নীতিনিষ্ঠার পথে চলুন
নীতিনিষ্ঠার পথে চলুন
“আমি নিজ সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলিব।”—গীতসংহিতা ২৬:১১.
১, ২. (ক) কেন মানুষের নীতিনিষ্ঠা, ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ? (খ) কীভাবে বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীরা দেখাতে পারে যে, তারা যিহোবার সার্বভৌমত্বের পক্ষে রয়েছে?
শয়তান যখন এদন উদ্যানে বিদ্রোহ করেছিল, তখন ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রাণীদের ওপর তাঁর সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা নিয়ে সে সর্বজনীন বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল। এর কিছু সময় পর সে অভিযোগ করেছিল যে, মানুষ শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বরকে সেবা করবে, যতক্ষণ তা তাদের উপকার নিয়ে আসবে। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪) এভাবে, মানুষের নীতিনিষ্ঠা যিহোবার সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল।
২ যদিও ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের নীতিনিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল নয়, তবে মানুষ এবং সেইসঙ্গে ঈশ্বরের আত্মিক পুত্রেরা প্রদর্শন করতে পারে যে, এই বিচার্য বিষয়ে তাদের অবস্থান কোথায়। কীভাবে? অনুসরণের জন্য নীতিনিষ্ঠার এক পথ বেছে নিয়ে বা না নিয়ে। অতএব, একজন ব্যক্তির নীতিনিষ্ঠা হল এক দৃঢ় ভিত্তি, যেটার ওপর নির্ভর করে তাকে বিচার করা যেতে পারে।
৩. (ক) যিহোবা কোন বিষয়টা পরীক্ষা ও বিচার করুন বলে ইয়োব ও দায়ূদ চেয়েছিল? (খ) নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো ওঠে?
৩ ইয়োব আস্থা সহকারে বলেছিলেন: “তিনি ধর্ম্মনিক্তিতে আমাকে তৌল করুন, ঈশ্বর আমার সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] জ্ঞাত হউন।” (ইয়োব ৩১:৬) প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ, যিহোবাকে তার নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছিলেন, যখন তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমার বিচার কর, কারণ আমি নিজ সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলিয়াছি, আর আমি সদাপ্রভুর শরণ লইয়াছি, চঞ্চল হইব না।” (গীতসংহিতা ২৬:১) আমাদের জন্যও নীতিনিষ্ঠার পথে চলা কতই না গুরুত্বপূর্ণ! কিন্তু, নীতিনিষ্ঠা কী এবং এই পথে চলার অর্থ কী? কী আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করবে?
‘আমি নীতিনিষ্ঠায় চলিয়াছি’
৪. নীতিনিষ্ঠা কী?
৪ নীতিনিষ্ঠা শব্দটি ন্যায়নিষ্ঠ, নির্দোষ, ধার্মিক ও ত্রুটিহীন হওয়ার ধারণা বহন করে। তবে, নীতিনিষ্ঠা শব্দটির সঙ্গে যা সঠিক, তা করার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। এটা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ের নৈতিক দৃঢ়তা বা সম্পূর্ণতা। ইয়োবের উদ্দেশ্য নিয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছিল, যখন সে ঈশ্বরকে বলেছিল: “কিন্তু তুমি এক বার হস্ত বিস্তার করিয়া [ইয়োবের] অস্থি ও মাংস স্পর্শ কর, সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।” (ইয়োব ২:৫) নীতিনিষ্ঠার সঙ্গে যথাযথ কাজের পাশাপাশি হৃদয়ের সঠিক প্রেরণাও দরকার।
৫. কী দেখায় যে, নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য আমাদের সিদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই?
৫ তবে, নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য সিদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজা দায়ূদ অসিদ্ধ ছিলেন এবং তার জীবনকালে কয়েকটা গুরুতর ভুল করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, বাইবেল তাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বলে, যিনি হৃদয়ের বা “চিত্তের সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW]” চলতেন। (১ রাজাবলি ৯:৪) কেন? কারণ দায়ূদ যিহোবাকে ভালবাসতেন। তার হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ ছিল। তিনি স্বেচ্ছায় তার ভুলগুলো স্বীকার করেছিলেন, তিরস্কারকে মেনে নিয়েছিলেন এবং তার পথগুলোকে সংশোধন করেছিলেন। বাস্তবিকই, দায়ূদের নীতিনিষ্ঠা ঈশ্বর যিহোবার প্রতি তার সর্বান্তঃকরণ ভক্তি ও ভালবাসার মধ্যে দিয়ে দেখা যায়।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫, ৬.
৬, ৭. নীতিনিষ্ঠায় চলার সঙ্গে কী জড়িত?
৬ নীতিনিষ্ঠা মানব স্বভাবের শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট দিক, যেমন ধর্মীয় ভক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা আমাদের সমগ্র জীবনধারাকে জড়িত করে। দায়ূদ তার নীতিনিষ্ঠার পথে ‘চলিতেন।’ “‘চলা’ ক্রিয়াপদটি ‘জীবনের পথ’ বা ‘জীবনযাত্রাকে’ ইঙ্গিত করে,” দ্যা নিউ ইন্টারপ্রিটারস্ বাইবেল বলে। “যাহারা আচরণে সিদ্ধ” বা ত্রুটিহীন, সেই ব্যক্তিদের বিষয় বলতে গিয়ে গীতরচক গেয়েছিলেন: “ধন্য তাহারা, যাহারা [ঈশ্বরের] সাক্ষ্যকলাপ পালন করে; যাহারা সর্ব্বান্তঃকরণে তাঁহার অন্বেষণ করে। আবার তাহারা অন্যায় করে না, তাহারা তাঁহার সকল পথে গমন করে।” (গীতসংহিতা ১১৯:১-৩) নীতিনিষ্ঠার জন্য ক্রমাগত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার চেষ্টা করা ও তাঁর পথে চলা আবশ্যক।
৭ নীতিনিষ্ঠার পথে চলার জন্য ঈশ্বরের প্রতি অনুগত আসক্তি থাকা দরকার, এমনকি প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলোতেও। যখন আমরা পরীক্ষার মধ্যেও সহ্য করি, দুর্দশাগুলো সত্ত্বেও দৃঢ় থাকি অথবা দুষ্ট জগতের প্রলোভনগুলোকে প্রতিরোধ করি, তখন আমাদের নীতিনিষ্ঠা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আমরা ‘সদাপ্রভুর চিত্তকে আনন্দিত করি’ কারণ যে তাঁকে টিটকারি দিচ্ছে, তাকে তিনি উত্তর দিতে পারেন। (হিতোপদেশ ২৭:১১) তাই উপযুক্ত কারণেই আমরা ইয়োবের মতো সংকল্প নিতে পারি: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) ২৬তম গীত দেখায় যে, কী আমাদের নীতিনিষ্ঠায় চলতে সাহায্য করবে।
“আমার বৃক্কগুলো ও চিত্ত নির্ম্মল কর”
৮. যিহোবাকে তার বৃক্ক ও হৃদয় পরীক্ষা করে দেখার জন্য দায়ূদের অনুরোধ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?
৮ দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমার পরীক্ষা করিয়া প্রমাণ লও, আমার মর্ম্ম [“বৃক্কগুলো,” NW] ও চিত্ত নির্ম্মল কর।” (গীতসংহিতা ২৬:২) বৃক্কগুলো (কিডনি) দেহের একেবারে গভীরে অবস্থিত। রূপকভাবে, বৃক্ক একজন ব্যক্তির গভীরতম চিন্তাশক্তি ও আবেগকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর রূপক চিত্ত বা হৃদয় হচ্ছে ভিতরের সম্পূর্ণ ব্যক্তি—তার প্রেরণা, অনুভূতি এবং বুদ্ধি। দায়ূদ যখন নিজেকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য যিহোবাকে অনুরোধ করেছিলেন, তখন তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যাতে তার অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তাশক্তি ও অনুভূতিগুলোকে অন্বেষণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়।
৯. কোন উপায়ে যিহোবা আমাদের রূপক বৃক্ক ও হৃদয়কে বিশোধন করেন?
৯ দায়ূদ অনুরোধ জানিয়েছিলেন যাতে তার বৃক্ক ও হৃদয়কে নির্মল বা বিশোধন করা হয়। আমরা ভিতরে কেমন সেই বিষয়কে যিহোবা কীভাবে বিশোধন করেন? দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব, তিনিই আমাকে মন্ত্রণা দিয়াছেন, রাত্রিতেও আমার চিত্ত [“বৃক্কগুলো,” NW] আমাকে প্রবোধ দেয়।” (গীতসংহিতা ১৬:৭) এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে যে, ঐশিক পরামর্শ দায়ূদের সত্তার গভীরতম অংশে পৌঁছেছিল এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থেকে তার অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তাশক্তি এবং আবেগকে সংশোধন করেছিল। আমাদের বেলায়ও তা-ই হতে পারে, যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্য, তাঁর প্রতিনিধি এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে প্রাপ্ত পরামর্শ উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করি এবং এটাকে আমাদের অন্তরের গভীরে স্থায়ীভাবে থাকতে দিই। এভাবে আমাদের বিশোধন করার জন্য যিহোবার কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করা আমাদের নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে সাহায্য করবে।
‘তোমার দয়া আমার গোচরে’
১০. কী দায়ূদকে ঈশ্বরের সত্যে চলতে সাহায্য করেছিল?
১০ “তোমার দয়া আমার নয়নগোচর,” দায়ূদ বলে চলেন, “আমি তোমার সত্যে চলিয়া আসিতেছি।” (গীতসংহিতা ২৬:৩) ঈশ্বরের দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজগুলো সম্বন্ধে দায়ূদ ভালভাবেই জানতেন এবং তিনি সেগুলো নিয়ে উপলব্ধি সহকারে ধ্যান করেছিলেন। “হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর,” তিনি গেয়েছিলেন, “তাঁহার সকল উপকার ভুলিয়া যাইও না।” ঈশ্বরের ‘উপকারগুলোর’ একটা স্মরণ করে দায়ূদ বলে চলেছিলেন: “সদাপ্রভু ধর্ম্মকার্য্য সাধন করেন, উপদ্রুত লোকদের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি করেন। তিনি জানাইলেন মোশিকে আপনার পথ, ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আপনার কার্য্য সকল।” (গীতসংহিতা ১০৩:২, ৬, ৭) দায়ূদ সম্ভবত মোশির দিনে মিশরীয়দের দ্বারা ইস্রায়েলীয়রা যে প্রতারিত হচ্ছিল, সেই বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে যিহোবা যেভাবে মোশির কাছে উদ্ধারের উপায়গুলো জানিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করা নিশ্চয়ই দায়ূদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল এবং ঈশ্বরের সত্যে চলার জন্য তার দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করেছিল।
১১. কী আমাদের নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে সাহায্য করতে পারে?
১১ ঈশ্বরের বাক্য নিয়মিত অধ্যয়ন করা এবং সেই বাক্য থেকে আমরা যা শিখি, তা নিয়ে ধ্যান করাও নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে আমাদের সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, পোটীফরের স্ত্রীর অনৈতিক প্রস্তাবে যোষেফ পালিয়ে গিয়েছিলেন, এই বিষয়টা স্মরণ করা নিশ্চিতভাবে আমাদের কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে বা অন্যত্র একইরকম প্রস্তাব থেকে পালিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে। (আদিপুস্তক ৩৯:৭-১২) জগতের বস্তুগত সমৃদ্ধি বা খ্যাতি ও ক্ষমতা লাভের বিভিন্ন সুযোগের দ্বারা আমরা যখন প্রলোভিত হই, তখন কী করা যায়? আমাদের কাছে মোশির উদাহরণ রয়েছে, যিনি মিশরের সমস্ত গৌরবকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:২৪-২৬) ইয়োবের ধৈর্যের কথা মনে রাখা নিঃসন্দেহে আমাদেরকে অসুস্থতা ও বিভিন্ন দুর্যোগ থাকা সত্ত্বেও, যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। (যাকোব ৫:১১) কী হবে যদি আমরা তাড়নার শিকার হই? তখন সিংহের গর্তে থাকা দানিয়েলের অভিজ্ঞতা স্মরণ করা আমাদের সাহসে পূর্ণ করবে!—দানিয়েল ৬:১৬-২২.
“আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই”
১২, ১৩. কোন ধরনের সংসর্গ আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত?
১২ আরেকটা বিষয় যা দায়ূদের নীতিনিষ্ঠাকে শক্তিশালী করেছিল, সেই বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না। আমি দুরাচারদের সমাজ ঘৃণা করি, দুষ্টগণের সঙ্গে বসিব না।” (গীতসংহিতা ২৬:৪, ৫) দায়ূদ স্বাভাবিকভাবেই দুষ্ট লোকদের সঙ্গে বসতেন না। তিনি কুসংসর্গকে ঘৃণা করতেন।
১৩ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসূচি, ভিডিও, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট সাইট বা অন্যান্য উপায়গুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা কি অলীক লোকেদের সঙ্গে বসতে প্রত্যাখ্যান করি? আমরা কি ছদ্মবেশীদের কাছ থেকে দূরে থাকি? স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে কেউ কেউ হয়তো প্রতারণাপূর্ণ উদ্দেশ্যগুলোর কারণে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ভান করতে পারে। যারা ঈশ্বরের সত্যে চলে না তাদের সঙ্গে কি আমরা সত্যিই ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে তুলতে চাই? এ ছাড়া, ধর্মভ্রষ্টরা হয়তো আন্তরিক হওয়ার দাবি করে যিহোবার সেবা থেকে আমাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের উদ্দেশ্যকে লুকোতে পারে। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কেউ কেউ যদি দ্বৈত জীবনযাপন করে, তাদের সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? তারাও প্রকৃতপক্ষে কেমন ব্যক্তি তা লুকিয়ে রাখে। জেসন, যিনি বর্তমানে একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন, কিশোর বয়সে তার এই ধরনের বন্ধুবান্ধব ছিল। তাদের সম্বন্ধে তিনি বলেন: “একদিন আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল: ‘এখন আমরা যা-ই করি না কেন, তাতে কিছু যায় আসে না কারণ নতুন পরিস্থিতি যখন আসবে, তখন আমরা বেঁচে থাকব না। আমরা জানতে পারব না যে আমরা কোনোকিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’ এই ধরনের কথা আমার জন্য এক সতর্কবাণীমূলক বিষয় ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে আমি মৃত থাকতে চাই না।” জেসন বিজ্ঞতাপূর্বক সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। “ভ্রান্ত হইও না,” প্রেরিত পৌল সাবধান করেছিলেন। “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) কুসংসর্গ এড়িয়ে চলা আমাদের জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
‘আমি তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল প্রচার করিব’
১৪, ১৫. কীভাবে আমরা ‘[সদাপ্রভুর] যজ্ঞবেদি প্রদক্ষিণ করিতে’ পারি?
১৪ দায়ূদ আরও বলেছিলেন, “আমি শুদ্ধতায় আমার হাত ধুইব, সদাপ্রভু, এইরূপে তোমার যজ্ঞবেদি প্রদক্ষিণ করিব।” কেন? “যেন আমি স্তবের ধ্বনি শ্রবণ করাই, ও তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল প্রচার করি।” (গীতসংহিতা ২৬:৬, ৭) দায়ূদ নৈতিকভাবে শুচি থাকতে চেয়েছিলেন, যাতে তিনি যিহোবার উপাসনা করতে পারেন ও ঈশ্বরের প্রতি তার ভক্তিকে ঘোষণা বা প্রচার করতে পারেন।
১৫ আবাস এবং পরবর্তী সময়ে মন্দিরে সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্তকিছুই “স্বর্গীয় বিষয়ের দৃষ্টান্ত ও ছায়া” ছিল। (ইব্রীয় ৮:৫; ৯:২৩) বেদি, মানবজাতিকে মুক্ত করার জন্য যিশু খ্রিস্টের বলিদানকে গ্রহণ করার বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। (ইব্রীয় ১০:৫-১০) আমরা শুদ্ধতায় আমাদের হাত ধুই এবং সেই বলিদানে বিশ্বাস প্রদর্শন করে চলার দ্বারা ‘[সদাপ্রভুর] যজ্ঞবেদি প্রদক্ষিণ করি।’—যোহন ৩:১৬-১৮.
১৬. কীভাবে অন্যদের কাছে ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলো সম্বন্ধে ঘোষণা করা আমাদের উপকৃত করে?
১৬ মুক্তির মূল্য যা কিছু সম্পাদন করে সেইসমস্ত বিষয় নিয়ে যখন আমরা চিন্তা করি, তখন যিহোবা ও তাঁর একজাত পুত্রের প্রতি আমাদের হৃদয় কি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে না? তাই, আসুন আমরা হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা সহকারে ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলো—এদন উদ্যানে মানুষের সৃষ্টি থেকে শুরু করে ঈশ্বরের নতুন জগতে সম্পূর্ণরূপে পুনর্স্থাপন পর্যন্ত সমস্তকিছু—অন্যদের জানাই। (আদিপুস্তক ২:৭; প্রেরিত ৩:২১) আর রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ কত বড় এক আধ্যাত্মিক সুরক্ষা! (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এই কাজে ব্যস্ত থাকা আমাদের ভবিষ্যতের আশাকে উজ্জ্বল, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোতে আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় এবং যিহোবা ও সহমানবদের প্রতি আমাদের ভালবাসাকে জীবন্ত রাখে।
“আমি ভালবাসি তোমার নিবাসগৃহ”
১৭, ১৮. খ্রিস্টীয় সভাগুলোর প্রতি আমাদের মনোভাব কী হওয়া উচিত?
১৭ ইস্রায়েলে যজ্ঞবেদিসহ আবাস ছিল যিহোবার উপাসনার কেন্দ্রস্থল। সেই জায়গার বিষয়ে তার আনন্দ প্রকাশ করে দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, আমি ভালবাসি তোমার নিবাসগৃহ, তোমার গৌরবের বাসস্থান।”—গীতসংহিতা ২৬:৮.
১৮ আমরা কি সেই জায়গাগুলোতে সমবেত হতে পছন্দ করি, যেখানে আমরা যিহোবার সম্বন্ধে শিখি? আধ্যাত্মিক নির্দেশনার নিয়মিত কার্যক্রমসহ প্রত্যেকটা কিংডম হল সমাজের মধ্যে সত্য উপাসনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া, আমাদের বার্ষিক সম্মেলন, সীমা সম্মেলন ও বিশেষ সম্মেলন দিনগুলো রয়েছে। এই সভাগুলোতে যিহোবার “সাক্ষ্যকলাপ” আলোচনা করা হয়। আমরা যদি ‘সে সকল অতিশয় ভালবাসিতে’ শিখি, তা হলে আমরা সভাগুলোতে যোগ দিতে উৎসুক হব এবং সেখানে থাকার সময় মনোযোগী হব। (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৭) সেই সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকা কতই না সতেজতাদায়ক, যারা আমাদের ব্যক্তিগত মঙ্গলের প্রতি আগ্রহী এবং যারা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার পথে থাকতে সাহায্য করে থাকে!—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
“আমার জীবন লইও না”
১৯. দায়ূদ কোন পাপগুলোর দোষে দোষী হতে চাননি?
১৯ ঈশ্বরের সত্যে চলা থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরিণতিগুলো সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত হওয়ায় দায়ূদ অনুরোধ করেছিলেন: “পাপীদের সহিত আমার প্রাণ লইও না, রক্তপাতী মনুষ্যদের সহিত আমার জীবন লইও না। তাহাদের হস্তে অনিষ্ট থাকে, তাহাদের দক্ষিণ হস্ত উৎকোচে পরিপূর্ণ।” (গীতসংহিতা ২৬:৯, ১০) দায়ূদ সেই অধার্মিক লোকেদের মধ্যে গণিত হতে চাননি, যারা অনিষ্ট বা লম্পটতা অথবা উৎকোচ গ্রহণের দোষে দোষী ছিল।
২০, ২১. কী আমাদের অধার্মিক লোকেদের পথে চলার দিকে পরিচালিত করতে পারে?
২০ আজকে জগৎ অত্যধিক অনৈতিক অভ্যাসগুলোর দ্বারা পরিপূর্ণ। টেলিভিশন, পত্রিকা এবং চলচ্চিত্রগুলো লম্পটতাকে—‘বেশ্যাগমন, অশুচিতা, স্বৈরিতাকে’—উৎসাহিত করে। (গালাতীয় ৫:১৯) কেউ কেউ অশ্লীল বিষয়গুলোর দাস হয়ে উঠেছে, যা প্রায়ই অনৈতিক আচরণের দিকে পরিচালিত করে। বিশেষভাবে অল্পবয়স্করা এই ধরনের প্রভাবগুলোর দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়। কিছু কিছু দেশে, ডেটিং করা একটা স্বাভাবিক রীতি এবং কিশোর-কিশোরীরা এইরকম ভাবতে বাধ্য হয় যে, তাদের অবশ্যই ডেটিং করতে হবে। অনেক অল্পবয়স্করা প্রেমে পড়ে যায়, এমনকি যদিও তাদের বিয়ে করার মতো বয়স হয়নি। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা যৌন আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করার জন্য তারা দ্রুত অনৈতিক আচরণে এতটাই জড়িয়ে যায় যে, একসময় ব্যভিচার করে থাকে।
২১ প্রাপ্তবয়স্করাও কোনোভাবেই খারাপ প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। অসৎ ব্যাবসা এবং স্বার্থপর সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের প্রবণতা নীতিনিষ্ঠার অভাবকে ইঙ্গিত করে। জগতের পথে চলা আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে কেবল দূরেই ঠেলে দেবে। আসুন আমরা ‘মন্দকে ঘৃণা করি ও উত্তমকে ভালবাসি’ আর ক্রমাগত নীতিনিষ্ঠার পথে চলি।—আমোষ ৫:১৫.
“আমাকে মুক্ত কর, ও আমার প্রতি কৃপা কর”
২২-২৪. (ক) গীতসংহিতা ২৬ অধ্যায়ের শেষের কথাগুলো থেকে আপনি কোন উৎসাহ পেয়েছেন? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন ফাঁদের বিষয়ে আলোচনা করা হবে?
২২ দায়ূদ ঈশ্বরের প্রতি তার অভিব্যক্তি শেষ করেছিলেন, এই বলে: “কিন্তু আমি নিজ নীতিনিষ্ঠায় চলিব; আমাকে মুক্ত কর, ও আমার প্রতি কৃপা কর। আমার চরণ সমভূমিতে দাঁড়াইয়া আছে; আমি মণ্ডলীগণের মধ্যে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব।” (গীতসংহিতা ২৬:১১, ১২) নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ব্যাপারে দায়ূদের দৃঢ়সংকল্প ও মুক্তির জন্য তার অনুরোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেটা কতই না উৎসাহজনক! আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সত্ত্বেও, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন যদি আমরা নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।
২৩ আমাদের জীবনযাপনের ধরন যেন দেখায় যে, আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও উপলব্ধি করি। আমরা প্রত্যেকে প্রার্থনায় যিহোবাকে আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তা ও অনুভূতিকে পরীক্ষা করে দেখতে অনুরোধ করতে পারি। আমরা তাঁর বাক্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করার দ্বারা তাঁর সত্যকে সবসময় আমাদের সামনে রাখতে পারি। তাই, আসুন আমরা কুসংসর্গ এড়াতে এবং একইসময়ে মণ্ডলীর মধ্যে যিহোবার ধন্যবাদ করতে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করি। আমরা যেন উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিই, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ককে বিপন্ন করার জন্য জগৎকে কখনোই সুযোগ না দিই। নীতিনিষ্ঠার পথে চলার জন্য আমাদের সর্বোত্তম অংশটুকু করার সময় আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা আমাদের প্রতি কৃপা করবেন।
২৪ নীতিনিষ্ঠার সঙ্গে যেহেতু জীবনের সমস্ত ক্ষেত্র জড়িত, তাই আমাদের এক মারাত্মক ফাঁদ—মদের অপব্যবহার—সম্বন্ধে সতর্ক হতে হবে। এই বিষয়টাই পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কেন বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের উপযুক্তভাবেই তাদের নীতিনিষ্ঠার ভিত্তিতে বিচার করা যেতে পারে?
• নীতিনিষ্ঠা কী এবং এই পথে চলার সঙ্গে কী জড়িত?
• কী আমাদের নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে সাহায্য করবে?
• নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য কোন বিপদগুলোর বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি আপনার অন্তরের অন্তঃস্থলের চিন্তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য নিয়মিত যিহোবাকে অনুরোধ করেন?
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার কাজগুলোকে আপনার নয়নগোচরে রাখেন?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
পরীক্ষাগুলোর মধ্যেও আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে আপনাকে সাহায্য করার ব্যাপারে আপনি কি যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর সদ্ব্যবহার করেন?