সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উত্তম সরকারের খোঁজে

উত্তম সরকারের খোঁজে

উত্তম সরকারের খোঁজে

“জগতের বেড়ে চলা পরস্পরনির্ভরতা, বিশ্বব্যাপী ধারাবাহিক যে-সমস্যাগুলো নিয়ে এসেছে, তা বিভিন্ন দেশ আলাদা আলাদাভাবে আর সমাধান করতে পারবে না। মানবজাতি বেড়ে চলা যে-বিপদ এবং সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়, সেগুলোকে একমাত্র পৃথিবীব্যাপী সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি।”—গুলাম উমার, পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

 আজকের জগৎ আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী কিন্তু সত্য বিষয়গুলোর দ্বারা পরিপূর্ণ। বস্তুগত প্রাচুর্যের মধ্যেও, সামান্য ভরণপোষণ জোগাতে গিয়ে অনেকে হিমশিম খায়। এই ইলেকট্রনিক যুগের লোকেরা এ যাবৎ সবচেয়ে শিক্ষিত এবং জ্ঞানী হতে পারে কিন্তু বহুসংখ্যক লোককে একটা স্থায়ী চাকরি খুঁজে পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। যদিও মানুষের আগের চেয়ে আরও বেশি স্বাধীনতা আছে বলে মনে হয় কিন্তু লক্ষ লক্ষ লোক আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তাপূর্ণ এক পরিবেশের মধ্যে বাস করে। আমাদের চারপাশে হয়তো লোভনীয় সুযোগগুলো রয়েছে কিন্তু সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কলুষতা এবং নীতিহীনতা অনেককে হতাশ করেছে।

মানবজাতি যে-ব্যাপক সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে, সেগুলো এতটাই চরম যে, কোনো জাতি অথবা এমনকি বিভিন্ন জাতিগত দলের পক্ষেও তা সমাধান করা সাধ্যের বাইরে। তাই অনেক পর্যবেক্ষক এই উপসংহারে এসেছে যে, বিশ্বের শান্তি এবং নিরাপত্তাকে বাস্তবায়িত করার জন্য সমস্ত জাতিকে একটা সরকারের অধীনে একত্রিত হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আ্যলবার্ট আইনস্টাইন দীর্ঘদিন ধরে এই ধারণাকে সমর্থন করে আসেন। ১৯৪৬ সালে তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেছিলেন, “আমি দৃঢ়রূপে বিশ্বাস করি যে, জগতের বেশির ভাগ লোক শান্তিতে এবং নিরাপদে বাস করতে চায় . . . শান্তির জন্য মানবজাতির আকাঙ্ক্ষা একমাত্র বিশ্বসরকার গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে।”

পাঁচ দশক পরে এখনও এই গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করা হয়নি। একবিংশ শতাব্দীর সমস্যাগুলোকে তালিকাভুক্ত করে, ফ্রান্সের প্যারিসের লি মঁ সংবাদপত্রের একটা বিবরণী মন্তব্য করে: “এটা হল এক আন্তর্জাতিক সরকারের বিচার সংক্রান্ত, প্রশাসনিক, শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি গঠন করার মতো একটা ব্যাপার, যেটা পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় সাম্প্রদায়িক গণহত্যার বিষয়ে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে সমর্থ। এটা এই ধারণা মেনে নেওয়ার বিষয় যে, এখন থেকে পৃথিবী একটা দেশ।” কার বা কীসের তা করার ক্ষমতা এবং সামর্থ্য রয়েছে, যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে, মানবজাতির এক শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ রয়েছে?

উত্তর কি রাষ্ট্রসংঘ?

অনেকে বিশ্বশান্তির জন্য রাষ্ট্রসংঘের ওপর আশা রেখেছে। রাষ্ট্রসংঘ কি সেই সরকার, যা জগতে প্রকৃত শান্তি এবং নিরাপত্তা নিয়ে আসতে পারে? নিঃসন্দেহে, রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরতার কোনো কমতি নেই, যা শুনতে প্রেরণাদায়ক এবং প্রতিশ্রুতিপূর্ণ বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরপ, ২০০০ সালে “সহস্রাব্দের ঘোষণা” দেওয়ার সময়, রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ এই গুরুগম্ভীর সংকল্প করেছিল: “আমাদের লোকেদের যুদ্ধের মহামারী, যা গত দশকে ৫০ লক্ষেরও বেশি লোকের জীবন কেড়ে নিয়েছে, তা থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা প্রচেষ্টার কোনো কার্পণ্য করব না আর সেটা রাজ্যের ভিতরে অথবা পরস্পরের মধ্যে, যেখানেই হোক না কেন।” এই ধরনের ঘোষণা অনেক লোক এবং বিভাগ থেকে রাষ্ট্রসংঘের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং শ্রদ্ধা অর্জন করেছে ও সেইসঙ্গে ২০০১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছে। এভাবে রাষ্ট্রসংঘের সম্মানে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি বলে যে, “বিশ্বশান্তি এবং সহযোগিতার একমাত্র নিষ্পত্তিযোগ্য পথ হল রাষ্ট্রসংঘ।”

এই সমস্তকিছু সত্ত্বেও, ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘ কি এমন একটা সরকার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যা প্রকৃত এবং স্থায়ী বিশ্বশান্তি আনতে সমর্থ? না, কারণ এর সদস্য জাতিগুলোর স্বার্থপরতা এবং জাতীয়তাবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে এর অনেক প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। একটা সংবাদপত্রের সম্পাদকের ভাষায়, জনগণের অনুভূতি হল যে, রাষ্ট্রসংঘ “বিশ্বব্যাপী মতামতের জন্য এক ধরনের ব্যারোমিটার” ছাড়া আর কিছুই নয় এবং “এর কার্যতালিকা এত বিচার্য বিষয়ে ভরা যে, তা বছরের পর বছর ধরে বিতর্কিত হয়ে এসেছে কিন্তু সামান্যতম কোনো সমাধানই হয়নি।” প্রশ্ন থেকে যায়: জগতের জাতিগুলো কি আসলেই কোনো এক দিন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে?

বাইবেল জানায় যে, এই ধরনের একতা খুব শীঘ্রই সম্পাদিত হবে? কীভাবে তা ঘটবে? আর কোন সরকার তা নিয়ে আসবে? উত্তরের জন্য দয়া করে পরের প্রবন্ধটি পড়ুন।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আইনস্টাইন বিশ্বসরকারের প্রয়োজনকে সমর্থন করতেন

[সৌজন্যে]

আইনস্টাইন: U.S. National Archives photo