সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রিস্ট—ভবিষ্যদ্বাণীর কেন্দ্রবিন্দু

খ্রিস্ট—ভবিষ্যদ্বাণীর কেন্দ্রবিন্দু

খ্রিস্ট—ভবিষ্যদ্বাণীর কেন্দ্রবিন্দু

“যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা।”—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০.

১, ২. (ক) সাধারণ কাল ২৯ সাল থেকে শুরু করে ইস্রায়েল কোন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছিল? (খ) এই প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

 সাধারণ কাল ২৯ সাল। ইস্রায়েলে প্রতিজ্ঞাত মশীহ সম্বন্ধে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যোহন বাপ্তাইজকের পরিচর্যা এই অপেক্ষার অনুভূতিকে আরও তীব্র করে দিয়েছে। (লূক ৩:১৫) যোহন নিজেকে খ্রিস্ট বলে স্বীকার করেননি। এর পরিবর্তে, নাসরতের যিশুকে নির্দেশ করে তিনি বলেন: “আমি . . . সাক্ষ্য দিয়াছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (যোহন ১:২০, ৩৪) শীঘ্রই, লোকেরা যিশুর শিক্ষা শোনার এবং তাঁর দ্বারা আরোগ্য লাভ করার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে শুরু করে।

এর পরের মাসগুলোতে, যিহোবা তাঁর পুত্রের বিষয়ে অসংখ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগান। যারা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছে এবং যারা যিশুর কাজগুলো দেখেছে, তাদের তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখার এক দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে। কিন্তু, ঈশ্বরের চুক্তির অধিকাংশ লোক বিশ্বাসের অভাব দেখায়। তুলনামূলকভাবে খুব কম লোকই স্বীকার করে যে, যিশুই হলেন খ্রিস্ট, ঈশ্বরের পুত্র। (যোহন ৬:৬০-৬৯) আপনি যদি সেই সময়ে বাস করতেন, তা হলে কী করতেন? আপনি কি যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করতে এবং তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারী হতে পরিচালিত হতেন? যিশুকে যখন বিশ্রামবার লঙ্ঘন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, তখন তিনি তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে নিজে যে-সাক্ষ্যপ্রমাণ দেন, তা বিবেচনা করুন এবং তাঁর অনুগত শিষ্যদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি যে-প্রমাণগুলো দেন, সেগুলোও লক্ষ করুন।

যিশু নিজে সাক্ষ্যপ্রমাণ দেন

৩. কোন পরিস্থিতিগুলো যিশুকে তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

সাধারণ কাল ৩১ সালের নিস্তারপর্বের সময়। যিশু যিরূশালেমে রয়েছেন। সবেমাত্র তিনি এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেন, যিনি ৩৮ বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু, এই কাজটা বিশ্রামবারে করায় যিহুদিরা যিশুকে তাড়না করতে লাগল। এ ছাড়া, তারা তাঁকে ঈশ্বরনিন্দা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলে সম্বোধন করায় তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করে। (যোহন ৫:১-৯, ১৬-১৮) আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য যিশু তিনটে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন, যা যিশুর প্রকৃত পরিচয় সম্বন্ধে যেকোনো সৎহৃদয়ের যিহুদিকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করবে।

৪, ৫. যোহনের পরিচর্যার উদ্দেশ্য কী ছিল এবং তিনি কতটা কার্যকারীভাবে তা সম্পাদন করেছিলেন?

প্রথমে, যিশু তাঁর অগ্রদূত যোহন বাপ্তাইজকের সাক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করান, এই বলে: “তোমরা যোহনের নিকটে লোক পাঠাইয়াছ, আর তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছেন। তিনি সেই জ্বলন্ত ও জ্যোতির্ম্ময় প্রদীপ ছিলেন, এবং তোমরা তাঁহার আলোতে কিছু কাল আনন্দ করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলে।”—যোহন ৫:৩৩, ৩৫.

যোহন বাপ্তাইজক এই অর্থে “জ্বলন্ত ও জ্যোতির্ম্ময় প্রদীপ” ছিলেন যে, হেরোদ তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখার আগে, তিনি মশীহের পথ প্রস্তুত করার বিষয়ে তার ঐশিক দায়িত্ব পরিপূর্ণ করেছিলেন। যোহন বলেছিলেন: “[মশীহ] যেন ইস্রায়েলের নিকট প্রকাশিত হন, এই জন্য আমি আসিয়া জলে বাপ্তাইজ করিতেছি। . . . আমি আত্মাকে কপোতের ন্যায় স্বর্গ হইতে নামিতে দেখিয়াছি; তিনি তাঁহার উপরে অবস্থিতি করিলেন। আর আমি তাঁহাকে চিনিতাম না, কিন্তু যিনি আমাকে জলে বাপ্তাইজ করিতে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে বলিলেন, যাঁহার উপরে আত্মাকে নামিয়া অবস্থিতি করিতে দেখিবে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করেন। আর আমি দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিয়াছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্ত্র।” * (যোহন ১:২৬-৩৭) যোহন নির্দিষ্টভাবে যিশুকে ঈশ্বরের পুত্র—প্রতিজ্ঞাত মশীহ—হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। যোহনের সাক্ষ্য এতই স্পষ্ট ছিল যে, তার মৃত্যুর প্রায় আট মাস পরে, অনেক সৎহৃদয়ের যিহুদি স্বীকার করেছিল: “এই ব্যক্তির বিষয়ে যোহন যে সকল কথা বলিয়াছিলেন, সে সকলই সত্য।”—যোহন ১০:৪১, ৪২.

৬. যিশুর কাজগুলো দেখে লোকেদের কেন দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া উচিত যে, তাঁর প্রতি ঈশ্বরের সমর্থন রয়েছে?

যিশু এর পরে মশীহ হিসেবে তাঁর প্রমাণের আরেকটা যুক্তি ব্যবহার করেন। ঈশ্বরের সমর্থনের সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে তিনি তাঁর নিজের উত্তম কাজগুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করান। “যোহনের দত্ত সাক্ষ্য অপেক্ষা আমার গুরুতর সাক্ষ্য আছে,” তিনি বলেন, “কেননা পিতা আমাকে যে সকল কার্য্য সম্পন্ন করিতে দিয়াছেন, যে সকল কার্য্য আমি করিতেছি, সেই সকল আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছে যে, পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।” (যোহন ৫:৩৬) এমনকি যিশুর শত্রুরাও এই সাক্ষ্যপ্রমাণ অস্বীকার করতে পারেনি, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল অসংখ্য অলৌকিক কাজ। পরবর্তী সময়ে কয়েক জন জিজ্ঞেস করে, “আমরা কি করি? এ ব্যক্তি ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে।” (যোহন ১১:৪৭) তবে, কেউ কেউ অনুকূলভাবে সাড়া দেয় এবং বলে: “খ্রীষ্ট যখন আসিবেন, তখন ইহাঁর কৃত কার্য্য অপেক্ষা তিনি কি অধিক চিহ্ন-কার্য্য করিবেন?” (যোহন ৭:৩১) যিশুর শ্রোতারা পুত্রের মধ্যে পিতার গুণগুলোকে উপলব্ধি করার সবচেয়ে উত্তম অবস্থানে ছিল।—যোহন ১৪:৯.

৭. কীভাবে ইব্রীয় শাস্ত্র যিশুর বিষয়ে সাক্ষ্য বহন করে?

সবশেষে, যিশু এক অকাট্য সাক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করান। “শাস্ত্র . . . আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়,” এই কথাগুলো বলে তিনি আরও বলেন, “যদি তোমরা মোশিকে বিশ্বাস করিতে, তবে আমাকেও বিশ্বাস করিতে, কেননা আমারই বিষয়ে তিনি লিখিয়াছেন।” (যোহন ৫:৩৯, ৪৬) অবশ্য, প্রাক্‌খ্রিস্টীয় অনেক সাক্ষিদের মধ্যে মোশি ছিলেন কেবল একজন, যিনি খ্রিস্ট সম্বন্ধে লিখেছিলেন। তাদের লেখার অন্তর্ভুক্ত ছিল, শত শত ভবিষ্যদ্বাণী এবং বিস্তারিত বংশবৃত্তান্ত, যেগুলোর সবই মশীহকে নির্দেশ করে। (লূক ৩:২৩-৩৮; ২৪:৪৪-৪৬; প্রেরিত ১০:৪৩) আর মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে কী বলা যায়? “ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (গালাতীয় ৩:২৪) হ্যাঁ, “যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা [অথবা সম্পূর্ণ প্রবৃত্তি, অভিপ্রায় এবং উদ্দেশ্য]।”—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০.

৮. কেন অনেক যিহুদি মশীহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেনি?

এই সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ—যোহনের স্পষ্ট সাক্ষ্য, যিশুর নিজের পরাক্রম কাজগুলো ও ঈশ্বরীয় গুণাবলি এবং শাস্ত্রের অসংখ্য সাক্ষ্য—কি আপনাকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে না যে, যিশুই ছিলেন মশীহ? যে-ব্যক্তির ঈশ্বর এবং তাঁর বাক্যের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম ছিল, তিনিই সহজে এই বিষয়টা বুঝতে পারতেন এবং প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে যিশুর ওপর বিশ্বাস দেখিয়ে চলতেন। কিন্তু, ইস্রায়েলে মূলত এই ধরনের প্রেমেরই অভাব ছিল। যিশু তাঁর বিরোধীদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে জানি, তোমাদের অন্তরে ত ঈশ্বরের প্রেম নাই।” (যোহন ৫:৪২) “একমাত্র ঈশ্বরের নিকট হইতে যে গৌরব আইসে, তাহার চেষ্টা” করার পরিবর্তে তারা “পরস্পরের নিকটে গৌরব গ্রহণ” করছিল। তাই, কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা যিশুর সঙ্গে একমত ছিল না, যিনি তাঁর পিতার মতো এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে পরিহার করেন।—যোহন ৫:৪৩, ৪৪; প্রেরিত ১২:২১-২৩.

ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এক দর্শনের দ্বারা শক্তিশালী হওয়া

৯, ১০. (ক) কেন একটা চিহ্ন যিশুর শিষ্যদের জন্য সময়োপযোগী ছিল? (খ) যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?

যিশু তাঁর মশীহপদের বিষয়ে আগে উল্লেখিত প্রমাণ দেওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে। সা.কা. ৩২ সালের নিস্তারপর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। যারা বিশ্বাস দেখিয়েছিল, তাদের অনেকে হয়তো তাড়না, বস্তুবাদিতা অথবা জীবনের উদ্বিগ্নতার কারণে তাঁকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যেরা হয়তো বিভ্রান্ত অথবা হতাশ হয়ে পড়েছিল কারণ যিশু তাঁকে রাজা বানানোর ব্যাপারে লোকেদের প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যিহুদি ধর্মীয় নেতারা যখন তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে প্রমাণ দিতে বলেছিল, তখন তিনি নিজেকে গৌরবান্বিত করার জন্য স্বর্গ থেকে কোনো চিহ্ন দেখাতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (মথি ১২:৩৮, ৩৯) তাঁর এই প্রত্যাখ্যানের কারণে হয়তো অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। অধিকন্তু, যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে এমন কিছু প্রকাশ করতে শুরু করেছেন, যা বোঝা তাদের জন্য অনেক কষ্টকর—“তাঁহাকে যিরূশালেমে যাইতে হইবে, এবং প্রাচীনবর্গের, প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হইতে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, ও হত হইতে হইবে।”—মথি ১৬:২১-২৩.

১০ আরও নয় কী দশ মাসের মধ্যে, ‘যীশুর এই জগৎ হইতে পিতার কাছে প্রস্থান করিবার’ সময় হবে। (যোহন ১৩:১) তাঁর অনুগত শিষ্যদের জন্য অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে যিশু তাদের মধ্যে কয়েক জনের কাছে ঠিক সেই বিষয়েই প্রতিজ্ঞা করেন, যা তিনি অবিশ্বস্ত যিহুদিদের কাছে করতে অস্বীকার করেছিলেন—স্বর্গ থেকে এক চিহ্ন। “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি,” যিশু বলেন, “যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্ত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে।” (মথি ১৬:২৮) স্পষ্টতই, যিশু এই কথা বলছিলেন না যে, তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কয়েক জন ১৯১৪ সালে মশীহ রাজ্য প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। যিশুর মনে তাঁর তিন জন ঘনিষ্ঠ শিষ্যকে রাজ্যের ক্ষমতায় তাঁর প্রতাপের লক্ষণীয় পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়টা রয়েছে। এই দর্শনমূলক প্রাক্‌প্রদর্শনকে বলা হয় রূপান্তর।

১১. রূপান্তরের দর্শনটা বর্ণনা করুন।

১১ যিশু ছয় দিন পরে পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিয়ে এক উচ্চ পর্বতে ওঠেন—সম্ভবত হর্মোণ পর্বতের এক চূড়ায়। সেখানে যিশু “তাঁহাদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হইলেন; তাঁহার মুখ সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান, এবং তাঁহার বস্ত্র দীপ্তির ন্যায় শুভ্র হইল।” ভাববাদী মোশি এবং এলিয়কেও দেখা যায়, যারা যিশুর সঙ্গে কথা বলছে। এই অসাধারণ ঘটনাটা সম্ভবত রাতের বেলায় ঘটে, যা এটাকে বিশেষভাবে সুস্পষ্ট করে তোলে। বস্তুত, এটা এতটাই বাস্তব হয়ে ওঠে যে, পিতর তিনটে কুটীর নির্মাণ করার প্রস্তাব দেন—যিশু, মোশি এবং এলিয় প্রত্যেকের জন্য একটা করে। পিতর কথা বলছিলেন এমন সময় এক উজ্জ্বল মেঘ তাদের ছায়া করে এবং সেই মেঘের মধ্যে থেকে এই বাণী হয়: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন।”—মথি ১৭:১-৬.

১২, ১৩. রূপান্তরের দর্শন যিশুর শিষ্যদের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল এবং কেন?

১২ এটা ঠিক যে, সম্প্রতি পিতর সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যিশু হলেন “সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্ত্র।” (মথি ১৬:১৬) কিন্তু, স্বয়ং যিহোবা সাক্ষ্য দিচ্ছেন তা শোনার কথা কল্পনা করুন, যা তাঁর অভিষিক্ত পুত্রের পরিচয় এবং ভূমিকা সম্বন্ধে নিশ্চিত করেছিল! পিতর, যাকোব এবং যোহনের জন্য রূপান্তরের দর্শনটা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো কী এক অভিজ্ঞতা! এভাবে তাদের বিশ্বাস অনেক শক্তিশালী হওয়ায় তারা সামনে যা রয়েছে সেটা এবং ভবিষ্যতে মণ্ডলীতে তারা যে-গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, সেটার জন্য এখন আরও ভালভাবে প্রস্তুত।

১৩ রূপান্তরের ঘটনাটা শিষ্যদের ওপর এক স্থায়ী প্রভাব ফেলে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পরে পিতর লেখেন: “[যিশু] পিতা ঈশ্বর হইতে সমাদর ও গৌরব পাইয়াছিলেন, সেই মহিমাযুক্ত প্রতাপ কর্ত্তৃক তাঁহার কাছে এই বাণী উপনীত হইয়াছিল, ‘ইনিই আমার পুত্ত্র, আমার প্রিয়তম, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’ আর স্বর্গ হইতে উপনীত সেই বাণী আমরাই শুনিয়াছি, যখন তাঁহার সঙ্গে পবিত্র পর্ব্বতে ছিলাম।” (২ পিতর ১:১৭, ১৮) একইভাবে যোহনও এই ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই ঘটনার ৬০ বছরেরও বেশি সময় পরে, স্পষ্টতই তিনি পরোক্ষভাবে বিষয়টা উল্লেখ করেন এই কথাগুলোর দ্বারা: “আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা।” (যোহন ১:১৪) কিন্তু, রূপান্তরের দর্শনই সর্বশেষ দর্শন ছিল না, যা যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রদান করেছিলেন।

ঈশ্বরের অনুগত ব্যক্তিদের জন্য আরও জ্ঞানালোক

১৪, ১৫. কোন দিক দিয়ে প্রেরিত যোহন যিশুর আগমন পর্যন্ত ছিলেন?

১৪ পুনরুত্থানের পর যিশু গালীল সমুদ্রের ধারে তাঁর শিষ্যদের দেখা দেন। সেখানে তিনি পিতরকে বলেন, “আমি যদি ইচ্ছা করি, [যোহন] আমার আগমন পর্য্যন্ত থাকে, তাহাতে তোমার কি?” (যোহন ২১:১, ২০-২২, ২৪) এই কথাগুলো কি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রেরিত যোহন অন্য প্রেরিতদের চেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকবেন? স্পষ্টতই তা-ই, কারণ তিনি আরও প্রায় ৭০ বছর বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেন। কিন্তু, যিশুর বিবৃতির আরও অর্থ রয়েছে।

১৫ “আমার আগমন পর্য্যন্ত,” এই অভিব্যক্তিটি আমাদের ‘মনুষ্যপুত্ত্রকে আপনার রাজ্যে আসিবার’ বিষয়ে যিশুর উল্লেখ সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেয়। (মথি ১৬:২৮) যোহন এই অর্থে যিশুর আগমন পর্যন্ত বেঁচে থাকেন যে, পরবর্তী সময়ে যোহনকে রাজ্য ক্ষমতায় যিশুর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এক দর্শন দেওয়া হয়েছিল। যোহনের জীবনের শেষ সময়ে পাট্‌ম দ্বীপে বন্দি থাকার সময় তিনি “প্রভুর দিনে” যে-ঘটনাগুলো ঘটার কথা, সেই বিষয়ে বিস্ময়কর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিহ্নগুলোসহ প্রকাশিত বাক্য লাভ করেন। যোহন এই উল্লেখযোগ্য দর্শনগুলোর দ্বারা এতটাই অনুপ্রাণিত হন যে, যখন যিশু বলেন: “সত্য, আমি শীঘ্র আসিতেছি,” তখন যোহন উল্লাসে বলে উঠেছিলেন: “আমেন; প্রভু যীশু, আইস।”—প্রকাশিত বাক্য ১:১, ১০; ২২:২০.

১৬. আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে চলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৬ প্রথম শতাব্দীতে বসবাসরত সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাঁর ওপর বিশ্বাস দেখায়। তাদের চারপাশের লোকেদের বিশ্বাসের অভাব, তাদের যে-কাজ করতে হবে এবং সামনে যে-পরীক্ষাগুলো রয়েছে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে যারা বিশ্বাসী হয়েছে, তাদের শক্তিশালী হতে হবে। যিশুই যে মশীহ সেই বিষয়ে তিনি প্রচুর প্রমাণ দেন এবং তাঁর অনুগত অনুসারীদের উৎসাহিত করার জন্য জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন প্রদান করেন। আজকে আমরা ‘প্রভুর দিনের’ শেষ সময়ে রয়েছি। শীঘ্রই, শয়তানের সমগ্র দুষ্ট বিধিব্যবস্থা খ্রিস্ট ধ্বংস করে দেবেন এবং ঈশ্বরের লোকেদের উদ্ধার করবেন। আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য সরবরাহকৃত যিহোবার সমস্ত ব্যবস্থা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার দ্বারা আমাদেরও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে হবে।

অন্ধকার এবং ক্লেশের মধ্যে সুরক্ষিত

১৭, ১৮. প্রথম শতাব্দীতে যিশুর অনুসারী এবং যারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করেছিল, তাদের মধ্যে কোন স্পষ্ট বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল এবং প্রত্যেকটা দলের পরিণতি কী হয়েছিল?

১৭ যিশুর মৃত্যুর পর, শিষ্যরা “যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” তাঁর সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে তাঁর আজ্ঞা সাহসের সঙ্গে পালন করে। (প্রেরিত ১:৮) তাড়নার ঢেউ বয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, যিহোবা নবপ্রতিষ্ঠিত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোক এবং অনেক নতুন শিষ্য দিয়ে আশীর্বাদ করেন।—প্রেরিত ২:৪৭; ৪:১-৩১; ৮:১-৮.

১৮ অন্যদিকে, যারা সুসমাচারের বিরোধিতা করে, তাদের প্রত্যাশাগুলো ধীরে ধীরে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। “দুষ্টদের পথ অন্ধকারের ন্যায়,” হিতোপদেশ ৪:১৯ পদ বলে। “তাহারা কিসে উছোট খাইবে, জানে না।” সেই ‘অন্ধকার’ সা.কা. ৬৬ সালে আরও প্রগাঢ় হয়, যখন রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেমকে অবরোধ করে। স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই সাময়িকভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করার পর, সা.কা. ৭০ সালে রোমীয়রা পুনরায় ফিরে আসে আর এই সময় নগরকে ধ্বংস করে দেয়। যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাসের মতানুসারে, দশ লক্ষেরও বেশি যিহুদি মারা যায়। কিন্তু, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা রক্ষা পায়। কেন? কারণ প্রথমবার যখন অবরোধ তুলে নেওয়া হয়, তখন তারা পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যিশুর আজ্ঞা পালন করে।—লূক ২১:২০-২২.

১৯, ২০. (ক) বর্তমান যুগ বা ব্যবস্থার শেষ এগিয়ে আসলেও কেন ঈশ্বরের লোকেদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই? (খ) ১৯১৪ সালের আগের দশকগুলোতে যিহোবা তাঁর লোকেদের কোন লক্ষণীয় অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছিলেন?

১৯ আমাদের পরিস্থিতিও একইরকম। আসন্ন মহাক্লেশ শয়তানের সমগ্র দুষ্ট ব্যবস্থার শেষকে চিহ্নিত করবে। কিন্তু, ঈশ্বরের লোকেদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই, কারণ যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:২০) প্রাথমিক শিষ্যদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে এবং সামনে যা রয়েছে, সেগুলোর জন্য প্রস্তুত করতে যিশু তাদেরকে মশীহ রাজা হিসেবে তাঁর স্বর্গীয় প্রতাপের এক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? ১৯১৪ সালে সেই পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আর ঈশ্বরের লোকেদের কাছে সেটা কতই না বিশ্বাস শক্তিশালী করার মতো এক বাস্তবতা হয়ে রয়েছে! এটা এক চমৎকার ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে এবং যিহোবার দাসদের সেই বাস্তবতা সম্বন্ধে ক্রমবর্ধমান অন্তর্দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। আজকের অন্ধকারময় জগতের মাঝে “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।”—হিতোপদেশ ৪:১৮.

২০ এমনকি ১৯১৪ সালের আগে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের একটা ছোট্ট দল প্রভুর পুনরাগমনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলো বুঝতে পেরেছিল। উদাহরণস্বরূপ, তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই আগমন অদৃশ্য হবে, যা সেই দুজন দূত ইঙ্গিত দিয়েছিল, যারা সা.কা. ৩৩ সালে যিশুর স্বর্গারোহণের সময় শিষ্যদের দেখা দিয়েছিল। একটা মেঘ যিশুকে শিষ্যদের দৃষ্টি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর, দূতেরা বলেছিল: “এই যে যীশু তোমাদের নিকট হইতে স্বর্গে ঊদ্ধের্ব নীত হইলেন, উহাঁকে যেরূপে স্বর্গে গমন করিতে দেখিলে, সেইরূপে উনি আগমন করিবেন।”—প্রেরিত ১:৯-১১.

২১. পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

২১ যিশুর প্রস্থান কেবল তাঁর অনুগত অনুসারীরাই দেখেছিল। রূপান্তরের সময় সকলে তা দেখেনি; সমগ্র জগৎ এমনকি জানতেও পারেনি যে, কী ঘটেছিল। রাজ্য ক্ষমতায় খ্রিস্টের পুনরাগমনও ঠিক সেইরকমই হবে। (যোহন ১৪:১৯) কেবল তাঁর বিশ্বস্ত অভিষিক্ত শিষ্যরা তাঁর রাজকীয় উপস্থিতি বুঝতে পারবে। পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, কীভাবে সেই অন্তর্দৃষ্টি তাদের ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলে যা অবশেষে সেই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিদের একত্রিত করবে, যারা যিশুর পার্থিব প্রজা হয়ে উঠবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪.

[পাদটীকা]

^ স্পষ্টতই, যিশুর বাপ্তিস্মের সময় কেবল যোহন ঈশ্বরের স্বর শুনেছিলেন। যে-যিহুদিদের উদ্দেশে যিশু কথা বলেছিলেন, তারা ‘[ঈশ্বরের] রব কখনও শুনে নাই, তাঁহার আকারও দেখে নাই।’—যোহন ৫:৩৭.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যিশুকে যখন বিশ্রামবার লঙ্ঘন করার এবং ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন তিনিই যে মশীহ ছিলেন, সেটা দেখানোর জন্য তিনি কী সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছিলেন?

• যিশুর প্রাথমিক শিষ্যরা রূপান্তরের দর্শন থেকে কীভাবে উপকৃত হয়েছিল?

• যিশু যখন বলেছিলেন যে, যোহন তাঁর আগমন পর্যন্ত থাকবেন, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

• ১৯১৪ সালে কোন পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত হয়েছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিশু মশীহ হিসেবে তাঁর প্রমাণগুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

রূপান্তরের দর্শন বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো ছিল

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর “আগমন” পর্যন্ত যোহনের বেঁচে থাকার কথা ছিল