৃথিবী হইতে সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, হে প্রকাণ্ড জলচর সকল ও সমস্ত জলধি।” হ্যাঁ, “জলধি” বিস্ময়ে পূর্ণ, যা ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও শক্তিকে তুলে ধরে। নীলতিমির গড় ওজন হচ্ছে ১২০ টন—যা ৩০টা হাতির ওজনের সমান! শুধুমাত্র এর হৃৎপিণ্ডের ওজন ৪৫০ কিলোগ্রামের বেশি এবং এটা প্রায় ৬,৪০০ কিলোগ্রাম রক্ত এর দেহের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করতে পারে! সমুদ্রের এই প্রকাণ্ড জলচরগুলো কি জলের মধ্যে ধীর এবং অপটু? কখনোই না। সেগুলো অত্যন্ত দ্রুতগতিতে “মহাসাগরের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়,” ইউরোপীয় সিটেশিয়ান বাইক্যাচ ক্যামপেইন এর একটা রিপোর্ট বলে। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে গতিবিধি অনুসরণ করে দেখা গিয়েছিল যে, “একটা প্রাণী ১০ মাসের মধ্যে ১৬,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ ভ্রমণ করেছিল।”

১৭ বটল-নোজ্‌ড ডলফিন সাধারণত ৪৫ মিটার গভীরে ডুব দিয়ে চলে কিন্তু একটা ডলফিনের সবচেয়ে গভীরে ডুব দেওয়ার রেকর্ড হচ্ছে ৫৪৭ মিটার! কীভাবে এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটা এত গভীরে ডুব দিয়ে বেঁচে থাকতে পারে? ডুব দেওয়ার সময় এটার হৃৎস্পন্দন ধীর গতি হয়ে যায় এবং রক্ত হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের দিকে চালিত হয়। এ ছাড়া, এর মাংসপেশীতে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা অক্সিজেন সঞ্চয় করে রাখে। এলিফ্যান্ট সীল এবং স্পার্ম তিমি এমনকি আরও গভীরে ডুব দিতে পারে। “চাপ প্রতিরোধ করার পরিবর্তে,” ডিসকভার পত্রিকা বলে, “এগুলো তাদের ফুসফুসকে পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যেতে দেয়।” তাদের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ অক্সিজেনই তারা তাদের মাংসপেশীতে সঞ্চয় করে। এটা স্পষ্ট যে, এই প্রাণীগুলো হচ্ছে সর্বক্ষমতাবান ঈশ্বরের প্রজ্ঞার জীবন্ত প্রমাণ!

১৮. কীভাবে সমুদ্রের জল যিহোবার প্রজ্ঞাকে প্রদর্শন করে?

১৮ এমনকি সমুদ্রের জলও যিহোবার প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে। সায়েন্টিফিক আ্যমেরিকান বলে: “সমুদ্রের ওপরের ১০০ মিটার জলের প্রতিটা কণায় মুক্তভাবে ভাসমান, আনুবীক্ষণিক উদ্ভিদকুল রয়েছে, যেগুলোকে বলা হয় উদ্ভিদকণা।” এই “অদৃশ্য অরণ্য” কোটি কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণ করে আমাদের বাতাসকে পরিষ্কার করে। উদ্ভিদকণা আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন করে।

১৯. কীভাবে আগুন ও তুষার যিহোবার ইচ্ছাকে সম্পাদন করে?

১৯ গীতসংহিতা ১৪৮:৮ পদ বলে: “অগ্নি ও শিলা, তুষার ও বাষ্প, তাঁহার বাক্যসাধক প্রচণ্ড বায়ু।” হ্যাঁ, যিহোবা প্রকৃতির জড় শক্তিগুলোকেও তাঁর ইচ্ছা সম্পাদনের জন্য ব্যবহার করেন। আগুনের কথা বিবেচনা করুন। বিগত দশকগুলোতে, বনে আগুন লাগাকে কেবলমাত্র ধ্বংসাত্মক হিসেবে মনে করা হতো। গবেষকরা এখন মনে করে যে, আগুন পুরনো বা মৃতপ্রায় গাছগুলোকে নির্মূল করে দিয়ে, অনেক বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম বৃদ্ধি করে, পুষ্টির পুনরাবৃত্ত করে এবং প্রকৃতপক্ষে দাবানলের ঝুঁকিকে কমিয়ে দিয়ে বাস্তুসংস্থানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুষারও অতীব গুরুত্বপূর্ণ, ভূমিকে জল দান ও উর্বর করার জন্য, নদীগুলোকে পূর্ণ করার এবং উদ্ভিদ ও প্রাণী যাতে বরফ হয়ে যাওয়ার মতো তাপমাত্রায় না পৌঁছে সেক্ষেত্রে অন্তরক হিসেবে কাজ করে।

২০. কীভাবে পর্বতরাজি ও বৃক্ষ মানবজাতিকে উপকৃত করে?

২০ “পর্ব্বতরাজি ও সমস্ত উপপর্ব্বত, ফলের বৃক্ষরাজি ও সমস্ত এরস বৃক্ষ,” গীতসংহিতা ১৪৮:৯ পদ বর্ণনা করে। প্রকাণ্ড পর্বতরাজি হল যিহোবার প্রচণ্ড শক্তির এক সাক্ষ্য। (গীতসংহিতা ৬৫:৬) কিন্তু সেগুলো এক ব্যবহারিক উদ্দেশ্যও সম্পাদন করে। সুইজারল্যান্ডের বার্নের ভূগোল প্রতিষ্ঠানের একটা রিপোর্ট বলে: “পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় নদীর উৎস হচ্ছে পর্বত। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা মিঠাজলের ওপর নির্ভর করে, যা পর্বতরাজিতে সঞ্চিত হয় . . . এই ‘জলস্তম্ভগুলো’ মানবজাতির মঙ্গলের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।” এমনকি একটা সাধারণ বৃক্ষও এর নির্মাতার গৌরব। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির দ্বারা প্রণীত একটা রিপোর্ট বলে যে, গাছগুলো “সব দেশের লোকেদের মঙ্গলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ . . . অনেক প্রজাতির গাছের কাঠ, ফল, বাদাম, রজন এবং আঠা উৎপাদনের উৎস হিসেবে প্রধান অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী ২০০ কোটি লোক রান্না ও জ্বালানির জন্য কাঠের ওপর নির্ভর করে।”

২১. একটা সরল পাতা কীভাবে বিন্যাসের প্রমাণ দেখায় তা ব্যাখ্যা করুন।

২১ একজন বিজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ স্বয়ং একটা গাছের বিন্যাসে দেখা যায়। এক সরল পাতার কথা বিবেচনা করুন। বাইরের দিকে এক মোমের মতো আবরণ রয়েছে, যা পাতাকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ওপরের দিকের প্রলেপের ঠিক নিচেই রয়েছে কোষের বিন্যাস, যেগুলো ক্লোরোপ্লাস্ট বহন করে। এগুলো ক্লোরোফিল বহন করে, যা আলোক শক্তিকে শোষণ করে। সালোকসংশ্লেষণ নামে এক পদ্ধতির মাধ্যমে পাতাগুলো “খাদ্যের কারখানা” হয়ে ওঠে। গাছের শিকড়গুলোর মাধ্যমে জল শুঁষে নেওয়া হয় এবং এক জটিল “জল নিষ্কাশন পদ্ধতির” মাধ্যমে পাতায় প্রবাহিত হয়। একটা পাতার নিচের দিকে হাজার হাজার ক্ষুদ্র “কপাটিকা” (স্টোমাটা বলা হয়) রয়েছে, যা খোলে ও বন্ধ হয়, ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে শুঁষে নেয়। জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডকে সংযুক্ত করতে ও কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা তৈরি করতে আলো শক্তি সরবরাহ করে। গাছ তারপর এর নিজের সৃষ্ট খাদ্যের দ্বারাই বেঁচে থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও, এই “কারখানা” নীরব ও সুন্দর। দূষণের পরিবর্তে এটা উপজাত হিসেবে অক্সিজেন নির্গত করে!

২২, ২৩. (ক) কিছু পাখি ও স্থলচর পশুদের কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে? (খ) আর কোন প্রশ্নগুলো আমাদের বিবেচনা করা দরকার?

২২ “বন্য পশুগণ ও সমস্ত গ্রাম্য পশু; সরীসৃপ ও উড্ডীয়মান পক্ষী সকল,” গীতসংহিতা ১৪৮:১০ পদ বলে। অনেক স্থলচর পশু ও খেচর প্রাণী বিস্ময়কর ক্ষমতা প্রদর্শন করে। লেসান আ্যলবেট্রস পাখি অস্বাভাবিক দূরত্বের পথ উড়তে পারে (একবার মাত্র ৯০ দিনে ৪০,০০০ কিলোমিটার উড়েছিল)। ব্ল্যাকপল ওয়ার্বলার পাখি একবারও না থেমে ক্রমাগত ৮০ ঘন্টারও বেশি সময় উড়ে উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রা করে। উট প্রচুর জল মজুত করে রাখে, সাধারণত যেখানে মনে করা হয়ে থাকে তার সেই কুঁজের মধ্যে নয় কিন্তু তার পরিপাক তন্ত্রে, যা তাকে জলের ঘাটতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় চলতে সাহায্য করে। তাই, আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, প্রকৌশলীরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং নতুন নতুন বস্তুর নকশা করার সময় মনোযোগ দিয়ে প্রাণীজগৎকে পর্যবেক্ষণ করে। “আপনি যদি এমন কিছু তৈরি করতে চান, যা ভালভাবে কাজ করবে . . . এবং পরিবেশের সঙ্গে নিখুঁতভাবে খাপ খাইয়ে নেবে,” লেখিকা গেল ক্লির বলেন, “তা হলে, প্রকৃতির কোথাও না কোথাও এর এক উত্তম উদাহরণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

২৩ হ্যাঁ, সৃষ্টি সত্যিই ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে! তারকাখচিত আকাশমণ্ডল থেকে শুরু করে উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যন্ত, প্রত্যেকে নিজস্ব উপায়ে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা নিয়ে আসে। কিন্তু, মানুষের সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বরের প্রশংসা গানে কীভাবে আমরা প্রকৃতির সঙ্গে যোগ দিতে পারি?

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, তাদের কেন উত্তর দেওয়ার পথ নেই?

• কীভাবে তারকারাজি ও গ্রহগুলো ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করে?

• কীভাবে সমুদ্র এবং স্থলচর প্রাণীরা এক প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার প্রমাণ দেয়?

• কীভাবে প্রকৃতির জড় শক্তিগুলো যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিজ্ঞানীরা অনুমান করে যে দৃষ্টিগোচর নক্ষত্রের সংখ্যা ৭০ সেক্সটিলিয়ন!

[সৌজন্যে]

Frank Zullo

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

বটল-নোজ্‌ড ডলফিন

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

তুষারকণা

[সৌজন্যে]

snowcrystals.net

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ছোট লেসান আ্যলবেট্রস