সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

মদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

মদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

“দ্রাক্ষারস নিন্দক; সুরা কলহকারিণী; যে তাহাতে ভ্রান্ত হয়, সে জ্ঞানবান নয়।”হিতোপদেশ ২০:১.

১. যিহোবার কাছ থেকে আসা কিছু উত্তম উপহারের প্রতি গীতরচক কীভাবে তার উপলব্ধি প্রকাশ করেছিলেন?

 “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে,” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন। (যাকোব ১:১৭) ঈশ্বরের অসংখ্য উত্তম দান বা উপহারের প্রতি কৃতজ্ঞতায় চালিত হয়ে গীতরচক গেয়েছিলেন: “তিনি পশুগণের জন্য তৃণ অঙ্কুরিত করেন; মনুষ্যের সেবার জন্য ওষধি অঙ্কুরিত করেন; এইরূপে ভূমি হইতে ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন, আর মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস, মুখের প্রফুল্লতা-জনক তৈল, ও মর্ত্ত্যের চিত্তবল-সাধক ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন।” (গীতসংহিতা ১০৪:১৪, ১৫) ওষধি, ভক্ষ্য ও তেলের মতো, দ্রাক্ষারস এবং অন্যান্য মদ্যজাতীয় পানীয়ও ঈশ্বরের কাছ থেকে উত্তম উপহার। সেগুলোকে আমাদের কীভাবে ব্যবহার করা উচিত?

২. মদের ব্যবহার সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?

এক উপভোগ্য উপহার একমাত্র তখনই উত্তম হয়ে থাকে, যখন তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মধু “উত্তম” কিন্তু “অধিক মধু খাওয়া ভাল নয়।” (হিতোপদেশ ২৪:১৩; ২৫:২৭) “কিঞ্চিৎ দ্রাক্ষারস” পান করা যদিও ভাল কিন্তু মদের অপব্যবহার এক গুরুতর সমস্যা। (১ তীমথিয় ৫:২৩) “দ্রাক্ষারস নিন্দক,” বাইবেল সাবধান করে, “সুরা কলহকারিণী; যে তাহাতে ভ্রান্ত হয়, সে জ্ঞানবান নয়।” (হিতোপদেশ ২০:১) তা হলে, কীভাবে একজন ব্যক্তি মদের * দ্বারা ভ্রান্ত হচ্ছে বা বিপথে যাচ্ছে? কতটা পরিমাণ অতিরিক্ত? এই ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কী?

মদের দ্বারা “ভ্রান্ত হয়”—কীভাবে?

৩, ৪. (ক) কী দেখায় যে, মাতাল হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত মদ্যপান করাকে বাইবেলে নিন্দা করা হয়েছে? (খ) মাতাল হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?

প্রাচীন ইস্রায়েলে, কোনো পুত্র যদি অনুতাপহীন পেটুক ও মদ্যপায়ী হতো, তা হলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হতো। (দ্বিতীয় বিববরণ ২১:১৮-২১, NW) প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ভ্রাতা নামে আখ্যাত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারী কি লোভী কি প্রতিমাপূজক কি কটুভাষী কি মাতাল কি পরধনগ্রাহী হয়, তবে তাহার সংসর্গে থাকিতে নাই, এমন ব্যক্তির সহিত আহার করিতেও নাই।” স্পষ্টতই, মাতাল হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত মদ্যপান করাকে শাস্ত্রে নিন্দা করা হয়েছে।—১ করিন্থীয় ৫:১১; ৬:৯, ১০.

মাতাল হওয়ার লক্ষণগুলো বর্ণনা করে বাইবেল বলে: “সুতরাং দ্রাক্ষারসের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। লাল দ্রাক্ষারস হয়ত দেখতে প্রলুব্ধকর; সেটা পেয়ালার মধ্যে ঝকমক করে। তুমি যখন সেটা পান কর তখন তা সুন্দরভাবে গলা দিয়ে নীচে নামে। কিন্তু শেষে তা সাপের মতো ছোবল মারে। দ্রাক্ষারস পান করলে তুমি চোখে অদ্ভুত সব জিনিস দেখবে। তোমার মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে।” (হিতোপদেশ ২৩:৩১-৩৩, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) অতিরিক্ত মদ্যপান বিষাক্ত সাপের মতো কামড়ায়, অসুস্থতার কারণ হয়, মানসিক বিকৃতি ঘটায় ও এমনকি অচেতন করে ফেলে। একজন মাতাল হয়তো “অদ্ভুত সব জিনিস” দেখতে পারে কারণ সে হয়তো চোখের সামনে যা নেই তা বা কল্পিত বস্তুগুলো দেখতে পারে। সে হয়তো বিকৃত ধারণা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রকাশের ব্যাপারে কম সংযত হয়ে পড়তে পারে যেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় দমন করা হয়ে থাকে।

৫. অতিরিক্ত মদ্যপান কীভাবে ক্ষতিকর?

যদি একজন ব্যক্তি মদ্যপান করেন কিন্তু এই ব্যাপারে বেশ সর্তক যেন মাতাল হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত না পৌঁছান, তা হলে কী বলা যায়? কেউ কেউ এমনকি অনেক মদ্যপান করার পরেও মাতলামির লক্ষণ ততটা প্রকাশ করে না। কিন্তু এই ধরনের অভ্যাসে কোনো ক্ষতি নেই এমনটা ভাবা হল, এক ধরনের আত্মপ্রতারণা করা। (যিরমিয় ১৭:৯) এভাবে ধীরে ধীরে, ক্রমান্বয়ে একজন ব্যক্তি হয়তো মদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং “বহুমদ্যের দাসী” বা দাস হয়ে ওঠেন। (তীত ২:৩) একজন মদ্যপায়ী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে লেখিকা ক্যারোলাইন ন্যাপ বলেন: “এটা এক ধীর, ক্রমাগত, সূক্ষ্ম, কৌশলী প্রক্রিয়া।” অতিরিক্ত মদ্যপান কতই না মারাত্মক এক ফাঁদ!

৬. কেন একজন ব্যক্তির অতিরিক্ত মদ্যপান ও ভোজন পরিহার করা উচিত?

এ ছাড়া, যিশুর সাবধানবাণী বিবেচনা করুন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতলনিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে।” (লূক ২১:৩৪, ৩৫) মদ্যপান করা মাতাল হওয়ার পর্যায় অর্থাৎ ব্যক্তিকে শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন ও অলস করে ফেলার আগে পর্যন্ত পৌঁছানোর দরকার নেই। তার এইরকম অবস্থায় যদি যিহোবার দিন চলে আসে, তা হলে কী হবে?

মদের অপব্যবহার যেদিকে পরিচালিত করতে পারে

৭. কেন মদের অপব্যবহার ২ করিন্থীয় ৭:১ পদে বলা নির্দেশনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়?

অপরিমিত মাত্রায় মদ্যপান একজনকে অনেক বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে—শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক দিয়ে। মদের অপব্যবহারের দ্বারা ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে কয়েকটা হচ্ছে লিভার সিরোসিস, আ্যলকোহলিক হেপাটাইটিস (মদের প্রতি আসক্তির কারণে যকৃত প্রদাহ) এবং ডিলিরিয়াম ট্রিমেন্সের (কম্পপ্রলাপ) মতো মস্তিষ্ক বিকৃতি। দীর্ঘদিন ধরে মদের অপব্যবহার ক্যান্সার, ডায়াবিটিস এবং হৃদরোগ ও পাকস্থলীর কয়েকটা রোগের কারণ হতে পারে। মদের অপব্যবহার নিশ্চয়ই শাস্ত্রের এই নির্দেশনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়: “আইস, আমরা মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি।”—২ করিন্থীয় ৭:১.

৮. হিতোপদেশ ২৩:২০, ২১ পদ অনুসারে মদের অপব্যবহারের ফলে কী হতে পারে?

মদের অপব্যবহারের ফলে টাকাপয়সা অপচয় হয় ও এমনকি তা চাকরি হারানোর কারণ হতে পারে। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন সাবধান করেছিলেন: “মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হইও না, পেটুক মাংসভোজীদের সঙ্গী হইও না।” কেন? তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “কারণ মদ্যপায়ী ও পেটুকের দৈন্যদশা ঘটে, এবং ঢুলু ঢুলু ভাব মনুষ্যকে নেক্‌ড়া পরায়।”—হিতোপদেশ ২৩:২০, ২১.

৯. একজন ব্যক্তিকে যদি কোনো যানবাহন চালাতে হয়, তা হলে মদ্যজাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকা কেন তার জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে?

আরেকটা বিপদের বিষয় ইঙ্গিত করে দি এনসাইক্লোপিডিয়া অফ আ্যলকোহোলিজম বলে: “গবেষণা দেখিয়েছে যে, মদ গাড়ি চালানোর দক্ষতা ও সেইসঙ্গে প্রতিক্রিয়া সময়, সমন্বয়সাধন, মনোযোগ, দৃশ্যত সতর্কতা ও বিচারবুদ্ধিকে হ্রাস করে ফেলতে পারে।” মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর পরিণতি বিপর্যয়মূলক হয়ে থাকে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর মদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হাজার হাজার লোক মারা যায় ও লক্ষ লক্ষ লোক আহত হয়। বিশেষভাবে এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে অল্পবয়স্করা, যাদের গাড়ি চালানো ও মদ্যপান, উভয় ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা কম। অনেক মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়ে কেউ কি দাবি করতে পারে যে, সে জীবনকে যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার হিসেবে সম্মান করে? (গীতসংহিতা ৩৬:৯) একজন ব্যক্তিকে যদি গাড়ি চালাতেই হয়, জীবনের পবিত্রতার কথা ভেবে সেই সময় মদ্যজাতীয় পানীয় একেবারে না পান করাই সর্বোত্তম হবে।

১০. কীভাবে মদ আমাদের মনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কেন তা বিপদজনক?

১০ অপরিমিত মাত্রায় মদ্যপান লোকেদের কেবল শারীরিকভাবেই নয় কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবেও ক্ষতি করে। বাইবেল বলে “মদ্য ও নূতন দ্রাক্ষারস, এই সকল বুদ্ধি হরণ করে।” (হোশেয় ৪:১১) মদ মনকে প্রভাবিত করে। নেশাকর ওষুধের অপব্যবহারের ওপর ইউ.এস. জাতীয় প্রতিষ্ঠান এর দ্বারা প্রণীত একটা প্রকাশনা ব্যাখ্যা করে, “কেউ যখন মদ পান করে, তখন মদ পরিপাক তন্ত্রের দ্বারা রক্তপ্রবাহের মধ্যে শোষিত হয় এবং দ্রুত মস্তিষ্কে চলে যায়। এটা মস্তিষ্কের কিছু অংশকে ধীরগতি করতে শুরু করে, যা চিন্তা ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তি কম নিয়ন্ত্রিত এবং বেশি স্বাধীন বোধ করে।” এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা খুব সম্ভবত ‘ভ্রান্ত হই,’ আচরণ ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যাই এবং নানা প্রলোভনে পা দিই।—হিতোপদেশ ২০:১.

১১, ১২. অপরিমিত মাত্রায় মদের ব্যবহার কোন আধ্যাত্মিক ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে?

১১ এ ছাড়া, বাইবেল আদেশ দেয়: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১) অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান কি কখনও ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসে? নিশ্চিতভাবেই একজন খ্রিস্টান একজন অত্যধিক মদ্যপায়ী হিসেবে খ্যাত হওয়া এড়িয়ে চলতে চাইবেন। এই ধরনের খ্যাতি যিহোবার নামের গৌরব নয়, বরং নিন্দা নিয়ে আসবে।

১২ একজন খ্রিস্টান যদি অপরিমিত মাত্রায় মদ্যপান করে কোনো সহবিশ্বাসীর, হতে পারে একজন নতুন শিষ্যের বিঘ্ন জন্মান, তা হলে কী? (রোমীয় ১৪:২১) “যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের মধ্যে এক জনেরও বিঘ্ন জন্মায়,” যিশু সাবধান করেছিলেন, “তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রের অগাধ জলে ডুবাইয়া দেওয়া বরং তাহার পক্ষে ভাল।” (মথি ১৮:৬) এ ছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপান মণ্ডলীতে বিশেষ সুযোগগুলো হারানোর কারণ হতে পারে। (১ তীমথিয় ৩:১-৩, ৮) মদের অপব্যবহার পরিবারের মধ্যে যে-সংঘাত নিয়ে আসতে পারে, সেটাকেও উপেক্ষা করা যায় না।

বিপদগুলো এড়িয়ে চলুন—কীভাবে?

১৩. মদের অপব্যবহার এড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী?

১৩ মদের অপব্যবহারের বিপদগুলো এড়ানোর একটা চাবি শুধুমাত্র মাতাল হওয়া এড়ানো নয় কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহারের লক্ষ্য স্থাপন করা। কে নির্ণয় করতে পারে যে, কী পরিমাণ মদ আপনার জন্য পরিমিত এবং কতখানি পান করা আপনার জন্য অতিরিক্ত হয়ে যাবে? যেহেতু এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত, তাই কী পরিমাণ মদ্যপান অতিরিক্ত তা নির্ণয় করার জন্য কড়াকড়ি কোনো নিয়ম নেই। প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে তার সীমা জানতে হবে এবং সেই সীমার মধ্যেই থাকতে হবে। কতখানি পরিমাণ আপনার জন্য অতিরিক্ত, তা নির্ধারণ করতে কী আপনাকে সাহায্য করবে? কোনো নীতি কি রয়েছে, যা নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে?

১৪. কোন নির্দেশনামূলক নীতি আপনাকে পরিমিত ও অতিরিক্ত মদ্যপান করার মধ্যে সীমা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে?

১৪ বাইবেল বলে: “তুমি সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর। তাহাতে সে সকল তোমার প্রাণের জীবনস্বরূপ হইবে, তোমার কণ্ঠের শোভাস্বরূপ হইবে।” (হিতোপদেশ ৩:২১, ২২) তাই, এই ক্ষেত্রে নির্দেশনামূলক নীতিটি হচ্ছে: যতটুকু পরিমাণ মদ আপনার বিচারবুদ্ধিকে ব্যাহত করে এবং আপনার সূক্ষ্ম বুদ্ধি বা চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিস্তেজ করে দেয়, সেটাই ব্যক্তিগতভাবে আপনার জন্য অতিরিক্ত হবে। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত সীমা কতখানি, তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সৎ হতে হবে!

১৫. কখন এমনকি একবার পান করাও অনেক বেশি হতে পারে?

১৫ কয়েকটা পরিস্থিতিতে, শুধুমাত্র একবার পান করাও হয়তো অনেক বেশি হতে পারে। একজন গর্ভবতী মহিলা তার গর্ভের ভ্রূণের কথা ভেবে হয়তো একেবারেই পান না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর যার মদ্যপান সংক্রান্ত সমস্যা ছিল বা যার বিবেক তাকে মদ্যপান করতে অনুমোদন করে না, এমন কারও সামনে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকাই কি সদয় আচরণ হবে না? যারা আবাসে যাজকীয় কর্তব্যগুলো সম্পন্ন করত, তাদের যিহোবা আদেশ দিয়েছিলেন: “যে সময়ে তুমি . . . সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিবে, তৎকালে দ্রাক্ষারস কি মদ্য পান করিও না।” (লেবীয়পুস্তক ১০:৮, ৯) তাই, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার ও পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার আগে এবং অন্যান্য আধ্যাত্মিক দায়িত্বগুলো পালন করার সময় মদ্যজাতীয় পানীয় পান করা এড়িয়ে চলুন। তা ছাড়া, যে-দেশগুলোতে মদ্যপান নিষিদ্ধ বা একটা নির্দিষ্ট বয়স সীমার ওপরে অনুমোদনযোগ্য, সেই দেশের আইনগুলোর প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো উচিত।—রোমীয় ১৩:১.

১৬. আপনার সামনে যখন কোনো মদ্যজাতীয় পানীয় পরিবেশন করা হয়, তখন কী করণীয় তা আপনার কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত?

১৬ আপনাকে যখন কোনো মদ্যজাতীয় পানীয় গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয় বা আপনার সামনে তা পরিবেশন করা হয়, তখন সর্বপ্রথম যে-প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা দরকার তা হল: ‘আমার কি আদৌ পান করা উচিত?’ আপনি যদি পান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা হলে আপনার ব্যক্তিগত সীমা স্পষ্টভাবে মনে রাখুন এবং সেই সীমা অতিক্রম করবেন না। একজন উদার নিমন্ত্রণকর্তার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আর পার্টির মতো উপলক্ষগুলো থেকে সাবধান থাকুন, যেখানে অবাধে বিনামূল্যে মদ পরিবেশন করা হয়। অনেক জায়গায়, ছেলেমেয়েদের মদ্যপানের আইনগত অনুমতি রয়েছে। এই ক্ষেত্রে, মদের ব্যবহার সম্বন্ধে ছেলেমেয়েদের নির্দেশনা দেওয়ার এবং তাদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব বাবামার।—হিতোপদেশ ২২:৬.

আপনি সমস্যাটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন

১৭. মদের অপব্যবহার সংক্রান্ত কোনো সমস্যা আপনার রয়েছে কি না, তা নির্ণয় করতে কী আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

১৭ দ্রাক্ষারস ও মদের অপব্যবহার কি আপনার জন্য একটা সমস্যা? মদের অপব্যবহার যদি আপনার জন্য এক গোপন পাপ হয়ে ওঠে, তা হলে আজ হোক বা কাল হোক এটা আপনার ক্ষতি করবে। তাই, নিজেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ, সৎভাবে পরীক্ষা করুন। এই ধরনের আত্ম-অনুসন্ধানমূলক প্রশ্নগুলো করুন, যেমন: ‘আমি কি আগের চেয়ে আরও বেশি মদ পান করি? আমার পানীয়গুলো কি কড়া মাত্রায় হয়ে যাচ্ছে? আমি কি উদ্বেগ, চাপ ও সমস্যাগুলো এড়ানোর জন্য মদ খাই? পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো বন্ধু কি আমার মদ্যপানের ব্যাপারে চিন্তা প্রকাশ করেছে? আমার মদ্যপান কি পরিবারের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে? এক সপ্তাহ, এক মাস বা কয়েক মাসের জন্য মদ থেকে বিরত থাকা কি আমার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে? আমি কতটা দ্রাক্ষারস বা মদ পান করি, তা কি অন্যদের কাছে লুকাই?’ কী হবে, যদি এই প্রশ্নগুলোর কয়েকটার উত্তর হ্যাঁ হয়? সেই ব্যক্তির মতো হবেন না, যে ‘দর্পণে আপনার স্বাভাবিক মুখ দেখে আর সে কিরূপ লোক, তাহা তখনই ভুলিয়া যায়।’ (যাকোব ১:২২-২৪) সমস্যাটাকে সংশোধন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিন। আপনি কী করতে পারেন?

১৮, ১৯. কীভাবে আপনি অপরিমিত মাত্রায় মদের ব্যবহার বন্ধ করতে পারেন?

১৮ প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের উপদেশ দিয়েছিলেন: “দ্রাক্ষারসে মত্ত হইও না, তাহাতে নষ্টামি আছে; কিন্তু আত্মাতে পরিপূর্ণ হও।” (ইফিষীয় ৫:১৮, ১৯) আপনার জন্য কতখানি অপরিমিত মাত্রার, তা নির্ণয় করুন এবং উপযুক্ত সীমাগুলো স্থাপন করুন। সেগুলো অতিক্রম না করার সংকল্প নিন; ইন্দ্রিয়দমন অভ্যাস করুন। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আপনার কি এমন বন্ধুবান্ধব রয়েছে, যারা আপনাকে অতিরিক্ত পান করার জন্য চাপ দেয়? তা হলে, সতর্ক থাকুন। “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে,” বাইবেল বলে, “কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।”—হিতোপদেশ ১৩:২০.

১৯ আপনি যদি কিছু সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মদ পান করে থাকেন, তা হলে সরাসরি সমস্যাটার মুখোমুখি হোন। ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শ কাজে লাগানোর দ্বারা সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করা যেতে পারে। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) একজন নির্ভরযোগ্য খ্রিস্টান প্রাচীনের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না। আপনার আধ্যাত্মিকতাকে গড়ে তোলার জন্য যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর সদ্ব্যবহার করুন। ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে শক্তিশালী করুন। তাঁর কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করুন—বিশেষভাবে আপনার দুর্বলতাগুলো সম্বন্ধে। ‘আপনার মর্ম্ম ও আপনার চিত্ত নির্ম্মল করিবার’ জন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি করুন। (গীতসংহিতা ২৬:২) আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে আপনার যথাসাধ্য করুন।

২০. অতিরিক্ত মদ্যপানের চলমান সমস্যাটার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য কোন পদক্ষেপগুলো হয়তো আপনি গ্রহণ করতে পারেন?

২০ আপনার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যদি অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস চলতেই থাকে, তা হলে কী বলা যায়? তা হলে আপনাকে যিশুর উপদেশ অনুসরণ করতে হবে: “তোমার হস্ত যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেল; দুই হস্ত লইয়া নরকে, . . . যাওয়া অপেক্ষা, বরং নুলা হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল।” (মার্ক ৯:৪৩, ৪৪) উত্তরটা হচ্ছে: একেবারেই পান করবেন না। একজন মহিলা যাকে আমরা ইরিন বলে ডাকব, তা করার সংকল্প নিয়েছিলেন। “প্রায় আড়াই বছর ধরে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ করার পর,” তিনি বলেন, “আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম যে, কেবল একবার পান করায় হয়তো তেমন অসুবিধা নেই, শুধু এটা দেখার জন্য যে তা আমার ওপর কতটা প্রভাব ফেলে। কিন্তু যে-মুহূর্তে আমি এমনটা ভেবেছি, সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা প্রার্থনায় যিহোবাকে জানিয়েছি। আমি সংকল্প নিয়েছি যে, নতুন জগৎ না আসা পর্যন্ত, এমনকি হয়তো সেখানেও আর কখনও আমি মদ্যজাতীয় পানীয় পান করব না।” ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে জীবন লাভ করার জন্য মদ্যপান পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া খুব বড় এক ত্যাগস্বীকার হবে না।—২ পিতর ৩:১৩.

“তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও”

২১, ২২. কোন বাধা জীবনের দৌড়ের শেষ সীমায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে এবং কীভাবে আমরা তা এড়িয়ে চলতে পারি?

২১ একজন খ্রিস্টানের জীবনধারাকে দৌড় বা প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও। আর যে কেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ব্ববিষয়ে ইন্দ্রিয়দমন করে। তাহার ক্ষয়ণীয় মুকুট পাইবার জন্য তাহা করে, কিন্তু আমরা অক্ষয় মুকুট পাইবার জন্য করি। অতএব আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না। বরং আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।”—১ করিন্থীয় ৯:২৪-২৭.

২২ পুরস্কার শুধুমাত্র তাদেরই দেওয়া হয়, যারা দৌড় সফলভাবে সমাপ্ত করে। জীবনের দৌড়ে মদের অপব্যবহার দৌড়ের শেষ সীমায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে। আমাদের অবশ্যই ইন্দ্রিয়দমন অভ্যাস করতে হবে। নিশ্চয়তার সঙ্গে দৌড়ানোর জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় “মদ্যপান” করা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। (১ পিতর ৪:৩) এর বিপরীতে, সমস্ত বিষয়ে আমাদের ইন্দ্রিয়দমন অভ্যাস করতে হবে। যখন মদ্যজাতীয় পানীয় পান করার বিষয়টা আসে, তখন আমরা ‘ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে . . . জীবন যাপন করিয়া’ বিজ্ঞ হই।—তীত ২:১২.

[পাদটীকা]

^ এই প্রবন্ধে যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, “মদ” বলতে বিয়ার, দ্রাক্ষারস এবং অন্যান্য সুরাজাতীয় পানীয়কে বোঝায়।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• মদের অপব্যবহার কী?

• মদের অপব্যবহারের ফলে কোন ক্ষতি হয়?

• কীভাবে আপনি মদের অপব্যবহারের বিপদগুলো এড়াতে পারেন?

• কীভাবে একজন ব্যক্তি মদের অপব্যবহারের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

দ্রাক্ষারস “মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক”

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের ব্যক্তিগত সীমা অবশ্যই জানতে হবে ও সেটার মধ্যেই থাকতে হবে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আগে থেকে নির্ধারণ করুন যে, কোথায় থামতে হবে

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার দুর্বলতাগুলো সম্বন্ধে যিহোবার কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করুন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

মদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের নির্দেশনা দেওয়ার দায়িত্ব বাবামার