যিহোশূয়ের পুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো
যিহোবার বাক্য জীবন্ত
যিহোশূয়ের পুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো
সাধারণ কাল পূর্ব ১৪৭৩ সালে মোয়াব তলভূমিতে শিবির স্থাপন করার সময়, ইস্রায়েলীয়রা এই কথাগুলো শুনে অবশ্যই রোমাঞ্চিত হয়েছিল: “তোমরা আপনাদের জন্য পাথেয় সামগ্রী প্রস্তুত কর; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিবার জন্য তিন দিনের মধ্যে তোমাদিগকে এই যর্দ্দন পার হইয়া যাইতে হইবে।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:১১) তাদের ৪০ বছর ধরে প্রান্তরে সাময়িক আবাসের সময় শেষ হতে যাচ্ছে।
দুই দশকের চেয়ে একটু বেশি সময় পর, নেতা যিহোশূয় কনান দেশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের উদ্দেশে ঘোষণা করেন: “দেখ, যে যে জাতি অবশিষ্ট আছে, এবং যর্দ্দন অবধি সূর্য্যাস্তগমনের দিকে মহাসমুদ্র পর্য্যন্ত যে সকল জাতিকে আমি উচ্ছিন্ন করিয়াছি, তাহাদের দেশ আমি তোমাদের বংশ সকলের অধিকারার্থে গুলিবাঁট দ্বারা বিভাগ করিয়াছি। আর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমাদের সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিবেন, তোমাদের দৃষ্টিগোচর হইতে তাড়াইয়া দিবেন, তাহাতে তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাহাদের দেশ অধিকার করিবে।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:৪, ৫.
৩সাধারণ কাল পূর্ব ১৪৫০ সালে, যিহোশূয়ের দ্বারা লিখিত যিহোশূয়ের পুস্তক হল এক রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক বিবরণ, যা সেই ২২ বছরে যা ঘটেছিল সেই সম্বন্ধে জানায়। যেহেতু আমরা প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতের একেবারে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি, তাই আমাদের পরিস্থিতি সেই ইস্রায়েল সন্তানদের সঙ্গে তুলনীয়, যারা প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অতএব, আসুন আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে যিহোশূয়ের পুস্তকের প্রতি মনোযোগ দিই।—ইব্রীয় ৪:১২.
“যিরীহোর তলভূমিতে”
যিহোশূয় কী এক কার্যভারই না পেয়েছিলেন, যখন যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “আমার দাস মোশির মৃত্যু হইয়াছে; এখন উঠ, তুমি এই সমস্ত লোক লইয়া এই যর্দ্দন পার হও, এবং তাহাদিগকে অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আমি যে দেশ দিতেছি, সেই দেশে যাত্রা কর”! (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:২) যিহোশূয়ের কার্যভার ছিল কয়েক লক্ষ লোক সমেত এক জাতিকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়া। প্রস্তুত হওয়ার জন্য তিনি দুজন গুপ্তচরকে যিরীহোতে পাঠান, যে-নগরটি প্রথমে জয় করতে হবে। সেই নগরে রাহব বেশ্যা বাস করেন, যিনি যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য যে-পরাক্রম কাজগুলো করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে শুনেছিলেন। তিনি গুপ্তচরদের রক্ষা এবং সাহায্য করেন আর এর ফলে তাদের কাছ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার প্রতিজ্ঞা লাভ করেন।
গুপ্তচররা ফিরে আসার পর, যিহোশূয় এবং লোকেরা এগিয়ে যাওয়ার এবং যর্দন নদী পার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। তীরের ওপর জলস্ফীতি সত্ত্বেও, তা তাদের জন্য বাধাস্বরূপ হয়নি কারণ যিহোবা স্রোতের প্রতিকূলে আসা জলকে এক বাঁধের ন্যায় দাঁড় করান এবং স্রোতের অভিমুখে আসা জলকে লবণ সমুদ্রের দিকে বয়ে যেতে দেন। যর্দন নদী পার হওয়ার পর, ইস্রায়েলীয়রা যিরীহোর নিকটবর্তী গিল্গলে শিবির স্থাপন করে। চার দিন পর, আবীব মাসের ১৪তম দিনের সন্ধ্যায় তারা যিরীহোর তলভূমিতে নিস্তারপর্ব পালন করে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৫:১০) পরের দিন, তারা সেই ভূমির কিছু উৎপাদিত দ্রব্য খেতে শুরু করে এবং মান্নার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়েই যিহোশূয় প্রান্তরে জন্মগ্রহণ করেছে এমন সমস্ত পুরুষের ত্বক্চ্ছেদ করান।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
২:৪, ৫—রাহব কেন রাজার লোকেদের ভুল তথ্য দেন, যারা গুপ্তচরদের খুঁজছিল? রাহব নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুপ্তচরদের রক্ষা করেন কারণ তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলেছেন। তাই, গুপ্তচররা কোথায় রয়েছে, সেই বিষয়ে ওই লোকেদের খবরাখবর দিতে তিনি বাধ্য নন, যারা ঈশ্বরের লোকেদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। (মথি ৭:৬; ২১:২৩-২৭; যোহন ৭:৩-১০) বস্তুত, রাহব “কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা” হয়েছিলেন, যে-কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল রাজার দূতদের ভুল তথ্য দেওয়া।—যাকোব ২:২৪-২৬.
৫:১৪, ১৫—“সদাপ্রভুর সৈন্যের অধ্যক্ষ” কে? প্রতিজ্ঞাত দেশ জয় করতে শুরু করার সময় যে-অধ্যক্ষ যিহোশূয়কে শক্তিশালী করতে আসেন, তিনি সম্ভবত “বাক্য”—মনুষ্যপূর্ব অস্তিতের সময় যিশু খ্রিস্ট—ছাড়া আর কেউই নন। (যোহন ১:১; দানিয়েল ১০:১৩) এই আশ্বাস পাওয়া কতই না শক্তিশালী যে, আজকে ঈশ্বরের লোকেরা আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রত থাকার সময় গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্ট তাদের সঙ্গে আছেন!
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১:৭-৯. রোজ বাইবেল পড়া, এটি যা বলে সেটা নিয়ে নিয়মিতভাবে ধ্যান করা এবং আমরা যা শিখি সেটা অভ্যাসে পরিণত করা আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টায় সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
১:১১. যিহোশূয় লোকেদের তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত করতে এবং ঈশ্বর তাদের জন্য জোগাবেন বলে অলসভাবে অপেক্ষা না করতে বলেছিলেন। জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জন্য উদ্বিগ্ন না হওয়ার বিষয়ে যিশুর উপদেশ ও সেইসঙ্গে “ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে,” তাঁর এই প্রতিজ্ঞার অর্থ এই নয় যে, নিজেদের ভরণপোষণের জন্য আমাদের কোনো প্রচেষ্টা করা উচিত নয়।—মথি ৬:২৫, ৩৩.
২:৪-১৩. যিহোবার মহৎ মহৎ কার্যের বিষয়ে শোনার এবং পরিস্থিতি যে চরম ছিল তা উপলব্ধি করার পর রাহব তাঁর উপাসনাকারীদের পক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আপনি যদি কিছু সময় ধরে বাইবেল অধ্যয়ন করে আসছেন এবং বুঝতে পারেন যে, আমরা “শেষ কালে” বাস করছি, তা হলে আপনার কি ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়?—২ তীমথিয় ৩:১.
৩:১৫. যে-গুপ্তচরদের যিরীহোতে পাঠানো হয়েছিল, তাদের তথ্য যেহেতু সন্তোষজনক ছিল, তাই যিহোশূয় যর্দনের জল কমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। সত্য উপাসনার সঙ্গে জড়িত কাজগুলোর বিষয়ে, পরিস্থিতিগুলো আরও উপযোগী হওয়া পর্যন্ত দেরি না করে আমাদের সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
৪:৪-৮, ২০-২৪. যর্দন নদীর মধ্যে থেকে নেওয়া ১২টা পাথর, ইস্রায়েলের জন্য এক অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। যিহোবার আধুনিক দিনের লোকেদেরকে তাদের শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করার বিষয়ে তাঁর কাজগুলোও এক অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে যে, তিনি তাদের সঙ্গে আছেন।
ক্রমাগত বিজয়লাভ
যিরীহো নগর “রুদ্ধ ও সংরুদ্ধ” থাকে, “কেহ ভিতরে আসিত না, কেহ বাহিরে যাইত না।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ৬:১) কীভাবে সেই নগর দখল করা যাবে? যিহোবা যিহোশূয়কে সেই কৌশল সম্বন্ধে জানান। খুব শীঘ্রই প্রাচীর ভেঙে পড়ে এবং নগর ধ্বংস হয়ে যায়। কেবল রাহব এবং তার পরিবারের লোকেরা রক্ষা পায়।
পরবর্তী সময়ে রাজধানী অয় জয় করা হয়। যে-গুপ্তচরদের সেখানে পাঠানো হয়, তারা তথ্য দেয় যে সেই নগরে অল্পসংখ্যক অধিবাসী রয়েছে, তাই তা আক্রমণ করতে বেশি লোকের প্রয়োজন নেই। কিন্তু, সেই নগরকে আক্রমণ করতে পাঠানো প্রায় ৩,০০০ সৈন্য অয়ের লোকেদের কাছ থেকে পালিয়ে আসে। এর কারণ? যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে নেই। যিহূদা বংশীয় আখন যিরীহো দখল করার সময় পাপ করেছিলেন।
বিষয়টা মিটমাট করার পর, যিহোশূয় অয় আক্রমণ করেন। ইস্রায়েলীয়দের একবার পরাজিত করার পর, অয়ের রাজা তাদের সঙ্গে লড়াই করতে উৎসুক ছিলেন। কিন্তু, যিহোশূয় অয়ের লোকেদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে এক কৌশল অবলম্বন করেন এবং তিনি নগরটা দখল করেন।গিবিয়োন হল এক ‘বৃহৎ নগর—অয় অপেক্ষাও বড়, আর তথাকার লোক হল বলবান।’ (যিহোশূয়ের পুস্তক ১০:২) যিরীহো এবং অয় নগরের ওপর ইস্রায়েলের সাফল্য সম্বন্ধে শোনার পর, গিবিয়োনের লোকেরা তাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্থাপন করার বিষয়ে যিহোশূয়কে প্রতারিত করে। আশেপাশের জাতিগুলো এই দলত্যাগকে তাদের জন্য এক হুমকি হিসেবে দেখে। এই জাতিগুলোর মধ্যে থেকে পাঁচ জন রাজা একত্রে হাত মিলিয়ে গিবিয়োন আক্রমণ করে। ইস্রায়েল গিবিয়োনীয়দের উদ্ধার করে এবং আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে। যিহোশূয়ের নেতৃত্বে ইস্রায়েলের অন্যান্য বিজয়লাভের অন্তর্ভুক্ত হল দক্ষিণ ও পশ্চিমের নগরগুলো আর সেইসঙ্গে উত্তরের রাজাদের জোটকে পরাজিত করা। যর্দনের পশ্চিমে যেসমস্ত রাজাকে পরাজিত করা হয়, তাদের মোট সংখ্যা হল ৩১ জন।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১০:১৩—কীভাবে এইরকম এক বিস্ময়কর ঘটনা সম্ভব হয়? “কোন কর্ম্ম কি সদাপ্রভুর অসাধ্য,” যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা? (আদিপুস্তক ১৮:১৪) যিহোবা যদি চান, তা হলে তিনি পৃথিবীর গতিকে নিজের মতো করে কাজে লাগাতে পারেন যার ফলে একজন পার্থিব পর্যবেক্ষকের কাছে সূর্য ও চাঁদকে গতিহীন বলে মনে হবে। অথবা তিনি সূর্য ও চাঁদের রশ্মিকে এমনভাবে প্রতিসরণ করতে পারেন যে, এই দুটো জ্যোতিষ্ক থেকে আসা আলো ক্রমাগত দীপ্তি দিতে থাকবে কিন্তু সেইসঙ্গে পৃথিবী ও চাঁদের গতি অপরিবর্তনীয় থাকবে। যাই হোক না কেন, মানব ইতিহাসে “এমন আর কোন দিন হয় নাই।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ১০:১৪.
১০:১৩—যাশের গ্রন্থ কী? এই গ্রন্থের নাম ২ শমূয়েল ১:১৮ পদে “ধনুর্গীত”—ইস্রায়েলের রাজা শৌল এবং তার ছেলে যোনাথনের সম্বন্ধে এক শোকগীত—নামে এক কবিতার বিষয়ে উল্লেখ করার সময় আবারও পাওয়া যায়। এই গ্রন্থটি সম্ভবত মহাকাব্য অথবা ঐতিহাসিক বিষয়ক গীত ও কবিতার এক সংগ্রহ এবং ইব্রীয়দের কাছে এটি সুপরিচিত ছিল বলে মনে হয়।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৬:২৬; ৯:২২, ২৩. যিরীহোর ধ্বংসের সময় যিহোশূয় যে-অভিশাপ ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রায় ৫০০ বছর পরে পরিপূর্ণ হয়েছিল। (১ রাজাবলি ১৬:৩৪) নোহের নাতি কনানের প্রতি নোহের অভিশাপ সেই সময় সত্য হয়, যখন গিবিয়োনীয়রা দাস হয়। (আদিপুস্তক ৯:২৫, ২৬) যিহোবার বাক্য সবসময় সত্য হয়।
৭:২০-২৫. কেউ কেউ সম্ভবত এই যুক্তি দেখিয়ে আখনের চুরিকে এক সামান্য অপরাধ বলে অগ্রাহ্য করতে পারে যে, এটা অন্যদের কোনো ক্ষতি করেনি। তারা বাইবেলের আইনের বিরুদ্ধে সামান্য চুরি অথবা লঘু অপরাধকে হয়তো একই দৃষ্টিতে দেখতে পারে। কিন্তু, আইনবিরুদ্ধ অথবা অনৈতিক কাজগুলো করার চাপকে প্রতিরোধ করার বিষয়ে আমাদের স্থিরসংকল্প যিহোশূয়ের মতো হওয়া উচিত।
৯:১৫, ২৬, ২৭. আমরা যে-চুক্তি করি, সেটাকে আমাদের অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং আমাদের কথা রাখতে হবে।
যিহোশূয় তার শেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি গ্রহণ করেন
(যিহোশূয়ের পুস্তক ১৩:১–২৪:৩৩)
এখন অতি বৃদ্ধ বয়সে—৯০ এর কাছাকাছি—যিহোশূয় দেশ ভাগ করে দেওয়া শুরু করেন। সত্যিই এক বিরাট কাজ! রূবেণ এবং গাদ ও সেইসঙ্গে মনঃশির অর্ধ বংশরা ইতিমধ্যেই যর্দনের পূর্বদিকে তাদের উত্তরাধিকার লাভ করেছে। বাকি বংশকে এরপর গুলিবাট করার মাধ্যমে পশ্চিম দিকে উত্তরাধিকার দেওয়া হয়।
ইফ্রয়িমের অঞ্চল শীলোতে আবাস স্থাপন করা হয়। কালেব হিব্রোণ নগর এবং যিহোশূয় তিম্নৎ-সেরহ লাভ করেন। লেবীয়দের ৪৮টা নগর দেওয়া হয়, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টা আশ্রয় নগর। যর্দনের পূর্বদিকে উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত জায়গায় ফিরে যাওয়ার সময় রূবেণীয়, গাদীয় এবং মনঃশির অর্ধ বংশের যোদ্ধারা একটা বেদি নির্মাণ করে, যা “দেখিতে বৃহৎ।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২২:১০) যর্দনের পশ্চিমদিকের বংশরা এটাকে এক ধর্মভ্রষ্ট কাজ হিসেবে দেখে আর তাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ প্রায় শুরু হতে যাচ্ছিল কিন্তু উত্তম ভাববিনিময়ের মাধ্যমে রক্তপাত থামানো যায়।
যিহোশূয় কিছু কাল তিম্নৎ-সেরহতে বাস করার পর তিনি ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ, অধ্যক্ষগণ, বিচারকর্তৃগণ এবং শাসকগণকে ডাকেন এবং তাদেরকে সাহসী হওয়ার ও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে, যিহোশূয় শিখিমে সমস্ত ইস্রায়েল বংশকে একত্রিত করেন। সেখানে তিনি অব্রাহামের সময় থেকে শুরু করে যিহোবার আচরণ সম্বন্ধে পুনরালোচনা করেন এবং আবারও তিনি তাদেরকে এই বলে উদ্বুদ্ধ করেন, “তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, সরলতায় ও সত্যে তাঁহার সেবা কর।” লোকেরা এই উত্তর দিতে পরিচালিত হয় “আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই সেবা করিব, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত করিব।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৪, ১৫, ২৪) এই সমস্ত বিষয়ের পরে যিহোশূয় ১১০ বছর বয়সে মারা যান।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১৩:১—যিহোশূয়ের পুস্তক ১১:২৩ পদে যা বলা আছে, তা কি এটার সঙ্গে পরস্পরবিরোধী নয়? না, কারণ প্রতিজ্ঞাত দেশ জয় করার মধ্যে দুটো দিক ছিল: প্রথমটা ছিল জাতীয় যুদ্ধ, যা কনানের ৩১ জন রাজাকে পরাজিত করেছিল ও কনানীয়দের ক্ষমতাকে পরাস্ত করেছিল আর দ্বিতীয়টা বংশগতভাবে ও আলাদা আলাদাভাবে দেশের পুরো অধিকার লাভ করা। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১৭:১৪-১৮; ১৮:৩) যদিও ইস্রায়েল সন্তানগণ তাদের মধ্যে থেকে কনানীয়দের সম্পূর্ণরূপে তাড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিল কিন্তু রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ইস্রায়েলের নিরাপত্তার জন্য ততটা হুমকিস্বরূপ ছিল না। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১৬:১০; ১৭:১২) যিহোশূয়ের পুস্তক ২১:৪৪ পদ বলে: ‘সদাপ্রভু চারিদিকে তাহাদিগকে বিশ্রাম দিলেন।’
২৪:২—অব্রাহামের বাবা তেরহ কি মূর্তিপূজক ছিলেন? প্রথমে তেরহ যিহোবা ঈশ্বরের উপাসক ছিলেন না। তিনি সম্ভবত সিন নামে চন্দ্রদেবতার—ঊরের এক বিখ্যাত দেবতার—উপাসনা করতেন। যিহুদি প্রথা অনুযায়ী তেরহ হয়তো এমনকি একজন মূর্তি নির্মাণকারীও ছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বরের আদেশে অব্রাহাম যখন ঊর ত্যাগ করেন, তখন তেরহ তার সঙ্গে হারণে গিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১১:৩১.
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১৪:১০-১৩. কালেব ৮৫ বছর বয়স্ক হলেও হিব্রোণ অঞ্চলের লোকেদের তাড়িয়ে দেওয়ার এক কঠিন কার্যভার গ্রহণের অনুরোধ জানান। এই অঞ্চল অনাকীয়দের—অস্বাভাবিক আকৃতির লোকেদের—অধিকারে রয়েছে। যিহোবার সাহায্যে এই দক্ষ যোদ্ধারা সফল হয় এবং হিব্রোণ আশ্রয় নগর হয়। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১৫:১৩-১৯; ২১:১১-১৩) কালেবের উদাহরণ আমাদের কঠিন ঐশিক কার্যভারগুলো এড়িয়ে না চলতে উৎসাহিত করে।
২২:৯-১২, ২১-৩৩. অন্যদের মনোভাবকে ভুলভাবে বিচার করার বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
“একটীও বিফল হয় নাই”
বৃদ্ধ বয়সে যিহোশূয় ইস্রায়েলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বলেন: “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪) যিহোশূয়ের ঐতিহাসিক বিবরণটি কত প্রাণবন্তভাবেই না তা তুলে ধরে!
“পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আমাদের আশা ভুল স্থানে রাখিনি। একটি প্রতিজ্ঞাও নিষ্ফল হবে না; সমস্তই সফল হবে।
[১০ পৃষ্ঠার মানচিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
যিহোশূয়ের নেতৃত্বে যে-দেশ জয় করা হয়
বাশন
গিলিয়দ
অরাবা
নেগেব
যর্দন নদী
লবণ সমুদ্র
যব্বোক উপত্যকা
অর্ণোন উপত্যকা
হাৎসোর
মাদোন
লশারোণ
শিম্রোণ
যক্নিয়াম
দোর
মগিদ্দো
কাদেশ
তানক
হেফর
তির্সা
অফেক
তপূহ
বৈথেল
অয়
গিল্গল
যিরীহো
গেষর
যিরূশালেম
মক্কেদা
যর্মূৎ
অদুল্লম
লিব্না
লাখীশ
ইগ্লোন
হিব্রোণ
দবীর
অরাদ
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি জানেন যে, কেন রাহব বেশ্যা ধার্মিক বলে গণিতা হয়েছিলেন?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের এই বলে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন “সদাপ্রভুকে ভয় কর, . . . তাঁহার সেবা কর”
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
আখনের চুরি সামান্য অপরাধ ছিল না —এটা গুরুতর পরিণতি নিয়ে এসেছিল
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
“বিশ্বাসে যিরীহোর প্রাচীর, . . . পড়িয়া গেল।”—ইব্রীয় ১১:৩০