স্বেচ্ছায় ত্যাগস্বীকারের এক পরিতৃপ্তিদায়ক ও সুখী জীবন
জীবন কাহিনী
স্বেচ্ছায় ত্যাগস্বীকারের এক পরিতৃপ্তিদায়ক ও সুখী জীবন
বলেছেন মারিয়াঁ এবং রোজা জুমিগা
“আমি তোমার উদ্দেশে স্ব-ইচ্ছার বলি উৎসর্গ করিব,” গীতসংহিতা ৫৪:৬ পদ ঘোষণা করে। এই উক্তিটি ফ্রান্সে বসবাসরত মারিয়াঁ জুমিগা ও তার স্ত্রী রোজার জীবনের মূল বিষয় হয়েছে। সম্প্রতি তারা যিহোবার সেবায় তাদের দীর্ঘ, পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় বর্ণনা করেছে।
মারিয়াঁ: আমার বাবামা ছিল পোল্যান্ড থেকে আসা রোমান ক্যাথলিক অভিবাসী। বাবা খুব সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার কখনও স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, সৈনিক হিসেবে কাজ করার সময় তিনি পড়তে ও লিখতে শিখেছিলেন। বাবা একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু গির্জা তাকে প্রায়ই নিরাশ করত।
একটা ঘটনা বিশেষভাবে তার স্মৃতিতে গেঁথে গিয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন, সেনাবাহিনীতে বাবা যে-বিভাগে ছিলেন, সেখানে একদিন চ্যাপেলের একজন পাদরি পরিদর্শন করেন। যখন কাছাকাছি একটা কামানের গোলা বিস্ফোরিত হয়, তখন সেই পাদরি আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যান, তার ঘোড়াটা যাতে দৌড়ায়, সেইজন্য তাকে একটা ক্রুশ দিয়ে আঘাত করেন। বাবা এটা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের একজন “প্রতিনিধি” ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এরকম একটা “পবিত্র” বস্তুকে ব্যবহার করেছেন। তার নিজের চোখে দেখা এই ধরনের অভিজ্ঞতা এবং যুদ্ধের আতঙ্ক সত্ত্বেও, ঈশ্বরের প্রতি বাবার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায়নি। যুদ্ধ থেকে নিরাপদে ফিরে এসে তিনি সবসময় ঈশ্বরকেই কৃতিত্ব দিতেন।
“ছোট্ট পোল্যান্ড”
১৯১১ সালে, আমার বাবা পাশের গ্রামের একজন মেয়েকে বিয়ে করেন। তার নাম ছিল আন্না সিসভস্কি। যুদ্ধের অল্প কিছুদিন পর, ১৯১৯ সালে, বাবা ও মা পোল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে অভিবাসী হিসেবে থাকার জন্য চলে আসেন, যেখানে বাবা একটা কয়লা খনিতে কাজ পান। ১৯২৬ সালের মার্চ মাসে দক্ষিণপশ্চিম ফ্রান্সের কানিয়াকেলিমিনে আমি জন্মগ্রহণ করি। এরপর, আমার
বাবামা উত্তর ফ্রান্সের লেন্সের কাছে লোসেয়াঁগোয়েলের একটা পোলিশ কমিউনিটিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকে। রুটিওয়ালা, মাংসওয়ালা এবং পল্লিযাজক সবাই-ই ছিল পোলিশ। তাই এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, এই এলাকাকে ছোট্ট পোল্যান্ড বলা হতো। আমার বাবামা সামাজিক কাজকর্মে জড়িত ছিল। বাবা প্রায়ই বিভিন্ন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতেন যেটাতে নাটক, সংগীত এবং গান অন্তর্ভুক্ত থাকত। এ ছাড়া, যাজকের সঙ্গেও তার নিয়মিত আলোচনা হতো কিন্তু সাধারণত যাজক যখন এভাবে উত্তর দিতেন যে, “অনেক রহস্য রয়েছে,” তখন তিনি তাতে সন্তুষ্ট হতেন না।১৯৩০ সালে, একদিন দুজন ভদ্রমহিলা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে। তারা ছিল বাইবেল ছাত্রী, যিহোবার সাক্ষিদের তখন ওই নামে ডাকা হতো। আমার বাবা তাদের কাছ থেকে একটি বাইবেল নেন, যে-বইটি তিনি অনেক দিন ধরেই পড়তে চাচ্ছিলেন। এ ছাড়া, তিনি এবং মা বাইবেলভিত্তিক সেই প্রকাশনাগুলোও আগ্রহের সঙ্গে পড়তেন, যেগুলো সেই ভদ্রমহিলারা দিয়ে গিয়েছিল। আমার বাবামা এই প্রকাশনাগুলোতে যা যা পড়েছিল, সেগুলো তাদেরকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও, আমার বাবামা বাইবেল ছাত্রদের দ্বারা আয়োজিত সভাগুলোতে যোগদান করতে শুরু করেছিল। যাজকের সঙ্গে আলোচনাগুলো অত্যন্ত বিতর্কিত হয়ে ওঠে, পরে একদিন তিনি হুমকি দিয়ে যান যে, আমার বাবামা যদি বাইবেল ছাত্রদের সঙ্গে মেলামেশা চালিয়ে যেতে থাকে, তা হলে আমার বোন স্তেফনিয়েকে ক্যাটিকিস্ম থেকে বহিষ্কার করা হবে। বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এই নিয়ে চিন্তা করবেন না। এখন থেকে আমার মেয়ে এবং অন্যান্য ছেলেমেয়েরা আমাদের সঙ্গে বাইবেল ছাত্রদের সভাগুলোতে যাবে।’ বাবা গির্জা থেকে সরে আসেন আর ১৯৩২ সালের প্রথমদিকে আমার বাবামা বাপ্তিস্ম নেন। সেই সময়ে, ফ্রান্সে প্রায় ৮০০ জন রাজ্য প্রকাশক ছিল।
রোজা: আমার বাবামা হাঙ্গারি থেকে এসেছিল আর মারিয়াঁর পরিবারের মতোই, স্থানীয় কয়লা খনিগুলোতে কাজ করার জন্য ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকে। আমি ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করি। ১৯৩৭ সালে যিহোবার সাক্ষিদের একজন, ওগ্যুস্ত বুজেঁ অথবা পাপা ওগ্যুস্ত, যাকে আমরা এই বলেই ডাকতাম, আমার বাবামার কাছে হাঙ্গারি ভাষায় প্রহরীদুর্গ পত্রিকা আনতে শুরু করেন। পত্রিকাগুলো তাদের ভাল লাগে কিন্তু তাদের কেউ-ই যিহোবার সাক্ষি হননি।
যদিও আমি ছোট ছিলাম কিন্তু প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় আমি যা পড়েছিলাম সেটা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল আর পাপা ওগ্যুস্তের বৌমা, সুইজাঁয়ে বুজেঁ আমার প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখান। আমাকে সভাগুলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার বাবামা তাকে অনুমতি দেয়। পরে, যখন আমি কাজ করতে শুরু করি, তখন রবিবারগুলোতে আমি সভায় যোগদান করায় আমার বাবা বিরক্ত হতেন। যদিও তিনি শান্ত প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন যে, “সপ্তাহের দিনগুলোতে তুমি থাকো না আর রবিবারগুলোতেও তুমি তোমার সভায় চলে যাও!” কিন্তু তবুও আমি সভাগুলোতে যেতে থাকি। তাই একদিন আমার বাবা বলেছিলেন, “তুমি তোমার জিনিসপত্র নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও!” এটা ছিল রাতের বেলা। তখন আমার বয়স মাত্র ১৭ বছর আর কোথায় যাব সেই বিষয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আমি সুইজাঁয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠি, কান্নায় ভেঙে পড়ি। আমাকে বাড়িতে আনার জন্য বাবা আমার দিদিকে পাঠানোর আগে প্রায় এক সপ্তাহ আমি সুইজাঁয়ের কাছে ছিলাম। আমি লাজুক প্রকৃতির ছিলাম কিন্তু ১ যোহন ৪:১৮ পদে প্রকাশিত চিন্তাধারাটি আমাকে অটল থাকতে সাহায্য করেছিল। সেই শাস্ত্রপদটি বলে যে, “সিদ্ধ প্রেম ভয়কে বাহির করিয়া দেয়।” ১৯৪২ সালে আমি বাপ্তিস্ম নিই।
এক মহামূল্যবান আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার
মারিয়াঁ: আমার বোন স্তেফনিয়ে ও মেলানিয়ে আর আমার দাদা স্তেফাঁয়ের সঙ্গে ১৯৪২ সালে আমি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। বাড়িতে, পারিবারিক জীবন ঈশ্বরের বাক্যের ওপরই কেন্দ্রীভূত ছিল। আমরা যখন টেবিলের চারদিকে বসতাম, তখন বাবা পোলিশ ভাষায় আমাদের সামনে বাইবেল পড়তেন। আমাদের সন্ধ্যেবেলাগুলো প্রায়ই আমাদের বাবামায়ের বলা রাজ্য প্রচার কাজে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনে কেটে যেত। আধ্যাত্মিকভাবে উৎসাহজনক এই মুহূর্তগুলো আমাদের যিহোবাকে ভালবাসতে এবং তাঁর ওপর আরও বেশি করে নির্ভর করতে শিক্ষা দিয়েছে। খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে আমার বাবা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু তিনি ক্রমাগতভাবে আধ্যাত্মিক ও বস্তুগতভাবে আমাদের দেখাশোনা করে চলেছিলেন।
যেহেতু বাবার তখন অবসর সময় ছিল, তাই তিনি সপ্তাহে একবার মণ্ডলীর অল্পবয়স্কদের সঙ্গে পোলিশ ভাষায় বাইবেল অধ্যয়ন করাতেন। সেখানেই আমি পোলিশ ভাষা পড়তে শিখেছিলাম। এ ছাড়া, অন্যান্য উপায়েও বাবা অল্পবয়স্কদের উৎসাহিত করেন। একবার যখন ভাই গুইস্তাভে সফার, যিনি সেই সময় ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষিদের কাজ দেখাশোনা করতেন, তিনি আমাদের মণ্ডলী পরিদর্শন করেন, তখন বাবা এক সমবেত সংগীত এবং রাজা বেল্শৎসরের ভোজ এবং দেওয়ালে হাতের লেখা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বাইবেলের একটা নাটকের আয়োজন করেছিলেন, যেটাতে সকলে প্রাচীনকালের মতো পোশাকআশাক পরেছিল। (দানিয়েল ৫:১-৩১) লুই পিয়তা দানিয়েলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যিনি পরে নাৎসিদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। * এই ধরনের পরিবেশের মধ্যে আমরা অর্থাৎ ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে উঠেছিলাম। আমরা লক্ষ করেছিলাম যে, আমাদের বাবামা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকে। আজকে, আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, আমার বাবামা আমাদের জন্য কী মহামূল্যবান এক উত্তরাধিকারই না রেখে গেছে।
১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তখন ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষিদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একবার, আমাদের গ্রামে তল্লাশি চালানো হয়। জার্মান সৈন্যরা সমস্ত বাড়ি ঘিরে রাখে। বাবা আলমারির নিচে একটা নকল মেঝে বানিয়েছিলেন আর আমরা সেই মেঝের তলায় বাইবেলের বিভিন্ন প্রকাশনা লুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু, ফ্যাসিবাদ অথবা স্বাধীনতা (ইংরেজি) নামক পুস্তিকার বেশ কিছু কপি একটা ড্রয়ারের নিচে ছিল। বাবা সঙ্গে সঙ্গে করিডোরে ঝুলতে থাকা একটা জ্যাকেটের মধ্যে সেগুলোকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। দুজন সৈন্য এবং একজন ফরাসি পুলিশ আমাদের বাড়ি তল্লাশি করে। আমরা রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে থাকি। একজন সৈন্য করিডোরে ঝুলতে থাকা কাপড়চোপড়ে তল্লাশি করতে থাকেন আর এরপর শীঘ্রই তিনি হাতে করে পুস্তিকাগুলো নিয়ে রান্নাঘরে ঢোকেন, যেখানে আমরা ছিলাম। তিনি আমাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, টেবিলের ওপর পুস্তিকাগুলো রাখেন আর অন্যান্য জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে যান। আমি তাড়াতাড়ি করে পুস্তিকাগুলোকে তুলে নিই এবং সেগুলোকে একটা ড্রয়ারের মধ্যে রাখি যেটাতে সৈন্যরা ইতিমধ্যেই খোঁজা শেষ করেছে। সৈন্যটি আর পুস্তিকাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করেননি—যেন তিনি সেগুলোর কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন!
পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করা
১৯৪৮ সালে, আমি অগ্রগামীর পরিচর্যার মাধ্যমে পূর্ণসময় যিহোবার সেবা করব বলে সিদ্ধান্ত নিই। কিছুদিন পর, আমি ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিস থেকে একটা চিঠি পাই। সেই চিঠিতে আমাকে, বেলজিয়ামের কাছে সিডান শহরের মণ্ডলীতে একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার কার্যভার দেওয়া হয়। যিহোবার পরিচর্যাকে এইভাবে গ্রহণ করতে দেখে আমার বাবামা আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু, বাবা বলেছিলেন যে, অগ্রগামীর কাজ করা কোনো সহজ বিষয় নয়। এটা কঠোর পরিশ্রমের কাজ। যাই হোক, তিনি বলেছিলেন যে, আমার জন্য তার দরজা সবসময় খোলা থাকবে আর কোনো সমস্যা হলে সাহায্যের জন্য আমি তার ওপর নির্ভর করতে পারি। যদিও আমার বাবামার অনেক অর্থ ছিল না, তবুও তারা আমাকে একটা নতুন সাইকেল কিনে দেয়। সেই সাইকেলের রসিদটা এখনও আমার কাছে রয়েছে আর আমি যখনই এটা দেখি, আমার চোখে জল এসে যায়। ১৯৬১ সালে আমার বাবা ও মা মারা যায় কিন্তু বাবার সেই বিজ্ঞতাপূর্ণ কথাগুলো এখনও আমার কানে বাজে; আমার পরিচর্যার বছরগুলোতে সেগুলো আমাকে উৎসাহ এবং সান্ত্বনা দিয়েছে।
উৎসাহের আরেকটা উৎস ছিলেন সিডান মণ্ডলীর ৭৫ বছর বয়সী একজন খ্রিস্টান বোন এলিজ মট্। গ্রীষ্মকালে, দূরবর্তী গ্রামগুলোতে প্রচার করার জন্য আমি সাইকেলে চড়ে গিয়েছিলাম আর এলিজ ট্রেনে করে এসে আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, একদিন ট্রেন ইঞ্জিনিয়াররা ধর্মঘট করেছিল আর তাই এলিজ বাড়ি যেতে পারেননি। একমাত্র যে-সমাধানটার কথা আমি চিন্তা করতে পেরেছিলাম সেটা ছিল যে, তাকে আমার সাইকেলের জিনিসপত্র রাখার বাক্সে বসিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া—এভাবে ফিরে আসা মোটেই আরামদায়ক ছিল না। পরের দিন সকালে, আমি একটা গদি আনি আর এলিজকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিই। তিনি ট্রেনে যাত্রা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন আর তাই ট্রেন ভাড়ার যে-পয়সাটা বেঁচে যেত, সেটা দিয়ে তিনি আমাদের জন্য দুপুরের খাবারের সময় হট ড্রিঙ্ক কিনতে পারতেন। কে ভেবেছিল যে, আমার সাইকেল জনপরিবহণ হিসেবে কাজ করবে?
আরও দায়িত্ব
১৯৫০ সালে, আমাকে সমগ্র উত্তর ফ্রান্সে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করার জন্য বলা হয়। যেহেতু আমার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর, তাই আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল এক ধরনের ভয়মিশ্রিত। আমি মনে করেছিলাম যে, শাখা অফিস কোনো ভুল করেছে! আমার মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে: ‘আমি কি আধ্যাত্মিক ও শারীরিক দিক দিয়ে যোগ্য? প্রতি সপ্তাহে নানা জায়গায় থাকার ব্যবস্থার সঙ্গে আমি কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি?’ এ ছাড়া, ছয় বছর বয়স থেকে আমি এক ধরনের চোখের রোগে ভুগেছি, যেটাকে ডাইভারজেন্ট স্ট্রাবিসমাস বলা হয়। এই অবস্থার দরুণ আমার একটা চোখ টেরা হয়ে গিয়েছিল। এইজন্য আমি সবসময়ই খুব বেশি আত্মসচেতন ছিলাম, চিন্তিত ছিলাম যে, অন্যেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আনন্দের বিষয় যে, সেই সময় আমি গিলিয়েড স্কুলের একজন গ্র্যাজুয়েট মিশনারি স্টিফান বেহুনিকের কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছিলাম। ভাই বেহুনিককে তার প্রচার কাজের জন্য পোল্যান্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল আর তাই পুনরায় ফ্রান্সে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার সাহস সত্যিই আমার ওপর ছাপ ফেলেছিল। যিহোবা ও সত্যের জন্য তার গভীর সম্মান ছিল। কেউ কেউ মনে করত যে, তিনি আমার প্রতি কঠোর ছিলেন কিন্তু তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তার নির্ভীকতা আমাকে আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
সীমার কাজ আমাকে ক্ষেত্রের পরিচর্যার কিছু অপূর্ব অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছিল। ১৯৫৩ সালে, আমাকে মিস্টার পাওলি নামে একজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলা হয়েছিল, যিনি প্যারিসের দক্ষিণে বাস করতেন এবং প্রহরীদুর্গ পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। আমরা সাক্ষাৎ করেছিলাম এবং আমি জানতে পেরেছিলাম যে, তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন আর তিনি প্রহরীদুর্গ পত্রিকাকে চমৎকার বলে মনে করেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, সম্প্রতি একটা সংখ্যায় খ্রিস্টের স্মরণার্থ সম্বন্ধীয় একটা প্রবন্ধ পড়ার পর, তিনি নিজেই স্মরণার্থ সভা পালন করেন এবং বাকি সন্ধ্যাটুকু গীতসংহিতা পড়ে কাটান। আমাদের আলোচনা প্রায় সারা দুপুর ধরে চলে। আমি চলে আসার আগে, আমরা বাপ্তিস্ম সম্বন্ধেও সংক্ষেপে আলোচনা করেছিলাম। পরে আমি তাকে আমাদের সীমা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য একটা আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলাম, যেটা ১৯৫৪ সালের প্রথমদিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি এসেছিলেন আর সেই সম্মেলনে যে-২৬ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ভাই পাওলি ছিলেন। এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে এখনও আনন্দের এক উৎস।
রোজা: ১৯৪৮ সালের অক্টোবর মাসে, আমি একজন অগ্রগামী হিসেবে পরিচর্যা শুরু করি। বেলজিয়ামের কাছে আ্যনরে পরিচর্যা করার পর, আমাকে আরেকজন অগ্রগামী ইরেনে কোলানস্কির
(এখন লিরওয়ে) সঙ্গে প্যারিসে কার্যভার দেওয়া হয়। আমরা শহরের কেন্দ্রস্থল শাঁজেরমাঁ দ্য প্রের একটা ছোট্ট ঘরে বাস করি। গ্রামের মেয়ে বলে, আমি প্যারিসের অধিবাসীদের ভয় পেতাম। আমি মনে করতাম যে, তারা সকলেই অত্যাধুনিক এবং খুবই বুদ্ধিমান। কিন্তু তাদের কাছে প্রচার করার মাধ্যমে আমি শীঘ্রই জানতে পারি যে, তারা অন্য লোকেদের থেকে আলাদা নয়। প্রায়ই দ্বাররক্ষী আমাদের বের করে দিত আর তাই বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা কঠিন ছিল। তা সত্ত্বেও, কিছু লোক আমাদের বার্তা গ্রহণ করেছিল।১৯৫১ সালে এক সীমা সম্মেলনের সময়, আমাদের অগ্রগামী পরিচর্যা সম্বন্ধে ইরেনে ও আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। কে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তা কি কল্পনা করতে পারছেন? মারিয়াঁ জুমিগা নামে একজন অল্পবয়স্ক সীমা অধ্যক্ষ। আগে একবার আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল কিন্তু সেই সম্মেলনের পর আমরা চিঠিপত্র আদানপ্রদান করতে শুরু করি। মারিয়াঁ ও আমার মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল ছিল, এর অন্তর্ভুক্ত ছিল যে, আমরা একই বছরে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম এবং একই বছরে অগ্রগামী হয়েছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা ছিল যে, আমরা দুজনেই পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় থাকতে চেয়েছিলাম। তাই প্রার্থনাপূর্বক বিষয়টা ভেবে দেখার পর, আমরা ১৯৫৬ সালের ৩১শে জুলাই বিয়ে করি। এই পদক্ষেপের পর, আমার জন্য জীবনের একেবারে নতুন এক পথ শুরু হয়েছিল। আমাকে কেবল একজন স্ত্রী হয়েই থাকা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সীমার কাজে মারিয়াঁকে সঙ্গও দিতে হতো, যার মানে ছিল প্রতি সপ্তাহে আলাদা আলাদা বিছানায় থাকা। প্রথম প্রথম, এটা খুব কঠিন ছিল কিন্তু আমাদের জন্য অনেক আনন্দ সঞ্চিত ছিল।
এক সমৃদ্ধ জীবন
মারিয়াঁ: অনেক বছর ধরে, আমাদের বেশ কিছু সম্মেলন প্রস্তুতির কাজে সাহায্য করার সুযোগ হয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৬৬ সালে বোর্দোতে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনের অনেক প্রিয় স্মৃতি আমার রয়েছে। সেই সময়, পর্তুগালে যিহোবার সাক্ষিদের কাজকর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তাই যে-সাক্ষিরা ফ্রান্সে যেতে পেরেছিল, তাদের উপকারার্থে সম্মেলনের কার্যক্রম পর্তুগিজ ভাষায়ও উপস্থাপিত করা হয়েছিল। পর্তুগাল থেকে আমাদের শত শত খ্রিস্টান ভাইবোন সেখানে এসেছিল কিন্তু সমস্যা ছিল যে, কোথায় তাদের থাকতে দেওয়া হবে।
যেহেতু বোর্দোতে সাক্ষিদের বাড়িতে তাদের যথেষ্ট রুম ছিল না, তাই আমরা ডরমিটরি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য একটা খালি থিয়েটার হল ভাড়া করেছিলাম। আমরা সমস্ত আসন সরিয়ে ফেলেছিলাম আর মঞ্চ থেকে একটা পর্দা ব্যবহার করা হয়েছিল, যা হলটাকে দুটো ডরমিটরিতে পরিণত করেছিল, একটা ভাইদের জন্য আর অন্যটা বোনদের জন্য। এ ছাড়া, আমরা ঝরনা ও হাত ধোয়ার বেসিনও বসিয়েছিলাম, সিমেন্ট করা মেঝেতে খড় বিছিয়েছিলাম আর ত্রিপল দিয়ে সেটাকে মুড়ে দিয়েছিলাম। প্রত্যেকেই এই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট ছিল।সম্মেলন অধিবেশনগুলোর পর, আমরা ডরমিটরিতে ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানকার পরিবেশ অপূর্ব ছিল। বছরের পর বছর ধরে বিরোধিতা সত্ত্বেও, তারা যে-অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করেছিল সেগুলোর দ্বারা আমরা কতই না উৎসাহিত হয়েছিলাম! সম্মেলনের শেষে তারা যখন চলে গিয়েছিল, তখন আমাদের সকলের চোখে জল এসে গিয়েছিল।
দুই বছর আগে ১৯৬৪ সালে, আরেকটা সুযোগ এসেছিল, যখন আমাকে জেলা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করার কথা বলা হয়েছিল। আবারও আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম যে, আমি তা করার যোগ্য কি না। কিন্তু আমি মনে মনে বলেছিলাম যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যদি আমাকে কার্যভারটি গ্রহণ করার কথা বলে থাকে, তা হলে স্পষ্টতই তারা চিন্তা করেছে যে আমি সেটা করার যোগ্য। অন্যান্য ভ্রমণ অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সেবা করা একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা ছিল। আমি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলাম। তাদের অনেকেই ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সত্যিকারের উদাহরণ, যে-গুণগুলো যিহোবার চোখে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমরা যদি ধৈর্য ধরতে শিখি, তা হলে যিহোবা জানেন যে আমাদের কোথায় পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া ১৯৮২ সালে, শাখা অফিস আমাদের প্যারিসের সীমান্তে বুলোন-বিয়াঁকুরে ১২ জন পোলিশ প্রকাশকের একটা ছোট্ট দলকে দেখাশোনা করার কথাও বলেছিল। সেটা অবাক হওয়ার মতো এক বিষয় ছিল। আমি পোলিশ ভাষায় ঈশতান্ত্রিক শব্দগুলো জানতাম কিন্তু বাক্য গঠন করা আমার পক্ষে কঠিন ছিল। কিন্তু, সেই ভাইদের দয়া এবং ইচ্ছুক সহযোগিতা আমাদের অনেক সাহায্য করেছিল। আজকে, সেই মণ্ডলীতে ১৭০ জন প্রকাশক রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ জন অগ্রগামী। পরে, রোজা ও আমি পোলিশ দলগুলো এবং অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক এবং জার্মানির মণ্ডলীগুলোতে পরিদর্শনও করি।
পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিগুলো
বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করা ছিল আমাদের জীবন কিন্তু আমার খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে ২০০১ সালে আমাদেরকে ভ্রমণ পরিচর্যা বন্ধ করতে হয়। আমরা পিটিভিয়ে শহরে একটা আ্যপার্টমেন্ট পাই, যেখানে আমার বোন রূৎ বাস করে। শাখা অফিস সদয়ভাবে আমাদেরকে আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী ঘন্টা দেওয়ার শর্তে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করে।
রোজা: সীমার কাজ বন্ধ করার প্রথম বছরটা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। পরিবর্তনটা এত দ্রুত হয়েছিল যে, আমি অকর্মণ্য বোধ করেছিলাম। তারপর আমি নিজেকে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে, ‘একজন অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার দ্বারা তুমি এখনও তোমার সময় ও প্রাপ্ত শক্তিকে কার্যকারীভাবে ব্যবহার করতে পারো।’ আজকে, আমি আমার মণ্ডলীর অন্যান্য অগ্রগামীদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দিত।
যিহোবা সবসময়ই আমাদের যত্ন নিয়েছেন
মারিয়াঁ: আমি যিহোবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ যে, রোজা ৪৮ বছর ধরে আমার সঙ্গী হিসেবে থেকেছে। ভ্রমণ কাজের সমস্ত বছর ধরে, সে আমার প্রতি এক বিরাট সমর্থন হয়ে এসেছে। আমি তাকে একবারও বলতে শুনিনি যে, ‘আমরা যদি ভ্রমণের কাজ বন্ধ করতে পারতাম আর আমাদের যদি একটা নিজস্ব বাড়ি থাকত।’
রোজা: কখনও কখনও কেউ আমাকে বলতেন, “আপনারা যেভাবে জীবনযাপন করেন, সেটা স্বাভাবিক জীবন নয়। আপনারা সবসময়ই অন্যদের সঙ্গে থাকেন।” কিন্তু এক “স্বাভাবিক জীবন” আসলে কী? প্রায়ই আমরা এমন অনেক বিষয় দ্বারা ঘিরে থাকি, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক কাজগুলো অনুধাবন করার ক্ষেত্রে হয়তো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সত্যিই আমাদের যা প্রয়োজন তা হল, একটা ভাল বিছানা, একটা টেবিল এবং কিছু অন্যান্য মৌলিক বিষয়। অগ্রগামী হিসেবে, বস্তুগতভাবে গীতসংহিতা ৩৪:১০ পদের কথাগুলো উদ্ধৃত করতাম: “যাহারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে, তাহাদের কোন মঙ্গলের অভাব হয় না।” যিহোবা সবসময়ই আমাদের যত্ন নিয়েছেন।
আমাদের সামান্যই ছিল কিন্তু যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের যা যা প্রয়োজন, তার সমস্তই আমাদের ছিল। কখনও কখনও আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনারা যখন বৃদ্ধ হবেন এবং আপনাদের নিজস্ব বাড়ি ও পেনশন থাকবে না, তখন আপনারা কী করবেন?” তখন আমিমারিয়াঁ: সত্যিই তাই! বস্তুত, আমাদের যা প্রয়োজন যিহোবা তার চাইতে আমাদের বেশি দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ ১৯৫৮ সালে, নিউ ইয়র্কে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমাদের সীমার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, রোজার জন্য টিকিট কেনার টাকা আমাদের ছিল না। একদিন সন্ধ্যায় একজন ভাই আমাদের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দেন, যার ওপর লেখা ছিল “নিউ ইয়র্ক।” ভিতরে যে-উপহার ছিল, তা রোজাকে আমার সঙ্গে যেতে সমর্থ করেছিল!
যিহোবার সেবায় আমাদের বছরগুলো সম্বন্ধে রোজার ও আমার একটুও অনুশোচনা নেই। আমরা কিছুই হারাইনি বরং সবকিছুই পেয়েছি—পূর্ণসময়ের সেবায় এক পরিতৃপ্তিদায়ক ও আনন্দের জীবন। যিহোবা এমনই একজন অপূর্ব ঈশ্বর। আমরা তাঁর ওপর পুরোপুরি নির্ভরতা রাখতে শিখেছি আর তাঁর প্রতি আমাদের ভালবাসা আরও গভীর হয়েছে। আমাদের কিছু খ্রিস্টান ভাই তাদের বিশ্বস্ততার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু, আমি বিশ্বাস করি যে, বছরের পর বছর ধরে একজন ব্যক্তিও একটু একটু করে তার জীবন উৎসর্গ করতে পারে। রোজা ও আমি এখনও পর্যন্ত তা করার জন্য কঠোরভাবে চেষ্টা করছি আর ভবিষ্যতেও সেটা করতে আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
[পাদটীকা]
^ লুই পিয়তার জীবন কাহিনী ১৯৮০ সালের ১৫ই আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় “আমি ‘মৃত্যুযাত্রা’ থেকে রক্ষা পেয়েছি” নামক প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছিল।
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রায় ১৯৩০ সালে, ফ্রেঁসোয়াঁ ও আন্না জুমিগা এবং তাদের সন্তানরা, স্তেফনিয়ে, স্তেফাঁয়ে, মেলানিয়ে আর মারিয়াঁ। মারিয়াঁ চৌকির ওপর দাঁড়িয়ে আছে
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
ওপরে: ১৯৫০ সালে, উত্তর ফ্রান্সের আরমেনটিয়ার্স বাজারের একটা দোকানে বাইবেলের প্রকাশনাদি উপস্থাপন করছি
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাঁদিকে: ১৯৫০ সালে, মারিয়াঁর সঙ্গে স্টিফান বেহুনিক
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
মারিয়াঁ ও রোজা তাদের বিয়ের আগের দিন
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
রোজা (একেবারে বাঁদিকে) তার অগ্রগামী সঙ্গী ইরেনের সঙ্গে (বাঁদিক থেকে ৪র্থ) ১৯৫১ সালে, একটা সম্মেলন সম্বন্ধে প্রচার করছেন
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
সীমা পরিদর্শনের সময় পরিবহণ ছিল মূলত সাইকেল