সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি যাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে সত্য কি ফল উৎপন্ন করছে?

আপনি যাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে সত্য কি ফল উৎপন্ন করছে?

আপনি যাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে সত্য কি ফল উৎপন্ন করছে?

 এরিক নামে এক যুবক যখন জানিয়েছিল যে, সে যিহোবার সাক্ষিদের একজন হিসেবে আর থাকতে চায় না, তখন তার বাবামা দুঃখে ভেঙে পড়েছিল। এরিকের মধ্যে যে-পরিবর্তন ঘটেছিল, তারা তা লক্ষ করেনি। একজন ছেলে হিসেবে এরিক পারিবারিক অধ্যয়নে অংশগ্রহণ করত, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যেত এবং মণ্ডলীর সঙ্গে প্রচারে যোগ দিত। বলতে গেলে, সে সত্যে চলছিল বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু, এখন সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় তার বাবামা বুঝতে পারে যে, সে বাইবেলের সত্যকে নিজের করে নেয়নি। তারা যখন এটা বুঝতে পারে, তখন প্রচণ্ড আঘাত পায় ও একইসঙ্গে হতাশ হয়ে পড়ে।

অন্যদেরও হারানোর একই অনুভূতি হয়ে থাকে, যখন কোনো বাইবেল ছাত্র হঠাৎ করে অধ্যয়ন বন্ধ করে দেয়। এই সময়গুলোতে, লোকেরা প্রায়ই নিজেদের জিজ্ঞেস করে, ‘কেন আমি তার মধ্যে এই পরিবর্তন লক্ষ করিনি?’ আসলে, যাদের আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, তাদের মধ্যে সত্য ফল উৎপন্ন করছে কি না, তা কি আধ্যাত্মিক বিপর্যয় আসার আগে নির্ণয় করা সম্ভব? এই বিষয়ে কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, সত্য আমাদের মধ্যে ও সেইসঙ্গে যাদের আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, তাদের মধ্যে কাজ করছে? যিশু তাঁর সুপরিচিত বীজবাপকের দৃষ্টান্তে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করেছেন।

সত্যকে অবশ্যই হৃদয়ে পৌঁছাতে হবে

“সেই বীজ ঈশ্বরের বাক্য,” যিশু বলেছিলেন। “আর যাহা উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা সৎ ও উত্তম হৃদয়ে বাক্য শুনিয়া ধরিয়া রাখে, এবং ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন করে।” (লূক ৮:১১, ১৫) তাই, রাজ্যের সত্য আমাদের ছাত্রদের মধ্যে কোনো ফল উৎপন্ন করার আগে সেই সত্যকে তাদের রূপক হৃদয়ে শিকড় বিস্তার করতে হবে। যিশু আমাদের আশ্বাস দেন যে, উত্তম ভূমিতে ভাল বীজের মতো ঐশিক সত্য যখন একবার কোনো উত্তম হৃদয়কে স্পর্শ করে, তখন তা সঙ্গে সঙ্গে কাজ এবং ফল উৎপন্ন করতে শুরু করে। কীসের প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখা উচিত?

আমাদের শুধু বাহ্যিক বিষয় নয় কিন্তু অবশ্যই হৃদয়ের গুণাবলি লক্ষ করতে হবে। রুটিন মাফিক উপাসনা করে যাওয়া সবসময় প্রকাশ করে না যে, একজন ব্যক্তির হৃদয়ে আসলে কী চলছে। (যিরমিয় ১৭:৯, ১০; মথি ১৫:৭-৯) আমাদের আরও গভীরে দৃষ্টি দিতে হবে। একজন ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা, মনোভাব এবং অগ্রাধিকারের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিবর্তন থাকা উচিত। সেই ব্যক্তির ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা উচিত। (ইফিষীয় ৪:২০-২৪) উদাহরণস্বরূপ: পৌল বলেছিলেন যে, থিষলনীকীয়রা যখন সুসমাচার শুনেছিল, তখন তারা সহজেই সেটাকে ঈশ্বরের বাক্য বলে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তাদের ধৈর্য, বিশ্বস্ততা এবং প্রেমই পৌলকে নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, সত্য “[তাহাদের] মধ্যে নিজ কার্য্য সাধনও” করেছিল।—১ থিষলনীকীয় ২:১৩, ১৪; ৩:৬.

অবশ্য, একজন ছাত্র বা ছাত্রীর মনে কী রয়েছে, তা একদিন না একদিন তার আচরণের মধ্যে প্রকাশ পাবেই, যেমন এরিকের উদাহরণ থেকে দেখা যায়। (মার্ক ৭:২১, ২২; যাকোব ১:১৪, ১৫) কিন্তু দুঃখজনক যে, যতদিন না একজন ব্যক্তির মধ্যে খারাপ গুণগুলো পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে উঠে, ততদিনে যা হওয়ার তা হয়ে যায়। এরপর সমস্যাটা হচ্ছে, নির্দিষ্ট দুর্বলতাগুলো আধ্যাত্মিকভাবে বিঘ্নস্বরূপ হওয়ার আগে, সেগুলোকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা। রূপক হৃদয়কে চেনার জন্য আমাদের একটা উপায় দরকার। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

যিশুর কাছ থেকে শিখুন

অবশ্য, যিশু নির্ভুলভাবে হৃদয় পড়তে পারতেন। (মথি ১২:২৫) আমাদের মধ্যে কেউই তা পারি না। কিন্তু, তিনি আমাদের দেখিয়েছেন যে, আমরাও একজন ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা, মনোভাব এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো বুঝতে পারি। একজন রোগীর হার্টে কী সমস্যা রয়েছে, তা দেখার জন্য একজন যোগ্য ডাক্তার যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন, ঠিক তেমনই যিশু ‘হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনা’ প্রকাশ করার এবং তা ‘তুলিয়া আনিবার’ জন্য ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করেছিলেন।—হিতোপদেশ ২০:৫; ইব্রীয় ৪:১২.

উদাহরণস্বরূপ, একবার যিশু পিতরকে সেই দুর্বলতা সম্বন্ধে সতর্ক হতে সাহায্য করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে বিঘ্নস্বরূপ হয়েছিল। যিশু জানতেন যে, পিতর তাঁকে ভালবাসেন। বস্তুত, যিশু সবেমাত্র পিতরকে আস্থাসহকারে “স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলিন” দিয়েছিলেন। (মথি ১৬:১৩-১৯) তবে, যিশু এও জানতেন যে, প্রেরিতরা শয়তানের লক্ষবস্তু। ভবিষ্যতে তারা আপোশ করার প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়বে। যিশু স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর কয়েক জন প্রেরিতের বিশ্বাস দুর্বল। তাই, যে-বিষয়গুলোর ওপর তাদের কাজ করার প্রয়োজন ছিল, সেগুলো দেখিয়ে দিতে তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। কীভাবে তিনি বিষয়গুলো আলোচনায় এনেছিলেন, তা বিবেচনা করুন।

মথি ১৬:২১ পদ বলে: “সেই সময় অবধি যীশু আপন শিষ্যদিগকে স্পষ্টই বলিতে [“দেখাতে,” NW] লাগিলেন যে, তাঁহাকে . . . দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, ও হত হইতে হইবে।” লক্ষ করুন যে, যিশুর প্রতি যা ঘটতে চলেছে সেই বিষয়ে তিনি কেবল তাদের বলেননি কিন্তু তাদের দেখিয়েছিলেন। খুব সম্বভত তিনি গীতসংহিতা ২২:১৪-১৮ অথবা যিশাইয় ৫৩:১০-১২ পদগুলো ব্যবহার করেছিলেন, যেগুলো দেখায় যে মশীহকে দুঃখভোগ এবং মৃত্যুবরণ করতে হবে। যা-ই হোক না কেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, শাস্ত্র থেকে সরাসরি পড়ার অথবা উদ্ধৃতি করার মাধ্যমে যিশু পিতর এবং অন্যদেরকে তাদের হৃদয় থেকে সাড়া দেওয়ার এক সুযোগ দিয়েছিলেন। আসন্ন তাড়নার বিষয়ে তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

আশ্চর্যের বিষয় যে, পিতর নিজেকে যেধরনের সাহসী এবং উদ্যোগী ব্যক্তি হিসেবে দেখিয়েছিলেন, সেটার তুলনায় এই সময় ঝোঁকের মাথায় দেওয়া তার উত্তর তার চিন্তাভাবনায় এক গুরুতর ত্রুটি সম্বন্ধে প্রকাশ করে দেয়। “প্রভু, ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক,” তিনি বলেছিলেন, “ইহা আপনার প্রতি কখনও ঘটিবে না।” পিতরের চিন্তাভাবনা স্পষ্টতই ভুল ছিল কারণ যিশু যেমন উল্লেখ করেন যে পিতরের চিন্তাভাবনা ‘ঈশ্বরের নয়, কিন্তু মনুষ্যের’ ছিল—এক গুরুতর ত্রুটি, যা মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেই সময়, যিশু কী করেছিলেন? পিতরকে অনুযোগ করার পর যিশু তাকে এবং বাকি শিষ্যদের বলেছিলেন: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক।” গীতসংহিতা ৪৯:৮ এবং ৬২:১২ পদের ধারণার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়ে তিনি সদয়ভাবে তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাদের অনন্তকালীন প্রত্যাশা যারা পরিত্রাণ দিতে পারে না সেই মানুষের ওপর নয় কিন্তু ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে।—মথি ১৬:২২-২৮.

যদিও পিতর পরবর্তী সময়ে সাময়িকভাবে ভয়ের দ্বারা জর্জরিত হয়েছিলেন এবং যিশুকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন কিন্তু নিঃসন্দেহে এটা এবং অন্যান্য আলোচনা তাকে দ্রুত আধ্যাত্মিকভাবে আরোগ্য লাভ করার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করেছিল। (যোহন ২১:১৫-১৯) মাত্র ৫০ দিন পরে, পিতর সাহসের সঙ্গে যিরূশালেমের জনতার সামনে যিশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সপ্তাহ, মাস এবং বছর পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাহস সহকারে বার বার গ্রেপ্তার হওয়া, মারধর ও কারাবরণের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং নির্ভীক আনুগত্যের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।—প্রেরিত ২:১৪-৩৬; ৪:১৮-২১; ৫:২৯-৩২, ৪০-৪২; ১২:৩-৫.

এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখি? পিতরের হৃদয়ে কী ছিল, তা বের করে আনার এবং প্রকাশ করার জন্য যিশু কী করেছিলেন, তা কী আপনি দেখতে পাচ্ছেন? প্রথমত, তিনি বিবেচনার নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি পিতরের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য উপযুক্ত শাস্ত্রপদগুলো বাছাই করেছিলেন। এর পরে, তিনি পিতরকে হৃদয় থেকে সাড়া দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। অবশেষে, তিনি পিতরকে তার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতির মধ্যে রদবদল আনতে সাহায্য করার জন্য আরও শাস্ত্রীয় পরামর্শ দিয়েছিলেন। আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, এইভাবে শিক্ষা দেওয়া আপনার ক্ষমতার বাইরে কিন্তু আসুন আমরা দুটো অভিজ্ঞতা বিবেচনা করি, যেগুলো দেখায় যে প্রস্তুতি এবং যিহোবার ওপর নির্ভরতা কীভাবে আমাদের যেকাউকে যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে সাহায্য করতে পারে।

হৃদয়ে যা রয়েছে তা বের করে আনা

একজন খ্রিস্টান বাবা যখন জানতে পেরেছিলেন যে, যথাক্রমে ১ম ও ২য় শ্রেণীতে পড়ুয়া তার দুই ছেলে শিক্ষকের ডেস্ক থেকে লজেন্স চুরি করেছে, তখন তিনি তাদের সঙ্গে বসে যুক্তি করেছিলেন। এটাকে নিছক এক অক্ষতিকর, ছেলেমানুষি বলে উড়িয়ে দেওয়ার পরিবর্তে বাবা বলেন, “আমি তাদের হৃদয় থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছিলাম যে, কোন বিষয়টা তাদের এই খারাপ কাজ করতে পরিচালিত করেছিল।”

বাবা তার ছেলেদের যিহোশূয়ের পুস্তক ৭ অধ্যায়ে বর্ণিত আখনের কী ঘটেছিল, তা স্মরণ করতে বলেছিলেন। ছেলেরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল এবং তাদের দোষ স্বীকার করেছিল। তাদের বিবেক ইতিমধ্যে তাদেরকে দংশন করতে শুরু করেছিল। তাই, বাবা তাদেরকে দিয়ে ইফিষীয় ৪:২৮ পদ পড়িয়েছিলেন, যেখানে বলা আছে: “চোর আর চুরি না করুক, বরং স্বহস্তে . . . পরিশ্রম করুক, যেন দীনহীনকে দিবার জন্য তাহার হাতে কিছু থাকে।” সন্তানদেরকে লজেন্স কিনে তা শিক্ষককে উপহার দিয়ে ক্ষতিপূরণ করতে পরিচালিত করা শাস্ত্রীয় পরামর্শকে আরও জোরদার করেছিল।

“একবার কোনো খারাপ মনোভাব ধরতে পারলে আমরা তা নির্মূল করার চেষ্টা করি,” বাবা বলেন, “আর সন্তানদের সঙ্গে যুক্তি করার মাধ্যমে সেগুলোর জায়গায় উত্তম এবং শুদ্ধ মনোভাব দিয়ে ভরিয়ে দিই।” সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার সময় যিশুকে অনুকরণ করার দ্বারা এই বাবামারা নিশ্চিতভাবে সময়ের ধারায় উত্তম ফল লাভ করেছিলেন। অবশেষে উভয় সন্তানকেই ব্রুকলিন বেথেলের প্রধান কার্যালয়ের সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে একজন ২৫ বছর ধরে এখনও সেবা করছে।

আরেকজন খ্রিস্টান যেভাবে তার বাইবেল ছাত্রীকে সাহায্য করতে সমর্থ হয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। ছাত্রী সভাগুলোতে যোগ দিতেন ও পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করতেন এবং ইতিমধ্যেই বাপ্তিস্ম নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, তিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করার চেয়ে বরং নিজের ওপর বেশি নির্ভর করতেন বলে মনে হতো। “একজন একাকী মহিলা হিসেবে তিনি যতটা উপলব্ধি করতে পারেন, তার চেয়ে বেশি স্বাধীনচেতা হয়ে উঠেছিলেন” সাক্ষি বোন স্মরণ করে বলেন। “আমি ভাবছিলাম যে, তার স্নায়ুদৈর্বল্য অথবা আধ্যাত্মিক পতন ঘটতে পারে।”

তাই, সেই সাক্ষি বোন ছাত্রীর সঙ্গে মথি ৬:৩৩ পদ নিয়ে যুক্তি করার পদক্ষেপ নেন এবং বিষয়গুলো যাতে ছাত্রীর ভালোর জন্য হয় তার জন্য তাকে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে রদবদল করার, রাজ্যকে প্রথমে রাখার এবং যিহোবার ওপর নির্ভর করার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তাকে খোলাখুলি জিজ্ঞেস করেন: “নিজের ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করায় আপনি কি অন্যদের ওপর এমনকি যিহোবার ওপর নির্ভর করতে কঠিন বোধ করেন?” ছাত্রী স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি প্রার্থনা করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। প্রকাশক এরপর তাকে গীতসংহিতা ৫৫:২২ পদের পরামর্শ কাজে লাগাতে এবং যিহোবার ওপর তার ভার অর্পণ করতে উৎসাহিত করেন কারণ ১ পিতর ৫:৭ পদ আমাদের আশ্বাস দেয়, “তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” ওই কথাগুলো তার হৃদয় স্পর্শ করে। সাক্ষি বোন বলেন, “যে-কয়েক বার আমি তাকে কাঁদতে দেখেছি, সেটা ছিল তার মধ্যে একবার।”

সত্যকে আপনার মধ্যে কাজ করে যেতে দিন

যাদেরকে আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, তাদেরকে বাইবেলের সত্যের প্রতি সাড়া দিতে দেখা আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে। কিন্তু, অন্যদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা যাতে সফল হয়, সেটার জন্য আমাদের নিজেদেরকে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। (যিহূদা ২২, ২৩) আমাদের সকলের ‘সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন করিতে’ হবে। (ফিলিপীয় ২:১২) এর অন্তর্ভুক্ত হল শাস্ত্রের আলোকে নিয়মিতভাবে আমাদের নিজেদের হৃদয়ে আলোকিত হতে দেওয়া এবং সেই মনোভাব, আকাঙ্ক্ষা এবং অনুরাগগুলো খুঁজে বের করা, যেগুলোর সংশোধনের প্রয়োজন।—২ পিতর ১:১৯.

উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক খ্রিস্টীয় পরিচর্যার জন্য আপনার উদ্যোগ কী কমে গিয়েছে? যদি তা-ই হয়, তা হলে কেন? একটা কারণ হতে পারে যে, আপনি নিজের ওপর খুব বেশি নির্ভর করেন। কীভাবে আপনি বলতে পারেন যে, তা সত্য? হগয় ১:২-১১ পদ পড়ুন এবং পুনরায় ফিরে আসা যিহুদিদের সঙ্গে যিহোবার যুক্তি নিয়ে অকপটভাবে ভেবে দেখুন। এরপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি আর্থিক নিরাপত্তা এবং বস্তুগত আরামআয়েশের জন্য খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছি? আমি যদি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি, তা হলে, আমার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য আমি কি সত্যিই যিহোবার ওপর নির্ভর করি? নাকি আমি মনে করি যে, প্রথমে আমাকে নিজের জন্য চিন্তা করতে হবে?’ আপনার চিন্তাভাবনায় অথবা অনুভূতিতে যদি রদবদল করার প্রয়োজন হয়, তা হলে তা করার জন্য দ্বিধাবোধ করবেন না। মথি ৬:২৫-৩৩, লূক ১২:১৩-২১ এবং ১ তীমথিয় ৬:৬-১২ পদে পাওয়া শাস্ত্রীয় পরামর্শ বস্তুগত চাহিদা এবং সম্পদগুলোর প্রতি ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার ভিত্তি জোগায়, যা ক্রমাগত যিহোবার আশীর্বাদ পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়।—মালাখি ৩:১০.

খালাখুলিভাবে এই ধরনের আত্মপরীক্ষা করা গম্ভীরতার সঙ্গে চিন্তা করার জন্য পরিচালিত করতে পারে। আমাদেরকে যখন নির্দিষ্ট কোনো দুর্বলতা দেখিয়ে দেওয়া হয়, তখন তা স্বীকার করা আবেগগতভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু, আপনি যখন আপনার সন্তানকে, আপনার বাইবেল ছাত্র বা ছাত্রীকে অথবা এমনকি নিজেকে—যত ব্যক্তিগত এবং সংবেদনশীল বিষয়ই হোক না কেন—সাহায্য করার জন্য প্রেমের সঙ্গে পদক্ষেপ নেন, তখন আপনি হয়তো তার অথবা আপনার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছেন।—গালাতীয় ৬:১.

কিন্তু, আপনার প্রচেষ্টা যদি উত্তম ফল উৎপন্ন করছে না বলে মনে হয়, তা হলে কী? তাড়াহুড়ো করে হাল ছেড়ে দেবেন না। অসিদ্ধ হৃদয়কে রদবদল করা এক সংবেদনশীল, দীর্ঘ সময়ের এবং কখনও কখনও হতাশাজনক প্রচেষ্টা হতে পারে। কিন্তু তা পুরস্কারদায়কও হতে পারে।

শুরুতে উল্লেখিত যুবক এরিক অবশেষে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং আবারও ‘সত্যে চলিতে’ শুরু করেছিল। (২ যোহন ৪) “আমি যা হারিয়েছিলাম, তা বোঝার পরই আমি যিহোবার কাছে ফিরে এসেছিলাম,” সে বলে। তার বাবামার সাহায্যে এরিক এখন বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করছে। সে যদিও আগে তার হৃদয়ের অনুসন্ধান করার বিষয়ে তার বাবামার অবিরত প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্ধ হয়েছিল কিন্তু তারা যা করেছিল, সেটা এখন সে গভীরভাবে উপলব্ধি করে। “আমার বাবামা খুবই ভাল,” সে বলে। “তারা সবসময় আমাকে ভালবেসে এসেছে।”

যাদেরকে আমরা শিক্ষা দিচ্ছি তাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যকে আলোকিত হতে দেওয়া হল দয়া বা প্রেমপূর্ণ-দয়ার এক অভিব্যক্তি। (গীতসংহিতা ১৪১:৫) আপনার সন্তান এবং বাইবেল ছাত্র বা ছাত্রীর হৃদয়কে অনুসন্ধান করে চলুন এই প্রমাণ পাওয়ার জন্য যে, সত্যিই তাদের মধ্যে নতুন খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠছে কি না। ‘সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিবার’ মাধ্যমে অন্যদের এবং আপনার মধ্যে সত্যকে কাজ করতে দিন।—২ তীমথিয় ২:১৫.

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর কথাগুলো পিতরের মধ্যেকার এক দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়েছিল

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

হৃদয়ে কী আছে তা বের করে আনার জন্য বাইবেল ব্যবহার করুন