সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘তোমরা প্রভুতে বলবান্‌ হও’

‘তোমরা প্রভুতে বলবান্‌ হও’

‘তোমরা প্রভুতে বলবান্‌ হও’

“তোমরা প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্‌ হও।”ইফিষীয় ৬:১০.

১. (ক) প্রায় ৩,০০০ বছর আগে কোন অসাধারণ যুদ্ধ হয়েছিল? (খ) কেন দায়ূদ জয়ী হয়েছিলেন?

 প্রায় তিন হাজার বছর আগে, যুদ্ধক্ষেত্রে দুটো বিরোধী দলের মাঝখানে দুজন যোদ্ধা মুখোমুখি হয়েছিল। অল্পবয়স্ক যোদ্ধাটি ছিলেন দায়ূদ নামে একজন মেষপালক বালক। আর তার সামনে ছিল গলিয়াৎ নামে অস্বাভাবিক শক্তিমান এবং উচ্চতাসম্পন্ন এক ব্যক্তি। তার বর্মের ওজন ছিল প্রায় ৫৭ কিলোগ্রাম এবং তার সঙ্গে ছিল প্রকাণ্ড এক বড়শা ও বিরাট এক খড়্গ। দায়ূদ কোনো যুদ্ধসজ্জাই পরিধান করেননি আর তার একমাত্র অস্ত্র ছিল একটা ফিঙে বা গুলতি। পলেষ্টীয় দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎ এই বিষয়টাতে অপমানবোধ করেছিলেন যে, তার ইস্রায়েলী প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে সামান্য এক বালক। (১ শমূয়েল ১৭:৪২-৪৪) উভয় পক্ষের দর্শকরা মনে হয় পরিণতি সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু, বীর সবসময় যুদ্ধে জয়ী হয় না। (উপদেশক ৯:১১) দায়ূদ জয়ী হয়েছিলেন কারণ তিনি যিহোবার শক্তিতে লড়াই করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর।” বাইবেলের বিবরণ বলে যে, “দায়ূদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়া ঐ পলেষ্টীয়কে পরাজয় করিলেন।”—১ শমূয়েল ১৭:৪৭, ৫০.

২. খ্রিস্টানরা কোন ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে?

খ্রিস্টানরা আক্ষরিক যুদ্ধে লিপ্ত হয় না। যদিও তারা সকল মানুষের সঙ্গে শান্তিতে থাকে কিন্তু তারা অত্যন্ত শক্তিশালী বিরোধীদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক যুদ্ধে লড়াই করে। (রোমীয় ১২:১৮) ইফিষীয়দের প্রতি লেখা চিঠির শেষ অধ্যায়ে পৌল এক ধরনের লড়াইয়ের বিষয়ে বর্ণনা করেন, যেটাতে প্রত্যেক খ্রিস্টান জড়িত রয়েছে। তিনি লিখেছিলেন: “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।”—ইফিষীয় ৬:১২.

৩. ইফিষীয় ৬:১০ পদ অনুসারে, আমাদের সাফল্যকে নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন?

সেই ‘দুষ্টতার আত্মাগণ’ হল শয়তান এবং মন্দ দূতেরা, যারা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শেষ করে দিতে চায়। যেহেতু তারা আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী, তাই আমাদের অবস্থাও দায়ূদের মতো আর শক্তির জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর না করলে আমরাও সফল হতে পারব না। বস্তুত, পৌল আমাদের ‘প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্‌ হইবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দেন। (ইফিষীয় ৬:১০) ওই পরামর্শ দেওয়ার পর, প্রেরিত সেই আধ্যাত্মিক সাহায্য এবং খ্রিস্টীয় গুণাবলির বিষয়ে বর্ণনা করেন, যা আমাদের জয়ী হতে সমর্থ করে।—ইফিষীয় ৬:১১-১৭.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কোন দুটো মূল বিষয় বিবেচনা করব?

আসুন এখন আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি যে, আমাদের শত্রুর শক্তি এবং কলাকৌশলগুলো সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে। এরপর আমরা প্রতিরক্ষামূলক কৌশল সম্বন্ধে বিবেচনা করব, যা নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমরা যদি যিহোবার নির্দেশনা মেনে চলি, তা হলে আমরা আস্থা রাখতে পারি যে আমাদের শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে জয়ী হবে না।

দুষ্ট আত্মাদের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ

৫. কীভাবে ইফিষীয় ৬:১২ পদের “মল্লযুদ্ধ” শব্দটির ব্যবহার শয়তানের কৌশলগুলো সম্বন্ধে আমাদের বুঝতে সমর্থ করে?

পৌল ব্যাখ্যা করেন যে, “স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” অবশ্যই, প্রধান দুষ্ট আত্মা হল শয়তান দিয়াবল, যে মন্দ আত্মা বা “ভূতগণের অধিপতি।” (মথি ১২:২৪-২৬) বাইবেল আমাদের লড়াইকে “মল্লযুদ্ধ” অথবা হাতাহাতি লড়াই হিসেবে চিত্রিত করে। প্রাচীন গ্রিসের মল্লযুদ্ধ প্রতিযোগিতায়, প্রত্যেক প্রতিযোগী তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করার জন্য ভারসাম্যহীন করার চেষ্টা করত। একইভাবে, দিয়াবল চায় যাতে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। আমাদের প্রতি কীভাবে সে তা করতে পারে?

৬. শাস্ত্র থেকে দেখান যে, দিয়াবল কীভাবে আমাদের বিশ্বাসকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহার করতে পারে।

দিয়াবল হয়তো সাপ, গর্জনকারী সিংহ অথবা এমনকি দীপ্তিময় দূতের মতো কাজ করতে পারে। (২ করিন্থীয় ১১:৩, ১৪; ১ পিতর ৫:৮) আমাদের তাড়না অথবা নিরুৎসাহিত করার জন্য সে মনুষ্য প্রতিনিধিদের ব্যবহার করতে পারে। (প্রকাশিত বাক্য ২:১০) যেহেতু সমস্ত জগৎ শয়তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাই আমাদের ফাঁদে ফেলার জন্য সে এই জগতের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রলোভনগুলোকে কাজে লাগাতে পারে। (২ তীমথিয় ২:২৬; ১ যোহন ২:১৬; ৫:১৯) আমাদের ভ্রান্ত করার জন্য সে জাগতিক বা ধর্মভ্রষ্ট চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে, ঠিক যেভাবে সে হবাকে প্রবঞ্চনা করেছিল।—১ তীমথিয় ২:১৪.

৭. মন্দ আত্মাদের কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং আমরা কোন সুবিধাগুলো উপভোগ করি?

যদিও শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের অস্ত্রশস্ত্র এবং ক্ষমতা অনেক প্রভাবসম্পন্ন বলে মনে হয় কিন্তু তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই দুষ্ট আত্মারা সেই মন্দ বিষয়গুলো করার জন্য আমাদের জোর করতে পারে না, যা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে অখুশি করে। আমাদের নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীনতা রয়েছে এবং আমাদের চিন্তাভাবনা ও কাজের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এ ছাড়া, আমরা একা লড়াই করছি না। ইলীশায়ের সময়ে যেমন সত্য ছিল, তেমনই আমাদের দিনেও এই কথা সত্য: “উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক।” (২ রাজাবলি ৬:১৬) বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় যে আমরা যদি ঈশ্বরের বশীভূত হই এবং দিয়াবলের প্রতিরোধ করি, তা হলে সে আমাদের কাছ থেকে পলায়ন করবে।—যাকোব ৪:৭.

শয়তানের পরিকল্পনা সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন

৮, ৯. ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলার জন্য শয়তান কোন পরীক্ষাগুলো নিয়ে এসেছিল এবং আজকে আমরা কোন আধ্যাত্মিক বিপদগুলোর মুখোমুখি হই?

আমরা শয়তানের পরিকল্পনাগুলো সম্বন্ধে অজ্ঞাত নই কারণ শাস্ত্র তার মূল কলাকৌশলগুলোকে প্রকাশ করে। (২ করিন্থীয় ২:১১) ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োবের বিরুদ্ধে, দিয়াবল চরম আর্থিক সমস্যা, প্রিয়জনদের মৃত্যু, পারিবারিক বিরোধিতা, শারীরিক কষ্ট এবং মিথ্যা বন্ধুদের দিয়ে ভিত্তিহীন সমালোচনা ব্যবহার করেছিল। ইয়োব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন। (ইয়োব ১০:১, ২) যদিও শয়তান আজকে সরাসরি এই সমস্যাগুলো নিয়ে আসে না কিন্তু এই ধরনের কষ্ট অনেক খ্রিস্টানদের প্রভাবিত করে এবং দিয়াবল নিজের সুবিধার জন্য এগুলো ব্যবহার করতে পারে।

এই শেষ সময়ে আধ্যাত্মিক বিপদগুলো প্রচণ্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে বস্তুগত বিষয়ের পিছনে ছোটার ভিড়ে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো চাপা পড়ে যায়। প্রচারমাধ্যম অনবরত অবৈধ যৌনসম্পর্ককে মনোদুঃখ হিসেবে তুলে ধরার পরিবর্তে সুখের উৎস হিসেবে তুলে ধরে। আর বেশির ভাগ লোক “ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়” হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এইরকম চিন্তাভাবনা আমাদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্যের পক্ষে হুমকিস্বরূপ হতে পারে, যদি না আমরা “বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ” করি।—যিহূদা ৩.

১০-১২. (ক) একটা সাবধানবাণী কী, যা যিশু তাঁর বীজবাপকের দৃষ্টান্তে দিয়েছিলেন? (খ) আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো কীভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১০ শয়তানের সবচেয়ে সফল কলাকৌশলের মধ্যে একটা হল, এই জগৎ এবং এর বস্তুবাদিতাপূর্ণ লক্ষ্যগুলোতে পুরোপুরিভাবে আমাদেরকে জড়িত করা। যিশু তাঁর বীজবাপকের দৃষ্টান্তে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে “সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া [রাজ্যের] সেই বাক্য চাপিয়া রাখে।” (মথি ১৩:১৮, ২২) এখানে “চাপিয়া রাখে” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দের অর্থ “পুরোপুরিভাবে শ্বাসরুদ্ধ করা।”

১১ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমিতে একজন ব্যক্তি হয়তো লতানো ডুমুর গাছ দেখতে পারেন। এটা পোষক গাছের গুঁড়িকে পরিবেষ্টন করে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। ক্রমশ সেই লতা এর পোষক গাছকে মূল দিয়ে জড়িয়ে ফেলে, যা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে। সেই লতানো ডুমুরের অসংখ্য শিকড় অবশেষে গাছের গোড়ার মাটি থেকে বেশির ভাগ পুষ্টি শুষে নেয় আর এর শাখাপ্রশাখা এর পোষককে আলো থেকে বঞ্চিত করে। শেষ পর্যন্ত পোষক গাছটা মারা যায়।

১২ একইভাবে এই বিধিব্যবস্থার উদ্বিগ্নতা এবং ধনসম্পদ ও আরামআয়েশের এক জীবনযাপনের সন্ধান করা ক্রমশ আরও বেশি করে আমাদের সময় এবং শক্তিকে শুষে নেয়। জগতের বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করায় আমরা হয়তো সহজেই ব্যক্তিগত অধ্যয়নকে অবহেলা করতে এবং অভ্যাসগতভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলো বাদ দিতে পারি আর এভাবে আধ্যাত্মিক পুষ্টি থেকে পৃথক হয়ে পড়তে পারি। আধ্যাত্মিক কাজগুলোর জায়গায় তখন বস্তুবাদিতাপূর্ণ লক্ষ্যগুলো স্থান পাবে এবং অবশেষে আমরা শয়তানের সহজ শিকারে পরিণত হব।

আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হবে

১৩, ১৪. শয়তানের বিরোধিতার মুখোমুখি হলে, আমাদের কোন অবস্থান নিতে হবে?

১৩ সহবিশ্বাসীদেরকে পৌল ‘দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া’ থাকার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৬:১১) অবশ্য, আমরা দিয়াবল এবং তার মন্দ দূতেদের পুরোপুরিভাবে পরাজিত করতে পারি না। ঈশ্বর সেই কার্যভার যিশু খ্রিস্টকে দিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১, ২) কিন্তু, শয়তানকে দূর না করা পর্যন্ত আমাদের “দাঁড়াইয়া” থাকতে হবে, যাতে তার আক্রমণ আমাদের বিপর্যস্ত না করে।

১৪ প্রেরিত পিতরও শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক,” পিতর লিখেছিলেন। “তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে। তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া তাহার প্রতিরোধ কর; তোমরা জান, জগতে অবস্থিত তোমাদের ভ্রাতৃবর্গেও সেই প্রকার নানা দুঃখভোগ সম্পন্ন হইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮, ৯) আসলে, গর্জনকারী সিংহের মতো দিয়াবল যখন আমাদের আক্রমণ করে, তখন দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৫, ১৬. সহবিশ্বাসীদের সহযোগিতা কীভাবে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করতে পারে, তা দেখানোর জন্য একটা শাস্ত্রীয় উদাহরণ দিন।

১৫ আফ্রিকার সাভানার কাছেই যখন একটা সিংহ গর্জন করে, তখন কৃষ্ণসার হরিণগুলো দ্রুতবেগে দৌড়াতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিপদজনক এলাকা পার হয়ে যায়। কিন্তু, হাতিগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার এক উদাহরণ তুলে ধরে। হাতি—আফ্রিকা এবং এশিয়ার শান্তস্বভাববিশিষ্ট দৈত্য (ইংরেজি) বইটি ব্যাখ্যা করে: “হাতির আদর্শ পাল সাধারণত আত্মরক্ষার যে-উপায় ব্যবহার করে, সেটা হল তাদের দেহের মাধ্যমে বৃত্ত তৈরি করা, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক হাতিরা বাইরের দিকে মুখ করে হুমকির মোকাবিলা করে এবং অল্পবয়স্ক হাতিরা বৃত্তের ভিতরে সুরক্ষিত থাকে।” শক্তি এবং সহযোগিতার এইরকম প্রকাশ দেখে সিংহরা এমনকি অল্পবয়স্ক হাতিদেরও খুব কমই আক্রমণ করে।

১৬ শয়তান এবং তার মন্দ দূতেদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হলে আমাদেরও একইভাবে সেই ভাইবোনদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে থাকতে হবে, যারা বিশ্বাসে দৃঢ়। পৌল স্বীকার করেছিলেন যে, কিছু সহখ্রিস্টান রোমে তার বন্দিত্বের সময় “সান্ত্বনাজনক [“শক্তিবর্ধক,” NW]” বলে প্রমাণিত হয়েছিল। (কলসীয় ৪:১০, ১১) “শক্তিবর্ধক” হিসেবে অনূদিত গ্রিক শব্দটি খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে মাত্র একবার এসেছে। ভাইনের এক্সপোজিটরি ডিকশনারি অফ নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস অনুসারে, “শব্দটির এক মৌখিক অভিব্যক্তি সেই ওষুধগুলোকে নির্দেশ করে, যেগুলো যন্ত্রণাকে লাঘব করে।” উপশমকারী মলমের মতো, যিহোবার পরিপক্ব উপাসকদের সহযোগিতা আবেগগত বা দৈহিক দুঃখকষ্টের যন্ত্রণা লাঘব করতে পারে।

১৭. ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৭ আজকেও সহখ্রিস্টানদের কাছ থেকে উৎসাহ, ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে। বিশেষভাবে খ্রিস্টান প্রাচীনরা আধ্যাত্মিক সাহায্য জোগাতে উৎসুক। (যাকোব ৫:১৩-১৫) বিশ্বস্ততার সহায়কের অন্তর্ভুক্ত হল, নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন এবং খ্রিস্টীয় সভা ও সম্মেলনগুলোতে উপস্থিত থাকা। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের নিজেদের নিকট সম্পর্ক তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করে। বস্তুত, আমরা ভোজন, পান অথবা অন্য যা কিছুই করি না কেন, আমাদের সমস্তকিছু ঈশ্বরের গৌরবার্থে করা উচিত। (১ করিন্থীয় ১০:৩১) স্বাভাবিকভাবেই, যিহোবাকে খুশি করে এমন এক পথে ক্রমাগত চলার জন্য তাঁর ওপর প্রার্থনাপূর্ণ নির্ভরতা আবশ্যক।—গীতসংহিতা ৩৭:৫.

১৮. এমনকি দুর্দশামূলক পরিস্থিতিগুলো আমাদের শক্তিকে নিঃশেষ করে দিলেও, কেন আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়?

১৮ কখনও কখনও আমরা যখন আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ়বোধ না করি, তখন শয়তানের আক্রমণ আসে। একটা সিংহ দুর্বল পশুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা অথবা অসুস্থতা আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। কিন্তু, আসুন আমরা ঈশ্বরের প্রীতিজনক বিষয়গুলো করা বাদ না দিই কারণ পৌল বলেছিলেন: “যখন আমি দুর্ব্বল, তখনই বলবান্‌।” (২ করিন্থীয় ১২:১০; গালাতীয় ৬:৯; ২ থিষলনীকীয় ৩:১৩) এর দ্বারা তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের শক্তি আমাদের মনুষ্য দুর্বলতার সময় ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজ করতে পারে, যদি আমরা শক্তির জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করি। দায়ূদের গলিয়াৎকে পরাজিত করা দেখায় যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের শক্তিশালী করতে পারেন এবং করেন। যিহোবার বর্তমান দিনের সাক্ষিরা সাক্ষ্য দিতে পারে যে, চরম সংকটের সময়গুলোতে তারা যিহোবার শক্তিশালী ক্ষমতা অনুভব করেছে।—দানিয়েল ১০:১৯.

১৯. যিহোবা যেভাবে তাঁর দাসদের শক্তিশালী করতে পারেন, তা দেখানোর জন্য একটা উদাহরণ দিন।

১৯ ঈশ্বর তাদের যে-সহযোগিতা করেছিলেন, সেই বিষয়ে এক বিবাহিত দম্পতি লিখেছিলেন: “বছরের পর বছর ধরে আমরা স্বামী-স্ত্রী যিহোবাকে সেবা করেছি এবং অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছি ও অনেক চমৎকার লোককে জানতে পেরেছি। এ ছাড়া, দুঃখকষ্ট সফলভাবে সহ্য করার জন্যও আমরা যিহোবার দ্বারা প্রশিক্ষিত ও শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছি। ইয়োবের মতো আমরাও সবসময় বুঝতে পারিনি যে, কেন বিষয়গুলো এভাবে ঘটেছে কিন্তু আমরা জানতাম যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য সবসময় তৈরি ছিলেন।”

২০. কোন শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেখায় যে, যিহোবা সবসময় তাঁর লোকেদের সহযোগিতা করেন?

২০ যিহোবার হাত এত খাটো নয় যে, তিনি তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের সহযোগিতা এবং শক্তিশালী করতে পারবেন না। (যিশাইয় ৫৯:১) গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু পতনোন্মুখ সকলকে ধরিয়া রাখেন, অবনত সকলকে উত্থাপন করেন।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৪) বস্তুত, আমাদের স্বর্গীয় পিতা “দিন দিন আমাদের ভার বহন করেন” এবং আসলেই আমাদের যা প্রয়োজন, তা জোগান।—গীতসংহিতা ৬৮:১৯.

আমাদের “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” প্রয়োজন

২১. কীভাবে পৌল আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন?

২১ আমরা শয়তানের কিছু কলাকৌশল বিবেচনা করেছি এবং তার আক্রমণের মুখেও দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে দেখেছি। এখন আমাদের বিশ্বাসের সফল প্রতিরক্ষার জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিবেচনা করতে হবে। ইফিষীয়দের প্রতি তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল দুবার শয়তানের চাতুরীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকার এবং দুষ্ট আত্মাগণের সঙ্গে আমাদের মল্লযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার . . . তোমরা ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা গ্রহণ কর, যেন সেই কুদিনে প্রতিরোধ করিতে এবং সকলই সম্পন্ন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে পার।”—ইফিষীয় ৬:১১, ১৩.

২২, ২৩. (ক) আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার অন্তর্ভুক্ত কী? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

২২ হ্যাঁ, আমাদের “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” পরিধান করা প্রয়োজন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের) পৌল যখন ইফিষীয়দের প্রতি তার চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি একজন রোমীয় সৈন্যের দ্বারা প্রহরারত ছিলেন, যে কখনও কখনও সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান করত। কিন্তু, ঐশিক অনুপ্রেরণার মাধ্যমেই প্রেরিত আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার বিষয়ে আলোচনা করতে পরিচালিত হয়েছিলেন, যা যিহোবার প্রত্যেক দাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২৩ ঈশ্বরদত্ত এই যুদ্ধসজ্জার অন্তর্ভুক্ত হল, সেই গুণাবলি যা একজন খ্রিস্টানের থাকতে হবে ও সেইসঙ্গে যিহোবার দ্বারা জোগানো আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো। পরের প্রবন্ধে আমরা আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার প্রতিটা অংশ নিয়ে পরীক্ষা করব। এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধের জন্য আমরা কতটা সজ্জিত। একইসঙ্গে আমরা দেখব যে, কীভাবে যিশু খ্রিস্টের অপূর্ব উদাহরণ শয়তান দিয়াবলকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের সফল হতে সাহায্য করে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সমস্ত খ্রিস্টান কোন যুদ্ধে রত?

• শয়তানের কিছু কলাকৌশল সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।

• সহবিশ্বাসীদের সহযোগিতা কীভাবে আমাদের শক্তিশালী করতে পারে?

• আমাদের কার শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে এবং কেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টানদের ‘দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত মল্লযুদ্ধ হইতেছে’

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

এই বিধিব্যবস্থার উদ্বিগ্নতাগুলো রাজ্যের বাক্যকে চেপে রাখতে পারে

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

সহখ্রিস্টানরা “শক্তিবর্ধক” হতে পারে

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি শক্তির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন?