সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তরুণ-তরুণীরা তোমার হৃদয়কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে তোমার বাবামাকে সাহায্য করতে দাও!

তরুণ-তরুণীরা তোমার হৃদয়কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে তোমার বাবামাকে সাহায্য করতে দাও!

তরুণ-তরুণীরা তোমার হৃদয়কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে তোমার বাবামাকে সাহায্য করতে দাও!

 একটা জাহাজের ক্যাপ্টেনকে সবচেয়ে কঠিন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয় বলে তুমি মনে করো? নিরাপদে একটা বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়া? সাধারণত তা নয়। অধিকাংশ জাহাজডুবি উপকূলবর্তী এলাকাতেই ঘটে থাকে, গভীর সমুদ্রে নয়। আসলে, একটা বিমান অবতরণ করানোর চাইতে একটা জাহাজকে জেটিতে ভিড়ানো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কেন?

একজন ক্যাপ্টেন তার জাহাজ নিরাপদে জেটিতে ভিড়ানোর আগে তাকে সমস্ত বিপদ এড়িয়ে চলতে হয়, যা কোনো নির্দিষ্ট বন্দরে থাকতে পারে। চালনা করার সময়ে অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে যাতে সংঘর্ষ না বাঁধে, সেইজন্য জলের নিচের স্রোতের গতি সম্বন্ধে তার জ্ঞান থাকা দরকার। এ ছাড়া, তাকে অবশ্যই জলের নিচে গুপ্ত যেকোনো বালুচর, শিলাখণ্ড অথবা ডুবন্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষকে পাশ কাটিয়ে চলতে হয়। আর এটা যদি পোতাশ্রয়ে তার প্রথম নোঙ্গর করার ঘটনা হয়, তা হলে সেটা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

এই সমস্যাগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য একজন বিজ্ঞ ক্যাপ্টেন হয়তো একজন পাইলটকে নিযুক্ত করতে পারেন, যিনি স্থানীয় পোতাশ্রয়ের সঙ্গে সুপরিচিত। সেই পাইলট জাহাজের মঞ্চে ক্যাপ্টেনের পাশে থাকেন এবং দক্ষ নির্দেশনা প্রদান করেন। তারা একত্রে ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে এবং যেকোনো সরু প্রণালীর মধ্যে দিয়ে বন্দরে যাওয়ার জন্য জাহাজকে চালনা করে।

পাইলটের এই অমূল্য দক্ষতা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, সেই খ্রিস্টান তরুণ-তরুণীদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সাহায্য রয়েছে যাদেরকে জীবনের সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য এক গতিপথ তৈরি করতে হয়। এই সাহায্য কী? কেন অল্পবয়সীদের তা দরকার?

এসো, জাহাজের দৃষ্টান্তটা নিয়ে আমরা বিবেচনা করে চলি। যদি তুমি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়ে থাকো, তা হলে তুমি জাহাজের ক্যাপ্টেনের মতো কারণ তোমার জীবনের জন্য একসময় তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আর জাহাজের পাইলটের মতো তোমার বাবামার একই ভূমিকা রয়েছে, কারণ তারা তোমাকে তোমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন যে-পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলোর মধ্যে দিয়ে চলার জন্য পরিচালনা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু, কৈশোরের বছরগুলোতে তোমার বাবামার দেওয়া উপদেশগুলো গ্রহণ করা তোমার কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে। কেন সেরকম মনে হতে পারে?

সমস্যাটা প্রায়ই হৃদয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তোমার রূপক হৃদয় হয়তো তোমাকে নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর আকাঙ্ক্ষা করতে অথবা স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে বলে মনে হওয়া বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চালিত করতে পারে। বাইবেল বলে, “বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা দুষ্ট।” (আদিপুস্তক ৮:২১) যিহোবা স্পষ্ট করেন যে, তোমার সামনে সত্যিই এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। তিনি সাবধান করেন, “হৃদয় সর্বাপেক্ষা প্রতারণাপূর্ণ এবং বিপজ্জনকভাবে স্বেচ্ছাচারী।” (যিরমিয় ১৭:৯, রদারয়েম) অন্যায় আকাঙ্ক্ষাগুলো পোষণ করা ছাড়াও, হৃদয় একজন তরুণ বা তরুণীকে এমন চিন্তা করার দিকে প্রতারিত করতে পারে যে, সে তার বাবামার চাইতেও ভাল জানে, যদিও তাদের আরও অনেক বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু, যখন তুমি কৈশোরের সংকটময় বছরগুলো পাড়ি দেও, তখন তোমার পক্ষে তোমার বাবামার সাহায্য চাওয়ার উত্তম কারণ রয়েছে।

কেন তোমার বাবামার বাধ্য হবে?

সর্বোপরি, পরিবারের উদ্যোক্তা যিহোবা তোমাকে বলেন যে, বাবামার নির্দেশনা তোমার শোনা উচিত। (ইফিষীয় ৩:১৪) যেহেতু ঈশ্বর তোমার যত্ন নেওয়ার জন্য তোমার বাবামাকে নিযুক্ত করেছেন, তাই তিনি তোমাকে এই পরামর্শ দেন: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য।” (ইফিষীয় ৬:১-৩; গীতসংহিতা ৭৮:৫) তুমি এখন হয়তো কিশোর বয়সে থাকতে পারো কিন্তু তোমার বাবামার এখনও তোমাকে পরিচালনা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে আর তাদের কথা শুনতে তুমি বাধ্য। প্রেরিত পৌল যখন লিখেছিলেন যে, সন্তানদের তাদের বাবামার আজ্ঞাবহ হওয়া বা বাধ্য থাকা উচিত, তখন তিনি একটা গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছিলেন যা যেকোনো বয়সের সন্তানদের প্রতিই প্রযোজ্য। উদাহরণ হিসেবে, মথি ২৩:৩৭ পদে যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে, যিশু যিরূশালেমের অধিবাসীদের ‘সন্তান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন, যদিও এদের অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক ছিল।

প্রাচীনকালের অনেক বিশ্বস্ত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও তাদের বাবামার বাধ্য হয়ে চলেছিল। যাকোব যদিও একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন, তবুও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে যিহোবার উপাসক নয় এমন একজন নারীকে বিয়ে না করার বিষয়ে তার বাবার আদেশ তার মেনে চলা উচিত। (আদিপুস্তক ২৮:১, ২) নিঃসন্দেহে যাকোব এটাও লক্ষ করেছিলেন যে, পৌত্তলিক কনান দেশের মেয়েদের বিয়ে করার বিষয়ে তার ভাইয়ের সিদ্ধান্ত তার বাবামার যথেষ্ট দুঃখের কারণ হয়েছিল।—আদিপুস্তক ২৭:৪৬.

তোমাকে পরিচালনা দেওয়ার জন্য তাদের ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব ছাড়াও, তোমার খ্রিস্টান বাবামা তোমার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার জন্য সম্ভবত অধিক যোগ্য। এর কারণ মূলত তারা তোমাকে খুব ভালভাবে জানে আর কোনো সন্দেহ নেই যে, তোমার প্রতি তারা বহু বছর ধরে তাদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা দেখিয়েছে। জাহাজের পাইলটের মতো, তারা অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলে। ‘যৌবনকালের অভিলাষের’ অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। আর সত্য খ্রিস্টান হিসেবে তারা ব্যক্তিগতভাবে বাইবেলের নীতিগুলো অনুসরণ করার মূল্য বুঝতে পেরেছে।—২ তীমথিয় ২:২২.

তোমার পাশে থাকা এই ধরনের অভিজ্ঞ সাহায্যের দ্বারা তুমি এমনকি সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিগুলোও সফলভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাও। উদাহরণস্বরূপ, বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে তোমার সম্পর্কের বিষয়ে বিবেচনা করো। কীভাবে খ্রিস্টান বাবামা তোমাকে এই স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিচালনা দিতে পারে?

বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ

পাইলট জাহাজের ক্যাপ্টেনকে বালুচরগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য পরামর্শ দেন, যা বিশাল জেটির কাছে জলের নিচে ছড়িয়ে থাকে। বালুচরগুলো নরম কিন্তু সেইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এগুলো অবিরত অবস্থান পরিবর্তন করে। তোমার বাবামা একইভাবে তোমাকে সেই পরিস্থিতিগুলো থেকে দূরে রাখতে চায়, যেগুলো তোমাকে আবেগগতভাবে ফাঁদে ফেলতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বাবামা জানে যে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অনুভূতি গভীর হয় আর তা বর্ণনা করা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, একবার এইরকম অনুভূতির উদ্রেক হলে তা তোমাকে একেবারে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে।

দীণার উদাহরণ প্রায় বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি সম্বন্ধে তুলে ধরে। সম্ভবত কৌতূহল এবং সুন্দর সময় কাটানোর আকাঙ্ক্ষা দীণাকে কনানের সেই মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার দিকে পরিচালিত করেছিল, যাদের নৈতিক মান একেবারে নিচু ছিল। যেটাকে প্রথমে নিছক মজা বলে মনে হয়েছে, শীঘ্রই তা এক দুঃখজনক অভিজ্ঞতার দিকে চালিত করেছিল—শহরের “সর্ব্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত” তরুণের দ্বারা সে ধর্ষিত হয়েছিল।—আদিপুস্তক ৩৪:১, ২, ১৯.

যে-সময়ে আমরা বাস করছি, সেই যৌন উন্মাদনাপূর্ণ সময়ের দ্বারা এই ধরনের বিপদ বৃদ্ধি পায়। (হোশেয় ৫:৪) অধিকাংশ তরুণ-তরুণী হয়তো এই ধারণা দিতে পারে যে, বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মজা করা হচ্ছে সম্ভাব্য সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয়। তোমার হৃদয় শিহরিত হতে পারে, যখন তুমি একাকী এমন কারও সঙ্গে থাকার বিষয় চিন্তা করো, যাকে তুমি দৈহিকভাবে আকর্ষণীয় বলে মনে করে থাকো। কিন্তু প্রেমময় বাবামা তোমাকে সেইসব তরুণ-তরুণীদের সাহচর্য থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে, যারা যিহোবার মানগুলোকে সম্মান করে না।

লরা স্বীকার করে যে, কৌতূহল অল্পবয়সীদের বিপদের প্রতি অন্ধ করে দিতে পারে। “যখন আমার ক্লাসের মেয়েরা আমাকে বলে যে, তারা কিছু আকর্ষণীয় ছেলের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত নেচেছিল, তখন তারা বিষয়টা এমনভাবে বলেছিল যেন সেই অভিজ্ঞতা কখনও ভোলার নয়। আমি বুঝতে পারি যে, তারা প্রায়ই বাড়িয়ে বলে কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমি কৌতূহলবোধ করি এবং মনে করি যে সম্ভবত অনেক মজা করার সুযোগ আমি হারাচ্ছি। যদিও আমি জানি যে আমাকে সেইসব জায়গায় যেতে না দিয়ে আমার বাবামা ঠিকই করেছে, তারপরও আমি প্রলুব্ধ হই।”

জাহাজে কোনো ব্রেক নেই, তাই এটা থামতে দীর্ঘ সময় নেয়। বাবামা জানে যে, কামনার প্রকৃতিও একইরকম হয়ে থাকে। হিতোপদেশ বই অসংযত কামনার দ্বারা চালিত এক লোককে, এমন এক গরুর সঙ্গে তুলনা করে যেটা হত হতে চলেছে। (হিতোপদেশ ৭:২১-২৩) তোমার প্রতি এই ধরনের বিষয় ঘটুক তা তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না, যা তোমাকে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক জাহাজভঙ্গের দিকে পরিচালিত করে। তোমার হৃদয় কখন তোমাকে এইক্ষেত্রে বিপথে চালিত করেছিল, তা তোমার বাবামা হয়তো বুঝতে পারে আর তারা হয়তো তোমাকে প্রয়োজন অনুসারে পরামর্শ দিতে পারে। তাদের কথা শোনার আর এইভাবে বিপর্যয় প্রতিহত করার প্রজ্ঞা কি তোমার থাকবে?—হিতোপদেশ ১:৮; ২৭:১২.

যখন তুমি সঙ্গীসাথিদের চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করো, তখনও বাবামার সমর্থন তোমার দরকার। কীভাবে তারা তোমাকে সাহায্য করতে পারে?

তোমার বন্ধুদের জোরালো প্রভাব

এক শক্তিশালী জোয়ার বা স্রোত একটা জাহাজকে বিপথে চালিত করতে পারে। এই শক্তিকে ব্যর্থ করতে জাহাজকে ভিন্ন দিকে পরিচালিত করতে হবে। একইভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নাও, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য তরুণ-তরুণীদের জোরালো প্রভাবও তোমাকে আধ্যাত্মিকভাবে বিপথে চালিত করতে পারে।

দীণার অভিজ্ঞতা যেমন ব্যাখ্যা করে, “যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) মনে রাখবে যে, বাইবেলে ব্যবহৃত ‘হীনবুদ্ধি’ হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে যিহোবাকে জানে না অথবা তাঁর পথে চলা বেছে নেয় না।

কিন্তু, তোমার সহপাঠীদের দৃষ্টিভঙ্গি বা অভ্যাসগুলো প্রত্যাখ্যান করা সহজ না-ও হতে পারে। মারিয়া হোসে ব্যাখ্যা করে: “আমি চেয়েছিলাম অন্য তরুণ-তরণীরা যেন আমাকে মেনে নেয়। যেহেতু আমি তাদেরকে ভাবতে দিতে চাইনি যে আমি আলাদা ছিলাম, তাই আমি যতটা সম্ভব তাদেরকে গভীরভাবে অনুকরণ করেছি।” বুঝে ওঠার আগেই তুমি হয়তো তোমার বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারো—তোমার গানবাজনা পছন্দ, তুমি কোন ধরনের পোশাক-আশাক পরতে চাও অথবা এমনকি তুমি কীভাবে কথা বলো সেই ক্ষেত্রে। সম্ভবত তুমি তোমার সমবয়সী তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করো। সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু এটা তোমাকে তাদের জোরালো প্রভাবের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়, যা ধ্বংসাত্মক হতে পারে।—হিতোপদেশ ১:১০-১৬.

ক্যারলিন বেশ কয়েক বছর আগে যে-কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা স্মরণ করে বলেন: “১৩ বছর বয়স থেকেই আমি যে-মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করতাম, তাদের অধিকাংশেরই ছেলেবন্ধু ছিল আর অনেক বছর আমি তাদের উদাহরণ অনুসরণ করার বিরামহীন চাপের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু, আমার মা এই কঠিন সময়ে আমাকে পরিচালনা দিয়েছিলেন। তিনি আমার কথা শোনার, আমার সঙ্গে যুক্তি করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করেছিলেন এবং পরিপক্ব হওয়ার আগে পর্যন্ত এই ধরনের সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন।”

ক্যারলিনের মায়ের মতো তোমার বাবামা হয়তো সঙ্গীসাথিদের চাপ সম্বন্ধে সাবধান করতে বা এমনকি নির্দিষ্ট কোনো কাজ বা কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করার বাধ্যবাধকতা অনুভব করতে পারে। এই বিষয়গুলো নিয়ে নেথেন তার বাবামার সঙ্গে একাধিকবার তর্ক করার বিষয়ে মনে করেন। “আমার বন্ধুরা প্রায়ই আমাকে তাদের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাত,” তিনি বলেন, “কিন্তু, আমার বাবামা চাইত না আমি কোনো বড় দলের সঙ্গে মেলামেশা করি অথবা তত্ত্বাবধানহীন কোনো পার্টিতে যাই। সেই সময়ে আমি বুঝতে পারতাম না যে, আমার বাবামায়ের চাইতে অন্য বাবামায়েরা কেন এত প্রশ্রয়ী।”

যাই হোক, পরে নেথেন বুঝতে পেরেছিলেন। “আমি জানি যে আমার ক্ষেত্রে ‘বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা ছিল,’” তিনি স্বীকার করেন। “এই অজ্ঞানতা সহজেই প্রকাশ পেয়ে যায় বলে মনে হয়, যখন ছেলেরা দল বেঁধে মিলিত হয়। একজন খারাপ কিছু শুরু করলে অন্য আরেকজন আরেক ধাপ এগিয়ে যায় এবং তৃতীয়জন আরও খারাপ বিষয় করে। শীঘ্রই অন্যদেরও সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। এমনকি যিহোবার সেবা করে বলে দাবি করে, এমন তরুণ-তরুণীরাও এই ফাঁদে পড়ে যেতে পারে।”—হিতোপদেশ ২২:১৫.

নেথেন ও মারিয়া হোসে উভয়েই তাদের নিজেদের হৃদয়ের সঙ্গে এক যুদ্ধ করেছিল, যখন তাদের বন্ধুরা তাদের যা করতে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা করার অনুমতি তাদের বাবামা দেয়নি। যাই হোক, তারা বাধ্য থেকেছিল আর তাই পরে আনন্দিত হয়েছিল। হিতোপদেশ বলে: “তুমি কর্ণ পাতিয়া জ্ঞানবানদের কথা শুন, আমার জ্ঞানে মনোনিবেশ কর।”—হিতোপদেশ ২২:১৭.

সম্মান পাওয়ার যোগ্য

কোনো জাহাজ একদিকে কাত হয়ে গেলে সেটা কৌশলে পরিচালনা করা খুবই কঠিন আর এটা যদি অতিরিক্ত কাত হয়ে যায়, তা হলে সহজেই উলটে যেতে পারে। আমাদের অসিদ্ধ স্বভাবের কারণে আমরা সকলেই স্বার্থপরতা এবং নিষিদ্ধ প্রবণতাগুলোর প্রতি ঝুঁকে থাকি। এই ধরনের প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও, অল্পবয়সীরা রূপক অর্থে বন্দরে পৌঁছাতে পারে, যদি তারা যত্নের সঙ্গে তাদের বাবামার পরিচালনা অনুসরণ করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তোমার বাবামা তোমাকে এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করতে পারে যে, জীবনে যাওয়ার জন্য সংকীর্ণ পথ এবং ধ্বংসে যাওয়ার জন্য প্রশস্ত পথ ছাড়াও, এগুলোর মাঝামাঝি আরেকটা পথ আছে। (মথি ৭:১৩, ১৪) এইরকম ধারণা করা অবাস্তব যে, তুমি পুরোপুরি অন্যায় না করেও কিছুটা অন্যায় করা উপভোগ করতে পারো, যেমন তুমি পুরোপুরি না গিলেও শুধুমাত্র “স্বাদ” নিতে পারো। যারা এই ধরনের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করে, তারা “দুই নৌকায় পা দিয়া” আছে—কিছুটা যিহোবাকে সেবা করছে কিন্তু একই সময়ে জগৎ এবং এর বিষয়বস্তুকে প্রেম করছে—আর সহজেই আধ্যাত্মিকভাবে উলটে যেতে পারে। (১ রাজাবলি ১৮:২১; ১ যোহন ২:১৫) কেন এইরকম হতে পারে? আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর জন্য।

আমাদের অসিদ্ধ আকাঙ্ক্ষাগুলো তীব্র হতে পারে যদি আমরা সেগুলোর কাছে নতি স্বীকার করি। আমাদের ‘বঞ্চক অন্তঃকরণ’ অল্পতেই সন্তুষ্ট হবে না। এটা আরও কিছু দাবি করবে। (যিরমিয় ১৭:৯) একবার আমরা আধ্যাত্মিকভাবে ভেসে যেতে শুরু করলে, এই জগৎ আমাদের ওপর আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। (ইব্রীয় ২:১) তুমি হয়তো না-ও বুঝতে পারো যে, তুমি আধ্যাত্মিকভাবে কাত হয়ে পড়েছ কিন্তু তোমার খ্রিস্টান বাবামা সম্ভবত বুঝতে পারে। এটা ঠিক যে, তুমি যতটা দ্রুত একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম শিখে ফেলতে পার, তারা হয়তো তত তাড়াতাড়ি তা পারে না কিন্তু এক স্বেচ্ছাচারী হৃদয় সম্বন্ধে তোমার চাইতে তারা অনেক গুণ ভাল জানে। আর ‘তোমার হৃদয় সৎপথে চালাইতে’ তারা তোমাকে সাহায্য করতে চায়, যার ফল হচ্ছে জীবন।—হিতোপদেশ ২৩:১৯.

অবশ্য, এইরকম আশা করো না যে, তোমার বাবামা সেই বিষয়গুলো একেবারে নিখুঁতভাবে মীমাংসা করবে যখন গানবাজনা, আমোদপ্রমোদ ও সাজগোজের মতো কঠিন ক্ষেত্রগুলোতে তোমাকে তাদের নির্দেশনা দিতে হয়। তোমার বাবামার হয়তো শলোমনের মতো প্রজ্ঞা বা ইয়োবের মতো ধৈর্য না-ও থাকতে পারে। একটা জাহাজের পাইলটের মতো অত্যন্ত সতর্ক হওয়া সত্ত্বেও, তারা কখনও কখনও ভুল করতে পারে। তবুও, তাদের পরিচালনা অমূল্য প্রমাণিত হবে যদি তুমি এই কথায় মনোযোগ দাও “তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না।”—হিতোপদেশ ১:৮, ৯.

অন্য তরুণ-তরুণীরা হয়তো তাদের বাবামা সম্বন্ধে অবজ্ঞাপূর্ণ কথা বলতে পারে। কিন্তু, তোমার বাবামা যদি শাস্ত্র মেনে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে, তা হলে তারা সব ধরনের আবহাওয়ায়, সমস্ত প্রতিকূলতার মুখে সবসময় তোমার পাশে থাকে। অভিজ্ঞ পাইলটের কাছ থেকে উপদেশ পাওয়া জাহাজের ক্যাপ্টেনের মতো, তোমাকে প্রজ্ঞার পথে চালিত করার জন্য বাবামার পরিচালনার দরকার তোমার রয়েছে। এর পুরস্কার হবে অপরিমেয়।

“কেননা প্রজ্ঞা তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে, পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে; যেন তোমাকে উদ্ধার করে দুষ্টের পথ হইতে, সেই সকল লোক হইতে, যাহারা কুটিল বাক্য বলে, যাহারা সরলতার পথ ত্যাগ করে, অন্ধকার-মার্গে চলিবার নিমিত্ত; . . . কেননা সরলগণ দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে।”—হিতোপদেশ ২:১০-১৩, ২১.

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্য তরুণ-তরুণীদের প্রভাব তোমাকে আধ্যাত্মিকভাবে বিপথে চালিত করতে পারে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

দীণার অভিজ্ঞতা স্মরণ করো

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

জাহাজের একজন ক্যাপ্টেন যেমন অভিজ্ঞ পাইলটের কাছ থেকে উপদেশ পাওয়ার চেষ্টা করেন, তেমনই তরুণ-তরুণীদের তাদের বাবামার পরিচালনা জানার চেষ্টা করা উচিত

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ছবি: www.comstock.com