সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি “যিহোবার ব্যবস্থায়” আনন্দ খুঁজে পান?

আপনি কি “যিহোবার ব্যবস্থায়” আনন্দ খুঁজে পান?

আপনি কি “যিহোবার ব্যবস্থায়” আনন্দ খুঁজে পান?

“ধন্য [“সুখী,” NW] সেই ব্যক্তি, যে . . . সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ব্যবস্থায় আমোদ করে।”গীতসংহিতা ১:১, ২.

১. যিহোবার দাস হিসেবে কেন আমরা সুখী?

 যিহোবা তাঁর অনুগত দাস হিসেবে আমাদের সাহায্য এবং আশীর্বাদ করেন। এটা ঠিক যে, আমরা অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হই। কিন্তু, আমরা প্রকৃত সুখও উপভোগ করি। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, কারণ আমরা “পরম ধন্য [“সুখী,” NW]” ঈশ্বরের সেবা করি ও সেইসঙ্গে তাঁর পবিত্র আত্মা আমাদের হৃদয়ে আনন্দ উৎপন্ন করে। (১ তীমথিয় ১:১১; গালাতীয় ৫:২২) আনন্দ হল প্রকৃত সুখের অবস্থা, যা ভাল কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা অথবা অর্জন থেকে আসে। আর আমাদের স্বর্গীয় পিতা নিশ্চিতভাবে আমাদের উত্তম উত্তম উপহার প্রদান করেন। (যাকোব ১:১৭) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমরা সুখী!

২. আমরা কোন গীতগুলো আলোচনা করতে যাচ্ছি?

সুখকে গীতসংহিতা বইয়ে লক্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এটা গীতসংহিতা ১ ও অধ্যায়ের বেলায় সত্য। যিশু খ্রিস্টের প্রাথমিক অনুসারীরা, ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদকে দ্বিতীয় গীতের রচয়িতা বলে বিবেচনা করেছিল। (প্রেরিত ৪:২৫, ২৬) প্রথম গীতের সেই নামহীন রচয়িতা তার অনুপ্রাণিত গানটা এই কথাগুলো দিয়ে শুরু করেন: “সুখী সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না।” (গীতসংহিতা ১:১) এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে আসুন আমরা দেখি যে, গীতসংহিতা ১ ও অধ্যায় কীভাবে আমাদের জন্য আনন্দিত হওয়ার কারণ জোগায়।

সুখের রহস্য

৩. গীতসংহিতা ১:১ পদ অনুসারে, একজন ধার্মিক ব্যক্তি কেন সুখী, সেটার কিছু কারণ কী?

গীতসংহিতা ১ অধ্যায় দেখায় যে, কেন একজন ধার্মিক ব্যক্তি সুখী। এই ধরনের সুখের কিছু কারণ দেখিয়ে গীতরচক গেয়েছিলেন: “সুখী সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, পাপীদের পথে দাঁড়ায় না, নিন্দকদের সভায় বসে না।”—গীতসংহিতা ১:১.

৪. সখরিয় এবং ইলীশাবেৎ কোন আদর্শ পথ অনুধাবন করেছিল?

সত্যিকারের সুখী হতে হলে, আমাদের অবশ্যই যিহোবার ধার্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। সখরিয় এবং ইলীশাবেৎ, যাদের যোহন বাপ্তাইজকের বাবামা হওয়ার আনন্দদায়ক সুযোগ ছিল, তারা “ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্ম্মিক ছিলেন, প্রভুর [“যিহোবার,” NW] সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি অনুসারে নির্দ্দোষরূপে চলিতেন।” (লূক ১:৫, ৬) আমরাও সুখী হতে পারি, যদি আমরা একই পথ অনুধাবন করি এবং ‘দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলিতে’ অথবা অধার্মিক পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হতে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।

৫. কী আমাদের ‘পাপীদের পথ’ এড়াতে সাহায্য করতে পারে?

আমরা যদি দুষ্টদের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করি, তা হলে আমরা ‘পাপীদের পথে দাঁড়াইব’ না। বস্তুত, আক্ষরিকভাবে আমাদের সেই জায়গাগুলোতে পাওয়া যাবে না, যেখানে তারা সাধারণত থাকে—অনৈতিক আমোদপ্রমোদ অথবা কুখ্যাত জায়গাগুলোতে। আমরা যদি পাপীদের অশাস্ত্রীয় আচরণের শামিল হওয়ার জন্য প্রলোভিত হই, তা হলে কী? সেই সময় আসুন আমরা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করি: “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না; কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা?” (২ করিন্থীয় ৬:১৪) আমরা যদি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি এবং “নির্ম্মলান্তঃকরণ” হই, তা হলে আমরা পাপীদের মনোভাব ও জীবনধারা প্রত্যাখ্যান করব এবং আমাদের শুদ্ধ মনোভাব ও আকাঙ্ক্ষা আর সেইসঙ্গে “অকল্পিত বিশ্বাস” থাকবে।—মথি ৫:৮; ১ তীমথিয় ১:৫.

৬. উপহাসকারীদের সম্বন্ধে কেন আমাদের সতর্ক থাকা উচিত?

যিহোবাকে খুশি করার জন্য নিশ্চিতভাবে আমরা ‘অবশ্যই নিন্দকদের সভায় বসিব না।’ কেউ কেউ ঈশ্বরভক্তিকেই নিন্দা বা উপহাস করে থাকে কিন্তু “শেষকালে” যে-প্রাক্তন খ্রিস্টানরা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে, তারা বেশির ভাগ সময়ই তাদের উপহাসের মাধ্যমে বিশেষভাবে ঘৃণ্য নিন্দুক বলে প্রমাণিত হয়। প্রেরিত পিতর সহবিশ্বাসীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “প্রিয়তমেরা, . . . প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শেষকালে উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে, এবং বলিবে, তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।” (২ পতর ৩:১-৪) আমরা যদি কখনও উপহাসকারী বা ‘নিন্দুকদের সভায় না বসি,’ তা হলে আমরা তাদের ওপর আসা অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয় এড়াতে পারব।—হিতোপদেশ ১:২২-২৭.

৭. কেন আমাদের গীতসংহিতা ১:১ পদের কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

আমরা যদি গীতসংহিতা ১ অধ্যায়ের শুরুর কথাগুলোতে মনোযোগ না দিই, তা হলে শাস্ত্র অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা যে-আধ্যাত্মিকতা লাভ করেছি, তা হারিয়ে ফেলতে পারি। বস্তুত, এর ফলে আমরা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যেতে পারি। আমাদের অধঃপতন হয়তো শুরু হয়ে যেতে পারে, যদি আমরা দুষ্টদের পরামর্শমতো চলি। তখন আমরা হয়তো তাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মেলামেশা করতে পারি। পরিশেষে, আমরা হয়তো এমনকি অবিশ্বস্ত ধর্মভ্রষ্ট উপহাসকারীতে পরিণত হতে পারি। স্পষ্টতই, দুষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের মধ্যে এক ঈশ্বরভক্তিহীন মনোভাব জাগিয়ে তুলতে পারে এবং যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; যাকোব ৪:৪) আমরা যেন কখনও আমাদের প্রতি তা ঘটতে না দিই!

৮. কী আমাদের মনকে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে?

প্রার্থনা আমাদের মনকে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে এবং দুষ্ট ব্যক্তিদের সাহচর্য এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” প্রেরিত আমাদের সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে উৎসাহিত করেছেন, যেগুলো সত্য, আদরণীয়, ন্যায্য, বিশুদ্ধ, প্রীতিজনক, সুখ্যাতিযুক্ত, সদ্‌গুণ ও কীর্তিজনক। (ফিলিপীয় ৪:৬-৮) আসুন আমরা পৌলের পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি এবং কখনও দুষ্ট ব্যক্তিদের স্থানে নিজেদের না নামাই।

৯. যদিও আমরা মন্দ অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলি কিন্তু কীভাবে আমরা সমস্ত ধরনের লোককে সাহায্য করার চেষ্টা করি?

যদিও আমরা মন্দ অভ্যাসগুলো প্রত্যাখ্যান করি, তবুও আমরা অন্যদের কাছে কৌশলতার সঙ্গে সাক্ষ্য দিই, যেমনটা প্রেরিত পৌল রোমীয় দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সের কাছে “ন্যায়পরতার, ইন্দ্রিয়-দমনের এবং আগামী বিচারের বিষয়” বলেছিলেন। (প্রেরিত ২৪:২৪, ২৫; কলসীয় ৪:৬) আমরা সমস্ত ধরনের লোকের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করি এবং তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করি। আমরা নিশ্চিত যে, যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত” তারা বিশ্বাসী হবে এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আনন্দ করবে।—প্রেরিত ১৩:৪৮.

তিনি যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ করেন

১০. ব্যক্তিগত অধ্যয়নের সময় কী আমাদের মন ও হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলতে সাহায্য করবে?

১০ সুখী মানুষের বিষয়ে গীতরচক আরও বলেন: ‘[তিনি] যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করেন, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করেন [“নিচুস্বরে পড়েন,” NW]।’ (গীতসংহিতা ১:২) ঈশ্বরের দাস হিসেবে আমরা ‘যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করি।’ যখনই সম্ভব, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং ধ্যানের সময় আমরা হয়তো শব্দগুলো উচ্চারণ করে “নিচুস্বরে” পড়তে পারি। শাস্ত্রের যেকোনো অংশ পড়ার সময় তা করা, আমাদের মন ও হৃদয়ের ওপর স্থায়ী ছাপ ফেলতে সাহায্য করবে।

১১. কেন আমাদের “দিবারাত্র” বাইবেল পড়া উচিত?

১১ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” প্রতিদিন বাইবেল পড়ার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছে। (মথি ২৪:৪৫) মানবজাতির জন্য যিহোবার বার্তা সম্বন্ধে আরও ভালভাবে জানার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষার কারণে আমাদের “দিবারাত্র”—হ্যাঁ, এমনকি কোনো কারণে আমরা যখন ঘুমাতে পারি না, তখনও—বাইবেল পড়া উপযুক্ত। পিতর আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও।” (১ পিতর ২:১, ২) আপনি কি প্রতিদিন বাইবেল পড়ায় এবং রাতেরবেলায় ঈশ্বরের বাক্য ও উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে ধ্যান করায় আনন্দ খুঁজে পান? গীতরচক পেতেন।—গীতসংহিতা ৬৩:৬.

১২. আমরা যদি যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ করি, তা হলে আমরা কী করব?

১২ আমাদের চিরসুখ নির্ভর করে ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আনন্দ করার ওপর। এটি সিদ্ধ এবং ন্যায্য আর তা পালন করলে মহাফল হয়। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১) শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া কার্য্যকারী হয়, সেই আপন কার্য্যে ধন্য [“সুখী,” NW] হইবে।” (যাকোব ১:২৫) আমরা যদি সত্যিই যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ করি, তা হলে এমন একদিনও অতিবাহিত হবে না, যেদিন আমরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বিবেচনা করিনি। বাস্তবিকপক্ষে, আমরা ‘ঈশ্ববের গভীর বিষয় সকল অনুসন্ধান’ করার জন্য পরিচালিত হব এবং রাজ্যের বিষয়গুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখব।—১ করিন্থীয় ২:১০-১৩; মথি ৬:৩৩.

তিনি বৃক্ষের সদৃশ হন

১৩-১৫. কোন অর্থে আমরা অফুরন্ত জলের উৎসের কাছে রোপিত এক বৃক্ষের সদৃশ হতে পারি?

১৩ ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি সম্বন্ধে আরও বর্ণনা করতে গিয়ে গীতরচক গেয়েছিলেন: “সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।” (গীতসংহিতা ১:৩) আমরা যারা যিহোবার সেবা করি, আমরাও অন্যান্য সকল অসিদ্ধ মানুষের মতো জীবনে বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করি। (ইয়োব ১৪:১) আমরা হয়তো তাড়না এবং আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য পরীক্ষা ভোগ করি। (মথি ৫:১০-১২) কিন্তু, ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা এই পরীক্ষাগুলো সফলভাবে সহ্য করতে সমর্থ হই, ঠিক যেমন সজীব বৃক্ষ তুলনামূলকভাবে প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যেও টিকে থাকে।

১৪ অফুরন্ত জলের উৎসের কাছে রোপিত বৃক্ষ গরম আবহাওয়া অথবা অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে যায় না। আমরা যদি ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি হই, তা হলে আমাদের শক্তি এক অফুরন্ত উৎস থেকে আসে আর তিনি হলেন যিহোবা ঈশ্বর। পৌল সাহায্যের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন এবং বলতে পেরেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলিপীয় ৪:১৩) আমরা যখন যিহোবার পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হই এবং আধ্যাত্মিকভাবে পুষ্টি লাভ করি, তখন আমরা শুকিয়ে যাই না, ফলহীন অথবা আধ্যাত্মিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ি না। ঈশ্বরের সেবায় আমরা ফলবান ও সেইসঙ্গে তাঁর আত্মার ফলগুলো প্রকাশ করে থাকি।—যিরমিয় ১৭:৭, ৮; গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

১৫ “সদৃশ” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দের রূপ ব্যবহার করে গীতরচক এক উপমা প্রয়োগ করেন। তিনি দুটো ভিন্ন বিষয়ের তুলনা করেন, যদিও সেগুলোর এক নির্দিষ্ট গুণ রয়েছে। মানুষ এবং বৃক্ষ আলাদা হলেও প্রচুর জলের উৎসের কাছে রোপিত এক বৃক্ষের ফলন-প্রাচুর্য স্পষ্টতই গীতরচককে সেই সমস্ত ব্যক্তির আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল, যারা “যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করে।” আমরা যদি যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ করি, তা হলে আমাদের আয়ু একটা বৃক্ষের আয়ুর সৃদশ হবে। বস্তুত, আমরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারব।—যোহন ১৭:৩.

১৬. কেন এবং কীভাবে ‘আমরা যাহা কিছু করি, তাহাতেই কৃতকার্য্য হই’?

১৬ আমরা যখন ন্যায়নিষ্ঠার পথ অনুধাবন করি, তখন যিহোবা আমাদের পরীক্ষা এবং সমস্যাগুলোর চাপ সহ্য করতে সাহায্য করেন। যিহোবার সেবায় আমরা আনন্দিত এবং ফলবান হই। (মথি ১৩:২৩; লূক ৮:১৫) ‘আমরা যাহা কিছু করি, তাহাতেই কৃতকার্য্য হই’ কারণ আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল যিহোবার ইচ্ছা পালন করা। যেহেতু তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সবসময় সফল হয় এবং আমরা তাঁর আদেশগুলোতে আনন্দ করি, তাই আমরা আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ হই। (আদিপুস্তক ৩৯:২৩; যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭, ৮; যিশাইয় ৫৫:১১) এটা সেই সময়েও সত্য এমনকি যখন আমরা বিভিন্ন দুর্দশার মুখোমুখি হই।—গীতসংহিতা ১১২:১-৩; ৩ যোহন ২.

দুষ্টরা সমৃদ্ধি লাভ করছে বলে মনে হয়

১৭, ১৮. (ক) গীতরচক দুষ্ট ব্যক্তিদের কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন? (খ) এমনকি দুষ্ট ব্যক্তিরা যদি বস্তুগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধি লাভ করেও থাকে, তবুও কেন তাদের স্থায়ী নিরাপত্তা নেই?

১৭ দুষ্টদের পরিস্থিতি ধার্মিক ব্যক্তিদের থেকে কতই না আলাদা! দুষ্ট ব্যক্তিদের হয়তো কিছু সময়ের জন্য বস্তুগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধি লাভ করছে বলে মনে হতে পারে কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে তারা সমৃদ্ধি লাভ করছে না। এটা গীতরচকের পরের কথাগুলো থেকে স্পষ্ট হয়: “দুষ্টগণ সেরূপ নহে; কিন্তু তাহারা বায়ুচালিত তুষের ন্যায়। এই জন্য দুষ্টগণ বিচারে দাঁড়াইবে না, পাপীরা ধার্ম্মিকদের মণ্ডলীতে দাঁড়াইবে না।” (গীতসংহিতা ১:৪, ৫) লক্ষ করুন যে, গীতরচক বলেছেন, “দুষ্টগণ সেরূপ নহে।” তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, তারা ধার্মিক লোকেদের মতো নয়, যাদের এইমাত্র ফলবান, দীর্ঘজীবী বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

১৮ এমনকি দুষ্ট ব্যক্তিরা যদি বস্তুগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধি লাভ করেও থাকে, তবুও তাদের স্থায়ী নিরাপত্তা নেই। (গীতসংহিতা ৩৭:১৬; ৭৩:৩, ১২) তারা নির্বোধ ধনী ব্যক্তির সদৃশ, যার সম্বন্ধে যিশু এক দৃষ্টান্তে উল্লেখ করেছিলেন, যখন উত্তরাধিকারের সঙ্গে যুক্ত একটা বিষয়ের নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছিল। যিশু উপস্থিত সকলকে বলেছিলেন: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” যিশু এই কথা বলার দ্বারা বিষয়টা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন যে, একজন ধনী ব্যক্তির ভূমিতে এত শস্য উৎপন্ন হয়েছিল যে, তিনি তার সমস্ত দ্রব্য সঞ্চয় করে রাখার জন্য গোলাঘর ভেঙে বড় বড় গোলাঘর নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এরপর সেই ব্যক্তি ভোজন, পান এবং আমোদপ্রমোদ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর বলেছিলেন: “হে নির্ব্বোধ, অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ তোমা হইতে দাবি করিয়া লওয়া যাইবে, তবে তুমি এই যে আয়োজন করিলে, এ সকল কাহার হইবে?” যিশু তাঁর বিষয়বস্তুর ওপর জোর দেওয়ার জন্য আরও বলেছিলেন: “যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌ নয়, সে এইরূপ।”—লূক ১২:১৩-২১.

১৯, ২০. (ক) প্রাচীনকালের মাড়াই এবং তুষ ঝাড়ার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বর্ণনা করুন। (খ) দুষ্ট ব্যক্তিরা কেন তুষের সঙ্গে তুলনীয়?

১৯ দুষ্ট ব্যক্তিরা “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” নয়। তাই, তুষ অর্থাৎ শস্যের ভিতরের দানার ওপরের পাতলা খোসার মতো, তাদেরও কোনো নিরাপত্তা এবং স্থিরতা নেই। প্রাচীনকালে শস্য কাটার পর সেগুলো মাড়াই করার জায়গায়, সাধারণত উঁচু জায়গায় অবস্থিত এক সমতল ভূমিতে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে মাড়াইযন্ত্র, যেটার নিচে ধারালো পাথর অথবা লোহার দাঁত থাকত, সেটা পশুর সাহায্যে শস্যের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো যাতে দানাগুলোকে তুষ থেকে আলগা করা যায়। এরপর পুরো মিশ্রণটাকে ওপরে তুলে ছোঁড়ার জন্য তুষ ঝাড়ার বেলচা ব্যবহার করা হতো এবং সেগুলো বাতাসের বিপরীতে উড়ানো হতো। (যিশাইয় ৩০:২৪) দানাগুলো মাড়াই করার জায়গায় পড়ত আর বাতাস খড়কুটোকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে তুষকে উড়িয়ে নিয়ে যেত। (রূতের বিবরণ ৩:২) নুড়িপাথর অথবা এইরকম বস্তুগুলো দূর করার জন্য শস্য চালুনির মধ্যে দেওয়ার পর এটা মজুত বা চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্য তৈরি হতো। (লূক ২২:৩১) কিন্তু, তুষ আর থাকত না।

২০ ঠিক যেমন শস্যের দানা মাটিতে পড়ে যেত এবং সংরক্ষণ করা হতো আর তুষ উড়ে যেত, তেমনই ধার্মিক ব্যক্তিরা থাকবে এবং দুষ্টদের দূর করা হবে। তাই, নিশ্চিতভাবে আমরা সুখী যে এই ধরনের মন্দ ব্যক্তিরা শীঘ্রই চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে। তাদের দূর হয়ে যাওয়ার ফলে যে-লোকেরা যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ করে, তারা প্রচুর আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। বস্তুত, বাধ্য মানুষেরা অবশেষে ঈশ্বরের দেওয়া উপহার অনন্তজীবন লাভ করবে।—মথি ২৫:৩৪-৪৬; রোমীয় ৬:২৩.

“ধার্ম্মিকগণের পথ” আশীর্বাদযুক্ত

২১. কীভাবে যিহোবা “ধার্ম্মিকগণের পথ জানেন”?

২১ প্রথম গীত এই কথাগুলো দিয়ে শেষ হয়: “সদাপ্রভু ধার্ম্মিকগণের পথ জানেন, কিন্তু দুষ্টদের পথ বিনষ্ট হইবে।” (গীতসংহিতা ১:৬) কীভাবে ঈশ্বর “ধার্ম্মিকগণের পথ জানেন”? আসলে, আমরা যদি ন্যায়নিষ্ঠার পথ অনুধাবন করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের ধার্মিক জীবনের স্বীকৃতি দেন এবং আমাদেরকে তাঁর অনুমোদিত দাস হিসেবে দেখেন। তাই, তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন, এই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে আমরা আমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁর ওপর ফেলে দিতে পারি এবং তা দেওয়া উচিত।—যিহিষ্কেল ৩৪:১১; ১ পিতর ৫:৬, ৭.

২২, ২৩. দুষ্ট এবং ধার্মিক ব্যক্তিদের কী হবে?

২২ “ধার্ম্মিকগণের পথ” চিরকাল থাকবে কিন্তু অশোধনীয় দুষ্ট লোকেরা যিহোবার চরম বিচারের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তাদের “পথ” অথবা জীবনধারা তাদের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে। আমরা দায়ূদের এই কথাগুলোর পরিপূর্ণতায় আস্থা রাখতে পারি: “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই। কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯.

২৩ আমাদের যদি পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়, যখন দুষ্টরা আর থাকবে না, তা হলে আমরা কত সুখীই না হব! মৃদুশীল এবং ধার্মিক লোকেরা তখন প্রকৃত শান্তি উপভোগ করবে কারণ তারা সবসময় “যিহোবার ব্যবস্থায়” আনন্দ খুঁজবে। কিন্তু, এর আগে ‘[“যিহোবার,” NW] সেই বিধি’ মেনে চলতে হবে। (গীতসংহিতা ২:৭ক) পরের প্রবন্ধ আমাদের দেখতে সাহায্য করবে যে, সেই বিধি কী এবং আমাদের জন্য ও সেইসঙ্গে সমস্ত মানব পরিবারের জন্য এর অর্থ কী হবে?

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• একজন ধার্মিক ব্যক্তি কেন সুখী?

• কী দেখায় যে, আমরা যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ খুঁজে পাই?

• একজন ব্যক্তি কীভাবে এক সজল বৃক্ষের সৃদশ হতে পারেন?

• ধার্মিকদের পথ কীভাবে দুষ্টদের পথ থেকে আলাদা?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রার্থনা আমাদের দুষ্ট ব্যক্তিদের সাহচর্য এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন ধার্মিক ব্যক্তি কেন একটা বৃক্ষের সদৃশ?