সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তাড়িত অথচ সুখী

তাড়িত অথচ সুখী

তাড়িত অথচ সুখী

“ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে।”মথি ৫:১১.

১. সুখ এবং তাড়নার বিষয়ে যিশু তাঁর অনুসারীদের কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন?

 যিশু যখন প্রথম তাঁর প্রেরিতদের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তারা বিরোধিতার সম্মুখীন হবে। তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে।” (মথি ১০:৫-১৮, ২২) কিন্তু, এর আগে যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে তাঁর প্রেরিত এবং অন্যদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এই ধরনের বিরোধিতা সবসময়ই যে তাদের প্রগাঢ় সুখকে বিপন্ন করবে তা নয়। বস্তুতপক্ষে, যিশু সুখী হওয়াকে এমনকি খ্রিস্টান হিসেবে তাড়িত হওয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন! কীভাবে তাড়না সুখ নিয়ে আসতে পারে?

ধার্মিকতার জন্য কষ্টভোগ করা

২. যিশু এবং প্রেরিত পিতরের কথা অনুসারে, কোন ধরনের কষ্টভোগ সুখ নিয়ে আসে?

যিশু সুখের অষ্টম যে-কারণের কথা বলেছিলেন, সেটা হল: “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” (মথি ৫:১০) দুঃখ বা কষ্টভোগ করা সুখ্যাতি বা প্রশংসার কোনো বিষয় নয়। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “পাপ করিয়া চপেটাঘাত প্রাপ্ত হইলে যদি তোমরা সহ্য কর, তবে তাহাতে সুখ্যাতি কি? কিন্তু সদাচরণ করিয়া দুঃখ ভোগ করিলে যদি সহ্য কর, তবে তাহাই ত ঈশ্বরের কাছে সাধুবাদের বিষয়।” তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কেহ যেন নরঘাতক কি চোর কি দুষ্কর্ম্মকারী কি পরাধিকারচর্চ্চক বলিয়া দুঃখভোগ না করে। কিন্তু যদি কেহ খ্রীষ্টীয়ান বলিয়া দুঃখভোগ করে, তবে সে লজ্জিত না হউক; কিন্তু এই নামে ঈশ্বরের গৌরব করুক।” (১ পিতর ২:২০; ৪:১৫, ১৬) যিশুর কথা অনুসারে কষ্টভোগ তখনই সুখ নিয়ে আসে, যখন সেটা ধার্মিকতার জন্য সহ্য করা হয়।

৩. (ক) ধার্মিকতার জন্য তাড়িত হওয়ার অর্থ কী? (খ) প্রাথমিক খ্রিস্টানদের ওপর তাড়না কোন প্রভাব ফেলেছিল?

প্রকৃত ধার্মিকতা ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। তাই, ধার্মিকতার জন্য কষ্টভোগ করা বলতে, একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের মানগুলো বা চাহিদাগুলো লঙ্ঘন করার চাপকে প্রতিরোধ করার কারণে যে-কষ্টভোগ করে, সেটাকে বোঝায়। যিশুর নামে প্রচার করা বন্ধ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে প্রেরিতরা যিহুদি নেতাদের দ্বারা তাড়িত হয়েছিল। (প্রেরিত ৪:১৮-২০; ৫:২৭-২৯, ৪০) এটা কি তাদের আনন্দকে কেড়ে নিয়েছিল বা তাদের প্রচার কাজকে থামিয়ে দিয়েছিল? কখনোই না! “তাঁহারা মহাসভার সম্মুখ হইতে চলিয়া গেলেন, আনন্দ করিতে করিতে গেলেন, কারণ তাঁহারা সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন। আর তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” (প্রেরিত ৫:৪১, ৪২) এই তাড়না তাদের জন্য আনন্দ নিয়ে এসেছিল এবং প্রচার কাজে তাদের উদ্যোগকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। পরবর্তী সময়ে, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা সম্রাট উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে রোমীয়দের দ্বারা তাড়িত হয়েছিল।

৪. খ্রিস্টানদেরকে তাড়না করার কয়েকটা কারণ কী?

আধুনিক সময়ে, যিহোবার সাক্ষিরা “রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচার করা বন্ধ করতে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে তাড়িত হয়ে এসেছে। (মথি ২৪:১৪) তাদের সভাগুলোর ওপর যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তখন তারা বাইবেলের আদেশ অনুযায়ী একত্রিত হওয়া বন্ধ করার পরিবর্তে বরং কষ্টভোগ করতে রাজি থাকে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তারা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার জন্য অথবা রক্তের অপব্যবহার করতে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাড়িত হয়ে এসেছে। (যোহন ১৭:১৪; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) তা সত্ত্বেও, ধার্মিকতার জন্য এই পদক্ষেপ আজকে ঈশ্বরের লোকেদের জন্য মনের অনেক শান্তি এবং সুখ নিয়ে আসে।—১ পিতর ৩:১৪.

খ্রিস্টের জন্য নিন্দিত

৫. আজকে যিহোবার লোকেদের তাড়িত হওয়ার মূল কারণটা কী?

সুখী হওয়ার নবম যে-কারণের বিষয়ে যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে আলোচনা করেছিলেন, সেটাও তাড়নার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে।” (মথি ৫:১১) যিহোবার লোকেদের তাড়িত হওয়ার মূল কারণটা হচ্ছে, তারা বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার অংশ নয়। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি জগতের হইতে, তবে জগৎ আপনার নিজস্ব ভালবাসিত; কিন্তু তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে।” (যোহন ১৫:১৯) একইভাবে প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “এ বিষয়ে তোমরা উহাদের সঙ্গে একই নষ্টামির পঙ্কের দিকে ধাবমান হইতেছ না দেখিয়া তাহারা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া নিন্দা করে।”—১ পিতর ৪:৪.

৬. (ক) অবশিষ্টাংশ এবং তাদের সহযোগীরা কেন নিন্দিত এবং তাড়িত হয়? (খ) এই ধরনের নিন্দা কি আমাদের সুখকে হ্রাস করে?

আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা যিশুর নামে প্রচার বন্ধ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে তাড়িত হয়েছিল। খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন: “তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) খ্রিস্টের অভিষিক্ত ভাইদের বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশরা, ‘বিস্তর লোকের’ অনুগত সহযোগীদের সাহায্যে উদ্যোগের সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) তাই, শয়তান “তাহার বংশের [“স্ত্রীলোকটির” বংশের অর্থাৎ ঈশ্বরের সংগঠনের স্বর্গীয় অংশের] সেই অবশিষ্ট লোকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদের সহিত” যুদ্ধ করে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১৭) যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের বর্তমান-শাসনরত রাজা যিশুর সাক্ষ্য ধারণ করি, যে-রাজ্য সেই মনুষ্য সরকারগুলোকে ধ্বংস করে দেবে, যেগুলো ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতের সামনে বাধা হয়ে রয়েছে। (দানিয়েল ২:৪৪; ২ পিতর ৩:১৩) এই কারণে আমরা নিন্দিত ও তাড়িত হই কিন্তু খ্রিস্টের নামের জন্য কষ্টভোগ করি বলে আমরা নিজেদের সুখী বলে মনে করি।—১ পিতর ৪:১৪.

৭, ৮. প্রাথমিক খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে বিরোধীরা মিথ্যাভাবে কী কী বলেছিল?

যিশু বলেছিলেন যে, তাঁর অনুসারীদের সেই সময়ও নিজেদের সুখী বলে মনে করা উচিত, যখন লোকেরা তাঁর কারণে তাদের বিরুদ্ধে “মিথ্যা করিয়া . . . সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে।” (মথি ৫:১১) এটা নিশ্চিতভাবে প্রাথমিক খ্রিস্টানদের বেলায়ও সত্য হয়েছিল। সা.কা. প্রায় ৫৯-৬১ সালে প্রেরিত পৌল যখন রোমে বন্দি ছিলেন, তখন যিহুদি নেতারা খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সর্ব্বত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে।” (প্রেরিত ২৮:২২) পৌল এবং সীলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তারা “জগৎ-সংসারকে লণ্ডভণ্ড করিয়া ফেলিয়াছে,” “কৈসরের বিধিকলাপের বিরুদ্ধাচরণ করে।”—প্রেরিত ১৭:৬, ৭.

রোমীয় সাম্রাজ্যের সময়কার খ্রিস্টানদের বিষয়ে লিখতে গিয়ে, ইতিহাসবেত্তা কে. এস. লটুরেট বলেছিলেন: “বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল। তারা পৌত্তলিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করত বলে খ্রিস্টানদের নাস্তিক বলে অভিহিত করা হতো। সামাজিক জীবনযাপনের বেশির ভাগ বিষয়গুলো—পৌত্তলিক উৎসব, সাধারণ চিত্তবিনোদন . . .—পরিহার করত বলে তাদেরকে মানবজাতিকে ঘৃণা করে বলে উপহাস করা হতো। কথিত ছিল যে, উভয় লিঙ্গের লোকেরা রাতে একত্রে মিলিত হতো . . . এবং এরপর বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হতো। . . . [খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবস] কেবলমাত্র বিশ্বাসীদের উপস্থিতিতেই উদ্‌যাপন করা হতো বলে এই গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে, খ্রিস্টানরা নিয়মিতভাবে শিশুবলি দিত এবং এর রক্ত ও মাংস ভোজন করত।” এ ছাড়াও, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা সম্রাট উপাসনা করা প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে তাদেরকে রাষ্ট্রের শত্রু বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

৯. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে যে-মিথ্যা অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল, সেগুলোর প্রতি তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং আজকের পরিস্থিতি কেমন?

সেই মিথ্যা অভিযোগগুলো প্রাথমিক খ্রিস্টানদের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়নি। সা.কা.পূ. ৬০ সালে পৌল “সুসমাচারের” বিষয়ে বলতে পেরেছিলেন যে, তা “সমস্ত জগতেও ফলবান্‌ ও বর্দ্ধিষ্ণু” হয়েছিল এবং তা “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত” হয়েছিল। (কলসীয় ১:৫, ৬, ২৩) আজকেও একই বিষয় ঘটে থাকে। যিহোবার সাক্ষিদের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, ঠিক প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের যেমনটা করা হয়েছিল। কিন্তু, আজকে রাজ্যের বার্তা প্রচারের কাজ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে এবং যারা এতে অংশ নিচ্ছে তাদের জন্য অনেক সুখ নিয়ে আসে।

ভাববাদীদের মতো তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও সুখী

১০, ১১. (ক) কীভাবে যিশু সুখের নবম কারণটার বিষয়ে আলোচনা শেষ করেছিলেন? (খ) ভাববাদীরা কেন তাড়িত হয়েছিল? কয়েকটা উদাহরণ দিন।

১০ যিশু সুখের নবম কারণটার বিষয়ে তাঁর আলোচনা এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে শেষ করেন: “আনন্দ করিও, . . . কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত।” (মথি ৫:১২) অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের সাবধান করার জন্য যিহোবা যে-ভাববাদীদের পাঠিয়েছিলেন, তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রায়ই তাড়না করা হয়েছিল। (যিরমিয় ৭:২৫, ২৬) প্রেরিত পৌল বিষয়টার সপক্ষে প্রমাণ দিয়েছিলেন এই কথাগুলো লেখার মাধ্যমে: ‘অধিক কি বলিব? ভাববাদিগণের বৃত্তান্ত বলিতে গেলে সময়ের অকুলান হইবে। বিশ্বাস দ্বারা ইহাঁরা বিদ্রূপের ও কশাঘাতের, অধিকন্তু বন্ধনের ও কারাগারের পরীক্ষা ভোগ করিলেন।’—ইব্রীয় ১১:৩২-৩৮.

১১ দুষ্ট রাজা আহাব এবং তার স্ত্রী ঈষেবলের রাজত্বের সময়ে যিহোবার অনেক ভাববাদীকে খড়্গ দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। (১ রাজাবলি ১৮:৪, ১৩; ১৯:১০) ভাববাদী যিরমিয়কে হাড়িকাঠে আটকে রাখা হয়েছিল এবং পরে কর্দমাক্ত কুয়োর মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। (যিরমিয় ২০:১, ২; ৩৮:৬) ভাববাদী দানিয়েলকে সিংহের গুহায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। (দানিয়েল ৬:১৬, ১৭) প্রাক্‌খ্রিস্টীয় যুগের এই সমস্ত ভাববাদীরা তাড়িত হয়েছিল কারণ তারা যিহোবার শুদ্ধ উপাসনার পক্ষ সমর্থন করেছিল। অনেক ভাববাদী যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা তাড়িত হয়েছিল। যিশু অধ্যাপক ও ফরীশীদের “তাহাদেরই সন্তান” বলে অভিহিত করেছিলেন, “যাহারা ভাববাদিগণকে বধ করিয়াছিল।”—মথি ২৩:৩১.

১২. যিহোবার সাক্ষি হিসেবে কেন আমরা প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মতো তাড়িত হওয়াকে বিশেষ সুযোগ বলে মনে করি?

১২ আজকে, আমরা যিহোবার সাক্ষি হিসেবে প্রায়ই তাড়িত হই কারণ আমরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের ক্ষেত্রে উদ্যোগী। আমাদের শত্রুরা “জোরপূর্ব্বক ধর্মান্তরিত” করার অভিযোগে আমাদের অভিযুক্ত করে কিন্তু আমরা জানি যে, যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকরা আমাদের আগেও একই সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। (যিরমিয় ১১:২১; ২০:৮, ১১) প্রাচীনকালে বিশ্বস্ত ভাববাদীরা যেকারণে কষ্টভোগ করেছিল, সেই একই কারণে কষ্টভোগ করাকে আমরা বিশেষ সুযোগ বলে মনে করি। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, যে ভাববাদীরা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে কথা বলিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে দুঃখভোগের ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত বলিয়া মান। দেখ, যাহারা স্থির রহিয়াছে, তাহাদিগকে আমরা ধন্য বলি।”—যাকোব ৫:১০, ১১.

সুখী হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলো

১৩. (ক) তাড়নার কারণে কেন আমরা নিরুৎসাহিত হই না? (খ) কী আমাদের দৃঢ় থাকতে সমর্থ করে এবং এটা কী প্রমাণ করে?

১৩ তাড়ানার কারণে আদৌ নিরুৎসাহিত হওয়ার পরিবর্তে আমরা এই ভেবে সান্ত্বনা পাই যে আমরা ভাববাদী, প্রাথমিক খ্রিস্টান এবং স্বয়ং খ্রিস্ট যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করছি। (১ পিতর ২:২১) আমরা শাস্ত্র থেকে গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করি, যেমন প্রেরিত পিতরের এই কথাগুলো থেকে: “প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না; তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের উপরে অবস্থিতি করিতেছেন।” (১ পিতর ৪:১২, ১৪) অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, তাড়নার মধ্যেও আমরা যে দৃঢ় থাকতে পারি সেটার একমাত্র কারণ হল, যিহোবার আত্মা আমাদের ওপরে রয়েছে এবং সেটা আমাদের শক্তিশালী করে। পবিত্র আত্মার সমর্থনই হল প্রমাণ যে, যিহোবার আশীর্বাদ আমাদের ওপর রয়েছে আর এটা আমাদের জন্য অনেক সুখ নিয়ে আসে।—গীতসংহিতা ৫:১২; ফিলিপীয় ১:২৭-২৯.

১৪. ধার্মিকতার জন্য তাড়িত হয়েও আনন্দ করার কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

১৪ ধার্মিকতার জন্য বিরোধিতা এবং তাড়না অন্য যে-একটা কারণে আমাদের সুখী করে, তা হল এটা প্রমাণ করে যে আমরা ঈশ্বরীয় ভক্তি অনুসারে সত্য খ্রিস্টান হিসেবে জীবনযাপন করছি। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীমথিয় ৩:১২) আমরা এই কথা ভেবে পরম সুখী হই যে, পরীক্ষার মধ্যে আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা শয়তানের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর প্রদান করে যে, যিহোবার সৃষ্ট সমস্ত প্রাণী স্বার্থের কারণে তাঁকে সেবা করে। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৩, ৪) আমরা আনন্দিত যে, যিহোবার ধার্মিক সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনে সামান্য হলেও আমরা অংশ নিচ্ছি।—হিতোপদেশ ২৭:১১.

পুরস্কারের জন্য উল্লাসিত হোন

১৫, ১৬. (ক) ‘আনন্দ করিবার ও উল্লাসিত হইবার’ কোন কারণ যিশু আমাদের জন্য প্রদান করেছিলেন? (খ) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্য স্বর্গে কোন পুরস্কার সঞ্চিত রয়েছে এবং তাদের “আরও মেষ” সহযোগীরাও কীভাবে পুরস্কৃত হবে?

১৫ প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মতো কলঙ্কিত এবং তাড়িত হয়েও আনন্দিত হওয়ার আরও কারণ যিশু প্রদান করেছেন। সুখের নবম কারণটা বলার শেষের দিকে যিশু বলেছিলেন: “আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।” (মথি ৫:১২) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) হ্যাঁ, ‘প্রচুর পুরস্কার’ হল জীবন আর এটা কোনো বেতন নয় যে, আমরা তা অর্জন করতে পারব। এটা হল এক উদার দান। যিশু বলেছিলেন যে, পুরস্কার “স্বর্গে” কারণ এটা যিহোবার কাছ থেকে আসে।

১৬ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা “জীবনমুকুট” অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে অমর জীবন লাভ করবে। (যাকোব ১:১২, ১৭) যাদের পার্থিব আশা রয়েছে অর্থাৎ ‘আরও মেষেরা’ পার্থিব পরমদেশে অনন্তজীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য সানন্দে অপেক্ষা করে আছে। (যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫) উভয় শ্রেণীর জন্যই “পুরস্কার” এমন নয় যে, তারা সেটা অর্জন করেছে। অভিষিক্ত এবং “আরও মেষ” উভয়ই যিহোবার “মহৎ অনুগ্রহ হেতু” তাদের পুরস্কার লাভ করে, যা প্রেরিত পৌলকে এই কথাগুলো বলতে পরিচালিত করেছিল: “ঈশ্বরের বর্ণনাতীত দানের নিমিত্ত তাঁহার ধন্যবাদ হউক।”—২ করিন্থীয় ৯:১৪, ১৫.

১৭. তাড়িত হয়েও কেন আমরা সুখী এবং রূপকভাবে “উল্লাসিত” হতে পারি?

১৭ খ্রিস্টানদের, যাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব শীঘ্রই সম্রাট নিরোর দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে তাড়িত হতে যাচ্ছিল, তাদের উদ্দেশে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “নানাবিধ ক্লেশেও শ্লাঘা করিতেছি, কারণ আমরা জানি, ক্লেশ ধৈর্য্যকে, ধৈর্য্য পরীক্ষাসিদ্ধতাকে এবং পরীক্ষাসিদ্ধতা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে; আর প্রত্যাশা লজ্জাজনক হয় না, যেহেতুক আমাদিগকে দত্ত পবিত্র আত্মা দ্বারা ঈশ্বরের প্রেম আমাদের হৃদয়ে সেচিত হইয়াছে।” তিনি আরও বলেছিলেন: “প্রত্যাশায় আনন্দ কর, ক্লেশে ধৈর্য্যশীল হও।” (রোমীয় ৫:৩-৫; ১২:১২) আমাদের প্রত্যাশা স্বর্গীয় অথবা পার্থিব যা-ই হোক না কেন, পরীক্ষার মধ্যে আমাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার, আমরা পাওয়ার যোগ্য এমন যেকোনো কিছুর চেয়ে অপরিমেয়ভাবে মহৎ। আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্টের অধীনে থেকে আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবার সেবা এবং তাঁর প্রশংসা করার জন্য চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশার বিষয়ে আমাদের আনন্দ অসীম। আমরা রূপকভাবে “উল্লাসিত” হই।

১৮. শেষ যতই এগিয়ে আসছে, জাতিগুলোর কাছ থেকে কী আশা করা যেতে পারে এবং যিহোবা কী করবেন?

১৮ কিছু দেশে যিহোবার সাক্ষিরা তাড়িত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এই বিধিব্যবস্থার শেষের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে যিশু সত্য খ্রিস্টানদের সাবধান করে দিয়েছিলেন: “আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ২৪:৯) যতই আমরা শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে জাতিগুলোর দ্বেষ বা ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে ততই উসকে দেবে। (যিহিষ্কেল ৩৮:১০-১২, ১৪-১৬) এটা যিহোবার পদক্ষেপ নেওয়ার সময়ের বিষয়ে সংকেত দেবে। “আমি আপনার মহত্ত্ব ও পবিত্রতা প্রকাশ করিব, বহুসংখ্যক জাতির সাক্ষাতে আপনার পরিচয় দিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW]। (যিহিষ্কেল ৩৮:২৩) এভাবে যিহোবা তাঁর মহান নামকে পবিত্রীকৃত করবেন এবং তাঁর লোকেদের তাড়না থেকে উদ্ধার করবেন। তাই, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে।”—যাকোব ১:১২.

১৯. “যিহোবার” মহা “দিনের” জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের কী করা উচিত?

১৯ “প্রভুর [“যিহোবার,” NW]” মহা ‘দিন’ যতই এগিয়ে আসছে আসুন আমরা আনন্দ করি, কারণ আমরা যিশুর নামের জন্য “অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত” হয়েছি। (২ পিতর ৩:১০-১৩; প্রেরিত ৫:৪১) যিহোবার ধার্মিক নতুন জগতে আমাদের পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করার সময়, প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মতো আমরা যেন “যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার” এবং তাঁর রাজ্য সরকারের বিষয় ‘উপদেশ দিতে এবং প্রচার করিতে ক্ষান্ত না’ হই।—প্রেরিত ৫:৪২; যাকোব ৫:১১.

পুনরালোচনা

• ধার্মিকতার জন্য কষ্টভোগ করার মানে কী?

• প্রাথমিক খ্রিস্টানদের ওপর তাড়না কোন প্রভাব ফেলেছিল?

• কেন বলা যেতে পারে যে, যিহোবার সাক্ষিরা প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মতো তাড়িত হচ্ছে?

• তাড়িত হয়েও কেন আমরা ‘আনন্দ করিতে, উল্লাসিত হইতে’ পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

“ধন্য তোমরা, যখন লোকে . . . তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে”

[সৌজন্যে]

কারাগারে একটা দল: Chicago Herald-American