সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন রীতিনীতিগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হোন

ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন রীতিনীতিগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হোন

ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন রীতিনীতিগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হোন

 ছোট্ট একটা উঠানে আফ্রিকার উত্তপ্ত সূর্যের নীচে একটা খোলা কফিন রাখা হয়েছে। শোকার্ত ব্যক্তিরা যখন তাদের শোক প্রকাশ করার জন্য সারি বেঁধে এটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি সেখানে থামেন। তার চোখমুখে শোকের ছায়া আর তিনি মৃত ব্যক্তির মুখের কাছে ঝুঁকে বলতে শুরু করেন: “তুমি চলে যাচ্ছো, তা আমাকে কেন বলনি? আমাকে এভাবে একা রেখে তুমি কেন চলে গেলে? তুমি যখন আবার ফিরে আসবে, তখন কি তুমি আমাকে ক্রমাগত সাহায্য করে যাবে?”

আফ্রিকার অন্য আরেকটা জায়গায় একটা শিশুর জন্ম হয়। শিশুটাকে দেখার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। কিছুদিন যাওয়ার পরই শিশুটাকে জনসমক্ষে আনা হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটা নাম দেওয়া হয়।

কিছু লোকের কাছে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা অথবা এক নবজাত শিশুকে অন্যদের কাছ থেকে আড়ালে রাখা হয়তো অস্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু সংস্কৃতি ও সমাজে, জন্ম ও মৃত্যুর প্রতি লোকেদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি এক জোরালো বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে আর তা হল, মৃতেরা আসলে মরেনি বরং জীবিত ও সচেতন রয়েছে।

এই বিশ্বাস এতটাই জোরালো যে, বিভিন্ন রীতিনীতি এবং আচার অনুষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে, যা জীবনের সমস্ত দিককে জড়িত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে একজনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলো—যেমন জন্ম, বয়ঃসন্ধি, বিবাহ, সন্তান জন্মদান এবং মৃত্যু—এক পরিবর্তনের অংশ, যেগুলো ব্যক্তিকে পূর্বপুরুষদের আত্মিক রাজ্যে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা হয় যে, মৃত ব্যক্তি যাদের ছেড়ে গিয়েছেন, তাদের জীবনে তিনি এক সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেন। আর এভাবে পুনর্জন্মের মাধ্যমে তিনি জীবনচক্রের মধ্যেই থাকেন।

এই চক্রের সমস্ত পর্যায়ের মধ্যে এক সুষম পরিবর্তন নিশ্চিত করার জন্য অসংখ্য রীতিনীতি ও অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এই রীতিনীতিগুলো এই বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয় যে, আমাদের মধ্যে এমন কিছু আছে, যা মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে। সত্য খ্রিস্টানরা এই বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো রীতিনীতিকে পরিহার করে থাকে। কেন?

মৃতদের অবস্থা কী?

মৃত ব্যক্তির অবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। এটি সরলভাবে বলে: “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, . . . তাহাদের প্রেম, তাহাদের দ্বেষ ও তাহাদের ঈর্ষা সকলই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে; . . . তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে [মানবজাতির সাধারণ কবরে] কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” (উপদেশক ৯:৫, ৬, ১০) ঈশ্বরের সত্য উপাসকরা যুগ যুগ ধরে বাইবেলের এই মৌলিক সত্যকে গ্রহণ করে এসেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, মানুষের কোনো অংশই অমর নয়। (গীতসংহিতা ১৪৬:৪) মৃত ব্যক্তিরা সচেতন এবং তারা জীবিতদের প্রভাবিত করতে পারে, এমন বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো রীতিনীতি বা আচার অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক থাকার জন্য প্রাচীনকালে যিহোবা তাঁর লোকেদের কড়াকড়িভাবে আদেশ দিয়েছিলেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:১; ১৮:৯-১৩; যিশাইয় ৮:১৯, ২০.

একইভাবে, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরাও মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো পরম্পরাগত রীতিনীতি বা অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেছিল। (২ করিন্থীয় ৬:১৫-১৭) আজকে যিহোবার সাক্ষিরা জাতি, উপজাতি বা পটভূমি নির্বিশেষে পরম্পরাগত বিষয় ও রীতিনীতিগুলো পরিহার করে থাকে, যেগুলো এই মিথ্যা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে, মৃত্যুর পর মানুষের মধ্যে কিছু বেঁচে থাকে।

খ্রিস্টান হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো রীতিনীতি পালন করব কি না, সেটা নির্ধারণ করতে কোন বিষয়টা আমাদের পরিচালনা দিতে পারে? আমাদের অবশ্যই সতর্কভাবে চিন্তা করতে হবে যে, এর সঙ্গে অশাস্ত্রীয় কোনো শিক্ষার সম্ভাব্য যোগসূত্র আছে কি না, যেমন এই বিশ্বাস যে, মৃত ব্যক্তিদের আত্মা জীবিতদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ ছাড়া, আমাদের এই বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে যে, এই ধরনের কোনো রীতিনীতি বা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্যদের বিঘ্ন জন্মাতে পারে কি না, যারা যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বাস এবং শিক্ষা সম্বন্ধে জানে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আসুন আমরা চিন্তার দুটো ক্ষেত্র পরীক্ষা করে দেখি—জন্ম এবং মৃত্যু।

জন্ম এবং শিশুর নামকরণের অনুষ্ঠানগুলো

শিশুর জন্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনেক রীতিনীতিই উপযুক্ত। কিন্তু, যে-জায়গাগুলোতে শিশুর জন্মকে সাধারণত পূর্বপুরুষদের আত্মারা থাকে এমন এক রাজ্য থেকে পরিবর্তিত হয়ে মানবসমাজে আগমন হিসেবে দেখা হয়, সেখানে সত্য খ্রিস্টানদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আফ্রিকার কিছু কিছু জায়গায় এক নবজাত শিশুকে ঘরের ভিতরেই রাখা হয় এবং একটা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত নাম রাখা হয় না। অপেক্ষার এই সময়কাল যদিও স্থানভেদে বিভিন্ন হতে পারে কিন্তু সেই সময়কালের শেষে শিশুর নামকরণের অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে আর সেই সময় শিশুকে বাইরে নিয়ে আসা হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের দেখানো হয়। এই সময়ই আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে সেই শিশুর নাম ঘোষণা করা হয়।

এই রীতিনীতির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঘানা—অধিবাসী এবং তাদের সংস্কৃতি বোঝা (ইংরেজি) বইটি বলে: “জীবনের প্রথম সাত দিন একটা শিশু ‘পরিদর্শনের’ মধ্যে ও আত্মিক জগৎ থেকে পার্থিব জীবনে পরিবর্তিত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। . . . তাই শিশুটিকে সাধারণত ঘরের ভিতরেই রাখা হয় এবং বাইরের লোকদেরকে তাকে দেখার অনুমতি দেওয়া হয় না।”

শিশুর নামকরণের অনুষ্ঠানের পূর্বে কেন এই অপেক্ষার পালা? ঘানার অতীতের ঘটনাবলির প্রতি দৃষ্টিপাত (ইংরেজি) বইটি ব্যাখ্যা করে: “অষ্টম দিনের আগে, সেই শিশুকে মানব হিসেবে মনে করা হয় না। সে তখনও কমবেশি অন্য জগতের সঙ্গেই জড়িত থাকে, যেখান থেকে সে এসেছে।” বইটি আরও বলে: “যেহেতু নামই একটা শিশুকে মানবে পরিণত করে, তাই যখন এক দম্পতি আশঙ্কা করে যে তাদের বাচ্চাটা মারা যাবে, তখন তারা সাধারণত যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হয় যে তাদের বাচ্চাটা বেঁচে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নাম রাখা থেকে তারা বিরত থাকে। . . . তাই এই মৌল অবস্থান্তর সংক্রান্ত অনুষ্ঠানকে কখনও কখনও শিশুর বহিরাগমন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল, যেটা শিশু এবং তার বাবামার জন্য ভয়ানক পরিণতি বলে মনে করা হতো। এটা হচ্ছে এমন এক অনুষ্ঠান, যা শিশুকে অন্যদের সাহচর্যে বা মানুষদের পৃথিবীতে নিয়ে আসে।”

শিশুর নামকরণের এই ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণত পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি মূল দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানের কার্যক্রম হয়তো স্থানবিশেষে আলাদা হয়ে থাকে, তবে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে দেবতাদের উদ্দেশে মদ্যজাতীয় পানীয় উৎসর্গ করা, শিশুর নিরাপদ আগমনের জন্য পূর্বপুরুষদের আত্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রার্থনা করা এবং অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান জড়িত থাকে।

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ তখনই হয়ে থাকে, যখন শিশুটির নাম ঘোষণা করা হয়। যদিও তাদের নিজের সন্তানের নাম রাখার দায়িত্ব বাবামার, তবে নাম বাছাই করার ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনেরও এক জোরালো প্রভাব রয়েছে। কিছু নাম হয়তো স্থানীয় ভাষায় এক রূপক অর্থ বহন করতে পারে যেমন, “গমন ও আগমন,” “মায়ের দ্বিতীয় আগমন” অথবা “বাবার পুনরাগমন।” অন্য নামগুলোর এমনও অর্থ থাকে, যা পূর্বপুরুষদের সেই নবজাত শিশুটিকে আবারও মৃত্যুপুরীতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেবে।

অবশ্য, একটা শিশু জন্ম নিলে তাতে আনন্দ করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। কারও নামে শিশুর নাম রাখা এবং তার জন্মের সময়কার পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখাটা প্রচলিত রীতিনীতি আর কখনই বা শিশুর নাম রাখা হবে, তা নির্ধারণ করা এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু, যে-খ্রিস্টানরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চায় তারা এমন যেকোনো রীতিনীতি বা অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে চলার বিষয়ে সতর্ক, যা অন্যদের মধ্যে এমন ধারণা দিতে পারে যে খ্রিস্টানরাও সেই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত যে, নবজাত শিশুটি হল এক “পরিদর্শক” যে কিনা পূর্বপুরুষদের আত্মিক জগৎ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছে।

এ ছাড়া, যদিও সমাজের অনেকেই নামকরণের অনুষ্ঠানটাকে রূপান্তরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, তবুও খ্রিস্টানদের উচিত অন্যদের বিবেকের প্রতি উপলব্ধি দেখানো এবং অবিশ্বাসীদের ওপর কীরকম ছাপ ফেলে তা তাদের বিবেচনা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, এক খ্রিস্টীয় পরিবার যদি শিশুর নামকরণ অনুষ্ঠান করার আগে পর্যন্ত তাদের নবজাত শিশুকে অন্যদের না দেখায়, তা হলে কেউ কেউ হয়তো কোন উপসংহারে আসতে পারে? নামগুলো যদি বাইবেলের সত্যের শিক্ষক হিসেবে তাদের দাবির পরস্পরবিরোধী হয়, তা হলে তা কোন প্রভাব ফেলবে?

তাই, কীভাবে এবং কখন তাদের সন্তানদের নাম রাখবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় খ্রিস্টানরা ‘সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে করিবার’ জন্য চেষ্টা করে থাকে, যাতে তা কোনোরকম বিঘ্নের কারণ না হয়। (১ করিন্থীয় ১০:৩১-৩৩) তারা মৃতদের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আয়োজিত ‘পরম্পরাগত বিধি পালনের নিমিত্ত ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য’ করে না। এর পরিবর্তে তারা জীবন্ত ঈশ্বর যিহোবাকে সম্মান এবং গৌরব প্রদান করে।—মার্ক ৭:৯, ১৩.

মৃত্যু থেকে জীবনে রূপান্তর

জন্মের মতো মৃত্যুকেও অনেকে এক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে; যে-ব্যক্তি মারা যান তিনি দৃশ্যত জগৎ থেকে মৃত ব্যক্তিদের আত্মার অদৃশ্য রাজ্যে চলে যান। অনেকে বিশ্বাস করে যে, একজন ব্যক্তির মৃত্যু হলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নির্দিষ্ট রীতিনীতি এবং অনুষ্ঠানগুলো যদি সম্পন্ন করা না হয়, তা হলে পূর্বপুরুষদের আত্মারা ক্রুদ্ধ হবে, যাদের সম্বন্ধে মনে করা হয় যে, জীবিতদের শাস্তি দেওয়ার অথবা পুরস্কৃত করার ক্ষমতা সেই আত্মাদের রয়েছে। এই বিশ্বাস অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ধরন ও আয়োজনের ওপর জোরালোভাবে প্রভাব ফেলে থাকে।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যা মৃত ব্যক্তিকে শান্ত করার জন্য করা হয়ে থাকে, তাতে প্রায়ই প্রচণ্ড আবেগ জড়িত থাকে—মৃতদেহের সামনে চরম শোক প্রকাশ ও চিৎকার থেকে শুরু করে সমাহিত করার পর আনন্দপূর্ণ উৎসব করা হয়। অবাধে ভোজন পান করা এবং প্রচণ্ড জোরে গান বাজিয়ে গানের সঙ্গে নাচার মতো বিষয়গুলো এই ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানগুলোর এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এত বেশি জাঁকজমকতা জড়িত যে, এমনকি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারগুলোও প্রায়ই “এক শোভন সমাধির” জন্য যথেষ্ট টাকাপয়সা জোগাতে কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকে, যদিও এইজন্য তাদের ওপর কষ্ট আসে ও ঋণ করতে হয়।

বছরের পর বছর ধরে যিহোবার সাক্ষিরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অশাস্ত্রীয় রীতিনীতিগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উন্মোচন করেছে। * এই ধরনের রীতিনীতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত মৃতদেহকে পাহারা দেওয়া, মৃতদেহে মদ্যজাতীয় পানীয় ঢালা, মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা এবং অনুরোধ করা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বার্ষিকী উদ্‌যাপন করা এবং একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পরও কিছু বেঁচে থাকে এই বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য রীতিনীতিগুলো। ঈশ্বরের অসম্মানজনক এই ধরনের রীতিনীতিগুলো “অশুচি,” এক “অনর্থক প্রতারণা,” যার ভিত্তি ঈশ্বরের সত্যের বাক্য নয়, বরং ‘মনুষ্যের পরম্পরাগত শিক্ষা।’—যিশাইয় ৫২:১১; কলসীয় ২:৮.

মেনে চলার চাপ

পরম্পরাগত রীতিনীতিগুলো এড়িয়ে চলা কারও কারও জন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় বলে প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে সেই দেশগুলোতে যেখানে মৃতদের সম্মান করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। এই ধরনের রীতিনীতিগুলো পালন না করায় যিহোবার সাক্ষিদের সন্দেহের চোখে দেখা হয় অথবা অসামাজিক এবং মৃত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখায় না বলে অভিযোগ করা হয়। বাইবেলের সত্যের সঠিক বোধগম্যতা থাকা সত্ত্বেও সমালোচনা এবং প্রচণ্ড চাপ কারও কারও মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেছে এই জন্য যে, তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা দেখা যাবে। (১ পিতর ৩:১৪) অন্যেরা মনে করেছে যে, এই রীতিনীতিগুলো তাদের সংস্কৃতির অংশ আর তা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা যাবে না। এ ছাড়া কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছে যে, রীতিনীতি পালন করতে অস্বীকার করাটা সমাজে ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে প্রতিকূল ধারণার কারণ হতে পারে।

আমরা অযথা অন্যদের অসন্তুষ্ট করতে চাই না। তবুও, বাইবেল আমাদের সতর্ক করে যে সত্যের পক্ষে এক দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার ফল হবে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন জগতের অনুমোদন হারানো। (যোহন ১৫:১৮, ১৯; ২ তীমথিয় ৩:১২; ১ যোহন ৫:১৯) আমরা স্বেচ্ছায় এই ধরনের এক পদক্ষেপ নিই, এটা জেনে যে আমাদের অবশ্যই সেই ব্যক্তিদের থেকে আলাদা হতে হবে, যারা আধ্যাত্মিক অন্ধকারে রয়েছে। (মালাখি ৩:১৮; গালাতীয় ৬:১২) ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করবে এমন কিছু করার ব্যাপারে শয়তানের প্রলোভনকে যিশু যেমন প্রতিরোধ করেছিলেন, তেমনই আমরাও এমন কিছু করার চাপকে প্রতিরোধ করি, যা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে। (মথি ৪:৩-৭) লোকভয়ের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বরং খ্রিস্টানরা যিহোবা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা এবং সত্যের ঈশ্বর হিসেবে তাঁকে সম্মান করার ব্যাপারে অধিক চিন্তিত। আর তারা অন্যান্যদের কাছ থেকে আসা চাপের কারণে শুদ্ধ উপাসনা সম্বন্ধে বাইবেলের মানগুলোতে আপোশ না করে তা করে থাকে।—হিতোপদেশ ২৯:২৫; প্রেরিত ৫:২৯.

মৃতদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা যিহোবাকে সম্মান করা

আমাদের কোনো প্রিয়জন মারা গেলে পর প্রচণ্ড মানসিক বেদনা ও শোক অনুভব করা স্বাভাবিক। (যোহন ১১:৩৩, ৩৫) প্রিয় ব্যক্তির স্মৃতি হৃদয়ে পোষণ করা এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাহিত করার ব্যবস্থা করা উপযুক্ত আর তা করা আমাদের ভালবাসার যথার্থ প্রকাশ। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের অসন্তোষজনক যেকোনো পরম্পরাগত প্রথাগুলো পালন না করেই মৃত্যুর প্রচণ্ড শোককে কাটিয়ে ওঠে। মৃত ব্যক্তির প্রতি যথেষ্ট ভয় রয়েছে এমন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিদের পক্ষে এটা করা খুব সহজ নয়। আমাদের ঘনিষ্ঠ কারও মৃত্যুতে প্রচণ্ড মানসিক দুঃখের কারণে ভারসাম্য বজায় রাখা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তা সত্ত্বেও, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” যিহোবার দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং সহবিশ্বাসীদের প্রেমপূর্ণ সমর্থন থেকে উপকৃত হয়। (২ করিন্থীয় ১:৩, ৪) অচেতন মৃত ব্যক্তিরা যারা ঈশ্বরের স্মৃতিতে রয়েছে তারা একদিন আবার জীবিত হবে, সত্য খ্রিস্টানদের এই দৃঢ় বিশ্বাস তাদেরকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অখ্রিস্টীয় রীতিনীতিগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা থাকার উপযুক্ত কারণ জোগায়, যেগুলো পুনরুত্থানের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে।

আমরা কি রোমাঞ্চিত নই যে, যিহোবা আমাদেরকে “অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে” আমন্ত্রণ জানিয়েছেন? (১ পিতর ২:৯) আমরা যখন কোনো শিশুর জন্মে আনন্দ করি এবং কারও মৃত্যুর কষ্ট সহ্য করি, তখন যা সঠিক তা করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের গভীর ভালবাসা আমাদেরকে সবসময় ‘দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চলিতে’ পরিচালিত করে। আমরা যেন কখনও ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন অখ্রিস্টীয় রীতিনীতিগুলোর দ্বারা নিজেদের আধ্যাত্মিকভাবে কলুষিত না করি।—ইফিষীয় ৫:৮.

[পাদটীকা]

^ দয়া করে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত মৃত লোকেদের আত্মারা—এরা কি আপনাকে সাহায্য অথবা আপনার ক্ষতি করতে পারে? এদের কি সত্যিই অস্তিত্ব আছে? (ইংরেজি) এবং অনন্তজীবনে যাওয়ার পথ—আপনি কি তা খুঁজে পেয়েছেন? (ইংরেজি) ব্রোশারগুলো দেখুন।