সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কোন বিষয়টা জীবনে সত্যিকারের অর্থ এনে দেয়?

কোন বিষয়টা জীবনে সত্যিকারের অর্থ এনে দেয়?

কোন বিষয়টা জীবনে সত্যিকারের অর্থ এনে দেয়?

 সতেরো বছর বয়সী, উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জেসিকে যখন জীবনের অর্থ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন সে উত্তর দিয়েছিল, “যতদিন বেঁচে থাকেন, যতটা সম্ভব মজা করুন।” কিন্তু, সুজির এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। “আমি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করি যে, জীবনের অর্থ ঠিক তা-ই, যেমনটা আপনি বেছে নেন,” সে বলেছিল।

আপনি কি কখনও জীবনের অর্থ সম্বন্ধে ভেবে দেখেছেন? সমস্ত মানবজাতির জন্য কি কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? অথবা সুজির কথাই কি ঠিক—জীবন হল মূলত তা-ই যেমনটা আমরা প্রত্যেকেই বেছে নিই? প্রযুক্তিগতভাবে আমাদের সমাজ যতই এগিয়ে যাক না কেন, আমাদের অন্তরের অনুভূতি জীবনের অর্থ জানার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হয়। আমাদের জীবনের একটা সময়ে, আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ভেবে থাকি, ‘আমরা কেন এখানে আছি?’

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আধুনিক বিজ্ঞান কঠোর চেষ্টা করেছে। এর ফল কী হয়েছে? “ক্রমবিবর্তিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা, জীবনের কোনো অর্থ দেয় না,” ডেভিড পি. বেরেশ নামে মনোবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যার একজন অধ্যাপক বলেছিলেন। ক্রমবিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীদের কাছে, জীবিত প্রাণীদের কেবল একটাই উদ্দেশ্য রয়েছে: বেঁচে থাকা এবং বংশবৃদ্ধি করা। তাই, অধ্যাপক বেরেশ বলেন: “উদ্দেশ্যহীন এবং লোকেদের সম্বন্ধে চিন্তা করে না এমন এক বিশাল মহাবিশ্বে স্বাধীন, সতর্ক, স্বেচ্ছায় যে-বিষয়গুলো আমরা বেছে নিই, সেগুলোর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলা মানুষেরই দায়িত্ব।”

অর্থ এবং উদ্দেশ্যর উৎস

তা হলে, জীবনের অর্থ কি এটাই—আমরা প্রত্যেকে, যা খুশি তা-ই করব? উদ্দেশহীন বা অর্থহীন এক মহাবিশ্বে লক্ষ্যহীনভাবে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে, বাইবেল অনেক আগেই প্রকাশ করেছে যে, আমাদের এখানে থাকার পিছনে একটা কারণ রয়েছে। আমাদের অস্তিত্ব সৃষ্টি সংক্রান্ত কোনো দুর্ঘটনার ফল নয়। আমাদের জানানো হয়েছে যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করতে অগণিত বছর সময় নিয়েছিলেন। কোনো কিছুকেই দৈবক্রমের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে, সমস্তকিছুই “অতি উত্তম” ছিল। (আদিপুস্তক ১:৩১; যিশাইয় ৪৫:১৮) কেন? কারণ মানুষের জন্য ঈশ্বরের একটা উদ্দেশ্য ছিল।

কিন্তু আগ্রহের বিষয় হল যে, ঐশিক হস্তক্ষেপ কিংবা কোনো জৈবিক প্রক্রিয়ার দ্বারা আগে থেকেই ঈশ্বর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেননি। যদিও আমরা আমাদের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বংশানুক্রমিকের দ্বারা প্রভাবিত হই কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা সকলেই আমাদের জীবনধারাকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।

আমরা জীবনে কী করব, তা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব যদিও আমাদেরই কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে আমাদের কর্মপরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া ভুল কাজ হবে। আসলে, অনেকেই আবিষ্কার করেছে যে, জীবনের প্রকৃত অর্থ এবং উদ্দেশ্য ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্কের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। ঈশ্বর এবং আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় যোগাযোগটা ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম, যিহোবার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে, যেটার আক্ষরিক অর্থ, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” (যাত্রাপুস্তক ৬:৩) অর্থাৎ, তিনি যা কিছুই প্রতিজ্ঞা করেন ধীরে ধীরে সেগুলো পূর্ণ করেন এবং যা করার জন্য তিনি উদ্দেশ্যে করেছেন, তা সবসময়ই সম্পাদন করেন। (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) সেই নামের তাৎপর্যের কথা চিন্তা করুন। যিহোবা নামটি আমাদের সকলের জন্য এক নিশ্চয়তা দেয় যে, তিনি হলেন অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্যর আদি ও অনন্ত উৎস।

শুধু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করাই জীবন সম্বন্ধে একজনের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলে। ১৯ বছর বয়সী মেয়ে লিনেট বলে: “যিহোবা যে-সমস্ত বিস্ময়কর বিষয় সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো দেখা এবং তাদের উদ্দেশ্য বোঝা আমাকে জানায় যে আমাকেও কোনো একটা কারণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।” আ্যমবার যোগ করে: “লোকেরা যখন ‘সেই অপরিচিত’ ব্যক্তির সম্বন্ধে কথা বলে, তখন এটা আমাকে সবসময়ই মনে করিয়ে দেয় যে, আমি তাঁর সম্বন্ধে জানি। যিহোবা অস্তিত্বে রয়েছেন, সেটার প্রমাণ সাধারণভাবেই তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলোর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।” (রোমীয় ১:২০) অবশ্য, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করা এক বিষয় কিন্তু তাঁর সঙ্গে এক অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা ভিন্ন বিষয়।

ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব

এক্ষেত্রেও, বাইবেল সাহায্য করতে পারে। এর শুরুর অধ্যায়গুলো স্পষ্ট প্রমাণ জোগায় যে, যিহোবা ঈশ্বর হলেন একজন প্রেমময় পিতা। উদাহরণস্বরূপ, তিনি আদম ও হবাকে সৃষ্টি করে এবং তারপর তিনি কে, সে সম্বন্ধে অনুমান করার জন্য তাদেরকে ছেড়ে দেননি। বরং, তিনি নিয়মিতভাবে তাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করতেন। অন্যান্য কাজগুলো করার সময় তিনি তাদেরকে এমন মনে করে এদনে ছেড়ে দেননি যে, তারা নিজেরা নিজেদের পরিচালিত করবে। এর পরিবর্তে, কীভাবে সর্বোত্তম উপায়ে জীবনযাপন করা যায়, সেই বিষয়ে তিনি তাদের নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে সন্তোষজনক কাজ দিয়েছিলেন আর তাই তিনি তাদের জন্য চলমান শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৬-৩০; ২:৭-৯) একজন দক্ষ, প্রেমময় পিতার কাছ থেকে আপনি কি এটাই আশা করবেন না? এখন সেটার অর্থ কী, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। ড্যানিয়েল বলে, ‘যিহোবা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টিকে উপভোগ করার ক্ষমতা দিয়ে আমাদের তৈরি করা হয়েছে, এটা জানা আমাকে দেখায় যে, তিনি চান আমরা যেন সুখী হই।’

এর চেয়েও বড় কথা হল, যেকোনো উত্তম পিতার মতো যিহোবা চান যে, তাঁর সমস্ত সন্তান যেন তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখে। এই সম্বন্ধে প্রেরিত ১৭:২৭ পদ আমাদের আশ্বাস দেয়: “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” এটা কোন পার্থক্য তুলে ধরে? আ্যমবার বলে: “যিহোবাকে জানতে পারা আমাকে এই আস্থা প্রদান করে যে, আমি কখনোই একেবারে একা নই। যেকোনো পরিস্থিতিই হোক না কেন, সবসময় আমার এমন কেউ আছেন যাঁর দিকে আমি তাকাতে পারি।” এ ছাড়া, আপনি যিহোবাকে যতই জানবেন, ততই দেখতে পাবেন যে, তিনি হলেন দয়ালু, ন্যায়পরায়ণ এবং উত্তম। আপনি তাঁর ওপর নির্ভর করতে পারেন। “যিহোবা যখন একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন,” জেফ বলে, “তখন আমি জেনেছিলাম যে, তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই, যিনি আমার প্রয়োজনে সাহায্য জোগাবেন।”

দুঃখের বিষয় যে, যিহোবার সম্বন্ধে অনেক নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে। মানুষের এত দুঃখকষ্ট এবং ধর্মীয় অশোভন কাজের জন্য তাঁকেই দোষ দেওয়া হয়েছে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস কিছু কাজের দায়ও তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫ পদ ব্যাখ্যা করে: “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, . . . ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী, তাঁহার সন্তান নয়, এই ইহাদের কলঙ্ক।” তাই, আমরা নিজেদের জন্য এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করতে বাধ্য।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০.

ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়

কিন্তু আমরা যে-সিদ্ধান্তই নিই না কেন, কোনোকিছুই এই পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে পুরোপুরিভাবে সম্পাদন করা থেকে তাঁকে থামাতে পারবে না। সর্বোপরি, তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা। তা হলে, তাঁর সেই উদ্দেশ্যটা কী? যিশু খ্রিস্ট তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে এটার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে।” পরে, তিনি তাঁর প্রেরিত যোহনকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ করিবার” সংকল্প নিয়েছেন। (মথি ৫:৫; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) সৃষ্টির সময় যিশু ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন বলে তিনি জানেন যে, একেবারে শুরু থেকেই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল এক সিদ্ধ মানব পরিবার এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বাস করবে। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭; যোহন ১:১-৩) আর ঈশ্বরের কোনো পরিবর্তন নেই। (মালাখি ৩:৬) “অবশ্যই, আমি যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি,” ঈশ্বর আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, “তদ্রূপ ঘটিবে; আমি যে মন্ত্রণা করিয়াছি, তাহা স্থির থাকিবে।”—যিশাইয় ১৪:২৪.

আমাদের সময়ে, যিহোবা ইতিমধ্যেই এক একতাবদ্ধ সমাজের ভিত্তিমূল স্থাপন করতে শুরু করেছেন, যেটা আমাদের আজকের জগতের মতো এত লোভ এবং আত্মতুষ্টির ওপর ভিত্তি করে নয় কিন্তু ঈশ্বর ও প্রতিবেশীকে ভালবাসার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। (যোহন ১৩:৩৫; ইফিষীয় ৪:১৫, ১৬; ফিলিপীয় ২:১-৪) এটা হল উন্নতিশীল এবং উচ্চপ্রেরণার দ্বারা চালিত ব্যক্তিদের দ্বারা এক স্বেচ্ছামূলক সমাজ, যাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে—এই বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে ঈশ্বরের আসন্ন রাজ্যের বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করা। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টারও বেশি জায়গায়, ষাট লক্ষেরও বেশি খ্রিস্টান ইতিমধ্যেই এক প্রেমময়, একতাবদ্ধ আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে একসঙ্গে উপাসনা করছে।

আপনার জীবনকে অর্থপূর্ণ করুন

আপনি যদি আপনার জীবনে আরও মহত্তর অর্থ খুঁজে থাকেন, তা হলে আপনার জানা উচিত যে, যিহোবা ঈশ্বর আপনাকে তাঁর লোকেদের অর্থাৎ তাঁর ‘ধার্ম্মিক জাতির’ সঙ্গে মেলামেশা করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন আর তা এখনই। (যিশাইয় ২৬:২) কিন্তু, আপনি হয়তো ভাবছেন যে, ‘এই খ্রিস্টীয় সমাজে জীবন কেমন? আমি কি সত্যিই এর অংশ হতে চাই?’ কিছু যুবক-যুবতী কী বলে, তা শুনুন:

কুয়েনটেন: “জগতের মধ্যে মণ্ডলী হল আমার রক্ষাস্থল। যিহোবা আমার জীবনের সঙ্গে জড়িত, তা উপলব্ধি করা আমাকে দেখতে সাহায্য করে যে, তিনি অস্তিত্বে আছেন এবং চান যেন আমি সুখী হই।”

জেফ: “মণ্ডলী হল সবচেয়ে উত্তম জায়গা, যেখানে আমি উৎসাহ লাভ করার জন্য যেতে পারি। আমার ভাইবোনেরা সেখানে রয়েছে, যারা সমর্থন ও প্রশংসা দান করে। তারা সত্যিই আমার যৌথ পরিবার।”

লিনেট: “কাউকে বাইবেলের সত্য গ্রহণ করতে এবং যিহোবাকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিতে দেখার আনন্দকে কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এটা আমার জীবনে প্রচুর পরিতৃপ্তি এনে দেয়।”

কোডি: “যিহোবা ছাড়া আমার জীবন মূল্যহীন হতো। অন্য অনেকের মতোই আমি সুখ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় একটা বিষয় থেকে আরেকটাতে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতাম অথচ কিছুই খুঁজে পেতাম না। পরিবর্তে, যিহোবা আমাকে তাঁর সঙ্গে এক সম্পর্ক স্থাপন করার মূল্যবান সুযোগ দিয়েছেন আর তাই সেটা আমার জীবনে অর্থ এনে দেয়।”

নিজেকে পরীক্ষা করে দেখুন না কেন? আপনি জানতে পারবেন যে, আপনার সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার দ্বারা আপনি জীবনে সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পাবেন।

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক আমাদের জীবনে অর্থ এনে দেয়

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

NASA photo