যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের কাছে তাঁর গৌরব প্রকাশ করেন
যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের কাছে তাঁর গৌরব প্রকাশ করেন
“নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, সম্মান [“গৌরব,” NW] ও জীবন।”—হিতোপদেশ ২২:৪.
১, ২. (ক) প্রেরিত বই কীভাবে দেখায় যে, স্তিফান “বিশ্বাসে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” এক ব্যক্তি ছিলেন? (খ) কোন প্রমাণ রয়েছে যে, স্তিফান নম্র ব্যক্তি ছিলেন?
স্তিফান ছিলেন “বিশ্বাসে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ” এক ব্যক্তি। এ ছাড়াও, তিনি ছিলেন “অনুগ্রহে ও শক্তিতে পরিপূর্ণ।” যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের একজন হিসেবে, তিনি লোকেদের মধ্যে অদ্ভুত চিহ্নকার্য ও লক্ষণ সম্পাদন করছিলেন। একবার কয়েক জন ব্যক্তি তার সঙ্গে বাদানুবাদ করেছিল, “কিন্তু তিনি যে বিজ্ঞতার ও যে আত্মার বলে কথা কহিতেছিলেন, তাহার প্রতিরোধ করিতে তাহাদের সাধ্য হইল না।” (প্রেরিত ৬:৫, ৮-১০) স্পষ্টতই, স্তিফান ঈশ্বরের বাক্যের এক উত্তম ছাত্র ছিলেন আর সেটিকে তিনি তার দিনের যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের সামনে দক্ষতার সঙ্গে সমর্থন করেছিলেন। তার বিস্তারিত সাক্ষ্য প্রেরিত ৭ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছে, যা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য প্রকাশের প্রতি গভীর আগ্রহের প্রমাণ দেয়।
২ সেই সমস্ত ধর্মীয় নেতা, যাদের পদমর্যাদা এবং জ্ঞান তাদেরকে সাধারণ লোকেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবতে পরিচালিত করত, তাদের বিপরীতে স্তিফান ছিলেন একজন নম্র ব্যক্তি। (মথি ২৩:২-৭; যোহন ৭:৪৯) যদিও তিনি শাস্ত্র সম্বন্ধে খুব ভালভাবে জানতেন কিন্তু প্রেরিতরা যাতে “প্রার্থনায় ও বাক্যের পরিচর্য্যায়” নিবিষ্ট থাকতে পারে, সেইজন্য তাকে যখন “ভোজনের পরিচর্য্যা” করার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। ভাইদের মধ্যে স্তিফানের অনেক সুনাম ছিল আর তাই তাকে সেই সাত জন সুখ্যাতিপন্ন ব্যক্তিদের একজন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যারা প্রতিদিন খাবার বিতরণের কাজ দেখাশোনা করবে। তিনি নম্রভাবে সেই কাজ গ্রহণ করেছিলেন।—প্রেরিত ৬:১-৬.
৩. ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার কোন উল্লেখযোগ্য প্রকাশ সম্বন্ধে স্তিফান অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন?
৩ স্তিফানের নম্র মনোভাব, সেইসঙ্গে তার আধ্যাত্মিকতা ও নীতিনিষ্ঠা যিহোবার অলক্ষিত থাকেনি। স্তিফান যখন মহাসভায় যিহুদি নেতাদের শত্রুভাবাপন্ন জনতার সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন তার বিরোধীরা “দেখিল, তাঁহার মুখ স্বর্গদূতের মুখের তুল্য।” (প্রেরিত ৬:১৫) তার মুখের ভাব ছিল ঈশ্বরের বার্তাবাহকের মতো, শান্তিতে পূর্ণ যা গৌরবের ঈশ্বর যিহোবার কাছ থেকে এসেছিল। মহাসভার সদস্যদের কাছে সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেওয়ার পর, স্তিফান ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার এক উল্লেখযোগ্য প্রকাশ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। “তিনি পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়া স্বর্গের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতাপ রহিয়াছে, এবং যীশু ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন।” (প্রেরিত ৭:৫৫) স্তিফানের জন্য এই চমৎকার দর্শন, ঈশ্বরের পুত্র এবং মশীহ হিসেবে যিশুর অবস্থানকে পুনরায় নিশ্চিত করেছিল। এটা নম্র স্তিফানকে শক্তিশালী করেছিল এবং তাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে, তার প্রতি যিহোবার অনুগ্রহ রয়েছে।
৪. কাদের কাছে যিহোবা তাঁর গৌরব প্রকাশ করেন?
৪ স্তিফানকে দেওয়া দর্শন দেখায় যে, যিহোবা সেই সমস্ত ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তির কাছে তাঁর গৌরব এবং উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন, যারা নম্র এবং তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে উচ্চমূল্য দেয়। “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, গৌরব ও জীবন।” (হিতোপদেশ ২২:৪) তাই, প্রকৃত নম্রতা কী, কীভাবে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ গুণটা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি এবং কীভাবে আমরা জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে তা প্রদর্শন করে উপকৃত হই, তা বোঝা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নম্রতা—ঈশ্বরীয় এক গুণ
৫, ৬. (ক) নম্রতা কী? (খ) যিহোবা কীভাবে নম্রতা প্রদর্শন করেছেন? (গ) যিহোবার নম্রতা দেখে আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?
৫ কারও কারও কাছে এটাকে হয়তো আশ্চর্যজনক বলে মনে হতে পারে যে, যিহোবা ঈশ্বর, যিনি নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে গৌরবান্বিত ব্যক্তি, তিনি নম্রতার মহান উদাহরণ। যিহোবাকে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “তুমি আমাকে নিজ পরিত্রাণ-ঢাল দিয়াছ; তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধারণ করিয়াছে, তোমার কোমলতা আমাকে মহান্ করিয়াছে।” (গীতসংহিতা ১৮:৩৫) যিহোবাকে কোমল বা নম্র হিসেবে বর্ণনা করে দায়ূদ মূল ইব্রীয় শব্দের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছেন, যার মানে “বিনত হওয়া।” “নম্রতা” শব্দটা ছাড়াও অন্যান্য যে-শব্দগুলো একই মূল শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত, “নত,” “বিনম্র” এবং “অবনমিত।” তাই, যিহোবা নম্রতা প্রদর্শন করেছিলেন, যখন তিনি অসিদ্ধ মানুষ দায়ূদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের জন্য নিজেকে নত করেছিলেন এবং তাকে তাঁর প্রতিনিধি রাজা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। গীতসংহিতা ১৮ অধ্যায়ের শীর্ষলিখন যেমন দেখায় যে, যিহোবা দায়ূদকে রক্ষা এবং সমর্থন করেছিলেন, তাকে “সমস্ত শত্রুর হস্ত হইতে, এবং শৌলের হস্ত হইতে” উদ্ধার করেছিলেন। একইভাবে, দায়ূদ জানতেন যে, রাজা হিসেবে তিনি যে-মহত্ত্ব অথবা গৌরবই অর্জন করুন না কেন, তা তার পক্ষে করা যিহোবার নম্র কাজের ওপর নির্ভর করে। এই উপলব্ধি দায়ূদকে নম্র থাকতে সাহায্য করেছিল।
৬ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহোবা আমাদের সত্য শেখানোর জন্য বেছে নিয়েছেন আর তিনি হয়তো তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের সেবা করার বিশেষ সুযোগগুলো দিয়েছেন অথবা তাঁর ইচ্ছাগুলো সম্পাদন করার জন্য কোনো না কোনো উপায়ে আমাদের ব্যবহার করেছেন। এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের কেমন বোধ করা উচিত? আমাদের কি নম্র হওয়া উচিত নয়? যিহোবার নম্রতার জন্য আমাদের কি কৃতজ্ঞ হওয়া এবং নিজেদের বড় করে তোলা এড়িয়ে চলা উচিত নয়, যা অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়?—হিতোপদেশ ১৬:১৮; ২৯:২৩.
৭, ৮. (ক) মনঃশির সঙ্গে যিহোবার আচরণে কীভাবে তাঁর নম্রতা দেখা গিয়েছিল? (খ) কোন উপায়ে যিহোবা ও সেইসঙ্গে মনঃশি নম্রতা দেখানোর বিষয়ে আমাদের জন্য অনুসরণযোগ্য এক উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
৭ যিহোবা অসিদ্ধ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু মহান নম্রতাই দেখাননি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি নতমনা ব্যক্তিদের প্রতি করুণা দেখাতেও ইচ্ছুক, এমনকি যারা নিজেদের নত করে, তাদের তিনি ওঠান অথবা উচ্চীকৃত করেন। (গীতসংহিতা ১১৩:৪-৭) উদাহরণস্বরূপ, যিহূদার রাজা মনঃশির কথাই ধরুন। মিথ্যা উপাসনা এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে রাজা হিসেবে তিনি তার সম্মানিত পদমর্যাদার অপব্যবহার করেছিলেন এবং “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুল কদাচরণ করিয়া তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিলেন।” (২ বংশাবলি ৩৩:৬) অবশেষে, অশূর রাজের দ্বারা মনঃশিকে সিংহাসনচ্যুত করে যিহোবা তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। কারাগারে মনঃশি “আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন, ও . . . আপনাকে অতিশয় অবনত করিলেন” আর তাই যিহোবা তাকে পুনরায় যিরূশালেমে রাজপদে বসান এবং মনঃশি “জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।” (২ বংশাবলি ৩৩:১১-১৩) হ্যাঁ, পরিশেষে মনঃশির মনের নম্র অবস্থা যিহোবাকে আনন্দিত করেছিল, যিনি ফলস্বরূপ তাকে ক্ষমা করার এবং রাজা হিসেবে পূর্বাবস্থায় বসানোর মাধ্যমে নম্রতা দেখিয়েছিলেন।
৮ ক্ষমা করার বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছা এবং মনঃশির অনুতপ্ত মনোভাব নম্রতার বিষয়ে আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। আমাদের সর্বদা মনে রাখা উচিত যে, যারা হয়তো আমাদের অসন্তুষ্ট করেছে তাদের সঙ্গে আমরা যেভাবে আচরণ করি এবং আমরা যখন পাপ করি, তখন আমরা যে-মনোভাব দেখাই, তা যিহোবা আমাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করবেন তাতে প্রভাব ফেলে। আমরা যদি স্বেচ্ছায় অন্যদের অপরাধগুলো ক্ষমা করি এবং নম্রভাবে আমাদের ভুলগুলো স্বীকার করি, তা হলে যিহোবার করুণার জন্য আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করতে পারি।—মথি ৫:২৩, ২৪; ৬:১২.
নম্র ব্যক্তিদের কাছে ঐশিক গৌরব প্রকাশ করা হয়
৯. নম্রতা কি দুর্বলতার লক্ষণ? ব্যাখ্যা করুন।
৯ কিন্তু, নম্রতা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গুণগুলোকে দুর্বলতার লক্ষণ অথবা ভুল কাজকে ক্ষমা করার প্রবণতা বলে ভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। পবিত্র শাস্ত্র যেমন সাক্ষ্য দেয় যে, যিহোবা হলেন নম্র ব্যক্তি কিন্তু তিনি ধার্মিক ক্রোধ এবং ভয়ংকর ক্ষমতা দেখান, যখন সেগুলো দেখানোর প্রয়োজন হয়। তাঁর নম্রতার কারণে যিহোবা নতমনা ব্যক্তিদের প্রতি অনুগ্রহপূর্ণ মনোযোগ অথবা বিশেষ বিবেচনা দেখান কিন্তু যারা গর্বিত, তাদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। (গীতসংহিতা ১৩৮:৬) যিহোবা তাঁর নম্র দাসদের কীভাবে বিশেষ বিবেচনা দেখিয়েছেন?
১০. নম্র ব্যক্তিদের কাছে যিহোবা কী প্রকাশ করেন, যা ১ করিন্থীয় ২:৬-১০ পদে প্রকাশ করা হয়েছে?
১০ তাঁর নিরূপিত সময়ে এবং তাঁর মনোনীত যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এই গৌরবান্বিত বিষয়গুলো সেই সমস্ত ব্যক্তির কাছে গুপ্ত রাখা হয়, যারা মনুষ্য প্রজ্ঞা অথবা চিন্তাভাবনার ওপর গর্ব সহকারে নির্ভর করে অথবা একগুঁয়েভাবে আসক্ত থাকে। (১ করিন্থীয় ২:৬-১০) কিন্তু নম্র ব্যক্তিরা, যাদেরকে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সঠিক বোধগম্যতা দেওয়া হয়েছে, তারা যিহোবাকে মহিমান্বিত করতে পরিচালিত হয় কারণ তারা তাঁর হৃদয়গ্রাহী গৌরবকে আরও বেশি করে উপলব্ধি করে।
১১. প্রথম শতাব্দীতে, কীভাবে কয়েক জন নম্রতার অভাব দেখিয়েছিল এবং কীভাবে সেটা তাদের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছিল?
১১ প্রথম শতাব্দীতে অনেকে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করেছিল, নম্রতার অভাব দেখিয়েছিল এবং প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাদের কাছে যা প্রকাশ করেছিলেন, তাতে বিঘ্ন পেয়েছিল। পৌল “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু সেটা তিনি তার জাতীয়তা, শিক্ষা, বয়স অথবা উত্তম কাজের দীর্ঘ নথির জন্য নয়। (রোমীয় ১১:১৩) প্রায়ই মাংসিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা এগুলোকে এমন বিষয় হিসেবে দেখেন, যেগুলো নির্ধারণ করে যে, তাঁর হাতিয়ার হিসেবে কাকে যিহোবার ব্যবহার করা উচিত। (১ করিন্থীয় ১:২৬-২৯; ৩:১; কলসীয় ২:১৮) কিন্তু, পৌল যিহোবার মনোনীত ছিলেন আর তা তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়া এবং ধার্মিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে ছিল। (১ করিন্থীয় ১৫:৮-১০) পৌল যাদের ‘প্রেরিত-চূড়ামণি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তারা ও সেইসঙ্গে অন্যান্য বিরোধীরা পৌলকে এবং শাস্ত্র থেকে করা তার যুক্তিকে গ্রহণ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের নম্রতার অভাব তাদেরকে যে-গৌরবান্বিত উপায়ে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করেন, সেই সম্বন্ধে জ্ঞান এবং বোধগম্যতা লাভ করতে বাধা দিয়েছিল। আমরা যেন কখনও সেই সমস্ত ব্যক্তিকে অবমূল্যায়ন অথবা আগে থেকে বিচার না করি, যাদেরকে যিহোবা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদনের জন্য বেছে নিয়েছেন।—২ করিন্থীয় ১১:৪-৬.
১২. মোশির উদাহরণ কীভাবে দেখায় যে, যারা নম্র তাদের যিহোবা অনুগ্রহ দেখান?
১২ অন্যদিকে, বাইবেলে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যা তুলে ধরে যে নম্র ব্যক্তিরা কীভাবে ঈশ্বরের গৌরবের একটু আভাস দেখার অনুগ্রহ পেয়েছিল। সকল মানুষের মধ্যে “অতিশয় মৃদুশীল” ব্যক্তি মোশি ঈশ্বরের গৌরব দেখেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন। (গণনাপুস্তক ১২:৩) এই নম্র ব্যক্তি বহু উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে অনেক অনুগ্রহ পেয়েছিলেন, যিনি নম্র মেষপালক হিসেবে ৪০ বছর অতিবাহিত করেছিলেন, যার মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই হয়তো আরবীয় উপদ্বীপে থেকেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৬:১২, ৩০) যিহোবার সাহায্যে মোশি ইস্রায়েল জাতির মুখপাত্র এবং প্রধান সংগঠক হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে পারস্পরিক ভাববিনিময় উপভোগ করেছিলেন। একটা দর্শনের মাধ্যমে তিনি “সদাপ্রভুর মূর্ত্তি” দর্শন করেছিলেন। (গণনাপুস্তক ১২:৭, ৮; যাত্রাপুস্তক ২৪:১০, ১১) যারা ঈশ্বরের এই নম্র দাস এবং প্রতিনিধিকে মেনে নিয়েছিল, তারাও আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিল। একইভাবে আমরাও আশীর্বাদপ্রাপ্ত হব, যদি আমরা মোশির চেয়ে মহান ভাববাদী যিশুকে ও সেইসঙ্গে তাঁর দ্বারা নিযুক্ত ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে’ মেনে নিই এবং তাদের বাধ্য থাকি।—মথি ২৪:৪৫, ৪৬; প্রেরিত ৩:২২.
১৩. প্রথম শতাব্দীতে নম্র মেষপালকদের কাছে কীভাবে যিহোবার গৌরব প্রকাশিত হয়েছিল?
১৩ কাদের প্রতি দূতেদের দ্বারা ‘ত্রাণকর্ত্তা খ্রীষ্ট প্রভুর’ জন্মের সুসমাচার ঘোষণাসহ ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] প্রতাপ দেদীপ্যমান’ হয়েছিল? উদ্ধত ধর্মীয় নেতা অথবা উচ্চ পদমর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে নয় কিন্তু নম্র মেষপালকদের কাছে হয়েছিল, যারা “মাঠে অবস্থিতি করিতেছিল, এবং রাত্রিকালে আপন আপন পাল চৌকি দিতেছিল।” (লূক ২:৮-১১) এই ব্যক্তিরা তাদের যোগ্যতা অথবা কাজের জন্য সম্মানিত ছিল না। কিন্তু, যিহোবা তাদের প্রতিই মনোযোগ দিয়েছিলেন এবং মশীহের জন্ম সম্বন্ধে প্রথমে জানানোর জন্য তাদেরকে বেছে নিয়েছিলেন। হ্যাঁ, যিহোবা নম্র এবং ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তিদের কাছে তাঁর প্রতাপ বা গৌরব প্রকাশ করেন।
১৪. যারা নম্র তাদের ওপর ঈশ্বরের কাছ থেকে কোন আশীর্বাদগুলো আসে?
১৪ এই উদাহরণগুলো আমাদের কী শেখায়? এগুলো আমাদের দেখায় যে, যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের অনুগ্রহ দেখান এবং তাদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জ্ঞান ও বোধগম্যতা প্রকাশ করেন। তিনি এমন ব্যক্তিদের বেছে নেন, যারা হয়তো নির্দিষ্ট কিছু মনুষ্য যোগ্যতা পূরণ করতে পারে না আর তিনি অন্যদের কাছে তাঁর গৌরবান্বিত উদ্দেশ্য জানানোর জন্য তাদেরকে তাঁর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। এই বিষয়টা জেনে আমাদের ক্রমাগত যিহোবা, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্য এবং নির্দেশনার জন্য তাঁর সংগঠনের ওপর নির্ভর করতে পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা তাঁর নম্র দাসদের তাঁর গৌরবান্বিত উদ্দেশ্যর প্রকাশ সম্বন্ধে সবসময় জানাবেন। ভাববাদী আমোষ ঘোষণা করেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।”—আমোষ ৩:৭.
নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করুন
১৫. নম্রতা বজায় রাখার জন্য কেন আমাদের কাজ করতে হবে আর তা ইস্রায়েলের রাজা শৌলের ঘটনার মাধ্যমে কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে?
১৫ স্থায়ী ঐশিক অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই নম্র থাকতে হবে। একবার নম্র হওয়ার মানে সবসময় নম্র হওয়াকে বোঝায় না। মানুষের জন্য নম্রতা ত্যাগ করা এবং গর্ব ও দম্ভের বশীভূত হওয়া সম্ভব, যা অহংকার এবং ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে। ইস্রায়েলের প্রথম অভিষিক্ত রাজা শৌল ঠিক তা-ই করেছিলেন। তাকে যখন প্রথম মনোনীত করা হয়েছিল, তখন তিনি “আপনার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র” বোধ করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৫:১৭) কিন্তু, মাত্র দুই বছর শাসন করার পর তিনি অহংকারের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তিনি ভাববাদী শমূয়েলের মাধ্যমে বলিদান উৎসর্গ করার বিষয়ে যিহোবার ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করেছিলেন এবং নিজে বলি উৎসর্গ করার পক্ষে অজুহাত দাঁড় করিয়েছিলেন। (১ শমূয়েল ১৩:১, ৮-১৪) এটাই ছিল সেই ঘটনাগুলোর শুরু, যেগুলো নিঃসন্দেহে তার নম্রতার অভাব প্রকাশ করেছিল। এর ফলে তাকে ঈশ্বরের আত্মা এবং অনুগ্রহ হারাতে হয়েছিল, যা অবশেষে অপমানজনক মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। (১ শমূয়েল ১৫:৩-১৯, ২৬; ২৮:৬; ৩১:৪) শিক্ষাটা স্পষ্ট: আমাদের নম্র এবং বশীভূত হওয়া বজায় রাখার এবং আত্মশ্লাঘী অনুভূতিকে সংযত রাখার জন্য কাজ করতে হবে আর এভাবে এমন যেকোনো অহংকারপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলতে হবে, যা যিহোবার অসন্তোষ নিয়ে আসে।
১৬. কীভাবে যিহোবা এবং সহমানবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ধ্যান করা নম্রতা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৬ যদিও নম্রতা ঈশ্বরের আত্মার ফলসমূহের তালিকাভুক্ত নয় কিন্তু এটা এমন এক ঈশ্বরীয় গুণ, যা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩; কলসীয় ৩:১০, ১২) যেহেতু এটা মনের অবস্থা—অর্থাৎ নিজেদের ও অন্যদের আমরা যেভাবে দেখি—সেটার সঙ্গে যুক্ত, তাই নম্রতা গড়ে তোলার জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টার দরকার। যিহোবা এবং আমাদের সহমানবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তি এবং ধ্যান করা আমাদের নম্র থাকতে সাহায্য করতে পারে। ঈশ্বরের চোখে সমস্ত অসিদ্ধ মানুষ সবুজ ঘাসের মতো, যা কিছু সময়ের জন্য জন্মায়, এরপর শুকিয়ে যায় এবং বিনষ্ট হয়। মানুষেরা কেবল মাঠের ফড়িংয়ের মতো। (যিশাইয় ৪০:৬, ৭, ২২) ঘাসের একটা পাতারও কি কেবল এই কারণে গর্ব করার কারণ রয়েছে যে, এটা অন্য একটা ঘাসের পাতার চেয়ে একটু বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে? একটা ফড়িংয়ে কি এই ক্ষমতার বিষয়ে দম্ভ করার কোনো কারণ রয়েছে যে, সেটা অন্য একটা ফরিংয়ের চেয়ে আরেকটু বেশি লাফাতে পারে? তা চিন্তা করাও অযৌক্তিক। তাই, প্রেরিত পৌল তার সহখ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “কে তোমাকে বিশিষ্ট করে? আর যাহা না পাইয়াছ, এমনই বা তোমার কি আছে? আর যখন পাইয়াছ; তখন যেন পাও নাই, এরূপ শ্লাঘা কেন করিতেছ?” (১ করিন্থীয় ৪:৭) এই ধরনের বাইবেলের পদগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদের নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে এবং তা দেখাতে সাহায্য করতে পারে।
১৭. কী ভাববাদী দানিয়েলকে নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করেছিল এবং কী আমাদেরও একই বিষয় করতে সাহায্য করতে পারে?
১৭ ইব্রীয় ভাববাদী দানিয়েলকে ঈশ্বরের চোখে একজন “মহাপ্রীতি-পাত্র” বলে ঘোষণা করা হয়েছিল কারণ তিনি নিজেকে “বিনীত” করেছিলেন অর্থাৎ নম্রতা দেখিয়েছিলেন। (দানিয়েল ১০:১১, ১২) কী দানিয়েলকে নম্রতা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করেছিল? সর্বপ্রথম, তিনি যিহোবার ওপর পুরোপুরি নির্ভরতা দেখিয়েছিলেন, নিয়মিতভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (দানিয়েল ৬:১০, ১১) এ ছাড়াও, দানিয়েল ঈশ্বরের বাক্যের একজন অধ্যবসায়ী এবং সঠিক প্রেরণাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, যা তাকে ঈশ্বরের গৌরবান্বিত উদ্দেশ্যর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করেছিল। সেইসঙ্গে তিনি শুধু তার লোকেদেরই নয় কিন্তু নিজের ভুলগুলো স্বীকার করতে ইচ্ছুক ছিলেন। আর তিনি নিজের নয় বরং ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে উচ্চীকৃত করার জন্য সত্যিই আগ্রহী ছিলেন। (দানিয়েল ৯:২, ৫, ৭) আমরা কি দানিয়েলের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ থেকে শিখতে এবং আমাদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে ও তা দেখাতে প্রাণপণ করতে পারি?
১৮. আজকে যারা নম্রতা দেখায়, তাদের জন্য কোন গৌরব অপেক্ষা করছে?
১৮ “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, গৌরব ও জীবন,” হিতোপদেশ ২২:৪ পদ বলে। হ্যাঁ, যারা নম্র যিহোবা তাদের অনুগ্রহ দেখান এবং এর ফল হয় গৌরব ও জীবন। ঈশ্বরের প্রতি তার সেবা প্রায় ছেড়ে দেওয়ার এবং এরপর যিহোবার দ্বারা তার চিন্তাধারাকে পুনরায় সমন্বয় করার পর গীতরচক আসফ নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন, “তুমি নিজ মন্ত্রণায় আমাকে গমন করাইবে, শেষে সপ্রতাপে আমাকে গ্রহণ করিবে।” (গীতসংহিতা ৭৩:২৪) আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? যারা নম্রতা দেখায় তাদের জন্য কোন গৌরব অপেক্ষা করছে? যিহোবার সঙ্গে অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদযুক্ত সম্পর্ক উপভোগ করা ছাড়াও তারা রাজা দায়ূদের অনুপ্রাণিত কথাগুলোর পরিপূর্ণতা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারে: “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” সত্যিই এক গৌরবান্বিত ভবিষ্যৎ!—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
• স্তিফান কীভাবে এক নম্র ব্যক্তির উদাহরণ, যার কাছে যিহোবা তাঁর গৌরব প্রকাশ করেছিলেন?
• কোন কোন উপায়ে যিহোবা নম্রতা প্রদর্শন করেছেন?
• কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিহোবা নম্র ব্যক্তিদের কাছে তাঁর গৌরব প্রকাশ করেন?
• দানিয়েলের উদাহরণ কীভাবে আমাদের নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১২ পৃষ্ঠার বাক্স]
দৃঢ় অথচ নম্র
১৯১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর সিডার পয়েন্টে বাইবেল ছাত্রদের (আজকে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পরিচিত) সম্মেলনে ৫০ বছর বয়সী জে. এফ. রাদারফোর্ড, যিনি সেই সময় কাজের দেখাশোনা করতেন, আনন্দের সঙ্গে বেলবয় হিসেবে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছিলেন, সম্মেলনে যারা এসেছিল তাদের মালপত্র তাদের সঙ্গে করে তাদের রুমে নিয়ে যেতেন। সম্মেলনের শেষ দিন তিনি ৭,০০০ দর্শকদের এই কথাগুলোর দ্বারা রোমাঞ্চিত করেছিলেন: “আপনারা রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভুর রাজদূত, লোকেদের কাছে . . . আমাদের প্রভুর মহিমান্বিত রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করছেন।” যদিও ভাই রাদারফোর্ড দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যক্তি ছিলেন, জোরের সঙ্গে এবং যেটাকে তিনি সত্য বলে জানতেন সেটার বিষয়ে কোনো আপোশ না করে কথা বলার জন্য পরিচিত ছিলেন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি ঈশ্বরের সামনে প্রকৃতই নম্র ছিলেন, যা প্রায়ই তিনি বেথেলে সকালের উপাসনায় প্রার্থনার মধ্যে প্রতিফলিত করতেন।
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
স্তিফান নম্রভাবে খাবার বিতরণ করেছিলেন, যিনি শাস্ত্র সম্বন্ধে খুব ভালভাবে জানতেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
মনঃশির মনের নম্র অবস্থা যিহোবাকে আনন্দিত করেছিল
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
কী দানিয়েলকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” করে তুলেছিল?