সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের রাজ্যের পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত হয়

ঈশ্বরের রাজ্যের পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত হয়

ঈশ্বরের রাজ্যের পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত হয়

“তোমরা যে সেই [ভাববাণীর বাক্যের] প্রতি মনোযোগ করিতেছ, তাহা ভালই করিতেছ; তাহা এমন প্রদীপের তুল্য, যাহা . . . অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয়।”—২ পিতর ১:১৯.

১. আজকে জগতে আমরা কোন বৈসাদৃশ্য দেখতে পাই?

 সংকটের পর সংকট—এটাই হল আজকের জগতের প্রধান বিষয়বস্তু। বাস্তুসংস্থান সম্বন্ধীয় বিপর্যয় থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত মানবজাতির সমস্যাগুলো সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে মনে হয়। এমনকি জগতের ধর্মগুলোও সাহায্য করতে সমর্থ হয়নি। বস্তুত, বেশির ভাগ সময়ই ধর্মগুলো গোঁড়ামি, ঘৃণা এবং জাতীয়তাবাদ, যা মানুষকে বিভক্ত করে, সেগুলোকে উসকে দিয়ে বিষয়গুলোকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়। হ্যাঁ, ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী “ঘোর তিমির জাতিগণকে” আচ্ছাদিত করেছে। (যিশাইয় ৬০:২) কিন্তু, একই সময়ে লক্ষ লক্ষ লোক আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন? কারণ তারা ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যের প্রতি মনোযোগ দেয়, “তাহা এমন প্রদীপের তুল্য, যাহা . . . অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয়।” তারা ঈশ্বরের “বাক্য” অথবা বার্তা, যা এখন বাইবেলে পাওয়া যায়, সেটিকে তাদের চলার পথে নির্দেশনা দিতে দেয়।—২ পিতর ১:১৯.

২. “শেষকাল” সম্বন্ধে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, কেবল কাদের আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি দেওয়া হয়?

“শেষকাল” সম্বন্ধে ভাববাদী দানিয়েল লিখেছিলেন: “অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে। অনেকে আপনাদিগকে পরিষ্কৃত ও শুক্ল করিবে এবং পরীক্ষাসিদ্ধ হইবে, কিন্তু দুষ্টেরা দুষ্টাচরণ করিবে, আর দুষ্টদের মধ্যে কেহ বুঝিবে না; কেবল বুদ্ধিমানেরাই বুঝিবে।” (দানিয়েল ১২:৪, ১০) আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি কেবল তাদের জন্য সংরক্ষিত আছে, যারা অকপটভাবে “ইতস্ততঃ ধাবমান” হয় অথবা অধ্যবসায়ের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে, তাঁর মানগুলোর প্রতি বশীভূত হয় এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।—মথি ১৩:১১-১৫; ১ যোহন ৫:২০.

৩. আঠারোশো সত্তরের দশকে, প্রাথমিক বাইবেল ছাত্ররা কোন গুরুত্বপূর্ণ সত্য বুঝতে পেরেছিল?

‘শেষ কাল’ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে, ১৮৭০ দশকের শুরুর দিকে যিহোবা ঈশ্বর ‘স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকলের’ ওপর আরও আলো বর্ষণ করতে শুরু করেন। (২ তীমথিয় ৩:১-৫; মথি ১৩:১১) সেই সময়ে একদল বাইবেল ছাত্র—জনপ্রিয় মতবাদের বিপরীতে—বুঝতে পেরেছিল যে, খ্রিস্টের পুনরাগমন অদৃশ্যভাবে হওয়ার কথা। স্বর্গে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, যিশু এই অর্থে পুনরাগমন করবেন যে, রাজা হিসেবে তিনি পৃথিবীর ওপর তাঁর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন। এক দৃশ্যত, যৌগিক চিহ্ন তাঁর শিষ্যদের সতর্ক করে দেবে যে, তাঁর অদৃশ্য উপস্থিতি (NW) শুরু হয়ে গিয়েছে।—মথি ২৪:৩-১৪.

এক পূর্বাভাস যখন বাস্তবে পরিণত হয়

৪. কীভাবে যিহোবা তাঁর আধুনিক দিনের দাসদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছেন?

রূপান্তরের দর্শন ছিল রাজ্য ক্ষমতায় খ্রিস্ট সম্বন্ধে এক লক্ষণীয় পূর্বাভাস। (মথি ১৭:১-৯) সেই দর্শন এক সময়ে পিতর, যাকোব এবং যোহনের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল, যখন অনেকে যিশুকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছিল কারণ তিনি তাদের অশাস্ত্রীয় প্রত্যাশা পূরণ করেননি। একইভাবে, এই শেষ সময়ে যিহোবা সেই চমৎকার দর্শন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার ওপর আরও আলো বর্ষণ করার মাধ্যমে তাঁর আধুনিক দিনের দাসদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছেন। আসুন এখন আমরা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এমন আধ্যাত্মিক বাস্তবতাগুলোর কয়েকটা বিবেচনা করি।

৫. কে প্রভাতীয় তারা প্রমাণিত হন এবং কখন ও কীভাবে তিনি “উদিত” হয়েছিলেন?

রূপান্তরের বিষয়ে উল্লেখ করে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ভাববাণীর বাক্য দৃঢ়তর হইয়া আমাদের নিকটে রহিয়াছে; তোমরা যে সেই বাণীর প্রতি মনোযোগ করিতেছ, তাহা ভালই করিতেছ; তাহা এমন প্রদীপের তুল্য, যাহা যে পর্য্যন্ত দিনের আরম্ভ না হয় এবং প্রভাতীয় তারা তোমাদের হৃদয়ে উদিত না হয়, সেই পর্য্যন্ত অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয়।” (২ পিতর ১:১৯) সেই রূপক প্রভাতীয় তারা বা “উজ্জ্বল প্রভাতীয় নক্ষত্র” হলেন গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্ট। (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৬) তিনি ১৯১৪ সালে “উদিত” হয়েছিলেন, যখন ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গে জন্ম লাভ করেছিল, যা নতুন যুগের সূচনাকে চিহ্নিত করেছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) রূপান্তরের দর্শনে, মোশি এবং এলিয়কে যিশুর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। তারা কাদের চিত্রিত করে?

৬, ৭. রূপান্তরের দর্শনে মোশি এবং এলিয় কাদের চিত্রিত করে আর তাদের দ্বারা চিত্রিত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে শাস্ত্র কোন গুরুত্বপূর্ণ বিস্তারিত বিষয় প্রকাশ করে?

যেহেতু মোশি এবং এলিয় খ্রিস্টের মহিমায় অংশ নিয়েছিল, তাই এই দুজন বিশ্বস্ত সাক্ষি অবশ্যই তাদের চিত্রিত করে, যারা যিশুর সঙ্গে তাঁর রাজ্যে শাসন করে। যিশুর যে সহশাসক রয়েছে, এই বোধগম্যতা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত মশীহের দর্শনমূলক পূর্বাভাসের সঙ্গে মিলে যায়, যা ভাববাদী দানিয়েলকে দেওয়া হয়েছিল। দানিয়েল ‘মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষকে অনেক দিনের বৃদ্ধ,’ যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে “অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব” নিতে দেখেছিলেন। কিন্তু, এর কিছু পরেই দানিয়েল কী দেখেছিলেন, তা লক্ষ করুন। তিনি লিখেছিলেন: “রাজত্ব, কর্ত্তৃত্ব ও সমস্ত আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত রাজ্যের মহিমা পরাৎপরের পবিত্র প্রজাদিগকে দত্ত হইবে।” (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪, ২৭) হ্যাঁ, রূপান্তরের পাঁচশো বছরের বেশি সময় আগে ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে, নির্দিষ্ট ‘পবিত্রগণ’ খ্রিস্টের রাজকীয় মহিমার অংশ হবে।

দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে পবিত্রগণ কারা? এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যাদের বিষয়ে প্রেরিত পৌল বলেন: “আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ—যদি বাস্তবিক আমরা তাঁহার সহিত দুঃখভোগ করি, যেন তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিতও হই।” (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) এই পবিত্রগণ যিশুর আত্মায় অভিষিক্ত শিষ্যরা ছাড়া আর কেউই নয়। প্রকাশিত বাক্যে যিশু বলেন: “যে জয় করে, তাহাকে আমার সহিত আমার সিংহাসনে বসিতে দিব, যেমন আমি আপনি জয় করিয়াছি, এবং আমার পিতার সহিত তাঁহার সিংহাসনে বসিয়াছি।” এই পুনরুত্থিত ‘জয়ী ব্যক্তিরা,’ যাদের সংখ্যা ১,৪৪,০০০, যিশুর সঙ্গে পুরো পৃথিবীর ওপর শাসন করবে।—প্রকাশিত বাক্য ৩:২১; ৫:৯, ১০; ১৪:১, ৩, ৪; ১ করিন্থীয় ১৫:৫৩.

৮. কীভাবে যিশুর অভিষিক্ত শিষ্যরা মোশি এবং এলিয়ের মতো একইরকম কাজ করেছে এবং এর ফল কী হয়েছে?

কিন্তু, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কেন মোশি এবং এলিয়ের দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে? এর কারণ হল যে, এই খ্রিস্টানরা মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে থাকার সময় মোশি এবং এলিয়ের দ্বারা কৃত একইরকম কাজ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, তারা যিহোবার সাক্ষি হিসেবে কাজ করে, এমনকি তাড়নার মধ্যেও। (যিশাইয় ৪৩:১০, NW; প্রেরিত ৮:১-৮; প্রকাশিত বাক্য ১১:২-১২) মোশি এবং এলিয়ের মতো তারা সাহসের সঙ্গে মিথ্যা ধর্মকে উন্মোচন করে দেয় ও সেইসঙ্গে অকপট লোকেদের ঈশ্বরকে ঐকান্তিক ভক্তি দেওয়ার জন্য প্রণোদিত করে। (যাত্রাপুস্তক ৩২:১৯, ২০; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২২-২৪; ১ রাজাবলি ১৮:১৮-৪০) তাদের কাজ কি কোনো ফল উৎপন্ন করেছে? অবশ্যই! সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিকে একত্রিত করতে সাহায্য করার পাশাপাশি তারা লক্ষ লক্ষ ‘আরও মেষকে’ যিশু খ্রিস্টের প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত হতে সাহায্য করেছে।—যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৪.

খ্রিস্ট তাঁর জয় সম্পূর্ণ করেন

৯. প্রকাশিত বাক্য ৬:২ পদ কীভাবে আজকের যিশুকে চিত্রিত করে?

যিশু খ্রিস্ট এখন আর গর্দভশাবকের ওপর বসা এক সামান্য মানুষ নন বরং তিনি এখন ক্ষমতাবান রাজা। ঘোড়া—যা বাইবেলে যুদ্ধের প্রতীক—তিনি, সেটার ওপর বসে আছেন বলে চিত্রিত করা হয়েছে। (হিতোপদেশ ২১:৩১) “দেখ, এক শুক্লবর্ণ অশ্ব,” প্রকাশিত বাক্য ৬:২ পদ বলে, “এবং তাহার উপরে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি ধনুর্ধারী, ও তাঁহাকে এক মুকুট দত্ত হইল; এবং তিনি জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার জন্য বাহির হইলেন।” অধিকন্তু, যিশু সম্বন্ধে গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু সিয়োন হইতে তোমার পরাক্রম-দণ্ড প্রেরণ করিবেন, তুমি আপন শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব করিও।”—গীতসংহিতা ১১০:২.

১০. (ক) কীভাবে জয় করার জন্য যিশুর আরোহণের এক গৌরবান্বিত শুরু হয়েছিল? (খ) কীভাবে খ্রিস্টের প্রথম বিজয় সমগ্র জগৎকে প্রভাবিত করেছিল?

১০ যিশুর প্রথম বিজয় ছিল তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী শত্রুর—শয়তান এবং তার মন্দ দূতেদের—ওপর। স্বর্গ থেকে বিতারিত করে তিনি তাদের পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেন। তাদের সময় অল্প জেনে এই দুষ্ট আত্মারা মানবজাতির ওপর প্রচণ্ড ক্রোধ প্রকাশ করে ও মহাবিপর্যয় ঘটায়। এই বিপর্যয় প্রকাশিত বাক্য বইয়ে আরও তিনটে ঘোড়ার আরোহণ দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৬:৩-৮; ১২:৭-১২) ‘[তাঁহার] আগমনের [“উপস্থিতির,” NW] এবং যুগান্তের’ বা বিধিব্যবস্থার শেষের ‘চিহ্নের’ বিষয়ে বলা যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঘোড়ার ওপর তাদের আরোহণের কারণে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং ভয়ানক মহামারি হয়েছে। (মথি ২৪:৩, ৭; লূক ২১:৭-১১) আক্ষরিক প্রসব বেদনার মতো নিঃসন্দেহে এই ‘যাতনা’ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে যতদিন পর্যন্ত না খ্রিস্ট শয়তানের দৃশ্যত সংগঠনের সমস্ত চিহ্ন ধ্বংস করে দেওয়ার মাধ্যমে “জয়” সম্পূর্ণ করেন। *মথি ২৪:৮.

১১. কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ইতিহাস খ্রিস্টের রাজকীয় কর্তৃত্বের বিষয়ে প্রমাণ দেয়?

১১ যিশুর রাজকীয় কর্তৃত্ব এই অর্থেও স্পষ্ট যে, তিনি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে সুরক্ষিত রেখেছেন, যাতে এটি পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের বার্তা প্রচার করার দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে পারে। মহতী বাবিল—মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সম্রাজ্য—এবং শত্রুভাবাপন্ন সরকারগুলোর কাছ থেকে নিষ্ঠুর বিরোধিতা সত্ত্বেও, প্রচার কাজ কেবল এগিয়েই চলেনি কিন্তু সেইসঙ্গে পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫, ৬) খ্রিস্টের রাজপদের কী এক জোরালো প্রমাণ!—গীতসংহিতা ১১০:৩.

১২. কেন বেশির ভাগ লোক খ্রিস্টের অদৃশ্য উপস্থিতি বুঝতে পারে না?

১২ তবে, এটা দুঃখজনক যে বেশির ভাগ লোক যাদের অন্তর্ভুক্ত খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, পৃথিবীতে সংঘটিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর পিছনে অদৃশ্য বাস্তবতাগুলো বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এমনকি তাদের উপহাস করে, যারা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে। (২ পিতর ৩:৩, ৪) কেন? কারণ শয়তান তাদের মনকে অন্ধ করে রেখেছে। (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) বস্তুত, সে শত শত বছর আগে থেকে খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন ব্যক্তিদের ওপর আধ্যাত্মিক অন্ধকারের আবরণ দেওয়া শুরু করেছে, এমনকি তাদেরকে বহুমূল্য রাজ্যের আশা পরিত্যাগ করতে প্ররোচিত করেছে।

রাজ্যের আশাকে পরিত্যাগ করা হয়

১৩. আধ্যাত্মিক অন্ধকারের আবরণ কোন দিকে পরিচালিত করেছিল?

১৩ যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, গোমের মধ্যে রোপিত শ্যামাঘাসের মতো ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে অলক্ষে অনুপ্রবেশ করবে এবং অনেককে বিপথে নিয়ে যাবে। (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩; প্রেরিত ২০:২৯-৩১; যিহূদা ৪) কালক্রমে, এই তথাকথিত খ্রিস্টানরা পৌত্তলিক উৎসব, রীতিনীতি এবং শিক্ষাগুলোকে গ্রহণ করেছিল আর এমনকি সেগুলোকে “খ্রিস্টীয়” বলে উল্লেখ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, বড়দিনের আচারঅনুষ্ঠানের উৎস পৌত্তলিক দেবতা মিথরা এবং স্যাটারনের উপাসনার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু, কোন বিষয়টা খ্রিস্টান বলে দাবি করে এমন ব্যক্তিদের এই ধরনের অখ্রিস্টীয় উদ্‌যাপনগুলো গ্রহণ করতে প্ররোচিত করেছে? দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (১৯৭৪) বলে: “খ্রিস্টের আসন্ন পুনরাগমনের প্রত্যাশা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ায় যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব, বড়দিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”

১৪. ওরেজেন এবং অগাস্টিনের শিক্ষাগুলো কীভাবে রাজ্যের সত্যকে ভুলভাবে তুলে ধরেছিল?

১৪ এ ছাড়া, “রাজ্য” শব্দটির অর্থের বিকৃতিও বিবেচনা করুন। বিংশ শতাব্দীর ব্যাখ্যায় ঈশ্বরের রাজ্য (ইংরেজি) বই বলে: “ওরেজেন [তৃতীয় শতাব্দীর একজন ঈশ্বরতত্ত্ববিদ] খ্রিস্টানদের মধ্যে ‘রাজ্য’ শব্দটির ব্যবহারকে হৃদয়ে ঈশ্বরের শাসনের অর্থরূপে পরিবর্তন করেন।” ওরেজেনের শিক্ষা কীসের ওপর ভিত্তি করে ছিল? শাস্ত্রের ওপর নয় কিন্তু “দর্শনবিদ্যার কাঠামো এবং জগতের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর, যা যিশু এবং প্রাথমিক গির্জার চিন্তাভাবনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।” হিপোর অগাস্টিন (সা.কা. ৩৫৪-৪৩০) তার ডে, কিভিটাটি ডিই (ঈশ্বরের নগর) সাহিত্যের মধ্যে বলেছিলেন যে, গির্জাই হল ঈশ্বরের রাজ্য। এই ধরনের অশাস্ত্রীয় চিন্তাভাবনা খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলোকে রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করার জন্য ঈশ্বরতত্ত্বীয় ভিত্তি প্রদান করেছিল। আর তারা বহু শতাব্দী ধরে এই ধরনের ক্ষমতা পরিচালনা করছে এবং তা বেশির ভাগ সময়ই নিষ্ঠুরতার সঙ্গে।—প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫, ১৮.

১৫. খ্রিস্টীয় জগতের অনেক গির্জার ক্ষেত্রে গালাতীয় ৬:৭ কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে?

১৫ তবে, আজকে গির্জাগুলো যা বুনেছে, তা-ই কাটছে। (গালাতীয় ৬:৭) অনেকে তাদের ক্ষমতা ও সেইসঙ্গে তাদের ধর্মপল্লীর সদস্যদের হারাচ্ছে। এই ধরনের প্রবণতা ইউরোপে খুবই লক্ষণীয়। সংবাদপত্রিকা আজকে খ্রিস্টধর্ম (ইংরেজি) অনুসারে, “ইউরোপের বড় বড় ক্যাথিড্রালগুলো এখন আর উপাসনার গৃহ নয় বরং জাদুঘর হিসেবে রয়েছে যেখানে পর্যটকরা ছাড়া আর কেউ যায় না।” পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায়ও একই প্রবণতা দেখা যেতে পারে। মিথ্যা ধর্মের জন্য তা কী ইঙ্গিত করে? এটা কি কেবল সমর্থনের অভাবে মারা যাবে? আর সত্য উপাসনা কীভাবে প্রভাবিত হবে?

ঈশ্বরের মহাদিনের জন্য প্রস্তুত হোন

১৬. মহতী বাবিলের প্রতি ক্রমবর্ধমান শত্রুতা কেন তাৎপর্যপূর্ণ?

১৬ পূর্বের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া এবং ভস্ম নির্গত হওয়া যেমন আসন্ন অগ্ন্যুৎপাতকে চিত্রিত করে, তেমনই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ধর্মের প্রতি ক্রমবর্ধমান শত্রুতা ইঙ্গিত দেয় যে, মিথ্যা ধর্মের শেষ ঘনিয়ে আসছে। শীঘ্রই, যিহোবা জগতের রাজনৈতিক দলগুলোকে আধ্যাত্মিক বেশ্যা মহতী বাবিলকে অনাবৃত ও ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় একত্রিত হতে পরিচালিত করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৫-১৭; ১৮:২১) সেই ঘটনা এবং এর পরে ‘মহাক্লেশের’ অন্যান্য যে-বিষয় হবে, তা দেখে কি সত্য খ্রিস্টানদের ভয় পাওয়া উচিত? (মথি ২৪:২১) কখনোই না! তাদের আসলে আনন্দ করার কারণ থাকবে, যখন ঈশ্বর দুষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:২০; ১৯:১, ২) প্রথম শতাব্দীর যিরূশালেম এবং সেই সময়ে যে-খ্রিস্টানরা বাস করত, তাদের উদাহরণ বিবেচনা করুন।

১৭. কেন যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা আস্থা সহকারে এই বিধিব্যবস্থার শেষের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে?

১৭ সাধারণ কাল ৬৬ সালে রোমীয় সৈন্যবাহিনী যখন যিরূশালেম অবরোধ করেছিল, তখন আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক খ্রিস্টানরা অবাক অথবা ভীতবিহ্বল হয়ে যায়নি। ঈশ্বরের বাক্যের উত্তম ছাত্র হওয়ায়, তারা জানত যে, “তাহার ধ্বংস সন্নিকট।” (লূক ২১:২০) তারা এও জানত যে, ঈশ্বর তাদের নিরাপদে পালানোর পথ করে দেবেন। তা যখন ঘটেছিল, তখন খ্রিস্টানরা পালিয়ে গিয়েছিল। (দানিয়েল ৯:২৬; মথি ২৪:১৫-১৯; লূক ২১:২১) একইভাবে আজকে, যারা ঈশ্বরকে জানে এবং যারা তাঁর পুত্রের বাধ্য থাকে, তারা আস্থা সহকারে এই বিধিব্যবস্থার শেষের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯) বস্তুত, যখন মহাক্লেশ হবে, তখন তারা আনন্দের সঙ্গে ‘ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিবে, মাথা তুলিবে, কেননা তাহারা জানে যে, তাহাদের মুক্তি সন্নিকট।’—লূক ২১:২৮.

১৮. যিহোবার দাসদের ওপর গোগের সর্বশক্তি দিয়ে চূড়ান্ত আঘাতের ফল কী হবে?

১৮ মহতী বাবিলের ধ্বংসের পরে শয়তান মাগোগ দেশীয় গোগ হিসেবে যিহোবার শান্তিপূর্ণ সাক্ষিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে চূড়ান্ত আক্রমণ করবে। “মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার জন্য” আসবে বলে গোগের বড় দল সহজেই জয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করবে। তাদের জন্য কত বিরাট আঘাতই না অপেক্ষা করছে! (যিহিষ্কেল ৩৮:১৪-১৬, ১৮-২৩) প্রেরিত যোহন লেখেন: “পরে আমি দেখিলাম, স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর দেখ, শ্বেতবর্ণ একটী অশ্ব; যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন, তিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় নামে আখ্যাত, . . . তাঁহার মুখ হইতে এক তীক্ষ্ণ তরবারি নির্গত হয়, যেন তদ্দ্বারা তিনি জাতিগণকে আঘাত করেন।” এই অজেয় “রাজাদের রাজা” যিহোবার অনুগত উপাসকদের উদ্ধার করবেন এবং তাদের শত্রুদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১) রূপান্তরের দর্শনের পরিপূর্ণতা কত চরমেই না পৌঁছাবে!

১৯. কীভাবে খ্রিস্টের সম্পূর্ণ বিজয় তাঁর অনুগত শিষ্যদের প্রভাবিত করবে এবং এখন তাদের কী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত?

১৯ যিশু “যাহারা বিশ্বাস করিয়াছে, তাহাদের সকলেতে চমৎকারের পাত্র” হবেন। (২ থিষলনীকীয় ১:১০) আপনি কি তাদের মধ্যে একজন হতে চান, যারা ঈশ্বরের বিজয়ী পুত্রের পক্ষে সশ্রদ্ধ ভয় সহকারে থাকবে? তা হলে, আপনার বিশ্বাসকে ক্রমাগত শক্তিশালী করুন এবং ‘প্রস্তুত থাকুন, কেননা যে দণ্ড আপনি মনে করিবেন না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।’—মথি ২৪:৪৩, ৪৪.

মিতাচারী হোন

২০. (ক) ঈশ্বরের ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ ব্যবস্থার প্রতি কীভাবে আমরা আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি? (খ) আমাদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

২০ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে এবং মিতাচারী হয়ে চলতে নিয়মিত পরামর্শ দেয়। (মথি ২৪:৪৫, ৪৬; ১ থিষলনীকীয় ৫:৬) আপনি কি এই সময়োপযোগী অনুস্মারকগুলোকে উপলব্ধি করেন? সেগুলোকে কি আপনি জীবনে অগ্রাধিকারগুলো স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন না কেন: ‘আমার কি স্পষ্ট আধ্যাত্মিক দৃষ্টি রয়েছে, যা আমাকে ঈশ্বরের পুত্রকে স্বর্গে শাসনরত অবস্থায় দেখতে সমর্থ করে? আমি কি তাঁকে মহতী বাবিল এবং শয়তানের বাকি বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐশিক বিচার নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় দেখি?’

২১. কেন কেউ কেউ তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে ক্ষীণ হতে দিয়েছে এবং তাদের কী করা জরুরি?

২১ বর্তমানে যিহোবার লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করছে এমন কিছু ব্যক্তি তাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে ক্ষীণ হতে দিয়েছে। এর কারণ কি হতে পারে যে, তাদের সহিষ্ণুতা বা ধৈর্যের অভাব রয়েছে, ঠিক যেমন যিশুর প্রাথমিক কিছু শিষ্যের ছিল? জীবনের উদ্বিগ্নতা, বস্তুবাদিতা অথবা তাড়না কি তাদের প্রভাবিত করেছে? (মথি ১৩:৩-৮, ১৮-২৩; লূক ২১:৩৪-৩৬) হতে পারে যে, কারও কারও হয়তো ‘বিশ্বস্ত বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা প্রকাশিত কিছু তথ্য বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। এগুলোর যেকোনো একটা যদি আপনার বেলায় ঘটে থাকে, তা হলে আমরা আপনাকে ঈশ্বরের বাক্য পুনরায় উদ্যোগ নিয়ে অধ্যয়ন এবং যিহোবার কাছে বিনতি করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে আপনি তাঁর সঙ্গে আবার এক প্রগাঢ় ও নিকট সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন।—২ পিতর ৩:১১-১৫.

২২. রূপান্তরের দর্শন এবং সম্পর্কযুক্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিবেচনা আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

২২ যিশুর শিষ্যদের রূপান্তরের দর্শন সেই সময়ে দেওয়া হয়েছিল, যখন তাদের উৎসাহের প্রয়োজন হয়েছিল। আজকে আমাদের শক্তিশালী করার জন্য আরও বেশি কিছু রয়েছে—সেই লক্ষণীয় পূর্বাভাস এবং সম্পর্কযুক্ত অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা। আমরা যখন এই গৌরবান্বিত বাস্তবতা এবং সেগুলোর ভবিষ্যৎ তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমরাও যেন আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রেরিত যোহনের মতো সেই অনুভূতি প্রকাশ করি যখন তিনি বলেছিলেন: “আমেন; প্রভু যীশু, আইস।”—প্রকাশিত বাক্য ২২:২০.

[পাদটীকা]

^ মূল গ্রিক ভাষায়, ‘যাতনা’ হিসেবে অনুবাদিত শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘প্রসব-যন্ত্রণা।’ (মথি ২৪:৮, বাংলা জুবিলী বাইবেল) এটা দেখায় যে, প্রসব যন্ত্রণার মতো জগতের সমস্যাগুলো মাত্রা, তীব্রতা এবং স্থায়ীত্বের দিক দিয়ে বৃদ্ধি পাবে, যা মহাক্লেশের মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• ১৮৭০ এর দশকে বাইবেল ছাত্রদের এক ছোট্ট দল খ্রিস্টের পুনরাগমন সম্বন্ধে কী বুঝতে পেরেছিল?

• রূপান্তরের দর্শন কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে?

• জগৎ এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ওপর যিশুর বিজয়ী আরোহণের কোন প্রভাব রয়েছে?

• যিশু যখন তাঁর জয় সম্পূর্ণ করবেন, তখন যারা রক্ষা পাবে, তাদের মধ্যে থাকার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

এক পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত হয়

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্ট যখন তাঁর জয় শুরু করেছিলেন, তখন কী ঘটেছিল তা কি আপনি জানেন?