সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

“তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে।”মথি ২০:২৬.

১. শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

 কায়রোর প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, প্রাচীন মিশরীয় শহর দিবিসের (বর্তমানে কার্নাক) কাছেই ফরৌণ আমেনহোটেপ ৩য়-র ১৮ মিটার লম্বা একটা মূর্তি রয়েছে। সেই প্রকাণ্ড মূর্তির সঙ্গে তুলনা করলে একজন ব্যক্তিকে অনেক ক্ষুদ্রাকায় বলেই মনে হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভ, যা নিঃসন্দেহে শাসকের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলার জন্য তৈরি করা হয়েছে, শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গির এক প্রতীক—যেটা হল একজন ব্যক্তিকে যতটা সম্ভব বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা এবং অন্যদের তুচ্ছ বলে মনে করানো।

২. যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং আমাদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন?

শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি, যিশু খ্রিস্ট যে-দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন, সেটার বিপরীত। যদিও যিশু তাঁর অনুসারীদের “প্রভু ও গুরু” ছিলেন কিন্তু তিনি তাদের শিখিয়েছিলেন যে, অন্যদের সেবা করার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব আসে। পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ দিনে যিশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যা শিখিয়েছিলেন সেগুলোর অর্থ কী। কতই না নম্র সেবা! (যোহন ১৩:৪, ৫, ১৪) সেবা করা অথবা সেবা পাওয়া—কোনটা আপনার কাছে বেশি আবেদনমূলক? খ্রিস্টের উদাহরণ কি আপনার মধ্যে ঠিক তাঁর মতো নম্র হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে? তা হলে, আসুন আমরা শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে খ্রিস্টের দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করি।

শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করুন

৩. বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো সেই সমস্ত ব্যক্তির দুঃখজনক পরিণতি সম্বন্ধে দেখায়, যারা মানুষের কাছ থেকে গৌরব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে?

বাইবেলের অসংখ্য উদাহরণ দেখায় যে, শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি সর্বনাশের দিকে নিয়ে যায়। ক্ষমতাবান হামনের কথা চিন্তা করুন, যিনি ইষ্টের এবং মর্দখয়ের সময়ে পারস্য রাজদরবারে বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। গৌরব পাওয়ার বিষয়ে হামনের আকাঙ্ক্ষা তার জন্য অপমান এবং মৃত্যু নিয়ে এসেছিল। (ইষ্টের ৩:৫; ৬:১০-১২; ৭:৯, ১০) উদ্ধত নবূখদ্‌নিৎসর সম্বন্ধে কী বলা যায়, যিনি তার ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সময় উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন? শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে তার বিকৃত ধারণা এই কথাগুলোর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছিল: “এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি আপন বলের প্রভাবে ও আপন প্রতাপের মহিমার্থে রাজধানী করিবার জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছি?” (দানিয়েল ৪:৩০) তারপর রয়েছেন অহংকারী হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম, যিনি ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করার পরিবর্তে নিজের জন্য অন্যায্য গৌরব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি “কীটভক্ষিত হইয়া প্রাণত্যাগ” করেছিলেন। (প্রেরিত ১২:২১-২৩) শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সমস্ত ব্যক্তিরা অপমানজনকভাবে পতিত হয়েছিল।

৪. জগতের গর্বিত মনোভাবের পিছনে কে রয়েছে?

আমাদের জীবনকে এমনভাবে ব্যবহার করা উপযুক্ত, যা আমাদের জন্য সম্মান এবং শ্রদ্ধা নিয়ে আসে। কিন্তু, দিয়াবল গর্বিত মনোভাব, যা হল তার নিজ উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, তা গড়ে তোলার মাধ্যমে এই আকাঙ্ক্ষার অপব্যবহার করেছিল। (মথি ৪:৮, ৯) কখনও ভুলে যাবেন না যে, সে হল “এই যুগের দেব” আর সে এই পৃথিবীতে তার চিন্তাভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (২ করিন্থীয় ৪:৪; ইফিষীয় ২:২; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) এই ধরনের চিন্তাভাবনার উৎস সম্বন্ধে জানে বলে খ্রিস্টানরা শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে।

৫. সাফল্য, খ্যাতি এবং সম্পদ কি স্থায়ী পরিতৃপ্তির নিশ্চয়তা দেয়? ব্যাখ্যা করুন।

একটা যে-ধারণা দিয়াবল ছড়ায় তা হল, জগতে বিখ্যাত নাম, মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা এবং পকেট ভরতি টাকা এমনি এমনিই সুখী জীবন নিয়ে আসবে। সেটা কি সত্য? সাফল্য, খ্যাতি, এবং সম্পদ কি পরিতৃপ্তিতে ভরা এক জীবনের নিশ্চয়তা দেয়? বাইবেল আমাদের সতর্ক করে, যাতে আমরা এই ধরনের চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রবঞ্চিত না হই। জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “আমি সমস্ত পরিশ্রম ও সমস্ত কার্য্যকৌশল দেখিয়া বুঝিলাম, ইহাতে মনুষ্য প্রতিবাসীর ঈর্ষাভাজন হয়; ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র।” (উপদেশক ৪:৪) অনেকে, যারা জগতে জনপ্রিয়তা লাভ করার জন্য নিজেদের জীবন সঁপে দিয়েছে, তারা বাইবেলের অনুপ্রাণিত পরামর্শের সত্যতার বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে। একটা উদাহরণ হল সেই ব্যক্তি যিনি মহাকাশযানের নকশা বানাতে, নির্মাণ এবং পরীক্ষা করতে সাহায্য করেছেন, যেটা নিয়ে মানুষ চাঁদে গিয়েছিল। তিনি মনে করে বলেন: “আমি অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম এবং যা করেছিলাম তাতে অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু, তা আমার জন্য স্থায়ী সুখ এবং মনের শান্তির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ অথবা মূল্যহীন হয়েছিল।” শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের ধারণা, তা সেটা ব্যাবসা, খেলাধুলা, আমোদপ্রমোদ যে-ক্ষেত্রেই হোক না কেন, স্থায়ী পরিতৃপ্তির নিশ্চয়তা দেয় না।

সেবা থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠত্ব প্রেমের দ্বারা চালিত

৬. কী দেখায় যে, শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে যাকোব এবং যোহনের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?

যিশুর জীবনের একটা ঘটনা দেখায় যে, প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে কী জড়িত। যিশু এবং তাঁর শিষ্যরা সা.কা. ৩৩ সালে নিস্তারপর্বের জন্য যিরূশালেমে যাচ্ছিলেন। পথের মধ্যে যিশুর দুজন মাসতুতো ভাই যাকোব ও যোহন শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিল। তাদের মার মাধ্যমে তারা যিশুর কাছে এই অনুরোধ জানিয়েছিল: ‘আজ্ঞা করুন, যেন আপনার রাজ্যে আমরা এক জন আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে, বসিতে পারি।’ (মথি ২০:২১) যিহুদিদের মধ্যে ডান দিকে অথবা বাম দিকে বসাকে এক বিরাট সম্মান হিসেবে দেখা হতো। (১ রাজাবলি ২:১৯) যাকোব এবং যোহন উচ্চাকাঙ্ক্ষিত হয়ে সবচেয়ে বিশিষ্ট জায়গাগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা কর্তৃত্বের এই পদমর্যাদাগুলো দাবি করতে চেয়েছিল। যিশু বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা কী চিন্তা করছে আর তাই তিনি শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে তাদের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করে দেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন।

৭. কীভাবে যিশু প্রকৃত খ্রিস্টীয় শ্রেষ্ঠত্বের পথ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন?

যিশু জানতেন যে, এই গর্বিত জগতে যে-ব্যক্তিকে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করা হয় তিনি হলেন এমন একজন, যিনি অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করেন ও আদেশ দেন এবং যিনি তার হাতের তুড়িতেই তার সমস্ত খেয়ালখুশিকে পূরণ করতে পারেন। কিন্তু, যিশুর অনুসারীদের মধ্যে নম্র সেবাই হল শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয়ের মাপকাঠি। যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে তোমাদের দাস হইবে।”—মথি ২০:২৬, ২৭.

৮. একজন পরিচারক হওয়ার অর্থ কী এবং নিজেদেরকে আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

যে-গ্রিক শব্দকে বাইবেলে “পরিচারক” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা এমন একজনকে নির্দেশ করে, যিনি অন্যদের সেবা করার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে ও অনবরত প্রচেষ্টা করে যান। যিশু তাঁর শিষ্যদের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছিলেন: কোনো কিছু করার জন্য লোকেদের আদেশ দেওয়া একজন ব্যক্তিকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে না; প্রেমের দ্বারা চালিত হয়ে অন্যদের সেবা করাই শ্রেষ্ঠ করে তোলে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যদি যাকোব অথবা যোহন হতাম, তা হলে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতাম? আমি কি এই বিষয়টা বুঝতে পেরেছি যে, প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব প্রেমের দ্বারা চালিত হয়ে সেবা করার মাধ্যমে আসে?’—১ করিন্থীয় ১৩:৩.

৯. অন্যদের সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

যিশু তাঁর শিষ্যদের দেখিয়েছিলেন যে, জগতের শ্রেষ্ঠত্বের মান খ্রিস্টতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের মান নয়। যাদের তিনি সেবা করতেন, তাদের প্রতি তিনি কখনও উচ্চ মনোভাব দেখাননি অথবা তাদেরকে নিচু ভাবতেও দেননি। সব ধরনের লোক—পুরুষ, নারী এবং ছেলেমেয়ে, ধনী, দরিদ্র এবং ক্ষমতাবান ও সেইসঙ্গে পাপী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা—তাঁর কাছে স্বচ্ছন্দবোধ করত। (মার্ক ১০:১৩-১৬; লূক ৭:৩৭-৫০) যাদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাদের প্রতি লোকেরা প্রায়ই অধৈর্য হয়ে পড়ে। কিন্তু, যিশু আলাদা ছিলেন। যদিও তাঁর শিষ্যরা কখনও কখনও অবিবেচক ছিল এবং ঝগড়া করত কিন্তু তিনি ধৈর্যসহকারে তাদের নির্দেশনা দিতেন, দেখাতেন যে তিনি সত্যিই নম্র এবং মৃদুশীল ব্যক্তি।—সখরিয় ৯:৯; মথি ১১:২৯; লূক ২২:২৪-২৭.

১০. কীভাবে যিশুর সম্পূর্ণ জীবনধারা অন্যদের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবাকে প্রতিফলিত করেছিল?

১০ ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ এই পুত্রের দ্বারা স্থাপিত নিঃস্বার্থ উদাহরণ দেখিয়েছে যে, শ্রেষ্ঠত্ব মানে আসলে কী। যিশু পৃথিবীতে সেবা পেতে আসেননি কিন্তু অন্যদের সেবা করতে এসেছিলেন, ‘নানা প্রকার রোগ’ সারিয়েছিলেন এবং ভূতগ্রস্ত লোকেদের সুস্থ করেছিলেন। যদিও তিনি ক্লান্ত হতেন এবং বিশ্রামের জন্য তাঁর সময়ের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তিনি সর্বদা নিজের চেয়ে বরং অন্যদের প্রয়োজনগুলোকে আগে রাখতেন, তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতেন। (মার্ক ১:৩২-৩৪; ৬:৩০-৩৪; যোহন ১১:১১, ১৭, ৩৩) তাঁর প্রেম তাঁকে লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করতে এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য শত শত কিলোমিটার ধুলোবালিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ করতে পরিচালিত করেছিল। (মার্ক ১:৩৮, ৩৯) নিঃসন্দেহে, অন্যদের সেবা করাকে যিশু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন।

খ্রিস্টের নম্রতা অনুকরণ করুন

১১. যে-ভাইদের মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়, তাদের কাছে কোন গুণগুলো চাওয়া হয়?

১১ আঠারোশো সালের শেষের দিকে খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের যে-সঠিক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছিল, যখন ঈশ্বরের লোকেদের প্রয়োজনগুলো দেখাশোনা করার জন্য পুরুষদের ভ্রমণ প্রতিনিধি হিসেবে বাছাই করা হয়েছিল। ১৮৯৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার (ইংরেজি) অনুসারে যা চাওয়া হয়েছিল, সেটা হল এমন পুরুষদের, যারা “মৃদুশীল—যাতে তারা গর্বিত হয়ে না পড়ে . . . নম্রমনা, যারা নিজেদের বিষয়ে নয় কিন্তু খ্রিস্টের বিষয়ে প্রচার করার চেষ্টা করে—তাদের নিজেদের জ্ঞান প্রকাশ না করে বরং তাঁর বাক্যের সরলতা এবং ক্ষমতা প্রকাশ করে।” স্পষ্টতই, সত্য খ্রিস্টানদের কখনও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত করার জন্য অথবা বিশিষ্টতা, ক্ষমতা এবং অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্য দায়িত্ব পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। একজন নম্র অধ্যক্ষ মনে রাখেন যে, তার দায়িত্বগুলো নিজের জন্য গৌরব নিয়ে আসতে এক উচ্চপদকে নয় বরং ‘উত্তম কার্য্যকে’ প্রতিনিধিত্ব করে। (১ তীমথিয় ৩:১, ২) সমস্ত প্রাচীন এবং পরিচারক দাসকে নম্রভাবে অন্যদের সেবা করতে এবং পবিত্র সেবায় নেতৃত্ব দিতে তাদের যথাসাধ্য করা উচিত, এভাবে অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করা উচিত।—১ করিন্থীয় ৯:১৯; গালাতীয় ৫:১৩; ২ তীমথিয় ৪:৫.

১২. মণ্ডলীতে যারা বিশেষ সুযোগগুলো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে, তারা নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারে?

১২ যে-ভাই বিশেষ সুযোগগুলোর আকাঙ্ক্ষা করেন, তার হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন: ‘আমি কি অন্যদের সেবা করার জন্য সুযোগগুলো খুঁজি, নাকি আমার মধ্যে সেবা পাওয়ার প্রবণতা রয়েছে? আমি কি এমন উপকারী কাজগুলো করতে ইচ্ছুক, যা সহজেই অন্যদের চোখে পড়ে না?’ উদাহরণস্বরূপ, একজন যুবক ভাই হয়তো খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে বক্তৃতা দিতে ইচ্ছুক কিন্তু বয়স্কদের সাহায্য করতে ইতস্তত করতে পারেন। তিনি হয়তো মণ্ডলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের সঙ্গে মেলামেশা উপভোগ করেন কিন্তু প্রচার কাজে যোগ দিতে অনিচ্ছুক। এই ধরনের যুবক ভাইদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি মূলত ঈশ্বরের সেবার সেই দিকগুলোতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি, যা স্বীকৃতি ও প্রশংসা নিয়ে আসে? আমি কি অন্যদের কাছে বিশিষ্ট হওয়ার প্রচেষ্টা করি?’ ব্যক্তিগত গৌরবের প্রচেষ্টা করা নিশ্চিতভাবে খ্রিস্টতুল্য নয়।—যোহন ৫:৪১.

১৩. (ক) একজন অধ্যক্ষের নম্রতার উদাহরণ কীভাবে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে? (খ) কেন এটা বলা যেতে পারে যে, নম্রতা বা নতমনা হওয়া একজন খ্রিস্টানের জন্য বেছে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়?

১৩ আমরা যখন খ্রিস্টের নম্রতা অনুকরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা অন্যদের সেবা করতে পরিচালিত হই। একজন আঞ্চলিক অধ্যক্ষের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসের কার্যক্রম পরীক্ষা করছিলেন। অত্যন্ত ব্যস্ত তালিকা এবং প্রচুর দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও এই অধ্যক্ষ একজন যুবক ভাইকে সাহায্য করার জন্য থামেন, যিনি সেলাই মেশিনের সেটিং ঠিক করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। “আমি তা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!” সেই যুবক ভাই স্মরণ করে বলেন। “তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, বেথেলে সেবা করার সময় তিনি যখন যুবক ছিলেন, তখন একই ধরনের মেশিন ব্যবহার করেছিলেন আর তিনি মনে করে বলেন যে, একেবারে সঠিক সেটিং স্থাপন করা কত কঠিন কাজ ছিল। তিনি কিছু সময়ের জন্য আমার সঙ্গে সেই মেশিন নিয়ে কাজ করেন, যদিও তার করার জন্য অন্যান্য আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। সেটা সত্যিই আমার ওপর ছাপ ফেলেছিল।” সেই ভাই, যিনি এখন যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসের অধ্যক্ষ, এখনও সেই নম্রতার কথা মনে রেখেছেন। আমরা যেন কখনও নিচু কাজ করার ব্যাপারে নিজেদের উচ্চ মনে না করি অথবা ছোট কাজ করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ মনে না করি। এর পরিবর্তে, আমাদের “নম্রতা” পরিধান করা উচিত। এটা বেছে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। এটা হল ‘নূতন মনুষ্যের’ অংশ, যা খ্রিস্টানদের অবশ্যই পরিধান করতে হবে।—ফিলিপীয় ২:৩; কলসীয় ৩:১০, ১২; রোমীয় ১২:১৬.

শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি যেভাবে অর্জন করা যায়

১৪. কীভাবে ঈশ্বর ও সহমানবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ধ্যান করা শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আমাদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করতে পারে?

১৪ কীভাবে আমরা শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারি? একটা উপায় হল, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ধ্যান করে। তাঁর মহিমা, ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞা তাঁকে দুর্বল মানুষের বিভিন্ন অবস্থা থেকে অনেক উচ্চীকৃত করে। (যিশাইয় ৪০:২২) এ ছাড়া, আমাদের সহমানবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ধ্যান করাও আমাদের নত মন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ক্ষেত্রে আমরা হয়তো অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে পারি কিন্তু তারা হয়তো জীবনের এমন ক্ষেত্রগুলোতে শ্রেষ্ঠ হতে পারে, যা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অথবা আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের হয়তো এমন গুণ থাকতে পারে, যেগুলো আমাদের নেই। আসলে অনেকে, যারা ঈশ্বরের চোখে মূল্যবান, তারা তাদের মৃদুশীল এবং নম্র আচরণের জন্য বিশিষ্ট হতে চায় না।—হিতোপদেশ ৩:৩৪; যাকোব ৪:৬.

১৫. ঈশ্বরের লোকেদের নীতিনিষ্ঠা কীভাবে দেখায় যে, কারোরই অন্যদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করার কোনো ভিত্তি নেই?

১৫ বিশ্বাসের কারণে পরীক্ষার মধ্যে থাকাকালীন যিহোবার সাক্ষিদের অভিজ্ঞতাগুলো উপযুক্তভাবে এই বিষয়টা তুলে ধরে। প্রায়ই জগতের লোকেরা যাদের সামান্য বলে মনে করে তারাই কঠোর পরীক্ষার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছে। এই ধরনের উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদের নম্র থাকতে সাহায্য করতে পারে এবং ‘আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, তদপেক্ষা বড় বোধ না করিতে’ শিক্ষা দিতে পারে।—রোমীয় ১২:৩.

১৬. মণ্ডলীর সকলে কীভাবে শ্রেষ্ঠত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার বিষয়ে যিশুর দ্বারা স্থাপিত আদর্শ অনুকরণ করতে পারে?

১৬ যুবক ও বৃদ্ধ সমস্ত খ্রিস্টানের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত। মণ্ডলীতে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। যে-কাজকে নিচু বলে মনে হয় সেটা করতে বললে কখনও বিরক্ত হবেন না। (১ শমূয়েল ২৫:৪১; ২ রাজাবলি ৩:১১) বাবামারা আপনারা কি আপনাদের ছেলেমেয়ে এবং কিশোর-কিশোরীদের যেকোনো কাজই তাদের দেওয়া হোক না কেন, তা আনন্দের সঙ্গে করতে উৎসাহিত করেন, তা সেটা কিংডম হল অথবা সম্মেলনের জায়গাগুলো যেখানেই হোক না কেন? তারা কি দেখে যে আপনি নিচু কাজগুলো করছেন? একজন ভাই, যিনি এখন যিহোবার সাক্ষিদের প্রধান কার্যালয়ে সেবা করছেন, তিনি তার বাবামার উদাহরণ স্পষ্টভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেছিলেন: “কিংডম হল অথবা সম্মেলন কেন্দ্র পরিষ্কার করার কাজকে তারা যেভাবে দেখত, তা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে তারা এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা প্রায়ই স্বেচ্ছায় এমন কাজ করত, যা মণ্ডলীর অথবা ভাইবোনদের জন্য উপকারী, তা সেটা যত ছোট বলেই মনে হতো না কেন। এই মনোভাব আমাকে বেথেলে যেকোনো কার্যভার স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে সাহায্য করেছে।”

১৭. কোন কোন উপায়ে নম্র মহিলারা মণ্ডলীর জন্য আশীর্বাদ হতে পারে?

১৭ নিজের চেয়ে বরং অন্যদের আগ্রহগুলোকে আগে রাখার বিষয়ে আমাদের কাছে ইষ্টেরের উত্তম উদাহরণ রয়েছে, যিনি সা.কা.পূ. পঞ্চম শতাব্দীতে পারস্য সাম্রাজ্যের রানি হয়েছিলেন। যদিও তিনি প্রাসাদে থাকতেন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের লোকেদের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে ফেলতে ইচ্ছুক ছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন। (ইষ্টের ১:৫, ৬; ৪:১৪-১৬) তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, খ্রিস্টান মহিলারা আজকে হতাশাগ্রস্ত লোকেদের উৎসাহ দিয়ে, অসুস্থদের দেখতে গিয়ে, প্রচার কাজে অংশ নিয়ে এবং প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করে ইষ্টেরের মতো মনোভাব দেখাতে পারে। এই ধরনের নম্র বোনেরা মণ্ডলীর জন্য কী এক আশীর্বাদ!

খ্রিস্টতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের আশীর্বাদগুলো

১৮. খ্রিস্টতুল্য শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করার মাধ্যমে কোন উপকারগুলো আসে?

১৮ আপনি যখন শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখেন, তখন অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিঃস্বার্থভাবে অন্যদের সেবা করা তাদের ও আপনার উভয়ের জন্যই আনন্দ নিয়ে আসে। (প্রেরিত ২০:৩৫) আপনি যখন স্বেচ্ছায় এবং উৎসুকভাবে আপনার ভাইদের জন্য কাজ করেন, তখন আপনি তাদের প্রিয়জন হয়ে ওঠেন। (প্রেরিত ২০:৩৭) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাঁর প্রতি আনন্দিত প্রশংসা বলি হিসেবে সহখ্রিস্টানদের মঙ্গল বৃদ্ধির জন্য আপনি যা কিছু করেন, যিহোবা তা দেখেন।—ফিলিপীয় ২:১৭.

১৯. শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?

১৯ প্রত্যেককে নিজের হৃদয় পরীক্ষা করা ও নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টার বিষয়ে আমি কি শুধু মুখে মুখে বলি, নাকি আমি তা অভ্যাসে পরিণত করার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে চেষ্টা করি?’ উদ্ধত লোকেদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। (হিতোপদেশ ১৬:৫; ১ পিতর ৫:৫) আমাদের কাজ যেন দেখায় যে আমরা শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে খ্রিস্টতুল্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের ক্ষেত্রে আনন্দ করি, তা সেটা খ্রিস্টীয় মণ্ডলী, আমাদের পারিবারিক জীবন অথবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সহমানবদের সঙ্গে আচরণ, যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন—সমস্তকিছুই যেন ঈশ্বরের গৌরব এবং প্রশংসার জন্য করি।—১ করিন্থীয় ১০:৩১.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কেন আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা উচিত?

• যিশু কীভাবে শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়কে মূল্যায়ন করেছিলেন?

• অধ্যক্ষরা কীভাবে খ্রিস্টের নম্রতা অনুকরণ করতে পারে?

• খ্রিস্টতুল্য শ্রেষ্ঠত্ব গড়ে তুলতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

কার খ্রিস্টতুল্য শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে?

যিনি সেবা পেতে চান অথবা যিনি সেবা করতে ইচ্ছুক?

যিনি প্রধান হতে চান অথবা যিনি নিচু কাজগুলো গ্রহণ করেন?

যিনি নিজেকে উচ্চ করেন অথবা যিনি অন্যদের উচ্চ করেন?

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরৌণ আমেনহোটেপ ৩য়-র এক প্রকাণ্ড মূর্তি

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন হামনের পতনের কারণ কী?

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি অন্যদের সেবা করার সুযোগগুলো খোঁজেন?