সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অনুগত এবং সুস্থির—তখন এবং এখন

অনুগত এবং সুস্থির—তখন এবং এখন

অনুগত এবং সুস্থিরতখন এবং এখন

পোল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের সীমান্তের কাছে একটা ছোট্ট শহর রয়েছে, যেটার নাম ভিসোয়া। যদিও আপনি হয়তো কখনও ভিসোয়ার কথা শোনেননি, তবুও এর এক ইতিহাস রয়েছে যা সত্য খ্রিস্টানদের কাছে খুব সম্ভবত আকর্ষণীয় বলে মনে হবে। এটা এমন এক ইতিহাস, যা নীতিনিষ্ঠা ও যিহোবার উপাসনার পক্ষে উদ্যোগের দ্বারা চিহ্নিত। কীভাবে?

 ভিসোয়া এক চমৎকার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে প্রকৃতি এর সৌন্দর্যকে ঢেলে দিয়েছে। দ্রুতবেগে প্রবাহিত ছোট ছোট নদী এবং দুটো জলপ্রবাহ ভিশ্চুলা নদীর সঙ্গে মিশে গিয়েছে, যেটা পার্বত্য বনাঞ্চলে এবং উপত্যকার মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। বন্ধুত্বপরায়ণ স্থানীয় অধিবাসী এবং অদ্বিতীয় স্থানীয় আবহাওয়া ভিসোয়াকে এক সুপরিচিত চিকিৎসাকেন্দ্র, গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর জায়গা এবং এক শীতকাল যাপনের কেন্দ্র করে তুলেছে।

এই নাম দিয়ে এখানে ১৫৯০ এর দশকে প্রথম উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে হয়। একটা করাত-কল স্থাপন করা হয়েছিল এবং শীঘ্রই পার্বত্যাঞ্চলের বনের ভিতর ফাঁকা জায়গায় লোকবসতি শুরু হয়েছিল, যারা মেষ ও গবাদি পশু পালন এবং চাষাবাদ করেছিল। কিন্তু এই নম্র লোকেরা ধর্মীয় পরিবর্তনের কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। এই অঞ্চল মার্টিন লুথারের গৃহীত ধর্মীয় সংস্কারের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল আর গবেষক আ্যনজা অটচেকের বক্তব্য অনুসারে, লুথারবাদ “১৫৪৫ সালে রাষ্ট্রীয় ধর্মে” পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধ এবং ক্যাথলিক সংস্কার নাটকীয়ভাবে পরবর্তী পরিস্থিতিকে বদলে দিয়েছিল। “১৬৫৪ সালে প্রটেস্টান্টদের কাছ থেকে সমস্ত গির্জা ভবন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের উপাসনা পদ্ধতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল এবং বাইবেল ও ধর্মীয় বইপুস্তক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল,” অটচেক বলে চলেন। তবুও, অধিকাংশ স্থানীয় জনসাধারণ মার্টিন লুথারের অনুসারী থেকে গিয়েছিল।

বাইবেলের সত্যের প্রথম বীজ

আনন্দের বিষয় হল যে, আরও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সংস্কার অপেক্ষা করছিল। ১৯২৮ সালে দুই জন উদ্যোগী বাইবেল ছাত্র—যিহোবার সাক্ষিদের তখন এই নামেই ডাকা হতো—প্রথমবারের মতো বাইবেলের সত্যের বীজ বপন করে। পরের বছর ইয়ান গমলা একটা ফোনোগ্রাফ নিয়ে ভিসোয়াতে আসেন, যেটা দ্বারা তিনি রেকর্ড করা শাস্ত্রীয় বক্তৃতাগুলো বাজাতেন। এরপর তিনি স্থান পরিবর্তন করে কাছাকাছি উপত্যকায় চলে যান, যেখানে তিনি এক মনোযোগী শ্রোতাকে খুঁজে পান—আ্যনজা র্‌যাশকা, আগ্রহী হৃদয়ের একজন ছোটোখাটো, গাট্টাগোট্টা পাহাড়ি ব্যক্তি। ফোনোগ্রাফের বক্তৃতাগুলোতে যা বলা হয়েছিল, তা যাচাই করার জন্য র্‌যাশকা সেই সময়েই তার বাইবেল বের করেছিলেন। এরপর তিনি বিস্ময়ে বলে উঠেছিলেন: “ভাই আমার, আমি অবশেষে সত্য খুঁজে পেয়েছি! প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলাম, সেই সময় থেকেই আমি এই উত্তরগুলো খুঁজে চলেছি!”

র্‌যাশকা অত্যন্ত উদ্যমী হয়ে গমলাকে তার বন্ধু ইয়েঝা এবং আ্যনজা পিল্খের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, যারা রাজ্যের বার্তার প্রতি আগ্রহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছিল। আ্যনজা তিরনা, যিনি ফ্রান্সে বাইবেলের সত্য শিখেছিলেন, তিনি ঈশ্বরের বার্তা সম্বন্ধে এই লোকেদের জ্ঞানকে গভীরতর করার জন্য তাদের সাহায্য করেছিলেন। শীঘ্রই তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভিসোয়ার বাইবেল ছাত্রদের এই ছোট্ট দলকে সাহায্য করার জন্য আশেপাশের শহরগুলো থেকে ভাইয়েরা সেখানে পরিদর্শন করেছিল। ফলাফল হয়েছিল বিস্ময়কর।

উল্লেখযোগ্য হারে নতুন আগ্রহী ব্যক্তিদের আগমন ঘটেছিল। স্থানীয় লুথারিয়ান পরিবারগুলো নিজেদের ঘরে বাইবেল পড়ত। তাই তারা যখন নরকাগ্নির মতবাদ ও ত্রিত্ব সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদক শাস্ত্রীয় যুক্তিগুলো দেখেছিল, তখন অনেকেই মিথ্যা থেকে সত্যের পার্থক্য করতে পেরেছিল। অনেক পরিবার মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল। ফলে, ভিসোয়াতে মণ্ডলী বৃদ্ধি পেয়েছিল আর ১৯৩৯ সালের মধ্যে এর সদস্য সংখ্যা হয়েছিল প্রায় ১৪০ জন। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো বিষয় হল যে, মণ্ডলীর অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য বাপ্তাইজিত ছিল না। “তার মানে এই ছিল না যে, এই অবাপ্তাইজিত প্রকাশকরা যিহোবার পক্ষ অবলম্বন করতে সক্ষম ছিল না,” হেলেনা বলেন, যিনি সেই প্রথমদিকের সাক্ষিদের মধ্যে একজন। তিনি আরও বলেন: “তারা শীঘ্রই বিশ্বাসের যে-পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল, তাতে তাদের নীতিনিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছিল।”

ছেলেমেয়েদের বিষয়ে কী বলা যায়? তারা দেখেছিল যে, তাদের বাবামায়েরা সত্য খুঁজে পেয়েছে। ফ্র্যানচিশেক ব্র্যান্টজ্‌ বলেন: “আমার বাবা যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি সত্য খুঁজে পেয়েছেন, তখন তিনি আমার ও আমার দাদার মনে তা গেঁথে দিতে শুরু করেছিলেন। আমাদের বয়স ছিল যথাক্রমে আট ও দশ বছর। বাবা আমাদের সহজ সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন, যেমন: ‘ঈশ্বর কে এবং তাঁর নাম কী? যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে তুমি কী জান?’ উত্তরগুলো আমাদের লিখতে হতো এবং বাইবেলের পদগুলো দিয়ে তা সমর্থন করতে হতো।” আরেকজন সাক্ষি বলেন: “যেহেতু আমার বাবামা স্বেচ্ছায় রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিল এবং ১৯৪০ সালে লুথারিয়ান গির্জা ত্যাগ করেছিল, তাই স্কুলে আমাকে বিরোধিতা ও মারধর সহ্য করতে হয়েছিল। আমার মধ্যে বাইবেলের নীতিগুলো গেঁথে দেওয়ার জন্য আমি আমার বাবামার প্রতি কৃতজ্ঞ। ওই কঠিন সময়গুলোতে টিকে থাকতে সাহায্য করায় সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

পরীক্ষার সময়ে বিশ্বাস

যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং নাৎসিরা এলাকা দখল করে নেয়, তখন তারা যিহোবার সাক্ষিদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল। প্রথমে প্রাপ্তবয়স্কদের—বিশেষ করে বাবাদের—জার্মান নাগরিকত্বের তালিকায় স্বাক্ষর করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল, যাতে তারা কিছু নির্দিষ্ট সুযোগসুবিধা পেতে পারে। সাক্ষিরা নাৎসিদের সঙ্গে একমত হতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সামরিকবাহিনীতে যোগ দেওয়ার বয়স হয়েছিল এমন অনেক ভাই এবং আগ্রহী ব্যক্তিরা এক উভয় সংকটে পড়েছিল: হয় তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে, নতুবা কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে, তবে এর জন্য চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে। “সামরিকবাহিনীতে কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করার মানে ছিল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে, সাধারণত আউশভিটস্‌ ক্যাম্পে প্রেরিত হওয়া,” আ্যনজা শালবোট ব্যাখ্যা করেন, যাকে গেসটাপো (জার্মানির গোয়েন্দা পুলিশ) ১৯৪৩ সালে গ্রেফতার করেছিল। “আমি তখনও বাপ্তিস্ম নিইনি কিন্তু আমি মথি ১০:২৮, ২৯ পদে যিশুর দেওয়া দৃঢ় আশ্বাস সম্বন্ধে জানতাম। আমি জানতাম যে, যিহোবাতে বিশ্বাসের জন্য যদি আমি মারাও যাই, তিনি আমাকে আবার জীবিত করতে পারবেন।”

নাৎসিরা ১৯৪২ সালের প্রথমদিকে ভিসোয়া থেকে ১৭ জন ভাইকে গ্রেফতার করেছিল। তিন মাসের মধ্যে তাদের মধ্যে ১৫ জন আউশভিটসে মারা যায়। এটা ভিসোয়ার অবশিষ্ট সাক্ষিদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল? এটা তাদের বিশ্বাস পরিত্যাগের কারণ হওয়ার পরিবর্তে বরং তা আপোশহীনভাবে যিহোবার প্রতি আসক্ত থাকতে উৎসাহিত করেছিল! পরের ছয় মাসের মধ্যে ভিসোয়াতে প্রকাশকদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছিল। শীঘ্রই আরও অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৮৩ জন ভাই, আগ্রহী ব্যক্তি এবং ছেলেমেয়েরা হিটলারের ধ্বংসাত্মক বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। এদের মধ্যে ৫৩ জনকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে (প্রধানত আউশভিটসে) অথবা পোল্যান্ড, জার্মানি এবং বহেমিয়ার খনি ও পাথর আহরণ স্থানগুলোর বিভিন্ন শ্রমশিবিরে জোর করে পাঠানো হয়েছিল।

অনুগত এবং সুস্থির

আউশভিটসে নাৎসিরা দ্রুত স্বাধীন হওয়ার প্রত্যাশা দিয়ে সাক্ষিদের প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল। একজন এসএস প্রহরী এক ভাইকে বলেছিলেন: “তুমি যে একজন বাইবেল ছাত্র এটা অস্বীকার করে যদি তুমি একটা কাগজে কেবল স্বাক্ষর করো, তা হলে আমরা তোমাকে মুক্ত করে দেব আর তুমি বাড়ি যেতে পারবে।” এই প্রস্তাব অনেকবার দেওয়া হয়েছিল, তবুও সেই ভাই যিহোবার প্রতি তার বশ্যতার ক্ষেত্রে আপোশ করেননি। এর ফলে তিনি অনেকবার জার্মানির আউশভিটস্‌ এবং মিটিলবাওডোরা, উভয় স্থানেই মারধর ও ঠাট্টা সহ্য করেছিলেন এবং দাস্যকর্ম করেছিলেন। মুক্তির ঠিক আগে এই ভাই যেখানে আটক ছিলেন, সেখানে অল্পের জন্য বোমার আঘাতে মারা যাওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

প্যাভেল শালবোট, যিনি সম্প্রতি মারা গিয়েছেন, তিনি একবার স্মরণ করেছিলেন: “জেরা চলাকালীন গেসটাপো আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছিল যে, কী কারণে আমি জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এবং হেল হিটলার বলতে প্রত্যাখ্যান করেছি।” তার খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার পক্ষে বাইবেলের ভিত্তিটি ব্যাখ্যা করার পর, তাকে একটা অস্ত্রের কারখানায় কাজ করার দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। “স্পষ্টতই, আমি বিবেকের দ্বারা চালিত হয়ে এই কাজকে গ্রহণ করতে পারিনি, তাই তারা আমাকে একটা খনিতে কাজ করতে পাঠায়।” সেখানেও, তিনি বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন।

যারা বন্দি হয়নি—মহিলারা এবং ছেলেমেয়েরা—তারা আউশভিটসে থাকা বন্দিদের জন্য খাবারের পার্সেল পাঠাত। “গ্রীষ্মের সময়ে আমরা বন থেকে ক্র্যানবেরি ফল সংগ্রহ করতাম আর এরপর সেগুলোর বিনিময়ে গম সংগ্রহ করতাম,” একজন ভাই বলেন, যিনি তখন তরুণ ছিলেন। “বোনেরা রোল তৈরি করত ও সেগুলো চর্বিতে ভিজিয়ে দিত। এরপর আমরা সেই রোলগুলো অল্প পরিমাণে বন্দি সহবিশ্বাসীদের পাঠাতাম।”

ভিসোয়া থেকে ৫৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষির সবাইকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল এবং জোর করে কাজ করানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩৮ জন মারা যায়।

এক তরুণ প্রজন্ম উদিত হয়

যিহোবার সাক্ষিদের ছেলেমেয়েরাও নাৎসিদের নিপীড়নের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। কয়েক জনকে তাদের মায়েদের সঙ্গে বহেমিয়ার অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানো হয়। অন্যদের আবার তাদের বাবামার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং লড্জে শিশুদের কুখ্যাত ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল।

“লড্জে যাওয়ার প্রথম পরিবহণে,” তাদের মধ্যে তিন জন স্মরণ করে বলে, “জার্মানরা আমাদের দশ জনকে নিয়েছিল, বয়স ছিল পাঁচ থেকে নয়ের মধ্যে। আমরা প্রার্থনা করে এবং বাইবেলের প্রসঙ্গগুলো আলোচনা করে একে অন্যকে উৎসাহিত করেছিলাম। ধৈর্য ধরা খুব সহজ ছিল না।” ১৯৪৫ সালে এইসব ছেলেমেয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল। তারা বেঁচে ছিল কিন্তু খুবই রোগা হয়ে গিয়েছিল এবং মানসিক আঘাত পেয়েছিল। তারপরও কোনোকিছুই তাদের নীতিনিষ্ঠা ভাঙতে পারেনি।

এরপর কী হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হচ্ছিল, ভিসোয়ার সাক্ষিরা তখনও বিশ্বাসে দৃঢ় ছিল এবং উদ্যোগ ও দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের প্রচার কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য প্রস্তুত ছিল। দলে দলে ভাইয়েরা প্রচার ও বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি বিতরণ করার জন্য সেই লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল, যারা ভিসোয়া থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাস করত। “শীঘ্রই আমাদের শহরে তিনটে সক্রিয় মণ্ডলী গঠিত হয়,” ইয়ান ঝক বলেন। কিন্তু, ধর্মীয় স্বাধীনতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

নাৎসিদের জায়গায় যে-সাম্যবাদী সরকার আসে, তারা ১৯৫০ সালে পোল্যান্ডে যিহোবার সাক্ষিদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাই স্থানীয় ভাইদের তাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করায় দক্ষ হতে হয়েছিল। কখনও কখনও তারা গবাদি পশু বা খাদ্যশস্য কেনার অজুহাতে লোকেদের ঘরে ঘরে সাক্ষাৎ করত। খ্রিস্টীয় সভাগুলো সাধারণত ছোট ছোট দলে রাতের বেলা অনুষ্ঠিত হতো। তা সত্ত্বেও, নিরাপত্তা প্রতিনিধিরা যিহোবার উপাসকদের অনেককে গ্রেফতার করতে কৌশলতা অবলম্বন করে, তাদেরকে বিদেশি গোয়েন্দা বিভাগের হয়ে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে—পুরোপুরি ভিত্তিহীন এক অভিযোগ। কিছু অফিসার প্যাভেল পিল্খকে তীব্র ব্যঙ্গ করে এই হুমকি দিয়েছিল: “হিটলার তোমাকে টলাতে পারেনি কিন্তু আমরা পারব।” তবুও পাঁচ বছর কারাগারে থাকা সত্ত্বেও, তিনি যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। যখন কিছু অল্পবয়সী যিহোবার সাক্ষি সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন তাদেরকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

যিহোবা সবসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন

১৯৮৯ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছিল এবং পোল্যান্ডে যিহোবার সাক্ষিরা আইনগতভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। ভিসোয়ার সুস্থির যিহোবার উপাসকরা তাদের কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করেছিল, যেমনটা অগ্রগামীদের সংখ্যায় অথবা পূর্ণসময়ের পরিচারকদের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছিল। এই এলাকা থেকে প্রায় ১০০ জন ভাই ও বোন অগ্রগামীর কাজ গ্রহণ করেছিল। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, এই শহর অগ্রাগামীদের কারখানা নামে পরিচিত হয়ে এসেছে।

বাইবেল ঈশ্বরের প্রাচীনকালের দাসদের প্রতি তাঁর সমর্থনের বিষয়ে বলে: “যদি সদাপ্রভু আমাদের সপক্ষ না হইতেন, যখন লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে উঠিয়াছিল, তখন তাহারা আমাদিগকে জীবদ্দশায় গ্রাস করিত।” (গীতসংহিতা ১২৪:২, ৩) আমাদের সময়ে সাধারণ লোকেদের মধ্যে ব্যাপক উদাসীনতা এবং জাগতিক অনৈতিক প্রবণতাগুলো থাকা সত্ত্বেও, ভিসোয়ার যিহোবার সাক্ষিরা তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে এবং প্রচুর পুরস্কার লাভ করে। এই এলাকার সাক্ষিদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রেরিত পৌলের এই উক্তির সত্যতার বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে: “ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে?”—রোমীয় ৮:৩১.

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

সন্তান হেলেনা, ইমিলিয়া এবং ইয়ানসহ এমিলিয়া ঝককে বহেমিয়ার এক অস্থায়ী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্যাভেল শালবোট যখন সামরিকবাহিনীতে কাজ করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তখন তাকে একটা খনিতে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভাইদের আউশভিটসে প্রেরণ করা এবং মৃত্যু সত্ত্বেও, ভিসোয়ায় বৃদ্ধির কাজ থেমে যায়নি

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্যাভেল পিল্খ এবং ইয়ান পোলেককে লড্জে তরুণ-তরুণীদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

রসালো ফল এবং ফুলগুলো: © R.M. Kosinscy / www.kosinscy.pl