সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সুখী দাসেরা

যিহোবার সুখী দাসেরা

যিহোবার সুখী দাসেরা

“ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।”মথি ৫:৩.

১. প্রকৃত সুখ কী এবং এটা কী প্রকাশ করে?

 সুখ হল যিহোবার লোকেদের এক মূল্যবান সম্পদ। গীতরচক দায়ূদ উল্লাসে বলে উঠেছিলেন: “ধন্য সেই জাতি, সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] যাহার ঈশ্বর।” (গীতসংহিতা ১৪৪:১৫) ধন্য বা সুখ হল কল্যাণবোধ। প্রগাঢ় সুখ—যা আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে গিয়ে পৌঁছায়—এই বিষয়টা জানার মাধ্যমে আসে যে, যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করেন। (হিতোপদেশ ১০:২২) এই ধরনের সুখ আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে এবং আমরা যে তাঁর ইচ্ছা পালন করছি, সেই জ্ঞানকে প্রকাশ করে। (গীতসংহিতা ১১২:১; ১১৯:১, ২) আগ্রহের বিষয় হল যে, যিশু এক এক করে নয়টা কারণ উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলোর জন্য আমরা সুখী বলে গণ্য হতে পারি। এই প্রবন্ধ এবং পরের প্রবন্ধে সুখী হওয়ার কারণগুলো পরীক্ষা করে দেখা, আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে ‘পরম ধন্য ঈশ্বর’ যিহোবাকে সেবা করি, তা হলে আমরা কতটা সুখী হতে পারব।—১ তীমথিয় ১:১১.

আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে অবগত থাকা

২. কোন সময় যিশু সুখের বিষয়ে বলেছিলেন এবং তাঁর প্রারম্ভিক উক্তি কী ছিল?

সাধারণ কাল ৩১ সালে, যিশু সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত উপদেশগুলোর মধ্যে একটা দিয়েছিলেন। এটিকে বলা হয় পর্বতেদত্ত উপদেশ কারণ পাহাড়ের এক পাশে বসে যিশু এই উপদেশ দিয়েছিলেন, যেখান থেকে গালীল সমুদ্র দেখা যায়। মথির সুসমাচার বর্ণনা করে: “[যিশু] বিস্তর লোক দেখিয়া পর্ব্বতে উঠিলেন; আর তিনি বসিলে পর তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহার নিকটে আসিলেন। তখন তিনি মুখ খুলিয়া তাঁহাদিগকে এই উপদেশ দিতে লাগিলেন ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” * (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ৫:১-৩) টুডেজ ইংলিশ ভারসন বলে: “সুখী তারা, যারা জানে যে আধ্যাত্মিকভাবে তারা দরিদ্র।”

৩. কীভাবে এক নম্র মনোভাব আমাদের সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখে?

পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু উল্লেখ করেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি যদি তার আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে অবগত থাকেন, তা হলে তিনি অনেক বেশি সুখী হয়ে থাকেন। নম্র খ্রিস্টানরা তাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত থাকায় খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে যিহোবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। (১ যোহন ১:৯) এভাবে তারা মনের শান্তি এবং প্রকৃত সুখ লাভ করে। “ধন্য সেই, যাহার অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহার পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে।”—গীতসংহিতা ৩২:১; ১১৯:১৬৫.

৪. (ক) কোন কোন উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা নিজেদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে অবগত আছি? (খ) আমরা যখন আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন থাকি, তখন কী আমাদের সুখকে আরও বৃদ্ধি করে?

আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে অবগত থাকা আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়তে, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে “উপযুক্ত সময়ে” বিতরিত আধ্যাত্মিক খাবার থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করতে এবং নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগ দিতে প্রেরণা দেয়। (মথি ২৪:৪৫; গীতসংহিতা ১:১, ২; ১১৯:১১১; ইব্রীয় ১০:২৫) প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম, অন্যদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে আমাদের অবগত করে এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে উদ্যোগী হতে প্রণোদিত করে। (মার্ক ১৩:১০; রোমীয় ১:১৪-১৬) অন্যদের সঙ্গে বাইবেলের সত্যগুলো ভাগ করে নেওয়া আমাদের সুখী করে। (প্রেরিত ২০:২০, ৩৫) আমাদের সুখ আরও প্রগাঢ় হয়, যখন আমরা রাজ্যের অপূর্ব আশা এবং রাজ্য যে-আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করি। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ জন্য রাজ্যের আশার অর্থ হল, খ্রিস্টের রাজ্য সরকারের অংশী হিসেবে স্বর্গে অমর জীবন লাভ করা। (লূক ১২:৩২; ১ করিন্থীয় ১৫:৫০, ৫৪) ‘আরও মেষের’ জন্য এর অর্থ হল, সেই রাজ্য সরকারের অধীনে পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন।—যোহন ১০:১৬; গীতসংহিতা ৩৭:১১; মথি ২৫:৩৪, ৪৬.

শোকার্তরা যেভাবে সুখী হতে পারে

৫. (ক) “যাহারা শোক করে,” এই অভিব্যক্তিটির অর্থ কী? (খ) কীভাবে এই ধরনের শোকার্ত ব্যক্তিরা সান্ত্বনা পায়?

সুখী হওয়ার কারণের বিষয়ে পরবর্তী যে-কথাগুলো যিশু বলেছিলেন, সেগুলোকে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয়। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে।” (মথি ৫:৪) কীভাবে একজন ব্যক্তি একই সময় শোক করতে ও সুখী হতে পারে? যিশুর উক্তির অর্থ বুঝতে হলে আমাদের বিবেচনা করতে হবে যে, তিনি কোন ধরনের শোকের বিষয়ে বলছিলেন। শিষ্য যাকোব ব্যাখ্যা করেন যে, আমাদের নিজেদের পাপপূর্ণ অবস্থাই শোক করার একটা কারণ হওয়া উচিত। তিনি লিখেছিলেন: “হে পাপিগণ, হস্ত শুচি কর; হে দ্বিমনা লোক সকল, হৃদয় বিশুদ্ধ কর। তাপিত ও শোকার্ত্ত হও, এবং রোদন কর; তোমাদের হাস্য শোকে, এবং আনন্দ বিষাদে পরিণত হউক। প্রভুর [“যিহোবার,” NW] সাক্ষাতে নত হও, তাহাতে তিনি তোমাদিগকে উন্নত করিবেন।” (যাকোব ৪:৮-১০) যারা তাদের পাপপূর্ণ অবস্থার কারণে সত্যিই দুঃখার্ত তারা সান্ত্বনা পায়, যখন তারা শেখে যে তাদের পাপের ক্ষমা হতে পারে যদি তারা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখিয়ে চলে এবং যিহোবার ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে প্রকৃত অনুতাপ প্রদর্শন করে। (যোহন ৩:১৬; ২ করিন্থীয় ৭:৯, ১০) এভাবে, যিহোবার সঙ্গে তাদের এক মূল্যবান সম্পর্ক হতে পারে এবং তারা তাঁকে সেবা ও তাঁর প্রশংসা করার জন্য চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রাখতে পারে। এটা তাদের মনে প্রগাঢ় সুখ এনে দেয়।—রোমীয় ৪:৭, ৮.

৬. কোন অর্থে কেউ কেউ শোক করে এবং কীভাবে তারা সান্ত্বনা পায়?

যিশুর উক্তির অন্তর্ভুক্ত সেই সমস্ত ব্যক্তিরাও, যারা পৃথিবীতে বিদ্যমান ঘৃণার্হ অবস্থার কারণে শোক করে। যিশাইয় ৬১:১, ২ পদের ভবিষ্যদ্বাণী যিশু নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন, যেখানে বলা আছে: “প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; . . . যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি।” সেই দায়িত্ব এখনও পৃথিবীতে বিদ্যমান অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্যও প্রযোজ্য, যারা তাদের সহযোগী ‘আরও মেষের’ সাহায্যে তা পালন করে থাকে। তারা সকলে “তাহার [ধর্মভ্রষ্ট যিরূশালেম, যা খ্রিস্টীয়জগৎকে চিত্রিত করে] মধ্যে কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের বিষয়ে যে সকল লোক দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়, তাহাদের প্রত্যেকের” কপালে রূপকভাবে চিহ্ন দেওয়ার কাজে রত। (যিহিষ্কেল ৯:৪) এই ধরনের শোকার্ত ব্যক্তিরা ‘রাজ্যের সুসমাচারের’ মাধ্যমে সান্ত্বনা পায়। (মথি ২৪:১৪) তারা এই বিষয়টা জেনে সুখী যে, শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থার জায়গায় খুব শীঘ্রই যিহোবার ধার্মিক নতুন জগৎ আসবে।

সুখী যারা মৃদুশীল

৭. “মৃদুশীল” শব্দটি দ্বারা কী বোঝায় না?

যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশ এই কথাগুলোর মাধ্যমে চালিয়ে যান: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) মৃদুশীল ব্যক্তিকে কখনও কখনও দুর্বল চরিত্রের বলে মনে করা হয়। কিন্তু, আসলে তা নয়। “মৃদুশীল” হিসেবে অনুবাদিত শব্দটির অর্থ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একজন বাইবেল পণ্ডিত লিখেছিলেন: “একজন [মৃদুশীল] ব্যক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে, তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার সমস্তকিছুর ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এটা কোনো মেরুদণ্ডহীন কোমলতা, আবেগপ্রবণ অনুরাগ, মুখ বুজে সহ্য করা নয়। এটা এমন এক শক্তি, যা নিয়ন্ত্রণের অধীন।” যিশু নিজের বিষয়ে বলেছিলেন: “আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত।” (মথি ১১:২৯) অথচ, যিশু ধার্মিক মানগুলোর পক্ষ সমর্থনের ক্ষেত্রে সাহসী ছিলেন।—মথি ২১:১২, ১৩; মথি ২৩:১৩-৩৩.

৮. কীসের সঙ্গে মৃদুশীলতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেন আমাদের এই গুণটা দরকার?

তাই, মৃদুশীল শব্দটি ইন্দ্রিয়দমনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বস্তুত, প্রেরিত পৌল যখন ‘আত্মার ফলের’ বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, তখন মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমন শব্দগুলোকে একত্রে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) মৃদুশীলতা গুণটি পবিত্র আত্মার সাহায্যে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে। এটা এমন এক খ্রিস্টীয় গুণ, যা মণ্ডলীর বাইরে এবং ভিতরের লোকেদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর।”—কলসীয় ৩:১২, ১৩.

৯. (ক) কেন মৃদুশীল হওয়া কেবল অন্য লোকেদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়? (খ) কীভাবে মৃদুশীল ব্যক্তিরা “দেশের অধিকারী” হয়?

কিন্তু, মৃদুশীলতা কেবল অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত থাকার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা মৃদুশীল। এই ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হলেন যিশু খ্রিস্ট, যিনি পৃথিবীতে থাকাকালীন মৃদুশীলতা এবং তাঁর পিতার ইচ্ছার প্রতি পুরোপুরি বশ্যতা দেখিয়েছিলেন। (যোহন ৫:১৯, ৩০) সর্বপ্রথমে যিশুই দেশের অধিকারী বা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হন, কারণ তিনি হলেন এর নিযুক্ত রাজা। (গীতসংহিতা ২:৬-৮; দানিয়েল ৭:১৩, ১৪) এই উত্তরাধিকার তিনি ১,৪৪,০০০ জন ‘সহদায়াদের’ সঙ্গে ভাগ করে নেন, যাদেরকে ‘পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবার’ জন্য “মনুষ্যদের মধ্য হইতে” বেছে নেওয়া হয়েছে। (রোমীয় ৮:১৭; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ১৪:১, ৩, ৪; দানিয়েল ৭:২৭) খ্রিস্ট এবং তাঁর সহযোগী শাসকরা লক্ষ লক্ষ মেষতুল্য নারী ও পুরুষকে পরিচালনা করবেন, যাদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এই গীতের আনন্দিত পরিপূর্ণতা ঘটবে: “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১; মথি ২৫:৩৩, ৩৪, ৪৬.

সুখী যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত

১০. একটা উপায় কী, যেটার মাধ্যমে “ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত” ব্যক্তিদের পরিতৃপ্ত করা যেতে পারে?

১০ সেই গালীলীয় পর্বতের পাশে বসে কথা বলার সময়ে যিশু সুখী হওয়ার পরবর্তী যে-কারণটা উল্লেখ করেছিলেন, সেটা ছিল: “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, কারণ তাহারা পরিতৃপ্ত হইবে।” (মথি ৫:৬) খ্রিস্টানদের জন্য যিহোবা ধার্মিকতার বিষয়ে মান স্থাপন করেছেন। তাই, যারা ধার্মিকতার জন্য সত্যিই ক্ষুধিত ও তৃষিত, তারা মূলত ঐশিক নির্দেশনার জন্যই ক্ষুধিত এবং তৃষিত। এই ধরনের ব্যক্তিরা তাদের পাপ এবং অসিদ্ধতা সম্বন্ধে খুব ভালভাবে অবগত আছে এবং যিহোবার সামনে এক অনুমোদনযোগ্য মান লাভ করার বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা করে। তারা কত সুখীই না হয়, যখন তারা ঈশ্বরের বাক্য থেকে শেখে যে, তারা যদি অনুতপ্ত হয় এবং খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে ক্ষমা চায়, তা হলে তারা ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক মান লাভ করার মতো এক অবস্থানে থাকবে!—প্রেরিত ২:৩৮; ১০:৪৩; ১৩:৩৮, ৩৯; রোমীয় ৫:১৯.

১১, ১২. (ক) কীভাবে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ধার্মিকতায় উপনীত হয়? (খ) কীভাবে অভিষিক্তদের সহযোগীদের ধার্মিকতার জন্য তৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা হয়?

১১ যিশু বলেছিলেন যে, এই ধরনের ব্যক্তিরা সুখী হবে কারণ তারা “পরিতৃপ্ত হইবে।” (মথি ৫:৬) স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে “রাজত্ব” করার জন্য আহূত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জীবনের জন্য বা ‘জীবনদায়ক ধার্ম্মিক’ হিসেবে গণ্য করা হয়। (রোমীয় ৫:১, ৯, ১৬-১৮) যিহোবা তাদেরকে আত্মিক পুত্র হিসেবে দত্তক নেন। তারা খ্রিস্টের সহদায়াদ হয়ে ওঠে, তাঁর স্বর্গীয় রাজ্য সরকারে রাজা ও যাজক হওয়ার জন্য আহূত হয়।—যোহন ৩:৩; ১ পিতর ২:৯.

১২ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সহযোগীদের এখনও জীবনের জন্য ধার্মিক হিসেবে গণ্য করা হয়নি। কিন্তু, খ্রিস্টের পাতিত রক্তের ওপর তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে তারা যিহোবার দ্বারা কিছুটা হলেও ধার্মিক গণিত হয়েছে। (যাকোব ২:২২-২৫; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) “মহাক্লেশের” সময়ে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের যিহোবার বন্ধু হিসেবে ধার্মিক গণ্য করা হয়। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪) এ ছাড়া, ধার্মিকতার জন্য তাদের তৃষ্ণা আরও পরিতৃপ্ত করা হবে, যখন “নূতন আকাশমণ্ডলের” অধীনে তারা নতুন পৃথিবীর অংশ হয়ে উঠবে, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।”—২ পিতর ৩:১৩; গীতসংহিতা ৩৭:২৯.

সুখী যারা করুণাময়

১৩, ১৪. কোন ব্যবহারিক উপায়গুলোতে আমাদের নিজেদের করুণাময় বলে দেখানো উচিত এবং এতে আমাদের কোন উপকার আসবে?

১৩ পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু আরও বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা দয়াশীল, কারণ তাহারা দয়া পাইবে।” (মথি ৫:৭) আইন সংক্রান্ত অর্থে, দয়া বা করুণা একজন বিচারকের ক্ষমাশীলতাকে বুঝিয়ে থাকে, যিনি একজন অপরাধীকে আইনের অধীনে অনুমোদিত পুরো শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু, বাইবেলে ব্যবহৃত যে-মূল শব্দগুলোকে “করুণা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সদয় বিবেচনা অথবা মায়ামমতার অভিব্যক্তিকে বোঝায়, যা সেই ব্যক্তিদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে, যারা কষ্টের মধ্যে রয়েছে। তাই যারা করুণাময়, তারা দেখায় যে তারা সমবেদনাশীল। প্রতিবেশীসুলভ শমরীয় ব্যক্তির বিষয়ে যিশুর দৃষ্টান্তটি এমন এক ব্যক্তির উত্তম উদাহরণ, যিনি সেই ব্যক্তির প্রতি করুণা বা ‘দয়া করিয়াছিল,’ যার প্রয়োজন ছিল।—লূক ১০:২৯-৩৭.

১৪ করুণাময় হওয়ার মাধ্যমে যে-সুখ আসে, তা লাভ করতে চাইলে আমাদের তাদের প্রতি দয়ার ইতিবাচক কাজগুলো করতে হবে, যাদের প্রয়োজন রয়েছে। (গালাতীয় ৬:১০) যিশু যে-লোকেদের দেখেছিলেন, তাদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করেছিলেন। “যীশু . . . তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা পালক-বিহীন মেষপালের ন্যায় ছিল; আর তিনি তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন।” (মার্ক ৬:৩৪) যিশু উপলব্ধি করেছিলেন যে, মানবজাতির সর্বপ্রধান চাহিদা ছিল আধ্যাত্মিক। অন্যদের যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন—‘রাজ্যের সুসমাচার’—তা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে আমরাও নিজেদের সমবেদনাশীল এবং করুণাময় বলে দেখাতে পারি। (মথি ২৪:১৪) এ ছাড়া, আমরা বয়স্ক সহখ্রিস্টান, বিধবা এবং অনাথদের কার্যকারী সাহায্য দিতে এবং ‘ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা করিতে’ পারি। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪; হিতোপদেশ ১২:২৫; যাকোব ১:২৭) এটা কেবল আমাদের জন্য সুখই নিয়ে আসবে না কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবার করুণা পেতেও সাহায্য করবে।—প্রেরিত ২০:৩৫; যাকোব ২:১৩.

হৃদয়ে শুদ্ধ এবং শান্তিপ্রবণ

১৫. কীভাবে আমরা হৃদয়ে শুদ্ধ এবং শান্তিপ্রবণ হতে পারি?

১৫ যিশু এরপর সুখী হওয়ার ষষ্ঠ ও সপ্তম কারণের বিষয়ে এভাবে উল্লেখ করেছিলেন: “ধন্য যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ, কারণ তাহারা ঈশ্বরের দর্শন পাইবে। ধন্য যাহারা মিলন করিয়া দেয়, কারণ তাহারা ঈশ্বরের পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে।” (মথি ৫:৮, ৯) নির্মল অন্তকরণ অথবা শুদ্ধ হৃদয় কেবল নৈতিকভাবেই শুচি নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবেও অকলুষিত এবং যিহোবার প্রতি ভক্তিতে একাগ্র। (১ বংশাবলি ২৮:৯; গীতসংহিতা ৮৬:১১) মূল ভাষায় যে-শব্দকে শান্তিপ্রবণ অথবা “মিলন করিয়া দেয়,” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির আক্ষরিক অর্থ হল “শান্তিস্থাপনকারী।” শান্তিপ্রবণ ব্যক্তি তাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে এবং যতদূর সম্ভব তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করে। (রোমীয় ১২:১৭-২১) তারা ‘শান্তির চেষ্টা করে, ও তাহার অনুধাবন করে।’—১ পিতর ৩:১১.

১৬, ১৭. (ক) অভিষিক্তদের কেন “ঈশ্বরের পুত্ত্র” বলা হয় এবং কীভাবে তারা “ঈশ্বরের দর্শন পাইবে”? (খ) ‘আরও মেষেরা’ কীভাবে “ঈশ্বরের দর্শন” পায়? (গ) কীভাবে এবং কখন, পূর্ণ অর্থে ‘আরও মেষেরা’ “ঈশ্বরের পুত্ত্র” হবে?

১৬ হৃদয়ে শুদ্ধ এমন শান্তিপ্রবণ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে যে, তারা “ঈশ্বরের পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে” এবং “ঈশ্বরের দর্শন পাইবে।” অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা আত্মায়জাত হয় এবং পৃথিবীতে থাকাকালীনই যিহোবা তাদের ‘পুত্ত্র’ হিসবে দত্তক নেন। স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে থাকার জন্য তারা যখন পুনরুত্থিত হয়, তখন তারা যিহোবার উপস্থিতিতে সেবা করে এবং প্রকৃতপক্ষে তাঁকে দেখে থাকে।—১ যোহন ৩:১, ২; প্রকাশিত বাক্য ৪:৯-১১.

১৭ শান্তিপ্রবণ ‘আরও মেষেরা’ উত্তম মেষপালক খ্রিস্ট যিশু, যিনি তাদের “সনাতন পিতা” হয়ে ওঠেন, তাঁর অধীনে যিহোবার সেবা করে। (যোহন ১০:১৪, ১৬; যিশাইয় ৯:৬) খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্বের পরে যারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হবে, তাদেরকে যিহোবার পার্থিব পুত্র হিসেবে দত্তক নেওয়া হবে এবং তারা “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” (রোমীয় ৮:২১; প্রকাশিত বাক্য ২০:৭, ৯) এর জন্য প্রতীক্ষা করার সময়, তারা যিহোবাকে তাদের পিতা হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, যেহেতু তারা তাঁর কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে এবং তাঁকে তাদের জীবনদাতা হিসেবে স্বীকার করেছে। (যিশাইয় ৬৪:৮) প্রাচীনকালের ইয়োব ও মোশির মতো তারা বিশ্বাসের চোখ দিয়ে “ঈশ্বরের দর্শন” পেতে পারে। (ইয়োব ৪২:৫; ইব্রীয় ১১:২৭) ‘তাহাদের হৃদয়ের চক্ষু’ দিয়ে এবং ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে তারা যিহোবার অপূর্ব গুণাবলি হৃদয়ঙ্গম করে এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে।—ইফিষীয় ১:১৮; রোমীয় ১:১৯, ২০; ৩ যোহন ১১.

১৮. যিশুর দ্বারা উল্লেখিত প্রথম সাতটি সুখের কারণ অনুসারে কারা আজকে প্রকৃত সুখ খুঁজে পায়?

১৮ আমরা দেখেছি যে, যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, যারা শোক করে, যারা মৃদুশীল, যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, করুণাময়, হৃদয়ে শুদ্ধ এবং শান্তিপ্রবণ তারা যিহোবার সেবায় সুখ লাভ করে। কিন্তু, এই ধরনের ব্যক্তিরা সবসময় বিরোধিতা এমনকি তাড়নার মুখোমুখি হয়। এটা কি তাদের সুখকে বিনষ্ট করে দেয়? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্ন বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকা]

^ নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল এবং অন্যান্য অনুবাদ যেমন, দ্যা যিরূশালেম বাইবেল এবং টুডেজ ইংলিশ ভারসন “ধন্য” শব্দটি ব্যবহার করার পরিবর্তে আরও সঠিক শব্দ “সুখী” ব্যবহার করেছে। তাই, এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে আমরা “ধন্য” শব্দটির সমার্থ হিসেবে “সুখী” শব্দটি আলোচনা করব।

পুনরালোচনা

• যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন, তারা কোন সুখ লাভ করে?

• যারা শোকার্ত তারা কোন কোন উপায়ে সান্ত্বনা পায়?

• কীভাবে আমরা মৃদুশীলতা দেখাই?

• কেন আমাদের করুণাময়, হৃদয়ে শুদ্ধ এবং শান্তিপ্রবণ হওয়া উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

“ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন”

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

“ধন্য যাহারা দয়াশীল”

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

“ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত”