সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘যিহোবার বিধি’ নিষ্ফল হতে পারে না

‘যিহোবার বিধি’ নিষ্ফল হতে পারে না

‘যিহোবার বিধি’ নিষ্ফল হতে পারে না

“আমি [“আমি যিহোবার,” NW] সেই বিধির বৃত্তান্ত প্রচার করিব; সদাপ্রভু [“তিনি,” NW] আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্ত্র, . . . আমার নিকটে যাচ্ঞা কর, আমি জাতিগণকে তোমার দায়াংশ করিব।”গীতসংহিতা ২:৭, ৮.

১. ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এবং জাতিগুলোর উদ্দেশ্যের মধ্যে কোন বৈসাদৃশ্য রয়েছে?

 মানবজাতি এবং পৃথিবীর জন্য যিহোবা ঈশ্বরের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। জাতিগুলোরও একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু, এই উদ্দেশ্যগুলো কতই না আলাদা! আমাদের তা আশা করা উচিত কারণ ঈশ্বর বলেন: “ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।” ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই কারণ তিনি বলে চলেন: “বাস্তবিক যেমন বৃষ্টি বা হিম আকাশ হইতে নামিয়া আইসে, আর সেখানে ফিরিয়া যায় না, কিন্তু ভূমিকে আর্দ্র করিয়া ফলবতী ও অঙ্কুরিত করে, এবং বপনকারীকে বীজ ও ভক্ষককে ভক্ষ্য দেয়, আমার মুখনির্গত বাক্য তেমনি হইবে; তাহা নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।”—যিশাইয় ৫৫:৯-১১.

২, ৩. দ্বিতীয় গীতে কী স্পষ্ট করা হয়েছে কিন্তু কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

ঈশ্বরের মশীহ রাজার বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য যে পরিপূর্ণ হবে, তা দ্বিতীয় গীতে স্পষ্ট করা হয়েছে। এর রচয়িতা, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ, এই ভবিষ্যদ্বাণী করতে ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে, এমন এক লক্ষণীয় সময় আসবে যখন জাতিগুলো কলহ করবে। তাদের শাসকরা যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু, গীতরচক এও গেয়েছিলেন: “আমি যিহোবার সেই বিধির বৃত্তান্ত প্রচার করিব; তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্ত্র, . . . আমার নিকটে যাচ্ঞা কর, আমি জাতিগণকে তোমার দায়াংশ করিব, পৃথিবীর প্রান্ত সকল তোমার অধিকারে আনিয়া দিব।”—গীতসংহিতা ২:৭, ৮.

জাতিগণের জন্য ‘যিহোবার বিধির’ তাৎপর্য কী? এটা সাধারণ মানবজাতিকে কীভাবে প্রভাবিত করে? বস্তুত, দ্বিতীয় গীতের ঈশ্বরভয়শীল সমস্ত পাঠকদের জন্য এই বিষয়গুলোর অর্থ কী?

জাতিগুলো কলহ করে

৪. কীভাবে আপনি গীতসংহিতা ২:১, ২ পদের মূল বিষয়গুলোর সারসংক্ষেপ করবেন?

জাতিগুলো এবং তাদের শাসকদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে উল্লেখ করে গীতরচক এই গীত গাওয়ার মাধ্যমে তার রচনা শুরু করেন: “জাতিগণ কেন কলহ করে? লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় ধ্যান করে? পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হয়, নায়কগণ একসঙ্গে মন্ত্রণা করে, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে।”—গীতসংহিতা ২:১, ২. *

৫, ৬. জাতীয় দলগুলো কোন “অনর্থক বিষয়” নিয়ে “ধ্যান করে”?

বর্তমান দিনের জাতীয় দলগুলো কোন “অনর্থক বিষয়” নিয়ে “ধ্যান করে”? ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তিকে—মশীহ অথবা খ্রিস্টকে—গ্রহণ করার পরিবর্তে জাতিগুলো তাদের নিজেদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য “ধ্যান করে।” দ্বিতীয় গীতের এই কথাগুলো সা.কা. প্রথম শতাব্দীতেও পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন যিহুদি এবং রোমীয় কর্তৃপক্ষ ঈশ্বরের মনোনীত রাজা যিশু খ্রিস্টকে হত্যা করার জন্য একত্রে কাজ করেছিল। কিন্তু, এর বিরাট পরিপূর্ণতা শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালে, যখন যিশুকে স্বর্গীয় রাজা হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল। তখন থেকে পৃথিবীর একটা রাজনৈতিক সংগঠনও ঈশ্বরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাজাকে স্বীকার করেনি।

এর অর্থ কী ছিল, যখন গীতরচক জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় লইয়া ধ্যান করে’? এটা হল তাদের সেই উদ্দেশ্য, যা অনর্থক; এটা অসার এবং নিষ্ফল হবেই হবে। তারা এই পৃথিবীতে শান্তি ও একতা আনতে পারবে না। কিন্তু, তারা তাদের কাজকে ঐশিক শাসনপদের বিরোধিতা করার পর্যায়ে নিয়ে যায়। বস্তুত, তারা একত্রে এক যুদ্ধরত অবস্থান নিয়েছে এবং পরাৎপর ও তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের একত্রিত করেছে। কতই না মূর্খতাপূর্ণ কাজ!

যিহোবার বিজয়ী রাজা

৭. প্রার্থনায় যিশুর প্রাথমিক অনুসারীরা কীভাবে গীতসংহিতা ২:১, ২ পদের কথাগুলো প্রয়োগ করেছিল?

যিশুর অনুসারীরা গীতসংহিতা ২:১, ২ পদের কথাগুলো তাঁর প্রতি প্রয়োগ করে। তাদের বিশ্বাসের জন্য তাড়িত হয়ে তারা প্রার্থনা করেছিল: “হে স্বামিন [যিহোবা], তুমি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তের নির্ম্মাণকর্ত্তা; তুমি তোমার দাস আমাদের পিতা দায়ূদের মুখ দিয়া, পবিত্র আত্মা দ্বারা, এই কথা বলিয়াছিলে, যথা, ‘জাতিগণ কেন কলহ করিল? লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় ধ্যান করিল? পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হইল, শাসনকর্ত্তৃগণ একত্র হইল—প্রভুর [“যিহোবার,” NW] বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্তের বিরুদ্ধে।’ কেননা সত্যই তোমার পবিত্র দাস যীশু, যাঁহাকে তুমি অভিষিক্ত করিয়াছ, তাঁহার বিরুদ্ধে হেরোদ [আন্তিপা] ও পন্তীয় পীলাত জাতিগণের ও ইস্রায়েল-লোকদের সঙ্গে এই নগরে একত্র হইয়াছিল।” (প্রেরিত ৪:২৪-২৭; লূক ২৩:১-১২) * হ্যাঁ, প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাস যিশুর বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু, কয়েক শতাব্দী পরে এই গীতের আরেকটা পরিপূর্ণতা ঘটবে।

৮. কীভাবে গীতসংহিতা ২:৩ পদ বর্তমান দিনের জাতিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

প্রাচীন ইস্রায়েলে যখন মনুষ্য রাজা ছিল, যেমন দায়ূদ, তখন পৌত্তলিক জাতিগুলো এবং শাসকরা, ঈশ্বর এবং সিংহাসনে অধিষ্ঠিত তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একত্রিত হতো। কিন্তু, আমাদের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? বর্তমান দিনের জাতিগুলো যিহোবা এবং মশীহের চাহিদাগুলো পূরণ করতে চায় না। তাই, তারা আসলে এই কথা বলছে: “আইস, আমরা উহাদের বন্ধন ছিড়িয়া ফেলি, আপনাদের হইতে উহাদের রজ্জু খুলিয়া ফেলি।” (গীতসংহিতা ২:৩) শাসক এবং জাতিগুলো, ঈশ্বর ও তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তির দ্বারা আরোপিত যেকোনো বাধানিষেধের বিরোধিতা করবে। অবশ্যই, এই ধরনের বন্ধন থেকে ছিন্ন এবং রজ্জু থেকে মুক্ত হওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাই অসার হবে।

যিহোবা তাদের বিদ্রূপ করেন

৯, ১০. কেন যিহোবা জাতিগুলোকে বিদ্রূপ করেন?

জাতীয় শাসকরা তাদের নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে-প্রচেষ্টাই করুক না কেন, তা নিয়ে যিহোবা চিন্তিত নন। দ্বিতীয় গীত বলে চলে: “যিনি স্বর্গে উপবিষ্ট, তিনি হাস্য করিবেন; প্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাদিগকে বিদ্রূপ করিবেন।” (গীতসংহিতা ২:৪) ঈশ্বর এমনভাবে তাঁর উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যান যেন এই শাসকরা কিছুই নয়। তিনি তাদের নির্লজ্জতা দেখে হাসেন এবং তাদের বিদ্রূপ করেন। তারা যা করতে চায়, সেটা নিয়ে তাদেরকে দম্ভ করতে দেন। যিহোবার কাছে তারা হাস্যস্পদ ব্যক্তি। তিনি তাদের অসার বিরোধিতা দেখে হাসেন।

১০ দায়ূদ তার গীতের আরেক জায়গায় মনুষ্য শত্রু এবং জাতিগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করে গান করেন: “হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি সমস্ত জাতিকে প্রতিফল দিবার জন্য উঠ, তুমি কোন অধর্ম্মী বিশ্বাসঘাতকের প্রতি কৃপা করিও না। তাহারা সন্ধ্যাকালে ফিরিয়া আইসে, কুকুরের ন্যায় শব্দ করে, নগরের চারিদিকে ভ্রমণ করে। দেখ, তাহারা মুখে বক বক করিতেছে, তাহাদের ওষ্ঠের মধ্যে খড়্গ আছে; কেননা [তাহারা বলে,] কে শুনিতে পায়? কিন্তু, সদাপ্রভু! তুমি তাহাদিগকে পরিহাস করিবে, তুমি সমস্ত জাতিকে বিদ্রূপ করিবে।” (গীতসংহিতা ৫৯:৫-৮) যিহোবা তাঁর বিরুদ্ধে করা জাতিগুলোর মূর্খতাপূর্ণ কাজের দম্ভ এবং বিভ্রান্তি দেখে হাসেন।

১১. জাতিগুলো যখন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করার চেষ্টা করে, তখন কী হয়?

১১ গীতসংহিতা ২ অধ্যায়ের কথাগুলো আমাদের এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে যে, যিহোবা যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আমরা এই দৃঢ়প্রত্যয় রাখতে পারি যে, তিনি সবসময় তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করেন এবং তাঁর অনুগত দাসদের কখনও পরিত্যাগ করেন না। (গীতসংহিতা ৯৪:১৪) তা হলে, জাতিগুলো যখন যিহোবার উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে কাজ করার প্রচেষ্টা করে তখন কী হয়? এই গীত অনুসারে, ঈশ্বর বজ্রপাতের ভয়ানক গর্জনের মতো “ক্রোধে তাহাদের কাছে কথা কহিবেন।” এ ছাড়া, “কোপে” ঠিক যেন আলোর তীব্র ঝলকানির মতো তিনি “তাহাদিগকে বিহ্বল করিবেন।”—গীতসংহিতা ২:৫.

ঈশ্বরের রাজাকে স্থাপন করা হয়

১২. গীতসংহিতা ২:৬ পদ কোন রাজ্যাভিষেকের প্রতি প্রযোজ্য?

১২ গীতরচকের মাধ্যমে এরপর যিহোবা যা বলেন, তা নিঃসন্দেহে জাতিগুলোকে বিপর্যস্ত করে। ঈশ্বর ঘোষণা করেন: “আমিই আমার রাজাকে স্থাপন করিয়াছি আমার পবিত্র সিয়োন-পর্ব্বতে।” (গীতসংহিতা ২:৬) সিয়োন পর্বত ছিল একটা পাহাড় যা যিরূশালেমে অবস্থিত, যেখানে দায়ূদকে সমস্ত ইস্রায়েলের ওপর রাজা হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু, মশীহ রাজা সেই নগরের বা পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গার সিংহাসনে বসবেন না। বস্তুত, যিহোবা ইতিমধ্যেই যিশু খ্রিস্টকে তাঁর মনোনীত মশীহ রাজা হিসেবে স্বর্গীয় সিয়োন পর্বতে স্থাপন করেছেন।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১.

১৩. যিহোবা তাঁর পুত্রের সঙ্গে কোন চুক্তি করেছিলেন?

১৩ মশীহ রাজা এখন কথা বলেন। তিনি বলেন: “আমি যিহোবার [যিনি তাঁর পুত্রের সঙ্গে রাজ্যের বিষয়ে একটা চুক্তি করেছেন] সেই বিধির বৃত্তান্ত প্রচার করিব; তিনি [যিহোবা ঈশ্বর] আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্ত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি।” (গীতসংহিতা ২:৭) খ্রিস্ট রাজ্য চুক্তির বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি [“আমার পিতা যেমন আমার সঙ্গে এক রাজ্যের জন্য চুক্তি করেছেন, তেমনই আমিও তোমাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করছি,” NW]।”—লূক ২২:২৮, ২৯.

১৪. কেন বলা যেতে পারে যে, যিশু রাজপদের অকাট্য উপাধি ধারণ করেন?

১৪ গীতসংহিতা ২:৭ পদে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যিহোবা যিশুর বাপ্তিস্মের সময় এবং তাঁকে আত্মিক জীবনে পুনরুত্থিত করার মাধ্যমে তাঁকে পুত্র হিসেবে স্বীকার করেছেন। (মার্ক ১:৯-১১; রোমীয় ১:৪; ইব্রীয় ১:৫; ৫:৫) হ্যাঁ, স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হলেন ঈশ্বরের একজাত পুত্র। (যোহন ৩:১৬) রাজা দায়ূদের রাজবংশধর হিসেবে যিশু রাজপদের অকাট্য উপাধি ধারণ করেন। (২ শমূয়েল ৭:৪-১৭; মথি ১:৬, ১৬) এই গীত অনুসারে ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে বলেন: “আমার নিকটে যাচ্ঞা কর, আমি জাতিগণকে তোমার দায়াংশ করিব, পৃথিবীর প্রান্ত সকল তোমার অধিকারে আনিয়া দিব।”—গীতসংহিতা ২:৮.

১৫. কেন যিশু জাতিগুলোকে তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে যাচ্ঞা করেন?

১৫ রাজা—ঈশ্বরের নিজ পুত্র—যিহোবার পরের স্থানেই রয়েছেন। যিশু হলেন যিহোবার পরীক্ষিত, অনুগত এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। এ ছাড়া, ঈশ্বরের প্রথমজাত হিসেবে যিশুর দায়াংশ বা উত্তরাধিকার রয়েছে। বস্তুত, যিশু খ্রিস্ট হলেন “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি, সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত।” (কলসীয় ১:১৫) তাঁকে শুধু যাচ্ঞা করতে হয় আর ঈশ্বর ‘জাতিগণকে তাঁহার দায়াংশ করেন, পৃথিবীর প্রান্ত সকল তাঁহার অধিকারে আনিয়া দেন।’ যিশু, ‘মনুষ্য-সন্তানগণের বিষয়ে আনন্দ করেন’ এমন এক ব্যক্তি হিসেবে এবং পৃথিবী ও মানবজাতির প্রতি তাঁর স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাঁর আকুল আকাঙ্ক্ষার কারণে যাচ্ঞা করেন।—হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১.

জাতিগুলোর বিরুদ্ধে যিহোবার বিধি

১৬, ১৭. গীতসংহিতা ২:৯ পদ অনুসারে জাতিগুলোর জন্য কী সঞ্চিত রয়েছে?

১৬ যেহেতু দ্বিতীয় গীত এখন, যিশু খ্রিস্টের অদৃশ্য উপস্থিতির সময়ে পরিপূর্ণতা লাভ করছে, তাই জাতিগুলোর জন্য কী সঞ্চিত রয়েছে? রাজা খুব শীঘ্রই ঈশ্বরের ঘোষণা সম্পাদন করবেন: “তুমি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে [জাতিগুলোকে] ভাঙ্গিবে, কুম্ভকারের পাত্রের ন্যায় খণ্ড বিখণ্ড করিবে।”—গীতসংহিতা ২:৯.

১৭ প্রাচীনকালের রাজাদের রাজদণ্ড ছিল রাজকীয় কর্তৃত্বের প্রতীক। কিছু রাজদণ্ড লোহার তৈরি ছিল, যেমন এই গীতে বলা হয়েছে। এখানে যে-রূপক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা খ্রিস্ট যে কত সহজেই জাতিগুলোকে ধ্বংস করবেন সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়। লৌহদণ্ড দিয়ে জোরে এক আঘাত কুমারের তৈরি একটা মাটির পাত্র এমনভাবে চূর্ণবিচূর্ণ করবে যে, তা আর জোড়া লাগানো যাবে না।

১৮, ১৯. ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার জন্য পৃথিবীর রাজাদের কী করতে হবে?

১৮ জাতীয় শাসকদের কি এই ধরনের ধ্বংসাত্মক চূর্ণবিচূর্ণ দেখতেই হবে? না, কারণ গীতরচক তাদের কাছে এই কথাগুলোর মাধ্যমে আকুল অনুরোধ করেন: “এখন, রাজগণ! বিবেচক হও; পৃথিবীর বিচারকগণ! শাসন গ্রাহ্য কর।” (গীতসংহিতা ২:১০) রাজাদের মনোযোগ দিতে, বিবেচনা বা অন্তর্দৃষ্টি অনুশীলন করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। ঈশ্বরের রাজ্য মানবজাতির উপকারের জন্য যা করবে, সেটার বিপরীতে তাদের পরিকল্পনার অনর্থকতা সম্বন্ধে তাদের বিবেচনা করা উচিত।

১৯ ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার জন্য পৃথিবীর রাজাদের তাদের কাজ পরিবর্তন করার দরকার হবে। তাদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে, “সভয়ে সদাপ্রভুর আরাধনা কর, সকম্পে উল্লাস কর।” (গীতসংহিতা ২:১১) তারা যদি এই পদক্ষেপ নেয়, তা হলে কী হবে? কলহ অথবা চিত্তবিক্ষোভের পরিবর্তে, তারা সেই প্রত্যাশাগুলোয় আনন্দ করতে পারবে, যেগুলো মশীহ রাজা তাদের সামনে রাখবেন। পৃথিবীর শাসকরা তাদের শাসনপদের জন্য যে-গর্বিত এবং উদ্ধত মনোভাব দেখায়, তা তাদের পরিত্যাগ করার প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া, দেরি না করে তাদের পরিবর্তিত হতে হবে এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বের অসমকক্ষ শ্রেষ্ঠতা এবং ঈশ্বর ও তাঁর মশীহ রাজার অপ্রতিরোধ্য শক্তি সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি অনুশীলন করতে হবে।

“পুত্ত্রকে চুম্বন কর”

২০, ২১. ‘পুত্ত্রকে চুম্বন করিবার’ অর্থ কী?

২০ গীতসংহিতা ২ অধ্যায় এরপর জাতিগুলোর শাসকদের এক করুণাপূর্ণ আমন্ত্রণ জানায়। বিরোধিতা করার জন্য একত্রিত হওয়ার পরিবর্তে, তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “পুত্ত্রকে চুম্বন কর, পাছে তিনি [যিহোবা ঈশ্বর] ক্রুদ্ধ হন ও তোমরা পথে বিনষ্ট হও, কারণ ক্ষণমাত্রে তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে।” (গীতসংহিতা ২:১২ক) সার্বভৌম প্রভু যিহোবা যখন কোনো বিধি জারি করেন, তখন তাতে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ঈশ্বর যখন তাঁর পুত্রকে সিংহাসনে স্থাপন করেছিলেন, তখন পৃথিবীর শাসকদের “অনর্থক বিষয় ধ্যান” করা বাদ দেওয়া উচিত ছিল। তাদের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে রাজাকে স্বীকার করা এবং সম্পূর্ণরূপে তাঁর বাধ্য থাকা।

২১ কেন ‘পুত্ত্রকে চুম্বন করা’ উচিত? যখন এই গীত রচনা করা হয়েছিল, তখন চুম্বন ছিল বন্ধুত্বের অভিব্যক্তি এবং কারও বাড়িতে অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য করা হতো, যেখানে তারা আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারত। এ ছাড়া, চুম্বন আনুগত্য বা বিশ্বস্ততার এক কাজ হতে পারত। (১ শমূয়েল ১০:১) দ্বিতীয় গীতের এই পদে ঈশ্বর জাতিগুলোকে তাঁর পুত্রকে অভিষিক্ত রাজা হিসেবে চুম্বন করতে বা স্বাগত জানাতে আদেশ দিচ্ছেন।

২২. জাতিগুলোর শাসকদের কোন সাবধানবাণীতে কান দেওয়া উচিত?

২২ যারা ঈশ্বরের মনোনীত রাজার কর্তৃত্বকে স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করে, তারা যিহোবাকে অপমান করে। তারা যিহোবা ঈশ্বরের সার্বিক সার্বভৌমত্ব এবং তাঁর কর্তৃত্ব ও মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম শাসক হিসেবে রাজাকে মনোনীত করার বিষয়ে তাঁর ক্ষমতাকে অস্বীকার করে। জাতিগুলোর শাসকরা বুঝতে পারবে যে, ঈশ্বরের ক্রোধ হঠাৎ করে তাদের ওপর তখনই নেমে আসবে, যখন তারা নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করবে। “ক্ষণমাত্রে তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে” অথবা অবিলম্বে এবং অপ্রতিরোধ্যভাবে প্রজ্জ্বলিত হবে। এই সাবধানবাণী জাতীয় শাসকদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত এবং এর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করা উচিত। এর অর্থ হল জীবন।

২৩. প্রত্যেকের কী করার জন্য এখনও সময় আছে?

২৩ এই নাটকীয় গীত পরিশেষে বলে: “ধন্য তাহারা সকলে, যাহারা তাঁহার [যিহোবার] শরণাপন্ন।” (গীতসংহিতা ২:১২খ) প্রত্যেকের জন্য সুরক্ষা খোঁজার সময় এখনও রয়েছে। আর সেটা এমনকি জাতিগুলোর পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে এমন প্রত্যেক শাসকের বেলায়ও সত্য। তারা যিহোবার কাছে চলে আসতে পারে, যিনি রাজ্য শাসনের অধীনে আশ্রয় জোগান। কিন্তু, মশীহ রাজ্য সেই বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার আগে তাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

২৪. এমনকি এই সমস্যাপূর্ণ জগতেও আমরা কীভাবে আরও পরিতৃপ্তিদায়ক এক জীবন কাটাতে পারি?

২৪ আমরা যদি অধ্যবসায়ের সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করি এবং সেগুলোর পরামর্শ আমাদের জীবনে কাজে লাগাই, তা হলে আমরা এমনকি এখনই এই সমস্যাপূর্ণ জগতে আরও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন কাটাতে পারি। শাস্ত্রীয় পরামর্শ কাজে লাগানো সুখী পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে আসে এবং এই জগতের মধ্যে রয়েছে এমন অনেক দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্ত হওয়া যায়। বাইবেলের নির্দেশাবলি অনুসরণ করা এই আস্থা দেয় যে, আমরা সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করছি। রাজ্য শাসনকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে যা সঠিক সেটাকে যারা বিরোধিতা করে, তাদের তিনি পৃথিবী থেকে দূর করে দেওয়ার পর, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমের চেয়ে অন্য আর কেউ “বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের” নিশ্চয়তা দিতে পারে না।—১ তীমথিয় ৪:৮.

২৫. ‘যিহোবার বিধি’ যেহেতু নিষ্ফল হতে পারে না, তাই আমাদের সময়ে কী হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি?

২৫ ‘যিহোবার বিধি’ নিষ্ফল হতে পারে না। আমাদের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঈশ্বর জানেন যে, মানবজাতির জন্য কোনটা সবচেয়ে উত্তম এবং তিনি তাঁর প্রিয় পুত্রের রাজ্যের অধীনে বাধ্য মানবজাতিকে শান্তি, পরিতৃপ্তি এবং স্থায়ী নিরাপত্তা দিয়ে আশীর্বাদ করে তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করবেন। আমাদের দিন সম্বন্ধে ভাববাদী দানিয়েল লিখেছিলেন: “সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, . . . তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) তা হলে, নিশ্চিতভাবে ‘পুত্ত্রকে চুম্বন করিবার’ এবং সার্বভৌম প্রভু যিহোবাকে সেবা করার এখনই জরুরি সময়!

[পাদটীকাগুলো]

^ প্রাথমিক অর্থে, রাজা দায়ূদ ছিলেন ‘অভিষিক্ত ব্যক্তি’ এবং “পৃথিবীর রাজগণ” ছিল পলেষ্টীয় শাসকরা, যারা তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী একত্রিত করেছিল।

^ এ ছাড়া, খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্রের অন্যান্য পদও দেখায় যে, যিশু হলেন ঈশ্বরের সেই অভিষিক্ত ব্যক্তি, যাঁর সম্বন্ধে দ্বিতীয় গীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা গীতসংহিতা ২:৭ পদের সঙ্গে প্রেরিত ১৩:৩২, ৩৩ এবং ইব্রীয় ১:৫; ৫:৫ পদের তুলনা করলে স্পষ্ট হয়। এ ছাড়া, গীতসংহিতা ২:৯ এবং প্রকাশিত বাক্য ২:২৭ পদও দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• জাতীয় দলগুলো কোন “অনর্থক বিষয়” নিয়ে “ধ্যান করে”?

• কেন যিহোবা জাতিগুলোকে বিদ্রূপ করেন?

• জাতিগুলোর বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিধি কী?

• ‘পুত্ত্রকে চুম্বন করিবার’ মানে কী?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

দায়ূদ বিজয়ী মশীহ রাজার সম্বন্ধে গেয়েছিলেন

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইস্রায়েলের শাসকরা এবং লোকেরা যিশু খ্রিস্টের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টকে স্বর্গীয় সিয়োন পর্বতে রাজা হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে