সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান?

আপনি কি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান?

আপনি কি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান?

 “আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না,” জাপানের একজন বয়স্কা মহিলা বলেছিলেন। “কিন্তু আমার কষ্ট হয় যে, এই ফুলগুলো ছেড়ে আমাকে যেতে হবে।” একজন খ্রিস্টান পরিচারক যিনি তার বাড়িতে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন, তিনি মন্তব্যটি বুঝতে পেরেছিলেন কারণ সেই মহিলার এক সুন্দর বাগান ছিল। অনেকে যারা বলে থাকে যে, তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না তারা প্রকৃতই সৃষ্টির চমৎকার কাজগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায় এবং আসলে চিরকাল বেঁচে থাকতে চায়।

চিরকাল বেঁচে থাকা? অনেকে এই ধরনের চিন্তাকে অগ্রাহ্য করবে। কেউ কেউ হয়তো এও বলতে পারে যে, তাদের চিরকাল বেঁচে থাকার কোনো আগ্রহই নেই। কেন একজন ব্যক্তি এমনটা ভেবে থাকেন?

অনন্তজীবন—বিরক্তিকর?

কেউ কেউ চিন্তা করে থাকে যে, চিরকাল বেঁচে থাকা হবে বিরক্তিকর। তারা হয়তো অবসরপ্রাপ্ত এমন অনেক লোকের একঘেঁয়ে জীবনধারার প্রতি ইঙ্গিত করতে পারে, যাদের বসে বসে টেলিভিশন দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। আপনি যদি তা-ই মনে করে থাকেন, তা হলে জ্যোতির্বিজ্ঞানী রবার্ট জ্যাস্ট্রোকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, অনন্তজীবন এক আশীর্বাদ নাকি এক অভিশাপ হবে, তখন তিনি যা বলেছিলেন সেটা বিবেচনা করুন। জ্যাস্ট্রো উত্তর দিয়েছিলেন: “যাদের কৌতূহলী মন এবং শেখার এক চিরস্থায়ী ক্ষুধা রয়েছে, তাদের জন্য এটা এক আশীর্বাদ। জ্ঞান অর্জন করার জন্য তাদের সামনে চিরকাল রয়েছে, এই চিন্তা তাদের জন্য খুবই সান্ত্বনাদায়ক হবে। কিন্তু অন্যান্য যে-ব্যক্তিরা মনে করে যে, শেখার মতো সমস্তকিছুই তারা শিখে ফেলেছে এবং যারা বুঝতে চায় না, তাদের জন্য এটা এক ভয়ানক অভিশাপ। তাদের সময় ব্যয় করার কোনো উপায় থাকবে না।”

আপনি অনন্তজীবনকে বিরক্তিকর হিসেবে দেখবেন নাকি দেখবেন না, তা অনেকটা আপনার মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। আপনার যদি “কৌতূহলী মন এবং শেখার এক চিরস্থায়ী ক্ষুধা” থাকে, তা হলে শিল্পকলা, সংগীত, স্থাপত্যশিল্প, বাগান করা অথবা আপনার আগ্রহের এমন যেকোনো উপযুক্ত শখের ক্ষেত্রে আপনি যা সম্পাদন করতে পারবেন, তা চিন্তা করে দেখুন। পৃথিবীতে অনন্তকালীন জীবন, কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনার কার্য ক্ষমতাকে গড়ে তোলার জন্য চমৎকার প্রত্যাশা জোগাবে।

চিরকালের জন্য ভালবাসা দেখাতে ও তা লাভ করতে সক্ষম হওয়া অনন্তজীবনকে প্রকৃতই সন্তুষ্টিকর করে তুলবে। ভালবাসা দেখানোর ক্ষমতা দিয়ে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আর আমরা উন্নতিলাভ করি যখন আমরা ভালবাসা পাই। প্রকৃত ভালবাসা দেখানো গভীর সন্তুষ্টি নিয়ে আসে, যা সময়ের ধারায় ফুরিয়ে যায় না। চিরকাল বেঁচে থাকা শুধু সহমানবদের প্রতিই নয় বরং বিশেষভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলার এক চিরস্থায়ী সুযোগ প্রদান করবে। “যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে,” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “সেই তাঁহার জানা লোক।” (১ করিন্থীয় ৮:৩) নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমকে জানা ও তাঁর কাছে পরিচিত থাকা—কী এক চমৎকার সুযোগ! এ ছাড়া, আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে শেখার কোনো শেষ নেই। তা হলে, কীভাবে অনন্তজীবন বিরক্তিকর ও ফলহীন হতে পারে?

জীবন—ক্ষণকালীন ও অমূল্য

কেউ কেউ মনে করে যে, জীবন সংক্ষিপ্ত বলেই এটি এত অমূল্য। তারা হয়তো জীবনকে সোনার সঙ্গে তুলনা করতে পারে, যেটা কেবল পরিমিত মাত্রায় পাওয়া যায়। তারা বলে যে, সোনা যদি সর্বত্র পাওয়া যেত, তা হলে এটার মূল্য কমে যেত। তা সত্ত্বেও, সোনা তখনও অপূর্ব বস্তু হয়ে থাকত। নিশ্চিতভাবে, জীবনের ক্ষেত্রেও তা সত্য।

অনন্তকালীন জীবন উপভোগ করাকে আমরা হয়তো অফুরন্ত বায়ু সরবরাহের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। খারাপ হয়ে পড়া ডুবোজাহাজের নাবিকরা বায়ুকে বিশেষ করে মূল্যবান বলে বিবেচনা করবে। আপনি কি মনে করেন যে, উদ্ধার পাওয়ার পর তারা পুনরায় অফুরন্ত বায়ু উপভোগ করতে পারছে বলে অকৃতজ্ঞভাবে অভিযোগ করবে? নিশ্চয়ই নয়!

এই নাবিকদের মতো আমরাও উদ্ধার পেতে পারি, তবে অনন্তজীবনের আরও মহান এক প্রত্যাশা নিয়ে। “পাপের বেতন মৃত্যু;” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন “কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) যিশুর মুক্তির মূল্যের দ্বারা ঈশ্বর মানব অসিদ্ধতা ও মৃত্যুকে সরিয়ে ফেলবেন এবং বাধ্য মানবজাতিকে অনন্তজীবনের অনুগ্রহ দান করবেন। এই প্রেমময় ব্যবস্থার জন্য আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত!

আপনার প্রিয়জনদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?

কিছু লোক হয়তো ভাবতে পারে: ‘আমার প্রিয়জনদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? পৃথিবীতে অনন্তকালীন জীবন আমার কাছে কোনো অর্থই রাখবে না, যদি না তারা আমার সঙ্গে থাকে।’ সম্ভবত আপনি বাইবেল থেকে জ্ঞান নিয়েছেন এবং এক পার্থিব পরমদেশে অনন্তজীবন উপভোগ করার সম্ভাবনার বিষয়ে শিখেছেন। (লূক ২৩:৪৩; যোহন ৩:১৬; ১৭:৩) স্বাভাবিকভাবে, আপনি চান আপনার নিজ পরিবারের সদস্য, অন্যান্য প্রিয়জন ও প্রিয় বন্ধুবান্ধবরা সেখানে থাকুক, যাতে তারাও একই আনন্দ উপভোগ করে, যা আপনি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন ধার্মিক জগতে উপভোগ করার আশা রাখেন।—২ পিতর ৩:১৩.

কিন্তু, আপনার বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনেরা যদি এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ না দেখায়, তা হলে কী? সেই বিষয়টা যেন আপনাকে নিরুৎসাহিত না করে। সঠিক শাস্ত্রীয় জ্ঞান অর্জন করে চলুন ও সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করুন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কারণ, হে নারি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্বামীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? অথবা হে স্বামী, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে কি না?” (১ করিন্থীয় ৭:১৬) লোকেরা পরিবর্তন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একসময়ে খ্রিস্টধর্মের বিরোধিতা করতেন এমন একজন ব্যক্তি পরিবর্তিত হয়েছিলেন এবং পরে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হয়েছিলেন। তিনি বলেন: “আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমার প্রিয় পরিবার আমার সমস্ত বিরোধিতার মধ্যে বিশ্বস্তভাবে তাদের বাইবেলের নীতিগুলোর প্রতি অনুগত ছিল।”

ঈশ্বর আপনার ও আপনার প্রিয়জনদের জীবন নিয়ে অনেক চিন্তা করেন। সত্যিই, “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) যিহোবা ঈশ্বর চান যেন আপনি ও আপনার প্রিয়জনেরা চিরকাল বেঁচে থাকে। তাঁর প্রেম অসিদ্ধ মানুষের প্রেমের চেয়ে আরও মহান। (যিশাইয় ৪৯:১৫) তাই, ঈশ্বরের সঙ্গে এক ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন না কেন? তা হলে, আপনিও আপনার প্রিয়জনদের একই কাজ করতে সাহায্য করার জন্য সক্ষম হবেন। এমনকি যদিও তারা চিরকাল বেঁচে থাকার আশায় এখনও বিশ্বাস করেনি, তবুও তারা আপনাকে বাইবেলের সঠিক জ্ঞানের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে দেখে হয়তো তাদের মনোভাব পালটাতে পারে।

সেই প্রিয়জনদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের হয়তো আপনি মৃত্যুতে হারিয়েছেন? কোটি কোটি মানুষ যারা মারা গিয়েছে, বাইবেল তাদের জন্য পুনরুত্থানের—মৃত্যু থেকে জেগে ওঠার ও পৃথিবীতে পরমদেশে জীবনযাপন করার—এক চমৎকার আশা দেয়। যিশু খ্রিস্ট প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) এমনকি যারা ঈশ্বরকে না জেনেই মারা গিয়েছে, তারাও জীবন ফিরে পাবে কারণ বাইবেল বলে: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) এই লোকেদের জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য অভ্যর্থনা জানানো কতই না আনন্দের এক বিষয় হবে!

অনন্তজীবন—এক আনন্দপূর্ণ প্রত্যাশা

এই জগতে সব ধরনের সমস্যা সত্ত্বেও, বর্তমানে যদি আপনি সুখ ও সন্তুষ্টি খুঁজে পেতে পারেন, তা হলে নিশ্চিতভাবে এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকালের জীবন আপনি উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিদের একজন যখন অনন্তজীবন যে-আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে সেই সম্বন্ধে উল্লেখ করেন, তখন একজন মহিলা বলেছিলেন: “আমি চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই না। ৭০ বা ৮০ বছরের এই জীবন আমার জন্য যথেষ্ট।” সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত একজন খ্রিস্টান প্রাচীন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে, আপনি মারা গেলে আপনার ছেলেমেয়েরা কেমন বোধ করবে?” ছেলেমেয়েরা তাদের মাকে হারানোর ফলে যে-দুঃখ ভোগ করবে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। “প্রথমবারের মতো আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমি কত স্বার্থপর,” তিনি স্বীকার করেন “আর আমি বুঝতে পেরেছি যে, অনন্তজীবন এক স্বার্থপর আশা নয় কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত অন্যের জন্য বেঁচে থাকা।”

কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, তারা বেঁচে থাকুক অথবা মারা যাক, তাতে কারও আসে যায় না। কিন্তু, আমাদের জীবনদাতার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যিনি বলেন: “আমার জীবনের দিব্য, দুষ্ট লোকের মরণে আমার সন্তোষ নাই; বরং দুষ্ট লোক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, [ইহাতেই আমার সন্তোষ]।” (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) যেহেতু ঈশ্বর এমনকি দুষ্টদের জীবন নিয়ে এত চিন্তিত, তা হলে নিশ্চিতভাবে তিনি তাদের জন্যও গভীরভাবে চিন্তা করেন, যারা তাঁকে ভালবাসে।

যিহোবার প্রেমময় চিন্তার প্রতি প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের আস্থা ছিল। দায়ূদ একবার বলেছিলেন: “আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন।” (গীতসংহিতা ২৭:১০) দায়ূদ সম্ভবত তার প্রতি তার বাবামার ভালবাসা সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু এমনকি তার বাবামা—তার সবচেয়ে আপনজনেরা—তাকে ছেড়ে গেলেও, তিনি জানতেন যে, ঈশ্বর তাকে কখনও ছেড়ে দেবেন না। প্রেম ও চিন্তার কারণে যিহোবা আমাদেরকে অনন্তজীবন এবং তাঁর সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিচ্ছেন। (যাকোব ২:২৩) এই চমৎকার উপহারগুলোকে কি আমাদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত নয়?

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা চিরকাল বেঁচে থাকাকে উপভোগ্য করে তুলবে