সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সরলদের তাম্বু সতেজ হইবে”

“সরলদের তাম্বু সতেজ হইবে”

“সরলদের তাম্বু সতেজ হইবে”

 যখন হর্‌মাগিদোনের ঝড় শুরু হবে ও শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ হবে, তখন “দুষ্টদের বাটী বিনষ্ট হইবে।” “সরলদের তাম্বু” সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বরের সৃষ্ট নতুন জগতে এগুলো সমৃদ্ধ বা “সতেজ হইবে।”—হিতোপদেশ ১৪:১১.

তবে, যতদিন পর্যন্ত না “দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, বিশ্বাসঘাতকেরা তথা হইতে উন্মূলিত হইবে” ততদিন পর্যন্ত সিদ্ধ বা নির্দোষ ব্যক্তিদের তাদের সঙ্গে একত্রে থাকতে হবে। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) এই পরিস্থিতিগুলোতেও কি সরল ব্যক্তিরা সমৃদ্ধ হতে পারবে? বাইবেলের হিতোপদেশ বইয়ের ১৪ অধ্যায়ের ১ থেকে ১১ পদ দেখায় যে, প্রজ্ঞাকে আমাদের কথাবার্তা ও কাজগুলোতে পরিচালনা করার সুযোগ দিয়ে আমরা এমনকি এখনও কিছু মাত্রায় সমৃদ্ধি ও স্থিরতা পেতে পারি।

প্রজ্ঞা যখন এক গৃহ গাঁথে

পরিবারের মঙ্গলের ওপর স্ত্রীর প্রভাব সম্বন্ধে মন্তব্য করার সময় প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেন: “স্ত্রীলোকদের বিজ্ঞতা তাহাদের গৃহ গাঁথে; কিন্তু অজ্ঞানতা স্বহস্তে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলে।” (হিতোপদেশ ১৪:১) কীভাবে একজন বিজ্ঞ বা প্রজ্ঞাবতী স্ত্রী তার গৃহ গাঁথেন? একজন প্রজ্ঞাবতী স্ত্রী ঈশ্বরের মস্তক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখান। (১ করিন্থীয় ১১:৩) তিনি স্বাধীনচেতা মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত হন না, যা শয়তানের জগতে পরিব্যাপ্ত। (ইফিষীয় ২:২) তিনি তার স্বামীর বশীভূত থাকেন এবং তার প্রশংসা করেন, ফলে তার স্বামীর প্রতি হয়তো অন্যদের যে-সম্মান রয়েছে, তা বৃদ্ধি পায়। একজন প্রজ্ঞাবতী স্ত্রী তার ছেলেমেয়েকে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি গৃহের বা সংসারের মঙ্গলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, ফলে সেই পরিবারের জন্য ঘরটা এক মনোরম ও আরামদায়ক জায়গা হয়ে ওঠে। তার ব্যবস্থাপনা করার ধরণে তার দূরদর্শিতা ও মিতব্যয়িতা প্রকাশ পায়। একজন প্রকৃত প্রজ্ঞাবতী স্ত্রী সংসারের সমৃদ্ধি ও স্থিরতার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।

একজন অজ্ঞ বা মূর্খ স্ত্রী ঈশ্বরের মস্তক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখান না। তিনি তার স্বামীর নিন্দা করতে পিছপা হন না। মিতব্যয়ী না হওয়ায় তিনি সংসারের কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থকে অপব্যয় করেন। এ ছাড়া, তিনি সময়ও নষ্ট করেন। এর ফলে, ঘর নোংরা থাকে এবং ছেলেমেয়েরা শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে পীড়িত হয়। হ্যাঁ, একজন মূর্খ স্ত্রী তার সংসারকে ভেঙে ফেলেন।

কিন্তু কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে যে, একজন ব্যক্তি প্রজ্ঞাবান নাকি মূর্খ? হিতোপদেশ ১৪:২ পদ বলে: “যে আপন সরলতায় চলে, সেই সদাপ্রভুকে ভয় করে; কিন্তু যে বক্রপথগামী, সে তাঁহাকে তুচ্ছ করে।” সরল ব্যক্তি সত্য ঈশ্বরকে ভয় করেন এবং “সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার আরম্ভ।” (গীতসংহিতা ১১১:১০) একজন প্রকৃত প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি জানেন যে, তিনি ‘ঈশ্বরকে ভয় করিতে, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করিতে’ বাধ্য। (উপদেশক ১২:১৩) অন্যদিকে, মূর্খ ব্যক্তি এমন এক পথ অনুসরণ করেন, যা সরলতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তার পথ সকল বক্র। এই ধরনের এক ব্যক্তি ঈশ্বরকে তুচ্ছ করেন ও মনে মনে বলেন: “ঈশ্বর নাই।”—গীতসংহিতা ১৪:১.

যখন ওষ্ঠে প্রজ্ঞা থাকে

একজন যিনি যিহোবাকে ভয় করেন এবং অন্যজন যিনি তাঁকে তুচ্ছ করেন তার কথাবার্তা সম্বন্ধে কী বলা যায়? “অজ্ঞানের মুখে অহঙ্কারের দণ্ড থাকে; কিন্তু জ্ঞানবানদের ওষ্ঠ তাহাদিগকে রক্ষা করে।” (হিতোপদেশ ১৪:৩) ওপর থেকে আসা জ্ঞান বা প্রজ্ঞার অভাবে একজন মূর্খ ব্যক্তি শান্তিপ্রিয় অথবা ক্ষান্ত বা যুক্তিবাদী কোনোটাই হন না। যে-প্রজ্ঞা তার পদক্ষেপকে পরিচালিত করে, তা পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক। তিনি যে-কথাগুলো বলেন সেগুলো প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও উদ্ধত। অহংকারপূর্ণ কথাবার্তা তার নিজের ও অন্যদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে।—যাকোব ৩:১৩-১৮.

একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির ওষ্ঠ তাকে সুরক্ষা করে, ফলে তা তার মঙ্গল করে। কীভাবে? শাস্ত্র বলে: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্গাঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” (হিতোপদেশ ১২:১৮) একজন জ্ঞানবান বা প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির কথাগুলো হঠকারিতাপূর্ণ অথবা ব্যঙ্গাত্মক নয়। উত্তর দেওয়ার আগে তিনি চিন্তা করেন। (হিতোপদেশ ১৫:২৮) ভেবেচিন্তে বলা তার কথাবার্তা হল স্বাস্থ্যস্বরূপ—তা হতাশ ব্যক্তিকে উৎসাহ দেয় এবং ভগ্নহৃদয়ের ব্যক্তিকে সতেজ করে। অন্যদের বিরক্ত না করে তার ওষ্ঠ শান্তি ও প্রসন্নতা নিয়ে আসে।

প্রজ্ঞা যখন মানুষের প্রচেষ্টাগুলোতে পরিচালনা দেয়

এরপর শলোমন এক চমৎকার নীতিবাক্য উপস্থাপন করেন, যা সম্ভবত এক নির্দিষ্ট কার্যভার শুরু করার আগে সেটার সুবিধা-অসুবিধাকে মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে আলোচনা করে। তিনি বলেন: “গোরু না থাকিলে যাবপাত্র পরিষ্কার থাকে; কিন্তু বলদের বলে ধনের বাহুল্য হয়।”হিতোপদেশ ১৪:৪.

এই নীতিবাক্যের অর্থ সম্বন্ধে মন্তব্য করার সময় একটা তথ্যগ্রন্থ উল্লেখ করে: “একটা খালি শস্যাধার [যাবপাত্র] ইঙ্গিত দেয় যে, খাবার দেওয়ার জন্য কোনো বলদ নেই আর তাই সেগুলো পরিষ্কার করার ও পশুদের যত্ন নেওয়ার ঝামেলা থেকে একজন মুক্ত এবং খরচও কম হবে। কিন্তু এই ‘সুবিধাটা’ ৪ প[দের] খ অংশে ব্যাহত হয়েছে: এর অর্থ হচ্ছে বলদকে ব্যবহার না করলে প্রচুর ফসল হবে না।” তাই, কৃষককে অবশ্যই প্রজ্ঞার সঙ্গে বাছাই করতে হবে।

এই নীতিবাক্যের নীতিটা কি সেই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না, যখন আমরা চাকরি পালটানোর, কোনো নির্দিষ্ট বাড়ি পছন্দ করার, কোনো গাড়ি কেনার, ঘরে একটা পশু বা পাখি পোষার ও এইরকম অন্যান্য বিষয়ে বিবেচনা করি? একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি সুবিধা-অসুবিধাগুলো মূল্যায়ন করবেন এবং বিবেচনা করে দেখবেন যে, তার প্রচেষ্টার ও ব্যয় করার প্রকৃতই মূল্য আছে কি না।

একজন সাক্ষি যখন প্রজ্ঞাবান হন

“বিশ্বস্ত সাক্ষী মিথ্যা কথা কহে না;” শলোমন বলে চলেন, “কিন্তু মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে।” (হিতোপদেশ ১৪:৫) নিশ্চিতভাবে, একজন মিথ্যাসাক্ষির অসত্য কথাগুলো অনেক ক্ষতি করতে পারে। যিষ্রিয়েলীয় নাবোতকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছিল কারণ দুই পাষণ্ড পুরুষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল। (১ রাজাবলি ২১:৭-১৩) আর যিশুর বিরুদ্ধেও কি মিথ্যা সাক্ষিরা সাক্ষ্য দেয়নি, যার ফলে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল? (মথি ২৬:৫৯-৬১) এ ছাড়া, স্তিফান—যিশুর প্রথম শিষ্য যাকে তার বিশ্বাসের জন্য হত্যা করা হয়েছিল—তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা সাক্ষিরা সাক্ষ্য দিয়েছিল।—প্রেরিত ৬:১০, ১১.

অসত্য কথা বলে এমন একজন ব্যক্তি হয়তো কিছু সময়ের জন্য গোপন থাকতে পারেন কিন্তু তার ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করুন। বাইবেল বলে যে, “যে মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে” তাকে যিহোবা ঘৃণা করেন। (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) এই ধরনের একজন ব্যক্তি নরঘাতক, বেশ্যাগামী, ও প্রতিমাপূজকদের মতো অপরাধীদের সঙ্গে অগ্নি ও গন্ধকে প্রজ্বলিত হ্রদের—দ্বিতীয় মৃত্যুর—অংশী হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.

বিশ্বস্ত সাক্ষি সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মিথ্যা শপথ করেন না। তার সাক্ষ্য মিথ্যা দ্বারা কলুষিত নয়। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে, তিনি সেই লোকেদের সম্পূর্ণ তথ্য জোগাতে বাধ্য, যারা হয়তো কোনো না কোনোভাবে যিহোবার লোকেদের ক্ষতি করতে চায়। কুলপতি অব্রাহাম ও ইস্‌হাক এমন কিছু ব্যক্তির কাছে সত্য ঘটনা বলতে বিরত ছিলেন, যারা যিহোবার উপাসক ছিল না। (আদিপুস্তক ১২:১০-১৯; ২০:১-১৮; ২৬:১-১০) যিরীহো নিবাসী রাহব, রাজার লোকেদের ভুল পথ দেখিয়েছিলেন। (যিহোশূয় ২:১-৭) স্বয়ং যিশু খ্রিস্ট সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা এড়িয়ে গিয়েছিলেন, যখন তা অযথা ক্ষতি নিয়ে আসতে পারত। (যোহন ৭:১-১০) তিনি বলেছিলেন: “পবিত্র বস্তু কুকুরদিগকে দিও না।” কেন? “পাছে তাহারা . . . ফিরিয়া তোমাদিগকে ফাড়িয়া ফেলে।”—মথি ৭:৬.

যখন “জ্ঞান সুলভ”

সব লোকই কি প্রজ্ঞার অধিকারী? হিতোপদেশ ১৪:৬ পদ বলে: “নিন্দক প্রজ্ঞার অন্বেষণ করে, আর তাহা পায় না; কিন্তু বুদ্ধিমানের পক্ষে জ্ঞান সুলভ।” একজন নিন্দক বা উপহাসকারী হয়তো প্রজ্ঞার অন্বেষণ করতে পারেন কিন্তু প্রকৃত প্রজ্ঞা তাকে এড়িয়ে যায়। যেহেতু একজন উপহাসকারী ঈশ্বরের বিষয়গুলোর প্রতি গর্বের সঙ্গে উপহাস করেন, তাই তিনি প্রজ্ঞার মৌলিক চাহিদা—সত্যময় ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান—অর্জন করতে ব্যর্থ হন। তার অহংকার ও গর্ব তাকে ঈশ্বর সম্বন্ধে শিখতে ও প্রজ্ঞা অর্জন করতে বাধা দেয়। (হিতোপদেশ ১১:২) তা হলে, তিনি প্রজ্ঞার জন্য কেনই বা অন্বেষণ করেন? হিতোপদেশ বইয়ে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই কিন্তু খুব সম্ভবত তিনি তা করেন, যাতে অন্যেরা মনে করে যে, তিনি প্রজ্ঞাবান।

একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্য “জ্ঞান সুলভ।” বুদ্ধিকে “বোধশক্তি: উপলব্ধির ক্ষমতা,” “খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর মধ্যে সাধারণ সম্পর্কগুলো বোঝার ক্ষমতা” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এটা হল একটা বিষয়ের বিভিন্ন দিককে মিলিয়ে দেখার পর, সম্পূর্ণ বিষয়টি উপলব্ধি করার ক্ষমতা, আলাদা আলাদাভাবে একেকটা বিষয়কে বোঝা নয়। এই হিতোপদেশটি বলছে যে, যার এই ক্ষমতা রয়েছে, সেই ব্যক্তি সহজেই জ্ঞান লাভ করতে পারেন।

এই ক্ষেত্রে, শাস্ত্রীয় সত্যের জ্ঞান অর্জন করার ব্যাপারে আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করুন। আপনি যখন বাইবেল অধ্যয়ন করা শুরু করেছিলেন তখন খুব সম্ভবত ঈশ্বর, তাঁর প্রতিজ্ঞা ও তাঁর পুত্র সম্বন্ধে মৌলিক শিক্ষাগুলো ছিল প্রথম সত্য, যেগুলো আপনি শিখেছিলেন। প্রথম প্রথম সেগুলো আপনার কাছে আলাদা আলাদা বিষয় বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু আপনি অধ্যয়ন করে চলায় সেই আলাদা আলাদা বিষয়গুলোর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পেরেছিলেন এবং আপনি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, কীভাবে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো মানুষ ও পৃথিবীর জন্য যিহোবার সামগ্রিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাইবেলের সত্য আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিষয় হয়ে উঠেছিল। খুঁটিনাটি নতুন বিষয়গুলো শেখা ও মনে রাখা তখন আরও সহজ হয়ে উঠেছিল কারণ আপনি বুঝতে পারছিলেন যে, সমগ্র চিত্রের মধ্যে কোথায় এগুলোকে বসাতে হবে।

প্রজ্ঞাবান রাজা তাদের বিষয়ে সাবধান করেন, যাদের কাছে জ্ঞান নেই। তিনি বলেন “তুমি হীনবুদ্ধির সম্মুখে [“সামনে থেকে চলে,” NW] যাও, তাহার কাছে জ্ঞানের ওষ্ঠাধর দেখিবে না।” (হিতোপদেশ ১৪:৭) একজন হীনবুদ্ধি ব্যক্তির প্রকৃত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। যে-ওষ্ঠ জ্ঞানের কথা বলে, তা তার কাছে নেই। তাই পরামর্শটা হচ্ছে যে, এই ধরনের একজন ব্যক্তির সামনে থেকে চলে যাওয়া এবং তার কাছ থেকে দূরে থাকা হচ্ছে বিজ্ঞতার কাজ। যেকেউ “হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।”—হিতোপদেশ ১৩:২০.

“নিজ পথ বুঝিয়া লওয়া সতর্কের প্রজ্ঞা,” শলোমন বলে চলেন, “কিন্তু হীনবুদ্ধিদের অজ্ঞানতা ছলমাত্র।” (হিতোপদেশ ১৪:৮) একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করেন। তিনি তার সামনে খোলা বাছাই করার পথগুলো বিবেচনা করে দেখেন এবং প্রত্যেকটা পথ সম্ভবত কোন দিকে পরিচালিত করবে তা নিয়ে ধ্যান করেন। তিনি প্রজ্ঞা ব্যবহার করে তার পথ বাছাই করেন। একজন হীনবুদ্ধি ব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়? তিনি এক মূর্খতাপূর্ণ পথ বেছে নেন, এই মনে করে যে, তিনি যা করছেন তা তিনি জানেন ও তার বেছে নেওয়া পথটাই সর্বোত্তম পথ। তার মূর্খতা তাকে প্রবঞ্চিত করে।

যখন প্রজ্ঞা সম্পর্কগুলোতে পরিচালনা দেয়

প্রজ্ঞার দ্বারা পরিচালিত একজন ব্যক্তির অন্যদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। “অজ্ঞানেরা দোষকে উপহাস করে,” ইস্রায়েলের রাজা লক্ষ করেছিলেন, “কিন্তু ধার্ম্মিকদের কাছে অনুগ্রহ থাকে।” (হিতোপদেশ ১৪:৯) একজন অজ্ঞান বা মূর্খ ব্যক্তির কাছে দোষবোধ হচ্ছে এক হাস্যকর বিষয়। তিনি ঘরের সকলের সঙ্গে ও অন্যত্র তার সম্পর্ক খারাপ করেছেন কারণ তিনি “এতটাই উদ্ধত যে সংশোধন করতে” ও শান্তির অন্বেষণ করতে “চান না।” (দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল)। ধার্মিক বা সরল ব্যক্তি অন্যদের ভুলত্রুটিকে সহ্য করার জন্য ইচ্ছুক থাকেন। তিনি নিজে ভুলটা করে থাকলে ক্ষমা চাইতে এবং ক্ষতিপূরণ করতে প্রস্তুত থাকেন। যেহেতু তিনি শান্তি অনুধাবন করতে চান, তাই তিনি সুখ ও অন্যদের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক উপভোগ করেন।—ইব্রীয় ১২:১৪.

এরপর শলোমন মানুষের সম্পর্কের মধ্যে এক সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন: “অন্তঃকরণ আপনার তিক্ততা বুঝে, অপর লোক তাহার আনন্দের ভাগী হইতে পারে না।” (হিতোপদেশ ১৪:১০) আমরা কি সবসময় আমাদের আন্তরিক অনুভূতিগুলো—দুঃখের বা আনন্দের যা-ই হোক না কেন—অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারি এবং আমরা যা অভিজ্ঞতা করছি, তা একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের বলতে পারি? আর একজন ব্যক্তি কি সবসময় অন্য ব্যক্তি কেমন বোধ করছেন তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেন? এই দুটো প্রশ্নেরই উত্তর হল, না।

উদাহরণস্বরূপ, আত্মহত্যার নানা অনুভূতি সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। একজন যিনি এরকম বোধ করেন তিনি প্রায়ই পরিবারের একজন সদস্য বা একজন বন্ধুর কাছে এই অনুভূতিগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন না। আর অন্যেরা সবসময় তাদের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে এই ধরনের অনুভূতিগুলো থাকার লক্ষণগুলো বুঝে উঠতে পারে না। আমরা যখন এই লক্ষণগুলো বুঝতে পারি না বা সাহায্যকারী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হই, তখন আমাদের দোষী বোধ করার দরকার নেই। এ ছাড়া, এই নীতিবাক্যটি শিক্ষা দেয় যে, মানসিক বল পাওয়ার জন্য একজন সহানুভূতিশীল বন্ধুর কাছে যাওয়া যদিও সান্ত্বনাদায়ক হতে পারে, তবে মানুষ যে-সান্ত্বনা দিতে পারে, সেই ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা সীমিত। কোনো কোনো কষ্ট সহ্য করার সময় আমাদের হয়তো একমাত্র যিহোবার ওপরই নির্ভর করতে হতে পারে।

“তাহার গৃহে ধন ও ঐশ্বর্য্য থাকে”

“দুষ্টদের বাটী বিনষ্ট হইবে;” ইস্রায়েলের রাজা উল্লেখ করেন, “কিন্তু সরলদের তাম্বু সতেজ হইবে।” (হিতোপদেশ ১৪:১১) একজন দুষ্ট ব্যক্তি হয়তো এই বিধিব্যবস্থায় সমৃদ্ধ হতে পারেন ও এক সুন্দর বাড়িতে থাকতে পারেন কিন্তু তিনিই যদি না থাকেন, তা হলে এই সমস্তকিছু তার কী উপকার করবে? (গীতসংহিতা ৩৭:১০) অপরদিকে, একজন সরল ব্যক্তির থাকার জায়গা হয়তো খুবই সাধারণ হতে পারে। কিন্তু গীতসংহিতা ১১২:৩ পদ বলে “তাহার গৃহে ধন ও ঐশ্বর্য্য থাকে।” এগুলো কী?

আমাদের কথা ও কাজ যখন প্রজ্ঞা দ্বারা চালিত হয়, তখন আমাদের “ঐশ্বর্য্য ও সম্মান” থাকে, যা প্রজ্ঞা থাকলে দেখা যায়। (হিতোপদেশ ৮:১৮) এগুলোর অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বর ও আমাদের সহমানবদের সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক, সুস্বাস্থ্য বোধ এবং কিছুটা স্থিরতা। হ্যাঁ, “সরলদের তাম্বু” সমৃদ্ধ হতে পারে, এমনকি এখনই।

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন প্রজ্ঞাবতী স্ত্রী তার গৃহ গাঁথেন

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

“জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ”