সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“অপরিচিতদের রব” থেকে সাবধান থাকুন

“অপরিচিতদের রব” থেকে সাবধান থাকুন

“অপরিচিতদের রব” থেকে সাবধান থাকুন

“তাহারা কোন মতে অপর [“অপরিচিত,” NW] লোকের পশ্চাৎ যাইবে না, বরং তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিবে; কারণ অপর লোকদের [“অপরিচিতদের,” NW] রব তাহারা জানে না।”যোহন ১০:৫.

১, ২. (ক) মরিয়ম কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যখন যিশু তাকে নাম ধরে ডেকেছিলেন আর এই ঘটনার মাধ্যমে আগে বলা যিশুর কোন কথাগুলো তুলে ধরা হয়েছে? (খ) কী আমাদের যিশুর নিকটে থাকতে সমর্থ করে?

 পুনরুত্থিত যিশু তাঁর শূন্য কবরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটিকে লক্ষ করেন। তাকে তিনি খুব ভাল করেই চেনেন। তিনি হলেন মগ্দলীনী মরিয়ম। প্রায় দুবছর আগে, তিনি তাকে মন্দ আত্মার প্রভাব থেকে মুক্ত করেছিলেন। তখন থেকে মরিয়ম, যিশু ও তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন এবং তাদের দৈনন্দিন চাহিদাগুলোর যত্ন নিতেন। (লূক ৮:১-৩) কিন্তু, আজকে মরিয়ম শোকে বিহ্বল হয়ে কাঁদছেন কারণ তিনি যিশুকে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছেন আর এখন এমনকি তাঁর দেহ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে! তাই যিশু তাকে জিজ্ঞেস করেন: “নারি রোদন করিতেছ কেন? কাহার অন্বেষণ করিতেছ?” মরিয়ম তাঁকে বাগানের মালি মনে করে উত্তর দেন: “মহাশয়, আপনি যদি তাঁহাকে লইয়া গিয়া থাকেন, আমায় বলুন, কোথায় রাখিয়াছেন; আমিই তাঁহাকে লইয়া যাইব।” এরপর যিশু বলেন: “মরিয়ম।” সঙ্গে সঙ্গেই যে-পরিচিত উপায়ে যিশু তার সঙ্গে কথা বলেন তা তিনি চিনতে পারেন। “রব্বূণি!” তিনি উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন এবং তাঁর কাছে আসেন।—যোহন ২০:১১-১৮.

এই ঘটনা, কিছুদিন আগে যিশু যা বলেছিলেন, সেটা মর্মস্পর্শী উপায়ে তুলে ধরে। নিজেকে একজন মেষপালক এবং তাঁর অনুসারীদের মেষের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন যে, মেষপালক তার নিজের মেষদের নাম ধরে ডাকে আর তারা তার রব চেনে। (যোহন ১০:৩, ৪, ১৪, ২৭, ২৮) সত্যিই, একটা মেষ যেমন তার মেষপালককে চিনতে পারে, তেমনই মরিয়ম তাঁর মেষপালক, খ্রিস্টকে চিনতে পেরেছিলেন। এই বিষয়টা আজকে যিশুর অনুসারীদের বেলায়ও সত্য। (যোহন ১০:১৬) ঠিক যেমন একটা মেষের সূক্ষ্মদর্শী শ্রবণেন্দ্রিয় এটাকে এর মেষপালকের নিকটে থাকতে সমর্থ করে, তেমনই আমাদের আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা আমাদের উত্তম মেষপালক, যিশু খ্রিস্টের পদচিহ্নের নিকটে থেকে চলতে সমর্থ করে।—যোহন ১৩:১৫; ১ যোহন ২:৬; ৫:২০.

৩. কিছু প্রশ্ন কী, যা যিশুর মেষের খোঁয়াড়ের দৃষ্টান্ত আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে?

কিন্তু, সেই একই দৃষ্টান্ত অনুসারে মানুষের রবকে চেনার বিষয়ে মেষের ক্ষমতা এটাকে শুধু এর বন্ধুকেই নয়, বরং এর শত্রুকেও জানতে সমর্থ করে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের প্রতারণাপূর্ণ বিরোধীরা রয়েছে। তারা কারা? তারা কীভাবে কাজ করে? কীভাবে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি? এর উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা দেখি যে, যিশু তাঁর মেষের খোঁয়ারের দৃষ্টান্তে আরও কী বলেছেন।

‘যে দ্বার দিয়া প্রবেশ করে না’

৪. মেষপালকের দৃষ্টান্ত অনুসারে, মেষেরা কাকে অনুসরণ করে এবং কাকে অনুসরণ করে না?

যিশু বলেন: “যে দ্বার দিয়া প্রবেশ করে, সে মেষদের পালক। তাহাকেই দ্বারী দ্বার খুলিয়া দেয়, এবং মেষেরা তাহার রব শুনে; আর সে নাম ধরিয়া তাহার নিজের মেষদিগকে ডাকে, ও বাহিরে লইয়া যায়। যখন সে নিজের সকলগুলিকে বাহির করে, তখন তাহাদের অগ্রে অগ্রে গমন করে; আর মেষেরা তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলে, কারণ তাহারা তাহার রব জানে। কিন্তু তাহারা কোন মতে অপরিচিত লোকের পশ্চাৎ যাইবে না, বরং তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিবে; কারণ অপরিচিতদের রব তাহারা জানে না।” (যোহন ১০:২-৫) লক্ষ করুন, যিশু “রব” শব্দটি তিন বার ব্যবহার করেন। দুবার তিনি মেষপালকের রবের বিষয়ে বলেন কিন্তু তৃতীয় বার তিনি ‘অপরিচিতদের রবের’ বিষয়ে উল্লেখ করেন। যিশু কোন ধরনের অপরিচিত লোকের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন?

৫. যোহন ১০ অধ্যায়ে উল্লেখিত অপরিচিত লোকের প্রতি কেন আমরা আতিথেয়তা দেখাই না?

যিশু এমন কোনো অপরিচিত লোকের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন না, যার প্রতি আমরা আতিথেয়তা দেখাতে চাই আর মূল বাইবেলের ভাষায় এই আতিথেয়তা শব্দটির অর্থ হল, “অপরিচিতদের প্রতি প্রেম।” (ইব্রীয় ১৩:২) যিশুর দৃষ্টান্তে, অপরিচিত লোক কোনো আমন্ত্রিত অতিথি নয়। সে ‘দ্বার দিয়া মেষদের খোঁয়াড়ে প্রবেশ করে না, কিন্তু আর কোন দিক্‌ দিয়া উঠে।’ সে একজন “চোর ও দস্যু।” (যোহন ১০:১) ঈশ্বরের বাক্যে উল্লেখিত সেই প্রথম ব্যক্তি কে, যে-একজন চোর ও দস্যু হয়েছে? শয়তান দিয়াবল। আমরা আদিপুস্তক বইয়ে এর প্রমাণ পাই।

অপরিচিত লোকের রব যখন প্রথম শোনা গিয়েছিল

৬, ৭. কেন শয়তানকে উপযুক্তভাবে একজন অপরিচিত লোক এবং একজন চোর বলা যেতে পারে?

আদিপুস্তক ৩:১-৫ পদ বর্ণনা করে যে, কীভাবে অপরিচিত লোকের রব প্রথমবারের মতো পৃথিবীতে শোনা গিয়েছিল। ঘটনা বর্ণনা করে যে, শয়তান একটা সাপের মাধ্যমে প্রথম নারী হবার কাছে এসেছিল এবং ভ্রান্তিজনক উপায়ে তার সঙ্গে কথা বলেছিল। এটা ঠিক যে, এই ঘটনায় শয়তানকে আক্ষরিকভাবে ‘অপরিচিত লোক’ বলা হয়নি। তা সত্ত্বেও, তার কাজগুলো দেখায় যে অনেক উপায়ে সে যোহন ১০ অধ্যায়ে বলা যিশুর দৃষ্টান্তে বর্ণিত অপরিচিত লোকের মতো ছিল। কিছু সাদৃশ্য বিবেচনা করুন।

যিশু বলেন যে, অপরিচিত লোক মেষের খোঁয়াড়ে তার শিকারের কাছে ঘোরালো পথে আসে। একইভাবে শয়তান একটা সাপকে ব্যবহার করে তার শিকারের কাছে পরোক্ষভাবে এসেছিল। এইরকম প্রতারণাপূর্ণভাবে আসা উন্মোচন করে দিয়েছিল যে, শয়তান আসলে কেমন—এক প্রতারক অনুপ্রবেশকারী। এ ছাড়া, মেষের খোঁয়াড়ে অপরিচিত লোকের অভিপ্রায় হল বৈধ মালিকের কাছ থেকে তার মেষকে হরণ করা। বস্তুত, সে একজন চোরের থেকেও খারাপ কারণ “বধ ও বিনাশ” করাও তার লক্ষ্য। (যোহন ১০:১০) একইভাবে, শয়তান হল এক চোর। হবাকে প্রতারিত করে সে ঈশ্বরের প্রতি হবার বশ্যতাকে চুরি করেছিল। অধিকন্তু, শয়তান মানুষের জন্য মৃত্যুও নিয়ে এসেছিল। তাই, সে একজন খুনি।

৮. শয়তান কীভাবে যিহোবার বাক্য এবং মনোভাবকে বিকত করেছিল?

শয়তান যেভাবে যিহোবার বাক্য এবং মনোভাবকে বিকৃত করেছিল তাতে তার অসততা স্পষ্ট হয়েছিল। “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা . . . কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” সে হবাকে জিজ্ঞেস করেছিল। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) শয়তান অবাক হওয়ার ভান করেছিল, যেন সে বলতে চেয়েছিল: ‘কীভাবে ঈশ্বর এতটা অযৌক্তিক হতে পারেন?’ সে আরও বলেছিল: “ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে।” তার কথাগুলো লক্ষ করুন: “ঈশ্বর জানেন।” শয়তান যেন এইরকম বলেছিল: ‘ঈশ্বর যা জানেন, তা আমি জানি। আমি তাঁর মনোভাবগুলো জানি আর সেগুলো মন্দ।’ (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭; ৩:১, ৫) দুঃখজনক যে, হবা ও আদম এই অপরিচিত লোকের রব থেকে সরে আসেনি। এর পরিবর্তে, তারা এতে মনোযোগ দিয়েছিল এবং নিজেদের ও সেইসঙ্গে তাদের বংশধরের জন্য দুর্দশা নিয়ে এসেছিল।—রোমীয় ৫:১২, ১৪.

৯. আজকে অপরিচিত লোকের রব শোনা যাবে বলে কেন আমাদের আশা করা উচিত?

আজকে ঈশ্বরের লোকেদের ভ্রান্ত করার জন্য শয়তান একই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) সে ‘মিথ্যাবাদীর পিতা’ এবং তার মতো যারা ঈশ্বরের দাসদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তারা হল তার সন্তান। (যোহন ৮:৪৪) আসুন আমরা কিছু উপায় লক্ষ করি, যেগুলোর মাধ্যমে এই অপরিচিত লোকেদের রব আজকে শোনা যায়।

আজকে যেভাবে অপরিচিতদের রব শোনা যায়

১০. কোন একটা উপায়ে অপরিচিতদের রব শোনা যায়?

১০ প্রতারণাপূর্ণ যুক্তিগুলো। প্রেরিত পৌল বলেন: “তোমরা বহুবিধ এবং বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা বিপথে চালিত হইও না।” (ইব্রীয় ১৩:৯) কোন ধরনের শিক্ষা? যেহেতু সেগুলো ‘আমাদের বিপথে চালিত’ করতে পারে, তাই এটা স্পষ্ট যে পৌল সেই শিক্ষাগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করেন, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্যতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। কারা এই ধরনের বিজাতীয় বা অপরিচিত শিক্ষাগুলো প্রদান করছে? পৌল খ্রিস্টান প্রাচীনদের একটা দলকে বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:৩০) বস্তুত, পৌলের দিনের মতো আজকেও কিছু ব্যক্তি একসময় খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ ছিল কিন্তু এখন “বিপরীত কথা” বা বিকৃত বিষয়গুলো—অর্ধ সত্য এবং পুরোপুরি মিথ্যা—বলার মাধ্যমে মেষদের ভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। প্রেরিত পিতর এটাকে এভাবে বলেছেন যে, তারা “কল্পিত বাক্য” বা ভুল যুক্তিগুলো ব্যবহার করে, যেগুলো সত্যের সদৃশ বলে মনে হয় কিন্তু আসলে মূল্যহীন।—২ পিতর ২:৩.

১১. দ্বিতীয় পিতর ২:১, ৩ পদে বলা কথাগুলো কীভাবে ধর্মভ্রষ্টদের পদ্ধতি এবং লক্ষ্যগুলো প্রকাশ করে?

১১ পিতর ধর্মভ্রষ্টদের পদ্ধতিগুলো এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে আরও প্রকাশ করেন যে, তারা “গোপনে বিনাশজনক দলভেদ উপস্থিত করিবে।” (২ পিতর ২:১, ৩) যিশুর মেষের খোঁয়াড়ের দৃষ্টান্তের চোর যেমন “দ্বার দিয়া” প্রবেশ না করে বরং “আর কোন দিক্‌ দিয়া উঠে” তেমনই ধর্মভ্রষ্টরা গুপ্ত উপায়ে আমাদের কাছে আসে। (গালাতীয় ২:৪; যিহূদ ৪) তাদের লক্ষ্য কী? পিতর যুক্ত করেন: “তাহারা . . . তোমাদের হইতে অর্থলাভ করিবে” বা তোমাদেরকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগাবে। বস্তুত, ধর্মভ্রষ্টরা বিপরীতে যে-কথাই বলুক না কেন, অনুপ্রবেশকারীদের আসল লক্ষ্য হল “বধ ও বিনাশ” করা। (যোহন ১০:১০) এই ধরনের অপরিচিত লোকেদের থেকে সাবধান থাকুন!

১২. (ক) কীভাবে আমাদের সংসর্গ আমাদের কাছে অপরিচিতদের রব প্রকাশ করতে পারে? (খ) শয়তানের কলাকৌশল এবং আজকের অপরিচিত লোকেদের মধ্যে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?

১২ ক্ষতিকর সংসর্গ। যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি, তাদের মাধ্যমেও অপরিচিতদের রব শোনা যেতে পারে। ক্ষতিকর মেলামেশা বিশেষভাবে অল্পবয়স্কদের বিপদে ফেলে। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) মনে রাখবেন যে, শয়তান হবাকে বেছে নিয়েছিল—প্রথম মানব দম্পতির মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী এবং কম অভিজ্ঞ। সে তাকে এই প্রত্যয়ী করেছিল যে, যিহোবা তার স্বাধীনতাকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছেন, বাস্তবে যদিও বিপরীতটা সত্য ছিল। যিহোবা তাঁর মানব সৃষ্টিকে ভালবাসেন এবং তাদের মঙ্গলের জন্য চিন্তা করেন। (যিশাইয় ৪৮:১৭) একইভাবে আজকে তোমরা যারা অল্পবয়স্ক রয়েছ, তোমাদেরকে অপরিচিত লোকেরা এই কথা বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করে যে, তোমাদের খ্রিস্টান বাবামা তোমাদের স্বাধীনতাকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধরনের অপরিচিত লোকেরা কীভাবে তোমার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? একজন খ্রিস্টান মেয়ে স্বীকার করে: “কিছু সময়ের জন্য আমার বিশ্বাস কিছুটা হলেও আমার সহপাঠীদের দ্বারা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তারা বলেই চলেছিল যে আমাদের ধর্ম অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণপ্রবণ এবং অযৌক্তিক।” অথচ, সত্য বিষয়টা হল যে তোমাদের বাবামা তোমাদের ভালবাসে। তাই, স্কুলের সহছাত্রছাত্রীরা যখন তোমাদের বাবামার ওপর নির্ভর না করতে প্ররোচিত করে, তখন হবা যেমন হয়েছিল তেমন ভ্রান্ত হোয়ো না।

১৩. দায়ূদ কোন বিজ্ঞতার পথ অনুসরণ করেছিলেন এবং কোন একটা উপায়ে আমরা তাকে অনুকরণ করতে পারি?

১৩ ক্ষতিকর সংসর্গের বিষয়ে গীতরচক দায়ূদ বলেন: “আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না।” (গীতসংহিতা ২৬:৪) আবারও তুমি কি অপরিচিতদের সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটা লক্ষ করেছ? তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে—ঠিক যেমন শয়তান একটা সাপকে ব্যবহার করে তার পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিল। আজকে কিছু অনৈতিক লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলো লুকিয়ে রাখে। চ্যাট রুমগুলোতে বিপথগামী প্রাপ্তবয়স্করা তোমাকে প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলার জন্য নিজেদের এমনকি অল্পবয়স্ক হিসেবে তুলে ধরে। অল্পবয়স্করা, দয়া করে তোমরা অত্যন্ত সতর্ক থাকো নতুবা তোমরা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।—গীতসংহিতা ১১৯:১০১; হিতোপদেশ ২২:৩.

১৪. কীভাবে প্রচারমাধ্যম মাঝে মাঝে অপরিচিতদের রব প্রকাশ করে?

১৪ মিথ্যা অভিযোগগুলো। যদিও যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ বিবৃতি ন্যায্য থাকে কিন্তু মাঝে মাঝে প্রচারমাধ্যম অপরিচিতদের পক্ষপাতদুষ্ট রব সম্প্রচার করে। উদাহরণস্বরূপ, একটা দেশে একটা সংবাদ বিবৃতি মিথ্যেভাবে বলেছিল যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাক্ষিরা হিটলারের শাসনতন্ত্রকে সমর্থন করেছিল। আরেকটা দেশে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, সাক্ষিরা গির্জাঘরগুলোকে নষ্ট করেছে। কয়েকটা দেশে প্রচারমাধ্যম সাক্ষিদের এই বলে অভিযোগ করে যে, তারা তাদের ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা দিতে প্রত্যাখ্যান করে ও সেইসঙ্গে সহবিশ্বাসীদের করা গুরুতর পাপগুলোকে স্বেচ্ছায় উপেক্ষা করে। (মথি ১০:২২) তা সত্ত্বেও, যে-অকপট ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জানে, তারা বুঝতে পারে যে, এই ধরনের অভিযোগগুলো মিথ্যা।

১৫. প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরা সমস্তকিছুতে বিশ্বাস করা কেন বোকামির কাজ?

১৫ এই ধরনের অপরিচিত লোকেদের রবের মাধ্যমে ছড়ানো অভিযোগের মুখোমুখি হলে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের হিতোপদেশ ১৪:১৫ পদের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া উচিত: “যে অবোধ, সে সকল কথায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” প্রচারমাধ্যমে সত্য হিসেবে তুলে ধরা সমস্তকিছুতে বিশ্বাস করা বোকামির কাজ। যদিও আমরা সমস্ত জাগতিক তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করি না কিন্তু আমরা জানি যে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—১ যোহন ৫:১৯.

“আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ”

১৬. (ক) আক্ষরিক মেষের আচরণ কীভাবে যোহন ১০:৪ পদে পাওয়া যিশুর কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে তুলে ধরে? (খ) বাইবেল আমাদের কী করার জন্য উৎসাহ দেয়?

১৬ কিন্তু, কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে আমরা বন্ধু নাকি শত্রুর সঙ্গে মেলামেশা করছি? যিশু বলেন যে, মেষেরা মেষপালককে অনুসরণ করে “কারণ তাহারা তাহার রব জানে।” (যোহন ১০:৪) আর মেষপালকের আক্ষরিক বেশভূষা তাকে অনুসরণ করতে মেষদের পরিচালিত করে না; বরং তার রবই তা করে থাকে। বাইবেলের সময়ের দেশগুলোর ওপরে একটি বই বলে যে, একজন দর্শনার্থী একবার দাবি করেছিল যে মেষেরা তাদের মেষপালককে পোশাকের মাধ্যমে চেনে, তার রবের দ্বারা নয়। একজন মেষপালক উত্তর দিয়েছিলেন যে, তারা সেই রব জানে। তা প্রমাণ করার জন্য তিনি সেই অপরিচিত লোকের সঙ্গে তার পোশাক পালটিয়েছিলেন। মেষপালকের পোশাক পরে সেই অপরিচিত লোক মেষদের ডেকেছিলেন কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি। তারা তার রব জানত না। অথচ, মেষপালক যখন তাদের ডেকেছিলেন, তখন যদিও তিনি পোশাক পরিবর্তন করেছিলেন, মেষেরা সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে এসেছিল। এভাবে, একজন ব্যক্তিকে হয়তো মেষপালক বলে মনে হতে পারে কিন্তু মেষদের জন্য সেটা প্রমাণ করে না যে, আসলেই তিনি মেষপালক। বস্তুত, মেষেরা আহ্বানকারীর রব পরীক্ষা করে, সেটাকে মেষপালকের রবের সঙ্গে তুলনা করে। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের একই বিষয় করার জন্য বলে—“আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তাহারা ঈশ্বর হইতে কি না।” (১ যোহন ৪:১; ২ তীমথিয় ১:১৩) কী আমাদের তা করতে সাহায্য করবে?

১৭. (ক) কীভাবে আমরা যিহোবার রবের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে পারি? (খ) যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান আমাদের কী করতে সমর্থ করে?

১৭ এটা বোধগম্য যে, আমরা যত ভালভাবে যিহোবার রব বা বার্তা সম্বন্ধে জানি, তত ভালভাবে আমরা অপরিচিত লোকের রবকে শনাক্ত করতে পারি। বাইবেল দেখায় যে, কীভাবে আমরা এই ধরনের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারি। এটি বলে: “দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশাইয় ৩০:২১) আমাদের পিছন থেকে আসা “বাণী” ঈশ্বরের বাক্য থেকে আসে। যতবার আমরা ঈশ্বরের বাক্য পড়ি, ততবার আমরা শুনি যেন এটি সর্বমহান মেষপালক যিহোবার রব। (গীতসংহিতা ২৩:১) তাই, যত বেশি আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করি, তত বেশি আমরা ঈশ্বরের রবের সঙ্গে পরচিতি হয়ে উঠি। আর এর ফলে সেই গভীর জ্ঞান অপরিচিতদের রবকে অবিলম্বে শনাক্ত করতে আমাদের সমর্থ করবে।—গালাতীয় ১:৮.

১৮. (ক) যিহোবার রব জানার সঙ্গে কী জড়িত? (খ) মথি ১৭:৫ পদ অনুসারে কেন আমাদের যিশুর রব মেনে চলা উচিত?

১৮ যিহোবার রবকে জানার সঙ্গে আরও কী জড়িত? শোনা ছাড়াও তা মেনে চলা জড়িত। আবারও যিশাইয় ৩০:২১ পদ লক্ষ করুন। ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করে: “এই পথ।” হ্যাঁ, বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার নির্দেশনা শুনি। এরপর তিনি আদেশ দেন: “এই পথেই চল।” যিহোবা চান যাতে আমরা যা শুনি সেইমতো কাজ করি। এভাবে, আমরা যা শিখি তা কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা দেখাই যে আমরা শুধু যিহোবার রবই শুনিনি কিন্তু সেইসঙ্গে তাতে মনোযোগ দিয়েছি। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১) এ ছাড়া, যিহোবার রব মেনে চলার মানে যিশুর রবও মেনে চলা কারণ যিহোবা নিজে তা আমাদের করতে বলেছেন। (মথি ১৭:৫) উত্তম মেষপালক যিশু আমাদের কী করতে বলেছেন? তিনি আমাদের শিষ্য তৈরি করতে এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ ওপর নির্ভর করতে শিখিয়েছেন। (মথি ২৪:৪৫; ২৮:১৮-২০) তাঁর রব মেনে চলার মানে আমাদের অনন্তজীবন।—প্রেরিত ৩:২৩.

‘তাহারা তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিবে’

১৯. অপরিচিতদের রবের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত?

১৯ তা হলে, অপরিচিতদের রবের প্রতি আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? মেষেরা যেভাবে দেখায় সেভাবে। যিশু বলেন: “তাহারা কোন মতে অপরিচিত লোকের পশ্চাৎ যাইবে না, বরং তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিবে।” (যোহন ১০:৫) আমাদের প্রতিক্রিয়া দুইরকম। প্রথমত, আমরা “কোন মতে” অপরিচিত লোকের “পশ্চাৎ” যাব না। হ্যাঁ, আমরা দৃঢ়ভাবে একজন অপরিচিত লোককে প্রত্যাখ্যান করি। বস্তুত, বাইবেলের গ্রিক ভাষায় “কোন মতে” শব্দগুলো সেই ভাষায় খুব জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যানকে প্রকাশ করার জন্য অনুবাদ করে। (মথি ২৪:৩৫; ইব্রীয় ১৩:৫) দ্বিতীয়ত, আমরা “তাহার নিকট হইতে পলায়ন” করব বা তার কাছ থেকে চলে আসব। যাদের শিক্ষা উত্তম মেষপালকের রবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তাদের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানোর এটাই একমাত্র সঠিক উপায়।

২০. (ক) প্রতারণাপূর্ণ ধর্মভ্রষ্ট, (খ) ক্ষতিকর সংসর্গ (গ) পক্ষপাতদুষ্ট প্রচারমাধ্যমের বিবৃতিগুলোর মুখোমুখি হলে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব?

২০ তাই, ধর্মভ্রষ্ট ধারণাগুলোকে প্রকাশ করে এমন ব্যক্তিদের মুখোমুখি হলে আমরা ঈশ্বরের বাক্য যা বলে তা করতে চাই: “তোমরা যে শিক্ষা পাইয়াছ, তাহার বিপরীতে যাহারা দলাদলি ও বিঘ্ন জন্মায়, তাহাদিগকে চিনিয়া রাখ ও তাহাদের হইতে দূরে থাক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (রোমীয় ১৬:১৭; তীত ৩:১০) একইভাবে, যে-অল্পবয়স্ক খ্রিস্টানরা ক্ষতিকর সংসর্গের বিপদগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, তারা যুবক তীমথিয়কে দেওয়া পৌলের পরামর্শ কাজে লাগাতে চায়: “তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আর প্রচারমাধ্যমের মিথ্যে অভিযোগের মুখোমুখি হলে আমরা তীমথিয়কে দেওয়া পৌলের আরও উপদেশ মনে রাখব: “লোকেরা [যারা অপরিচিতদের রব শোনে] . . . গল্পের [“মিথ্যা গল্পগুলোর,” NW] দিকে বিপথে যাইবে। কিন্তু তুমি সর্ব্ববিষয়ে মিতাচারী হও।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ তীমথিয় ২:২২; ৪:৩-৫) অপরিচিতদের রব যত মধুর বলেই মনে হোক না কেন, আমরা সেই সমস্তকিছু থেকে পলায়ন করব, যা আমাদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেবে।—গীতসংহিতা ২৬:৫; হিতোপদেশ ৭:৫, ২১; প্রকাশিত বাক্য ১৮:২, ৪.

২১. যারা অপরিচিতদের রব প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কোন পুরস্কার রয়েছে?

২১ অপরিচিতদের রব প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা লূক ১২:৩২ পদে বলা উত্তম মেষপালকের কথাগুলোতে সাড়া দেয়। সেখানে যিশু তাদের বলেন: “হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না, কেননা তোমাদিগকে সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতার হিতসঙ্কল্প হইয়াছে।” একইভাবে, ‘আরও মেষেরা’ উৎসুকভাবে যিশুর এই কথাগুলো শোনার অপেক্ষায় আছে: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।” (যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩৪) আমরা যদি “অপরিচিতদের রব” প্রত্যাখান করি, তা হলে আমাদের জন্য কতই না হৃদয়গ্রাহী পুরস্কার রয়েছে!

আপনার কি স্মরণে আছে?

• যিশুর মেষের খোঁয়াড়ের দৃষ্টান্তে উল্লেখিত অপরিচিত লোকের বর্ণনা কীভাবে শয়তানের বেলায় খাটে?

• আজকে কীভাবে অপরিচিতদের রব শোনা যায়?

• আমরা কীভাবে অপরিচিতদের রব চিনতে পারি?

• অপরিচিতদের রবের প্রতি আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মরিয়ম খ্রিস্টকে চিনতে পেরেছিলেন

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

অপরিচিত লোক সরাসরি মেষের কাছে আসে না

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

অপরিচিতদের রবের প্রতি আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই?